#মাতাল_হাওয়া। ইতি চৌধুরী। পর্ব-১৮
(দয়া করে কেউ কপি করবেন না)
সাবা নিজের ঘরে বসে আরাম করে কাজের মেয়েকে দিয়ে হাতে পায়ে নেইলপালিশ লাগাচ্ছে। আজ সন্ধ্যার পর রওনকদের বাসায় যাবে সে। উদ্দেশ্য রওনকের সাথে দেখা করা। বন্ধের দিন রওনক যে বাসায় আছে তা ভালো করেই জানে সাবা। তাই যাওয়ার আগের প্রস্তুতি চলছে। রুমের দরজা খোলা থাকায় আর জিজ্ঞেস করার প্রয়োজন মনে করে না সাবার ছোট বোন রিপা। এগিয়ে এসে কাছাকাছি দাঁড়িয়ে রিপা জিজ্ঞেস করে,
-শুনলাম তোমার নাকি বিয়ে ঠিক হচ্ছে?
সাবা মাথা তুলে তাকায় না। তার মনোযোগ নিজের পায়ের দিকে। যদি সে মুখ তুলে তাকালে নেইলপেইন্ট নষ্ট হয়ে যায় তাহলে তো তাকে দেখতে সুন্দর লাগবে না। তাই বোনের দিকে না তাকিয়ে নিচের দিকে মনোযোগ ধরে রেখেই সাবা জবাব দেয়। বলে,
-ঠিক হচ্ছে না বল ঠিক হয়ে গেছে।
এবারে বিছানায় বসে পড়ে রিপা জিজ্ঞেস করে,
-তা পাত্র কে রওনক জামান?
ছোট বোনের প্রশ্নের জবাব না দিয়ে সাবা বলে,
-আস্তে বোস রিপা, এক্ষুনি তো আমার নেইলপেইন্টটা নষ্ট হয়ে যেতো।
বড় বোনের এসব হেঁয়ালিপনায় পাত্তা না দিয়ে রিপা আবার জিজ্ঞেস করে,
-বললে না পাত্র কে? রওনক ভাই?
-আর কে হবে? রওনক ছাড়া কার এত যোগ্যতা আছে আমায় বিয়ে করবে?
-কেন? তোমাকে বিয়ে করতে যোগ্য লাগবে নাকি?
-অবশ্যই লাগবে। আমি তো যাকে নয় তাকে বিয়ে করব না। আমি সাবা, সাবা আহমেদ। দি আশরাফ আহমেদের মেয়ে।
-বাবার পরিচয় ছাড়া আহামরি বিশেষ কোনো তোপ তো তুমি নও আপু।
এবারে মুখ তুলে কেমন কেমন করে তাকায় সাবা। তার এই মুহূর্তে একদম মন চাইছে না ছোট বোনের সঙ্গে অযাচিত তর্ক করতে। কিন্তু জবাব না দিয়ে ছেড়ে দেয়ার পাত্রী সাবা নয়। হোক কথার তর্ক বা কোনো কম্পিটিশান তাকে জিততেই হবে। হারতে সাবা শিখেনি। তাই চোখ-মুখ শক্ত করে জবাব দেয়,
-আলাদা করে আর কোনো পরিচয়ের তো প্রয়োজন নেই। আমার বাবার পরিচয়ই যথেষ্ট। আর তুই এমন আমাকে জেরা করছিস কেন?
-করছি কারণ আমি যতটুকু বুঝি রওনক ভাই তোমাকে পছন্দ করে না। যা করে সেটা সমিহ তাও বাবার জন্য। তুমি বাবার মেয়ে না হলে তোমাকে সে মুখও লাগাতো না। তাকে বিয়ের স্বপ্ন দেখা তো দূরের কথা।
-শুন রিপা আমি সাবা দিনে জেগে স্বপ্ন দেখি না। আমি যেটা বলি সেটাই হয়। রওনককে আমি বিয়ে করে ছাড়বোই বাই হুক ওর বাই কুক। হি উইল বি ওনলি মাইন।
-জোর করে সম্পর্ক হয় না আপু। সম্পর্কে একে-অপরের প্রতি ভালোবাসা থাকাটা জরুরী। ভালোবাসা না থাকলে সংসারে সুখ আসবে কীভাবে?
-তোকে আমাদের বিষয়ে না ভাবলেও চলবে। আমার মতো সুন্দরী বউ যার চোখের সামনে দিনরাত ঘুরঘুর করবে সে এমনি খুশিতে টগবগ করবে। বরং আমায় বিয়ে না করলেই রওনক আফসোস করবে। বিউটি হাত ফসকে বেরিয়ে গেলো। এটা ওর ভাগ্য বিবাহিত হয়েও আমার মতো অবিবাহিত সুন্দরী বউ পাচ্ছে।
-এমন ভাগ্য যা হয়ত সে চায়ই না।
-রওনক আমায় চায় কি চায় না সেটা আমি বুঝে নিবো। তুই আপাতত এই মুহূর্তে আমার রুম থেকে বেরিয়ে যা। আমার মুডটা যথেষ্ট ভালো আছে। তোর সঙ্গে কথা বলে আমি আমার মুড নষ্ট করতে চাই না।
রিপা বিছানা ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে আরও বলে,
-তাড়াহুড়ো করো না আপু। জীবনটা কোনো ছেলে খেলা নয় যে নামযশ, ব্যাংক ব্যালেন্সের কাছে নিজের সব বাজি লাগিয়ে দিবে। যাই করো একটু ভেবে চিন্তে তারপর করো। যাতে করে একটা সময় পরে তোমাকে না আফসোস করতে হয়। পুরুষমানুষের কি আছে? এক বউ গেলে আরও ১০০টা বিয়ে করতে পারবে। বয়স হলেও পুরুষের যৌবন যায় না। কিন্তু মেয়েদের নামের পাশে একবার ডিভোর্সের তকমা লেগে গেলেই জীবন শেষ। তাছাড়া মেয়ে মানেই কুড়িতে বুড়ি। তুমি তো বহু আগেই কুড়ি পেরিয়েছো।
রিপার এমন কথায় অনেকটা ক্ষেপে যায় সাবা। চেঁচিয়ে বলে,
-এই তুই আজকাল কাদের সাথে চলা ফেরা করছিস বলতো। তোর কথা এমন বস্তিদের মতো কেন হয়ে গেছে? বড় বোনের সাথে কীভাবে কথা বলতে হয় সেই আদবও ভুলে গেছিস নাকি?
-আমি আমার আদব ঠিকই জানি আপু। তুমি হাইপার হয়ে যাচ্ছো। ঠান্ডা মাথায় ভাবো তাহলে দেখবে আমি একটা কথাও ভুল বলিনি। তোমার ভালো চাই বলেই বলছি। তুমি তো আমার সৎ বোন নও, আপন বোন, একই মায়ের পেটে আমাদের জন্ম। আমি কি কখনো তোমার মন্দ চাইতে পারি? পারি না বলেই তোমার চিন্তায় এতকিছু বললাম। বাকিটা তুমি ভেবে দেখো।
বেরিয়ে যাওয়ার আগে রিপা আরও বলে,
-আমার কথাগুলো অবশ্যই ভেবে দেখো কিন্তু।
রিপার কথায় ইতোমধ্যে সাবার মস্তিষ্কের ভেতর আ গু ন ধরে গেছেৃ রাগে মাথা ফেটে যাচ্ছে ওর। গলা ফা টি য়ে চিৎকার করতে পারলে হয়ত হালকা লাগতো। কিন্তু আপাতত সে এই কাজ করবে না। একটু পরেই সে রওনকের সঙ্গে দেখা করতে যাবে তাই এই মুহূর্তে চিৎকার চেঁচামেচি করে সময় নষ্ট করার মতো সময় হাতে নেই। ফস করে একটা নিঃশ্বাস ছেড়ে সাবা আবার পায়ের দিকে তাকায় কাজের মেয়েটা নেইলপেইন্ট ঠিকঠাক লাগাচ্ছে কিনা দেখতে। কিন্তু পায়ের দিকে তাকিয়েই সাবার মস্তিষ্কে নিভে যাওয়া আ গু ন টা আবার জ্ব লে ওঠে। পায়ের এক আঙ্গুলের নেইলপেইন্ট নষ্ট হয়ে গেছে। এটা হয়েছেও ওর নিজের দোষেই। রিপার সঙ্গে বাকবিতন্ডা করতে গিয়েই নড়েছিল সে। কিন্তু এদিক সেদিক না তাকিয়েই ঠাস করে মেয়েটার গালে একটা থা প্প র বসিয়ে দেয় সাবা। চেঁচিয়ে বলে,
-একটা কাজও ঠিকঠাক করতে পারিস না ছোটলোকের জাত। সারাদিন শুধু গান্ডেপিন্ডে গিলা চাই এদের। মুছ, মুছে আবার ঠিক করে লাগা।
কাজের মেয়েটার চোখে পানি টলমল করছে। যা সাবা দেখেও দেখে না। এসব দেখার মানসিকতা ওর নেই। ছোট বোন কিছু কঠিন বাস্তব কথা শুনিয়ে গেছে তাকে যা সহ্য করতে না পারায় সেই তেজটাই অসহায় মেয়েটার উপর ঝেড়ে দিলো।
চলবে…
#মাতাল_হাওয়া। ইতি চৌধুরী। পর্ব-১৯
(দয়া করে কেউ কপি করবেন না)
রওনকের মুখোমুখি বসে আছে লাবিব। তাদের দু’জনের সামনেই কফি রাখা তারা দু’জনেই বসে আছে একটা কফি শপে। রওনক এখনো নিজের কফির কাপে চুমুক বসায়নি। তবে লাবিব অর্ধেকটা শেষ করে ফেলেছে ইতোমধ্যেই। ওর বাবা হাসপাতালে থাকায় ওখানে দৌড়াদৌড়ি করে বেচারা বড্ড ক্লান্ত। ক্লান্তি তার চোখ মুখেও প্রকাশ পাচ্ছে খানিকটা৷ রওনককে অন্যমনস্ক হয়ে বসে থাকতে দেখে এবারে লাবিব নিজ থেকেই জিজ্ঞেস করে,
-এনিথিং রঙ বস?
ফস করে একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে রওনক বলে,
-তুমি কি কাউকে পছন্দ করো? তোমার জীবনে কেউ আছে?
আচমকা রওনকের মুখে এমন প্রশ্ন শুনে খানিকটা ভরকে যায় লাবিব। একটুর জন্য গরম কফি তার হাত ছলকে পড়ে যায়নি, সে সামলে নিয়েছে। কাপটা হাত থাকে নামিয়ে রেখে বলে,
-হঠাৎ এমন প্রশ্ন?
-তুমি বলতে না চাইলে ইটস ওকে।
-আসলে না বলতে চাওয়ার মতো কিছু নয়। আপনি তো কখনো পার্সোনাল লাইফ নিয়ে আগ্রহ দেখাননি। আজ আচমকা জিজ্ঞেস করায় সামান্য অবাক হয়েছি।
সামান্য থেমে লাবিব আরও বলে,
-আছে একজন যাকে খুব পছন্দ করি। পার্মানেন্ট করে জীবনে আনতে চাই। যদিও এখনো তাকে কিছু বলা হয়নি।
-বলোনি কেনো?
-সাহস করতে পারিনি। যদি ফিরিয়ে দেয় সেই ভয়ে। তবে খুব বেশিদিন আর অপেক্ষা করব না।
-কি করবে?
-সে হ্যাঁ বলুক বা না আমি তাকে নিজের পছন্দের কথা জানিয়ে দিবো।
রওনক মনে মনে ভাবে, ❝ফিরিয়ে দিবে না। জামাই আদর করার জন্য এমনিই বসে আছে। বলেই দেখো ঝাঁপিয়ে পরবে।❞ মুখে আর কিছু বলে না রওনক। তাকে চুপ করে থাকতে দেখে লাবিব জিজ্ঞেস করে,
-তা বললেন না হঠাৎ আজ কি হলো যে আমার পার্সোনাল লাইফ নিয়ে ইন্টারেস্ট জাগলো।
-কিছু না এমনি।
রওনক নিজেকে সামলে নিয়েছে। এমনিও খুব সহজে বিচলিত হওয়াটা তার স্বভাবে নেই। কিন্তু লাবিবের মনপুত হয় না রওনকের জবাব। তাই সে বলে,
-কিছু একটা তো হয়েছে। কোনো কারণ ছাড়া জিজ্ঞেস করার লোক আপনি নন। বলা যায় কি হয়েছে?
রওনক আবারও ফস করে আরেকটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে। বাড়িতে যে তার আবার বিয়ের পরওয়ানা জারি হয়েছে সেই ঘটনার সবটা বিস্তারিত ভেঙে বলে। সব শুনে বিজ্ঞের মতো কিছুক্ষণ রওনকের মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে লাবিব। সে বুঝতে পারে না এখানে আপত্তির কি আছে। সবকিছু শুনার পর বলে,
-আপনার আপত্তি টা ঠিক কোন জায়গায় বলুন তো। আবার বিয়েতে তো আমি দোষের কিছু দেখছি না। তাছাড়া এটাও তো ঠিক অতীতে হওয়া একটা এক্সেডিন্টের জন্য আপনি নিজের জীবন থামিয়ে রাখতে পারেন না।
-ডন্ট টক লাইক দেম লাবিব। দ্যাট ওয়াজ নট এনি স্টুপিট এক্সিডেন্ট ফর মি। আই ওয়াজ ম্যারেইড উইথ হার। সি ওয়াজ মাই ওয়াইফ। এই সহজ বিষয়টা তোমরা বুঝো না কেন? আমি মরে গিয়েছি না ও মরে গিয়েছে যে সবাই মিলে আমার জীবনের একটা গুরুত্বপূর্ণ সময়কে, মানুষকে এক্সিডেন্ট বানিয়ে দিচ্ছো?
লাবিব বুঝতে পারে রওনকের কথাটা পছন্দ হয়নি। এমনিতেই বেচারা বিরক্ত এখন সেও যদি অন্যদের মতো করেই কথা বলে তাহলে তো হচ্ছে না। তাই নিজেকে কারেকশন করে নিয়ে বলে,
-লেট মি কারেক্ট মাই সেলফ। মানলাম ওটা এক্সিডেন্ট ছিল না। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে আমাদের অতীত ফেলে এগিয়ে যেতে হয় ভবিষ্যতের দিকে। আর সেজন্য কখনো কখনো অতীতকে এক্সিডেন্ট নামক তকমা লাগিয়ে এগিয়ে যেতে হয়, জীবনটাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হয়। এতে মন্দ কিছু নেই। এসব আপাতত বাদ দেই। আগে বলুন তো বিয়ে করতে সমস্যা কোথায়?
-আই ডোন্ট নো।
-সমস্যা বিয়েতে নাকি যে পাত্রী দেখা হচ্ছে তাতে? আপনার নিজের কোনো পছন্দ আছে?
রওনক এবারে সরাসরি তাকায় লাবিবের চোখের দিকে। ওর করা প্রশ্নের উত্তরটা খোঁজার চেষ্টা করে ওরই প্রশ্নের ভেতর। কিন্তু উত্তর মেলা ভার।
সাবা বাসায় এসে সরাসরি দিলারা জামানের ঘরেই এসেছে। সাবাকে দেখে আহ্লাদে গদগদ হোন তিনি। বুকে জড়িয়ে নেন তৎক্ষনাৎই। ব্যস্ত কন্ঠে সাবা জিজ্ঞেস করে,
-আপনাকে এমন শুকনো শুকনো লাগছে কেনো আন্টি? আপনার কি শরীর খারাপ করেছে?
-না তো শরীর খারাপ করেনি।
-তাহলে কি আমি আসায় আপনি খুশি হোননি? আপনার মুখে হাসি নেই কেনো?
-ওমা খুশি হবো না কেনো? অবশ্যই খুশি হয়েছি। তুমি আসবে আর আমি খুশি হবো না তা কি হয়?
আরেকদফা আহ্লাদে গদগদ হোন দিলারা জামান। এদের দু’জনের আহ্লাদিপনার মধ্যেই ঘরে প্রবেশ করে জাহানারা। তার হাতে এক গ্লাস অরেঞ্জ জুস। সাবা এই বাসায় এলেই আগে তাকে এক গ্লাস অরেঞ্জ জুস দিতে হয়। ওর ভাষ্যমতে বাইরে অনেক গরম যদিও সে এসি গাড়ি করেই আসে। তাও গরম তাকে কাবু করে ফেলে। তাই বাইরে থেকে এলে আগে তার এক গ্লাস অরেঞ্জ জুস খাওয়া চাই। এই কথা জানার পর দিলারা জামান জাহানারাকে বলে দিয়েছেন সাবা এই বাসায় এলে আসার সঙ্গে সঙ্গে যেন তাকে অরেঞ্জ জুস দেয়া হয়। তবে সেটা কেবল অরেঞ্জ জুস নয়, অর্গানিক অরেঞ্জ জুস ছাড়া সাবা খায় না। সেই অর্গানিক অরেঞ্জ জুস নিয়েই হাজির হয়েছে জাহানারা। হাত থেকে জুসের ট্রেটা নামিয়ে রেখে নাস্তার ব্যবস্থা দেখার জন্য ফিরে আসতে নিলে তাকে ডাক দিয়ে দাঁড় করান দিলারা জামান। বলেন,
-রওনককে বলো আমার ঘরে আসতে।
-রওনক তো বাসায় নেই আপা।
-বাসা নেই মানে? কোথায় গেছে?
-সেটা তো বলে যায়নি।
-কখন গেলো?
-এই আধাঘন্টা হবে বেরিয়েছে।
-আমি তো ওকে বললাম সাবা আসবে, বিকালে যেন কোথাও না যায়। আজ দুপুরেও বাসায় ছিল না। ছেলেটা আজকাল করছে কি?
-সেই খবর তো আমি দিতে পারছি না।
-আচ্ছা তুমি যাও, সাবার জন্য নাস্তার ব্যবস্থা করো। আমি দেখছি রওনক কোথায় গেলো।
জাহানারা বেরিয়ে যেতেই দিলারা জামান তার বেড সাইড টেবিলে থাকা মোবাইল ফোনটা হাতে নিয়ে ছেলের নম্বর ডায়েল করেন। রিং হয়ে হয়ে কল কেটে যায়। কিন্তু রওনকের সাইডে কলটা রিসিভ হয় না। প্রথমবার কেটে যাওয়ায় আরও একবার কল মিলায় দিলারা জামান। কিন্তু পরপর কয়েকবার কল দিয়েও লাভের লাভ কিছু হয় না। রওনক কল রিসিভ করে না। এই ছেলেটাকে নিয়ে উনার হয়েছে জ্বালা। কোনোভাবেই কথা শুনাতে পারছেন না। খুব বেশি কিছু তো উনি চাইছেন না। যা চাইছেন তাও ছেলের ভালোর জন্যই। এদিকে সাবার হাস্যোজ্বল মুখে আমাবস্যা নেমে এসেছে। তা দেখে ফোনটা নামিয়ে রেখে দিলারা জামান সাবার চিবুক স্পর্শ করে হাতে চুমু খেয়ে বলেন,
-তুমি একদম মন খারাপ করো না। ওর হয়ত জরুরী কোনো কাজ পরেছে তাই বেরিয়ে গেছে। দেখছো না জানিয়ে যাওয়ার সময়টাও পায়নি। কাজ না থাকলে নিশ্চয়ই যেতো না। ও জানে তো তুমি আসছো। তোমার সাথে দেখা করার চাইতে জরুরী কিছু আছে নাকি? কিন্তু কি বলো তো এত বড় ব্যবসাটা তো ওকে একাই দেখতে হচ্ছে তাই জরুরী কাজ পরে গেলে ইগনোর করতে পারে না। কাজ না পরলে নিশ্চয়ই ও বাসায় থাকতো তোমার জন্য।
দিলারা জামানের কথা শুনে সাবার অমাবস্যা নামা মুখ আবার খিলখিলিয়ে ওঠে। উনি আরও বলেন,
-তুমি একদম মন খারাপ করো না। ও ফোন রিসিভ না করা পর্যন্ত আমি ওকে কল করবো।
এবারে খানিকটা আহ্লাদ দেখিয়ে সাবা বলে,
-ইটস ওকে আন্টি। আপনি আর ওকে ডিস্টার্ব করবেন না আমার জন্য। তাছাড়া আমি তো আপনাকে দেখতে এসেছি। আপনার সঙ্গে দেখা করতে এসেছি।
আরও একবার সাবার চিবুক স্পর্শ করে হাতে চুমু খেয়ে দিলারা জামান বলেন,
-সোনা মেয়ে আমার। আমি মনে হয় জানি কোথায় ফোন করলে রওনককে পাওয়া যাবে। আরেকটা কল দেই একটু ওয়েট করো।
এবারে দিলারা জামান লাবিবকে কল মিলায়। টেবিলের উপর থাকা লাবিবের ফোনটা বেজে উঠতেই স্ক্রিনে মিসেস এস ডট জামান নামটা ভেসে ওঠে। লাবিব কিছু বলার আগেই রওনক জিজ্ঞেস করে,
-মা নিশ্চয়ই?
মাথা ঝাকায় লাবিব। সে বুঝতে পারে না কি করবে। কল রিসিভ করার জন্য ফোনটা তুলতে নিলেই রওনক বলে,
-আমার কথা জিজ্ঞেস করলে বলবে আমি কোথায় আছি তা তুমি কিছু জানো না।
-মিথ্যা বলবো?
-বলতে না চাইলে কল রিসিভ করার প্রয়োজন নেই।
বেচারা লাবিব পড়ে যায় ঝামেলায়। কল রিসিভ করলে মিথ্যা বলা লাগবে তাই কল রিসিভ না করার সিদ্ধান্ত নেয়। রিং হয়ে কলটা কেটে যায়।
দিলারা জামান আবারও কল দিতে নিলে সাবা তার হাত টেনে ধরে বলে,
-ইটস ওকে আন্টি। আমি সত্যি সত্যি আপনার জন্যই এসেছি। রওনকের সঙ্গে নাহয় পরে কোনো সময় দেখা করে নিবো।
দিলারা জামান ফোনটা নামিয়ে রাখেন। মুখে এই কথা বললেও মনে মনে যথেষ্ট বিরক্ত হয় সাবা। সে এত সুন্দর করে সেজে, তৈরি হয়ে এলো অথচ যার জন্য এত আয়োজন তারই দেখা নেই। এখন নাকি ওকে এই বয়স্ক মহিলাটার সঙ্গে বসে গল্প করতে হবে। আড় চোখে একবার দেয়াল ঘড়িটার দিকে তাকায় সে। কখন আসবে রওনক!
রওনককে আবারও চুপ করে বসে থাকতে দেখে লাবিব জিজ্ঞেস করে,
-এভাবে এভয়েড করলে কি প্রবলেম সল্ভ হবে?
-এভয়েড করছি না। এভয়েড যেন না করা লাগে সেই সলিউশান খুঁজছি।
-খুঁজে পেলেন কিছু?
চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ায় রওনক। দাঁড়িয়ে বলে,
-এখনো খুঁজছি। খুঁজে পেলে অবশ্যই তোমাকে জানাবো। আজ উঠছি। তোমার ব্যস্ত সময়ের মধ্যে আমাকে সময় দেয়ার জন্য থ্যাঙ্কিউ লাবিব।
-ইটস অলরাইট। ইনফ্যাক্ট আপনি আমায় স্মরণ করেছেন আমি এতেই কৃতজ্ঞ।
রওনক আর অপেক্ষা করে না। লাবিবকে রেখেই বেরিয়ে যায়। লাবিব পেছনে বসে থাকে একা। রওনকের অতীত সম্পর্কে অনেক কিছুই জানে সে। সম্পূর্ণ না হলেও কিছু আন্দাজ করতে পারছে কেন রওনক এখন পর্যন্ত মানসিকভাবে নিজেকে তৈরি করতে পারছে না। রওনককে নিয়ে ভাবতে ভাবতেই আচমকাই চিত্রলেখার কথা মনে পড়ে যায় লাবিবের। এখন কেমন আছে কে জানে। বাবাকে নিয়ে এত ব্যস্ত ছিল যে খোঁজ নেয়ার সময় পায়নি। হাত ঘড়ি দেখে সে। এখনো কিছুটা সময় আছে তার হাতে। চট করে একবার চিত্রলেখাকে দেখে আসার সিদ্ধান্ত নেয়। সেই উদ্দেশ্যেই চিত্রলেখার নম্বর ডায়েল করতে করতে বেরিয়ে পড়ে।
রওনক যখন বাসায় ফিরে তখন রাত সাড়ে নয়টা বাজে। বন্ধের দিনে জরুরী কোনো কাজ না থাকলে বাসার বাইরে তেমন একটা থাকে না সে। কিন্তু আজ ইচ্ছা করেই দেরি করে ফিরেছে। নিজের ঘরে প্রবেশ করতেই রওনক দেখে তার বেডের উপর আয়েসি ভঙ্গিতে বসে আছে সাবা। তাকে দেখতে পেয়েই কোমড় দুলিয়ে এগিয়ে আসে। এগিয়ে এসে ঠিক তার মুখোমুখি দাঁড়ায়। রওনক জিজ্ঞেস করে,
-তুমি এখানে কেনো?
-তোমার জন্য অপেক্ষা করছিলাম।
-আমাদের কি এপয়েন্টমেন্ট ছিল কোনো?
-দু’দিন পর যার সাথে আমার বিয়ে হবে তার সঙ্গে দেখা করতে বুঝি এপয়েন্টমেন্ট লাগবে?
-লিসেন সাবা, আই থিং আমি আমার পয়েন্টটা অলরেডি বলে দিয়েছি।
এবারে সাবা বেহায়াপনার সীমা অতিক্রম করে আরও দু’কদম এগিয়ে এসেছে রওনকের গলা জড়িয়ে ধরে বলে,
-তুমি যাই বলো না কেনো আমি পিছনে সরছি না। বিয়ে তো আমাদের হবেই।
চট করে মাথাটা বিগড়ে যায় রওনকের। তবুও সে নিজেকে সামলে নেয়ার চেষ্টা করে তার গলায় জড়িয়ে থাকা সাবার হাত ছাড়িয়ে নিয়ে বলে,
-পেছনে দরজা আছে, নাও প্লিজ এক্সকিউজ মি। আই এম টায়ার্ড, আই নিড টু রেস্ট৷
সাবা হাত বাড়িয়ে রওনকের গাল স্পর্শ করে বলে,
-ওকে, ইউ টেক রেস্ট। আজ আর তোমায় বিরক্ত করছি না। দেখা হয়েছে আপাতত এতটুকুই ইনাফ। কথার কি আছে! কথা তো সারাজীবনই বলতে পারবো।
সাবা বেরিয়ে গেলে রওনক নবের লকটা লাগিয়ে দেয়। মূলত এই ইরিটেটিং মেয়েটাকে এভয়েড করতেই এত দেরি করে বাসায় ফিরেছে সে। কিন্তু কপাল মন্দ হলে যা হয় আর কি। আজ হয়ত রওনকের কপাল মন্দ তাই চেষ্টা করেও লাভ হয়নি। ফস করে একবার দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে ওয়াশরুম চলে যায় সে। একটা কোল্ড শাওয়ার না নিলে মাথা ঠান্ডা হবে না তার।
চলবে…
#মাতাল_হাওয়া। ইতি চৌধুরী। পর্ব-২০
(দয়া করে কেউ কপি করবেন না)
রওনক নিজের ঘরের বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে। আট তলার উপরে সম্পূর্ণটা নিয়ে ডুপেক্স সিস্টেমে বানানো হয়েছে। রওনকের বাবা অনেক বছর আগে এদেশের নামকরা এন্টিরিয়র ডিজাইনার দিয়ে সম্পূর্ণ বাসা ডিজাইন করিয়েছেন, সাজিয়েছেন। রওনকের বারান্দা থেকে ভিউটা চমৎকার সুন্দর দেখায়। দক্ষিণ মুখী হওয়ায় বাতাসের অভাব হয় না। শান্ত চিত্তে দাঁড়িয়ে সিগারেট ফুকতে ব্যস্ত রওনক। সম্ভবত তার মস্তিষ্কের ভেতর কিছু চলছে। গভীর কোনো ভাবনায় আচ্ছন্ন সে। তাই তো তানিয়ার প্রবেশ টের পায়নি। পেছনে এসে দাঁড়িয়ে ঝেড়ে কাশে তানিয়া। কাশির শব্দ পেয়ে পেছন ফিরে তাকায় রওনক। তানিয়াকে দেখে উদ্বিগ্ন না হয়ে শান্ত ভঙ্গিতেই জিজ্ঞেস করে,
-কখন এলে তুমি?
-এই তো যখন তুমি কারো ভাবনায় গভীর পর্যন্ত ডুবে ছিলে।
নিজের কথার সঙ্গে আরও যোগ করে তানিয়া। বলে,
-তোমার রুমের দরজা আনলক ছিল, তুমি রুমে ছিলে না তাই অনুমতি ছাড়াই চলে এলাম। রাগ করোনি নিশ্চয়ই?
সিগারেটে আরেকটা টান দিয়ে সামনের দিকে তাকায় রওনক। অস্বীকার করে না তাই তানিয়া ধরেই নেয় রওনক সত্যি সত্যি কাউকে নিয়ে ভাবছিল। বিকালে মায়ের ঘর থেকে বের হবার সময় যখন চায়ের বিষয়টা বলে তখনই বুঝতে পেরেছিল দেয়ার ইজ সামথিং রঙ্গ। রওনকের জীবনে হয়ত কারো আগমন ঘটেছে। নয়ত এমনি এমনি কারো প্রসংশা করার মানুষ সে নয়। ও মুখ সহজে কারো নাম যপে না, প্রসংশা করে না, খুব সহজে কাউতে মুগ্ধ হয় না। সেই মানুষটাই যেহেতু কারো প্রসংশা করেছে আগবাড়িয়ে তার মানে নিশ্চয়ই মনের ঘরে কারো আগমনের আয়োজন চলছে। কোনো ভনিতা না করে তানিয়া সরাসরি প্রশ্ন করে,
-তোমার জীবনে আজকাল ঠিক কি চলছে বলো তো রওনক।
তামিয়ার প্রশ্নের জবাব না দিয়ে বরং পাল্টা প্রশ্ন ছুড়ে দেয় রওনক। জিজ্ঞেস করে,
-এই অসময়ে ভাইয়াকে রেখে তুমি আমার ঘরে কেন ভাবি?
-প্রসঙ্গ পাল্টাতে আমার প্রশ্নের জবাবে আমাকেই প্রশ্ন করা হচ্ছে?
-যে বিষয়টা আমি নিজেই জানি না সেটা তোমায় কি করে বলি বলো তো?
-আচ্ছা বুঝলাম।
তানিয়া জোর করে না। সে ভালো করেই জানে জোর করলেই রওনক কিছু বলে দিবে না। তার যেটা বলার সেটা তাকে জিজ্ঞেস না করলেও বলবো। আর যা সে বলতে চায় না সেটা হাজারবার জিজ্ঞেস করলেও মুখ খুলবে না। তাছাড়া রওনক তার জীবনের পার্সোনাল স্পেসে কারো হস্তক্ষেপ করাটা একদম পছন্দ করে না। সিগারেটে পরপর ফুক দিয়ে তানিয়ার মুখের দিকে তাকিয়ে রওনক আবার জিজ্ঞেস করে,
-বললে না ভাইয়াকে রেখে তুমি এখানে কেনো?
-তাকে রেখে নয় বরং বলো আমাকেই দেয়ার মতো সময় আজকাল তার নেই।
-কেনো?
-ভুলে গেলে আমি তার জীবনে পেইন্টিং এর পরে আসি।
-নতুন কিছু আঁকছে নাকি?
-হ্যাঁ, তোমার ভাইয়ার ভাবে মনে হচ্ছে জলদিই সে নিরুদ্দেশ হবে।
-তাই নাকি?
-হু, গতকালই বলছিল চার দেয়ালের ভেতর নাকি তার চিত্রের রঙ ফুটে উঠছে না। মনোনিবেশ করতে পারছে না ঠিকঠাক।
-এক কাজ করলে কেমন হয় বলো তো ভাবী।
-কি কাজ?
-ভাইয়াকে ২৪ ঘন্টা ফলো করার জন্য একজন লোক হায়ার করলে কেমন হয়? তার কাজই হবে ভাইয়া কোথায় যাচ্ছে কি করছে সেই খবর রাখা। আমাদের আপডেট করা।
-এর কি কোনো প্রয়োজন আছে?
-প্রয়োজন নেই বলছো?
-কি প্রয়োজন?
-প্রয়োজন না থাকলে তুমি কেনো ডিটেকটিভ হায়ার করেছো?
রওনকের কথায় বিন্দুমাত্রও বিচলিত হয় না তানিয়া। দু’বছর ধরেই তানিয়া একজন ডিটেকটিভ হায়ার করে রেখেছে। যার কাজ কেবল রাদিন কখন কোথায় যাচ্ছে, কার সাথে দেখা করছে সেই খবরটা তানিয়া অব্দি পৌঁছে দেয়া। তবে এই বিষয়টা সে রওনককে জানায়নি তবুও সে জানে শুনে একটু ঘাবড়ায় না তানিয়া। রওনক যে কোনো ভাবে বিষয়টা জানতে পারবে এই বিষয়ে ধারনা ছিল তানিয়ার। তার মতো বড় ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের মালিক যে। যার চারিদিকে এত জানাশুনা। তার কাছ থেকে কিছু গোপন রাখাটা সহজ নয়। যদিও গোপন করাটা শুরু থেকেই তানিয়ার ইনটেনশনে ছিল না। প্রয়োজন হয়নি বলেই বলা হয়নি।
রওনক আরও জিজ্ঞেস করে,
-তুমি কি ভাইয়াকে সন্দেহ করো ভাবী?
-তোমার ভাইয়ার সাথে আমার বিয়ের আগে তার নিজের ক্লাসমেটের সাথে প্রেম ছিল সেই খবর তো তুমিও জানো রওনক।
মাথা ঝাকায় রওনক। তানিয়া আরও বলে,
-দু’বছর আগে খবর পেয়েছি তোমার ভাইয়ের প্রাক্তন প্রেমিকার তার হাসবেন্ডের সঙ্গে ডিভোর্স হয়ে গেছে।
-এই খবর ভাইয়া জানে?
-জানে।
-ভাইয়া কি…
রওনককে কথা শেষ করতে না দিয়ে তানিয়া নিজেই বলে,
-যে সন্দেহ থেকে আমি ডিটেকটিভ হারায় করেছি আলহামদুলিল্লাহ আজ পর্যন্ত আমার সন্দেহ সত্যি প্রমানিত হয়নি। তবে যতবার তোমার ভাইয়া পেইন্টিং এর বাহানা দিয়ে বাসার বাইরে থেকেছে ঐ ডিউরেশনে সে তার প্রাক্তনের সঙ্গে একবার হলেও দেখা করছে। এই পর্যন্ত তোমার ভাইয়া বেশ বড় এমাউন্ট তাকে দিয়েছে। ফিনানশিয়ালি সাপোর্ট করতে।
-হু, তুমি অবাক হও নি বিষয়টা আমি জানি শুনে?
-না।
-কেনো?
-আমি আগে থেকেই জানতাম কোনো না কোনো ভাবে তুমি বিষয়টা জানতে পারবে।
-কি করবো বলো শুধু ব্যবসার নয় তোমাদের সবার দায়িত্ব আমার উপর। তাই কে কি করছো খোঁজ রাখতে হয়।
-তোমার জানা নিয়ে আমার কোনো আপত্তি নেই রওনক। আমিই বরং তোমায় বলতাম। যেহেতু নিজেই হ্যান্ডেল করতে পারছিলাম তাই আর বলার প্রয়োজন হয়নি।
রওনক আর কিছু বলে না। তানিয়া চুপ করে দাঁড়ায়। তানিয়া ইচ্ছা করেই রওনককে জানায়নি গতকালই সে রাদিনের ফোন চেক করে পেয়েছে তার আন্ডারে দু’টো সিঙ্গাপুরের টিকেট কাটা হয়েছে। শতভাগ সিওর না হলেও তার মন বলছে রাদিন তার প্রাক্তন প্রেমিকাকে নিয়েই সিঙ্গাপুর যাচ্ছে। কেনো যাচ্ছে তা অবশ্য সে জানে না। তবে জলদিই জেনে যাবে। মেয়েদের সন্দেহ অনেকাংশেই সত্যি হয়ে যায়। তবে তানিয়া চায় না তার সন্দেহটা সত্যি হোক। রাদিনের সঙ্গে তার প্রেমের বিয়ে না হয়লেও তার জীবনে ভালোবাসার ব্যাখ্যায় কেবল রাদিনই আছে। এই জীবনে ভালোবাসার মানুষের কাছে সে প্রতারিত হতে চায় না। এখন তো নাই যখন তাদের জীবনের সঙ্গে দু’টো সন্তানের জীবনও জড়িয়ে আছে। তানিয়াকে চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে রওনক জিজ্ঞেস করে,
-আর কিছু বলবে ভাবী?
-আমি এলাম তোমার খোঁজ খবর নিতে তুমি উল্টো আমার খোঁজ নিয়ে নিলে।
স্মিত হাসে রওনক। তানিয়া জিজ্ঞেস করে,
-কি সিদ্ধান্ত নিলে?
-আপাতত কিছুই না। তোমরা যা চাইছো এই মুহূর্তে আমার পক্ষে এমন কিছু করা সম্ভব না। সাবা হোক বা অন্যকেউ এই মুহূর্তে বিয়ে নামক চ্যাপ্টার টা রি-ওপেন করার মতো সময় হাতে নেই ভাবী। প্রচন্ড ব্যস্ত আছি। ব্যবসাটা এত ছড়িয়েছে যে নিজের ব্যক্তিগত জীবনে ফোকাস করার সময় নেই আমার।
-ব্যস্ততা তো থাকবেই রওনক। তাই বলে তুমি ব্যক্তিগত জীবনকে তোয়াক্কা করবে না?
-ভেবে দেখেছি ভাবী এই মুহূর্তে কোনোভাবেই সম্ভব না।
তানিয়া আরও কিছু বলতে চেষ্টা করে কিন্তু তাকে সেই সুযোগ না দিয়ে রওনক বলে,
-ভাইয়াকে বলো আমার তার সঙ্গে জরুরী কথা আছে। তার কখন সময় হবে?
-আচ্ছা বলবো।
-গুড নাইট ভাবী।
-গুড নাইট।
তানিয়া সন্তপর্ণে বেরিয়ে যায়। বুঝতে পারে রওনক আর কথা বলতে চাইছে না। তাই তাকে আর না ঘেটে বেরিয়ে যায়। তানিয়া চলে যেতেই রওনক আরেকটা সিগারেট জ্বালায়। চলে আসার সময় পেছন ফিরে চিত্রলেখার মুখটা দেখেছিল সে, সেই চেহারাই তার চোখের পাতায় ভাসছে। মেয়েটা মুখে কিচ্ছু বলে না৷ অথচ তার চোখ ভর্তি কথার ঝুলি। সে জানতে চাইলে কি চিত্রলেখা তাকে নিজের মনের কথা বলবে অকপটে?
চলবে…