মাতাল হাওয়া পর্ব-১৪+১৫

0
565

#মাতাল_হাওয়া। ইতি চৌধুরী। পর্ব-১৪
(দয়া করে কেউ কপি করবেন না)

রওনক চিত্রলেখার বাসার নীল রঙের লোহার গেইটটার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। ভেতরে যাবে কিনা বুঝতে পারছে না। তার এভাবে চলে আসাটা হয়ত উচিত হয়নি। কেনো যে আসতে গেল সে! এভাবে জোকের বশে কাজ তেমন একটা করে না রওনক। কিন্তু আজ কি হলো কে জানে? সকালে ঘুম ভাঙতেই মনে হলো একবার চিত্রলেখাকে দেখতে পারলে ভালো হয়ত। এখন কেমন আছে কে জানে? শরীরটা আগের চাইতে ভালো না আবার বিগড়ে গেল! শরীর খারাপ করলে যে এই মেয়ে কাউকে বলবে না তা রওনকের বুঝা হয়ে গেছে। এমনকি নিজে থেকে ডাক্তারও দেখাবে না। পুরোপুরি সুস্থ আছে কিনা দেখার তাগাদা অনুভব করে এই পর্যন্ত ছুটে আসা রওনকের। কিন্তু গেইট পর্যন্ত এসে এখন ভেতরে যেতে ইতস্তত লাগছে। মনে হচ্ছে তার এভাবে চলে আসাটা বোকামি হয়েছে। বেশ কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে ফিরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় রওনক। যেই গাড়িতে ফিরে যাওয়ার জন্য পেছন ঘুরতে নেয় তখনই চিত্রলেখার বাড়ির নীল লোহার গেইটটা খট করে খোলার শব্দ হয়। রওনক আর গাড়িতে গিয়ে বসতে পারে না। তার আগেই গেইটটা খুলে বেরিয়ে আসে একটা ছেলে। ছেলেটার সাথে রওনকের পরিচয় না থাকলেও চিনতে পারছে সে এটা চিত্রলেখারই ভাই হবে। চেহারায় মিল পাওয়া যাচ্ছে। গেইট খুলে বেরিয়ে রওনককে দেখে একবার তার পেছনে থাকা গাড়িটার দিকে তাকায় চয়ন। এত দামী গাড়ি চড়ে আসার মতো আত্মীয়-স্বজন ওদের নেই। গতকাল রাতে বাড়ি ফিরে চারুর মুখে শুনেছে বড় বোনকে তার অফিসের বস ইয়া মস্তবড় গাড়ি করে নামিয়ে দিয়ে গেছে। যদিও তার নিজের চোখে দেখা হয়নি। তবে এই মুহূর্তে গেইটের বাইরে দাঁড়িয়ে থাকা লোকটাকে দেখে চয়নের মনে হচ্ছে উনি হয়ত চিত্রলেখার বসই হবেন। লোকটার পরনের কাপড়চোপড় দেখেও বুঝা যাচ্ছে বেশ দামী। একবার লোকটার পায়ের দিকে তাকায় চয়ন। এডিডাস ব্রান্ডের একজোড়া বেশ দামী স্নিকার্স পরিধানে। এডিডাস লেখা নকল টি-শার্ট ফুটপাতে বা ভ্যানে পাওয়া যায় দেড়শ বা দুইশ টাকায়। সেরকম বেশ কয়টা টি-শার্ট চয়নের আছে। কিন্তু এই মুহূর্তে তার সমানে দাঁড়িয়ে থাকা ভদ্রলোক যে কোনো লোকাল বা নকল জিনিস পরেননি তা বুঝতে অসুবিধা হচ্ছে না ওর। রওনক কিছু বলে না, চুপচাপ তাকিয়ে রশ কেবল। চয়ন নিজেই বলে,

-আপনি কি আপার কাছে এসেছেন?

কেমন কেমন করে যেন তাকায় রওনক। তা দেখে চয়ন নিজের কথা সংশোধন করে বলে,

-আই মিন কাউকে খুঁজছেন?

-চিত্রলেখাকে দেখতে এসেছি।

-আপনার পরিচয়?

হাত বাড়িয়ে দিয়ে রওনক বলে,

-আমি রওনক, রওনক জামান। চিত্রলেখার বস।

-ভেতরে আসুন প্লিজ।

চয়ন মনে মনে যা ভেবেছিল ঠিক তাই হলো। ভেতরে প্রবেশ করতে করতে রওনক জিজ্ঞেস করে,

-এখন চিত্রলেখার শরীর কেমন?

-এসেছেন যেহেতু আপনি নিজের চোখেই দেখে নিন নাহয়।

চয়নের কথাটা কেমন রহস্য রহস্য লাগে রওনকের। কিন্তু সে কথা বাড়ায় না। ততক্ষণে ওরা উঠান পেরিয়ে বারান্দার সামনে এসে দাঁড়িয়েছে। এতটুকু এসেই থমকে দাঁড়ায় রওনক চিত্রলেখাকে দেখে। চয়ন একপাশে সরে দাঁড়িয়েছে। চিত্রলেখা এখনো রওনককে খেয়াল করেনি। খেয়াল করবে কীভাবে! সে তো ব্যস্ত নিজের কাজে। হাতে তার এক বালতি কাপড়। দেখে বুঝা যাচ্ছে বালতি ভরা কাপড়গুলো সে মাত্রই ধুয়ে বেরিয়েছে। কপালময় ঘামের ছড়াছড়ি। ওড়নাটা ঘুরিয়ে এনে কোমড়ের কাছে বাঁধা। কামিজের সামনের অংশ অনেকটা পানিতে ভিজে গেছে। আটপৌরে বাঙালি মধ্যবিত্ত বা নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবারের বড়মেয়েদের জীবন কেমন হয় এই মুহূর্তে চিত্রলেখাকে দেখলে তার সুস্পষ্ট ধারনা পাওয়া যাবে। কিন্তু রওনকের চোখ-মুখ জুড়ে ছড়িয়ে রয়েছে মুগ্ধতা। দেখা না করে ফিরে গেলে এমন মনোমুগ্ধকর একটা দৃশ্য তার এই জীবনে দেখা হতো না। ফিরে গেল আজীবনকার আফসোস রয়ে যেত তার। ভেজা কাপড়ের বলতি হাতে বারান্দা পেরিয়ে বাইরে আসার জন্য পা বাড়াতেই মুখ তুলে রওনককে দেখে থমকে দাঁড়ায় চিত্রলেখা। একবার নিজেকে দেখে নিয়ে আবার রওনকের দিকে তাকায় সে। দৌড়ে ভেতরে চলে যাবে না সামনে এগিয়ে গিয়ে কুশলাদি বিনিময় করবে চিন্তা করে পায় না। পালিয়ে গেলে বিষয়টা লজ্জাকর হয়ে দাঁড়াবে। তবে এই মুহূর্তে কোনোভাবেই নিজের বাড়ির আঙ্গিনায় এই মানুষটাকে কল্পনায়ও আশা করেনি চিত্রলেখা। কিন্তু তার ভাবনা, কল্পনাকে মিথ্যা করে দিয়ে সত্যি সত্যি মানুষটা তার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। বালতিটা হাত থেকে নামিয়ে এক কদম এগিয়ে এসে অবাক হওয়া দৃষ্টি নিয়ে সরাসরি রওনকের চোখের দিকে তাকিয়ে চিত্রলেখা জিজ্ঞেস করে,

-আপনি এখানে?

-তোমায় দেখতে এলাম। এখন কেমন আছো তুমি?

-ভালো আছি।

❝আসলেই যে ভালো আছো তা তো তোমাকে দেখে বুঝতে পারছি মেয়ে। কে বলবে গতকাল এই তুমিই বেহুঁশ হয়ে হাসপাতালে গিয়েছিলে। না জানলে কেউ বলতেই পারবে না।❞ কথাগুলো মনে মনে ভাবে রওনক। মুখে আর কিছু বলে না কেবল মুচকি হাসে, হাসার চেষ্টা করে। এমনিতেই চিত্রলেখাকে দেখে তার চোখ হাসছে। সেই হাসি অনেক কষ্টে সংযত করে রেখেছে সে। রওনক চায় না চিত্রলেখা টের পেয়ে যাক তার অজানা এই হাসি খুশির কারণ।

আজ শুক্রবার তাই সবাই বাসায়। এবারে ভেতর থেকে বেরিয়ে আসে চারু। রওনককে দেখে চোখ জোড়া ড্যাবড্যাব করে এগিয়ে এসে বড়বোনকে ঠ্যালা ধাক্কা দিয়ে বলে,

-দেখছো আপা আমি বলছিলাম না তোমাকে?

চারুর কথা শুনে চোখ গরম করে ওর দিকে তাকিয়ে চিত্রলেখা বলে,

-দিবো একটা কানের নিচে।

-ওমা! আমি তো…

-একদম চুপ।

ধমকে দিয়ে কাপড়ের বালতিটা চারুর হাতে ধরিয়ে দিয়ে আরও বলে,

-কাপড়গুলো মেলে দে।

-মেহমান আসছে আপা। উনার চাইতে কি কাপড় বেশি হয়ে গেল?

-চারু!

বড়বোনের গরম চোখ দেখে চারু আর কিছু বলার সাহস পায় না। পাশ থেকে চয়ন বলে,

-তোমরা আবার শুরু হয়ে গেলা? গেস্ট আসছে এতটুকু তো খেয়াল করো।

-হয়েছে তোকে আর পাকনামো করতে হবে না। যেই কাজে যাচ্ছিলি সেটা কর গিয়ে।

চয়নকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে চিত্রলেখা রওনকের মুখের দিকে তাকিয়ে বলে,

-আপনি ভেতরে আসুন প্লিজ।

চয়ন বেরিয়ে যাওয়ার আগে রওনককে বলে,

-আপনি কিন্তু যাবেন না। আমি ছোট্ট একটা কাজে যাচ্ছি জলদিই ফিরে আসবো। আজ আমাদের সাথে দুপুরের খাওয়া দাওয়া করে তারপর যাবেন প্লিজ।

চয়নের আবদার শুনে শুধু রওনক নয়, চিত্রলেখাও খানিকটা অবাক হয়। অবাক হয়ে বলে,

-কি যা তা বলছিস উনি কি আমাদের মতো গরীবের বাসায় খাবেন নাকি?

-বারে আপা উনি খাক বা না খাক তুমি না খাইয়ে ছাড়বে কেন? একদম ছাড়বে না উনাকে বলে যাচ্ছি। এসে যেনো পাই।

চয়ন আর অপেক্ষা করে না যে পথ দিয়ে এসেছিল সেই পথ ধরেই বেরিয়ে যায়। মূলত এক কেজি গরুর গোশত কিনতে যাচ্ছে সে। চিত্রলেখা এখনো বেতন পায়নি। গতকাল লিখন টিউশনির টাকা পেয়েছে। সেখান থেকেই এক হাজার টাকা বড়বোনকে দিয়ে বলেছে এক কেজি গরুর গোশত আনিয়ে রান্না করতে। গতমাসে একদিনও গরুর গোশত খাওয়া হয়নি। তার আগের মাসে অবশ্য দু’দিন খাওয়া হয়েছিল। কিন্তু গত মাসে কিছু সাংসারিক টানাটানি থাকায় গরুর গোশত খাওয়ার মতো বিলাসিতা করা হয়নি। চিত্রলেখা হিসাব করে দেখেছে এই মাসে বেতন পাওয়ার পর তার নিজের হাত খরচের জন্য যতটুকু লাগে সেটাও সম্পূর্ণ থাকবে না। প্রথমে গরুর গোশত আনতে তার মন সায় দেয়নি। কিন্তু গোশতের কথা শুনতেই চারু, চয়নের চোখ জোড়াও ঝলমল করে উঠেছিল তা দেখে আর আপত্তি করতে পারেনি সে। নাহয় এই মাসে ১০ দিন পায়ে হেটেই অফিস যাবে তাও ভাইবোনগুলো মাত্র একটা দিন গোশত খাওয়ার শখ করেছে এতটুকু আবদার সে অপূর্ণ রাখতে পারবে না।

রওনক মনে মনে বলে, ❝আমার জায়গায় লাবিব হলে নিশ্চয়ই হাত ধরে টেনে দুপুরের খাবার খাইয়ে ছাড়তে। আমি খেলে তো তোমার জাত চলে যাবে।❞

ভাইবোন দুটোকে বিদায় করে দিয়ে চিত্রলেখা রওনকের মুখের দিকে তাকিয়ে আবার বলে,

-আপনি ভেতরে আসুন প্লিজ।

রওনক আর কোনো কথা বলে না। চুপচাপ চিত্রলেখার পেছন পেছন ভেতরে এসে বসে। বন্ধের দিনে একটু বেলা করেই ঘুম থেকে ওঠে লিখন। আজও দেরি হয়েছে তার। এখন বাজে বেলা সাড়ে এগারোটা। নিজের ঘর থেকে বেরিয়ে আসতে আসতেই লিখন বলে,

-এক কাপ চা দাও আপা।

বেরিয়ে এসে ড্রইং রুমে বসা ভদ্রলোককে দেখে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে বোনের দিকে তাকায় লিখন। তা দেখে চিত্রলেখা পরিচয় করিয়ে দিয়ে বলে,

-আমার বস গতকাল যার কথা বললাম।

এগিয়ে এসে রওনকের দিকে হাত বাড়িয়ে দিয়ে লিখন বলে,

-আপনাকে অনেক ধন্যবাদ, গতকাল আপার পাশে থাকার জন্য।

লিখনকে কথা শেষ করতে না দিয়ে রওনক নিজেও হাত বাড়িয়ে হ্যান্ডশেক করে বলে,

-ইটস ওকে, শি ইজ মাই রেসপন্সিবিলিটি। ইট ওয়াজ মাই ডিউটি টু টেক কেয়ার অব হার।

রওনকের কথা শুনে মুগ্ধ নয়নে তার দিকে তাকায় চিত্রলেখা। এই জীবনে কেউ কোনোদিন বলেনি সে তার দায়িত্ব। চিত্রলেখা তো নিজের কাঁধেই ছোট ভাইবোনদের দায়িত্ব বয়ে বেড়াচ্ছে। কেউ তো কখনো এভাবে তাকে বলেনি। অবশ্য মামুন চায় তার দায়িত্ব নিতে, সদা প্রস্তুতও কিন্তু সেই সম্মতি দিতে পারে না। আগবাড়িতে মামুনের পেতে রাখা হাত ধরতে পারে না আজীবনের জন্য। এতে বড় দিধা তার।

চিত্রলেখা বলে,

-তুই বোস এখানে উনাকে সঙ্গ দে, আমি তোদের জন্য চা নিয়ে আসছি।

রওনক বসতে বসতে বলে,

-আমার জন্য ব্যস্ত হওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই।

মুচকি হেসে চিত্রলেখা বলে,

-আমি এক্ষুনি আসছি।

সে চলে যেতেই লিখন বলে,

-আমাদের বাসায় চা সবসময়ই বানানো থাকে। আমরা সবাই আপার হাতে বানানো চা অনেক পছন্দ করি।

মুখে কেবল হাসে রওনক মুখে কিছু বলে না। সে নিজেও চিত্রলেখার চায়ের ভক্ত হয়ে গেছে ইতোমধ্যে। একবার আশপাশ দেখে নিয়ে রওনক জিজ্ঞেস করে,

-তোমার খালা খালুকে দেখছি না যে? উনারা বাসায় নেই?

-খালুর এক আত্মীয় অসুস্থ তাই খালাকে নিয়ে গ্রামের বাড়ি গেছে দেখতে। হয়ত বেশিদিন বাঁচবেন না। তাই দেখতে যাওয়া আর কি।

-ওহ!

চিত্রলেখা যত জলদি গিয়েছিল তার চাইতেও বেশি জলদি ফিরে আসে নাস্তার ট্রে নিয়ে। এক কাপ চা রওনকের দিকে এগিয়ে দেয়। চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে লিখন জিজ্ঞেস করে,

-আপনি এসে ভালোই হলো আপনাকে সামনাসামনি ধন্যবাদ দেয়ার সুযোগ পেয়ে গেলাম।

-আবার ধন্যবাদ কেনো?

-গতকাল আপনি আপার জন্য যা করেছেন…

-ওহ প্লিজ নট এগেইন।

-তবুও আমার উচিত আপনার ধন্যবাদ আদায় করা।

-কিন্তু আমি বুঝতে পারছি না কেনো তোমরা দল বেঁধে আমাকে ধন্যবাদ জানাচ্ছো। আমার দায়িত্ব আমি পালন করেছি সেটার জন্য কেনো আমায় ধন্যবাদ বলতে হবে?

লিখন হয়ত আরও কিছু বলতো। কিন্তু রওনক আর তাকে সেই সুযোগ দেয় না। বাঁধা দিয়ে বলে,

-আমি তোমাদের থেকে ধন্যবাদ নিতে আসিনি। তাই এই ধন্যবাদের টপিকটার এখানেই সমাপ্তি হলে আমার জন্য ইজি হয়।

রওনকের কথার লেজ ধরেই চিত্রলেখা আবার জিজ্ঞেস করে,

-তা বললেন না এই সময়ে কি মনে করে আসা হলো? অফিসের কোনো কাজে?

-বললাম তো তোমায় দেখতে এসেছি। তুমি কেমন আছো জানতে।

-শুধু আপা দেখতেই নাকি…?

এবারে প্রশ্নটা চারু করে ভেতরে আসতে আসতে। এতক্ষণ সে আঙ্গিনায় কাপড় মেলতে ব্যস্ত ছিল। চিত্রলেখা ধমকে দিয়েছিল বলে নয়ত ও এখান থেকে নড়তই না। এক মুহূর্ত চারুর দিকে তাকিয়ে রওনক বলে,

-শুধু দেখতে না একটা জিনিস দিতে এসেছি।

-কি দিতে?

রাজ্যের আগ্রহ চারুর চোখ মুখে। ও সুযোগ পেতেই বড় বোনকে নানারকম ইশারা করছে। শুধুমাত্র এই মুহূর্তে এখানে রওনক উপস্থিত বলে সে চারুকে বিশেষ কিছু বলতে পারছে না৷ তা নাহলে এতক্ষণে কান মলে দিতো। রওনক বলে,

-ভুলে জিনিসটা গাড়িতে ফেলে এসেছি। এক মিনিট ড্রাইভারকে বলছি দিয়ে যেতে।

রওনক ফোন করে বলতেই ড্রাইভার এসে একটা শপিং ব্যাগ দিয়ে যায়। ব্যাগটা চিত্রলেখার দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বলে,

-এটা তোমার জন্য।

ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে থাকে চিত্রলেখা। রওনকের হাতে কোনো সাধারণ শপিং ব্যাগ নয়। স্যামসাং ব্রান্ডের একটা ব্যাগ৷ ভেতরে কি থাকতে পারে তা চিত্রলেখা সহজেই অনুমান করতে পারছে। কিন্তু বুঝতে পারছে না ঘুরে ফিরে রওনকই কেন! চিত্রলেখাকে স্ট্যাচু হয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে রওনক তাগাদা দিয়ে বলে,

-কি হলো নাও, ধরো।

-এটা কি?

-নিয়ে খোলো তাহলেই তো দেখতে পাবে এটা কি।

-এর আসলে কোনো প্রয়োজন নেই।

-প্রয়োজন আছে কি নেই সেটা না দেখা পর্যন্ত কীভাবে বুঝবে?

-দেখতে হবে না, আমি বলছি তো প্রয়োজন নেই। আপনি প্লিজ নিয়ে যান।

শক্ত চোখ করে চিত্রলেখার চোখে চোখ রাখে রওনক। তা দেখে একবার ঢোক গিলে চিত্রলেখা সন্তপর্ণে। আমতা আমতাও করে। রওনক ঠান্ডা কন্ঠে বলে,

-নাও, খুলে দেখো।

বাধ্য হয়েই ব্যাগটা রওনকের হাত থেকে নেয় চিত্রলেখা। ব্যাগ খুলতেই আরেক দফা বিষম খায় সে। ব্যাগের ভেতর একটা মোবাইল ফোনের বক্স রয়েছে। স্যামসাং গ্যালাক্সি জেড ফ্লিপ তাও লেটেস্ট মডেল। এই ফোনটার বর্তমান মার্কেট ভ্যালিউ সম্ভবত প্রায় দেড় লাখের কাছাকাছি। এত দামী একটা ফোন দেখে মাথার ভেতর চক্কর মেরে ওঠে চিত্রলেখার। একবার ফোনের দিকে তাকায় আরেকবার লিখনের দিকে। সবশেষে রওনকের দিকে তাকিয়ে নিজেকে সামলে নিয়ে ফোনের বক্সটা নামিয়ে রাখে তা দেখে রওনক বলে,

-তোমার ফোনটা লিফটে পড়ে ভেঙে গিয়েছিল। আমি রিপেয়ার করতে নিয়ে গিয়েছিলাম কিন্তু ওটার আয়ু শেষ তাই আর রিপেয়ার না করিয়ে নতুন একটা নিয়ে এলাম তোমার জন্য।

-সরি, আমি এটা নিতে পারব না।

তৎক্ষনাৎই কিছু বলে না রওনক। দু’দন্ড চুপ করে থাকার পর জিজ্ঞেস করে,

-বাসায় ডাস্টবিন আছে না?

আচমকা ফোনের প্রসঙ্গ বাদ দিয়ে ডাস্টবিনের কথা জিজ্ঞেস করায় ভ্যাবাচেকা খায় চিত্রলেখা।

-ডাস্টবিন!

মুখ ফসকে বেরিয়ে আসে লিখনের। রওনক আবার জিজ্ঞেস করে,

-নেই? তোমরা ময়লা ফেলো না?

এবার জবাবে চিত্রলেখা বলে,

-আছে তো। কিন্তু ডাস্টবিন দিয়ে কি হবে?

ফোনের বক্সটা তুলে বাড়িয়ে ধরে বলে,

-এটা ফেলে দাও।

-মানে!

চিত্রলেখার মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়ে এমন কথা শুনে। লাখ টাকার ফোন ডাস্টবিনে ফেলে দিতে বলছে লোকটা!

-মানেটা খুবই সিম্পল। তোমার জন্য এনেছি যদি তুমি না নাও তাহলে ডাস্টবিনে ফেলে দাও। কারণ তোমার জন্য আনার জিনিস তো আমি ফেরত নিয়ে যাবো না।

-কিন্তু…

-কিন্তুর কিছু নেই। আমি তোমাকে জোর করছি না, করবোও না। তুমি নিতে না চাইলে ফেলে দাও।

বেচারী চিত্রলেখা পড়ে যায় মহা মুশকিলে। এত দামী ফোন তাও সরাসরি বসের কাছ থেকে গিফট হিসেবে নেয়া তার পক্ষে সম্ভব নয়। আর না নিলে লোকটা ফেলে দেয়ার কথা বলছে। এই কাজটাও চিত্রলেখা করতে পারবে না। তাই দ্রুত চিন্তা করে কীভাবে এর সমাধান করা যায়। চিন্তা ভাবনা করে বলে,

-আপনি নাহয় আমার সেলারি থেকে ফোনটার দাম কেটে রাখবেন।

চিত্রলেখার কথা শুনে ভীষণ রকম হাসি পায় রওনকের। কিন্তু এমন সিরিয়াস মুহূর্তে সে হাসতে চায় না। হেসে দিয়ে মজাটা নষ্ট করতে চায় না। তাই হাসি চেপে গিয়ে বলে,

-তোমাকে কি আমি লাখ টাকা সেলারি দেই নাকি?

মুখটা মলিন হয়ে যায় চিত্রলেখার রওনকের প্রশ্ন শুনে। ডানে বামে মৃদু মাথা ঝাকায় সে। মুখে বলে,

-প্রতিমাসে নাহয় কিছু কিছু করে কেটে রাখবেন।

-তুমি আমার বস না আমি তোমার বস?

-আপনি…

-তাহলে কি করতে হবে না হবে সেটা নাহয় আমাকেই বুঝতে দাও। তোমার কাজ ফোন ইউজ করা তুমি নাহয় ফোন ইউজ করো। টাকার টেনশনটা নাহয় আমার কাছেই থাক।

বলেই নিজের মানিব্যাগ থেকে চিত্রলেখার সিমকার্ডটা বের করে দেয়। যেটা ভাঙা ফোনটায় লাগানো ছিল। নষ্ট ফোনটা ফেলে দেয়ার আগে সিমকার্ডটা নিজের কাছে রেখে দিয়েছে সে।

বেচারী চিত্রলেখা ফোনের বক্সটা উল্টে পাল্টে দেখতে লাগে। এই ফোন নিয়ে সে অফিসে গেলে পরে কে কি বলে সেই চিন্তায় এখনই অস্থির লাগছে তার। অসহায় দৃষ্টি নিয়ে একবার লিখনের দিকেও তাকায় চিত্রলেখা। এতক্ষণ চুপচাপ বসে থেকে দু’জনের কান্ড দেখেছে সে। ওদের তামাশায় কোনো ভূমিকা রাখেনি। ভাগ্যিস এই সময়ে চারুটা এখানে উপস্থিত নেই তা নাহলে লিখন কিছু না বললেও চারু ঠিকই উল্টাপাল্টা কিছু একটা বলে বসতো। এসব মুহূর্তে উল্টাপাল্টা কথা বলার ওস্তাদ চারু।

রওনক চেয়েছিল একটা লেটেস্ট আইফোন কিনতে চিত্রলেখার জন্য। শপিং মল গিয়েও ছিল আইফোন কিনতে। কিন্তু শেষ মুহূর্তে মনে হয়েছে চিত্রলেখার হাতে এতদামী ফোন দেখলে অফিসে অনেকেই নানারকম কথা বলতে পারে। এতে অবশ্য রওনকের কিচ্ছু যায় আসে না। কিন্তু রওনক এটা ভালো করেই বুঝে ফেলেছে মানুষের কথায় চিত্রলেখার অনেককিছুই যাবে আসবে। মূলত চিত্রলেখাকে যেন খুব বেশি চিন্তা না করতে হয় সেজন্যই আড়াই লাখ টাকা দামের আইফোন না কিনে একটু কম দাম দিয়ে এই ফোনটা এনেছে। সে বুঝে, এমনিতেই চিত্রলেখার চিন্তার শেষ নেই। নতুন করে আরেকটা চিন্তার বোঝা ওর মাথায় চাপিয়ে দিতে চায় না বলেই এতটুকু সেক্রিফাইজ করেছে সে। নয়ত কারো কথার ধার ধারার সময় রওনকের নেই।

চলবে…

#মাতাল_হাওয়া। ইতি চৌধুরী। পর্ব-১৫
(দয়া করে কেউ কপি করবেন না)

ঘরের কোনো কাজই চিত্রলেখা চারুকে করতে দেয় না। তবুও রাজ্যের অলসতা ওর। শুক্রবার দিনেও ঠেলে গোসলের জন্য পাঠতে হয়। রওনক যখন চিত্রলেখাকে ফোনটা দিলো ভাগ্যিস আগেই চারুকে গোসলের জন্য পাঠিয়ে দিয়েছিল সে। কিন্তু এতে বিশেষ লাভ কিছু হয়নি। গোসল সেরে বেরিয়ে এসেই চারু বড়বোনের কাছে আগে জানতে চেয়েছে তার বস তাকে কি উপহার দিয়েছে। এমন জিনিস চিত্রলেখা চাইলেও এড়িয়ে যেতে পারবে না। মোবাইল ফোন দেখে ইয়া বড় বড় চোখ করে বোনের দিকে তাকিয়েছে চারু। বড় করে মুখ খুলেছে কিছু বলতে কিন্তু তার আগেই চিত্রলেখা হাত বাড়িয়ে চারুর মুখ চেপে ধরে চোখ গরম করে বলেছে,

-একটাও বাড়তি কথা বলবি না তুই।

নিজের মুখ থেকে বোনের হাত সরিয়ে দিয়ে চারু বলে,

-আগে কথাটা তো শুনো।

-একদম না, একটা কথা বললে থা প ড়ে তোর সব কয়টা দাঁত ফে লে দিবো আমি।

-আপা!

-চুপ চারু।

তখনই বাজার হাতে বাড়ি ফিরে চয়ন। ঢুকতেই দুই বোনের কথা শুনে এগিয়ে এসে চিত্রলেখার হাতে গোশতের ব্যাগটা দিয়ে বলে,

-তেমাদের এখনো শেষ হয়নি?

চিত্রলেখা কিছু বলে না কেবল চোখ গরম করে কেমন কেমন চাহনিতে তাকায়। ছোট ভাইকে বুঝাতে চায় উল্টাপাল্টা কিছু না বলতে রওনক এখনো তাদের ঘরেই বসা। কিন্তু চয়নকে কিছু বুঝানোর সুযোগ পায় না চিত্রলেখা তার আগেই মুখ খোলে চারু। বলে,

-তুই জানিস আপার জন্য উনার বস কি নিয়ে এসেছে?

-কি?

-এই দেখ।

বলেই ফোনটা বাড়িয়ে ধরে। ফোনটা দেখে চয়ন নিজেও অবাক হয়েছে। এত দামী ফোন! একবার বড়বোনের মুখের দিকে তাকায় কিন্তু কিছু বলে না। বোন যে নিজেই একটা অস্বাভাবিক পরিস্থিতিতে পড়ে গেছে তা বুঝতে পেরে আপাতত ফোন প্রসঙ্গে কোনো কথা না বলে বরং চারুকে বলে,

-গিফট আপার তুই ফালাচ্ছিস কেন?

-আহা তুই একবার ভালো করে দেখ তো।

চারুর হাত থেকে ফোনটা নিয়ে বড়বোনের হাতে দিয়ে বলে,

-আমাদের দেখে এত কাজ নাই। আপারটা আপাই দেখুক। তুই যা তো আমার জন্য এক গ্লাস ঠান্ডা পানি নিয়ে আয়।

চারুর কথায় কেউ পাত্তা দিলো না দেখে বেচারীর কিঞ্চিৎ মনটা খারাপ হলো। ও বুঝতে পারে আপাতত ওর কথায় কেউ ভাত দিবে না৷ তাই আর কিছু বলার চেষ্টাও করে না। এই সুযোগে চিত্রলেখাও রান্নাঘরে চলে যায় রান্না চাপাতে। বেলা গড়িয়ে আসছে। একটু পরেই আজান দিয়ে দিবে। তারপর ছেলেরা জুম্মা পড়ে আসলেই তো খাবার দিতে হবে।

বাইরে থেকে ঘেমে ভূত হয়ে এসেছে চয়ন। তাই রওনককে উদ্দেশ্য করে বলে,

-আমি একটু গোসল দিয়ে আসি। এত ঘেমে গেছি যে এই অবস্থায় এখানে বসতে পারব না। আপনি বসেন, আমি আসছি।

আচমকাই বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে রওনক বলে,

-আমি আর বসবো না। এতক্ষণ তোমার জন্যই ছিলাম। আজকের মতো উঠছি।

-একদম না, আজ আমাদের সাথে দুপুরের খাবার খেয়ে তারপর যাবেন। এর আগে কেউ কোথাও যাবে না।

-আজ থাক অন্য একদিন।

-অন্যদিনের টা অন্যদিন দেখা যাবে, আজ আপনি না খেয়ে কোথাও যাচ্ছেন না।

তখনই চয়নের পেছনে এসে দাঁড়ায় চিত্রলেখা। ওদের কথার শব্দ পেয়েই আবার বেরিয়ে এসেছে সে। এগিয়ে এসে চিত্রলেখা বলে,

-থাক, উনাকে জোর করিস না।

❝আমি তো লাবিব না আমাকে কেন জোর করবা। লাবিবকে ডেকে জামাই আদর করে খাওয়াও।❞ কথাটা মনে মনে বলে রওনক মুখে বলল,

-আসি।

-একদম না।

আবারও বাঁধা দেয় চয়ন। চিত্রলেখাকে বলে,

-তুই কি রে আপা? উচিত তো তোমার উনাকে জোর করে আটকে রাখা তা না করে আমাকে বলছো উনাকে জোর না করতে। এত কথা জানি না উনি আজ আমাদের সাথেই খাবেন।

-কিন্তু উনি তো থাকতে চাইছেন না। উনার হয়ত কোথাও এপয়েনমেন্ট আছে।

-তুমি এখন পর্যন্ত একবারও বলছো উনাকে? জিজ্ঞেস তো করো আগে।

এবার চিত্রলেখা পড়ে যায় মুশকিলে। আসলেই তো জিজ্ঞেস না করেই সে থাকবে না ধরে নেয়াটা অনুচিত হচ্ছে। ইতস্তত করেই চিত্রলেখা বলে,

-ওরা যেহেতু চাইছে আজ দুপুরের খাবারটা নাহয় আমাদের সাথেই খেয়ে যাবেন। আমার হাতের রান্না কোনো ফাইভ স্টার হোটেলের সেফের মতো নয় তবে একদম মন্দও লাগবে না আশা করি।

রওনক কিছু বলে না, পূনরায় বসে পড়ে ফোন লাগায় কাকে যেন। কলটা রিসিভ হতেই সে বলে,

-তোমরা আমার জন্য অপেক্ষা করো না। আমি আজ বিশেষ এক জায়গায় লাঞ্চ করবো।

লাইনের অন্যপাশ থেকে তানিয়া বলে,

-রওনক মা কিন্তু এখন রাগ করে আছেন। তোমার আজ বাসায় থাকা উচিত।

-আই কান্ট, দিজ ইজ অলসো ভেরি ইম্পর্ট্যান্ট ফর মি।

-রওনক…

-প্লিজ হ্যান্ডেল হার ফর মি, আই রিকুয়েষ্ট ইউ।

তানিয়া আর কিছু বলতে পারে না। রওনক লাইন কেটে দেয়। চিত্রলেখা আর কিছু না বলে রান্নাঘরে ফিরে যায়। রওনক সত্যি সত্যি থাকতে রাজি হয়ে যাবে সে ভাবেনি।

একে একে লিখন, চয়ন দু’জনেই গোসল দিয়ে তৈরি হয়ে নিয়েছে। তারপর রওনককে নিয়ে ওদের এলাকার বড় মসদিজে গেছে জুম্মা আদায় করতে। অনেক বছর পর রওনক কারো সঙ্গে জুম্মা পড়তে গেল। বাবা বেঁচে থাকতে বড়ভাই সমেত তিনজন একত্রে যেতো কিন্তু বাবা মারা যাওয়ার পর থেকে রওনক অনেকটা একাই হয়ে গেছে বলা যায়। কখনো কখনো তাদের দুই ভাইয়ের একত্রে যাওয়া হয় তবে সেটা মাসে বা ছয় মাসে এক কি দুইদিন।

ওরা নামাজ পড়তে বেরিয়ে যেতেই শব্দহীন পদক্ষেপে চিত্রলেখার পেছনে এসে দাঁড়ায় চারু। শব্দ না হলেও টের পায় চিত্রলেখা। চারু কিছু বলার আগেই সে জিজ্ঞেস করে,

-কি চাই?

চারু পেছন থেকে বড়বোনকে আলতো ভাবে জড়িয়ে ধরে বলে,

-আমি তোমাকে বলছিলাম না তুমি বিশেষ কেউ।

-মানে?

ছোটবোনের কথার মানে যেন ধরতে পেরেও বুঝতে পারলো না চিত্রলেখা। হয়ত সে ইচ্ছা করেই বুঝতে চায় না।

-আমি তোমাকে বলছিলাম না তুমি বলেই এত আয়োজন। তোমার জায়গায় অন্য কেউ হইলে তোমার বস মুখ ফিরায়ও দেখত না।

-তুই আবার তোর এইসব আজাইরা প্যাঁচাল নিয়ে আসছিস? যা তো, আমার কাজ শেষ করতে দে। নামাজ পড়ে আসলেই তো ভাত দেয়া লাগবে।

-এখন না হয় কথা ঘুরায় দিলা আপা কিন্তু এইসব বিষয় চাপা থাকে না। দেইখো একদিন ঠিকই তুমি টের পাবা। তখন বুঝবা আমি ভুল বলি নাই।

-চারু! তুই থামবি?

আপাতত এই বিষয়ে আর কথা বাড়ায় না চারু। এখন যে আর একটা কথা বললে এরপর ওর গালে ঠাস করে পড়বে তা বুঝতে অসুবিধা হচ্ছে না। তাই প্রসঙ্গ পাল্টে বলে,

-কি রান্না করছো?

-গরুর গোশত আলু দিয়ে, অর্ধেকটা মুরগী ছিল ওটা বুটের ডাল দিয়ে রান্না করছি। উনি সত্যি সত্যি আমাদের সাথে খাবে জানলে আমি মুরগীও আনাইতাম।

-সাথে আর কিছু করো নাই?

-করছি তো, পাতলা ডালও করি, তিন পদের ভর্তা করছি, চিচিঙ্গা দিয়ে ডিম দিয়ে ভাজি করছি। সঙ্গে সাদা ভাত। ও সালাদাও আছে।

-ভাত কেন করলা আপা পোলাও করতা। এত বড় একজন মানুষকে তুমি ভাত দিবা?

-উনি বড় মানুষ আমি তো আর উনার মতো বড় না। আমি গরীব মানুষ, ঘরে যা আছে তাই করছি। পছন্দ হইলে খাবে না হইলে নাই। তাছাড়া পোলাওয়ের চাল যা আছে ওটুকু দিয়ে সবার হবে না। তাই রান্না করিনি।

-সবার তো পোলাও খাওয়ার দরকার নেই।

-তোদের সামনে আমি শুধু উনাকে পোলাও দিবো?

-হ্যাঁ দিবা, উনি মেহমান মানুষ তাও আবার তোমার বস। উনার জন্য বিশেষ রান্না হওয়া উচিত। পোলাওয়ের চালটা দেও আমি ধুয়ে দেই ওরা আসতে সময় আছে তুমি চট করে রান্না করে ফেলো।

চিত্রলেখার মন সঙ্গে দেয় না। খচখচ করে। ভাইবোনগুলোর সামনে শুধু একজনকে পোলাও দিবে আর ওরা তাকিয়ে থাকবে? চিত্রলেখার জন্য পৃথিবীতে সবকিছুর উর্ধ্বে তার ভাইবোনেরা। চারু চট করেই চালটা ধুয়ে এগিয়ে দিতেই চিত্রলেখা মনের খচখচানি নিয়েই পোলাওটা বসায়।

আজ এখানে থাকা হবে জানলে রওনক হয় পাঞ্জাবি পরে আসতো নয় সঙ্গে করে নিয়ে আসতো। কিন্তু সে তো থাকার বা দুপুরে এখানে খাওয়া দাওয়া করার মতো পরিকল্পনা করে আসেনি। সে তো এসেছিল এক পলক সামনে থেকে নিজ চোখে চিত্রলেখাকে দেখে চলে যাবে। তাই আজ ট্রাউজার, টি-শার্ট পরেই নামাজ পড়তে হয়েছে তাকে। জীবন এমনই পরিকল্পনা করে কখনোই কিচ্ছু হয় না। বরং হয় সেটাই যেটা আমরা ব্যাকআপ হিসেবেও ভাবিনা। জীবন চলে পরিকল্পনার বাইরে।

চলবে…

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে