#মায়াদেবের_মায়া
#পর্ব_৪
#তাহমীম
বেল্কুনির রেলিংয়ে এক হাত দিয়ে ধরে আরেক হাতে মুখ চেপে ধরে কাদঁছে মায়া ওই দিকে আরেক বেল্কুনিতে দাঁড়িয়ে চেয়ে আছে নিঝুম।নিঝুম দাঁড়িয়ে দেখছে মায়া কান্না করছে। ভীষণ কান্না করছে। কান্নার গতি কোন মতেই কমছে। কমছে না নিঝুমের হৃদয়ের ছুরিঘাত। মায়ার কান্না দেখে নিঝুমের চোখ দিয়ে অনুরুপ ভাবেই পানি ঝরছে। ইচ্ছে হচ্ছে দৌঁড়ে গিয়ে মায়াকে আষ্টেপিষ্টে জড়িয়ে ধরতে। জড়িয়ে ধরে বলতে ইচ্ছে করছে এইতো আমি মায়াবতী, কান্না করছো কেন? তুমি তো শুধু আমারই মায়াবতী । তোমাকে যে আমি কারো হতে দিবো না, দিবো না হারাতে। মায়াবতী কেন কান্না করছো তুমি। আমার বুকে যে ব্যাথা হচ্ছে ভীষণ। মায়াবতী তোমার মায়াদেব যে শুধু তোমায় ই ভালোবাসে।
নিঝুম আর কিছু না ভেবে মায়ার কাছে যাবে বলে পা বাড়ায়। বেল্কুনির ওই পাশ থেকে এসে দেখে আমান নিঝুমের বাহু ধরে জিজ্ঞেস করছে
-” কি হয়েছে মায়া?
মায়া কিছু বলছে না। আমান আবার জিজ্ঞেস করছে কি হয়েছে। হঠাৎ আমান মায়াকে জড়িয়ে ধরে। এই দৃশ্য দেখে নিঝুমের খুব ইচ্ছে হচ্ছিলো আমানকে সরিয়ে দিতে কিন্তু ও যে অসহায় পারবে না কিছু করতে। নিঝুম চুপ করে চলে ওই খান থেকে।
মায়া আমানকে ছাড়িয়ে
-” কিছু হয়নি আমার। ওই তো মাথা ব্যাথা করছিলো তাই এই খানে এসে দাঁড়ালাম এখন চল যায় সবাই অপেক্ষা করছে।
বলেই মায়া ওই খান থেকে আগে চলে আসে। এতো কান্নায় কই নিঝুমকে তো সে পেলো না। আমান এসে জিজ্ঞেস করছে কি হয়েছে। মায়াদেব কি জানে না ওর কান্না থামে না মায়াদেবের জন্য। কই একটু সান্ত্বনা দিতে ও তো আসেনি। আমরা বরাবরই এমন মানুষকে কেনো ভালোবেসে ফেলি যাদের আমাদের একটু ও পরোয়া থাকে না। আমারদের থাকায় না থাকায় কিছুই যায় আসে না তাদের। আমরা বরাবর মরিচিকার পিছনে দৌড়ে ক্লান্ত হয়ে পড়ি। থমকে যায় সেই জায়গায়। সামনে তাকিয়ে দেখি শুধুই মরুভূমি পিছনে তাকিয়ে দেখি অতল সাগর। আটকা পড়ে যায়। না পারি সামনে যেতে না পারি পিছনে যেতে। কষ্টে বুক ফেটে যায় চিল্লিয়ে সবাইকে বলতে ইচ্ছে করে আমি ওকে ভালোবাসি কিন্তু পারি না আমরা পারি না এমন বেহায়া হতে। আর পারি ও না তাদের আপন করতে।
মায়া গিয়ে দেখে তিথি মেয়েটার সাথে নিঝুম বসে বসে ফোন টিপছে। একজন আরেকজনের ফোন নিয়ে টানাটানি করছে। মায়ার চোখ দিয়ে এমনিতেই আবার এক ফোটা জল গড়িয়ে পরলো। ভালোবাসার মানুষকে হয়তো পৃথিবীর কেউই অন্য কারো সাথে দেখতে পারেনা।
নিঝুম মায়াকে দেখে মায়ার কাছে এসে দাঁড়ায়। মায়া সরে যেতে নিলেই।
-” মায়া একটু উপরে চলো তোমার সাথে কথা আছে।
মায়া একটু অবাক হলো ওর সাথে কি কথা বলবে যার ভালোবাসার কোন মূল্য দেয় না সে।আবার মনে হলো মায়াদেব কি তাহলে না করবে আমানকে বিয়ে করতে।মায়াদেব কি মায়া কে বলবে মায়া আমি ও তোমায় ভালোবাসি৷ মায়ার মুখে খুশির ছাপ ফুটে উঠে। অবশেষে তাহলে মায়ার মায়াদেব বুঝতে পেরেছে তার মায়া তাকে কতোটা ভালোবাসে। মায়ার কাংখিত মুহুর্ত তবে কি বেশি দূরে নয়?
-” কি হলো মায়া?
মায়ার ভাবনার ঘোর কেটে গেলো মায়াদেবের ডাকে
-” হুম আমি যাচ্ছি উপরে আমার রুমে, আপনি আসুন।
মায়া দাঁড়িয়ে আছে তার মায়াদেবের জন্য মায়াদেব আসতে এতো দেরি হচ্ছে কেনো। অবশ্য ভালোবাসার মানুষের জন্য অপেক্ষা কয়েক মুহুর্ত ও কয়েক জনম মনে হয়। মায়া
হঠাৎ ই দেখতে পেলো নিঝুম আসছে মায়ার রুমের দিকে, নিঝুম ঘরে ঢুকতেই মায়া নিঝুমের বুকে ঝাপ্টে পড়ে। নিঝুম কে জড়িয়ে ধরে শরীরের সবটুকু শক্তি দিয়ে। যেনো মায়ার মায়াদেবকে কেউ আলাদা না করতে পারে মায়ার কাছ থেকে। মায়ার এলোমেলো চুল ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে নিঝুমের মুখে নিঝুমের পুরো শরীরে। নিঝুমের ও খুব ইচ্ছে হচ্ছে খুব মায়াকে জড়িয়ে ধরতে। এলোমেলো ভাষায় বলতে ভালোবাসি মায়াবতী। কিন্তু নিঝুম নিজেকে সামলে দাঁড়িয়ে রয়। মায়াকে হাত দিয়ে আগলে ধরে না।
নিঝুমের সারা না পেয়ে মায়ার হুশ আসে। এটা কি করলো মায়া খুশিতে। নিঝুম কি বলতে চাই না শুনেই এটা কি করলো মায়া। মায়া লজ্জায় নিঝুমের বুক থেকে মাথা তুলতে ও ভয় পাচ্ছে।
আচমকা মায়া নিঝুমের বুক থেকে সরে যায়। দূরে মাথা নিচু করে দাঁড়ায়। লজ্জায় নিঝুমের মুখের দিকে চাইতে পারছে না মায়া ।
নিঝুম ও অস্বস্তিতে পড়ে যায়। নিরবতা কাটিয়ে নিঝুমই মায়াকে বলে।
-” নিচে যেই মেয়েটা এসেছে তিথি আমি ওকে ভালোবাসি। তোমার বিয়ে হয়ে গেলেই আমি ওকে বিয়ে করবো আমাদের প্রেম অনেক দিন ধরেই কাউকে বলতে পারছি না। তোমায়ই প্রথম বললাম আর আম্মু জানে। আম্মু বললো তোমাদের বিয়ের পরই আমাদের বিয়ে ঠিক করবে।
মায়ার মাথায় যেন আকাশে ভেঙে পরেছে কি বলছে এই সব তার মায়াদেব। মায়া বিস্মিত হয়ে দুচোখ তুলে তাকায় নিঝুমের দিকে। চোখ দিয়ে হয়তো এখনি বৃষ্টি নামবে। যেই ঘর এতো দিন মায়াদেবকে নিয়ে বানিয়েছে মায়া সেই ঘর মায়ার না অন্য কারো। মায়ার চোখ দিয়ে অনবরত পানির স্রোত বয়ে যাচ্ছে। আকাশের বৃষ্টি হয়তো হার মানবে মায়ার দুচোখের বৃষ্টির কাছে।
মায়া নিঝুমের দিকে তাকিয়ে
-” আপনি সত্যিই ভালোবাসেন তাকে?
-” হ্যা জীবনের চাইতে ও বেশি। আমি ওর জন্য সব করতে পারবো।
মায়ার কান আর কিছু শুনতে পাচ্ছে না। মনে হচ্ছে ওর আত্না ওকে ত্যাগ করবে এখনি। মায়ার শ্বাস হয়তো এখনি বন্ধ হয়ে যাবে।
মায়া নিঝুমের মুখে ওই মেয়ের সম্পর্কে আর কিছু শোনার আগেই সেখান থেকে চলে যেতে নিলো। কিন্তু দরজার কাছে গিয়েই মায়া দরজায় দুহাত দিয়ে ধরে দাঁড়ালো মায়ার পা চলছে না মাথা ভন ভন করছে। মনে হচ্ছে সব কিছু কেমন ঘুরছে। সাথে মায়াদেব ও।
.
.
.
মায়ার আর কিছু মনে নেই চোখ খুলে দেখে আমান, মায়ার আম্মু, মায়ার আব্বু তার পাশে বসে আছে। নিঝুম কে খুঁজছে মায়া। তার মায়াদেব কোথায়? মায়াদেব কি মায়াকে এই ভাবে ফেলে চলে গেছে?
মায়ার আম্মু মায়ার জ্ঞান ফিরেছে দেখে মায়ার আরো কাছে এসে বসে।
আমান মায়ার হাত ধরে
-” মায়া তুই ঠিক আছিস?
-” হুম।
-” ফুপিমা কোথায়?
-” আব্বু ফুপিমা আম্মু নিঝুম মাত্র নিচে গেলো। সবাই নিচে ই। তোর কি হয়েছিলো?
মায়ার আম্মু আমানের কথা কেড়ে নিয়ে
-” জ্ঞান হারাবে না? সারাদিন কিছু খায় না। খালি বাদরামি।
মায়া উঠছে দেখে মায়ার আব্বু বললো
-“শুয়ে থাক তোর উঠতে হবে না।
-” না আব্বু উঠতে হবে সবাই নিচে চলো।
.
.
.
সবাই বসে আছে চুপ করে মায়া তাদের কিছু বলবে তাই। মায়ার ফুপিমা মায়া কে জিজ্ঞেস করে
-” কি বলবি মায়া?
-” বলছি ফুপিমা
-” হুম বল
-” আমি আমানকে বিয়ে করতে রাজি আব্বু। যত তারাতাড়ি পারো তোমরা বিয়ের ব্যবস্থা করো……….
চলবে……
ভুল ত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।