মাতাল হাওয়া পর্ব-৪৪+৪৫+৪৬

0
545

#মাতাল_হাওয়া। ইতি চৌধুরী। পর্ব-৪৪
(দয়া করে কেউ কপি করবেন না)

এবারেও মাথা ঝাকায় তবে মৃদু ভাবে। ইতোমধ্যে চিত্রলেখার শরীর জমে ক্ষীর, পাথর হয়ে আসছে যেনো। শরীর জুড়ে কাঁপুনিও শুরু হয়ে গেছে। এই কাঁপুনি সম্ভবত রওনক টের পেয়েছে। তাই তো তার চোয়াল জুড়ে দুষ্টুমি ভরা হাসি। চিত্রলেখার অঙ্গের কাঁপুনি আরও খানিকটা বাড়িয়ে দিতে হাত বাড়িয়ে তার গাল স্পর্শ করে রওনক, নিবিড়ভাবে। চিত্রলেখা উপলব্ধি করে এই স্পর্শ ভীষণ বাড়াবাড়ি রকমের গাঢ়, স্পর্শকাতর। তার অঙ্গের কাঁপন বাড়ে। মনে হয় শরীরের ভেতরে থাকা হাড়ও কাঁপছে। এই পর্যায়ে চিত্রলেখার দম বন্ধ হয়ে আসার যোগাড় হয়। এই বুঝি এক্ষুনি দমবন্ধ হয়ে যাবে তার। নিচের দিকে আরেকটু ঝুঁকে রওনক। চিত্রলেখার একদম সন্নিকটে এসে কথা বলে। তার কথার সঙ্গে মুখ-নাক গলে বেরিয়ে আসা শ্বাস-প্রশ্বাস গিয়ে বারি খায় চিত্রলেখার নাকে ঠোঁট ও চিবুকে। রওনক বলে,

-বউ মানে বুঝো তো? এক ঘরে থেকেছি, এক বিছানায় ঘুমিয়েছি, এক সঙ্গে রাত কাটিয়েছি। এরপরেও বলবে কোনো মাথা ব্যথা নেই?

চিত্রলেখার মুখে কথা নেই। স্তব্ধ নয়নে তাকিয়ে থাকে কেবল। নড়তে ভুলে গেছে সে, কথা বলতেও ভুলে গেছে। রওনকের স্পর্শ আরও প্রগাঢ় হয়, আরও নিবিড় হয়।

চিত্রলেখা কিচ্ছু বলতে পারে না। কথারা সব দলাপাকিয়ে রয় তার কন্ঠ নালির কাছে। মুখ খুললে বড়জোর কাই কুই করতে পারবে কিন্তু স্পষ্ট কথা বের হবে না। এমন কিছুর জন্য কোনোভাবেই প্রস্তুত ছিল না সে। রওনক তাকে একদম বুঝতে দেয়নি কিছুই। অন্য আর সব স্বামী-স্ত্রীর একে-অপরের কাছাকাছি আসাটা স্বাভাবিক হলেও তাদের এতকাছে আসাটা কি স্বাভাবিক! তাদের সম্পর্কে কি এমন কিছু হওয়ার কথা ছিল? মস্তিষ্ক শূন্য অনুভব করে চিত্রলেখা। কিছুই ভাবতে পারে না। কীভাবেই বা ভাববে? এমনটা এর আগে কখনো ঘটেনি তার সঙ্গে। একজন পুরুষের এমন আচমকাই কাছে আসা। তাকে নিবিড়ভাবে ছুঁয়ে দেয়া। এসব তো কখনো ভাবেনি চিত্রলেখা। অথচ ঘটছে, স্বপ্নে নয় বাস্তবে।

বেশ কিছুক্ষণ ওভাবে থেকেই রওনক যেমন আচমকা চিত্রলেখার শরীরের উপর ঢলে পড়েছিল, সেভাবে আচমকাই উঠে পড়ে। উঠে পড়ে চিত্রলেখার একটা হাত ধরে তাকেও তুলে বসায়। এগিয়ে গিয়ে টি-টেবিলের উপরে থাকা পানির জার থেকে গ্লাসে পানি ঢেলে নিয়ে প্রথমে নিজে খায় খানিকটা। তারপর সেই এটো গ্লাস নিয়েই ফিরে এসে চিত্রলেখার মুখোমুখি দাঁড়ায়। গ্লাসটা এগিয়ে দিয়ে বলে,

-আই হোপ আমার এটো খেতে তোমার সমস্যা নেই। হাজবেন্ড ওয়াইফ তো গ্লাস শেয়ার করতেই পারে।

চিত্রলেখা ফ্যালফ্যালে দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে থাকে। কথাই বলতে পারে না বেচারী। রওনক আজ কঠিন জব্ধ করেছে তাকে। এখনো চিত্রলেখার শরীরের শিরায় শিরায় শিহরণ বইছে। এসব অনুভূতির সঙ্গে তার পূর্ব পরিচয় না থাকায় নিজেকে সামলে নিতে হিমশিম খাচ্ছে। চেষ্টা করেও কাজ হচ্ছে না। রওনক মানুষটা একের পর এক চমক দিয়েই যাচ্ছে তাকে। সুযোগ দিচ্ছে না চিত্রলেখাকে ধাতস্থ হবার। বউয়ের শূন্য দৃষ্টি দেখে রওনক নিজেই পানির গ্লাসটা চিত্রলেখার ঠোঁটের কাছে নিয়ে গিয়ে বলে,

-টেক এ্যা সিপ।

চিত্রলেখা আপত্তি করে না, বাঁধা দেবারও চেষ্টা করে না। ওমনিই রওনকের বাড়িয়ে ধরা গ্লাস থেকে তার হাত দিয়েই এক ঢোক পানি খায়। এর বেশি আপাতত তার গলা দিয়ে নামবে না। রওনকও জোড় করে না। পাশেই বিছানায় গ্লাসটা নামিয়ে রেখে হাত বাড়িয়ে আঙ্গুলের স্পর্শে চিত্রলেখার ঠোঁটে লেগে থাকা পানি মুছে দেয়। তৎক্ষনাৎই চিত্রলেখার শরীর জুড়ে শিহরণ খেলে যায়। এনাকন্ডা যেমন পেঁচিয়ে ধরে। এই অনুভূতি, শিহরণ চিত্রলেখাকে ঠিক একইভাবে পেঁচিয়ে ধরেছে। এত শক্তভাবে ধরেছে যে তার দম নিতে কষ্ট হচ্ছে। এখন মনে হচ্ছে খানিকক্ষণ একান্তে থাকা বড্ড প্রয়োজন। এই মানুষটার সামনে থাকলে কখন যেনো সত্যি সত্যি চিত্রলেখা নিঃশ্বাস নিতে পারবে না। তারপর দমবন্ধ হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়বে। কিন্তু রওনকের থামাথামি নেই। চিত্রলেখার বাহু ধরে তাকে তুলে দাঁড় করায়। কপালের কাছে এলোমেলো হয়ে থাকা চুলগুলো রওনক তার আঙ্গুলের টানে ঠিকঠাক করে কানের পেছনে গুঁজে দিতে দিতে বলে,

-বুঝতে পারছি তোমার জন্য বেশি বেশি হয়ে যাচ্ছে। গেট ইউজ টু দিজ। এখন থেকে এমনই হবে। আমি একটুও থামবো না, পেছনও হটবো না। এগিয়ে যাবো আরও প্রবল গতিতে।

চিত্রলেখা একদৃষ্টিতে তাকিয়ে রয়। তার দৃষ্টিভ্রম কাটাতে রওনক চোখের সামনে হাত নিয়ে তুড়ি বাজায়। এতে চিত্রলেখার ধ্যান ভাঙ্গে। এবারে রওনক বলে,

-বাথরুমে যাও, টেক এ্যা হট শাওয়ার। তারপর ডিনার করবো। তারপরেরটা পরে দেখা যাবে।

চিত্রলেখাকে থম ধরে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে রওনক জিজ্ঞেস করে,

-কিছু বলতে চাও?

মাথা ঝাকায় চিত্রলেখা। রওনক বলে,

-বলো।

আমতা আমতা করে চিত্রলেখা জিজ্ঞেস করে,

-আমরা দু’জন কি একঘরে মানে এই ঘরে একসাথে থাকবো?

-অফকোর্স। তুমি কি আলাদা থাকতে চাও?

চিত্রলেখা ভেবে পায় না কি বলবে। রওনক অবশ্য তাকে সুযোগও দেয় না কিছু বলার। সে কিছু বলার আগে রওনক নিজেই বলে,

-আমরা হাজবেন্ড ওয়াইফ ইটস নরমাল যে আমরা একঘরে থাকবো। বরং একঘরে না থাকলেই ব্যাপারটা এবনরমাল হয়ে যাবে।

চিত্রলেখার বুকের ভেতরের ধুকপুকানি বাড়ে। এসব তো আগে ভেবে দেখেনি সে। একঘরে থাকা, দু’জনের একে-অপরের সংস্পর্শে আসা। এই বিষয়গুলো চিত্রলেখার চিন্তা ভাবনায় আসেইনি। হয়ত আরও কিছু বলার ছিল তার। কিন্তু আপাতত আর সুযোগ দেয় না রওনক। বরং তাড়া দিয়ে বলে,

-যাও, শাওয়ার নিয়ে আসো। ততক্ষণে আমি একটু ওদিকটা দেখে আসি। ওখানে কি পরিস্থিতি চেক করি। ভাবীর সঙ্গেও একটু কথা বলে আসি মনে হলো কিছু বলতে চায়।

তবুও চিত্রলেখা দাঁড়িয়ে রয়। তাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে রওনক হাত ধরেই টেনে নিয়ে যায়। বাথরুমে যাবার জন্য আগে চেঞ্জিং রুমে ঢুকতে হবে। দরজা খুলে রওনকসহই ভেতরে প্রবেশ করে। ভেতরে ঢুকে অস্ফুট স্বরে চিত্রলেখা বলে,

-এটা তো বাথরুম না।

কাছাকাছি থাকায় রওনক শুনে ফেলে। জবাবে বলে,

-এটা আমাদের চেঞ্জিং রুম।

হাত বাড়িয়ে বাম দিকের একটা দরজা দেখিয়ে আরও বলে,

-ওটা আমাদের বাথরুম।

চিত্রলেখা মুখ ঘুরিয়ে একবার বাথরুমের দরজাটা দেখে তারপর চেঞ্জিং রুমে চোখ বুলায়। আসলেই পয়সাওয়ালা মানুষের ব্যাপার স্যাপারাই আলাদা। চিত্রলেখা কিছুক্ষণ আগে মনে মনে যা ভাবছিল ঠিক তাই। এই রুমটা বেডরুমের তুলনায় বেশ ছোট তবে একদম ছোটও বলা যায় না। রুমের দুই পাশের দেয়াল জুড়ে কাভার্ড করা। একদম উপর থেকে নিচ পর্যন্ত। রওনক এগিয়ে গিয়ে খুলে দেখায়। ইতোমধ্যে রওনক তার জন্য কিছু কেনাকাটাও সেরে ফেলেছে। সেইসব কাপড়চোপড় দেখিয়ে বলে,

-তোমার জন্য কিছু কেনাকাটা করেছি। আপাতত দু চারদিন এগুলো দিয়ে চালাও। আমার হাতে কিছু জরুরী কাজ আছে। সেসব শেষ করে তোমায় নিয়ে শপিংয়ে বের হবো। তোমার যা যা লাগবে সব কিনে নিও। আর যদি চাও তুমি একা গিয়েও কিনতে পারবে সমস্যা নেই। একা না পারলে আমি নিয়ে যাবো জাস্ট আমাকে একটু ফ্রি হতে দাও। দু’পাশের দেয়াল জুড়ে কাভার্ড। অন্যপাশের দেয়ালে একটা স্ট্যান্ড ড্রেসিং মিরর রাখা। তার পাশের কাভার্ডটা খুলে রওনক বলে,

-তোমার মেকাআপ আইটেম, জুয়েলারি সব এখানে আছে।

-কিন্তু আমি তো মেকাআপ করি না।

চিত্রলেখার কথা শুনে হেসে ফেলে রওনক। বলে,

-এখানে খুব বেশি কিছু নেই। আমারও মেকাআপ সম্পর্কে তেমন আইডিয়া নেই। জাস্ট কিছু লিপস্টিক আর কিছু বেসিক আইটেম। এর বাইরে কিছু লাগলে তুমি নিজে গিয়ে কিনে নিও।

থামতে নিয়ে রওনক যোগ করে,

-ওহ! তোমার জন্য আমি নিজের পছন্দে কিছু পারফিউন নিয়েছি। ট্রাই করে দেখো তোমার পছন্দ হয় কিনা।

চিত্রলেখাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে রওনক নিজেই একটা নাইট সুট বের করে হাতে দিয়ে বলে,

-গো প্লিজ।

হাতের কাপড় দেখে চিত্রলেখা বলে,

-এটা পরবো?

-হুম, রাত করে এখন নিশ্চয়ই শাড়ি বা থ্রিপিস পরবে না।

-আমার থ্রিপিস পরে ঘুমানোর অভ্যাস আছে।

-অভ্যেস বদলাও। এখন থেকে ঘুমানোর সময় নাইট সুট পরে ঘুমাবে।

-আমি থ্রিপিস পরেই ঘুমাই।

-নো।

রওনক একপ্রকার জোর করেই ঠেলে চিত্রলেখাকে বাথরুমে ঢুকিয়ে দেয়। তৎক্ষনাৎই সরে যায় না। খানিকক্ষণ ওখানে দাঁড়িয়ে থাকে যদি কোনো প্রয়োজন হয় সেই চিন্তা করে। কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকার পর রওনক নিজে থেকেই দরজায় একবার টোকা দিয়ে বলে,

-তোমার প্রয়োজন হবে এমন সবকিছু রাখা আছে। ফিল ফ্রি টু ইউজ এভ্রিথিং। আমি নিচে যাচ্ছি তুমি আরাম করে, সময় নিয়ে শাওয়ার নাও। আর কিছু লাগলে আমায় ডেকো।

চিত্রলেখা ফস করে একটা নিঃশ্বাস ছাড়ে। চারিদিকে চোখ বুলায় আসলেই সব আছে। এমনকি প্রয়োজনের চাইতে বেশি আছে। ব্রাশ থেকে শুরু করে স্যানিটারি আইটেমও রাখা আছে। এসব দেখে কিঞ্চিৎ লজ্জা অনুভব করে চিত্রলেখা। তখনই দরজায় আবার টোকা পরে। চিত্রলেখা ভেবেছিল রওনক হয়ত চলে গেছে। দরজায় টোকা পরতেই তটস্থ হয় সে। বাইরে থেকে রওনক বলে,

-একটা কথা বলার ছিল। বেসিনের কলের পানি অটো বের হয়। হাত দিলেই পানি আসবে। যদি কনফিউজড হয়ে যাও তাই বলতে আসলাম। এবার সত্যি সত্যি যাচ্ছি।

চিত্রলেখা এতক্ষণে খেয়াল করে আসলেই তো কলটা আর সাধারণ কলের মতো নয়। রওনকের বলে দেয়া কথা মতো কলের নিচে হাত দিতেই অটো পানি বের হচ্ছে। এটা দেখে চিত্রলেখার চোখ বড় হয়, গোলও হয়। মিরের দিকে তাকায় সে। আর কি কি দেখার বাকি আছে তার চিন্তা করে চিত্রলেখা। আবার এও ভাবে এসব কি সত্যি সত্যি হচ্ছে তার সঙ্গে নাকি সব স্বপ্ন? এই ঘুম ভাঙ্গবে আর দেখবে সবই স্বপ্ন, কিছুই বাস্তব না।

রওনক নিজের ঘর থেকে বের হতেই মুখোমুখি হয় সাবার।

চলবে…

#মাতাল_হাওয়া। ইতি চৌধুরী। পর্ব-৪৫
(দয়া করে কেউ কপি করবেন না)

রওনক নিজের ঘর থেকে বের হতেই মুখোমুখি হয় সাবার। ঘরের দরজায় ওকে দেখেই রওনক জিজ্ঞেস করে,

-তুমি এই সময় এখানে?

জবাব না দিয়ে হাত তুলে নিজের ফোনের স্ক্রিনে ভাসতে থাকা রওনকের বিয়ের আপডেট স্ট্যাটাস দেখিয়ে সাবা পাল্টা জিজ্ঞেস করে,

-এসব কি? এসবের মানে কি?

রওনকের অবশ্য সাবার ফোনের দিকে তাকানো লাগে না। সে এমনিই আন্দাজ করতে পারছে সাবা তাকে কি দেখাতে চাইছে। সেটা বুঝতে পেরে রওনক বলে,

-আমি যতটুকু জানি তুমি যথেষ্ট শিক্ষিত। সামান্য একটা ফেসবুক স্ট্যাটাস পড়তে পারছো না?

-এটা একদম মজা করার সময় নয় রওনক। আই ওয়ান্ট আন্সার। এসবের মানে কি? তোমার সঙ্গে আমার বিয়ে হবে। হাউ…

সাবাকে কথা শেষ করতে না দিয়ে রওনক বলে,

-ওয়েট এ মিনিট। তোমার সঙ্গে আমার বিয়ে হওয়ার কথা তো কখনোই হয়নি। আমি কি কখনো বলেছি তোমায় বিয়ে করবো? এন্ড লেট মি টেল ইউ ক্লিয়ারলি মজা করার মতো কোনো রিলেশন আমাদের নেই। না আগে ছিল, না এখন আছে আর না ইন ফিউচার হবে। ইউ আর জাস্ট এ নোবাডি টু মি। সো গেট লস্ট ফ্রম হিয়ার।

চলে যেতে নিয়ে আবার দাঁড়ায় রওনক। ওয়ার্নিং দেয়ার সুরে আরও বলে,

-রিমেমবার ওয়ানথিং তোমাকে যেনো কখনো আমি আমার বউয়ের আশেপাশে না দেখি। যদি দেখেছি কখনো আমার বউকে হ্যারেজ করার ট্রাইও করছো ট্রাস্ট মি তোমাকে জাস্ট গায়েব করে ফেলবো আমি। তখন আর এটা দেখবো না তোমার বাবা কে বা কি তার পরিচয়। ইউ উইল সি দ্যা ওয়ার্স্ট অব মি। আর যদি কিছু বলার থাকে মাকে গিয়ে বলো। তোমার সঙ্গে আমার কোনো কথা নেই। আই ডিডেন্ট প্রমিজ ইউ এনিথিং।

-কিন্তু আন্টি আমায় কথা দিয়েছিল আমি তোমার বউ হবো। আমাকে ছাড়া তুমি অন্যকাউকে বিয়ে করতে পারো না।

-আমি কি পারি তা অলরেডি করে দেখিয়েছি।তোমার আর কিছু বলার থাকলে সেটা গিয়ে তোমার আন্টিকে জিজ্ঞেস করো। যেহেতু আমি তোমায় কোনো কথা দেইনি সো এসব দায় আমার নয়। যে কথা দিয়েছে তাকে জিজ্ঞেস করো। অযথা আমার সময় নষ্ট করতে আসবে না। আমার প্রতিটা সেকেন্ড অনেক মূল্যবান। আই এম নট এ ভেগাবন্ড লাইক ইউ। নাও গেট গেস্ট।

রওনক আর দাঁড়ায় না ওখানে। নিচে নেমে যায়। সাবা ওখানে দাঁড়িয়েই ফনা তোলা সা পে র মতো ফসফস করতে থাকে। রাগে শরীর রি রি করছে তার। মন চাইছে এই মেয়েটাকে অর্থাৎ চিত্রলেখাকে জানে মে রে ফেলতে। এত বড় সাহস তার এতদিনের স্বপ্নে এভাবে পানি ঢেলে দেয়। রওনকের বউ হবার যোগ্যতা একমাত্র তার আছে। ওর হাত থেকে রওনককে ছিনিয়ে নেয়ার দুঃসাহস যে করেছে তাকে এর শেষ দেখিয়ে ছাড়বে সাবা মনে মনে প্রতিজ্ঞা করে। সবকিছু অসহ্য লাগছে তার। দিলারা জামানের ঘরে যাবার জন্য নিচে নামতে নিয়েও দাঁড়িয়ে পড়ে সে। রওনক কাকে বিয়ে করেছে একবার সামনাসামনি না দেখলে হচ্ছে না। তাই আশপাশ দেখে নেয় কেউ আছে কিনা। কেউ না থাকায় চট করেই রওনকের ঘরে ঢুকে পরে সে। কিন্তু ঘরে কাউকে দেখতে পায় না। না পেয়ে বেরিয়ে আসতে নিয়ে আবার থমকে দাঁড়ায়। এগিয়ে গিয়ে চেঞ্জিং রুমের দরজায় আড়িপাতে সাবা। ভেতরে কারো সাড়াশব্দ পাওয়া যায় না। নব ঘুরালেই দরজা খুলে যায়। প্রথমে উঁকি দিয়ে দেখে নেয় কেউ আছে কিনা। কিন্তু এখানেও কেউ নেই। চেঞ্জিং রুমে প্রবেশ করতেই পানির শব্দ কানে আসলে বুঝতে পারে রওনকের সো কল্ড ওয়াইফ শাওয়ারে আছে। ফনা তোলা সা পে র মতো আবারও ফসফস করতে লাগে সে। ইচ্ছা তো করছে এক্ষুনি গিয়ে এত্তগুলো কথা শুনিয়ে মাথা ফা টি য়ে দিতে। কিন্তু সেই উপায় আপাতত সাবার নেই। চাইলেও এই মুহূর্তে এমনটা করতে পারে না সে। রওনক মাত্রই তাকে সতর্ক করে গেছে তাই এক্ষুনি কিছু করতে পারছে না। তবে বেরিয়ে আসার আগে একটা শ য় তা নি অবশ্য করে। বাথরুমের দরজাটা বাইরে থেকে লক করে দেয়। অকাজটা করেই সাবা নিজের বত্রিশ পাটি দাঁত বের করে খানিকক্ষণ শ য় তা নি হাসি হাসে। তারপর সন্তপর্ণে বেরিয়ে আসে এমনভাবে যেন কেউ টের না পায় সে এই ঘরে এসেছিল।

রওনক তানিয়ার ঘরে যাবার আগে একবার কিচেনে যায়। সচরাচর সে কিচেনে আসে না। তাই জাহানারা রওনককে দেখেই ব্যস্ত হোন। জিজ্ঞেস করেন,

-কিছু লাগবে বাবা? তুমি আসলে কেনো? আমায় ডাকতে।

-আমার কিছু লাগবে না খালা। দেখতে এলাম আজ ডিনারের আয়োজন কি।

জাহানারা জবাব দেয়ার আগে পেছন থেকে তানিয়া বলে,

-বাহ! আজ দেখি জামান গ্রুপের সিইও এর পদধূলি আমাদের কিচেনে পড়েছে। এ তো দেখছি পরম সৌভাগ্য আমাদের। তা হঠাৎ এই আগমনের কারণটা কি বউ নাকি রওনক?

নিজের কথায় তানিয়া হেসে ফেলে। তাকে সঙ্গ দিয়ে রওনকও মৃদু হাসে। বলে,

-দেখতে এলাম আজকের প্রিপারেসন কি।

-ও তাই বুঝি? বলো খালা কি রান্না করেছো। নতুন বউ আসা উপলক্ষে কি কি স্পেশাল আইটেম হলো।

কাঁচুমাচু করে জাহানারা বললেন,

-না মানে হঠাৎ করে বউ এমন সময় আসলো আমি জানলে আগে থেকে প্রস্তুতি নিয়ে রাখতাম। এই অল্প সময়ে আলাদা করে বিশেষ কিছু করা হয়নি। আজকের ম্যনুতে ডাল, পোয়া মাছ, মুরগীর ঝোল, ডিমের চাসনী, রুই মাছের দো-পেয়াজা আর সালাদ ছিল আমি কেবল সঙ্গে সামান্য পোলাও করে দিলাম। সাদা ভাতও আছে। আর চুলায় একটু পায়েস বসিয়েছি নতুন বউয়ের মুখে মিষ্টি কিছু দিতে।

বলেই মুখটা ছোট করে ফেললেন জাহানারা। রওনক চিত্রলেখাকে নিয়ে এমন সময় বাড়ি এসেছে যে ততক্ষণে ডিনার তৈরি করা হয়ে গেছে। এই মুহূর্তে বিশেষ কিছু রান্না করার প্রস্তুতি যদি নেয়ও অনেক দেরি হয়ে যাবে। রাত ১০ টার কিছু আগে বা পর দিয়ে এই বাড়ির সবার ডিনার করার অভ্যাস। এখন অন্যকিছু রান্না করতে গেলে রাত ১২ টা বেজে যাবে সবার ডিনারে বসতে। এমনিতেই বাড়ির আবহাওয়া গরম। এর মধ্যে জাহানারার মন সায় দেয়নি এক্ষুনি জলদি জলদি কিছু করতে। এতে দিলারা জামান হয়ত আবারও সিন ক্রিয়েট করবেন। তা ভেবেই আর আগ বাড়িয়ে কিছু করেননি তিনি। দীর্ঘদিন ধরে এই বাড়িতে আছেন। কার মেজাজ কেমন তা সবচাইতে ভালো জানেন। জাহানারা খালার শুকনো মুখ দেখে রওনক বলে,

-যথেষ্ট আছে খালা এর বেশি কিছু লাগবে না। যথেষ্ট করেছো। তাছাড়া তোমাদের ছোট বউটা অনেক লক্ষি বুঝলে মরিচ পোড়া দিয়ে ভাত দিলেও আপত্তি করবে না।

অবাক হয়ে জাহানারা বলেন,

-ওমা সেকি কথা! নতুন বউকে মরিচ পোড়া দিয়ে ভাত দিবো কেন? রওনকের বউ মানে হচ্ছে এই বাড়ির রাণী সে কিনা খাবে মরিচ পোড়া দিয়ে ভাত! অসম্ভব। আমি জাহানারা বেঁচে থাকতে তা কোনোদিনও হবে না।

জাহানারার সঙ্গে দুষ্টুমি করতে তানিয়া মুখে মলিন ভাব টেনে বলে,

-ও রওনকের বউ রাণী আর আমি বুঝি দাসী।

নিজের জিহ্ব কেটে জাহানারা বলেন,

-এমা ছিঃ ছিঃ আমি কি তা বলেছি নাকি? তুমিও তো এই বাড়ির আরেক রাণী।

তানিয়া হেসে ফেলে। তার হাসি দেখে জাহানারা বিভ্রান্ত নয়। তবুও সে হাসে। গাল ভরে হাসে। প্রাণ খুলে হাসে। অনেকদিন এভাবে মন উজার করে হাসা হয় না তার। হেসে নিয়ে বলে,

-আমি তোমার সঙ্গে মজা করছিলাম খালা।

স্বাভাবিক হবার চেষ্টা করে জাহানারা। ওরা কিচেন থেকে বেরিয়ে আসতে নিলে জাহানারা তানিয়াকে পেছন ডেকে জিজ্ঞেস করে,

-ডিনারটা সার্ভ করে দেই?

রওনক বলে,

-সার্ভ করতে থাকো। তোমাদের নতুন বউ এখনো শাওয়ারে। ওরে হয়ে গেলে পরে একসাথে খাবো।

তানিয়া দুষ্টুমির ছলে বলে,

-তা তো নতুন বউ রেখে এখন এখানে কেনো?

-তোমার সঙ্গেই কথা বলতে এসেছি।

-আমাদের জন্য সময় আছে এখন তোমার কাছে?

রওনক হাত জোড় করে বলে,

-প্লিজ ভাবী তুমি এটলিস্ট মজা নিও না।

-বারে আমার একমাত্র দেবর তুমি। ইনফ্যাক্ট দেবর বাদ সব চাইতে ভালো বন্ধু। আমি তোমার লেগ পুল করব না তো কে করবে শুনি?

জোড় করা হাত কপালে ছুঁয়ে রওনক বলে,

-আচ্ছা বত্ত্ব যত খুশি লেগ পুল করো। কিন্তু চলো আগে জরুরী কথা আছে সেটা সেরে নিই। চন্দ্রলেখার শাওয়ার হয়ে যাবে জলদিই। একা না আবার ভয় পায়।

-বাহ! কি প্রেম! আমার দু’চোখ ধন্য হয়ে গেল এমন প্রেমের স্বাক্ষী হতে পারে।

-ভাবী প্লিজ!

তানিয়া খিলখিলিয়ে হেসে ওঠে। তাকে এভাবে মন ভরে হাসতে দেখে রওনকেরও ভালো লাগে। মানুষটা তার প্রাপ্য পায়নি। চরম ঠকে গেছে। রওনকের সাধ্য থাকলে তাকে জিতিয়ে দিতো। কিন্তু সাধ থাকলেও সাধ্য নেই। নিজের ভাইয়ের কৃতকর্মে ভীষণ আফসোস তার। সারাজীবন আফসোস করলেও এর শোধ হবে না। দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে আসতে চায় রওনকের কিন্তু সন্তপর্ণে তা গোপন করে সে।

ওরা বেরিয়ে যেতে নিয়েও রওনক দাঁড়িয়ে পড়ে। তাকে দাঁড়িয়ে পড়তে দেখে তানিয়া জিজ্ঞেস করে,

-দাঁড়িয়ে পড়লে যে?

-এক মিনিট ভাবী। খালা এদিক আসো তো।

জাহানারা এগিয়ে আসতেই রওনক তার একটা হাত ধরে বলে,

-অফিসে জরুরী কাজের প্রেসার যাচ্ছে এই মুহূর্তে আমি চাইলেও ছুটি নিয়ে বাসায় থেকে চন্দ্রলেখাকে সময় দিতে পারব না। ও এই বাড়িতে নতুন। আমাদের বাড়ির কোনো কিছু সম্পর্কেই ওর কোনো ধরনের আইডিয়া নেই। মায়ের রিয়্যাকশন তো দেখেছোই। খুব জলদিই সে আমার বউকে আপন করে নিবে তা আমার মনে হচ্ছে না। মায়ের সময় লাগবে বুঝতে পারছি। ভাবীও যেহেতু অফিসে বিজি থাকবে তাই বাড়িতে একমাত্র তুমিই আমার ভরসা। যাকে ভরসা করে আমি চন্দ্রলেখাকে রেখে গিয়ে শান্তিতে অফিস করতে পারবো। কাজে মন দিতপ পারব। তুমি ওর দিকে খেয়াল রেখো খালা। আমার বউটা একদম কাঁদা মাটি। কেউ যেচে এসে বিনা কারণে দু’টো চর মা র লেও জানতে চাইবে না ওকে কেনো চর মা রা হলো। বরং ধরেই নিবে ওর দোষ আছে তাই চর পরেছে গালে। হাজার কষ্ট হলেও উফ বলবে না। আমি চাই না ওর বিন্দুমাত্র কষ্ট হোক।

রওনককে আশ্বস্ত করে জাহানারা বলেন,

-তুমি একদম চিন্তা করো না। তোমার অবর্তমানে আমি নতুন বউয়ের সম্পূর্ণ খেয়াল রাখবো। ওর যেনো কোনো সমস্যা না হয়, কোনো কষ্ট না হয় সেদিকে খেয়াল রাখবো। সবসময় আদর যত্নে রাখবো।

-থ্যাঙ্কিউ খালা। আমার অনেক বড় টেনশন কমিয়ে দিলে।

চলবে…

#মাতাল_হাওয়া। ইতি চৌধুরী। পর্ব-৪৬
(দয়া করে কেউ কপি করবেন না)

-এসব কি হচ্ছে আন্টি? এমনটা তো হওয়ার কথা ছিল না। আপনি আমায় কথা দিয়েছিলেন রওনকের বউ যদি কেউ হয় সেটা আমি হবো। তাহলে এসব কি?

দিলারা জামান কি বলবেন বুঝতে পারছেন না। লজ্জায় বারবার মাথা নুইয়ে আসছে উনার। সাবা বলেই চলল,

-আপনি তো জানেন আমার জন্য কত ভালো ভালো বিয়ের প্রপোজাল প্রায়ই আসে। সুপারস্টার থেকে শুরু করে পলিটিক্যাল ফ্যামিলি কিন্তু শুধুমাত্র আপনার মুখের দিকে তাকিয়ে আমি সবাইকে রিজেক্ট করেছি আন্টি। আমি তো রওনকের বউ কম আপনার পুত্রবধূ হওয়ার স্বপ্ন বেশি দেখেছি। আপনি তো এসবই জানেন। আপনি থাকতে এসব কীভাবে হলো আন্টি? আপনি কেনো রওনককে আটকালেন না? পাপা আমাকে অনেকবার ওয়ার্ন করেছিলেন রওনকের বিষয়ে বারবার ভাবতে বলেছিলেন কিন্তু আমি আমার ডিসিশানে অটল ছিলাম শুধুমাত্র আপনার ভরসায়। এখন আমি পাপাকে কি জবাব দিবো আপনিই বলুন। আমার এতখানি ফেইস লস হয়ে গেল। রিলেটিভস, ফ্রেন্ডস সবাই জানে রওনকের সঙ্গে আমার বিয়ে হবে। আমি কারো কাছে লুকাইনি। এখন আমি কীভাবে সবাইকে ফেইস করবো আন্টি? এর আগে কখনো কেউ আমাকে এতটা ইন্সাল্ট করা তো দূরের কথা কারো সাহস হয়নি আমাকে রিজেক্ট করে। আমি এই ইন্সাল্টটা কীভাবে মেনে নিই? চুপ করে থাকবেন না কিছু বলুন আন্টি, প্লিজ। ফর গট সেইক আপনি কিছু বলুন। রওনক বিয়ে করেছে অথচ আমাকে না অন্য একজনকে এটা আমি কীভাবে মেনে নিই। কথা বলুন আন্টি।

একটানা কথা বলে ন্যাকা কান্নায় ভেঙে পড়ে সাবা। কান্নার শব্দ হলেও তার চোখে পানি নেই। এতে দিলারা জামানের অনুশোচনা বাড়ে। আগের চাইতে আরও বেশি লজ্জাবোধ করেন তিনি। উঠে গিয়ে নিজের ঘরের দরজার সামনে দাঁড়ান। কাউকে দেখা যায় কিনা এদিক সেদিক তাকান। কাউকে দেখতে না পেয়ে গলা উঁচু করে জাহানারাকে ডাকেন। উনার দু’ডাকেই হাতের কাজ ফেলে ছুটে আসেন জাহানারা। সামনে এসে দাঁড়ালেই দিলারা জামান বলেন,

-রওনককে এক্ষুনি আমার ঘরে আসতে বলো, এক্ষুনি।

-কি করতে চাও?

-ভাবছি আপাতত বাসায়ই একটা পার্টি দেই। কাছের সবার সঙ্গে চন্দ্রর পরিচয় করাই। সবাই জানুক, দেখুক আমার ওয়াইফকে। পরিচয় পর্বটা সেরে ফেলতে চাই।

-কারো কি দেখতে বাকি রেখেছো? যা করলে তুমি! অবশ্য এতটাও তোমার কাছে আশা করিনি আমি। হঠাৎ এই আমূল-পরিবর্তনের কারণ কি সত্যি করে বলো তো রওনক।

-পরিবর্তন কোথায় দেখলে?

-পরিবর্তন হয়নি বলছো?

-না তো।

-৪ ঘন্টাও হয়নি বউ নিয়ে এসেছো অথচ তোমাকে দেখে মনে হচ্ছে অন্ততকাল ধরে সংসার করছো দু’জনে। বউ ছাড়া মুখে কোনো কথাই নেই। প্রেমের নদীতে পড়ে হাবুডুবু খাচ্ছো। আর বলছো পরিবর্তন হয়নি।

-আমি তো সবসময়ই এমন ছিলাম ভাবি। এটা কি নতুন কিছু? আগে কখনো দেখেছিলে আমি তিলত্তমাকে ভালোবাসিনি বা ওর প্রাপ্য সম্মান দেই নি।

-তা অবশ্য ঠিক। আচ্ছা এখন বলো তাহলে আমায় কি করতে হবে? আর কবে পার্টি রাখতে চাইছো? বাসায় না করে সেনাকুঞ্জ বা চীন মৈত্রীতেও তো করতে পারি।

তানিয়া ইচ্ছা করেই তিলোত্তমা প্রসঙ্গ এড়িয়ে যাওয়ার সূক্ষ্ম চেষ্টা করে। রওনক বলে,

-এখনই না ভাবী। চন্দ্র এসবে ইউজ টু না। প্রথমেই এত বড় আয়োজন দেখলে ঘাবড়ে যাবে। একটু সময় যাক ও নিজেকে আমাদের পরিবেশে, সোসাইটিতে মানিয়ে গুছিয়ে নিক তারপর দেখা যাবে। রওনক জামানের বউ সে সোশিয়াল গেদারিং তো ওর জীবনের একটা নিত্য অংশ হয়ে দাঁড়াবে। আজ এই বিজনেস পার্টি তো কাল সেই রিলেটিভের প্রোগ্রাম। এসব চলতেই থাকবে। আগে ওকে একটু ইজি হতে দাও।

-তাও অবশ্য মন্দ বলোনি। কবে পার্টি রাখবে সেটা তো বললে না।

-পরশু রাতের ইভেন্ট। কালকের দিনটা আমি ব্যস্ত থাকবো, চিটাগং যাওয়া লাগবে। বন্দরে একটা মিটিং এটেন্ড করে সন্ধ্যা নাগাদই ফিরে আসবো। তাই পরশুর আয়োজন হবে।

-তোমাদের শপিংটাও কি সেরে ফেলবো? তোমার চন্দ্র কী পরবে?

মৃদু হেসে রওনক বলে,

-তুমি পার্টির দিকটা দেখো, গেস্ট ইনভাইট, ক্যাটারিং, ডেকোরেশন সবাইকে অলরেডি আমার বলা হয়ে গেছে। কিছু গেস্ট বাকি ওটা তুমি কাল দেখে নিও আর দেখবে সব যেনো ঠিকঠাক হয়। লাবিব অবশ্য তোমাকে হেল্প করবে। বাকি চন্দ্র কী পরবে তা অলরেডি আমি ঠিক করে ফেলেছি।

-কখন করলে?

-ইউ নো মি ভাবী। আমি কাজ ফেলে রাখি না।

-তা তো দেখতেই পারছি। সব নিজেই করে ফেলেছো। বাকিটা নিয়ে টেনশন নিও না ওটা আমি সামলে নিবো।

-আই নো। মায়ের ঘরে যাবো, তুমি যাবে?

-চলো যাই। আগ্নেয়গিরি পর্বত সামলে আসি।

-মা জানে তার পেছনে তুমি এসব বলো?

দু’জনেই হেসে ফেলে। অগ্রসর হয় দিলারা জামানের ঘরের দিকে। তানিয়ার ঘর থেকে বের হতেই তাদের দেখা হয় জাহানারার সঙ্গে। ওদের দেখেই রওনককে বলেন,

-আপা তোমাকে ডাকছেন।

রওনক মায়ের ঘরের দরজায় দু’বার নক করে। যদিও দরজা খোলা তবুও ভদ্রতা বশত নক করা। তার পেছনেই তানিয়া। রওনক ভেতরে প্রবেশ করে মায়ের কাছাকাছি গিয়ে দাঁড়ায়। জিজ্ঞেস করে, আমায় ডেকে ছিলে?

দিলারা জামানের পাশেই সাবা বসা কিন্তু রওনক যেনো ওকে দেখেও দেখলো না এমন একটা ভাব তার মুখের। ছেলের উপর আজ যারপরনাই বিরক্ত দিলারা জামান। রাগি রাগি কন্ঠে বললেন, তুই বল আমাকে আমি এখন ভাই সাহেবকে কি জবাব দিবো?

-কিসের জবাব?

রওনকের কথা শুনে যেনো আকাশ থেকে পড়লেন দিলারা জামান। সাবার ফিচেল কান্নার গতি বাড়ে। তানিয়া আঁড়চোখে দেখার চেষ্টা করে এমন যে হেঁচকি তুলে কাঁদছে চোখে পানিটানি আছে কিনা। অথচ সাবার চোখে পানির বালাই নেই। দেখে মনে হচ্ছে কান্না করে করে হেঁচকি তুলে ফেলেছে। মনে মনে বিরক্ত হয় তানিয়া একটা মেয়ে এমন চূড়ান্ত পর্যায়ের অসভ্য কীভাবে হতে পারে ভেবে। এর কি নূন্যতম আত্মসম্মানবোধ নেই নাকি! ভাবে তানিয়া। অবশ্য সে নিজেই স্বামী, সংসারের মোহে এতকাল কতবার, কতজায়গায় নিজের আত্মসম্মান বলি দিয়েছে সেখানে সাবা তো চূড়ান্ত পর্যায়ের ন্যাকা, অসভ্য মার্কা মেয়ে। এর আত্মসম্মান না থাকাটা অস্বাভাবিক কিছু নয়। বরং তানিয়া অবাক হতো যদি দেখতো ওর ভেতর আত্মসম্মান আছে। এই মেয়ের চাইতে চন্দ্র মনে মনে থুক্কু বলে তানিয়া। রওনকের মুখে চন্দ্র, চন্দ্রলেখা শুনতে শুনতে তার মুখ দিয়েও একই নাম বেরিয়ে আসছে। এই সাবা তেদর মেয়েটার চাইতে চিত্রলেখার আত্মসম্মানবোধ ডের বেশি। তানিয়া খুশি হয় রওনক এই সাবা টাবাকে প্রশ্রয় দেয়নি বরং চিত্রলেখাকে বিয়ে করেছে। জীবনে সুখী হতে গেলে এমন একজন সঙ্গী থাকাটা অতি-আবশ্যক। সাবার মতো মেয়েরা কাউকে সুখী করতে জানে না। এরা জানে কেবল ন্যাকামি আর শো-অফ। নিজের স্বার্থ ছাড়া এরা চোখে আর কিছুই দেখতে পায় না।

ছেলের কথা শুনে অবাক হয়ে দিলারা জামান বলেন, কিসের জবাব মানে?

-সেটাই তো জানতে চাচ্ছি তুমি আশরাফ আঙ্কেলকে কিসের জবাব দিবে?

-তুই হেয়ালি করছিস আমার সঙ্গে?

-একদমই না। তুমি পরিষ্কার করে না বললে তো আমি বুঝবো না।

দিলারা জামান হাইপার হয়ে যাচ্ছেন। এমনিতেই হাই প্রেসারের মানুষ উনি। উনার এত উত্তেজিত হওয়াটা ঠিক নয়। তানিয়া এগিয়ে এসে বলে,

-রওনক মা হয়ত সাবার সঙ্গে তোমার বিয়ের বিষয়টা বুঝাতে চাইছেন।

ফস করে একটা নিঃশ্বাস ছেড়ে রওনক বলে,

-আমি অলরেডি কয়েকবার এই কথাটা ক্লিয়ার করেছি। বারবার একই কথা বলতে আমার একদম ভালো লাগে না।

নিজের প্যান্টের পকেটে থাকা মোবাইলটা বের করে রওনক কাকে যেনো কল লাগায়। অন্যপাশে কল রিসিভ হলে রওনক বলে,

-আসসালামু আলাইকুম আয়রাফ আঙ্কেল। সরি রাত করে আপনাকে বিরক্ত করছি। একচুয়েলি ইম্পর্ট্যান্ট বলেই কলটা করা। আপনি হয়ত খবর পেয়েছেন আমি বিয়ে করে ফেলেছি। আমার মা খুব টেনশন করছেন আপনাকে কীভাবে মুখ দেখাবেন, কি জবাব দিবেন ভেবে। মায়ের দিকটা ক্লিয়ার করতে আমার আপনাকে রাত করে বিরক্ত করা। আমার মা সম্ভবত সাবাকে কথা দিয়েছিল আমার সঙ্গে ওর বিয়ে হবে। কিন্তু আমি কখনো সাবাকে এমন কোনো কথা দেইনি। যাকে দিয়েছি আজ সে আমার ওয়াইফ, আমার বাড়িতেই আছে, আমার সঙ্গে। মা সাবাকে বা আপনাদের কি কথা দিয়েছিল আমার থেকে কিছু কনফার্ম না হয়েই। সম্পূর্ণটাই একটা মিসআন্ডারস্ট্যান্ডিং। এসবে আমার কোনো দায় নেই। তারপরেও বিষয়টা যেহেতু আমি রিলেটেড তাই আমি মায়ের হয়ে আপনাকে সরি বলছি। আই হোপ আমি আমার দিকটা ক্লিয়ার করতে পেরেছি। আর আঙ্কেল সাবা এই মুহূর্তে আমাদের বাসায় আছে, ভালো আছে। ও কীভাবে এসেছে জানি না। সঙ্গে গাড়ি না থাকলে আমি ড্রাইভারকে দিয়ে পাঠিয়ে দিবো আপনি চিন্তা করবেন না। জামান গ্রুপের একজন সম্মানিত শেয়ারহোল্ডার আপনি। আপনার জন্য আমি এতটুকু করতেই পারি। গুড নাইট আঙ্গেল।

ফোনটা পকেটে রেখে রওনক মায়ের উদ্দেশ্যে বলে, এই প্রসঙ্গে আর কোনো কথা হবে না।

চেঁচিয়ে ওঠেন দিলারা জামান। বলেন, তুই সবার সামনে আমাকে ছোট করছিস রওনক।

-একদম না। বরং তুমি আমাকে ছোট করেছো। হাসির পাত্র বানিয়ে ফেলেছো। তারপরেও আমি তোমার সম্মান বাঁচানোর চেষ্টা করছি। কিন্তু এরপরেও যদি তুমি একই কাজ করো তাহলে এরপর আর কারো সম্মান দেখার সময় আমার থাকবে না। আমার ব্যাক্তিগত জীবনে অন্যকারো ইন্টাফেয়ার আমি একদম সহ্য করব না। আমি আমার মতো করে, আমার বউকে নিয়ে শান্তিতে থাকতে চাই, ব্যস।

মায়ের ঘর থেকে বেরিয়ে যাবার আগে রওনক তানিয়াকে বলে, কষ্ট করে খালাকে বলো মায়ের প্রেসারটা চেক করে লাগলে আরেকটা প্রেসারের ঔষধ দিয়ে দিতে। আর ড্রাইভারকে বলো আপদটাকে ওর বাসায় দিয়ে আসতে। ডাইনিং টেবিলে আমি আর কোনো উটকো ঝামেলা চাই না।

সাবা আর কোনো কথা বলে না। এত অপমান এর আগে কোনো ফেইস করেনি সে। গায়ে জ্বালা ধরে গেছে ওর। কোথাকার না কোথাকার একটা মেয়ের জন্য রওনক তাকে অপমান করছে। আশরাফ আহমেদের মেয়েকে রিজেক্ট করছে। রওনককে এর চরম মূল্য দিতে হবে। ফণা তোলা সা পে র মতো ফসফস করতে করতেই বেরিয়ে যায় সাবা।

সাবার যাওয়ার দিক ইশারা করে তানিয়া রওনককে বলে, তোমার আপদ বিদায় হয়েছে।

-আল্লাহর দরবারে শুকরিয়া। এক কাজ করলে কেমন হয় বলো তো ভাবী।

-কি কাজ? (আগ্রহ ভরে জিজ্ঞেস করে তানিয়া।)

-সিকিউরিটিকে বলে রাখলাম আমি বাসায় থাকা অবস্থায় যেনো এই মেয়েটাকে এলাও না করে।

তানিয়া আর হাসি চেপে রাখতে পারে না। ভাবীর হাসি দেখে রওনক বলে, হেসো না প্লিজ। সি ইজ সাচ এ পেইন ইন দ্যা হেড।

চিত্রলেখা বেশ সময় নিয়েই শাওয়ার দিয়েছে। এই বাড়িতে প্রবেশ করার পর থেকে একে একে যা দেখছে সব মিলিয়ে শরীরে ক্লান্তি জেঁকে বসেছে। তাই অতিরিক্ত সময় নিয়েই শাওয়ারের নিচে দাঁড়িয়ে ছিল সে। শুধু শরীর নয় মনটারও যেনো গোসল হয়ে গেছে। যথেষ্ট ফুরফুরে লাগছে। কাপড় বদলে ভেজা চুল টাওয়ালে জড়িয়ে নিয়ে চিত্রলেখা যেই নব ঘুরিয়ে দরজা খোলার চেষ্টা করে ওমনি সতর্ক হয় সে। দরজাটা খুলছে না। টের পায় দরজা আটকে গেছে। দু’হাত বাড়িয়ে ভেতরের দিকে জোরে টানে তবুও কাজ হয় না। দরজাটা লক হয়ে গেছে। নবের লকটা কি আটকে গেলো? এখন কীভাবে বের হবে সে? চিত্রলেখা একবার চারদিকে চোখ বুলায়। বন্ধ বাথরুমে আটকা পড়ে গেছে সে। ভাবতেই মস্তিষ্ক শূন্য হয়ে আসতে লাগে তার। নিঃশ্বাস ভারী হতে শুরু হয়েছে ইতোমধ্যে। আরও কয়েকবার নব ধরে টানে সে। জোরে জোরে বারিও দেয় কয়টা। সেই সঙ্গে ডাকেও,

-কেউ আছেন? এই যে শুনছেন আমি বাথরুমে আটকে গিয়েছি। এই যে… আপনি কি ঘরে আছেন? শুনছেন আমি ডাকছি। এই যে শুনুন…

আগের চাইতে আরও জোরে দরজা পেটায় চিত্রলেখা। তৎক্ষনাৎই তার মনে পড়ে রওনক তখন বলে গেল সে নিচে যাচ্ছে। সে কি এখনো ফিরে আসেনি? এখন থেকে তো তার আওয়াজ বাহির পর্যন্ত পৌঁছাবে না। বাথরুমের বাইরে চেঞ্জিং রুম, তারপর বেড রুম, তারপর লিভিং এরপর বেরিয়ে সিড়ি বেয়ে নিচে। এদিকে কেউ না আসলে তো টের পাবে না সে বাথরুমে আটকে আছে। এখন কি উপায় হবে? ভাবতেই চিত্রলেখার চোখ-মুখ শুকিয়ে আসতে লাগে। জলদি এখান থেকে বের না হলে যেকোনো মুহূর্তে জ্ঞান হারিয়ে ফেলব সে। চিত্রলেখার অস্থিরতা বাড়ে। সজোরে দরজায় বারি দিয়ে আর্তচিৎকার করতে লাগে,

-এই যে শুনছেন। আমি আটকে গেছি। এই যে, রওনক, রওনক আপনি কোথায় প্লিজ দরজা খুলুন আমি আটকে গেছি। রওনক প্লিজ আমাকে বের করুন এখান থেকে। রওনক…

তানিয়া রওনকের কথপোকথন চলাকালীনই বাসায় প্রবেশ করে রাদিন। ঐ ঘটনার পর আজই প্রথম দেখা হলো রাদিন ও তানিয়ার। আগের সময় হলে এতক্ষণে প্রিয়মানুষটার কাছে ছুটে যেতো সে। কিন্তু আজ রাদিনকে দেখে আর ওখানে দাঁড়ায় না। প্রস্থান করার সময় রওনককে বলে যায়, আমি মায়ের প্রেসারটা চেক করি গিয়ে।

ততক্ষণে রাদিন এগিয়ে এসেছে রওনকের মুখোমুখি। জিনিস করে, ঘটনা কি সত্যি নাকি রে?

-কোন ঘটনা?

-তুই বিয়ে করেছিস?

-করেছি তো।

-কাউকে কিছু না জানিয়ে, কোনো শলাপরামর্শ ছাড়া বিয়ে করে ফেললি?

-কাকে জানাতে হবে? কার সঙ্গে শলাপরামর্শ করবো?

-মা আছে, আমি আছি…

বড়ভাইকে কথা শেষ করতে না দিয়ে রওনক বলে,

-বিয়ে তো আমি করবো তাহলে তোমাদের কেনো বলতে হবে? আর তোমার মনে হয়, তুমি নিজে যা করেছো এরপর আমাকে শলাপরামর্শ দেয়ার এখতিয়ার রাখো? যে নিজের বিবাহিত জীবনটা ধরে রাখতে পারলো না সে আমাকে বিয়ের পরামর্শ দিবে হাস্যকর কথা বললে ভাইয়া। এসব বাদ দিয়ে বলো এতদিন পর কি মনে করে বাড়ি ফিরলে?

রাদিনের মুখে কথা কুলায় না। রওনকের অবশ্য তার আগমনের কারণ জানার তেমন আগ্রহ নেই। কথার কথা বলেছে সে। তাই নিজেই বলে, বাদ দাও আমাকে তোমার কিছুই বলতে হবে না। এটা আমার একার বাড়ি নয়। মন চেয়েছে এসেছো। কিন্তু সরি এখন আর তোমাকে সময় দিতে পারছি না। আমার বউ অপেক্ষা করছে। এক্সকিউজ মি, প্লিজ।

রওনক বেডরুমে ডুকতেই চিত্রলেখার কন্ঠ শুনতে পায়। তাকে ডাকছে, রওনক আপনি কোথায়? প্লিজ আমাকে বের করুন, দরজাটা খুলুন। এই যে শুনছেন?

একমুহূর্ত দাঁড়ায় না সে। দৌড় লাগায় ভেতরের দিকে। বেডরুমে চিত্রলেখাকে না দেখতে পেয়ে চেঞ্জিং রুমে ডুকলেই টের পায় তার চন্দ্রলেখা বাথরুমে আটকে আছে। ভেতর থেকে চিত্রলেখার আওয়াজ পাওয়া যাচ্ছে। দরজায় সজোরে বারি দিয়ে বলছে, রওনক আপনি কোথায়? রওনক…

রওনক বাইরে থেকে দরজাটা খুলে দিলেই দেখে চিত্রলেখা ভয়ে কেঁদে ফেলেছে। সে কিছু বলার আগেই ভীত-সন্ত্রস্ত চিত্রলেখা ঝাঁপিয়ে পড়ে রওনকের বুকের উপর। তাকে জড়িয়ে ধরে চিত্রলেখা বলে, এতক্ষণ কোথায় ছিলেন আপনি? জানেন কখন থেকে ডাকছি আমি আপনাকে? আমি আটকে গিয়েছিলাম। দরজাটা…

রওনকও শক্ত করে জড়িয়ে ধরে তার চন্দ্রলেখাকে। একটা হাত মাথায় রেখে বলে, হুস, এখন সব ঠিক আছে। আমি চলে এসছি। ভয়ের আর কোনো কারণ নেই৷ কিচ্ছু হবে না। এই যে আমি, তোমার রওনক চলে এসেছে।

চিত্রলেখা অনেকটা মন্থর হয়ে এসেছে। রওনক ভীত-সন্ত্রস্ত চিত্রলেখাকে পাঁজা কোলে তুলে নেয়। এতে চিত্রলেখাও আপত্তি করে না। সে এই মুহূর্তে আতংকিত। রওনক যত্নেরসহীত বউকে কোলে নিয়ে ঘরে ফিরে আসে। পিঠে বালিশ দিয়ে বসে চিত্রলেখাকে বুকের সঙ্গে জড়িয়ে রাখে। তাকে ভরসা দেয়ার চেষ্টা করে সে আছে সবসময়, সবরকম পরিস্থিতিতে। রওনকের বুঝতে অসুবিধা হয় না কাজটা কে করতে পারে। কিন্তু এই মুহূর্তে এসব প্রসঙ্গ তোলে না। বুকের সঙ্গে জড়িয়ে রাখা চিত্রলেখার চাদিতে চুমু খায় পরম যত্নে। সেই সঙ্গে বলে,

-আই এম সরি। আর কখনো লেইট হবে না, আই প্রমিজ বউ।

চলবে…

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে