#মন মহুয়া
রাইটার – Farhana Rahaman আয়াত
পার্ট -১৬
মিলন গাড়ি চালাচ্ছে আর পাশে বসে ঠিক তানিয়া।পিছনে মিনার আর মহুয়া বসেছে।গ্রামের কাছাকাছি আসতেই মহুয়া বাইরে দেখতে থাকে। বুঝতে পারছে বাড়িতেই যাচ্ছে।মিনারের দিকে তাকিয়ে দেখে মহুয়া।ঠোঁটের কোণে হাসি আর চোখ ছলছল করছে। মিনার মহুয়ার হাতের উপর নিজের হাতটা রাখে।
কিছুক্ষনের মধ্যে ওরা পৌঁছে যায়।
মিনার আগেই মহুয়ার বাবাকে ফোন করে বলে দিয়েছিলো ওরা আসবে তাই তিনি পুকুর ঘাটেই বসে ছিলেন।মহুয়া গাড়ি থেকে নেমে দৌড়ে বাবার কাছে গিয়ে জড়িয়ে ধরে। মহুয়ার মা মহুয়াকে দেখে একটু বিরক্ত হলেও মিলনকে দেখে বেশ খুশি হয়। জামাই আদর মিনারের বদলে মিলনের করা শুরু করেছে।
মিনারও কারণটা বেশ বুঝতে পারে তাই মিলনকে দেখে হাসছে।দুপুরে খাওয়া দাওয়া করে মহুয়া আর তানিয়া আগের মতো ঘুরতে বের হয়।মিনার আর মিলন গেছে বাজারে মহুয়ার বাবার সাথে।
তানিয়া আর মহুয়া হাটঁতে হাটঁতে শাপলার বিলে আসে।দুজনেই মহুয়া গাছের নিচে বসে আছে। মহুয়া চুপচাপ বসে আছে কিন্তু অবাক হচ্ছে তানিয়ার কান্ড দেখে। আজ আসার সময়ও এতো বকবক করেছে কিন্তু হঠাৎ করে চুপ হয়ে আছে। কিছুই বলছে না।
মহুয়া এবার নিজেই বলে উঠে, কিরে তানি কি হয়েছে তুর?
-কই কিছুনা তো।
– আমার দিকে তাকিয়ে বল।
কি হয়েছে বল? মিলন ভাইয়ের সাথে ঝগড়া করেছিস?
– না।
– তাহলে?
-বাবা আমার বিয়ে ঠিক করে ফেলেছে।কাল ছেলেপক্ষ আসবে পাকা কথা বলতে।
– মানে কি?হঠাৎ? দেখা নেই শুনা নেই হুট করেই বিয়ে।
– হ্যা।পাত্র নাকি আমাকে দেখেছে কলেজে গিয়ে।আমি এসবের কিছুই জানিনা।আমি যদি আজ না আসতাম বাড়িতে বাবা গিয়েই নিয়ে আসতো।আমি এখন কি করবো?আমি যে মিলনকে খুব ভালোবেসে ফেলেছি।
কথাগুলো বলতে বলতেই কান্না করে দেয় তানিয়া।
মহুয়া কথাগুলো শুনে নিজেই চিন্তায় পড়ে গেলো। নিজের সব কিছু ভূলে গেছে।
মিনার ঘরে ফিরে মহুয়াকে না পেয়ে মহুয়াকে কল দেয়।মহুয়া ফোন রিসিভ করে বলে চলে আসছে ওরা।
বাসায় ফিরে মহুয়া চুপচাপ হয়ে নিজের রুমে বসে আছে। তানিয়াও আর আসেনি ওদের ঘরে।মিলন অনেকবার ফোন করে কিন্তু তানিয়া রিসিভ করলো না।
মহুয়াকে গিয়ে বলে মিলন সবটা।মহুয়া বলে ভাই তুমি চিন্তা করোনা। আমি কথা বলবো ওর সাথে।মিলন আর কিছু না বলে চলে আসে।
রাতে খাওয়া দাওয়া সেরে সবাই ঘুমাতে চলে যায় কিন্তু মহুয়া এখনো পুকুর ঘাটে বসে আছে। মিনার ও গিয়ে পাশে বসে।মিনার ভাবলো মহুয়ার এমনি মন খারাপ তাই বকবক করতে লাগলো। কিন্তু মহুয়া ভাবছে অন্য কথা।মহুয়া মিনার কে সবটা বলতে চাই।কিন্তু কি ভাবে বলবে সেটাই ভাবছে।মিনার অনেক্ষন পর বুঝতে পারে মহুয়া অন্যমনস্ক হয়ে আছে। মিনার জিজ্ঞেস করে কি হয়েছে।মহুয়া বলে কিছু কথা বলার ছিলো,
– বলো। এত ভাবার কি আছে।
মহুয়া একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে কাল তানিয়ার পাকাদেখা। ওর বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে।
– তাই নাকি।সেটা তো ভালোই।
– নাহ ভালো না।
-কেনো?
– কারণ ও অন্যকাউকে ভালোবাসে।
– কি বলছো।
– আপনি হয়তো খেয়াল করেননি।
– কি?
– তানিয়া আর মিলন ভাই একজন আরেকজনকে ভালোবাসে।সেটা অনেক আগে থেকেই।
– কি বলছো।
– হ্যাঁ। আমি বুঝতে পারছিনা কি করবো।প্লিজ কিছু একটা করুন।
মিনার চুপচাপ ভাবছে।আগে অবশ্য খেয়াল করেছিলো বিষয়টা।
মিনার মহুয়াকে নিয়ে ঘরে যায়।দুজনের চোখেই ঘুম নেই।মহুয়ার অস্থিরতা দেখে মিনারও অস্থির হয়ে গেছে। মহুয়া যে কান্না করছে সেটা বেশ বুঝতে পারছে মিনার।গ্রামে এনেছিলো ওর ভালোর জন্য কিন্তু এখানেও সমস্যা।মিনার এই প্রথমবার মহুয়াকে কাছে টেনে জড়িয়ে ধরে। মহুয়াও মিনারের বুকে মাথা টা রেখে জড়িয়ে ধরে।
রাত টা পার হয়ে গেছে। মহুয়া যখন জাগে মিনার তখন পাশে ছিলো না।মহুয়া উঠে মিনারকে খুজতে লাগলো।
রাতুল কে জিজ্ঞেস করলে বলে মিলন ভাইকে নিয়ে বাইরে গেছে।কোথায় সেটা জানে না।মহুয়ার চিন্তা হচ্ছিলো খুব।বেশ কিছুক্ষন পর মিনার ফিরে আসে তাও দুহাত ভর্তি জিনিস নিয়ে।মিস্টি, ফল অনেককিছু আছে এর মধ্যে। ।মহুয়া জিজ্ঞেস করলে বলে, কথা না বলে রেডি হয়ে নিতে।মহুয়া বুঝতে পারছেনা মিনার কি করতে চাইছে।মহুয়া আবারও বলে কই যাবে।মিনার বলে তোমার বান্ধবীর পাকা কথা হবে আজ।আর তুমি যাবেনা সেটা কি করে হয়? মহুয়ার এবার রাগ হচ্ছে। এমনিতে চিন্তায় আছে তার উপর মিনারের এসব কথা। রাতে এতো করে বলেছে তাও মিনার এসব করছে দেখে বেশ খারাপ লাগছে। মহুয়া বলে দিলো ও যাবেনা।মিনার বলে না গেলে তো হবে না।অবশ্যই যেতে হবে।
মিনার নাস্তা করে মহুয়ার অপেক্ষা করছে কিন্তু মহুয়ার আসার নাম নেই।মিনার গিয়ে দেখে মহুয়া চুপচাপ বসে আছে নিজের রুমে।মিনার মহুয়ার হাত ধরে বলে, চলো।মহুয়া মুখের উপর বলে দিলো যাবেনা।মিনার বলে দেবরের বিয়ের কথা বলতে ভাবী না গেলে কি হয়?
মহুয়া অবাক হয়ে বলে, মানে?
মিনার হেসে বলে,চলুন পাকা কথা বলে আসি।
মহুয়া খুশিতে উঠে মিনারকে জড়িয়ে ধরে।
মিনার আর মহুয়া দুজনে মিলে তানিয়াদের বাসায় যায়।তানিয়ার বাবা অপেক্ষা করছিলো পাত্রপক্ষ আসার।মহুয়া আর মিনারকে দেখে তানিয়ার মা বলে,আরে মহুয়া তুই এসেছিস?ভালো হয়েছে যা তানিয়াকে একটু সাহায্য কর।মেয়েটা এখনো রেডি হতে পারেনি।
মহুয়া মিনারের দিকে তাকায়।মিনার ওকে ইশারা করলো যেতে।মিনার তানিয়ার বাবার সাথে কথা বলতে লাগলো। কথায় কথায় মিনার জিজ্ঞেস করে ছেলে কি করে। তানিয়ার বাবার বলে, ছেলে ব্যাংকের কর্মকর্তা।মিনার বলে,বাহ ভালো।আসলে আমরাও পাত্রী দেখছিলাম আমার ছোট ভাই মিলনের জন্য।তানিয়ার বাবা বলে,তাই নাকি?কিন্তু ও তো এখনো পড়াশোনা শেষ করেনি শুনলাম।
মিনার হেসে বলে তাতে কি আংকেল আমিওতো পড়াশোনা করছি আর তার পাশাপাশি ব্যবসাও করছি।মিলনও অফিসে জয়েন করবে কিছুদিন পর।আমাদের তো আর ছোট ব্যবসা না।
তানিয়ার বাবা বলে, সেটা তো জানি।মিনার বলে, মহুয়া বলছিলো তানিয়ার কথা। আমার মা বাবাও রাজি ছিলো।কিন্তু শুনলাম ওর পাকাকথা তাই আর বলিনি।
তানিয়ার বাবা মিনারের কথায় একটু অবাক হয়।তারপর বলে,সেকি জানতাম না তো।
মিনার বুঝতে পারছে তানিয়ার বাবাকে রাজি করানো সম্ভব তাই আবার বলে,হ্যাঁ সেই জন্য তো গ্রামে আসলাম কথা বলতে।কিন্তু তানিয়ার তো বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে কি আর করা। আর আমার ভাই এর জন্য অনেক পাত্রী রেডি আছে।আমাদের তো আর কোনো চাহিদা নেই।বাড়ির সবাই তানিয়াকে পছন্দ করেছিলো তাই আর কথা বলা হয়নি আর কি।
কথা বলতে বলতে তিনজন লোক আসে পাত্রপক্ষ থেকে।বিয়ের দিনক্ষন ঠিক করা হচ্ছে।মিনার দাড়িয়ে দেখছে সবটা।হঠাৎ পাত্রের মামা বলেন সব কিছু ঠিক হলো কিন্তু আমাদের ছেলের একটা আবদার আছে।তানিয়ার বাবা জিজ্ঞেস করে কি আবদার।ছেলের মামা বলে,আমাদের ছেলে ব্যাংকে চাকরি করে।বন্ধু আর অফিসের লোকজন আর আমাদের অনেক আত্নীয় আছে তাই বরযাত্রী একটু বেশি হবে আর বিয়ের অনুষ্ঠান শহরের ক্লাবেই দিতে হবে।আর খাবারের দিকে একটু বেশি নজর রাখবেন আরকি।বুঝতেই পারছেন নামীদামী মানুষজন আসবে।
তানিয়ার বাবা চুপ করে শুনছে সবটা।মিনার ভাবছে সময় হয়েছে গিট্টু লাগানোর!
মিনার বলে উঠে, তাহলে আমাদেরও একটা আবদার আছে।
মিনারের কথা শুনে ছেলেপক্ষ নড়েচড়ে বসে। তানিয়ার বাবাও অবাক হয়ে দেখছে।
মিনার আবার বলে,আমাদেরও ইচ্ছে দেনমোহরের টাকা টা যেনো বিয়ের দিনই পরিশোধ করে দেয়।আর আপনাদের বাড়ির বউকে আপনারা তো আর খালিহাতে নিবেন না।শাড়ি গয়নায় ভরিয়ে নিবেন।কি বলেন?
ছেলের মামা বলে উঠে, সেকি দেনমোহর বিয়ের দিন কেনো দিতে হবে?আর মেয়ে তো আপনাদের আপনারাই সাজিয়ে দিবেন।এমনটাই তো হয়।
মিনার বলে,কে বলেছে এমনটাই হয়।আমি কি বিয়ে করিনি নাকি।আমি তো বউ নিয়ে গেছি শাড়ি গয়না পরিয়ে। তার উপর এতসব আবদার করিনি।আমরাও নামী দামি মানুষ কি বলেন আংকেল?তানিয়ার বাবার দিকে তাকিয়ে। তানিয়ার বাবা কিছু বলার আগেই মিনার আবার বলে,তানিয়া কোনো দিকে কম নাকি।
পাত্রপক্ষের কথাগুলো বেশ গায়ে লাগলো।ভেবেছিল একমাত্র মেয়ে তাই মোটা অংকে সব পাবে কিন্তু এখানে তো উল্টো হচ্ছে সবকিছু।
মিনার কথায় কথায় সবটা জটিল করে ফেলে।একপর্যায়ে ছেলেপক্ষ উঠে চলে যায় বিয়ে ভেঙে।মহুয়া তো সবটা আড়াল থেকে দেখছে আর হাসছে।মিনার যে এভাবে বিয়েটা ভাঙবে বুঝতেই পারেনি।
তানিয়ার বাবা কিছু বুঝে উঠার আগেই বিষয়টা হাতের বাইরে চলে যায় যে এখন মাথায় হাত দিয়ে ভাবছে কি থেকে কি হয়ে গেলো।মিনার পাশে বসে স্বান্তনা দিচ্ছে।
তানিয়ার বাবা বলে এভাবে বিয়ে ভেঙে গেলো এত ভালো পাত্র ছিলো।তুমি এতটা না বললেই হতো।
মিনার বলে,যাক বাবা আমি তো ভালোই করলাম।দেখলেন না কত লোভী সবাই।আর তানিয়া কোন দিকে কম শুনি।
আর হ্যাঁ বিয়ে ভাঙছে ভালোই হয়েছে।আমি নিজে বিয়ে দিব তানিয়ার ভাই হয়ে।
তানিয়ার বাবা এবার মিনারের কথায় মন গলে যাচ্ছে।নিজের ছেলে নেই।এমন কথা শুনে তাই মন ভরে গেলো।তানিয়ার বাবা বলে,তাহলে বোনকে বাইরে কেনো নিজের ঘরেই নিয়ে যাও।মিনার বুঝলো ওনি কি বলতে চাইছেন।মিনার বলে আলহামদুলিল্লাহ আলহামদুলিল্লাহ আলহামদুলিল্লাহ। মিনার বলে তাহলে আংকেল সব ঠিক রইলো আর ৩ দিন পর ওদের বিয়ে তাও আমাদের বাসায় হবে।সব ব্যবস্থা আমি করে নিবো।আপনি শুধু আমার বোনকে নিয়ে আসবেন।তানিয়ার বাবা আর আপত্তি করলো না।
মহুয়াতো খুশিতে দৌড়ে গিয়ে তানিয়াকে জড়িয়ে ধরে কান্না করে দিলো।সবটা শুনে তানিয়াও কান্না করে দেয়। মিলন এসবের কিছুই জানেনা।সকালেই মিনার ওকে বাসায় পাঠিয়ে দেয় বিয়ের সব ব্যবস্থা করতে।মিলন জানে সবটা মিনার আর মহুয়ার রেজেস্ট্রি হবে তাই।অন্যদিকে মহুয়া জানেনা এসবের কিছু।
মিনার আর মহুয়া ঘরে ফিরে ওর বাবাকে সবটা জানায়।ওর বাবা সব শুনে বেশ খুশি হয় কিন্তু ওর মায়ের মাথায় যেনো বাঁজ পড়লো।কিছু বলতেও পারছেনা মিনারের মুখের উপর। কিন্তু চোখ দিয়ে আর ব্যবহারে মহুয়াকে সহ্য করতে পারছেনা।শেষ করে দিতে।মহুয়া সবটা বুঝতে পারছে কিন্তু কিছু আসে যায়না মহুয়ার।মহুয়া এটা নিয়েই খুশি তানিয়ার সাথে মিলনের বিয়ে হচ্ছে শেষ পর্যন্ত।
চলবে,