মরীচিকাময় ভালোবাসা পর্ব-১৩

0
733

#মরীচিকাময়_ভালোবাসা
#পর্বঃ১৩(বোনাস পর্ব)
#লেখিকাঃদিশা_মনি

মৌরী বাসায় ফিরে এসে শপিং ব্যাগগুলো রেখেই রাগে কাপতে লাগল। সুমার করা অপমানটা তার মোটেই সহ্য হচ্ছে না। আরো কয়েকটা থা’প্পর বসিয়ে দিতে পারলে মনটা খুশি হয়ে যেত।

মৌরী এসব নিয়েই ভাবছিল। এমন সময় আতিফা বেগম তার রুমে চলে আসলেন। তাকে দেখেই মৌরীর সব রাগ একদম হাওয়া হয়ে গেল। দৌড়ে গিয়ে আতিফা বেগমকে জড়িয়ে ধরে জিজ্ঞেস করল,
“তুমি কখন এলে বড়মা?”

“এই তো একটু আগেই এসেছি। তোর আব্বুর কাছে শুনলাম তুই শপিং করতে গেছিস। তোর জন্যই অপেক্ষা করছিলাম।”

“তুমি ভালো আছ তো?”

“তোকে ছাড়া কি করে ভালো থাকি বল? তুই কেমন আছিস রে মা? আগের থেকে অনেক শুকনা লাগছে।”

“তোমার হাতের রান্না না খেয়ে না খেয়ে শুকিয়ে গেছি৷ তুমি একটু ভালো মন্দ রেধে খাওয়াও দেখবা আবার আগের মতো হয়ে যাব।”
অতঃপর দুজনেই সমস্বরে হেসে উঠল।

★★★
প্লাবণের মন মেজাজ কিচ্ছু ঠিক নেই। এর একমাত্র কারণ মৌরী। প্রথম প্রথম যখন মৌরী চলে গেছিল তখন প্লাবণের মনে আনন্দের জোয়ার এসেছিল। সে ভেবে ছিল বড় একটা সমস্যা ঘা’ড় থেকে নেমে গেছে। কিন্তু এখন মৌরীর কথা তার খুব মনে পড়ে। এক কথায় সে মৌরীকে মিস করছে। এই দুই মাসে মৌরী তার সাথে কথা বলে নি, এটা ভেবেই তার রাগ হচ্ছে । কারণ প্লাবণের মনে হয়েছিল কিছু দিন গেলেই মৌরী নিজে থেকে তার কাছে ফিরে আসবে। তবে তেমন কিছুই হচ্ছে না। মৌরীর কথা ভাবলেই প্লাবণের মনটা বিক্ষিপ্ত হয়ে যাচ্ছে। তাই আজ প্লাবণ ভাবল সে শামিমের বাড়িতে যাবে। শামিমের সাথে আড্ডা দিলে হয়তো মনটা একটু ভালো হবে। যেই ভাবা সেই কাজ। প্লাবণ দ্রুত তৈরি হয়ে নিয়ে শামিমের বাড়ির দিকে রওনা দিলো।

কিছু সময়ের মধ্যে শামিমের বাড়িতে পৌঁছে গেল প্লাবণ৷ অতঃপর শামিমের রুমে প্রবেশ করল। শামিমের রুমে গিয়ে দেখল শামিম তখনো পরে পরে ঘুমোচ্ছে। প্লাবণ শামিমকে ঘুম থেকে টেনে তুলল। শামিম ঘুম ঘুম চোখে বলল,
“কিরে এই অবেলায় তুই কি করছিস?”

“এটা অবেলা নয়। দুপুর ১২ টা বাজে। আর তুই এখনো পড়ে পড়ে ঘুমাচ্ছিস।”

“আসলে কাল অনেক রাত জেগেছি তো তাই।”

“এত রাত জেগে কার সাথে কথা বললি?”

“বিজনেসের নতুন একটা প্রজেক্ট নিয়ে ব্যস্ত ছিলাম।”

“ওহ। তাহলে চল এখন বাইরে থেকে ঘুরে আসি।”

“তুই বিবাহিত মানুষ নিজের বউ নিয়ে ঘুরবি তা না বন্ধুকে এসে তার ঘুমে ডিস্টার্ব করছিস।”

“তুই প্লিজ এমন কথা বলিস না।”

“কেন বলবো না?”

“তুই তো মৌরীর সম্পর্কে সব জানিস৷ ও কেমন মেয়ে। ওকে তো বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছি।”

“সেটাই তুই জীবনে সবথেকে বড় ভুল করেছিস৷ আর দেখে নিস এই জন্য তোকে খুব পস্তাতে হবে।”

“আমি কেন পস্তাবো ঐ চরিত্রহীন মেয়ের জন্য। আর তুই তো দেখলি সেদিন ও ঐ ছেলেটার সাথে কিভাবে ঘনিষ্ঠ অবস্থায় ছিল।”

“আমরা সব সময় যা চোখে দেখি তা সত্য নাও হতে পারব।”

“তুই বোধহয় ভুলে যাচ্ছিস শামিম ঐ মেয়েটা তোর বোনের ঘাড়ে দো” ষ চাপাতে চাইছিল।”

“কিচ্ছু ভুলিনি আমি। মৌরীকে আমি এই ক’দিনেই যা চিনেছি তাতে ওর মতো মেয়ের পক্ষে এমন কিছু করা সম্ভব বলে আমার মনে হয়নি। আর সুমা…ওকে তো আমি জন্ম থেকে চিনি। তাই ও কি করতে পারে সেই সম্পর্কে আমার যথেষ্ট ধারণা আছে।”

“আমার মনে হয়, আমার এখানে আসাটাই ভুল হয়েছে। কোথায় আমি এখানে এসে ছিলাম নিজের মুড রিফ্রেশ করতে আর তুই আমার মুডটা আরো খারাপ করে দিলি।”

“আমি তোর ভালোর জন্যই বলছিলাম প্লাবণ। কারণ দাঁত থাকতে দাঁতের মূল্য না দিলে সেটা চলে গেলে পস্তাতে হয়।”

“তোর এসব জ্ঞান তোর কাছেই রাখ। আমি চললাম এখান থেকে।”

প্লাবণ শামিমের রুম থেকে বেরিয়ে এলো৷ শামিম দীর্ঘ শ্বাস ফেলল কেবলি।

★★★
শামিমের রুম থেকে বেরিয়ে একটু এগিয়ে আসতেই প্লাবণ দেখে সুমা খুব রেগেমেগে কারো সাথে কথা বলছিল। প্লাবণের এই বিষয়ে কোন আগ্রহ ছিল না তাই সে নিজের মতো চলে যেতে চায়। কিন্তু এমন সময় হঠাৎ করে সুমার কথা শুনে থেমে যায়। কারণ সুমা মৌরীর নামে চিৎকার করে কথা বলে। প্লাবণ একটু সামনে এগিয়ে যায়। সুমা সামনের দিকে ঘুরে ছিল জন্য প্লাবণের উপস্থিতি টের পায়না। সুমা চিৎকার করে বলতে থাকে,
“ঐ মৌরীর এত সাহস যে আমায় থা’প্পর মা’রে….ওকে তো আমি…..কম হয়ে গেছিল। হ্যাঁ কম হয়ে গেছিল। এর আগে শুধু ওর মিথ্যা দূর্নাম করে ক্ষান্ত হয়ে যাওয়া আমার উচিৎ হয়নি। আমার তো উচিৎ ছিল ওকে রে’প করিয়ে…”

সুমার পুরো কথা সম্পূর্ণ হওয়ার আগেই তার হাত থেকে ফোন কেড়ে নিয়ে আ’ছাড় মা’রে প্লাবণ। রক্তিম দৃষ্টিতে তাকায় সুমার দিকে। সুমা ভয়ে ঢোক গিলে বলে, “তু…তুমি কখন এলে?”

“একটু আগেই এলাম। ভাগ্য ভালো এসেছিলাম। তাই তোর সব চক্রান্তের ব্যাপারে জানতে পারলাম।”

“তুমি আমার কথা শোনো আমি…”

সুমা আর কিছু বলার আগেই প্লাবণ তার গালে ঠা’স ঠা’স করে চ’ড় মা’রতে লাগল। রাগে পাগল হয়ে গেছে সে। শামিম দূরে দাঁড়িয়ে সব দেখছিল। সে এসে সুমাকে আগলে ধরে। অতঃপর কঠিন গলায় বলে,
“তোর এত বড় সাহস তুই আমার বোনের গায়ে হাত তুলিস। তোকে তো আমি..”

“আমাকে কিছু বলার আগে তোর বোন কি করেছে সেটা শুনে নে। ও মৌরীকে ফাসিয়েছে।”

সুমা চিৎকার করে বলে,
“হ্যাঁ, আমি এমনটা করেছি। যা করেছি একদম ঠিক করেছি। আমি প্লাবণ ভাইয়াকে ভালোবাসি। যেদিন প্রথম দেখেছিলাম ঠিক সেদিন থেকেই ভালোবাসি। কত স্বপ্ন দেখেছি আমি তোমাকে নিয়ে। আর ঐ মৌরী এসে সব স্বপ্ন এলোমেলো করে দেবে..সেটা আমি কিভাবে মেনে নেই। তুমি শুধু আমার হবে আমার। অন্য আর কারো নয়।”

প্লাবণ উত্তেজিত হয়ে বলে,
“এতকিছু তুই বড় মুখ করে বলছিস?”

“হ্যাঁ, বলছি। কারণ ভালোবাসা আর যুদ্ধে সবকিছুই জায়েজ।”

প্লাবণ রেগে গিয়ে সুমাকে পুনরায় মা’র‍তে যাবে তার আগেই শামিম প্লাবণের পথ আটকে ধরে। বেশ শক্তভাবে বলে,
“খবরদার আমার বোনের গায়ে একদম হাত তুলবি না। কারণ যা হয়েছে সেখানে সুমার থেকে তোর দো’ষ বেশি। সুমা তোকে ভালোবাসে তাই যেনতেন উপায়ে তোকে পেতে পেয়েছিল৷ ওর পথটা বেঠিক ছিল৷ কিন্তু ও নিজের এই কাজে সফল হতো না যদি মৌরীর প্রতি তোর বিশ্বাস ঠিক থাকতো।”

“মানে কি বলতে চাইছিস তুই?”

“সম্পর্কের ক্ষেত্রে বিশ্বাস থাকাটা সবথেকে বেশি জরুরি। যদি দুজনের মধ্যে বিশ্বাস ঠিক থাকে তাহলে তৃতীয় কেউ এসে তাদের মধ্যে ঝামেলা করতে পারে না। কিন্তু তুই তো মৌরীকে কখনো বিশ্বাসই করিস নি। এর আগেও তুই ওর সাথে অনেক খা’রাপ ব্যবহার করেছিস। এমনকি আমাকে নিয়েও ওর নামে দূর্নাম দিতে চেয়েছিলি। তাহলে তুই নিজেই ভেবে দেখ এখানে কার দো’ষটা বেশি?”

প্লাবণ কি বলবে কিছু বুঝতে পারছিল না। তাই সে চুপ করে থাকে। নিজের করা ভুল গুলো তার মনে পড়তে থাকে। সত্যিই সে অনেক অন্যায় করেছিল মৌরীর সাথে।

প্লাবণকে চুপ দেখে শামিম বলে,
“আশা করি তুই নিজের দোষগুলো বুঝতে পারছিস। এখন প্লিজ এখান থেকে চলে যা। আর আজ যা হলো তারপর আমি আর তোর সাথে বন্ধুত্ব বা কোন রকমের যোগাযোগ করতে চাই না।”

প্লাবণ আর কিছু বলল না। চুপচাপ শামিমদের বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেল। প্লাবণ বেরিয়ে যাওয়ার পর শামিমও সুমার গালে পরপর কয়েকটা থা’প্পর বসিয়ে দিল। বলল,
“তুই প্লাবণকে পাওয়ার জন্য এত নিচে নামলি? একটা মেয়ে হয়ে আরেকটা মেয়ের চরিত্রে…আমার আগেও তোর উপর সন্দেহ ছিল আর আজ তো..”

“নিজের ভালোবাসা পাওয়ার জন্য আমি এমন করেছি৷ ”

“ভালোবাসা নয় তুই মরীচিকার পেছনে ছুটছিলি। যা তোর বোধবুদ্ধি সম্পূর্ণ নষ্ট করে দিয়েছিল।”

“তার মানে তুমি বলতে চাইছ প্লাবণের প্রতি আমার ভালোবাসা মরিচীকাময়?”

“হ্যাঁ, কিন্তু শুধু তুই নয় আমিও এই মরিচীকার পেছনেই ছুটছিলাম।”

“কাকে ভালোবাসো তুমি ভাইয়া? যে তোমার কাছে মরীচিকা?”

“সিক্রেট।”

চলবে ইনশাআল্লাহ ✨

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে