#মন মহুয়া
রাইটার – Farhana Rahaman আয়াত
পার্ট -১৩
মহুয়া আজ কলেজে যায়নি।আজ মিরার শ্বশুর বাড়ি থেকে লোকজন আসবে বিয়ের তারিখ এর ব্যাপারে কথা বলতে।মহুয়া মা আর ফুফুর সাথে বাড়ির কাজকর্ম করছে।মিনার আর ওর বাবাও আজ অফিসে যায়নি।
মিরার হবু বর মামুন ফিরেছে দুদিন আগেই।কাজে ছুটি কম তাই ওরা বিয়েটা তারাতাড়ি সেরে ফেলতে চায়।এনগেজমেন্ট তো হয়েই আছে তাই ওরা কাবিন করে মিরাকে নিয়ে যাবে। দিনক্ষন পাকা হয়ে গেছে। সামনের শুক্রবারে বিয়ে।এক সপ্তাহের মধ্য বিয়ে তাই সব কাজ তারতাড়ি ভাবে করতে হচ্ছে।
বৃহস্পতিবার গায়ে হলুদ আর মেহেদির জন্য পুরো ছাদটা সাজানো হচ্ছে। মিরা, মহুয়া আর মিমি গিয়ে সব শপিং সেরে ফেলেছে একদিনেই।দাওয়াত করাও শেষ গেষ্টদের।মোটামুটি বাকি সব কাজ সেরে ফেলেছে মিনার আর মিলন মিলে।
আর মাত্র দুদিন বাকি বিয়ের।আগামীকাল গায়ে হলুদ।সকাল থেকে আত্বীয়স্বজন চলে আসবে।মিনার আর মহুয়ার চোখে ঘুম নেই।সারাদিনের কাজে ক্লান্ত লাগছে কিন্তু মন টা আরো বেশি অস্থির লাগছে দুজনের।কাল থেকে আগামি কিছুদিন দুজনি আগের মতো আলাদা থাকবে।কারণ বাড়িতে সবাই থাকবে।মিনার মহুয়াকে বলে দিয়েছে সে উপরে মিলনের সাথেই থাকবে।মহুয়া যেন ছাদে না যায়।মহুয়া হঠাৎ পাশ ফিরে দেখে মিনার ওর দিক তাকিয়ে আছে।জিজ্ঞেস করে ঘুমাননি?
মিনার বলে,নাহ।তুমি ঘুমাচ্ছোনা কেনো?
মহুয়া বলে ঘুম আসছে না।
মিনার বলে ছাদে যাবে?
মহুয়া খুশিতে উঠে বসে পড়ে। মিনার ও উঠে দুজনে ছাদে গেলো।
মিনার আর মহুয়া দুজনই চুপচাপ বসে আছে।এই শান্ত পরিবেশে মনের কথাগুলো শোরগোল করছে মিনারের বুকে।মহুয়ার হার্টবিট খুব দ্রুত হয়ে গেছে। মিনার পাশে থাকলেই এমন হয়।মিনার কিছুক্ষণ পর পর আড়চোখে মহুয়ার দিকে তাকাচ্ছে।মহুয়া মিনারের মুখের দিকে তাকিয়ে বলে, কিছু বলবেন?
মিনার বলে হুম।
-বলুন।
– আজ না।
-কখন?
– কাল।
– আচ্ছা।
দুজনেই চুপ,,একটু পর আবার মিনার বলে,শুনো।
-জী বলুন।
– কাল আমার আনা অরেঞ্জ কালারের শাড়ী টা পরবে।আর একদম পার্লারে যাবেনা সবার সাথে।বাসায় ও বেশি সাজবে না।
– হুম।
-কি হুম?
– সাজবো না।
– আরেকটা কথা।
-কি?
– আচ্ছা থাক।
– বলুন না।
– পরে।
– হুম।
মহুয়া চুপচাপ বসে আছে আর মুচকি হাসছে মিনারের কান্ড দেখে। ছোট বাচ্ছাদের মতো মনে করে করে যেন কথা বলছে। আজ রাগ ও নেই ওর মুখে।
মিনার কে চুপ থাকতে দেখে মহুয়া বলে, একটা গান শুনাবেন?
মিনার আপত্তি করলো না।মিনার নিজেই চাইছিল গান করতে।সময়টা খুব ভালো লাগছিলো যেনো। মিনার গান করতে শুরু করলো।
“তাকে অল্প কাছে ডাকছি
আর আগলে আগলে রাখছি
তবু অল্পেই হারাচ্ছি আবার।
তাকে ছোঁব ছোঁব ভাবছি
আর ছোঁয়েই পালাচ্ছি
ফের তাকেই ছুতে যাচ্ছি আবার,,,,
মহুয়া চুপচাপ গান শুনছে।মিনার গান দিয়ে যেন মনের কথাগুলো বোঝানোর চেস্টা করছে কাছে আসার।
গান শুনতে শুনতে দুজনই হঠাৎ একটা শব্দ শুনতে পায়।মিনার চারপাশে দেখলো কিন্তু কাউকে দেখতে পেলোনা।মিনার মহুয়াকে নিয়ে রুমে চলে আসে।
পরের দিন সন্ধ্যার দিকে সকল মেহমান প্রায় চলেই এসেছে।মিরা মিমি আর বাকি যারা যারা মেহেদি পরানোর জন্য মিরার শ্বশুরবাড়িতে যাবে সবাই পার্লারে চলে গেছে সন্ধ্যার আগেই।মহুয়া আর তানিয়া মিলে হলুদ এর সব ডালি সাজিয়ে দিয়েছে। মহুয়া যায়নি তাই তানিয়াও যায়নি পার্লারে।তানিয়াও মোটামুটি এই পরিবারের একজন হয়ে গেছে।সবাই বেশ পছন্দ করে। কিন্তু রিনি আসায় এক্টু ঝামেলায় পরে গেছে মিলন।তানিয়ার কাছে যেতে গিয়েও পারছেনা।বরং কাজের বাহানায় পালিয়ে পালিয়ে আছে।আজ আবার রিনি পার্লারেও গেছে নাকি মিলনকে ইমপ্রেস করবে বলে।মিলন সেই সুযোগে এক্টু রেহাই পেলো।
মিনার এসে মহুয়াকে বলে তানিয়া আর ও যেনো রেডি হয়ে নেয়।ওদেরও হলুদের জন্য যেতে হবে। মহুয়া যেতে চাইছে না বাসায় কাজের জন্য।কিন্তু মিনার কে তো যেতেই হবে তাই মহুয়াকে এখানে একা রেখে সে যাবেইনা।মহুয়া তানিয়াকে সহ নিয়ে রুমে গেলো রেডি হতে।মহুয়া তানিয়ার জন্য হলুদ শাড়ি কিনে রেখেছিলো সেটা বের করে দিলো।আর নিজেও মিনারের দেওয়া শাড়ী টা নিয়ে রেডি হয়ে নিলো। তানিয়া বলে তুই এটা পরলি কেনো?সবাই তো হলুদ পরবে।
মহুয়া হেসে বলে কারণ এটা তোর ভাসুর কিনে দিয়েছে তাই।
তানিয়া হেসে বলে ওরে শাবানা এই ব্যাপার!
ভালো ভালো।আমার টা যে আমাকে কখন এমন কিনে দিবে।
মহুয়া বলে হয়েছে এবার রেডি হয়ে নে।
তানিয়া মেকাপ করে কিন্তু মহুয়া হাল্কা করে সাজে। চোখে একটু কাজল,ঠোটে হাল্কা লাল লিপ্সটিক,চুল গুলো খোপা করে নিলো,দুহাতে অরেঞ্জ কালারের চুড়ি।
মিনার রুমের দরজা টায় ঠুকা দেয়।তানিয়া দরজা খুলে দেখে মিনার।মিনার বলে নিচে গাড়ি রেডি যাওয়ার জন্য।
তানিয়া বুঝতে পারছে মিনার মহুয়াকে দেখতে এসেছে।তাই একটু দুস্টুমি করে বলে আচ্ছা ঠিক আছে আমরা আসছি ভাইয়া আপনি যান।
দরজা বন্ধ করতে যাবে তখনি মিনার বলে,তুমি নিচে যাও একজনের সিট আছে।মহুয়াকে নিয়ে আমি বাইকে আসছি।
তানিয়া বলে, আগে বলবেন তো লং ড্রাইভে যাবেন!
মহুয়া তানিয়ার মাথায় তাপ্পর দিল একটা। তানিয়া হেসে দরজা খুলে বেরিয়ে আসে।
মিনার মহুয়ার দিকে মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে আছে। মহুয়া বারবার শাড়ি ঠিক করছে,চুড়ি ঠিক করছে।মিনার এভাবে তাকিয়ে আছে দেখে ওর লজ্জা করছে।মিনার দরজা টা বন্ধ করে দিল। মহুয়া বলে দরজা খুলে দিন কেউ আসবে।মিনার কিছু না বলে মহুয়ার দিকে এগোতে থাকে। মহুয়ার কলিজাটা যেনো বেরিয়ে আসবে এখনি।মুখ থেকে আর কথা বের হচ্ছে না।
মিনার কাছে এসে বলে সব ঠিক আছে কিন্তু,,
মহুয়া বলে, কি?
মিনার বলে,বাইরে যাচ্ছো হিজাব পরে নাও।
মহুয়া চুপচাপ মিনারের কথামতো হিজাব পরে নিলো।
মিনার কেনো যে এমন করে মহুয়া বুঝতে পারছেনা। তবে ওর এসব কাজের মধ্য যে যত্নটা লুকিয়ে আছে সেটা মহুয়া বেশ বুঝতে পারছে।
মিনার মনে মনে বলছে,যাক এখন আর মহুয়ার পিঠ দেখা যাবে না।মিনার চেয়েছিলো চুলগুলো খুলে দেখে তে কিন্তু খোলা চুলে মহুয়াকে একদম পুতুলের মতো লাগে তাই সেটা করেনি।
মহুয়া বলে এখন ঠিক আছে?
মিনার বলে হুম।খুব সুন্দর লাগছে এখন।
মহুয়া বলে, তাই?
– হুম।
– আপনাকেও খুব সুন্দর লাগছে।আচ্ছা এই অরেঞ্জ কালারের পাঞ্জাবী টা কখন কিনলেন।
মিনার বলে,দেরি হচ্ছে চলো।সবাই বেরিয়ে পড়েছে।
মহুয়া বেশ বুঝতে পারছে কাপল সেট কিনেছে দুজন ম্যাচিং করে পড়ার জন্য। মনটা কেমন যেন খুশিতে ভরে উঠে মহুয়ার।
নিচে গিয়ে দেখে সবাই চলে গেছে শুধু মিলন আর তানিয়া আছে।মিনার মিলনকে বলে তানিয়াকে নিয়ে এগিয়ে যেতে। মহুয়াকে নিয়ে ও আসছে।মহুয়া তানিয়ার কাছে গিয়ে বলে কি করে ম্যানেজ করলি?
তানিয়া হেসে বলে তোর বোনকে অনেক কস্টে গাড়ি তে পাঠিয়েছি রে,যাচ্ছিলো না।পরে এক সিট ছিলো তাতে জোর করে পাঠিয়ে দিলাম।বললাম আমি তোর সাথে যাব আর মিলন যেতে দেরী হবে।
-রাজি হলো?
-মিলন উদাও শেষ পর্যন্ত গাড়ি ছেড়ে দিচ্ছে দেখে গেলো।
দুজনেই হাসছে।
তানিয়া আর মিলন গেলো একসাথে তারপর মিনার বাইক স্টার্ট করে মহুয়াকে বসতে বলে। মহুয়া বসতে যাবে তখনই ফাহাদ আসে ওর কার নিয়ে।মহুয়াকে বলে,
– মহুয়া কি করছো শাড়ি পরে বাইকে যাবে?সাজ নস্ট হয়ে যাবে।আমার গাড়িতে চলো।
মিনার রাগে গিজগিজ করছে।বাইকের হর্ণ দিচ্ছে।মিনার নেমে কিছু বলতে যাবে তার আগে মহুয়াই বলে,
– আমার চিন্তা আপনার করতে হবেনা।আমার চিন্তা করার লোক আমার সাথেই আছে।
– মহুয়া শুনো আসলে,
– আসলে আমি ওনার সাথেই যাবো তাও বাইকে।দেরী হচ্ছে ভাইয়া আসি,,,
মহুয়া গিয়ে মিনারের বাইকে বসে পড়ে। মিনার যেন আকাশের চাঁদ পেলো।ভিষণ খুশি হয় মহুয়ার কথাগুলো শুনে।মহুয়া মিনারের কাঁধে হাত রাখে।
ফাহাদ ওদের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছে। রাগে ফুসছে।মহুয়াকে পাওয়ার জেদ চেঁপে গেছে এবার ওর।আজ পর্যন্ত কেউ ওকে এমন রিজেক্ট করতে পারেনি।মহুয়া বারবার ওকে এড়িয়ে যাচ্ছে।এইটুকু একটা মেয়ের এমন আচরণ ফাহাদ নিতে পারছেনা।ভালো ভাবে যখন হচ্ছেনা জোর করেই আদায় করে নিবে ফাহাদ সেটাই ভাবছে।
মিরার শ্বশুর বাড়িতে গিয়ে অল্পকিছুক্ষন থেকে মিনার মহুয়াকে নিয়ে বেরিয়ে পড়ে কাজ আছে বলে।মহুয়াও চুপচাপ মিনার যা বলছে করে যাচ্ছে।
রাত তখন ১২টা ১০
মিনার মহুয়াকে নিয়ে কিছুক্ষন ঘুরাফেরা করে একটা লেকের পাড়ে দাঁড়ায়। কিছুক্ষন চুপ থেকে মিনার মহুয়ার হাতটা ধরে।
– কাল একটা কথা বলবো বলেছিলাম তোমায়।
– বলুন।
মিনার একটু চুপ করে নীলার কথা বলে।কি কি হয়েছিলো সব বলে।
– আমি জানি আজ এসব কথা বলার দিন না।কিন্তু আমি না বলে আর থাকতে পারছিলাম না।কিন্তু আমি সব কিছু ভুলে গেছি।আমার বর্তমান তুমি।আমার ভবিষ্যতও তুমি।আমার এখন শুধুই তুমি।
মহুয়া চুপ হয়ে আছে।
মিনার ওর মুখের দিকে তাকিয়ে বলে, কি হলো কিছু বলবে না?
মিনার মহুয়ার মুখ দেখে কিছুই বুঝতে পারছে না।মহুয়া কিভাবে রিয়্যাক্ট করবে বুঝতে পারছে না।তবে ওর এমন শান্ত হয়ে থাকাটা মিনার কে ভাবাচ্ছে।
চলবে,,