#মায়াদেবের_মায়া
#পর্ব_৫
#তাহমীম
আমি আমানকে বিয়ে করতে রাজি আব্বু। যত তারাতাড়ি পারো তোমরা বিয়ের ব্যবস্থা করো।
মায়ার কথা শোনে আমান খুশিতে লাফিয়ে উঠে। দৌড়ে মায়ার কাছে গিয়ে মায়াকে জড়িয়ে ধরে। মায়ার কোমড় জড়িয়ে ধরে উপরে তুলে ঘোরাতে শুরু করে আমান সবার সামনেই । হতভম্ব হয়ে যায় সবাই আমানের এই সব দেখে আর মায়ার কথা শুনে। মুনিয়া আহমেদ একটু অবাক হয়ে
-” সত্যি বলছিস?
-” হুম ফুপিমা।
ওই দিকে নিঝুমের চোখে পানি চিক চিক করছে। নিঝুম মেনে নিতে পারছে না মায়া রাজি হয়ে গেছে। তবে কেন পারছে না? নিঝুম তো তাই চাইতো যাতে মায়া রাজি হয়ে যায় আমানকে বিয়ে করতে। আমানকে আপন করে নেয় নিঝুমকে ভুলে। তবে কেনো এতো খারাপ লাগছে নিঝুমের? তাহলে কি নিঝুম মায়াকে ছাড়া থাকতে পারবে না? ওর মায়াবতী ওকে ভালোবাসতো এখন কি তবে আমানকে ভালোবাসবে? নিঝুমের মায়াবতী কি এখন তবে আর ওর জন্য কবিতা লিখবে না? গান গাইবে না? গুন গুন করে আওয়াজ তুলবে না সে আছে আশে পাশেই? তবে কি এখন রোজ আমানের জন্য সব করবে?
নিঝুমের বুকে তীব্র ব্যাথা অনুভব হচ্ছে। মনে হচ্ছে হার্টের কার্যক্রম হয়তো এখনি বন্ধ হয়ে যাবে। নিঝুমের এখন পালাতে হবে এখান থেকে নয়তো সে মায়াকে ভালোবাসে তা বলে দিবে। আর তা হোক নিঝুম চায় না। আমান ওকে অনেক ভালো রাখবে, ভালোবাসবে আর ভালো থাকবে ও। শুধু শুধু কেন দুই পরিবারের শান্তি নষ্ট করবে নিঝুম মায়াকে ভালোবাসে বলে দিয়ে!! সব ভালোবাসা পেতে হবে এমন তো কোন কথা নেই। কিছু ভালোবাসা থাকুক না অপূর্ণ। কিছু জিনিস অপূর্ণতেই ভালো লাগে। ভালোবাসতে শুধু কাছেই যেতে হবে তার তো কোন মানে নেই। দূরে থেকে ও ভালোবাসা যায় দিব্বি। মায়াবতীকে পাওয়ার দামী অনুভুতি ওকে ছুঁবার তীব্র ইচ্ছে এমনই থাক না! ক্ষতি কি? এমন অনুভুতি কখনো নষ্ট হবে না। উল্টো দিন দিন আরো দামী হয়ে উঠবে ।
নিঝুম আর কিছু না ভেবে মায়ার কাছে যায়। মায়ার কাছে গিয়ে ওকে
-“অভিনন্দন মায়া। সুখি হও
মায়া নিঝুমের চোখে অভিযোগ খুঁজছে। মায়ার জন্য নিঝুমের অভিযোগ খুঁজছে। এই হয়তো বলবে মায়া কেন তুমি এমন করলে কেন আমানকে বিয়ে করতে রাজি হলে? আমি যে তোমায় ভালোবাসি তুমি জানো না? কিন্তু হায় মায়া নিঝুমের চোখে কোন অভিযোগ দেখতে পাচ্ছে না। মায়াকে জড়িয়ে ধরে মায়া তুমি শুধু আমার বলার কোন আকুতি দেখতে পাচ্ছে না মায়া নিঝুমের চোখে । মায়ার ভালোবাসা কি এতোই কম ছিলো মায়াদেবের জন্য? যে ভালোবাসা মায়াদেবকে ছুঁতে পারলো না?
এতো ভালোবাসা কোন পাথরকে দিলে ও হয়তো সে জীবিত হয়ে বলতো আমি ও তোমায় ভালোবাসি। কিন্তু মায়ার ভালোবাসায় কেনো মায়াদেবের মন গলাতে পারেনি? কেন অভিযোগ নেই আজকে তার মায়াদেবের? থাকবেই বা কি করে!! মায়াদেব যে অন্য কারো।আমার মায়াদেব তো ভালোবাসে অন্য কাউকে। আমি কি করে বাধা হয়ে দাড়াঁবো ওদের মাঝে? সরে এলাম আমি, আমার মায়াদেব ভালো থাকুক।
আমানের ডাকে ঘোর ফিরে দুজনের ই এতোক্ষন কি তবে দুজনের দিকে দুজন তাকিয়ে ছিলো? মায়া মাথা নিচু করে ফেলে মায়া।
আমান নিঝুমকে জড়িয়ে ধরে। নিঝুম আমানকে এক হাতে ধরে বললো
-” কনগ্রেটস।
নিঝুম মায়ার দিকে তাকিয়ে বললো এখন আমার যেতে হবে। আজকে অনেক কাজ ফেলে সারা দিন এসব করলাম। একটা ভিডিও কনফারেন্স আছে আমার যেতে হবে এখন। নিঝুম আমানের দিকে তাকিয়ে একটা হাসি দিয়ে
-” তোরা এনজয় কর ভাই। আমি আসি।
নিঝুমের চলে যাবার কথা শুনে তার বড় মামা আশিক আহমেদ
-” এই তো এলি এখনো চলে যাবি? তুই না থাকলে ভালো লাগে না বাবা। এখন যাস না।
শফিক আহমেদ ও নিঝুমের কাছে গিয়ে কাধে হাত দিয়ে।
-” পরে গেলে হয় না?
নিঝুম শফিক আহমেদ এর হাত ধরে
-” না মামা এখন যেতেই হবে আমার। আমার যে চলে যাবার সময় হয়ে গেছে।( দীর্ঘশ্বাস ফেলে)
কথাটা শুনেই মায়া নিঝুমের দিকে তাকায়
-“সবাই অপেক্ষা করছে কল দিবে এখনি জয়েন হতে। আমি যায় মামা
নিঝমের দাদা আমির চৌধুরী
-” নিঝুম চল আমি ও যাবো। আমার প্রেশারটা বেড়ে যাচ্ছে হয়তো।
মুনিয়া আহমেদ শশুরের কথা শুনে
-” সে কি বাবা আপনি আমায় আগে বলেননি কেন? খাবার খেয়ে যাবেন তো।
-” না আমার এখন দাদুভাই এর সাথে যেতে হবে। তুমি রাশেদকে আর অহনা আর অনিকে নিয়ে চলে এসো।
.
.
.
নিঝুম চলে যাওয়ায় মায়ার অস্থিরতা আরো বেড়ে গেছে। সে কি ঠিক করলো তবে? ঠিকি তো করেছে আর কি বা করার আছে বা ছিলো মায়ার? সব তো এমনিতেই শেষ। মায়া জানালার পাশে দাঁড়িয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে। এটাই এখন এক মাত্র মাধ্যম তার মায়াদেবকে দেখার। তার সাথে কথা বলার। মায়ার দুচোখ বেয়ে অশ্রুধারা টুপটুপ করে পড়ছে
কিছু ভালোবাসা নাহয় না পাওয়াই থাক পেয়ে গেলেই হয়তো মূল্য কিছু কমে যায়। না পেলে হয়তো তার দাম আরো কয়েক লক্ষ গুন বৃদ্ধি পায়। আমি না হয় মায়াদেবকে ভালোবেসে যাবো। ভাব্বো আমার একটা মায়াদেব ছিলো যার রঙে আমি রঙিন হতাম। যাকে ভালোবাসি ভাবলেই খুশিতে আত্নহারা হতাম। এই অনুভুতি যে কতো খুশির সেটাকে তো বাঁচিয়ে রাখতে পারবো।
.
.
লাইট অফ করে বসে আছে নিঝুম। পুরো ঘরে অন্ধকারে পিনপিন করছে। কোথাও একটু ও আলো নেই। অন্ধকার বেশ ভালো লাগছে নিঝুমের। তবে মজার ব্যপার ছিলো আগে নিঝুম অন্ধকার ভয় পেতো। মায়া বলতো এই মায়াদেব অন্ধকারে ভয় কিসের অন্ধকারে যে নিজেকে লুকানো যায়। এর থেকে তৃপ্তি আর কি আছে?
আজকে সেই তৃপ্তি খুঁজে নিতে চাচ্ছে নিঝুম কিন্তু পাচ্ছে না কোন ভাবেই পারছে না।
খাটের সাইডে ফ্লোরে হেলান দিয়ে বসে আছে নিঝুম। আমির চৌধুরী রুমে এসে লাইট অন করতেই নিঝুম চোখ খুলে তাকায়।
-” দাদু লাইট অফ করে দাও তো। অন্ধকার রুমই ভালো লাগছে আমার।
নিঝুমের দাদা আসতে আসতে নিঝুমের কাছে গিয়ে খাটে বসে নিঝুমের চুলে হাত দেই।
-” কাদঁছিস কেন?
-” কোথায় কাদঁছি দাদু? আমার মাথা ব্যাথা করছে তাই লাইট অফ করে বসে আছি।
-” আমাকে শিখাতে আসছিস? তুই জানিস না আমি তোর সময় পার করে এসেছি। আমির চৌধুরী বংশের কেউই প্রেমে ব্যার্থ হয়ে তোর মতো ঘরে লাইট অফ করে বসে থাকেনি।
-” দাদু ভালো লাগছে না আমার তুমি এখন যাও।
-” চুপ কর বেটা। তোর দাদিকে আমি প্রেম করে ভালোবেসেই বিয়ে করে এনেছি।শুনেছি আমার বাবা ও প্রেম করে বিয়ে করেছে। তোর মা মুনিয়াকে ও আমার রাশেদ কিন্তু ভালোবেসেই বিয়ে করে এনেছে। আর তুই কিনা ওই বাড়ির মেয়ের জন্য কান্না করছিস? আমি চৌধুরী সাহেব তোর বিয়ের কথা বললে হাজার মেয়ের বাপ এসে দাঁড়িয়ে থাকবে আমার নাতিকে বিয়ে করাতে। তার তুই আমার নাতি হয়ে লাইট অফ করে বসে আছিস? আমাদের বংশের পুরুষরা মহা প্রেমিক পুরুষ ছিলেন।
নিঝুম দাদার দিকে তাকিয়ে
-” কি বলছো দাদু আসলেই?
-” হ্যা আমি কি বুড়ো বয়সে তোকে মিথ্যা বলবো নাকি? শোন মেয়েটা তোকে অনেক ভালোবাসে। ওর অধিকার আছে তুই ওকে ভালোবাসিস কিনা এটা শোনার। আমি মেয়েটার চোখে তোর জন্য অগাধ ভালোবাসা দেখেছি। এই সব ঝামেলার জন্য এই নিষ্পাপ মেয়ের অগাধ ভালোবাসাকে না দেখার ভান করিস না দাদু ভাই৷ আল্লাহ সইবে না যে।
-” এখন আমি কি করবো দাদু? আমান ও যে মায়াকে ভালোবাসে। আমান যদি কিছু করে বসে মায়ার জন্য আর কিছু হয়ে যায় আমি নিজেকে কখনো মাফ করতে পারবো না। এতো স্বার্থপর আমি কি ভাবে হবো? দুটো পরিবার যে নষ্ট হয়ে যাবে।
-” কিচ্ছু হবে না। আমি আমান দাদুভাইকে বুঝাবো। তুই কি আমানকে কখনো বলেছিস? যে তুই ও মায়াকে ভালোবাসিস আর মায়া তোকে?
-” না বলিনি। তবে আমান হয়তো জানে।
-” তাহলে এতো ভয় পাচ্ছিস কেন? তুই মায়াকে আগে বল তুই ওকে ভালোবাসিস আর পরে আমানকে সবাই মিলে বুঝাবো বসে। না হয় এই ভাবে তিনটি জীবনই নষ্ট হয়ে যাবে দাদু ভাই তোরা কেউ ভালো থাকতে পারবি না। মায়া তোকে ভালোবাসে ও তোকে ছাড়া ভালো থাকবে না। ভালোবাসা এতো সহজ নয় যে যাকে ইচ্ছে তাকে ভালোবেসে ফেলবে।
-” দাদু ভাই
-” কি
-” আই লাভ ইউ। তুমি ঠিকি বলেছো দাদু ভাই। আমার মায়াবতী আমাকে ছাড়া ভালো থাকতে পারবে না। না মায়াবতীর মায়াদেব তাকে ছাড়া ভালো থাকবে। আমি কালকেই মায়াকে বলবো আমি ও মায়াকে ভালোবাসি। ভালোবাসে তার মায়াদেব তাকে…….
চলবে………
ভুল ত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।