মায়া পর্ব-১২

0
1305

#মায়া
#পর্ব_১২
#ওয়াহেদ_মাহমুদ

পূর্ণতার দ্বিতীয় জন্মদিন উপলক্ষে সবাই মিলে বৃদ্ধাশ্রমে যায়। প্রতিবারের মতো এবারও কেক বা কোনো পার্টি দেয়া হয়নি জন্মদিন উপলক্ষে। বৃদ্ধাশ্রম গিয়ে সুরাইয়া হঠাৎ তার শ্বাশুড়ি কে দেখতে পাই। সুরাইয়া বুঝে উঠতে পারছে না এখানে তার শ্বাশুড়ি কি করছে।

তারপর সুরাইয়া বৃদ্ধাশ্রম এর কেয়ার টেকার এর কাছে গিয়ে তার শ্বাশুড়ি সম্পর্কে জানতে চাই। আর এখানে কে রেখে দিয়েছে তাকে।

কেয়ারটেকার তখন বলে তার ছেলে এখানে রেখে গিয়েছেন।

বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে সুরাইয়ার, ওয়াহেদ কিভাবে এমন একটা জঘন্য কাজ করতে পারে।

সুরাইয়া তখন কেয়ারটেকার কে বলে তা কি কেউ এখানে দেখতে আসে।

কেয়ার টেকার তখন বলে না উনাকে তেমন কেউ দেখতে আসে না সপ্তাহে একদিন বা দুইদিন উনার ছেলে ওয়াহেদ দেখতে আসে।

তারপর আরো অনেক প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করে সুরাইয়া, তার থাকা-খাওয়া কেমন খাওয়া-দাওয়া কেমন কি এসব বিষয়ে।

কেয়ার টেকার তখন বলে উনি চোখে দেখতে পারে না এক্সিডেন্টে উনি উনার দৃষ্টি শক্তি হারিয়ে ফেলেছে।

কথাটা যেন সুরাইয়ার বিশ্বাস হচ্ছে না। তখন সুরাইয়া বুঝতে পারে কেন তাকে বৃদ্ধাশ্রমে রেখে যাওয়া হয়েছে।
নিশ্চয় এটা আফসানার কাজ ওয়াহেদকে উল্টপাল্টা বুঝিয়ে শাশুড়িকে বৃদ্ধাশ্রমে রেখে গিয়েছে।

সুরাইয়ার বাবা তখন সুরাইয়াকে বলে এটাতো তোর শ্বাশুড়ি এখানে কিভাবে আসলো। তুই গিয়ে কথা কথা বল। দরকার হলে বাসায় নিয়ে চল।

মা-বাবা তার মনে হয় প্রয়োজন হবে না আমি বাসায় নিয়ে যেতে পারবো না সবাইকে তার পাপের শাস্তি ভোগ করা উচিত। কপালে যেটা লেখা আছে সেটা অবশ্যই হবে কেউ ঠেকাতে পারবে না।

সুরাইয়া তখন বাবাকে বলে আমার শাশুড়ি একটা বাস এক্সিডেন্টে দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে ফেলেছে সে জন্যই থাকে বৃদ্ধাশ্রমে রেখে গিয়েছে।

তারপর সুরাইয়া তার শ্বাশুড়ির সামনে গিয়ে বলে কেমন আছেন? কন্ঠ কিছুটা চেঞ্জ করে বলে যাতে বুঝতে না পারে চোখে না দেখলেও দশ বছর ধরে একসাথে এক বাসায় ছিল। কন্ঠ অবশ্যই পরিচিত।

সুরাইয়ার শাশুড়ি তখন বলে হ্যাঁ মা ভালো আছি তুমি কেমন আছো?

আমিও ভালো আছি আপনার বাসায় কি আপনার ছেলে নেই।

হ্যাঁ আমার ছেলে আছে

তাহলে আপনি এখানে কেন আপনি আপনার ছেলের সাথে বাসায় থাকবেন।

এটা আমার পাপের শাস্তি মা জীবনে যা অন্যায় করেছি তার শাস্তি অবশ্যই ভোগ করতে হবে আমার ছেলে আমার সাথে যে অন্যায় করেছে আমি চাই না সে পাপের শাস্তি ভোগ করুক আর আমার মত বৃদ্ধাশ্রমে থাক। আমি তাকে মাফ করে দিয়েছি।

তারপর সুরাইয়া বলে আপনি কি এমন পাপ করেছেন যার জন্য আপনাকে এই বয়সে এত বড় শাস্তি ভোগ করতে হচ্ছে।

তারপর সুরাইয়ার শ্বাশুড়ি বলে আমি অনেক বড় পাপ করেছি মা। একজন মেয়ে হয়ে দুজন মেয়ে জীবন নষ্ট করে দিয়েছি। যদি তাদের কে কাছে পেতাম তাহলে দরকার হলে পা ধরে মাফ চেয়ে নিতাম।

সুরাইয়ার চোখ দিয়ে নিজের ইচ্ছার বিরুদ্ধে পানি পড়ছে। আর ভাবতে থাকে এই মহিলা তো আমার কাছে থেকে আমরা স্বামী কে ছিনিয়ে নিয়েছে। আমার সন্তানকে বাবা অধিকার থেকে বঞ্চিত করেছে। তাহলে এই মহিলার জন্য আমার চোখ দিয়ে কেন পড়েছে? নিজের কাছে নিজেই প্রশ্ন করে সুরাইয়া। তারপর সুরাইয়ার অন্তর থেকে শুধু একটা কথায় আসে অনুশোচনা আর নিজের ভুলের শাস্তি।

তারপর সুরাইয়া বৃদ্ধাশ্রমের সবাইকে খেতে দেয়। আর শ্বাশুড়ি কে নিজ হাতে খেতে দেয়।

সুরাইয়ার শ্বাশুড়ি সুরাইয়া কে বলে আমি প্রায় চার মাস আছি কেউ আজ পর্যন্ত এভাবে এসে সবাই কে খেতে দেয়নি। তুমি কেন সবাই কে এভাবে খেতে দিচ্ছ এতো সুন্দর করে।

সুরাইয়া তখন বলে আসলে আজ আমার মেয়ের জন্মদিন সেই জন্যই প্রতি জন্মদিনে এভাবে বৃদ্ধাশ্রমে এসে আমাদের মতো মা বাবাদের জন্য অল্প একটু খাওয়া দাওয়া ব্যবস্থা করি পরিবার মিলে।

সুরাইয়ার শ্বাশুড়ি তখন বলে। তোমার মেয়ের কত বছর বয়স মা?

আমার মেয়ের আজ দুই বছর পূর্ণ হয়েছে।

সুরাইয়ার শ্বাশুড়ি তখন তখন মনে মনে ভাবে সুরাইয়ার মেয়ে করা। তখন বলে আমারও একটা নাতনি ছিল সে মনে হয় এখন তোমার মেয়ের বয়সের হবে।

সুরাইয়া তখন বলে ছিল কিন্তু এখন নেই কেন। কি হয়েছে আপনার নাতনির।

সুরাইয়ার শ্বাশুড়ি তখন বলে এখনও আছে কিন্তু আমার কাছে নেই আমার নির্যাতনে সে তার মেয়ে কে নিয়ে আমার বাসা থেকে চলে গিয়েছিল। এখন জানি না কোথায় আছে তাঁরা দুজন। কিভাবে কথা তাঁরা। আমি সব সময় দোয়া করি তারা যেন, সবাই সুখে থাকুক। তাদের উপর অবিচার করে আমি যে পাপ করেছি সেই শাস্তি এখন ভোগ করছি। তাদের কে কাছে পেলে মাফ চেয়ে নিতাম। তারা যদি মাফ না করে তাহলে মৃত্যুর পরেও শান্তি হবে না আমার।

সুরাইয়া তখন তার শ্বাশুড়ি কে বলে হয়তো তারা আপনাকে মাফ করে দিয়েছে।

কিন্তু কারোর উপর এতো নির্যাতন করাও পরেও কিভাবে মাফ করতে পারে আমার মতো পাপি কে।

সুরাইয়া তখন বলে যে নির্যাতন সহ্য করতে পারে সে মুখ বুঝে মাফ করতেও পারে।‌ যারা চুপ থেকে নির্যাতন সহ্য করতে পারে তারা নরম মনের মানুষ হয়। যদি কঠিন মনের মানুষ হতো তাহলে বাসা থেকে চলে যেত না। উল্টা সেই আপনাকে নির্যাতন করত।৭২৪

অনেক কথা বলে কিন্তু।‌ কিন্তু সুরাইয়ার শ্বাশুড়ি এখনো জানে না এটা তার ছেলের বোউ ছিল। একজন অজানা মানুষ হয়ে শ্বাশুড়ির সাথে কথা বলে। আর সুরাইয়া বুঝতে পারে। তার উপর তার শ্বাশুড়ি যে নির্যাতন করেছিল তার জন্য সত্যিই অনেক অনুতপ্ত হয়েছে । এবং শ্বাশুড়ি কে মাফ করে দেই সুরাইয়া।

বৃদ্ধাশ্রম থেকে চলে আসার সময় সুরাইয়ার বাবা সুরাইয়াকে বলে তুই তোর শ্বাশুড়ি কে বৃদ্ধাশ্রম থেকে বাসায় নিয়ে চল। এখানে থাকতে অনেক কষ্ট হয়।

সুরাইয়া তখন বলে না বাবা আমি বাসায় নিয়ে যেতে পারব না। আমার সাথে যা অন্যায় করেছে আমি সেই অন্যায়ের মাফ করে দিয়েছি। আমি চাই না আমার সন্তান এটা জানতে পারুক তার দাদি এমন ছিল।প্রয়োজন হলে আমি মাঝে মাঝে এসে দেখে করা খাইয়ে দিব এখানে এসে।

সুরাইয়ার বলে আমি একটা কথা বলতাম।

হ্যাঁ বাবা বলো?

অনেক দিন হয়েছে আমার বাসায় যাওয়া হয়নি। অনেক ইচ্ছা হয় যেতে। তোমার মায়ের স্মৃতি আছে ওই বাসায়।

সুরাইয়া তখন বলে আচ্ছা ঠিক আছে বাবা চলো আজ আমরা তোমার ওখানে যাবো। আর রাতেও তোমার ওখানে রাতে থাকব।

এর পর থেকে সুরাইয়া যখন সময় পাই তখন শ্বাশুড়ির সাথে এসে দেখা করে যায়। রান্না করে নিয়ে আসে আর খাইয়ে দিয়ে যাই। কিন্তু নিজের পরিচয় দেয়নি সুরাইয়া। কারণ কিছু কিছু বিষয় অজানা থাকাই ভালো। আর বৃদ্ধাশ্রমের কেয়ার টেকার কে সুরাইয়া বলে যাই আমি এখানে উনার সাথে দেখা করতে আসি এটা যেন ওয়াহেদ সাহেব বা অন্য কেউ জানতে না পারে।

অনেক দিন পরে আজ বর্ষা মায়ের সাথে দেখা করতে আসছে। কিন্তু ভাই ওয়াহেদের বাসায় এসে দেখে মা নেই। তাই ভাবি আফসানাকে বলে মা কোথায় ভাবি।

জবাবে আফসানা বলে,,,

চলবে,,,

বি.দ্র: ভুল ত্রুটি ক্ষমা দৃষ্টিতে দেখবেন।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে