মন মহুয়া পর্ব-১৪

0
712

#মন মহুয়া

রাইটার – Farhana Rahaman আয়াত

পার্ট – ১৪

মিনার মহুয়ার দিকে তাকিয়ে আছে। অনেক্ষন পর মহুয়া বলে,
আমাদের বাসায় ফিরতে হবে। চলুন,
– কিন্তু,
– প্লিজ আমাকে বাসায় নিয়ে চলুন।
মিনার তো একরোখা ছেলে উত্তর না পাওয়া পর্যন্ত যাবেই না।
মহুয়া মিনারের দিকে তাকিয়ে বলে,
– ভালবাসেন আমায়?নাকি দ্বায়িত্ব?
– ভালোবাসি ভালোবাসি ভালোবাসি……..
মহুয়া কিছু না বলে মিনারকে জড়িয়ে ধরে।
মিনারও মহুয়াকে জড়িয়ে ধরে।
– মহুয়া,
– হুম।
– আমার হয়ে থাকবে তো?
– সন্দেহ আছে?
– ভয় হয়।
– বউ টা কার?
-শুধু আমার।
-তাহলে,
– খুব বেশি ভালোবাসি ভালোবাসি তোমাকে।
– আমিও।
-কি?
– ভালোবাসি।
-তোমার রাগ হচ্ছে না আমার উপর?
-দোষ আপনার ছিলোনা।
আপনি আমাকে চাইলেই ঠকাতে পারতেন। প্রথম দিন থেকেই আপনি আপনার কথায় বুঝিয়ে দিয়েছিলেন আমাকে।আমি বুঝতে পেরেছিলাম কিন্তু অপেক্ষা করে ছিলাম এই দিনটার।আর আমাদের কালেমা পড়ে বিয়ে হয়েছিলো। আপনি সেটার অমর্যাদা কখনো করেননি।চাইলেই পারতেন।
– মহুয়া,
– হুম
-শুরু থেকে শুরু করি আমাদের পথচলা?
-হুম।

মিনার আর মহুয়া বাসায় ফিরে ১২ টার দিকে।ততোক্ষণে বাকিরাও ফিরে আসে।ফাহাদ ছাদেই ছিলো মহুয়ার অপেক্ষায়। মিরার শ্বশুর বাড়িতে গিয়ে মহুয়াকে না পেয়ে চলে আসে ফাহাদ সবার আগেই।
মহুয়া ফাহাদ কে দেখে তাড়াতাড়ি নিচে চলে আসার জন্য পা বাড়ায়।
ফাহাদ নিচে গিয়েও মহুয়ার পিছু নিলো। মহুয়া মিনার কেও দেখতে পাচ্ছেনা।বাবা কাজে বাইরে পাঠিয়েছে ওকে।মহুয়া মিনার কে কল দিলো।নাম্বার বিজি আসছে।কয়েকজন ছাড়া বাকিরা ছাদেই আছে অনুষ্ঠানে। মহুয়া ফাহাদকে হলুদ নিয়ে এগিয়ে আসতে দেখে ভয়ে চুপসে গেছে একদম।ফাহাদ মহুয়ার গলায় হাত লাগাতে গেলেই কেও একজন ওর পুরো মুখে মেহেদী মেখে দেয়।মহুয়া তাকিয়ে দেখে তানিয়া ওর পাশে।ফাহাদ রাগে তানিয়ার দিকে হাত তুলতে গেলে মিলন এসে হাজির হয়।মিলন বলে,
– কি হয়েছে তানিয়া?
– কিছু না।ওনার হলুদ মাখানোর সখ হয়েছিলো আমি মেহেদীর সখ ও পুরণ করে দিলাম।
মিলন ফিক করে হেসে দিলো সাথে মহুয়াও।ফাহাদকে দেখে আরো হাসি পাচ্ছে।
ফাহাদ রেগে বলে,How dare you?তোমার সাহস কি করে হয় আমার মুখে মেহেদী লাগানোর?
তানিয়া বলে, আমার সাহস নিয়ে পরে ভাবলেও চলবে আপাতত মুখ ধুয়ে আসুন এতক্ষনে মুখে ডিজাইন হয়ে গেছে মেহেদীর।
ফাহাদ ছুটে ওয়াসরুমে গেলো।মহুয়া যেনো হাফ ছেড়ে বাচঁলো।তানিয়াকে জড়িয়ে ধরে। মহুয়া তানিয়াকে নিয়ে রুমে গেলো। মহুয়া তানিয়াকে বলে তুই এমন আর কিছু করিস না।লোকটা ভালো না। যদি কিছু করে বসে।তানিয়া বলে,যেমন করবে তেমন সাজা পাবে।ওর সাহস কি করে হয় তুকে ছোঁয়ার?
– হয়েছে আর পাকামী করবি না।একদম শান্ত হয়ে থাক।
– ইন্না
– কি?
– আচ্ছা ঠিক আছে। চল উপরে।
– হ্যা চল।

রাত ৩ টার দিকে সবাই ঘুমাতে চলে যায়। তানিয়া আর মহুয়া একসাথে ওদের রুমে ঘুমায়।কিন্তু মিনারের ঘুম আসছে না।মহুয়াকে খুব বেশি মিস করছে আজ।সারাক্ষন কাছাকাছি থেকেও দূরে দূরে ছিলো।তার চেয়েও বেশি ভালোলাগা কাজ করছে মহুয়াকে মনের কথাগুলো বলতে পেরে।মহুয়াও যে একই অনুভুতি অনুভব করে সেটা জানতে পেরে মনটা আরো বেশি টানছে।
মিনার মহুয়াকে মেসেজ করে।
– বউ,,,,
,
,
মহুয়াও জেগেই ছিলো। সাথে সাথে রিপ্লাই দিল

-জ্বি
– ঘুমাওনি কেনো?
– আপনি কেনো ঘুমান নি?
-ভাবছি,,
– কি?
– ভাবছি বিয়েটা আবার করেই ফেলি।
– তাই?
– হুম
– পাত্রী দেখেছেন?
– হুম।
– কেমন?
– ছোট এক্টু,,
-তাহলে তো পুলিশ কেস হয়ে যাবে আপনার!
– হবেনা।বউ টা দেখতে ছোট কিন্তু আর কিছুদিন পর ১৮হয়ে যাবে।
– দেখুন ততদিনে না অন্য কেউ চুরি করে নিয়ে যায়,,,

মহুয়ার এই কথাটা পরার পর মিনার আর রিপ্লাই দিতে পারলোনা।হঠাৎ ফাহাদ এর কথাগুলো মনে পরলো ওর।খুব চিন্তায় পড়ে গেলো।
মহুয়া এরপর আবার মেসেজ দিলো কিন্তু রিপ্লাই পেলো না।এবার মহুয়া ভয় পেয়ে যায়। ভাবে মিনার রাগ করেছে।কি করবে বুঝতে পারছে না।রাত অনেক হয়েছে যাওয়াও যাবে না।ভোরে ফজরের আযান দিলে মহুয়া উঠে ফ্রেশ হয়ে ফুফুর রুমে গিয়ে নামায পরে নিলো।ওর ঘরে জিনিসপত্র অনেক জায়গা নেই।সবাই এখনো ঘুম।মহুয়া ছাদে গিয়ে চিলেকোঠার ঘরটাতে যায়।দরজা খোলাই ছিলো। মিলন ঘুম।মিনার এর কিছু কাজিন ও ছিলো সেখানে।কিন্তু মিনার নেই।মহুয়া বেরিয়ে এসে ছাদ থেকে আসেপাসে দেখতে থাকে।মাঠের দিকে তাকিয়ে দেখে মিনার সেখানে জগিং করছে।মহুয়া তাড়াতাড়ি নেমে মাঠের দিকে যায়।দৌড়ে মিনারের কাছে গিয়ে দাড়ালো।মিনার বলে তুমি এখন এখানে কেনো?
মহুয়া বলে আপনি এখানে কেনো?
আমিতো রোজ আসি।মিনার বলে।মহুয়া বলে কাল আর রিপ্লাই দেন নি কেনো?আমার চিন্তা হয়না?
মিনার ওর দিকে তাকিয়ে আসেপাশে একবার দেখলো।এত ভোরে তেমন কেউ নেই।মিনার মহুয়ার হাত ধরে এক্টা গাছের আড়ালে নিয়ে এসে মহুয়ার হাত দুটি পিছনের দিকে মুড়ে কাছে টেনে বলে,কাল কি বলেছিলে?
-আমিতো মজা করে,,
– ভুলেও এমন মজা আর করবেনা।
মহুয়ার হাতে ব্যাথা করছিলো।মিনার বুঝতে পেরে ছেড়ে দিয়ে বলে,বউ টা শুধু আমার।কেউ তাকালেও খবর আছে।
মহুয়া চুপচাপ শুনেই যাচ্ছে মিনারের কথা।মিনার মহুয়ার হাত ধরে বাসায় নিয়ে যাচ্ছিলো কিন্তু হঠাৎ দেখে ফাহাদ ফোনে কার সাথে চেঁচিয়ে কথা বলছে ফোনে।কি সেটা বুঝতে পারছেনা আর এত সকাল সকাল কেনো এমন করছে তাও বুঝতে পারছেনা। আর ওর মুখটা লাল হয়ে আছে দেখে ভাবছে এমন কি করে হলো।মিনার মহুয়াকে নিয়ে বাসায় চলে আসে।
মিনার সবার জন্য চা করছে আর মিনার উপরে গেলো ফ্রেস হতে। মিলন তখন ঘুম থেকে উঠে মাত্র।মিনার জিজ্ঞেস করলো ওকে ফাহাদ এর কি হয়েছে কিছু জানে কিনা।মিলন বলে কি ব্যাপারে। মিনার বলে ও রাগারাগি করছে আর মুখটা পুরো লাল হয়ে আছে।মিলন জানে কালকের কথাগুলো বললে মিনার রেগে যাবে তাই আর বললো না।
দুপুরে সবাই কমিউনিটি সেন্টারে চলে যায়।
মিনার মহুয়ার জন্য অপেক্ষা করছে। মহুয়া একটা লাল রং এর জামদানি শাড়ি পরেছে সাথে গোল্ডেন কালারের হিজাবও।হাতে লাল রং এর চুড়ি।মহুয়ার এমন হালকা সাজেও মিনারের বেশ ভারী ধাক্কা লেগে গেছে মনে।দেখে চোখ সরছে না।মহুয়াকে দেখে মিনার বলে, আজ এভাবে শাড়ি না পরলেই কি হতো না?
মহুয়া হেসে বলে বউ যে,,
– মিনার বাকিটা বলার আগেই বলে শুধু আমার!
মিনার বাইক চালিয়ে নিয়ে যাচ্ছে কিন্তু মহুয়ার মনে হচ্ছে ওদের কেউ ফলো করছে।মহুয়া পিছন ফিরে দেখতে থাকে কিন্তু কিছু দেখতে পারছেনা।

মিরার বিদায়ের পর সবাই বাসায় ফিরে আসে।
কিছু গেস্ট আজও আছে কাল বৌভাতে যাবে তাই।তানিয়াও আছে।রাতে সবাই তারাতাড়ি ঘুমাতে চলে যায়। দুদিন ধকল গেছে অনেক।মহুয়া ফুফু কে ওষুধ দিয়ে ঘুমাতে যাবে ভাবলো কিন্তু মিনার আসার পর থেকে উপরে গেছে সেই খেতেও আসেনি।মহুয়া ছাদে গেলো।রুমে মিলন ঘুমাচ্ছে। মহুয়া ছাদের সবটায় দেখে মিনার নেই।হঠাৎ ছাদের একপাশে পানির ট্যাংক এর দিকে চোখ যায়। মিনার হেলান দিয়ে সিগারেট খাচ্ছে ট্যাংক এর পাশে।মহুয়া এগিয়ে যায়। ঝাপ্সা আলোয় মিনার এর চোখের পানি চিকচিক করছে। মহুয়াকে দেখে মিনার তারাতাড়ি চোখ মুছে নেয়।কিন্তু মহুয়া বুঝতে পারে।
মহুয়া মিনার কে কখনো কাঁদতে দেখেনি।কিন্তু আজ লুকিয়ে লুকিয়ে কাঁদতে দেখেছে মহুয়া।উপর থেকে শক্তপোক্ত মানুষটা ভিতর থেকে যে এতটা নরম মনের মহুয়া আজ দেখছে সেটা।মহুয়া কিছু না বলে মিনারের হাতটা নিজের হাতে নিয়ে ওর পাশে দাড়ায়।মিনার সিগারেট টা ফেলে দিলো হাত থেকে।
মহুয়া চুপচাপ দাড়িয়ে আছে।
দুজনেই চুপ।মহুয়া হঠাৎ করে বলে চলুন,
মিনার বলে, কই যাবো?
মহুয়া হেসে বলে যেদিকে দুচোখ যায়।
মহুয়া মিনার কে নিয়ে বেরিয়ে আসে নিচে।পাশের মাঠটায় মিনারের হাত ধরে হাটতে লাগলো। মিনার বলে রাতে জগিং করার সখ হয়েছে?
মহুয়া বলে,নাহ বরের সাথে ঘুরার সখ হয়েছে।
মহুয়া আর মিনার হাটছে।
মহুয়া মিনারকে নিয়ে গলির মোড়ে চায়ের দোকানে গেলো। এখন এখানে তেমন লোকজন নেই।মহুয়া আর মিনার চা খেয়ে বাড়ির দিকে পা বাড়ায়।মিনার মহুয়ার সাথে চুপচাপ হাটছে।মহুয়া মিনার এর মন ভালো করতেই পারছিলো না।ভেবেছিলো বাইরে আসলে ভালো লাগবে।কিন্তু হলো না।মহুয়া হাটতে হাটতে বলে,
-জানেন যেদিন আমি আপনার সাথে বাড়ি ছেড়ে সবাইকে ছেড়ে চলে আসছিলাম আমার খুব খারাপ লাগছিলো। ইচ্ছে করছিলো চিৎকার করে কান্না করি।কিন্তু পারছিলাম না।প্রথম দিকে খুব খারাপ লাগছিলো সবার জন্য কিন্তু আপনাদের বাসায় সবাই এতটা আপন করে নিলো যে কষ্টগুলো দূর হয়ে যায়। মন খারাপ করে বাড়ির জন্য,সবার জন্য কিন্তু কিছু করার নেই।এটাই নিয়ম।মিরার আপুর শ্বশুরবাড়ির সবাই খুব ভালো দেখবেন আপুও খুব ভালো থাকবে।

মিনার মহুয়ার কথাগুলো শুনে দাড়িয়ে পড়ে। গেইটের কাছাকাছি ওরা।মিনার হঠাৎ মহুয়াকে জড়িয়ে ধরে শক্ত করে।
মিনার বলে, আমি আগে এই কস্টটা ফিল করিনি মহুয়া। কিন্তু আজ নিজের কলিজার টুকরো বোন টা যখন চলে যাচ্ছিলো,,
মহুয়া মিনারকে জড়িয়ে ধরে রাখে। মহুয়া বলে রাত হয়েছে চলুন এবার।অনেক হয়েছে এবার ঘুমাবেন চলুন। কাল আপুকে দেখতে যেতে হবে তো।

চলবে,,,

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে