#মায়াদেবের_মায়া
#পর্ব_৬
#তাহমীম
আমি কালকেই মায়াকে বলবো আমি ও মায়াকে ভালোবাসি। ভালোবাসে তার মায়াদেব তাকে। তার মায়াদেব ও চায় না তার মায়াবতী কষ্ট পাক। হাজারো বাহানায় তার মায়াদেব তাকে সাজাতে চায়। হাজারো বারনে তার মায়াদেব তাকেই ভালোবাসে। তার মায়াদেব ও তার জন্য এতোটাই পাগল যতটা সে। আমার মায়াকে আমি বলবো। আমার বলতেই হবে। আমার মায়াবতী শুধু আমারই। তার এলোমেলো চুলে, লেপ্টে যাওয়া কাজলে, তার গুন গুন করা আওয়াজে, তার লেখা কবিতায় শুধু আমার অধিকার, আমার বসবাস, আমার অস্তিত্ব। আর আমার অধিকার আমি কাউকে দিবো না। মায়াবতী শুধুই আমার। মায়া তার মায়াদেবের।
-” ঠিক বলছিস দাদু ভাই। এখন ঘুমিয়ে যা। লম্বা একটা ঘুম দিয়ে সকালে উঠে মায়ার কাছে যাবি। আমি যায় রুমে।
-” দাদু তুমি আজকে আমার সাথে ঘুমাও না! আমার আজকে ঘুম হবে না। সারা রাত না হয় তোমার সাথে গল্প করবো। মায়াবতীকে সকালে আমি সব বলার পর অন্য রুপে দেখবো ভাবতেই ভিতরে খুশির জোয়ার বইছে।
আমির চৌধুরী নিঝুমের মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। নিঝুম চোখ বন্ধ করে কথা বলছে দাদুর সাথে। আমির চৌধুরী নিঝুমের দিকে তাকিয়ে
-” আমি সব সময় থাকবো না তোর পাশে। তুই কিন্তু কোন সময় ভুল সিদ্ধান্ত নিস না৷ ভেবে চিন্তে যা ভালো হবে সবার তাই করবি। মনে রাখবি নিজে ভালো না থাকলে কখনো অন্যকে ভালো রাখতে পারবি না তাই আগে নিজে ভালো থাকতে হবে।
নিঝুম চোখ খুলে আমির চৌধুরীর দিকে তাকিয়ে হাত ধরে
-” হুম। কিন্ত আর এসব কথা বলো না তো তুমি থাকবে না মানে কোথায় যাবে? এসব কথা একদম বলবে না। নাতবৌকে কি কি দিয়ে ঘরে তুলবে সেটা ভাবো।
দাদা নাতি সারা রাত গল্প করে কাটিয়ে দেয়। আমির চৌধুরী নিঝুমের মাথায় সারা রাত হাত বুলিয়ে দেয়।
.
.
.
সকালে
নিঝুম গুন গুন করে গান গাইছে আয়নার সামনে। চুল গুলো আচড়িয়ে আবার এলোমেলো করে দেয় নিঝুম। মায়াবতীর নিঝুমের এলোমেলো চুল খুব ভালো লাগে। তাই চুল গুলো এলোমেলো করে রেখে শরীরে পারফিউম দিয়ে আবার আয়নায় ভালো করে দেখে বের হয়ে যায় নিঝুম। উপচে পড়া ঢেউ এর মতো নিঝুমের ভাবতেই ভালো লাগছে আজকে নিঝুম সব বলে দিবে মায়াকে। আপন করে পেতে আবেদন করবে নিঝুম মায়ার কাছে। মায়া আজীবনের জন্য নিঝুমের হয়ে যাবে। কেউ চাইলে ও পারবে না মায়াদেবের মায়াকে আলাদা করতে৷ মায়াবতীকে নিয়ে হারাবে নিঝুম। কেউ মানা করার থাকবে না কেউ বাধা দেওয়ার থাকবে না। একান্ত নিঝুমের অধিকার থাকবে শুধু তার মায়াবতীর উপর।
নিঝুমের গাড়ি এসে থামে মায়াদের বাড়ির সামনে। নিঝুম কি ভাবে কি শুরু করবে বুঝতে পারছে না। মায়াকে কই থেকে বলবে যে নিঝুম ও মায়াকে ভালোবাসতো হয়তো তার থেকে বেশি। মায়ার বর্ষণে নিঝুমের চোখে বর্ষণ নামতো। তাকে আগলে রাখার অভিপ্রায় থাকতো সব সময়।
ভাবতে ভাবতে নিঝুম বাড়ির ভিতরে ড্রয়িংরুমে চলে যায়। সামনেই দাঁড়িয়ে আছে মায়া। নিঝুম অন্ধকার হাতড়িয়ে আলো পাওয়ার মতো তাকিয়ে আছে মায়ার দিকে। ইচ্ছে হচ্ছে দৌড়ে গিয়ে মায়াকে জড়িয়ে ধরে বলতে মায়াবতী ভালোবাসি তোমায়। কিন্তু তা করা যাবে না অনেকেই আছে আশে পাশে। সবার সামনেই কি বলবে নিঝুম? নিঝুম ও ভালোবাসে মায়াকে। সবাই জেনে যাক ক্ষতি কি তাতে?
নিঝুম একপা দুপা করে এগোচ্ছে মায়ার দিকে। মায়া অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে নিঝুমের দিকে। আজকে নিঝুমকে অনেক বেশিই সুন্দর লাগছে। এলোমেলো চুল কপাল ছুঁয়ে নাক ছুঁই ছঁই করছে। সেই চিরচেনা ঘ্রাণ। আর পরনে কালো শার্ট।
নিঝুম মায়ার একদম কাছে এসে।
-” মায়া
-” হুম।
-” কিছু বলতে চাই তোমায়। আ……..
আর কিছু বলার আগেই নিঝুমের বড় মামা নিঝুমের কাধে হাত রাখে
-” নিঝুম বাবা এসেছিস? ভালোই করেছিস এখন এসে। আমান আর মায়া বেরই হচ্ছিলো তাদের বিয়ের টুকটাক জিনিস কিনতে। ওহ ওদের বিয়ে ঠিক করে ফেলেছি আগামী শুক্রবারেই। আর তিনদিন সময় আছে। এতো কম সময়েই সব করতে হবে। তুই ও ওদের সাথে যা।
নিঝুমের ভিতরে সব উলোট পালোট হয়ে যায় আশিক আহমেদের কথা শুনে। কি বলছে এই সব এই লোকটা? যায় বলুক নিঝুম বলে দে সে ও ভালোবাসে মায়াকে।
হঠাৎ সিড়ি দিয়ে আমান নামতে নামতে
-” নিঝুম ভালোই করেছিস এসে, তুই ও চল আমাদের সাথে। আমি এসব ব্যপারে একদম কাঁচা। মেয়ে মানুষ নিয়ে গেলে নাকি অনেক ঝামেলা হয়। আমি এই সব ঝামেলায় নেই ভাই তুই ও চল আমাদের সাথে। এক সাথে সবাই অনেক দিন হলো বের হয়না। বিয়ে করে তো আর এতো বের হওয়া যাবে না। মানে বউ দিবে না এতো বের হতে, তাই না মায়া?
মায়া নিচে তাকিয়ে আছে কি বলতে চেয়েছিলো মায়াদেব? মায়াদেব কি মায়াকে ভালোবাসে বলতো? কেনো মনে হচ্ছে মায়াদেব মায়াকে ভালোবাসে বলতো? কি ভাবছি আমি আবার এই সব মায়াদেব তো তিথিকে ভালোবাসে আমাকে কি ভাবে বলবে সে ভালোবাসে আমায় ? এই অবাধ্য মনটা কেন বার বার এই সব ভাবে? কেন ভাবে মায়াদেব ও তাকে ভালোবাসে?
-” কি হলো মায়ারাণী কি ভবছো?
আমানের কথায় মায়ার ভাবনার ছেদ ঘটে ।
মায়া কিছু না বলে মলিন হাসি দেয় একটা।
মায়ার আম্মু আমানের আম্মু সবাই এসে নিঝুমকে বসতে বলে । সবাই কতো খুশি সবার মুখে হাসি লেগে আছে। আমান যেনো খুশিতে আত্নহারা। নিঝুম এখন কি ভাবে বলবে মায়াকে ভালোবাসে? সবার এই মুখের হাসি নিঝুম কি ভাবে নিজের জন্য কেড়ে নিবে?
মায়া বার বার নিঝুমের কাছে যেতে চাইছে নিঝুম কি বলতে চেয়েছিলো শুনতে কিন্তু সবার জন্য পারছে না। বার বার কেউ না কেউ আটকিয়ে দিচ্ছে।
নিঝুম, মায়া আমান শপিং করতে বেড়িয়ে পড়ে। নিঝুম নিজেকে সামলে তিথিকে কল দেই আসার জন্য। তিথি ও তাদের সাথে জয়েন হয়।
আমান তিথি আগে আগে হাটছে। ওরা গল্প করতে করতে আগে আগে যাচ্ছে। মায়া নিঝুমের সাথে চুপচাপ হেটে যাচ্ছে। নিঝুম মায়াকে কিছু বলছে না দেখে মায়া ই নিঝুমকে জিজ্ঞেস করলো
-” কিছু বলতে চেয়েছিলেন সকালে। বলেননি এখনো।
-” ওহ তেমন কিছু না। ওই তো তিথিকে গিফট দিবো কি গিফট দিলে খুশি হবে তাই জিজ্ঞেস করতাম। মেয়েদের তো আগে কখনো কিছু দেওয়া হয়নি তাই।
মায়া একটু চুপ থেকে
-” আমাকে তো দিয়েছেন।
নিঝুম চুপ হয়ে আছে। মায়ার কথার উত্তর এখন না দেওয়াই ভালো হবে। কিছু বলতে গেলেই হয়তো দিবো আমি যে তোমায় ভালোবাসি মায়াবতী।
নিঝুম মায়াকে তার পছন্দের একটা শাড়ী পছন্দ করে দেয়। যেমন বিয়ের শাড়ীর সাজে মায়াকে ভাবতো নিঝুম ঠিক তেমন শাড়ী মায়াকে বলে নিতে। মায়া ও তার মায়াদেবের কথা ফেলেনি। শাড়ী জামার উপর দিয়ে ধরতেই নিঝুম বলে উঠে
-” মাশাআল্লাহ।
.
.
.
নিঝুম, মায়া আমান আর তিথি সারাদিন শপিং করে ক্লান্ত হয়ে মায়াদের বাড়ি ফিরতেই দেখে মুনিয়া আহমেদ ড্রয়িংরুমে বসে আছে।
নিঝুম মাকে দেখতে পেয়ে
-” আম্মু তুমি কখন এলে?
মুনিয়া আহমেদ একটা শব্দ ও বের না করে নিঝুমকে হাত ধরে টেনে একটা রুমে নিয়ে যায় আর দরজা বন্ধ করে দেয়।
নিঝুম অবাক হয়ে
-” আম্মু কি হয়েছে এমন করছো কেন? আর দরজা বন্ধ করলে কেনো?……..
চলবে……….
ভুল ত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। পর্বটা কেমন হলো জানাবেন। 😪😪😪