মাস্টার মাইন্ড কিলার পর্ব-০৪ এবং শেষ পর্ব

0
987

#মাস্টার_মাইন্ড_কি_লা_র পর্বঃ-(৪-শেষ)
লিখাঃ- AL Mohammad Sourav

নীলা গভীর রাতে আমাকে আরেকবার ফোন করে। এবং অনেকক্ষণ নিরব থাকার পর নীলা আমাকে বলে। মা আমাকে মনে হয় আজ মেরে ফেলবে। আর কোনো কথা বলেনি মোবাইলটা একে বারে সারা রাত বন্ধ বলছে। আমি হাজার বারের বেশি ফোন করেছি। তখনি জুয়েল বলে। আপনি তখন রাতে আপনার মেয়ের কাছে যাননি কেনো? আর পুলিশকে জানাননি কেনো?
এর আগেও নীলা আমাকে ফোন করে বলতো ওদের মধ্যে ঝগড়াঝাঁটি হয়ছে। কিন্তু পরে সবকিছু ঠিক হয়ে যেতো। আমি মনে করেছি সকালে যাবো কিন্তু সকালে আমার মেয়ে দুনিয়া থেকে চলে গেছে। স্যার এইটা কোনো আ!ত্ম!হ!ত্যা না এটা পরিকল্পিত খু!ন।
জুয়েল ওনার জবান বন্ধী রেকর্ড করে রাখছে। রাজিবকে নিয়ে বেরিয়ে পড়ছে। আজ এর একটা সমাধান বের করতে হবে। সোজা আরমানের অফিসে এসেছে৷ এবং আরমান সম্পর্কে সবাইকে জিজ্ঞেস করা হয়ছে।

সবাই আরমানের সম্পর্কে খুব ভালো কথাই বলছে। কোনো কিছু না পেয়ে আবার সেই বাড়িতে গেছে। এটাই শেষ এরপর যদি কোনো কিছু না পায় তাহলে এটাকে এক্সিডেন্ট বলে চালিয়ে দিবে। বাড়িতে এসে সবকিছু এবার ঠান্ডা মাথায় খুঁজতে শুরু করছে। কোনো কিছুই পাচ্ছে না তখনি মনে হলো একবার বাথরুমে যেতে হবে। যেই বাথরুমে গিয়ে প্রথমে কল গুলো ছেড়ে দিছে। পানি যাচ্ছে কিন্তু কিছুক্ষণের মধ্যে জুয়েল দেখো বাথরুমের পানি দিয়ে ভরে গেছে। জুয়েল মনে মনে বলে যা ভাবছি ঠিক তাই হয়ছে। রাজিব হোসেন এসে বলে স্যার কি হলো বাথরুমের পানি ছেড়ে রাখছেন কেনো?

জুয়েল মুচকি হেসে বলে রাজিব সাহেব খু!নী!র সন্ধান আমরা পেয়ে গেছি। একজন সুইপার ডেকে আনুন। রাজিব ফোন করে বলে দিছে একজন কনস্টেবল কিছুক্ষণ পর একজন সুইপার নিয়ে সাথে হাজির হয়ছে। রাজিব কিছু বুঝতে পারছেনা কি করতে চাচ্ছে। জুয়েল সুইপারকে বলে বাথরুমের পাইপ পরিস্কার করতে। এবং সবকিছু বাহিরে বের করতে। সুইপার কথা মত কাজ করতে আরম্ভ করছে। প্রথমে শুধু কিছু পলিথিন আর আর্বজনা বের করছে। এরপর এমন জিনিস বের হয়ছে তা দেখে রাজিব বলে উঠে স্যার তাহলে আমাদের ধারণা ঠিক আছে?

হ্যা সেইটাই তো মনে হচ্ছে। বাথরুম থেকে হ্যান্ড গ্লাভস বের হয়ছে তাও আবার ছয় জোড়া। সবগুলি পরিস্কার করে ল্যাবে পাঠিয়ে দেওয়া হয়ছে। তবে জুয়েল থানায় এসেই আরমানকে আলাদা করে নিয়ে থার্ড ডিগ্রী দেওয়া শুরু করছে। আরমান মার খাচ্ছে কিন্তু মুখ খুলছে না তখনি ওর হাতে চা!কু দিয়ে টান মারছে আর তখনি বলে।

স্যার সব বলছি সব বলছি আসলে নীলা’কে আমিই খু!ন করেছি। তবে মা’কে খু!ন আমি করিনি। মা’কে খু!ন করছে অন্য কেউ।
কে খু!ন করছে তার নাম ঠিকানা সবকিছু বল। তানা হলে তোকে আমি এখানেই মে!রে ফেলবো।
বলছি স্যার সব বলছি। বেশ কিছুদিন ধরে নীলার সাথে আমার টুকটাক ঝগড়াঝাঁটি হচ্ছে। কারণ আমি ইদানিং দেরি করে বাড়িতে ফিরতাম। আর নীলা আমাকে সন্দেহ করতো। নীলা আমাকে প্রায় অনেক টর্চার করতো যার কারণে আমি অন্য নারীর প্রতি আসক্তি হয়ে যায়। এমন ভাবে কিছুদিন যেতেই আমি একটা মেয়ের প্রেমে পড়ে যায়। আর কিছুদিনের মধ্যে বিয়ে করে ফেলি। আর সেটা নীলাকে না জানিয়ে। কিন্তু যেদিন অনেক ঝগড়া হয় সেদিন নীলা আমার বিয়ের কথা যেনে যায়। এবং আমাকে হু!ম!কি দা!ম!কি দিতে থাকে। এমনকি সে আমাকে পুলিশের কাছে ধরিয়ে দিবে বলছে তখনি ওর সাথে অনেক ঝগড়াঝাঁটি হয়। আর আমি ওকে মারধর করি। সে তার মা’কে ফোন করে বলে সকালে চলে যাবে তখনি আমি কিছুটা ভয় পেয়ে যায় কারন নীলা যদি চলে যায় তাহলে আমার সবকিছু শেষ হয়ে যাবে। আমার এত টাকা পয়সা বাড়ি সব সবকিছু চলে যাবে৷ তাই আমি আর আমার স্ত্রী শেলী মিলে প্ল্যান করে নীলা’কে মদ বন্ধ করে খু!ন করি। এরপর ওর নিজের ওরনা দিয়ে ফাঁ!স টানিয়ে দেয়।

আমি নীলাকে বুঝাতে চেষ্টা করি কিন্তু সে কোনো বুঝতে রাজি হয়নি। তাই আমি নীলাকে খু!ন করে ফাঁ!সি টানিয়ে দেয়। এবং সেদিন খুব ভোরে আমি অফিসে চলে আশি আর নিজের মত করে একটা চিরকুট টি-টেবিলে রেখে আসি।
নীলার সাথে যদি তোর বনিবনা না হয় তাহলে ডিভোর্স দিয়ে দিতি। কিন্তু খু!ন করতে গেলি কেনো?
কারণ নীলার নামে বিশাল সম্পত্তি রেখে গেছে ওর বাবা। এবং আমি যেই অফিসে চাকরি করি সেটাও নীলার জন্য করতে পারছি। এমনকি আমরা যেই বাড়িতে থাকতাম সেইটাও নীলার নামে ছিলো। যদি ওকে ডিভোর্স দিতাম তাহলে আমাকে আর আমার পরিবারকে রাস্তায় এসে বসতে হতো।
এতকিছু থাকতে ওকে খু!ন করতে গেলি কেনো?
কারণ নীলা কোনোদিন মা হতে পারবে না। সেটা ডাক্তার আমাকে বলছিলো।
তাহলে পোসমর্টেম রিপোর্টে তো দেখলাম নীলা অন্তঃসত্ত্বা ছিলো?
সেটা ভুল আমি পড়ে নতুন একটা পোসমর্টেম রিপোর্ট নিজের মত করে তৈরি করে আপনাদের এক কনস্টেবলকে দিয়ে আপনার টেবিলে রেখেছি। যার কারণে প্রথমে আপনি রিপোর্টে অন্তঃসত্ত্বা দেখতে পাননি।
কনস্টেবল সে কে? নাম কি ওর?
ওর নাম সফিউল। জুয়েল কিছুটা রেগে গিয়ে বলে সবাই নিজেকে বিক্রি করতে তৈরি হয়ে আসে। আচ্ছা তোর মা’কে কেনো খু!ন করতে হলো?
কারণ মা দেখে ফেলছে আমি আর শেলী মিলে নীলাকে খু!ন করেছি। আর সেই জন্য শেলী মা’কে খু!ন করছে। তবে এটা আমি শিউর না।

শেলীকে কোথায় পাবো? ও এখন কোথায় আছে আমি কিছু জানি না তবে সে এই শহরে কোথাও লুকিয়ে আছে।
শেলী দেখতে কেমন? তখনি আরমান তার মোবাইলটা আনতে বলে। জুয়েল মোবাইলটা দিলে সে শেলীর ছবিটা দেখায়। ছবিটা দেখে জুয়েল অবাক হয় আর মুচকি হেসে বলে। ওর জন্য এত ভালো একটা স্ত্রীকে খু!ন করেছিস? তুই জানিস এই মেয়ের কতটা স্বামী আছে? ওর কাজই বড়লোক বিবাহিত ছেলেদের টার্গেট করে ফাঁ!সা!য়। এরপর বিয়ে করে নিজে আখের গুচিয়ে ডিভোর্স দিয়ে দেয়। তবে আর ওর রক্ষা নেই এবার ওর জীবনে ফুলস্টপ করে দিবো। জুয়েল আরমানকে সাময়িক চিকিৎসার জন্য হসপিটাল পাঠিয়েছে।

রাজিব হ্যান্ড গ্লাভসের রিপোর্ট পোসমর্টেম রিপোর্টের সাথে মিলিয়ে দেখছে। কিন্তু মিলছে না তখনি জুয়েল বলে এই পোসমর্টেম রিপোর্ট নকল। আসলটা ল্যাব থেকে আনতে হবে।
কি বলছেস স্যার?
হ্যা কনস্টেবল সফিউলকে সময়িক বরখাস্ত করা হয়ছে। রাজিব আর জুয়েল দুজনে বেরিয়ে পড়ছে সাথে দুজন নারী কনস্টেবল নিয়েছে কারণ যাকে ধরতে যাচ্ছে সে একজন নারী মানে শেলীকে ধরতে যাচ্ছে। যেতে যেতে সবকিছু খুলে বলছে রাজিবকে। রাজিব সব শুনে বলে আমি প্রথম থেকেই আরমানকে সন্দেহ করে আসছি। ও ছাড়া এই কাজ কেউ করবে না। আমার সন্দেহ ঠিক হয়ছে।

আরমানের ঠিকনা মতে এসে দেখে শেলী বাড়িতেই আছে। জুয়েলকে দেখে অনেকটা অবাক হয়। কারণ এই শেলী একটা সময় জুয়েল প্রেমিকা ছিলো। শেলী কিছু বলার আগেই রাজিব নারী কনস্টেবলকে বলছে এরেস্ট করতে। ওরা শেলীকে এরেস্ট করে গাড়িতে বসিয়ে দিছে। শেলীকে সোজা থানায় নিয়ে আসে আর সামান্য টর্চার করতেই শেলী সবকিছু বলে দেয়। কিভাবে আরমানের মা’কে খু!ন করছে। কারেন্টের তার দিয়ে সারা ঘর ছিটিয়ে রাখে। যখনি ওনি ঘরে প্রবেশ করে তখনি শেলী সুইচ চাপ দেয়। আর সেখানেই ওনি মা!রা যান। ওনি মা!রা যাবার পড়ে সব তার খুলে শেলী সাথে করে নিয়ে গেছে। তখনি জুয়েল বলে তুমি ঐ বাড়িতে গেছো কিন্তু সামনে যে সিসি ক্যামেরা ছিলো সেখনে তোমার ভিডিও বা ছবি উঠে না কেনো?
আমি পিছন দিয়ে গেছি যার করণে কোনো প্রমাণ নেই। কিন্তু এতকিছুর পরও কি করে তুমি এসব জানতে পারলে? তখন জুয়েল মুচকি হেসে বলে।

খু!নী যত মাস্টার মাইন্ড কি-লা-র হোক কিন্তু তারা ভুল করবে। আর সেই ভুল আরমান সাহেব করছে। ওনার হ্যান্ড গ্লাভস গুলো বাথরুমে ফেলে দিয়ে। যাই হোক এখন শাস্তি দিবে আদালত তবে সবকিছু এটাই বলে তোমাদের ফাঁ!সি!র থেকে কেউ বাঁচাতে পারবে না। রাজিব আরমান আর শেলীকে পাঠিয়ে দিন জেল হাজতে আর আমি সব ফাইল স্যারকে দিয়ে দিচ্ছি।

জুয়েল সবকিছু জমা দিয়ে চলে আসছে তখন আরমান সাহেবের সাথে লাস্ট একবার দেখা করতে আসছে। আরমান সাহেব ভেংগে পড়ছে তখন জুয়েল রানা বলে। নীলাকে খু!ন করলে আপনি শেলীর সাথে সুখের সংসার করতে পারবেন। আপনি সন্তানের মুখ দেখবেন কিন্তু আপনি কি এটা ভুলে গেছেন? নীলাকে খু!ন করলে আপনি খু!নী হয়ে যাবেন? আদালত আপানকে ফাঁ!সি দিবে? মিস্টার আরমার সাহেব সন্তান হয়নি বলে কাওকে খু!ন করে অন্য কাওকে বিয়ে করে সংসার করতে হবে? এখন জেলে বসে প্রহর গুনেন আর বাবা ডাক শুনার অপেক্ষা করুন। আরমান সাহেব তার ভুল বুঝতে পারছে তবে সে অনেকটা দেরি করে।

জুয়েল বেরিয়ে আসবে তখনি রাজিব বলে স্যার আবার কবে দেখা হবে? যখন আবার আমার ডাক পড়বে। এখন আসি ভালো থাকবেন আর সবসময় এমন সৎ থাকবেন মিস্টার রাজিব হোসেন।
ধন্যবাদ স্যার আর দুয়া করবেন বলে জুয়েলকে একটা স্যালুট দিছে তখন জুয়েল স্যালুটের জবাব দিয়ে চলে আসছে।

কিছু কথাঃ- জীবনের প্রথমবার আমি এমন থ্রিলার সিরিজ লিখেছি। যদি কোনো ভুল ত্রুটি হয়ে থাকে তাহলে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। আমি আমার সবটা দিয়ে চেষ্টা করেছি নতুন কিছু লিখার জন্য। জানিনা কতটুকু আপনাদের মনের মত করে লিখতে পারছি! তবে এটা একটা কাল্পনিক চিন্তা ভাবনা থেকেই লিখা। কারো জীবনের সাথে মিলে গেলে এর জন্য আমি দায় নয়। ইনশাআল্লাহ আবার নতুন কোনো কাহিনী নিয়ে আপনাদের সামনে হাজির হবো। এতদিন আপনারা সবাই ভালো থাকবেন আল্লাহ হাফেজ।
……………………………সমাপ্তি……………………………

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে