#মায়াদেবের_মায়া
#পর্ব_৮( Last part)
#তাহমীম
পিছন থেকে মুনিয়া আহমেদ ডাক দিলে ও নিঝুম আর শোনেনি। শোনার অপেক্ষা যে নেই তার মায়াবতী তার জন্য অপেক্ষা করছে এখনো। তার দাদু তার জন্য অপক্ষা করছে এখনো।
নিঝুম মায়াদের বাড়িতে ঢুকতেই ঐশি শিকদার নিঝুমকে দেখে চমকে উঠে
-” নিঝুম তুই!?
-” হ্যা মামুনি আমি।
মায়ার আম্মু কান্না করে দেই নিঝুমকে দেখে। নিঝুমকে ধরে কপালে একটা চুমু দেই।
ঐশি শিকদার চিল্লিয়ে
-” কে কই? তোরা দেখে যা নিঝুম ফিরে এসেছে। আমাদের নিঝুম এসেছে।
ঐশি শিকদারের কথা শুনে তিথি বের হয়ে আসে। তিথিকে দেখে নিঝুম অবাক হয়ে যায়। তিথির কোলে আমানের মতো দেখতে একটা বাচ্চা
-” তিথি তুই এইখানে?
-” আমি তো এই খানেই থাকার কথা। তোর মতো এটা আমার ও শশুর বাড়ি। কিন্তু তোর এখানো হয়নি।
-” মানে?
আমান পিছন থেকে
-” কারন তিথি আমার বউ। মায়া পালিয়ে যাবার পর বুঝতে পারি ও তোকে কতটা ভালোবাসে আর তুই মায়াকে। দাদুকে দেখেছি হাসপাতালে কতো কষ্ট করতে। আর সব হয়েছিলো আমার জন্য। আমি তোদের মধ্যে চলে এসেছিলাম। আর এসব দেখে আমি মানসিক ভাবে ভেঙে পড়ছিলাম। তখন তিথি এসে আমার পাশে দাঁড়ায়। আস্তে আস্তে আমি ওকে ভালোবেসে ফেলি আর বিয়ে করি।
আশিক আহমেদ আর শফিক আহমেদ নিঝুমের কাছে এসে নিঝুমকে জড়িয়ে ধরে৷
নিঝুম আর কিছু না বলে
-” আমার মায়া কোথায়? ওকে কেনো দেখতে পাচ্ছি না?
বাড়ির সদর দরজায় দাঁড়িয়ে থেকে মুনিয়া আহমেদ বলে
-” মায়া আমাদের দুই পরিবারের কারো সাথেই থাকে না। সবার উপর খুব অভিমান জমেছে ওর। তোর দাদুকে নিয়ে সে একাই একটা ভাড়া বাসায় থাকে। আর বাসায় থেকে নিজেই একটা ছোটখাটো বিজনেস সামলায়।
আমান নিঝুমের কাধে হাত দিয়ে
-” আমি মায়াকে অনেক কষ্ট করতে দেখেছি এই পাচঁটা বছর। আমরা তো ভেবেই নিয়েছিলাম তুই আর আসবি না। তাই মায়াকে অন্য কাউকে বিয়ে করতে বলেছিলাম তাও শোনেনি। তোর অপেক্ষায় আছে এখানো সে।
নিঝুম মায়ার বাসায় যেতে নিলেই পিছন থেকে আমান
-” আমরা ও যাবো দাঁড়া
-” তোরা আয় আমি যাচ্ছি।
নিঝুম কলিং বেল বাজাতেই মায়া এসে দরজা খোলে। মায়া নিঝুমকে দেখে আকাশ থেকে পড়ে এতো বছর পর তার মায়াদেব তার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। সত্যিই কি নিঝুম দাঁড়িয়ে আছে সামনে! মায়া বিশ্বাস করতে পারছে না চোখকে। মিথ্যে হলে ও মায়ার দুচোখে পানির স্রোত বয়ে যাচ্ছে। সত্যিই কি তার মায়াদেব এসেছে? এটা হয়তো কোন সপ্ন এখনি ভেঙে যাবে।
নিঝুম তাকিয়ে আছে মায়ার দিকে। মেয়েটা আগের থেকে অনেক সুন্দর হয়েছে। গাল গুলো আগের থেকে গোলাপি হয়েছে মনে হচ্ছে। কপালে ছোট একটা কালো টিপ, নিঝুমের মনে হচ্ছে নিঝুমের জন্য সাজিয়েছে তার মায়াবতী নিজেকে।
মায়া নিরবতা ভেঙে
-” কি চায়?
-” মায়া!
-” এখানে কোন মায়া থাকে না আসতে পারেন। মায়া দরজা লাগাতে যাবে তখনি নিঝুম দরজায় ধরে ফেলে। তাই মায়া দরজা ছেড়ে ভিতরে চলে যায় আর রুমে গিয়ে দরজা লাগিয়ে দেয়। নিঝুম ভিতরে এসে দেখে একটা হুইল চেয়ারে বসে আছে তার দাদু। নিঝুমের চোখ বেয়ে অঝরে পানি পড়ছে দাদুকে দেখে। ততক্ষনে সবাই চলে এসেছে নিঝুম আর মায়ার পরিবার।
নিঝুম হাটু গেড়ে আমির চৌধুরীর সামনে বসে -” দাদু।
আমির চৌধুরী কথা বলতে চেষ্টা করছে নিঝুমকে দেখে কিন্তু কোন ভাবেই পারছে না।
-” দাদু তোমার কিচ্ছু হবে না আমি আবার তোমায় সুস্থ করে তুলবো। ভালো ডাক্তার দেখাবো। আমাকে মাফ করে দাও আমি তোমায় ছেড়ে চলে গিয়েছিলাম
আমির চৌধুরীর চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়ছে।
নিঝুম আমির চৌধুরীর কোলে মাথা রাখে।
-” দাদু আমি খুব স্বার্থপর হয়ে গিয়েছিলাম। নিজের জন্য তোমায় ছেড়ে চলে গিয়েছিলাম।
আমায় ক্ষমা করে দাও দাদু।
সবার চোখেই পানি দাদা নাতির এমন পরিস্থিতি দেখে।
কিছুক্ষন পর নিঝুম মাথা তুলে মায়া বলে ডাক দেয়। মায়া কোথায়? মায়া কি আমার সাথে খুব অভিমান করেছে?
নিঝুম দরজায় ধাক্কাচ্ছে।
-” মায়া, মায়া দরজা খোলো। দেখো তোমার মায়াদেব এসেছে। তোমার মায়াদেব শুধু তোমায় ই ভালোবাসে, সেই ছোট থেকেই। তোমায় নিয়েই যে আমার পৃথিবী ছিলো মায়া।একবার দরজা খোলো প্লিজ মায়াবতী।।
মায়া দরজার এপাশে দরজা ধরে কান্না করছে।
-” মায়া তুমি যদি এখন দরজা না খোলো আমি কিন্তু আবার আমেরিকায় চলে যাবো। মায়া প্লিজ আর দূরে রেখো না আমায়। মায়া।
মায়া চুপ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। নিঝুম ডকতে ডাকতে ক্লান্ত হয়ে
-” তবে বেশ আমি চলে যাচ্ছি আবার আমেরিকায়। তুমি ভালো থেকো মায়াদেবকে ছাড়া।
এই দিকে আমির চৌধুরী নিঝুমের এমন অবস্থা দেখে আস্তে করে নিঝুম বলে ডেকে উঠে।
নিঝুমের কোন শব্দ না পেয়ে মায়া দরজা খোলে। দরজা খোলে দেখে সবাই আমির চৌধুরীর পাশে বসে আছে। আমির চৌধুরী অস্পষ্ট ভাষায় কথা বলছে। মায়া দৌড়ে আমির চৌধুরীর কাছে যায়।
-” দাদু ভাই তুমি কথা বলতে পারছো?
আমির চৌধুরী অস্পষ্ট ভাষায় বলছে
-” নিঝুমকে মাফ করে দে দাদু ভাই। নিঝুমকে ছাড়া আমি ভালো থাকবো না।
মায়া চোখে পানি নিয়ে
-” মায়াদেব কোথায় ফুপিমা?
-” ছাদে গেছে। বলেছে দশ মিনিটের ভিতরে ছাদে যেতে না হয় ও আবার ফিরে যাবে আমেরিকায়।
ছাদের এক কোনে দাঁড়িয়ে আছে নিঝুম। মায়া একপা দুপা করে নিঝুমের কাছে গিয়ে
-” আমেরিকায় চলে যেতে চাইলে যেতে পারে। আমি না হয় আরো পাচঁ বছর অপেক্ষা করবো। কবিতার ছন্দ মেলাবো আমার মায়াদেবের জন্য। গুন গুন করে গান গাইবো আর তার অপেক্ষা করবো। কিন্তু তবু ও তার জন্য অপেক্ষা করবো। কারন মায়া শুধু মায়াদেবেরই। ” মায়াদের মায়া”
নিঝুমের চোখে বিন্দু বিন্দু পানি নিয়ে পিছনে ফিরে আচমকা মায়াকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে। মায়াও এই সুযোগ হাত ছাড়া না করে লুফে নেয় সুযোগ। জড়িয়ে ধরে দুহাতে খামচে ধরে পিঠ।
নিঝুমের বুকে মাথা রেখে
-” মায়াদেব
নিঝুম চোখ বন্ধ করে
-” হুম
-” সেদিন যখন তুমি আমায় কিছু বলতে এসেছিলে কিন্তু বলতে পারোনি তারপর আমরা শপিং থেকে ফিরে দেখি ফুপিমা বসে আছে বাড়িতে মনে আছে?
-” হুম
-” ফুপিমা যখন তোমায় হাত ধরে রুমে নিয়ে গিয়ে দরজা লাগিয়ে দিয়েছিলো তখনই আমার সন্দেহ হয়েছিলো আমি জানালায় দাঁড়িয়ে তোমাদের দেখছিলাম আর তোমাদের সব কথা শুনে ফেলেছিলাম। তখনি জেনে গিয়েছিলাম তুমি আমায় কতটা ভালোবাসো। আর কবে থেকে। জানো সেদিন কি খুশি লেগেছিলো আমার ? এর পর তুমি চলে গিয়েছিলে আর আমাদের বাড়ি আসোনি। আমি ভেবেছিলাম তুমি শেষ অব্দি বিয়েটা আটকাবে। কিন্তু তুমি আসোনি। আমি অস্থির হয়ে তোমাদের বাড়ি গিয়ে দেখি তুমি নেই৷ দাদু ভাইয়ের পায়ের কাছে বসে অনেক কান্না করেছিলাম। কিন্তু দাদু ভাই কিছু বলেনি তুমি কসম দেওয়াতে। তবে আমি আসার সময় দাদু ভাই তোমার ডাইরিটা আমাকে দেয়। তুমি কসম দিয়েছিলে আমায় কিছু না বলতে কিন্তু ডাইরি না দিতে তো আর কসম দাওনি। আমি অনেক ভেবেছিলাম ডাইরি খুলবো কি খুলবো না। অবশেষে বিয়ের দিন সকালে ডাইরি খুলে পড়ি। সব কটা পাতায় তোমার মায়াবতীকে নিয়ে লেখা পড়ে আমি ভিষণ কেঁদেছিলাম। এতো ভালোবাসতে তুমি আমায় আর আমি বুঝতেই পারিনি।
-” তুমি সব জেনে গিয়েছিলে তাহলে আমায় বলোনি কেন তখন?
-” বললে কি হতো? আমি জানতাম তুমি আবার সবার জন্য আমাকে না করে দিবে।বলবে আমায় বিয়ে করলে ওরা কষ্ট পাবে। জ্ঞানের বানি দিতে আমায় আমি জানি। তবু ও আমি বৌ সাজার পর যখন তুমি এলে আমি ভেবেছিলাম তুমি হয়তো সব তুচ্ছ করে দিয়ে আমায় নিয়ে যাবে কিন্তু তা হয়নি। পরে বুঝেছিলাম তোমার দ্বারা কিছু হবে না যা করার আমাকেই করতে হবে। তাই আমি পালিয়েছিলাম যাতে কয়েকদিন পর সব ঠান্ডা হলে তোমার কাছে যেতে পারি তোমায় আপন করে নিতে পারি। কিন্তু কিছুদিন পর এসে শুনি তুমি দেশ ছেড়েই পালিয়েছো। আর দাদু ভাই অনেক অসুস্থ। তারপর থেকেই তোমার জন্য অপেক্ষার শুরু। মনে হতো এই বুঝি তুমি আসবে কিন্তু কই তুমি এলেনা এতো গুলো বছর কেটে গেলো তুমি এলেনা। তোমার উপর ভিষণ রাগ হয়েছিলো ভেবেছিলাম তুমি আসলে আর কথা বলবো না। কিন্তু পারলাম না আমি। আমার মায়াদেবের সাথে রাগ করে থাকতে।
নিঝুম মায়ার মাথাটা বুক থেকে তুলে ঠোঁটে এক আঙুল দিয়ে চেপে ধরে
-” চুপ একদম চুপ। আমি কি জানতাম আমার মায়াবতীর বিয়ে হয়নি জানলে তখনি ফিরে আসতাম। এই এতো গুলো বছর নষ্ট করতাম না তোমার থেকে আর তোমার আদরের দূরে থাকতাম না।
নিঝুমের কথা শুনে মায়া লজ্জায় নুইয়ে পড়ে।
নিঝুম মায়ার থুতনিতে ধরে মুখ উঁচু করে। নিঝুমের কাছে আশায় মায়ার নিঃশ্বাস আরো ভারী হয়ে উঠে। নিঝুমের ঠোঁট জোরা ডুবিয়ে দেয় মায়ার ঠোটে। তাদের নিঃশ্বাস মিলে মিশে একাকার হয়ে যায়।
.
.
.
মায়াদেব মায়াদেব আমার বাচ্চা কোথায়? ।
নিঝুম সদ্য জন্মানো মেয়েকে নিয়ে রুমে ডুকে
-” এইতো মায়াবতী আমার কোলে। আমার ছোট্ট মায়াবতী হয়েছে।
-” আমাকে একটা চুমু দিন।
নিঝুম হা হয়ে যায়। মেয়ের মুখ না দেখে এই মেয়ে কি বলে আগে।
-” কই দিন!
নিঝুম মুচকি হেসে মায়ার কপালে ঠোট ছু্ঁয়ে দেয়।
-” এই বার আমার মেয়েকে দিন।
মেয়েকে বুকে জড়িয়ে ধরে মায়া। আর মায়াদেব জড়িয়ে ধরে তার মায়াবতীকে।
আপনারা সবাই মায়াদেব আর মায়াবতীর সংসারের জন্য দোয়া রাখবেন।
সমাপ্ত
বিঃদ্রঃ ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। কেমন হয়েছে গল্পটা একটু ভালো করে বলবেন 😌।