মন ফড়িং ৪৩.
নিদ্র এক দৌঁড়ে সিড়ি বেয়ে নিচে নেমে গেলো। এক অসহ্যকর যন্ত্রণা হচ্ছে তার পুরো দেহে। আর একটু হলেই তার কানের টিমপেনিক পর্দা ফেটে যেতো৷ এমন কেনো হচ্ছে তার সাথে? তার কোনো ভুল ছিলো যার ফলাফল এতোটা তিক্ত ভাবে পাচ্ছে সে? লুসির সাথে সে যেটা করেছে তার ফলাফল? না এটা কোনোভাবেউ হতে পারেনা। লুসির সাথে তার কোনো প্রেম বা ভালোবাসার সম্পর্ক ছিলোনা। টুকটাক কথাবার্তা যেটা ওদের কালচার অনুযায়ী অনেক স্বাভাবিক। ওরা একসাথে রাত কাটিয়েও আলাদা হয়ে যায় আর সেখানে কথাবার্তা তো শূন্যের কাছাকাছি।
নিদ্রকে হাঁপাতে দেখে নিচতলার বারান্দায় দাঁড়িয়ে থাকা পৌড়া মহিলা খানিকটা অবাক হলেন। আজকেই এই ফ্ল্যাটে উঠেছে আর এমন কী হলো যে এভাবে দৌঁড়ে নেমে আসলো। কৌতূহল আটকে না রাখতে পেরে নিদ্রকে প্রশ্ন করেই বসলেন।
– বাবা কিছু হয়েছে?
নিদ্র খেয়াল করলো তার থেকে এক হাত দূরে নিচ তলার ডান দিকের ফ্ল্যাটের বারান্দা থেকে একজন পৌড়া মহিলা তার দিকে কৌতূহল দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। সে যে হাঁপাচ্ছে ব্যাপারটা এতক্ষণে অনেকের দৃষ্টিগোচর হয়েছে।
প্রশ্নের উত্তর দিবে নাকি নিজেকে সামলাবে। আর ছোট্ট একটা প্রশ্নের উত্তর হবে গেইন্ট আকারের। আর তাতেও উনি বুঝতে পারবেন না পুরোপুরি। একটা কথাই বলবে, পাগল ছাগল নিয়ে সংসার করো না বাবা। নিজের লাইফ এভাবে নষ্ট করো না।
নিদ্র কোনো উত্তর না দিয়েই রাস্তার দিকে চলে এলো।
একা একা রাস্তায় হেঁটে বেড়ানোতেও হয়তোবা শান্তি থাকতে পারে।
ব্যস্ত শহরের আকাশে তারা গুলোও খুব ব্যস্ত। এখানে কারো দীর্ঘশ্বাসের কারণ জানতে চায়না, জানতে চায়না বুকের কোণে জমে থাকা বিন্দু বিন্দু কষ্ট গুলো।
রীতা অদ্রিকে জড়িয়ে ধরে শান্ত করার চেষ্টা করতে লাগলেন। হাসির শব্দে তার বুকের ভেতর ব্যথা শুরু হয়েছে তারপরও মেয়েটাকে এভাবে ফেলে যেতে দ্বিধা হচ্ছে। বুকের ভেতরে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে রাখার সময় নিজের মেয়েটার কথা মনে পড়ে গেলো। তার মেয়েটারও যদি এমন হতো তাহলে কি সে দূরে সরে যেতো? কখনোই পারতো না।
অদ্রি ক্লান্ত হয়ে হাসি থামিয়ে দিলো। বিরবির করে বলতে লাগলো
– খালামনি উনাকে বলেন, আমাকে মুক্তি দিতে। আমি মুক্তি চাই। উনার দেয়া যন্ত্রণা আর কতোদিন আমি বইবো? আমার জন্যও আরো কয়েকটা জীবন নষ্ট হচ্ছে।
রীতা অদ্রির পিঠে হাত বুলিয়ে দিয়ে বললেন
– আল্লাহর রহমতে সব ঠিক হয়ে যাবে অদ্রি। শুধু সময়ের ব্যবধান।
অদ্রিকে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে বিছানার পাশে চুপচাপ বসে রইলেন। কী করবেন ভেবে পাচ্ছেন না।
নাজমুল সাহেব বাসায় এসে নিদ্রকে না পেয়ে বিরক্ত হলেন।
রীতার কাছে সন্ধ্যার ঘটনা শুনে বেশ ভয় পেয়ে গেলেন। এখন তার কী করা উচিৎ?
হাত পায়ে শিকল দিয়ে রাখতে হবে?
তাই করতে হবে।
পায়ের শিকলের দিকে তাকিয়ে আছে অদ্রি। চাহনিতে বোঝা যাচ্ছেনা অদ্রির মনে কী চলছে!
নিদ্র বেডরুমের দরজার কাছে দাঁড়িয়ে অদ্রির দিকে করুণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। কিছুক্ষণ পরপর তার চোখ ঝাপসা হয়ে যাচ্ছে। এটাই কি ওর পরিণতি ছিলো?
একটা মানুষ বেঁচে থাকতে শান্তি দেয়নি মরেও শান্তি দেয়নি। লোকটা কি শেষ পর্যন্ত জিতে গেলো?
এমনটা তো হতে দেয়া যাবেনা।
রাতে রীতা অদ্রিকে খাইয়ে দেয়ার জন্য প্লেটে ভাত মাখাচ্ছিলেন।
নিদ্র নিজ থেকেই বললো
– আমি খাইয়ে দেই। ওর সঙ্গ আর কতদিন পাবো তার কোনো ঠিক নেই।
রীতা নিদ্রের চোখের দিকে তাকানোর সাহস পেলেন না।
রীতা প্লেটে মুরগীর মাংস তুলে দিয়ে নিদ্রের হাতে প্লেট দিয়ে দিলো।
– তুমি প্লেট নিয়ে যাও। আমি খাবার পানি আর ডাল নিয়ে আসছি।
মেঝের এক কোণায় অদ্রি দুই পায়ের ভেতর মুখ লুকিয়ে বসে আছে। নিদ্রের পায়ের শব্দ পেয়ে মুখ তুলে তাকালো। নিদ্রের নিশ্বাস নিতেও ভুলে গেলো কিছু সময়ের জন্য। অদ্রির চোখ দুটো অসম্ভব রকমের লাল হয়ে আছে। ঠিক প্রথমদিন যেভাবে দেখেছিলো।
অদ্রির সামনে বসে এক লোকমা ভাত মুখের কাছে নিতেই অদ্রি ক্ষুদার্তের মতো পুরোটা নিয়ে নিলো। খুব দ্রুত খেতে গিয়ে বারবার গলায় আটকে যাচ্ছিলো।
রীতা পানি এগিয়ে দিলেন। এক ঢোকে পুরো এক গ্লাস পানি পান করলো অদ্রি।
এমন ভাবে অদ্রি খাচ্ছিলো যেন এক যুগ হয়ে গেছে সে এতোটা তৃপ্তি নিয়ে খেতে পারেনি।
খাওয়া শেষ হবার পর নিদ্র অদ্রির মুখ মুছিয়া দিলো। পায়ের শিকল খুলে দিতে গেলে অদ্রি নিষেধ করলো।
– খুলবেন না। আমি আপনার থেকে দূরে যেতে চাইনা। আমাকে বেঁধে রাখবেন।
নিদ্র অদ্রিকে জড়িয়ে ধরলো। ঘাড়ে, বুকে গভীর চুমু দিয়ে বললো
– আমি আপনাকে দূরে যেতে দিবোনা।
অদ্রি কোনো শব্দই করলো না। চুপচাপ নিদ্রের বুকে মুখ লুকিয়ে পড়ে রইলো।
চলবে……
” লেখিকা মারিয়া কবির এর সকল লেখা দ্রুত পেতে অবশ্যই এ্যাড হোন তার ফেসবুক পেইজ ‘Maria Kabir -মারিয়া কবির’(এখানে পেইজ লিংক) এর সাথে।
২০২০ বই মেলায় প্রকাশ পেতে যাচ্ছে মারিয়া কবির এর প্রথম উপন্যাস ‘যেখানে সীমান্ত তোমার আমার’।
মারিয়া কবির এর নতুন সব গল্প উপন্যাস পেতে আমাদের।সাথেই থাকুন।
ধন্যবাদ।
© Maria Kabir