#মায়াবন্দী
#লেখিকা- তাসনিম তামান্না
#পর্ব-৭
☆☆☆
সময় কারোর জন্য থেমে থাকে না সময় চলছে সময়ের মতো। কেটে গেছে ৩০ দিন সবাই সবার মত লাইফ রিড করছে। সিয়াও আগের মতো কলেজে যায় কলেজ থেকে রিয়ার কাছে থেকে কোচিং করে সন্ধ্যার সময় বাসায় এসে নাস্তা করে বাবা-মার সাথে গল্প করে পড়তে বসে রেস্ট নেওয়ার ও জেনো টাইম পাই না ও। কিন্তু দিন শেষে প্রিয় হয়েও অপ্রিয় মানুষটার কথা মনে পড়ে মনে কোণে অভিমানের পাহাড় জমে ভাবতে চাই না প্রিয় হয়েও অপ্রিয় মানুষটার কথা। তাও যেনো মনে গহীন কোণে তার কথা গুলো ঘুরঘুর করতে থাকে বারং বার ‘কি করছে সে’ ‘কেমন আছে’ ‘ঠিক মতো খাচ্ছে তো’ ‘সেকি আমার কথা ভাবে’ ‘আমি তার কি হই তার কি মনে আছে নাকি সে ভুলে গেছে তার সাথে জড়িয়ে থাকা আমি নামক মানুষটাকে’ এমন হাজারও কথা নিজ মনেই আওড়ে থাকে সিয়া কিন্তু আফসোস কেউ শুনতে পাই না তার কথা।
সাদমান ও অফিস বাড়ি করে মাঝে মাঝে সময় পেলে বন্ধুরা সবাই মিলে দেখা করে আড্ডা দেই। দিন শেষে অভিমানি মেয়েটার কথা মনে পড়ে দীর্ঘ শ্বাস নিয়ে মুচকি হাসে। অভিমানি মায়াপরিটাকে মিস করে খুব। মায়াপরিটাকে দূর থেকে দেখে আসে ঠিকই কিন্তু তার মায়াপরি জানে না।
দুই প্রান্তে দুই মানব মানবী দুজন দুজনের কথা ভাবে ঠিকি কিন্তু ইগো, অভিমানের কারণে কেউই কথা বলতে পারে না। পবিত্র সম্পর্ক আর ভালোবাসা গুলো যদি সত্যি হয় তাহলে সে যতই দূরে থাকুক না কেনো দূরে থেকেও তাকে ভালোবাসা যায় মিস করা যায়।
রাত ১.১৫ বাজে সিয়া স্টাডি টেবিলে পড়তে পড়তে ঘুমিয়ে গিয়ে কখন ওনিজেও জানে না। ফোন বাজার শব্দে ঘুম ভেঙে যায় বিরক্তি নিয়ে হাতড়ে ফোন নিয়ে কানে ধরতেই হাত পা থরথর করে কাপতে লাগলো সিয়ার গলা শুকিয়ে যাচ্ছে ঢোক গিলারও শক্তি টুকু পাচ্ছে না ও। কি করবে বা কি বলবে ভেবে পাচ্ছে না। তাহলে কি এবার সেই খারাপ থেকে খারাপ সময়টা চলে আসছে তাহলে কি এবার ওর প্রিয় কাছের মানুষটাকে ও হারিয়ে ফেলবে মনের আশা গুলো কি হবে।
:
:
২দিন পর শুক্রবার বিকেলে
সাদিয়া রান্নাঘরে রান্না করছিলো রাতে হসপিটালের খাবার নিয়ে যাবে তাই। তখন সাদমান, সাইমা, নীলাকে দেখে অবাক হয়ে যায়।
-আরে তোমরা এখন বসো বসো আগে বলো নি তো আসবা (সাদিয়া)
-সারপ্রাইজ দিলাম কেমন লাগলো বলো খুশি হওনি (সাইমা)
-পাগলি মেয়ে খুব খুশি হয়েছি আরে দাড়িয়ে আছিস কেনো বস আজ কিন্তু থাকতে হবে (সাদিয়া)
-এতো ব্যস্ত হওয়ার কোনো কারণ নাই আমার আছি তুইও বস (নিলা)
-হ্যাঁ কি রে সাদমান বস (সাদিয়া)
-হ্যাঁ ছোটম্মু কেমন আছো (সাদমান)
-আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি তুই কেমন আছিস (সাদিয়া)
-হ্যাঁ আমিও ভালো আছি (সাদমান)
-আচ্ছা বল তোরা কি খাবি? (সাদিয়া)
-আরে বস তো ওসব পরে হবে ভাই সিয়া ওরা কই (নিলা)
-তোমার ভাই সিয়াকে হসপিটালে দিয়ে এসে বাইরে চায়ের দোকানে আড্ডা দিতে গেছে তিনি কি আর বসে থাকা লোক (সাদিয়া)
-সিয়া হসপিটালের কেনো (নিলা)
-ওফ তোমাদের তো বলতেই মনে নাই রিয়ার বাচ্চা হয়ছে এতো তাড়াহুড়ার মধ্যে বলা হয়ে উঠে নি (সাদিয়া)
-ওমা তাই নাকি রিয়া আর ওর বাচ্চা কেমন আছে সুস্থ আছে তো? (নীলা)
-হ্যাঁ আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছে আল্লাহ দোয়ায় (সাদিয়া)
-যাক আল্লাহ যা করে ভালোর জন্যই করে তা ছেলে হয়েছে না মেয়ে? (নীলা)
-ছেলে হয়েছে (সাদিয়া)
-সেজন্য আপু ফোনে পাই না এই দু’দিন ওফ (সাইমা)
-হ্যাঁ রে কি আর বলবো শুনতাহলে……
#ফ্ল্যাসব্যাক
-সিয়া বোন তাড়াতাড়ি…….এই হসপিটালে আই বোন আমার জানটার কষ্ট হচ্ছে রে ও খুব কষ্ট পাচ্ছে আমি কি করবো ভেবে পাচ্ছি না তুই আই প্লিজ (রাব্বি)
এইটুকু বলে রাব্বি ফোন কেটে দেই সিয়া রিয়ার অবস্থা বুঝতে পেরে হাউমাউ করে কেঁদে উঠে। সিয়ার কান্নার আওয়াজ পেয়ে সিয়ার বাবা-মা দুজন ছুটে আসে।
-কি হয়েছে মা আমার কাঁদছিস কেনো বল আব্বুকে কি হইছে (অলি সিয়ার বাবা)
সিয়া কাঁদতে কাঁদতে বলল
-আব্বু রিয়া হসপিটালে ওর অবস্থা খারাপ আমি (সিয়া)
-সে কি চল আমরাও যাবো রিয়াও তো আমার একটা মেয়ে ওর এই অবস্থায় আমাদের ও ওর সাথে থাকা উচিত চল (অলি)
সেই রাতেই ওরা হসপিটালে যায় রাব্বির অবস্থা পাগলের মতো হয়ে গেছে কয়েক ঘন্টায় ইমন আর ছায়াও এসেছে ততক্ষণে। রিয়ার বাসার থেকে রিয়ার বাবা-মা এসেছে। রাব্বি পাগলের মতো কাঁদছে রিয়ার জন্য বার বার আল্লাহ আল্লাহ করছে আর বলছে
-দয়া করো আল্লা আমার রিয়া জানকে আমার কাছে ফিরিয়ে দাও ও ছাড়া আমার কেউ নেই সবাইকে তো আমার কাছ থেকে কেড়ে নিয়েছো আমার রিয়াকে তুমি নিও না দয়া করো আমি যে ওকে খুব ভালোবাসি ওকে ছাড়া আমি থাকতে পারবো না আমার সাথে এমন করো না প্লিজ রিয়াকে আমার কাছে ফিরিয়ে দাও দয়া করো আমার উপর দয়া করো (রাব্বি)
হসপিটালের সকালের চোখেই পানি রিয়ার বাবা রাব্বির পাগলামি দেখে রাব্বিকে জড়িয়ে ধরে বলল
-কাঁদিস না বাবা আমার মেয়ের কিছু হবে না দেখিস (রিয়ার বাবা)
২ ঘন্টা পর ডক্টর বের হলে
-ড ড ডক্টর আমার রিয়া কেমন আছে (রাব্বি)
-আপনার বেবি সুস্থ আছে বাট আপনার ওয়াইফের জ্ঞান না ফিরলে কিছুই বলতে পারছি না
ডক্টরের কথা শুনে রাব্বি রেগে ডক্টরের কলার চেপে ধরে বলল
-আমার রিয়ার যদি কিছু হয় তাহলে তোকে খুন করে দিবো (রাব্বি)
ইমন রাব্বিকে ছাড়িয়ে নিয়ে বলল
-সরি ডক্টর আসলে ওনার কন্ডিশন ও ভালো না (ইমন)
-ইট’স ওকে আমি বুঝতে পারছি ওনার ব্যাপারটা
বলে ডক্টর চলে গেলো। নার্স বাবুকে আনলে রাব্বি বাবুকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে মুখে অজস্র চুমু একে দেই।
তার থেকে ৫ ঘন্টা পর রিয়ার জ্ঞান ফিরে তখন সবার মুখে হাসি ফুটলো। এতোক্ষণ যেনো সবাই নিঃশ্বাসটাও মেপে মেপে নিচ্ছিলো।
সিয়াও তারপর থেকে বাসায় কম হসপিটালে বেশি থেকেছে।
#বর্তমান
-বাবাগো এতো কিছু হয়ে গেলো (সাইমা)
-হ্যাঁ কি যে ঝড় বয়ে গেলো সবার উপর দিয়ে (সাদিয়া)
-ঝড় শেষে সব যে ঠিক আছে এটাই অনেক (সাইমা)
-আচ্ছা তোরা বস আমি রান্নাঘরে যায় আজ হসপিটালে ওদের সবার জন্য রান্না করছি (সাদিয়া)
-দিয়ে যাবা হসপিটালে খাবার তাহলে আমিও যাবো বাবু দেখতে (সাইমা)
-তুই একা যাবি কেনো আমরাও জাবো (নিলা)
-আচ্ছা তাহলে আমি তাড়াতাড়ি সব গুছিয়ে নি তোরা বস (সাদিয়া)
-চল তোর সাথে আমিও যায় তাহলে তাড়াতাড়ি হয়ে যাবে কাজ গুলো (নিলা)
#চলবে
#Tasnim_Tamanna
[ভুলক্রটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। গঠন মূলক কমেন্ট করবেন ]