#মরীচিকাময়_ভালোবাসা
#পর্বঃ১২
#লেখিকাঃদিশা_মনি
মৌরী তার বাবা আজাদ চৌধুরীকে নিয়ে নতুন ফ্ল্যাটে এসে উঠেছে। বর্তমানে খুব ভেঙে পড়েছে সে। নিজের চিরচেনা বাড়ি, ঘর ছেড়ে আসা কারো কাছেই সহজ ব্যাপার নয়৷ কিন্তু অনেক সময় পরিস্থিতি আমাদের অনেক কিছু করতে এবং মেনে নিতে বাধ্য করে। মৌরীর সাথেও আজ ঠিক তেমনটাই হলো। বিনা দোষে আজ সে শাস্তি ভোগ করছে।
আজাদ চৌধুরী মৌরীর মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললেন,
“তুই চিন্তা করিস না মা। সব ঠিক হয়ে যাবে। এই ফ্ল্যাটটা আমি অনেক আগেই কিনে রেখেছিলাম। মাঝে মধ্যে বিজনেসের জন্য উত্তরায় আসতে হলে আমি এখানেই থাকতাম। তবে এখন থেকে সবসময়ের জন্য থাকতে হবে।”
মলিন হাসলেন আজাদ চৌধুরী। তার এই হাসি দেখেই মৌরী বুঝল পারল তার বাবার মনের কষ্টটা। সে আজাদ চৌধুরীকে শুধালো,
“তোমার বাড়ি ছেড়ে চলে আসার জন্য খুব কষ্ট হচ্ছে তাই না আব্বু?”
“না রে মা। আমার বাড়ি ছেড়ে আসার জন্য কোন কষ্ট হচ্ছে না। কষ্ট তো হচ্ছে ভাইয়ার ব্যবহারের কারণে।”
মৌরী তার বাবাকে জড়িয়ে ধরে। কান্নামিশ্রিত গলায় বলে,
“সরি বাবা। আজ শুধু মাত্র আমার জন্যই সব কিছু হলো।”
“খবরদার আর এমন কথা বলবি না৷ তোর কোন দোষ নেই। আর এসব কথা নিয়ে আর ভাবিস না তো। তুই এখন পড়াশোনায় ফোকাস কর। সামনে না তোর এইচএসসি পরীক্ষা। এখন সব ভাবনা বাদ দিয়ে পড়াশোনায় ফোকাস কর।”
“ঠিক আছে আব্বু।”
★★★
মৌরীর জীবনধারায় অনেক পরিবর্তন আনে। অন্য সব চিন্তা বাদ দিয়ে সে পড়াশোনায় মন দেয়। তার এইচএসসি পরীক্ষার মাত্র ২ মাস বাকি ছিল কিন্তু অনেক পড়া জমে ছিল। মৌরী দিনরাত পরিশ্রম করে সব পড়া কভার আপ করে। অতঃপর খুব ভালো ভাবেই এইচএসসি পরীক্ষাটা দেয়।
আজ তার এইচএসসি পরীক্ষার রেজাল্টের দিন। মৌরী খুবই উত্তেজনার সাথে অপেক্ষা করছে তার রেজাল্ট জানার জন্য। যদিওবা পরীক্ষাটা অনেক ভাবে দিয়েছে তবে মনের মধ্যে চিন্তা থেকেই যায়। মৌরী আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করে বলতে থাকে,
“আল্লাহ, আমার রেজাল্টটা যেনো ভালো আসে।”
কিছু সময়ের মধ্যে মিষ্টি হাতে নিয়ে খুশির খবর নিয়ে হাজির হলেন আজাদ চৌধুরী। মৌরীকে জড়িয়ে ধরে বললেন,
“কংগ্রাচুলেশনস মা। তুই GPA 5 পেয়েছিস। আজ আমি খুব খুশি। বল কি গিফট চাই তোর।”
মৌরী নিজেও খুশিতে লাফিয়ে ওঠে। খুশির বন্যা এসে তার মনে ধরা দেয়। মৌরীকে মিষ্টি মুখ করান আজাদ চৌধুরী। অতঃপর বলেন,
“এখান থেকে কিন্তু তোর জীবনের নতুন অধ্যায় শুরু। তোকে এরপর আরো বেশি পরিশ্রম করতে হবে।”
“তুমি একদম চিন্তা করো না আব্বু। আমি এরপর থেকে আরো বেশি পরিশ্রম করব। এখন আমি বিজনেস স্টাডিজ নিয়েই পড়তে চাই। আফটার অল আমাকে একটা সময় তোমার বিজনেসের হাল ধরতে হবে।”
“হুম। ভালো করে পর। আমিও তোর হাতে নিজের বিজনেসের দায়িত্ব তুলে দিয়ে এবার অবসরে যেতে চাই। অনেক তো পরিশ্রম করলাম জীবনে। এবার একটু শান্তির দরকার।”
“আচ্ছা। আমি তাহলে বড়মাকে ফোন করে সুখবরটা দেই।”
মৌরী আতিফা বেগমের নাম্বারে কল দেয়। কিছুক্ষণ রিং হওয়ার পর ফোনটা রিসিভ হয়।
মৌরী কিছু বলতে যাবে তার আগেই ফোনের ওপাশ থেকে প্লাবণের গলা শুনে থমকে যায় সে। আর এক মুহুর্ত দেরি না করে ফোনটা রেখে দেয়।
আজাদ চৌধুরী মৌরীকে শুধায়,
“কিরে কি হলো?”
“ফোনটা প্লাবণ রিসিভ করেছিল।”
“তোকে আবার কোন বাজে কথা বলে নি তো?”
“না বলে নি। আমি বড়মাকে বলেছিলাম আমার নতুন নাম্বারটা যেন অন্য নামে সেভ করে রাখে। যাতে কেউ চিনতে না পারে।”
“ও তাহলে ঠিক আছে।”
★★★
প্লাবণ আতিফা বেগমের ফোন নিয়ে রান্নাঘরে চলে যায়। আতিফা বেগম তখন রান্নায় ব্যস্ত ছিলেন। প্লাবণ সেখানে গিয়ে বলে ওঠে,
“আম্মু তোমার ফোন। তিতলি নামের কেউ একজন ফোন করেছিল। আমি রিসিভ করতেই কথা না বলে রেখে দিলো।”
আতিফা বেগম আর সময় নষ্ট না করে তড়িঘড়ি করে প্লাবণের হাত থেকে ফোনটা নিয়ে নেন। প্লাবণ তাকে শুধায়,
“এই তিতলিটা কে আম্মু?”
“আমার পরিচিত একজন। ও তুই চিনবি না।”
“আচ্ছা। তাহলে আমি যাচ্ছি।”
প্লাবণ রান্নাঘর থেকে চলে যেতেই আতিফা বেগম মৌরীর ফোনে কল দেন। রিং হওয়ার কিছু মুহুর্তের মধ্যেই মৌরী ফোনটা রিসিভ করে। আতিফা বেগম বলেন,
“হ্যালো মৌরী। তুই ফোন করেছিলি?”
“হ্যাঁ বড়মা। তোমাকে একটা খুশির খবর দেওয়ার ছিল।”
“কি খবর বল?”
“আমার এইচএসসি পরীক্ষার রেজাল্ট বেড়িয়েছে। আমি না GPA 5 পেয়েছি।”
“আলহামদুলিল্লাহ, আমি খুব খুশি হয়েছি। তোর এই সাফল্যই আমার প্রত্যাশা ছিল। জীবনে অনেক এগিয়ে যা তুই। আর পিছনে ফিরে তাকানোর দরকার নেই।”
“হুম। আমার জন্য দোয়া করিও।”
“আমার না খুব ইচ্ছা করছে তোর সাথে দেখা করার। কত দিন তোকে দেখি না।”
“আমারও খুব ইচ্ছা করে তোমায় দেখতে। কিন্তু কি করব বলো ঐ বাসায় তো যেতে পারব না।”
“তুই আসতে পারবি না তো কি হয়েছে? আমি আজকে তোর বাসায় যাব। তুই এত ভালো রেজাল্ট করেছিস তাই তোকে নিজের হাতে তোর সব প্রিয় খাবার রান্না করে খাওয়াবো।”
“কত দিন তোমার হাতের রান্না খাই না বড়মা। তুমি তো জানো তোমার হাতের রান্না না খেলে আমি তৃপ্তি পাইনা।”
আতিফা বেগমের চোখ অশ্রুসিক্ত হয়ে ওঠে। তিনি শাড়ির আচল দিয়ে চোখ মুছে বলেন,
“যারা তোর সাথে অন্যায় করেছে তারা ঠিক তাদের শাস্তি পাবে দেখে নিস। আল্লাহ ছাড় দেন কিন্তু ছেড়ে দেন না।”
“আচ্ছা বড়মা তুমি তাহলে আজকে চলে এসো৷ আমি রাখছি এখন।”
মৌরী ফোনটা রেখে দেয়। এদিকে আতিফা বেগম ফোনটা রাখতেই প্লাবণ তার সামনে এসে বলে,
“তাহলে তুমি লুকিয়ে লুকিয়ে ঐ মেয়েটার সাথে কথা বলো?”
“হ্যাঁ, বলি৷ কি হয়েছে তাতে?”
“তোমাকে না আমি বলেছিলাম ঐ মেয়েটার সাথে কোন যোগাযোগ রাখবে না।”
“আমি তোর কথা শুনতে বাধ্য নই।”
“একটা চরিত্রহীন মেয়ের প্রতি এত কিসের দরদ তোমার?”
“চুপ কর তুই। মৌরীর সম্পর্কে কোন বাজে কথা আমি সহ্য করবো না।”
“যেটা সত্যি আমি সেটাই বলেছি।”
“তুই মিথ্যার স্বর্গে বাস করছিস। তবে মনে রাখিস সত্য কোনদিন চাপা থাকে না। একদিন না একদিন তুই সব সত্যটা জানতে পারবি৷ সেদিন কিন্তু তোর আফসোস ছাড়া আর কিছুই করার থাকবে না।”
কথাগুলো বলে আতিফা বেগম রান্নাবান্নায় ব্যস্ত হয়ে যান। প্লাবণ রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে এসে নিজের মায়ের বলা কথাগুলোই ভাবতে থাকে।
★★★
মৌরী আজ শপিং করতে এসেছে। মনটা বেশি ভালো ছিল না। তাই ভাবল শপিং করে যদি একটু ভালো লাগে।
শপিং মলে এসে কিছুক্ষণ ঘোরাঘুরি করার পর অনাকাঙ্ক্ষিত ভাবে তার দেখা হয়ে যায় সুমার সাথে।
মৌরী সুমাকে দেখামাত্র এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু সুমা যেচে এসে মৌরীর সামনে বলে,
“কি হলো? আমাকে দেখে মুখ লুকাচ্ছ কেন?”
মৌরী দৃঢ় কন্ঠে বলে,
“আমি মুখ লুকাবো কেন? তোমার সাথে কথা বলতে চাই না জন্য মুখ লুকাচ্ছি৷ আর তুমি এভাবে আমাকে আপনি ছেড়ে তুমি বলা শুরু করলে কেন?”
“কারণ তোমার মতো মেয়েদেরকে সম্মান দিয়ে কথা বলা যায়না।”
“কি বোঝাতে চাইছ তুমি?”
“তোমার মতো মেয়ে যে নিজের স্বামী থাকা স্বত্তেও..”
সুমা নিজের পুরো কথা শেষ করতে পারল না। তার আগেই মৌরীর তার গালে ঠাস ঠাস করে পাঁচ-ছয়টা চড় মারল। সুমা অগ্নিদৃষ্টিতে তাকালো। বলে উঠল,
“তুমি আমায় মারলে!”
“চুপ। তোর মতো মেয়ে এটাই ডিজার্ভ করে। নিজে একটা মেয়ে হয়ে অন্য মেয়ের চরিত্রে দাগ দিতে চাস তুই। শয়তান মেয়ে।”
আশেপাশে অনেক মানুষ জড়ো হয়। তাদের সাথে সিংক্রিয়েট করতে চায় না বলে সে চলে যায়।
চলবে ইনশাআল্লাহ ✨
[বোনাস পর্ব সন্ধ্যা ৭ টায়।]