মন চায় তোকে পর্ব-৭+৮

0
2502

#মন_চায়_তোকে
#পার্ট_৭
#নিশাত_জাহান_নিশি

—-“আমি খুব খারাপ তাই না? কারণে, অকারণে আপনাকে কষ্ট দেই!”

অন্তর মলিন হেসে বলল,,,,,

—-“প্রথম দিনের ব্যাপারটা এক্টু খারাপ লেগেছিলো তবে সত্যিটা জানার পর থেকে তোমার হাজার পাগলামী ও আমার খারাপ লাগবে না। উল্টে ভালো লাগবে। তোমার করা প্রত্যেকটা টর্চার আমাকে বেশ আনন্দ দিচ্ছে।”

মল্লিকা বেকু্ব হয়ে অন্তরের দিকে তাকিয়ে আছে। অন্তরের কথার আগা মাথা সে কিছুই বুঝছে না। মল্লিকা বেশ কৌতুহল নিয়ে অন্তরের দিকে তাকিয়ে বলল,,,,,,,

—-“কোন সত্যির কথা বলছেন আপনি?”

অন্তর থতমত খেয়ে গলা ঝাঁকিয়ে বলল,,,,

—-“আরে কথার কথা বলছি।”

অন্তর আবার কিছুটা বাঁকা হেসে মল্লিকার কানে ফিসফিসিয়ে বলল,,,,,,

—-“একচুয়েলি আঙ্কেল ফোন করে বলল তোমার মাথায় নাকি এক্টু প্রবলেম আছে। যাকে বলে হাফ ম্যান্টাল।”

মুহূর্তেই মল্লিকার কৌততুহলী চোখ দুটো রাগে লাল হয়ে গেলো। হুট করে মল্লিকা অন্তরের শার্টের কলার চেঁপে ধরে অন্তরের নাকের সাথে নাক লাগিয়ে চোয়াল শক্ত করে বলল,,,,,,

—-“কি বললেন আপনি? আমি হাফ ম্যান্টাল?”

—-“আরে আরে আমি কখন বললাম? বলেছে তো তোমার আব্বু। আমি জাস্ট এক্টু মাসালা মিক্স করে বলেছি। এতে এতো হাইপার হওয়ার কি আছে? আমার বউ হাফ ম্যান্টাল হলে ও আমার কোনো প্রবলেম নেই। আমি ঠিক মানিয়ে নিবো। এছাড়া পাবনা হসপিটাল তো আছেই। যদি মানাতে না পারি তাহলে হসপিটালে এডমিট করাব। আশা করছি ট্রিটমেন্টের কোনো ত্রুটি হবে না।”

কথা গুলো বলেই অন্তর হু হা করে হাসতে লাগল। অন্তরের হাসি দেখে মল্লিকার রাগটা যেনো আরো তিনগুন বেড়ে গেলো। মল্লিকা দাঁত গিজগিজ করে বলল,,,,

—-“তোকে আমি পিস পিস করে কেটে শেয়াল কুকুরকে খাওয়াবো। চিনিস তুই আমাকে?”

মল্লিকার এমন ভয়ংকর রূপ দেখে অন্তরের কেমন ঘোর লেগে এলো। অন্তর ঘোর লাগা কন্ঠে মল্লিকার চোখের দিকে তাকিয়ে বলল,,,,,

—-“হুম চিনি তো। “তুমি আমার নীলান্জ্ঞনা!”

মল্লিকা কপাল কুঁচকে বলল,,,,,,

—-“কে নীলান্জ্ঞনা?”

—-“কেনো…. তুমি!”

মল্লিকা চোখ লাল করে অন্তরের নাকের কাছে তুড়ি মেরে বলল,,,,,

—-“ও হ্যালো মিস্টার আমার নাম নীলান্জ্ঞনা না। আমার নাম মল্লিকা।”

—-“ঐ একই হলো।”

—-“ধ্যাত আপনার সাথে কথা বলাই বেকার। নিজেই একজন ফুল ম্যান্টাল। আবার আমাকে বলতে আসে আমি নাকি হাফ ম্যান্টাল।”

কথা গুলো বলেই মল্লিকা অন্তরের শার্টের কলার ছেড়ে ডেস্কের প্রথম ড্রয়ারটা খুলে ফাস্টএইড বক্সটা নিয়ে অন্তরের মুখোমুখি দাঁড়ালো। অন্তর মল্লিকার চোখের দিকে তাকিয়ে মনে মনে বিড়বিড় করে বলছে,,,,,,

—-“তুমিই আমার সেই নীলান্জ্ঞনা। যাকে আমার মন চায়। যার নীলাভ চোখ দেখে আমি প্রথম প্রেমের পরশ পেয়েছি। একদিন মন খুলে আমার সব মনের কথা তোমাকে বলব। ঐদিন তোমার মনে ও থাকবে আমার জন্য অফুরন্ত ভালোবাসা। ভালোবাসি নীলান্জ্ঞনা। খুব খুব খুব ভালোবাসি।”

অন্তরের অদ্ভুত চাহনী দেখে মল্লিকা কিছুটা অস্বস্তিবোধ করে গলা ঝাঁকিয়ে অন্তরকে উদ্দেশ্য করে বলল,,,,,

—-“এভাবে ড্যাব ড্যাব করে কি দেখছেন হুম? তাড়াতাড়ি বেডে গিয়ে বসুন। কাটা জায়গায় ব্যান্ডেজ করে দিচ্ছি।”

অন্তর মুখে হাত দিয়ে চোখ দুটো বড় বড় করে অবিশ্বাস্য দৃষ্টিতে মল্লিকার দিকে তাকিয়ে বলল,,,,,,

—-“ওহ্ মাই গড। এসব কি শুনছি আমি! তুমি সত্যি সত্যি আমার হাতে ব্যান্ডেজ করে দিবে?”

—-“এতে এতো অবাক হওয়ার কি আছে? আজব! আমার কারনেই তো আপনাকে চোট পেতে হলো। তাই আমিই আপনার সেবা করব।”

অন্তর এক ভ্রু উঁচু করে বাঁকা হেসে বলল,,,,,

—-“সত্যিই কি চাপে পড়ে তুমি আমার সেবা করবে? নাকি তুমি আমার উপর ক্রাশিত?”

মল্লিকা তেজী কন্ঠে অন্তরের দিকে তাকিয়ে বলল,,,,,,

—-“বয়ে গেছে আপনার উপর ক্রাশ খেতে আমার। আমি যার তার উপর ক্রাশ খাই না। এক্টু মনুষ্যত্ববোধ থেকে সেবা করতে গেলে যে এতো কটু কথা শুনতে হবে আমার সত্যি জানা ছিলো না।”

কথাগুলো বলেই মল্লিকা রাগ দেখিয়ে অন্তরকে ক্রস করে যেই না সামনের দিকে পা বাড়াতে যাবে অমনি অন্তর মল্লিকার হাত ধরে নম্র স্বরে বলল,,,,,,

—-“মজা করেছি। প্লিজ এতো হাইপার হয়ো না। ব্যান্ডেজটা করে দাও। আমার হাতটা খুব জ্বালা করছে।”

মল্লিকা শান্ত কন্ঠে বলল,,,,,

—-“তাড়াতাড়ি বেডে এসে বসুন।”

অন্তর লক্ষী ছেলের মতো বেডের উপর বসে গেলো। মল্লিকা হনহনিয়ে অন্তরের পাশে বসে অন্তরের শার্টের হাতাটা উপরে তুলে কাটা জায়গাটা স্যাভলন দিয়ে ওয়াশ করে ব্যান্ডেজ লাগিয়ে দিলো। মল্লিকার কেয়ারিং অন্তরের মনকে আরো বেশি মল্লিকার দিকে টানছে। ওভারঅল মল্লিকা ওর কাছে পার্ফেক্ট।

মল্লিকা ওর কাজ সেরে ফাস্টএইড বক্সটা ডেস্কের ড্রয়ারে রেখে অন্তরের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে বলল,,,,,

—-“আপনি বেডে শুয়ে পড়ুন। আমি সোফায় শুবো।”

অন্তর কপালে বিরক্তির রেখা ফুটিয়ে মল্লিকার মুখোমুখি দাঁড়িয়ে বলল,,,,,,

—–“এতো বড় এক্টা বেড রেখে তুমি সোফায় শোতে যাবে কেনো?”

—-“আমি আপনার সাথে এক বেডে শুতে পারব না তাই!”

—-“কেনো ভয় পাচ্ছ আমাকে? আমি তোমার থেকে স্বামীর অধিকার চাইব বলে।”

—-“হুম ঠিক ধরেছেন!”

—-“তুমি নিশ্চিন্তে থাকতে পারো মল্লিকা। তোমার অনুমতি ছাড়া আমি তোমার গাঁয়ে টাচ করব না। অন্তত একবার হলে ও আমাকে বিশ্বাস করে দেখতে পারো।”

মল্লিকা কিছুটা ভেবে বলল,,,,,

—-“উহহহ…. আপনাকে আমি বিশ্বাস করতে পারি। তবে এক্টা শর্তে!”

—-“কি শর্ত?”

—-“আমাদের মাঝখানে এক্টা কোল বালিশ থাকবে। আপনি দয়া করে সীমানা পাড় করে আমার গাঁয়ের উপর পড়বেন না।”

অন্তর মলিন হেসে বলল,,,,,,

—-“তুমি যা বলবে তাই হবে।”

মল্লিকা অন্তরের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে অন্তরের নাকের কাছে তুড়ি মেরে বলল,,,,,

—-“আপনি কখনো আমার গাঁয়ে টাচ করার অনুমতি পাবেন না বুঝেছেন?”

অন্তর বাঁকা হেসে মল্লিকার তুড়ি দেওয়া আঙ্গুলটা চেঁপে ধরে বলল,,,,,,

—-“সময় সব বলে দিবে। আপাতত না হয় সঠিক সময়টার প্রতীক্ষায় থাকব।”

কথাটা বলেই অন্তর মল্লিকার হাতটা ছেড়ে বেডের এক কোণায় শুয়ে পড়ল। মল্লিকা মুখটা বাঁকা করে বুকের উপর দুইহাত গুজে অন্তরের কথা গুলো ব্যঙ্গ করে মিনমিনিয়ে বলল,,,,,

—-“সময় সব বলে দিবে। আপাতত না হয় সঠিক সময়ের প্রতীক্ষায় থাকব।”

মল্লিকা এবার কিছুটা সিরিয়াস হয়ে বলল,,,,,,

—-“তোর সঠিক সময় জিন্দেগিতে ও আসবে না বুঝলি? মল্লিকা আর কখনো কাউকে ভালোবাসবে না। ভালোবাসলেই ঠকতে হয়। যেমনটা নীল আমাকে ঠকিয়েছে।”

কথাগুলো বলেই মল্লিকা বেডের উপর ধপ করে বসে মাঝখানে বড় এক্টা কোল বালিশ রেখে অন্যপাশ ফিরে শুয়ে পড়ল। অন্তর আর মল্লিকা দুজনই বিপরীত পাশ ফিরে শুয়ে আছে। এক জনের মনে প্রবল ভালোবাসা কাজ করছে। আর অন্যজনের মনে প্রবল জড়তা কাজ করছে। দুজনই দুটো আলাদা জগতে আছে। প্রায় কিছুক্ষন পর দুজনই চোখ বুজে ঘুমের রাজ্যে পাড়ি দিলো।

পরের দিন,,,,,,

সকাল আটটা। সকালের মুঠো ভরা রোদের আলো জানালার কাঁচ ভেদ করে মল্লিকার পুরো শরীরে তিক্তকা ছড়িয়ে দিচ্ছে। সকালের রোদটা খুবই তেজী। কাঁচা ঘুম ভাঙ্গিয়ে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট। চোখে রোদের ঝলক পড়লেই নাক, মুখ কেমন কুচকে আসে। তখন হাজার চাইলে ও চোখ বুজে রাখা যায় না। উল্টে মাথা ধরে আসে। মল্লিকার রিসেন্ট অবস্থাটা ও ঠিক এরকম। সূর্য্যের তেজী ঝলকে চোখ, মুখ কুচকে রেখেছে সে। আর কিছুতেই চোখ বুজে রাখা যাবে না। নাছোড়বান্দা সূর্য কিছুতেই তার তেজ কমাবে না। দিন বাড়ার সাথে সাথে তেজী ভাবটা আরো দ্বিগুন বাড়িয়ে তুলবে।

এর মাঝেই কারো গলা ঝাঁকানোর শব্দ মল্লিকার কানে বাজতে লাগল। মল্লিকা এবার ফট করে চোখ জোড়া খুলে ফেলল। পিটপিট চোখে মল্লিকা অন্তরের দিকে তাকিয়ে আছে। সদ্য গোসল করেছে অন্তর। সিল্কি চুল গুলো থেকে টপটপ করে পানি পড়ছে। ঠোঁটে অন্তরের বাঁকা হাসি। পড়নে কেবল মোটা এক সাইজ গেন্জ্ঞী। গলায় টাওয়াল ঝুলানো। হাতে ধোঁয়া উঠা দুই মগ কফি। এক মগ কফি অন্তর মল্লিকার দিকে এগিয়ে রেখেছে। মল্লিকা খুব মুগ্ধ দৃষ্টিতে অন্তরের দিকে তাকিয়ে আছে। এই রূপে অন্তরকে অসম্ভব ড্যাশিং লাগছে। যেকোন মেয়ে অন্তরকে এই রূপে দেখলে কাত হয়ে যাবে। মল্লিকার মৌণতা দেখে অন্তর গলা ঝাঁকিয়ে মল্লিকার চোখের দিকে তাকিয়ে বলল,,,,,,

—-“তো মিসেস নীলান্জ্ঞনা। এবার কি আপনার বিছানা ছেড়ে উঠা হবে? ধোঁয়া উঠা হট কফি আপনার জন্য অপেক্ষা করছে। আমি নিজ হাতে বানিয়েছি। একবার এর টেস্ট পেলে বার বার খেতে মন চাইবে। তখন হয়তো রোজ সকালে আমার কানের কাছে ঘ্যান ঘ্যান করে বলবে,,,,,,

—-“প্লিজ অন্তর তোমার হাতের স্পেশাল এক মগ কফি বানিয়ে দাও না। তোমার হাতের বানানো কফির টেস্ট ই আলাদা।”

তখন অবশ্য আমি নাকোচ করব না। উল্টে হাসি মুখে তোমার সব আবদার মেনে নিবো।

মল্লিকা বড় এক্টা হাই তুলে শোয়া থেকে বসে অন্তরের হাত থেকে কফির মগটা নিয়ে অন্তরের দিকে তাকিয়ে বলল,,,,,,

—-“আমি ও খুব ভালো কফি বানাতে পারি বুঝেছেন? আমার হাতের কফি ও খুব স্পেশাল। আগে তো আমি রোজ সকালে উঠে আব্বুর জন্য গরম গরম কফি বানাতাম। আব্বু কফিতে চুমুক দিতো আর আমার গুনোগান করত।”

অন্তর কফির মগটা নিয়ে মল্লিকার পাশে বসে কফিতে চুমুক দিচ্ছে আর বলছে,,,,,,

—-“ওহ্ তাই বুঝি? তাহলে কাল থেকে প্রতিদিন সকালে তুমি আমার জন্য গরম গরম কফি করে আনবে কেমন? তোমার হাতের স্পেশাল কফি খেয়ে ঘুমের রেশ কাটাবো।”

মল্লিকা কফিতে চুমুক দিতে যেয়ে ও থেমে গেলো। পর পর কয়েকটা শুকনো ঢোক গিলে মল্লিকা বিড়বিড় করে বলল,,,,,,,

—-“ইসসসস কি দরকার ছিলো আগ বাড়িয়ে মিথ্যে বলার? গেলাম তো ফেঁসে এবার। আমি তো কফির “ক” ও জানি না। তো বানাবো কি করে শুনি? ধ্যাত ভাল্লাগে না। সবসময় চালাকী করতে গিয়ে নিজেই ধরা খেয়ে যাই। লোকটা যখন দেখবে আমি কফি বানাতে পারি না, তখন নিশ্চয়ই আমার খিল্লি উড়াবে।”

মল্লিকা কিছু এক্টা ভেবে চিন্তে বাঁকা হেসে আবার বিড়বিড় করে বলল,,,,,,,

—-“ধ্যাত মল্লিকা এতো ভয় পাচ্ছিস কেনো? ইউটিউব আছে না? ইউটিউব দেখে ঠিক শিখে নেবো কফি বানানোর ইউনিক টেকনিক।”

অন্তর ঠিক বুঝতে পারছে মল্লিকা মনে মনে শয়তানী বুদ্ধি কষছে। অন্তর এ ও জানে মল্লিকা কফি বানাতে জানে না। অন্তর মল্লিকার আম্মুর থেকে মল্লিকা সম্পর্কে A-Z জেনে নিয়েছে। অন্তর গলা ঝাঁকিয়ে মল্লিকাকে উদ্দেশ্য করে বলল,,,,,

—-“কি ভাবছ নীলান্জ্ঞনা? তাড়াতাড়ি কফিটা শেষ করো। ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে।”

মল্লিকা মাথা নাঁড়িয়ে পর পর কফিতে কয়েকটা চুমুক দিয়ে পুরো কফির মগটা ভ্যানিশ করে ফেলল। আপাতত মল্লিকার মাথায় এক্টা জিনিস ঘুরপাক খাচ্ছে। এই নীলান্জ্ঞনা টা কে? মল্লিকা অন্তরের দিকে আড়চোখে তাকিয়ে বিড়বিড় করে বলছে,,,,,,

—-“নীলান্জ্ঞনা মেয়েটা নিশ্চয়ই এই কিউট ছেলেটার এক্স গার্লফ্রেন্ড হবে। মেয়েটা হয়তো আমার মতো দেখতে ছিলো। তাই এই কিউট ছেলেটা আমাকে বার বার নীলান্জ্ঞনা নামে ডাকছে। কি কপাল আমার, নিজের জামাইয়ের মুখে অন্য এক্টা ধ্বংস মেয়ের নাম শুনতে হচ্ছে।”

অন্তর কফিতে চুমুক দিচ্ছে আর মল্লিকাকে দেখছে। এর মাঝেই দরজায় খটখট শব্দ হলো। অন্তর বসা থেকে উঠে দরজাটা খুলে দিলো। মল্লিকা কফির মগটা ডেস্কের উপর রেখে শোয়া থেকে উঠে গেলো। দরজায় অনন্যা আর নুসাইবা দাঁত কেলিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। অন্তর মুচকি হেসে দুজনকে রুমে আসতে বলল। দরজা ছেড়ে অন্তর কাবার্ড থেকে এক্টা টি শার্ট বের করে গাঁয়ে জড়িয়ে নিলো। অনন্যা আর নুসাইবা রুমে ঢুকে মুচকি হেসে মল্লিকাকে জড়িয়ে ধরল।নুসাইবা শয়তানী হাসি দিয়ে মল্লিকার কানে ফিসফিসিয়ে বলল,,,,,,,

—-“ঘুম কেমন হয়েছে ছোট জা?”

মল্লিকা ও ফিসফিসিয়ে বলল,,,,,

—-“খুব ভালো হয়েছে। তবে বেশিক্ষন ঘুমাতে পারি নি।”

—-“নিশ্চয়ই অন্তর ঘুমাতে দেয় নি?”

—-“এই না না…সূর্য্যের আলো চোখে মুখে পড়াতে সকালের মজার ঘুমটা ভেঙ্গে গেছে।”

—-“বুঝি বুঝি সবই বুঝি। সব আমাদের বিভ্রান্ত করার ধান্দা।”

মল্লিকা মুখ খুলে কিছু বলতে যাবে এর আগেই অনন্যা মুখ ফুলিয়ে বলে উঠল,,,,,

—-“এই তোমরা দুজন মিলে কি ফুসুর ফুসুর করছে। আমাকে ও তো এক্টু বলো।”

নুসাইবা অনন্যার গাল টেনে বলল,,,,,,,

—-“তুমি এসব বুঝবে না ননদিনী। এসব আমাদের জা দের পার্সোনাল কথা। তোমার যখন বিয়ে হবে তখন তোমার সাথে ও আমরা এভাবে ফুসুর ফুসুর করব। কেমন?”

অনন্যা আগা মাথা কিছু না বুঝে বেকুব হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। নুসাইবার কথা শুনে অন্তর বেশ বুঝতে পেরেছে ওদের মধ্যে কি নিয়ে চর্চা হচ্ছে। মল্লিকা অন্তরের দিকে লজ্জামাখা দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। অন্তর মাথা চুলকাতে চুলকাতে মল্লিকাকে চোখ মেরে সোজা রুম থেকে বের হয়ে সাহেদের রুমে চলে গেলো।

অন্তরের কান্ড দেখে মল্লিকা বেশ লজ্জায় পড়ে গেছে। অনন্যা মল্লিকার মুখটা উঁচু করে মুচকি হেসে বলল,,,,,

—-“ভাবী চলো ব্রেকফাস্ট করবে। এক্টু পরেই পাড়া প্রতিবেশী, রিলেটিভসরা আসা শুরু করবে। সবাই তোমাকে দেখার জন্য হুমড়ী খেয়ে পড়বে। এরপর আবার পার্লার থেকে লোক আসবে তোমাকে সাজাতে। রিসিপশান বলে কথা।”

মল্লিকা মাথা নাঁড়িয়ে হ্যাঁ বুঝালো। নুসাইবা আর অনন্যা দেরি না করে মল্লিকার হাত ধরে সোজা নিচে নেমে গেলো। মল্লিকাদের পিছু পিছু অন্তর আর সাহেদ ও হাঁটছে। অন্তর পিছন থেকে মল্লিকাকে বেশ খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছে। হুট করে অন্তরের নজর গেলো মল্লিকার পিঠের কুচকুচে কালো তিলটার দিকে। মল্লিকার শাড়ীর আঁচলটা খানিক সরে গেছে, তাই তিলটা স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। অন্তরের কাছে ব্যাপারটা বেশ অস্বস্তিকর মনে হচ্ছে। তাই সে দৌঁড়ে গিয়ে মল্লিকার পিছনে দাঁড়ালো। অন্তরের পিছু নেওয়াটা মল্লিকার বেশ বিরক্তি লাগছে। মল্লিকা কাঁধটা বেঁকিয়ে অন্তরকে উদ্দেশ্য করে ফিসফিসিয়ে বলল,,,,,,

—-“কি হচ্ছে কি? এভাবে পিছু নিয়েছেন কেনো?”

#চলবে,,,,,,,,,

#মন_চায়_তোকে
#পার্ট_৮
#নিশাত_জাহান_নিশি

—-“কি হচ্ছে কি? এভাবে পিছু নিয়েছেন কেনো?”

—“শাড়ীর আঁচলটা ঠিক করো।”

—-“কেনো কি হয়েছে শাড়ীর আঁচলে?”

—-“পিঠের তিলটা দেখা যাচ্ছে।”

মল্লিকা তাড়াতাড়ি করে শাড়ীর আঁচলটা পিঠে টেনে নিলো। অন্তর ও তৎক্ষনাত মল্লিকার পেছন থেকে সরে দাঁড়ালো। শাড়ির আঁচলটা ঠিক করে মল্লিকা পিছু ফিরে অন্তরকে দেখতে পেলো না। মল্লিকা পুরো ড্রইং রুমে চোখ বুলিয়ে অন্তরকে খুঁজছে। বাট অন্তরের ছায়াটা ও কোথাও দেখা যাচ্ছে না। আচমকাই অনন্যা টেনে এনে মল্লিকাকে ডাইনিং টেবিলে বসিয়ে দিলো। মল্লিকা চেয়ারে বসে মাথাটা নিচু করে বিড়বিড় করে বলছে,,,,,,

—-“লোকটা আসলেই খুব ভালো। আমার সব দিকেই খেয়াল রাখে। শুধু শুধু লোকটার সাথে আমি ঝগড়া করি। লোকটাকে একবার থ্যাংকস বলা দরকার। কিন্তু খুঁজেই তো পাচ্ছি না লোকটাকে। কোথায় উবে গেলো আল্লাহ্ মালুম।”

এর মাঝেই অন্তর এসে মল্লিকার পাশের চেয়ারটা টেনে বসে পড়ল। মল্লিকা অন্তরকে দেখা মাএ অন্তরের কানে ফিসফিসিয়ে বলল,,,,,

—-“কোথায় ছিলেন আপনি?”

অন্তর বাঁকা হেসে বলল,,,,,

—-“কেনো মিস করছিলে বুঝি? এখন থেকেই আমাকে চোখে চোখে হারাচ্ছ?”

—-“ধ্যাত বয়ে গেছে আমার আপনাকে মিস করতে। জাস্ট শুকনো এক্টা থ্যাংকস দেওয়ার জন্য আপনাকে খুঁজছিলাম।”

—-“শুকনো থ্যাংকস তো আমি নিবো না মিসেস নীলান্জ্ঞনা।”

—-“তাহলে?”

—-“আমি তো অন্য কিছু চাই। অবশ্য তুমি চাইলেই পারবে।”

—-“কি শুনি?”

অন্তর বাঁকা হেসে বলল,,,,,

—-“থ্যাংকস এর বদলে এক্টা চুমোই এনাফ।”

মল্লিকা চোখ লাল করে অন্তরের দিকে তাকিয়ে আছে। অন্তর পর পর কয়েকটা শুকনো ঢোক গিলে বলল,,,,,

—-“এতো রাগ করার কি আছে? আমি তো জাস্ট মজা করছিলাম।”

কথাগুলো বলেই অন্তর পাউরুটির পিস মুখে পুড়ে নিলো। অন্তরের অবস্থা দেখে মল্লিকা হেসে কুটিকুটি। আপাতত হাসিটাকে সাইডে রেখে মল্লিকা ব্রেকফাস্টে মনযোগ দিলো। প্রায় পনেরো মিনিট পর ব্রেকফাস্ট সেরে সবাই নিজেদের কাজে চলে গেলো। মল্লিকাকে নিয়ে অনন্যা আর নুসাইবা উপরে উঠে গেলো। অন্তর চলে গেলো বাইরের কাজ সামলাতে।

এর মাঝেই দলে দলে রিলেটিভসরা আসা শুরু করল। সবাই মল্লিকাকে এক এক করে দেখছে। আর মল্লিকার প্রশংসা করছে। অনন্যা কল করে পার্লারের মহিলাদের বাড়ি আসতে বলে দিলো। অনন্যা বেশ হাসি মুখে মল্লিকার পাশে বসে কিছুটা লজ্জা পেয়ে বলল,,,,,,

—-“ভাবী জানো আমার এক্টা ছেলে ফ্রেন্ড আছে। আমি আজ ওকে ইনভাইট করেছি রিসিপশানে আসতে।”

মল্লিকা অনন্যার গাল টেনে বলল,,,,,

—-“বাঃহ্। খুব ভালো করেছ।”

অনন্যা মাথাটা নিচু করে হাত দুটো কচলাতে কচলাতে বলল,,,,,

—-“একচুয়েলি ভাবী সে শুধু আমার ফ্রেন্ড না। আমার বয়ফ্রেন্ড।”

মল্লিকা চোখ দুটো বড় বড় করে বলল,,,,,,

—-“এ্যা।”

অনন্যা কিছুটা কাতর হয়ে মল্লিকার হাত ধরে বলল,,,,,

—-“এ্যা না হ্যা। বাড়ির কেউ এই ব্যাপারে কিছু জানে না। প্লিজ ভাবি, তুমি কাউকে কিছু বলো না। এমনকি ভাইয়াকে ও না।”

মল্লিকা অনন্যার হাতে হাত রেখে বলল,,,

—-“ওকে ননদিনী। বলব না। তুমি নিশ্চিন্তে থাকো।”

মুহূর্তেই অনন্যা মল্লিকাকে জড়িয়ে ধরে বলল,,,,,

—-“থ্যাংক ইউ ভাবী। তুমি না অনেক অনেক অনেক ভালো।”

এর মাঝেই নুসাইবা এসে মল্লিকার পাশে বসে মল্লিকাকে উদ্দেশ্য করে বলল,,,,,

—-“মল্লিকা তুমি শাওয়ার নিয়ে নাও। পার্লারের মেয়েরা এলো বলে।”

মল্লিকা মাথা নেড়ে সম্মতি জানিয়ে কাবার্ড থেকে এক্টা শাড়ী নিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকে গেলো। প্রায় এিশ মিনিট পর শাওয়ার নিয়ে মল্লিকা রুমে ঢুকল। এর মাঝেই পার্লারের মেয়েরা এসে হাজির হয়ে গেলো। মিসেস অরুনীমা রুমে ঢুকে মল্লিকার জন্য এক্টা নীল রং এর লেহেঙ্গা আর মেচিং করা অরনামেন্টস দিয়ে গেলো। অনন্যা আর নুসাইবা রুম থেকে বের হয়ে নিজেদের রুমে চলে গেলো শাওয়ার নিতে। কজ মল্লিকার সাজ গোজের পরেই ওদের টার্ণ।

বেডের উপর রাখা লেহেঙ্গাটা নিয়ে মল্লিকা ওয়াশরুমে চলে গেলো। প্রায় দশ মিনিট পর লেহেঙ্গাটা গায়ে জড়িয়ে মল্লিকা রুমে ঢুকল। পার্লারের মেয়েরা মল্লিকাকে ড্রেসিং টেবিলের সামনে বসিয়ে দিলো। আস্তে আস্তে ওরা মল্লিকাকে সাজাতে শুরু করল। ঐ দিকে অন্তর বেশ ব্যস্ত অতিথী অ্যাপায়নে। অফিসের অনেক ক্লাইন্ড এসেছে তাদের সাথে আলাপচারীতায় মগ্ন হয়ে আছে সারফারাজ চৌধুরী আর অন্তর।

প্রায় আড়াই ঘন্টা পর,,,,,,

দুপুর সাড়ে বারোটা। মল্লিকার সাজ অলরেডি শেষ। এবার শুধু মাথায় ঘোমটা দেওয়া বাকি। পার্লারের মেয়ে গুলো মল্লিকার দিকে হা করে তাকিয়ে আছে। নীল রঙ্গের লেহেঙ্গাতে মল্লিকার সৌন্দর্য্য উপচে পড়ছে। মাথায় বড় ঘোমটা টেনে পার্লারের মেয়ে গুলো মল্লিকাকে বেডের উপর বসিয়ে দিলো। অনন্যা আর নুসাইবা পার্লারের মেয়ে গুলোকে টেনে টুনে ওদের রুমে নিয়ে গেলো। ওরা ওদের নিজেদের রুমে সাজবে।

মল্লিকা বেডের উপর বসে মুখটা ভাড় করে রেখেছে। নীলের কথা খুব মনে পড়ছে ওর। নীলের বিশ্বাসঘাতকতা মল্লিকার মনকে নাড়িয়ে দিচ্ছে। হুট করে কারো হাতের স্পর্শ পেয়ে মল্লিকা খানিক চমকে উঠল। পিছু ফিরে মল্লিকা ওর বড় বোন মল্লরকে দেখে মুচকি হেসে মল্লরকে জড়িয়ে ধরল। মল্লর খিলখিল করে হেসে মল্লিকাকে ঝাপটে ধরে বলল,,,,,

—-“কেমন আছিস মল্লিকা?”

—-“ভালো আছি আপু। তুমি কেমন আছো? মুসকান কোথায়?”

—-“আমি ও ভালো আছি। মুসকান ওর বাবার কোলে।”

—-“আম্মু, আব্বু এসেছে?”

—-“হু সবাই এসেছে। ওরা নিচে স্টেইজে তোর জন্য ওয়েট করছে।”

—-“তাহলে চলো নিচে যাই।”

—-“তুমি তোমার বরের সাথে নিচে যাবে বুঝলে? অন্তর রুমে আসছে। আমি যাই।”

কথাগুলো বলেই মল্লর হাসতে হাসতে রুম থেকে বের হয়ে গেলো। মল্লিকা মুখটা ভাড় করে বসে আছে। প্রায় পাঁচ মিনিট পর অন্তর রুমের দরজা ঠেলে রুমে ঢুকে পড়ল। মল্লিকা বেশ বুঝতে পেরেছে অন্তর রুমে ঢুকেছে। তাই সে মাথার ঘোমটা টা আরো বড় করে টেনে দিলো। অন্তর রুমে ঢুকে বাঁকা হেসে মল্লিকার মুখোমুখি ধপ করে বিছানায় বসে পড়ল। মল্লিকা জড়সড় হয়ে মাথাটা নিচু করে রেখেছে। অন্তর মল্লিকার দিকে কিছুটা ঝুঁকে শান্ত কন্ঠে বলল,,,,,,

—-“ঘোমটা টেনে নিজের চাঁদ মুখটা হাজার আড়াল করে রাখলে ও আমার মন থেকে তোমার চাঁদ মুখটা আড়াল করতে পারবে না। আমি ঠিক মনের চোখ দিয়ে তোমাকে দেখে নিয়েছি।”

মল্লিকা ঘোমটার নিচ থেকে চোখ তুলে অন্তরের দিকে তাকালো। অন্তর ঘোর লাগা দৃষ্টিতে মল্লিকার দিকে তাকিয়ে আছে। অন্তরের তেজী দৃষ্টিতে দৃষ্টি রাখার ক্ষমতা নেই মল্লিকার। তাই সে চোখ জোড়া নামিয়ে নিলো। অন্তর মলিন হেসে বসা থেকে উঠে কাবার্ড থেকে নীল শেরোয়ানীটা বের করে ওয়াশরুমে ঢুকে গেলো। প্রায় দশ মিনিট পর অন্তর শেরোয়ারী গায়ে জড়িয়ে ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়ালো। অন্তর বেশ মনযোগ দিয়ে শেরোয়ানীর বোতম গুলো এক এক করে লাগাচ্ছে। মল্লিকা আড়চোখে আয়না দিয়ে অন্তরকে দেখছে। নীল শেরোয়ানীতে অন্তরকে অনেক বেশি মানিয়েছে। মল্লিকার চোখ আটকে গেছে অন্তরের দিকে। শেরোয়ানীর বোতম গুলো লাগিয়ে অন্তর ওর সিল্কি গুলো স্পাইক করে নিলো, হাতে এক্টা ব্ল্যাক ওয়াচ ঝুলিয়ে অন্তর মল্লিকার দিকে অগ্রসর হচ্ছে আর বলছে,,,,,

—-“আ’ম রেডি। চলো মল্লিকা।”

মল্লিকা বেড থেকে নেমে দাঁড়ানোর সাথে সাথেই অন্তর ছুটে এসে মল্লিকাকে কোলে তুলে নিলো। মল্লিকা বেকুব হয়ে অন্তরের দিকে তাকিয়ে আছে। অন্তর মুগ্ধ নয়নে মল্লিকার দিকে তাকিয়ে আছে। অনেকক্ষন এভাবে তাকিয়ে থাকার পর অন্তর মল্লিকার নাকের সাথে নাক ঘঁষে বলল,,,,,,

—–“আমি আমার বউকে আজ কোলে নিয়ে স্ট্যাইজে যাবো। এক কদম পা ও মাটিতে ফেলতে দেবো না।”

মল্লিকা চোখ দুটো বড় বড় করে চরম আশ্চর্যিত হয়ে বলল,,,,,

—-“মাথা ঠিক আছে আপনার? কি যা তা বলছেন? লাজ লজ্জা নেই নাকি?”

—-“না নেই। আমার কোনো লাজ লজ্জা নেই। আমার যা ভালো মনে হবে আমি তাই করব। ওকে?”

কথাগুলো বলেই অন্তর মল্লিকাকে কোলে নিয়ে রুম থেকে বের হয়ে গেলো। বাড়ি ভর্তি মানুষ অন্তর আর মল্লিকার দিকে তাকিয়ে আছে। মল্লিকা লজ্জায় মুর্ছা যাচ্ছে। তবে মল্লিকার মনে কোথাও না কোথাও এক্টা ভালো লাগা কাজ করছে। অন্তরের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র পাগলামী গুলো মল্লিকার মনে অনেকটা দাগ কাটছে। সব মেয়েরাই হয়তো তাদের স্বামীর থেকে এতোটা পাগলামী ই আশা করে। মল্লিকার পরিবার প্লাস অন্তরের পরিবার বেশ খুশি ওদের এভাবে দেখে। অন্তর হাঁটতে হাঁটতে সোজা স্ট্যাইজে চলে গেলো। স্ট্যাইজের পাতানো এক্টা সোফায় অন্তর মল্লিকাকে আস্তে করে বসিয়ে দিলো। একে একে সব রিলেটিভস, পাড়া প্রতিবেশীরা মল্লিকাকে দেখছে আর তারিফ করছে। অনেকে আবার মল্লিকার হাতে ফুল থেকে শুরু করে বিভিন্ন ধরনের গিফটস গুজে দিচ্ছে। অন্তর মল্লিকার পাশের সোফায় বসে আছে। মল্লরের হাজবেন্ড রাফসান এসে মল্লিকার কোলে মুসকানকে ধরিয়ে দিলো। মুসকানের বয়স মাএ এক বছর। মেয়েটা অসম্ভব পাকা বুড়ী আর সুন্দুরী। মল্লিকাকে পেয়ে মুসকান খিলখিল করে হাসছে। সাথে মল্লিকা ও মুসকানকে আদরে আদরে ভরিয়ে দিচ্ছে আর দাঁত বের করে হাসছে। অন্তর ও মাঝে মাঝে মুসকানকে খুব আদর করছে। এর মাঝেই অনন্যা সেজে গুজে দৌঁড়ে এসে মল্লিকার কানে কানে ফিসফিস করে বলল,,,,,,

—-“ভাবী…আমার বয়ফ্রেন্ড এসেছে। ওকে এখানে ডেকে আনি?”

মল্লিকা ও ফিসফিসিয়ে বলল,,,,,

—-“পাগলী মেয়ে। এটা আবার জিগ্যেস করার কি আছে? তাড়াতাড়ি নিয়ে এসো।”

—-“ওকে ভাবী। এক্ষনি নিয়ে আসছি।”

অনন্যা আর দেরি না করে দৌঁড়ে চলে গেলো স্ট্যাইজের বাইরে। মল্লিকা আবার মুসকানের সাথে খুনসুটিতে লেগে গেলো। অন্তর সোফা থেকে উঠে ওর ফ্রেন্ডদের সাথে আলাপে মশগুল হয়ে গেলো। অন্তরের ফ্রেন্ডসরা নানাভাবে অন্তরের খিল্লি উড়াচ্ছে। অন্তর লাজুক ভঙ্গিত মল্লিকার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসছে।

এর মাঝেই অনন্যা ওর বয়ফ্রেন্ডকে নিয়ে স্ট্যাইজে চলে এলো। মল্লিকা এখনো অনন্যার বয়ফ্রেন্ডকে খেয়াল করে নি। অনন্যার বয়ফ্রেন্ড ও মল্লিকাকে খেয়াল করে নি। অনন্যার সাথে এক্টা অজানা ছেলেকে দেখে অন্তর দৌঁড়ে এসে ওদের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে পড়ল। অন্তর এক ভ্রু উঁচু করে অনন্যার দিকে তাকিয়ে বলল,,,,,

—-“হু ইজ হি অনন্যা?”

অনন্যা কাঠ কাঠ গলায় বলল,,,,,,

—-“আমার কলেজে ফ্রেন্ড ভাইয়া। তোমার বিয়েতে ওকে ইনভাইট করতে পারি নি। ভাবলাম রিসিপশানে ইনভাইট করি। তাই আর কি…..

অনন্যা আর কিছু বলতে পারল না এর আগেই অন্তর মুচকি হেসে অনন্যার দিকে তাকিয়ে বলল,,,,,

—-“ভালো করেছিস। যা ওকে নিয়ে স্ট্যাইজে বসা।”

অনন্যার বয়ফ্রেন্ড মুচকি হেসে অন্তরের দিকে তাকিয়ে আছে। বিনিময়ে অন্তর ও মৃদ্যু হেসে ওর ফ্রেন্ডদের কাছে আবার ফিরে গেলো। অনন্যা এক গাল হেসে ওর বয়ফ্রেন্ডের হাত ধরে সোজা মল্লিকার মুখোমুখি এনে দাঁড় করিয়ে দিলো। মল্লিকা চোখ তুলে উপরে তাকানোর সাথে সাথেই চোখ দু্টো বড় বড় করে ফেলল। অনন্যার বয়ফ্রেন্ড আর কেউ না মল্লিকার এক্স বয়ফ্রেন্ড নীল। নীল মল্লিকাকে দেখা মাএই একনাগাড়ে শুকনো ঢোক গিলতে লাগল। অনন্যা মৃদ্যু হেসে নীলের হাত ধরে মল্লিকাকে উদ্দেশ্য করে বলল,,,,,,

—-“ভাবী….হি ইজ নীল। আমার বয়ফ্রেন্ড।”

কথাটা শোনার সাথে সাথেই মল্লিকার চোখে পানি জমে গেলো। নীল অস্থির দৃষ্টিতে এদিক সেদিক তাকিয়ে মিনমিনিয়ে বলছে,,,,,,,

—-“এই আইটেম টাই কি তাহলে অনন্যার ভাবী। তাহলে কি মল্লিকা আমার কাছে এতোদিন সত্যিটা গোপন করেছে? ইচ্ছে করে আমাকে বিয়ের কথাটা শুনায় নি? ইসসস পুরোপুরি ফেসে গেলাম আজ। এবার তো মনে হচ্ছে দুই দুটো পাখিকে একসাথেই হারাব। ধ্যাত আজকের দিনটাই খারাপ। যে করেই হোক এখান থেকে কেটে পড়তে হবে। না হয় সবটা গন্ডগোল হয়ে যাবে। মল্লিকা যেকোনো মুহূর্তে মুখ খুলে দিতে পারে।”

নীলের মুচড়ামুচড়ি দেখে অনন্যা কিছুটা বিরক্ত হয়ে নীলকে উদ্দেশ্য করে বিড়বিড় করে বলল,,,,,,,

—-“কি হচ্ছে কি নীল? এভাবে নড়াচড়া করছ কেনো? নতুন ভাবী কি ভাববে বলো তো? ভাবীকে ইমপ্রেস করতে হবে তো নাকি? না হলে ভাইয়াকে তোমার ব্যাপারে কে বুঝাবে বলো? ভাবীই তো আমাদের লাস্ট ভরসার জায়গা।”

নীল কিছুই বলছে না। সে কেবল পালানোর ধান্দা করছে। মল্লিকা বেশ বুঝতে পেরেছে নীল অনন্যাকে ও প্রেমের জালে ফাঁসিয়েছে। মল্লিকা সমানে ঘামছে আর বিড়বিড় করে বলছে,,,,,

—-“যে করেই হোক অনন্যাকে সত্যিটা জানাতে হবে। নীলের থেকে অনন্যাকে আলাদা করতে হবে। নীলের আসল মুখোশটা টেনে হেছড়ে অনন্যার সামনে আনতে হবে। না হয় অনন্যার জীবনটা ও নষ্ট হয়ে যাবে।”

নীল এখান থেকে পালানোর জন্য অনন্যার কানে ফিসফিসিয়ে বলল,,,,,,

—-“অনন্যা আমাকে এক্ষনি বাড়ি যেতে হবে। আজ আব্বুর সাথে অফিসের কাজে আমাকে এক জায়গায় যেতে হবে। আজ বরং আসি আমি। অন্য একদিন না হয় ভাবীর সাথে আলাপ করে নেব।”

কথা গুলো বলেই নীল অনন্যার হাত ছেড়ে দৌঁড়ে পালালো। অনন্যা বেকুব হয়ে নীলের যাওয়ার পথে তাকিয়ে আছে। মল্লিকা চোখ লাল করে নীলের যাওয়ার পথে তাকিয়ে বিড়বিড় করে বলছে,,,,,,,

—-“অনন্যার হাতেই তোর খেলা শেষ করব নীল। দরকার হলে অন্তরের সাথে আমি তোর ব্যাপারটা নিয়ে খোলসা করে কথা বলব। তোর চ্যাপ্টার যে করেই হোক ক্লোজ করব।”

#চলবে,,,,,,,

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে