মরীচিকাময় ভালোবাসা পর্ব-১০

0
699

#মরীচিকাময়_ভালোবাসা
#পর্বঃ১০
#লেখিকাঃদিশা_মনি

মৌরীর রুমে প্রবেশ করে তার বিছানায় একটা প্যাকেট ছু’ড়ে মা’রল প্লাবণ। মৌরী সবেমাত্র বিছানায় গা এলিয়ে চোখ বুজেছিল। প্লাবণের এমন কাজে সে চোখ মেলে তাকায়। অতঃপর প্রশ্ন করে,
“কি হয়েছে টা কি তোমার?”

“আমার কিছুই হয়নি। তুই এই শাড়ি টা পড়ে তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নে তো।”

“কেন বলো তো?”

“তোকে যেটা বলছি সেটা কর। কোন প্রশ্ন করবি না।”

মৌরী আর কোন প্রশ্ন করলো না। উঠে দাঁড়িয়ে প্লাবণের উদ্দ্যেশ্যে বলল,
“তুমি রুমের বাইরে যাও, আমি চেঞ্জ করে নিচ্ছি।”

প্লাবণ রুমের বাইরে আসতেই মৌরী দরজা বন্ধ করে তৈরি হতে লাগল। প্যাকেটটা খুলে দেখল নীল রং এর খুব সুন্দর একটা শাড়ি। মৌরীর অনেক ভালো লাগল শাড়িটা দেখে। প্লাবণ তাকে এই শাড়িটা দিয়েছে ভাবতেই আরো ভালো লাগল।

হাজার হোক, সে তো ভালোবাসে প্লাবণকে। মুখে যতই বলুক ঘৃ’ণা করি কিন্তু ভালোবাসার মানুষকে ঘৃ’ণা করাটাও এত সহজ নয়।

শাড়িটা পড়ে খুব সুন্দরভাবে তৈরি হয়ে নিল মৌরী। অতঃপর দরজাটা খুলে দিলো। প্লাবণ দরজার বাইরেই দাঁড়িয়ে ছিল। মৌরী দরজাটা খোলার সাথে সাথেই সে মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে রইল মৌরীর দিকে। আজ বড্ড সুন্দর লাগছে মৌরীকে।

প্লাবণ খুব দ্রুতই চোখ ফিরিয়ে নিলো। কিন্তু মৌরী এটা ঠিকই লক্ষ্য করল যে প্লাবণ তার দিকে তাকিয়ে ছিল। এটা ভেবেই সে খুশি হয় খানিকটা।

প্লাবণ খনিকের নীরবতা ভেঙে বলে ওঠে,
“তুই এখন চল আমার সাথে।”

“কিন্তু কোথায় যাব সেটা তো বললে না।”

“গেলেই দেখতে পাবি।”

মৌরী আর কথা না বাড়িয়ে প্লাবণের সাথে যেতে লাগল।

★★★
শামিমদের বাড়ির সামনে এসে গাড়ি দাড় করালো প্লাবণ। নিজে গাড়ি থেকে নেমে মৌরীর উদ্দ্যেশ্যে বলল,
“নাম এখন।”

মৌরী গাড়ি থেকে নেমে একটা অচেনা বাড়ি দেখে প্রশ্ন করল,
“এটা কার বাড়ি?”

“শামিমের।”

“আপনি আমায় এখানে কেন নিয়ে এলেন?”

“শামিমের হাতে তোকে তুলে দেওয়ার জন্য।”

“কি!!”

“মজা করছিলাম। আজ আসলে শামিমের বোন সুমার জন্মদিন। আমাকে ইনভাইট করেছিল। তাই তোকে নিয়ে এসেছি এখানে।”

“আমাকে কেন আনলেন? আমাকে তো ইনভাইট করে নি।”

“তুই তো আমার বউ। তাই তোকে আমার সাথে এনেছি।”

প্লাবণের মুখে আমার বউ কথাটা শুনে মৌরীর অনেক ভালো লাগে। এরমধ্যে হঠাৎ করে তার সব ভালো লাগা ধূলিস্যাৎ করে দেওয়ার জন্য সুমা চলে আসে। এসেই প্লাবণের কাছে এসে রসালো গলায় বলে,
“তুমি এসেছ প্লাবণ ভাইয়া। আমি জানতাম তুমি আসবে।”

“হ্যাঁ, তুই এত করে বললি তাই না এসে থাকতে পারলাম না। আরে ও কে তোমার স্ত্রী না? ভাবি আসুন আসুন ভেতরে আসুন।”

সুমার থেকে এত ভালো আচরণ আশা করে নি মৌরী। তাই সে যারপরনাই অবাকই হলো। তবে এই নিয়ে আর বেশি কিছু ভাবতে পারল না। কারণ প্লাবণ তার হাত ধরে সুমাদের বাড়ির ভিতরে যেতে লাগল।

★★★
সুমাদের বাড়িটা বেশ সুন্দর করে ডেকোরেট করা হয়েছে। সুমার মা-বাবা কেউ নাকি এখন বাড়িতে নেই। তারা দুজনেই বিজনেসের কাজে বাইরে গেছেন। তবে সুমাকে জন্মদিনের গিফট হিসেবে একটা বিএমডব্লিউ গাড়ি উপহার দিয়ে গেছেন।

এছাড়া তারা ভার্চুয়ালী কানেক্ট থাকবে এই অনুষ্ঠানে। এসব দেখে মৌরী আন্দাজ করে নিলো যে এরা খুব বড়লোক।

সুমার জন্মদিনে কেক কা’টা হচ্ছে। কেক কে’টেই প্রথম পিচ সে প্লাবণকে খাইয়ে দেয়। যা একদম ভালো লাগে না মৌরীর। সে পার্টির এক কোণায় পড়ে আছে। প্লাবণ এখানে আসার পর থেকে তার দিকে ফিরেও তাকাচ্ছে না।

মৌরীর এখন ভীষণ খা’রাপ লাগতে থাকে। তাই সে এখান থেকে চলে যাবার সিদ্ধান্ত নেয়। এমন সময় হঠাৎ করে সুমা এনাউজ করে,
“আজকে আমার বার্থডে উপলক্ষ্যে আমি প্লাবণ ভাইয়ার থেকে একটা গিফট চাই। তুমি কি সেটা দেবে আমায়?”

প্লাবণ জিজ্ঞাসা করে,
“কি গিফট?”

” তোমাকে আমার সাথে একটা রোম্যান্টিক মিউজিকে ডান্স করতে হবে।”

প্লাবণ আড়চোখে মৌরীর দিকে তাকিয়ে বলে,
“হ্যাঁ, কেন নয়।”

মৌরীর খুব খারাপ লাগে। সে মলিন দৃষ্টিতে তাকিয়ে রয়। শামিম অনেকক্ষণ থেকে ব্যাপারগুলো খেয়াল করছিল। আজ নিজের বোনের জন্মদিন তাই কোন সিনক্রিয়েট করতে চায়নি জন্য চুপ ছিল। কিন্তু এখন সবকিছুর লিমিট ক্রম হয়ে যাচ্ছে। তাই সে আর চুপ না থেকে বলে ওঠে,
“এটা কেমন কথা সুমা? প্লাবণ বিবাহিত,ওর স্ত্রীও এখানে উপস্থিত আর তুই ওর সাথে নাচতে চাইছিস।”

“বি মডার্ন ভাইয়া। আজকাল এসব কোন ব্যাপার না। আর আমি জানি ভাবি কিছু মাইন্ড করবে না। তাই না ভাবি।”

মৌরী মলীন হেসে বলে,
“না আমি কিছু মনে করবো না।”

অতঃপর প্লাবণ ও সুমা রাতান লাম্বিয়ান গানে নাচতে লাগল। মৌরী সবার অলক্ষ্যে চোখের জল মুছে নিলো। প্লাবণ মৌরীর দিকে তাকিয়ে মনে মনে বলল,
“দেখ কেমন লাগে।”
★★★
অনেক রাত অব্দি পার্টি চলতে থাকে। এখানে বি’য়ারের আয়োজনও করা হয়েছে। যেই ব্যাপারটা মৌরীর ভালো লাগল না। তাই সে প্লাবণের কাছে গিয়ে বলল,
“চলো এখন ফিরে যাই।”

“আমি এখন যাবো না। তোর যাওয়ার হলে তুই একাই যা।”

মৌরীর খারাপ লাগল। কিন্তু সে কিছু বলল না। এরমধ্যে প্লাবণ সামনে চলে গেলো। গিয়ে নিজের কিছু বন্ধুদের সাথে আলাপে মেতে উঠল। মৌরী সেখানে দাঁড়িয়েই ছিল।

কিছুক্ষণ পর সুমা এসে মৌরীকে বলল,
“ভাবি প্লাবণ ভাইয়া তোমাকে ডাকছে।”

“কোথায়?”

“ঐদিকের একটা রুমে আছে প্লাবণ ভাইয়া। চলো তোমায় দেখিয়ে দেই।”

মৌরী সুমার সাথে সেই রুমে যায়। রুমের কাছে যেতেই সুমা মৌরীকে ধা’ক্কা দিয়ে রুমের মধ্যে ঢুকিয়ে দেয়। অতঃপর দরজাটা লাগিয়ে দেয়।

মৌরী কিছু বুঝে উঠতে পারে না। দরজা ধাক্কাতে থাকে। এমন সময় হঠাৎ কেউ তার কাধের উপর হাত রাখে। পিছন ফিরে তাকাতেই চমকে যায় মৌরী। একটা ছেলে তার দিকে তাকিয়ে বিশ্রীভাবে হাসতে দেখে ভয়ের ঢোক গেলে। ছেলেটা ধীরে ধীরে মৌরীর দিকে এগিয়ে আসতে থাকে।

মৌরী চিৎকার করে বলে,
“একদম এগোবেন না৷”

ছেলেটা মৌরীর শরীরে বাজেভাবে স্পর্শ করতে থাকে। জোর পূর্বক তার সাথে ঘনিষ্ঠ হওয়ার চেষ্টা করে। মৌরী চিৎকার করার চেষ্টা করলে তার মুখ চেপে ধরে।

এমন সময় হঠাৎ করে রুমের দরজা খুলে প্লাবণ,সুমা আর শামিম ভিতরে প্রবেশ করে।

মৌরী সকলের দিকে তাকায় সাহায্যের প্রত্যাশায়। প্লাবণ হাত তালি দিয়ে বলে,
“বাহ,খুব সুন্দর ড্রামা চলছিল। তোর চরিত্র এত সুন্দর যে কি বলব। বা’রোভাতারি মেয়ে একটা।”

মৌরীকে ততক্ষণে ছেলেটা ছেড়ে দিয়েছে। মৌরী প্লাবণের সামনে এসে বলে,
“তুমি বিশ্বাস করো এই ছেলেটা আমার সাথে জোরাজোরি করছিল।”

“চুপ আর একটা মিথ্যা কথাও না।”

মৌরী সুমার দিকে তাকিয়ে বলে,
“সুমা তুমি তো আমায় বলেছিলে প্লাবণ আমার জন্য রুমে অপেক্ষা করছে। তারপর আমি রুমে আসতেই দরজা বন্ধ করে দিলে।”

“এসব কি বলছ তুমি? নিজে অকা’জ করে এখন আমার দো’ষ দিচ্ছ। দেখছ তো প্লাবণ ভাইয়া তোমার বউয়ের কীর্তি।”

প্লাবণ মৌরীর হাত শক্ত করে ধরে বলে,
“ঘৃণা হচ্ছে আমার তোর উপর। এক্ষুনি চল আমার সাথে এখান থেকে। আমার মান সম্মান যথেষ্ট নষ্ট করেছিস তুই আর নয়। এবার আমি এর শে’ষ দেখে ছাড়ব।”

বলেই মৌরীকে টানতে টানতে নিয়ে যেতে লাগল।

চলবে ইনশাআল্লাহ ✨

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে