মায়া পর্ব-১৩ এবং শেষ পর্ব

0
1698

#মায়া
#পর্ব_১৩(শেষ পর্ব)
#ওয়াহেদ_মাহমুদ

অনেক দিন পরে আজ বর্ষা মায়ের সাথে দেখা করতে আসছে। কিন্তু ভাই ওয়াহেদের বাসায় এসে দেখে মা নেই। তাই ভাবি আফসানাকে বলে

মা কোথায় আছে ভাবি। কোথাও তো দেখছি না কেন?

জবাবে আফসানা বলে কেন তুমি জানো না? তোমার আম্মা বাসায় নেই। এক সপ্তাহ বাসায় আসবে না। তোমাদের দূর সম্পর্কের এক আত্মীয়ের বাসায় গিয়েছে কোনো এক কাজে। আসতে দেরি হবে।

বর্ষা তখন বলে মায়ের ফোনে কল দিলে বন্ধ দেখাই কেন? আমাকে তো কিছু বলেনি মা। আর মা তো চোখে দেখতে পারে না তাহলে গেল কিভাবে আর আসবে কিভাবে। আপনি আমার কাছে থেকে কী কিছু লুকাতে চাচ্ছেন?

আফসানা তখন বলে তোমার মায়ের ফোন নষ্ট হয়ে গিয়েছে। আত্মীয় বাসা থেকে ফিরে আসলে তখন তোমার ভাইয়া তোমার মাকে ফোন কিনে দিবে। আর তোমার কাছে থেকে কেন কোন কিছু গোপন রাখবো বলো? তোমার ভাইয়া দিয়ে এসেছে আবার কয়েকদিন পরে গিয়ে নিয়ে আসবে। তুমি কিছু চিন্তা করো না।

অনেক জার্নি করেছ তুমি এবার রেস্ট নাও যাও। পরে কথা হবে তোমার ভাইয়া কিছুক্ষণ পরেই চলে আসবে।

আর কিছু না বলে বর্ষা রুম চলে যায়।

কিছুক্ষণ পরে ওয়াহেদ চলে আসে বাসায়। ওয়াহেদ বাসায় আসলে আফসানা বলে।

তোমার বোন আসছে আজ বাসায়। কিছুক্ষণ আগেই এখানে এসেছে।

ওয়াহেদ তখন বলে তাহলে তো দেখা কথা দরকার। যাই আমি গিয়ে দেখা করে আসি।

আফসানা তখন ওয়াহেদকে থামিয়ে বলে। দাঁড়াও আগে আমার কথা শুনে যাও।

হ্যাঁ কি কথা বলো তাড়াতাড়ি।

তোমার বোন এসে আগেই আমাকে বলেছিল তার মা কোথায় দেখছি না কেন আর ফোনে কল দিলে যায় না কেন। আমি তখন তোমার বোন বর্ষা কে বলি তোমার আম্মা বাসায় নেই। দূর সম্পর্কের এক আত্মীয়ের বাসায় গিয়েছে। এখন আপাতত এক সপ্তাহ বাসায় আসবে না। আর বাসায় আসলে তুমি তোমার আম্মা কে ফোন কিনে দিবে।

ওয়াহেদ তখন আফসানাকে বলে তুমি বর্ষাকে মিথ্যা কেন বললে? সত্যটা কেন বলে দিলে না। আর এক সপ্তাহ পরে আম্মু কে না পেলে তখন কি করবে তুমি? আর সত্য কখনো চাপা থাকে একদিন না একদিন প্রকাশ পাবেই।

আফসানা তখন বলে তখন যা হয় দেখা যাবে। আর তোমার বোন এক সপ্তাহ এখানে থাকছে না। কাল না হয় পরশু চলে যাবে।

ওয়াহেদ তখন বলে বর্ষা তো তোমার উপর সন্দেহ করবে। মা তো চোখে দেখতে পারে না। তাহলে একা কিভাবে যাবে আর কিভাবে আসবে।

আফসানা তখন বলে তুমি কিছু চিন্তা করিও না। আমি সব বুঝিয়ে দিয়েছি। বলেছি যে তুমি দিয়ে এসেছ আবার তুমি গিয়ে নিয়ে আসবে‌।

তারপর রাতে খাবার টেবিলে বর্ষা ওয়াহেদ কে মায়ের কথা বলে। তারপর ওয়াহেদ ও আফসানার মতো করে বর্ষা কে বুঝিয়ে দেয়। তার পরের দিন বর্ষা চলে যায় আর বলে মা আসলে আমাকে ফোন দিবে। তারপর আমি মায়ের সাথে দেখা করব।

তারপর অনেক দিন পার হয়ে যায়। হার্ট অ্যাটাক করে সুরাইয়ার বাবা মারা যায়। সুরাইয়ার আপন বলতে পূর্ণতা ছাড়া আর কেউ নেই। সুরাইয়ার বাবা মারা যাওয়ার পরে সুরাইয়া কে অনুরোধ করে বলে আমার চোখ দুটো যেন সুরাইয়ার শ্বাশুড়ি কে দান করে। আমার চোখ দিয়ে যদি তোর শ্বাশুড়ি দেখতে পাই তাহলে তার অনেক উপকার হবে।

তারপর সুরাইয়া বৃদ্ধাশ্রমে গিয়ে শ্বাশুড়ি কে বলে আপনার কেউ পরিচিত থাকলে তার নাম্বার টা দেন। আপনার জন্য চোখ পাওয়া গিয়েছে। সুরাইয়ার শ্বাশুড়ি অনেক খুশি হয় আর জানতে চায় কে দিয়েছে তাকে চোখ। তখন সুরাইয়া বলে সময় হলে জানতে পাবেন। সুরাইয়ার শ্বাশুড়ি তখন ওয়াহেদের নাম্বার না দিয়ে মেয়ে বর্ষার নাম্বার দেয়।

অনেক দিন হয়ে যায় কিন্তু বর্ষার কাছে ফোন দেয় না। তাই বর্ষা আবার ভাইয়ের বাড়িতে যায়। ভাইকে প্রশ্ন করার সময় ঠিক তখনি একটা অপরিচিত নাম্বার থেকে ফোন আসে। আর বলে আপনার মায়ের জন্য চোখ পাওয়া গিয়েছে প্লিজ তাড়াতাড়ি এই বৃদ্ধাশ্রমে চলে আসেন। বর্ষা কিছু বুঝতে পারে না আর বলে আমার মা কেন বৃদ্ধাশ্রমে থাকবে? আপনার কিছু ভুল হচ্ছে।

সুরাইয়া তখন ফোন টা শ্বাশুড়ি কাছে দেয় আর বলে আপনার মায়ের সাথে কথা বলেন। কথা শুনে বর্ষা বলে এটাই তো আমার মায়ের কন্ঠ কিন্তু আমার মা বৃদ্ধাশ্রমে কেমন করে গিয়েছে?

তারপর ভাইয়ের কাছে থেকে সব জানতে পারে। তারপর বর্ষা ঘৃণা দৃষ্টিতে ভাই আর ভাবির দিকে তাকিয়ে বলে ছি ছি আপনারা এতটা নিচ নামতে পারেন ভাবতেই পারি না। অত্যন্ত একবার বলতে পারতেন আমাকে। দরকার হলে আমি আমার মাকে আমার কাছে রাখতাম।

তারপর সবাই মিলে বৃদ্ধাশ্রমে যায়। কিন্তু কাউকে দেখতে পাই না। সুরাইয়া কারোর সামনে আসে না আর কি কি করতে হবে সব ফোনে বলে। আর হাসপাতালে সবকিছু ম্যানেজ করে রেখেছে। সুরাইয়ার ফ্রেন্ড ওই হাসপাতালে ডাক্তার আর সেই অপারেশন করবে। তাই সুরাইয়ার কে বেশি কষ্ট করতে হয়নি।

অপারেশন হয়ে যায় বেশ কয়েকদিন। কিন্তু কেউ জানতে পারে না কে দান করেছে এই চোখ। আর আমাদের এতো বড় উপকার করলো। যেদিন চলে আসবে হাসপাতাল থেকে সেদিন ডাক্তার কে জিজ্ঞেস করে কে দান করেছে আমার মাকে এই চোখ।

তখন ডাক্তার হাসি দিয়ে বলে। সুরাইয়ার বাবা মারা যাওয়ার পরে এই চোখ দুটি আপনাকে দান করা হয়েছে। আর এসবের পিছনে মূল সুরাইয়ার।

তখন সবাই চমকে উঠে। কারোর মুখ দিয়ে আর কথা বাহির হয় না। কিছুক্ষণের জন্য সবাই নিস্তব্ধ হয়ে যায়। সুরাইয়ার শ্বাশুড়ির তখন আর বুঝতে বাকি রইলো না মাঝে মাঝে বৃদ্ধাশ্রমে সুরাইয়া দেখতে আসতো। কতটা নরম মনের মানুষ হলে এতো নির্যাতনের পরেও এতো বড় উপকার করতে পারে। সবাই অনেক অবাক হয়।

বর্ষা তার মাকে ভাইয়ার কাছে না রেখে নিজের সাথে করে নিয়ে যায়। ওয়াহেদ তখন বলে মা আমাদের কাছে থাকুক। সমস্যা হবে না। বর্ষা তখন বলে আমি চাই না আমার মাকে আবার বৃদ্ধাশ্রমে দিয়ে আসেন। আমি মাকে আমার কাছে রাতে চাই।

ওয়াহেদ তখন আফসানাকে বলে আজ তোমার জন্য বোনের কাছে আমার কথা শুনতে হলো। তোমার জন্য বৃদ্ধাশ্রমে মাকে বৃদ্ধাশ্রমে রেখে এসেছি। আর তোমার জন্যই বর্ষার সাথে মিথ্যা বলেছি। আফসানা তখন হাসি দিয়ে বলে। আর সে জন্যই তোমার মা চোখ পেয়েছে দেখতে পেয়েছে। বৃদ্ধাশ্রমে না দিয়ে আসলে পাইতো না🙄। এভাবে বেশ অনেক বছর কেটে যায়।

২৫ বছর পর।

সুরাইয়ার মেয়ে পূর্ণতা অনেক বড় ডাক্তার হয়েছে। সুরাইয়ার শ্বাশুড়ি ১৫ বছর আগে মারা গিয়েছে। ওয়াহেদ আফসানার সাথে কোনো যোগাযোগ নেই সুরাইয়ার। পূর্ণতা আজো জানে না তার বাবা কে। আর জানতেও চায়নি। কারণ সুরাইয়া কখনো তার সন্তান কে বাবার অভাব বুঝতে দেয়নি। পূর্ণতার কাছেই সুরাইয়া একজন আর একজন মেয়ে।

পূর্ণতা হাসপাতাল থেকে রাতের ডিউটি শেষে বাসায় এসে মাকে বলে জানো মা আজ কি হয়েছিল।

হ্যাঁ বলো কি হয়েছিল।

আজ হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য দু’জন এসেছিল। স্বামী স্ত্রী মেয়েটা একদম প্রায় তোমার বয়সের। একমাত্র ছেলে কিন্তু মা বাবার খোঁজ রাখে না।‌ বৃদ্ধাশ্রমে থাকে দুজনেই। চিকিৎসা করানোর জন্য এসেছিল। দেখে অনেক খারাপ লাগছিল। স্বামী টা হাঁটতে পারে না হুইলচেয়ারে বসে থাকে। আমি অনেক সুন্দর করে চিকিৎসা করে দিয়েছি। আর জানো মা হাসপাতালে আমার স্টাফ বলেছিল ওই ছেলেটার সাথে নাকি আমার চেহারার অনেক মিল আছে। তাই আমি বলে দিয়েছি। সব চিকিৎসা আমি করব। অনেক খুশি হয়েছে দুজন। আমি উনাদের সাথে ছবি উঠেছি। চিকিৎসা খরচ আমি দিব ভালো করি নাই মা?

সুরাইয়া তখন বলে হ্যাঁ মা অনেক ভালো করেছ। আর কই ছবি দেখি।

সুরাইয়া ছবির দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। এটা আর কেউ না হুইলচেয়ারে বসে আছে ওয়াহেদ আর পাশে দাঁড়িয়ে আছে আফসানা। সুরাইয়ার মন চায় ওয়াহেদ আর আহসানকে তার এখানে নিয়ে আসতে।‌ কিন্তু ইচ্ছা থাকলেও আনতে পারবে না। কারণ সুরাইয়া কখনো চায় না পূর্ণতা জানতে পারু এই ছেলেটা তার বাবা।

বি.দ্র: ভুল ত্রুটি ক্ষমা দৃষ্টিতে দেখবেন। প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত যারা পাশে ছিলেন অনেক অনেক ধন্যবাদ তাদেরকে)

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে