মরীচিকাময় ভালোবাসা পর্ব-০৬

0
696

#মরীচিকাময়_ভালোবাসা
#পর্বঃ৬
#লেখিকাঃদিশা_মনি

মৌরী নিজের ঘরে এসে মন খারাপ করে বসে আছে। নিজের ভালোবাসার মানুষটার থেকে এত বেশি কষ্ট পাবে সেটা কখনো ভাবতে পারে নি বেচারি মেয়েটা। আজ সবার চোখে মানুষটা তাকে অনেক ছোট করে দিয়েছে। মৌরীর ইচ্ছা করছে চিৎকার করে কাঁদতে।

এরমধ্যে প্লাবণ চলে আসে। মৌরীর দিকে তাকিয়ে বিদ্রুপাত্মক সুরে বলল,
“তোর কি এখনো মনে হয় আমি তোকে ভালোবাসি?”

“না। বাসো না আমায় ভালো। ভালোবাসলে এভাবে ক’ষ্ট দিতে পারতে না। কিন্তু তুমি যদি ভেবে থাকো এভাবে আমাকে দমিয়ে দিতে পারবে তাহলে ভুল ভাবছ। আমি এখনো হাল ছাড়িনি। আমার হাতে এখনো ৫ মাস ২৬ দিন সময় আসে। এই সময়টা যথেষ্ট তোমার মনে আমার জন্য অনুভূতির সৃষ্টি করা।”

“তুই আকাশ কুসুম কল্পনা করছিস৷ তোকে আমি কখনো ভালোবাসবো না। সবসময় তুই আমার থেকে ঘৃণা পাবি, সাথে পাবি কষ্ট।”

“আমিও দেখব তুমি আমায় কত কষ্ট দিতে পারো, সাথে তুমিও এটা দেখবে আমার সহ্যক্ষমতা কতো।”

“আচ্ছা।”

★★★
দুপুরবেলা খেতে নেমে মৌরী দেখল সবাই তাকে এড়িয়ে চলছে। মৌরী আতিফা বেগমের কাছে গিয়ে বলল,
“তুমি কি এখনো আমার উপর রাগ করে আছ বড়মা?”

“একদম চুপ। আমাকে বড়মা বলবি না। আমি কেউ নই তোর।”

“তুমি কি আমাকে বিশ্বাস করো না?”

“তোকে কি বিশ্বাস করা যায়?”

মৌরীর মনটা খারাপ হয়ে যায়। আখিকোটর বেয়ে জলের স্রোত নামল। সে দ্রুত নিজের রুমে চলে এলো৷ চিৎকার করে বলতে লাগল,
“কেমন প্লাবণ কেন? আমাকে ভালোবাসা তো দিলে না বরং আমার সব ভালোবাসার মানুষকে আমার থেকে দূরে করে দিলে।”

★★★
পূর্ব দিগন্তে সূর্যের আগমন ঘটেছে। প্রভাতের কিরণ এসে ধরনীকে আলোকিত করেছে।

মৌরী ঘুম থেকে উঠে দেখল প্লাবণ খুব তাড়াহুড়ো করে কোথাও বেরিয়ে যাচ্ছে। মৌরী ব্যাপারটা নিয়ে একটু ভাবল।

অতঃপর সে নিচে নেমে এলো। প্লাবণ ব্রেকফাস্ট করতে করতে আতিফা বেগমকে বলছিল আজ তার ভার্সিটিতে অনুষ্ঠান। একজন প্রফেসর হিসেবে সে আজ অনুষ্ঠানের সঞ্চালনা করবে।

এই কথা শুনে মৌরী ভাবে আজ সেও প্লাবণের ভার্সিটিতে যাবে।

★★★
ভার্সিটির অনুষ্ঠান খুব সুন্দরভাবে আয়োজন করা হয়েছে। সবাই স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে যোগদান করেছে। একের পর একে সবাই অংশ নিচ্ছে।

মৌরীও এই অনুষ্ঠানে পৌঁছে গেছে। মঞ্চে দাঁড়ানো প্লাবণের দিকে অনিমেষ তাকিয়ে আছে সে। মাঝখানে অনুষ্ঠানে বিরতি দিলে প্লাবণের সামনে গিয়ে দেখায় সে।

মৌরীকে দেখে প্লাবণের ভ্রু কুচকে যায়৷ সে মৌরীকে উদ্দ্যেশ্য করে বলে,
‘তুই কি করছিস এখানে?’

“তোমার অনুষ্ঠান দেখতে এসেছি।”

“তোকে কেউ আসতে বলে নি। তুই চলে যেতে পারিস।”

মৌরীর মনে কথাটা শুনে অনেক কষ্ট হয়। তবে সে সেই কষ্ট প্রকাশ না করে বলে,
“আমি নিজের ইচ্ছায় এসেছি আর নিজের ইচ্ছাতেও যাব।”

এরমধ্যে প্লাবণের কিছু সহকর্মী এগিয়ে এসে বলে,
“আরে প্লাবণ তুমি কার সাথে কথা বলছ? কে এই মেয়েটি?”

মৌরী প্লাবণের দিকে তাকিয়ে বলে,
‘ওনাদের আমার পরিচয় দাও।’

প্লাবণ ইতস্তত করে বলে,
“ও আসলে আমার কাজিন।”

মৌরীর মনটা খারাপ হয়ে যায়। তাদের বিয়ের অনুষ্ঠানে কিছু নিকটাত্মীয় ছাড়া কেউ আসে নি। তাই অনেকেই তাদের বিয়ের ব্যাপারে জানে না। আর প্লাবণও তাকে স্ত্রী বলে পরিচয় দিচ্ছে না। মৌরীর প্লাবণকে বলতে ইচ্ছা করে,
“আমি কি এতোটাই খারাপ যে আমাকে স্ত্রী হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া যায় না।”

কিন্তু কথাটা মুখ ফুটে বলতে পারে না সে। প্লাবণ সামনে এগিয়ে যায়। মৌরী প্লাবণের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে দুঃখভরা নয়নে। এরমধ্যে আরো একটি ঘটনা ঘটে যায়।

কোথা থেকে একটা মেয়ে এসে প্লাবণকে জড়িয়ে ধরে। মৌরীর বুক ধক করে ওঠে। মেয়েটির পরনে টপস আর জিন্স। প্লাবণকে জড়িয়ে ধরে ন্যাকা সুরে বলে,
“হ্যালো, প্লাবণ ভাইয়া। হাউ আর ইউ?”

প্লাবণ বলে,
“আরে সুমা তুই! এতদিন পর!”

“আজই চট্টগ্রাম থেকে ফিরলাম। তাই ভাবলাম তোমাকে সারপ্রাইজ দিয়ে দেই।”

“ভালো করেছিস। অনুষ্ঠানটা এনজয় কর। আমি যাই আমার কিছু জরুরি কাজ আছে।”

প্লাবণ যেতে নিতেই মৌরী তার পেছনে যায়। একসময় তার মুখোমুখি হয়ে প্রশ্ন করে,
“ঐ মেয়েটা কে ছিল?”

“ও শামিমের বোন সুমা। তুই ওর ব্যাপারে জানতে চাইছিস কেন?”

“ও তোমাকে জড়িয়ে ধরল কেন? ও জানেনা তোমার বিয়ে হয়েছে?”

“তুই নিজের নিচু মানসিকতার পরিচয় দিস না মৌরী। ওকে আমি বোনের চোখে দেখি।”

“কিন্তু আমার ঐ মেয়েটাকে দেখে মনে হয়নি যে ও তোমাকে ভাইয়ের চোখে দেখে।”

“স্বাভাবিক। যে যেমন সে তার মতোই ভাবে সবাইকে। তুই যেমন জোর করে বেহায়ার মতো আমার গলায় ঝুলে পড়েছিস বাকিদের তেমন ভাবিস না।”

“প্লাবণ…”

“চুপ। একদম বড় কথা বলবি না।”

“আমি জোর করে তোমার গলায় ঝুলিনি। তুমি স্বেচ্ছায় আমায় বিয়ে করেছ।”

“তোর কাণ্ড কেচ্ছা দেখে বাধ্য হয়ে করেছি। আর তাই এখন তোকে তোর যায়গা দেখিয়ে দিচ্ছি।”

“কাউকে ভালোবাসা কি অন্যায়?”

“হ্যাঁ, আমাকে ভালোবাসা তোর অন্যায়।”

“তাহলে এই অন্যায় আমি আজীবন করতে চাই। দেখি তুমি আমাকে আর কত কষ্ট দিতে পারো।”

মৌরী চোখের জল মুছতে মুছতে চলে আসে। একটু সামনে এসে সুমা নামের সেই মেয়েটির মুখোমুখি হয়। মৌরী সুমাকে দেখে বলে,
“তুমি তখন ওভাবে যাকে জড়িয়ে ধরেছিলে সে আমার স্বামী। ফারদার,যেন এমন না হয়।”

“ও তাহলে তুমিই সেই বিশ্ববেহায়া মৌরী। অনেক শুনেছি তোমার কথা। তোমাকে তো প্লাবণ ৬ মাসের জন্য বিয়ে করেছে রাইট? ৬ মাস পর ছু’ড়ে ফেলে দেবে। তোমার মুখে এত বড় কথা মানায় না।”

“মাইন্ড ইউর ল্যাঙ্গুয়েজ।”

“এই, একদম চোখ রাঙাবে না। প্লাবণ আমাকে ভালোবাসে আর ৬ মাস পর ও তোমাকে ডিভোর্স দিয়ে আমায় দিয়ে আমায় বিয়ে করবে। তুমি নিজেকে একবার আয়নায় দেখ এইটুকু পুচকে মেয়ে তুমি কি ওর যোগ্য নাকি?”

মৌরী কি বলবে বুঝতে পারছিল না। সুমা মৌরীর কানে কানে ফিসফিস করে বলে,
“তুমি প্লাবণকে পাবে না। তুমি জাস্ট ওর কাছে একজন প্রস্টিটিউডের মতো”

মৌরীর চোখে জল চলে আসে। সে কান্নাভেজা চোখে বেরিয়ে আসে ভার্সিটি থেকে। বাইরে বেরিয়ে আর্তনাদ করে বলে,
“কেন এত অপমান সহ্য করতে হচ্ছে আমায়? আমি যে আর পারছি না। না অনেক হয়েছে আমি আর অপমান সহ্য করবো না। দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে। এখন আমায় ঘুরে দাঁড়াতেই হবে। সবার অপমান আর অবিচারের জবাব দিতে হবে। এবার আমি সবাইকে দেখিয়ে দেব আমি কি কি করতে পারি।”

মৌরী পুনরায় ভার্সিটিতে প্রবেশ করল। প্লাবণ তখন তার কিছু সহকর্মীর সাথে গল্প করছিল। মৌরী সেখানে উপস্থিত হয়ে সবার উদ্দ্যেশ্যে বলে, “প্লাবণ মনে হয়, আপনাদের কাউকে আমার আসল পরিচয় দেয়নি। আমিই দিচ্ছি। আমি হলাম মৌরী চৌধুরী। প্লাবণ চৌধুরীর একমাত্র স্ত্রী।”

একজন প্লাবণকে বলে,
“তুমি তো আমাদের জানাও নি। এভাবে লুকিয়ে লুকিয়ে বিয়ে করে নিলে।”

আরেকজন বলে, “এখন যখন জানতে পেরেছি তখন কিন্তু আমাদের ট্রিট দিতে হবে।”

প্লাবণ রাগী চোখে মৌরীর দিকে তাকায়। মৌরী দুষ্টু হাসে।

চলবে ইনশাআল্লাহ ✨

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে