#মন_চায়_তোকে
#পার্ট_৫
#নিশাত_জাহান_নিশি
—-“আমার নীলান্জ্ঞনা!”
মল্লিকা মিসেস হৈমন্তীকে লম্বা করে এক্টা সালাম দিয়ে এক গাল হেসে বলল,,,,,
—-“কেমন আছেন ফুফু আম্মু?”
—-“ভালো আছি মা। তুমি কেমন আছো?”
—-“ভালো আছি ফুফু আম্মু। আপনি না দেখতে খুব সুন্দর। আচ্ছা….ফুফা আসে নি?”
—-“তোমার ফুফা কাল আসবে। অফিসের কাজ নিয়ে খুব ব্যস্ত তো তাই!”
মল্লিকা মলিন হেসে বলল,,,,
—-“ওহ্ আচ্ছা।”
হুট করে নুসাইবা মল্লিকার গাল টেনে বলল,,,,,,
—-“এই যে ম্যাম, আমাকে জিগ্যেস করবেন না আমি কেমন আছি?”
মল্লিকা জিভ কেটে বলল,,,,,
—-“স্যরি গো একদম ভুলে গেছি। কেমন আছো ভাবী?”
—-“বেশ আছি। তুমি কেমন আছো?”
মল্লিকা মলিন হেসে বলল,,,,,,
—-“ভালো আছি।”
এক্টু দূর থেকে অনন্যা জোরে চেঁচিয়ে সবাইকে উদ্দেশ্য করে বলল,,,,,,
—-“উফফফ তোমরা পরে কথা বলো তো। ভীষন ক্ষিদে পেয়েছে আমার। সকাল থেকে এই পর্যন্ত কিছু খাই নি।”
মিসেস অরুনীমা সবাইকে একে একে টেনে টেনে ডাইনিং টেবিলে বসিয়ে দিলো। মিসেস হৈমন্তী চেঁচিয়ে বলে উঠল,,,,,
—-“আরে কি করছ কি অরু। আমরা সবাই লাঞ্চ করে এসেছি তো। এই অবেলায় মুখে কিছু দিতে পারব না।”
মল্লিকা মিসেস হৈমন্তীর হাত চেঁপে ধরে বলল,,,,,,
—-“জ্বি না। আমরা কোনো কথাই শুনব না। তোমাদের সবাইকে আমাদের সাথে খেতে হবে।”
কথাগুলো বলেই মল্লিকা মিসেস হৈমন্তী আর নুসাইবার প্লেইটে খাবার বেড়ে দিলো। অন্তর প্রায় অনেকক্ষন ধরে মল্লিকাকে পরখ করছে। মল্লিকার চঞ্চলতা অন্তরকে খুব টানছে। সাহেদ আর সাহেল অন্তরকে নিয়ে খাবার টেবিলে বসে গেলো। মল্লিকা সবাইকে অল্প অল্প করে খাবার বেড়ে দিচ্ছে। যেহেতু ওরা আগে থেকেই খেয়ে এসেছে।
অন্তরের প্লেইটে খাবার বাড়তে এসে মল্লিকা মাথাটা নিচু করে ফেলল। অন্তরের দিকে একবার ও তাকাচ্ছে না। অন্তর হা করে মল্লিকার দিকে তাকিয়ে আছে। মল্লিকা অন্তরের প্লেইটে খাবার বেড়ে অন্তরের পাশের টেবিলে বসে পড়ল। সবাই এবার খাওয়ায় মনযোগ দিলো। অন্তর খাচ্ছে কম মল্লিকার দিকে তাকাচ্ছে বেশি। মল্লিকা মনযোগ দিয়ে খেয়ে চলছে।
প্রায় পনেরো মিনিট পর সবার খাওয়া শেষ হলো। এর মাঝেই সারফারাজ চৌধুরী হন্তদন্ত হয়ে বাড়ির ড্রইং রুমে চলে এলো। সবাইকে এক সাথে দেখে সারফারাজ চৌধুরীর রাগ উবে গেলো। তবে উনি বার বার তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে অন্তরের দিকে তাকাচ্ছে। সারফারাজ চৌধুরীকে দেখে মিসেস হৈমন্তী, সাহেল, সাহেদ, নুসাইবা বেশ খুশি হয়ে উনার সাথে আলাপচারীতায় মগ্ন হয়ে পড়ল। এর মাঝেই সারফারাজ চৌধুরী সাহেল, সাহেদ আর অন্তরকে উদ্দেশ্য করে বলল,,,,,,
—-“তোমরা বউভাতের এরেন্জ্ঞমেন্ট শুরু করে দাও। কাল আমার কয়েকজন ক্লাইন্ড আসবে। এছাড়া ও পাড়া প্রতিবেশীরা আসবে। সো এখন থেকে তোড় জোড় শুরু করতে হবে। রাতের মধ্যেই পুরো বাড়িটা সাজিয়ে তুলতে হবে। আমি রুম থেকে ফ্রেশ হয়ে আসছি।”
কথাগুলো বলেই সারফারাজ চৌধুরী নিজের রুমে চলে গেলো। নুসাইবা, অনন্যা, মল্লিকা ড্রইং রুমে বসে খোশগল্পে মেতে উঠল। মিসেস অরুনীমা আর মিসেস হৈমন্তী নিজেদের মধ্যকার সাংসারিক আলাপ করছে। সাহেদ অন্তরকে বুঝিয়ে শুনিয়ে একজন ডেকোরেটিং ডিজাইনার কে কল করে বাড়িতে নিয়ে এলো। উনার সাথে আরো চার, পাঁচজন লোক এসেছে। ওরা সবাই মিলে প্যান্ডেলের কাজ সামলাচ্ছে। প্যান্ডেলের কাজ শেষে বাড়ির ভিতরটা সাজানো হবে। এভাবে কাজে কাজেই বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা ঘনিয়ে এলো।
সন্ধ্যা সাতটা,,,,,
মল্লিকা রুমে গিয়ে দরজাটা আটকিয়ে ব্যালকনীর গ্রীল ধরে আকাশপানে তাকিয়ে আছে। পুরো বাড়িতে আলো আর রোশনাই। এতো আলোর ভীড়ে ও মল্লিকা ওর কষ্ট গুলো লুকাতে পারছে না। বার বার মনে নাড়া চাড়া দিয়ে উঠছে। মল্লিকার চোখে নোনাজল চিকচিক করছে। আর এক্টু হলেই হয়তো গড়িয়ে পড়বে। নীলের বিশ্বাসঘাতকতা মল্লিকার মনটাকে পিষিয়ে দিয়েছে। মল্লিকা অঝড়ে কাঁদছে আর বিড়বিড় করে বলছে,,,,,,
—-“অঢেল ভালোবাসার বিনিময়ে আমাকে ঠকতে হলো। অনেকেই আমাকে নীল সম্পর্কে অনেক বাজে কথা বলেছে। অথচ আমি অন্ধের মতো নীলকে বিশ্বাস করে গেছি। এমনকি আমার বেস্ট ফ্রেন্ড রজনীর সাথে ও বাজে ব্যবহার করেছি। যে রজনীকে আমি রিস্ক নিয়ে পিয়াস ভাইয়ার সাথে রেজিস্ট্রি ম্যারেজ করিয়েছি। সেই রজনীকে আমি ভুল বুঝেছি। এমনকি ওর গালে চড় ও মেরেছি। জঘন্য পাপ করেছি আমি। যে করেই হোক রজনীর সাথে দেখা করে আমাকে ওর কাছে ক্ষমা চাইতে হবে। সবকিছু ঠিক করতে হবে। এভাবে হাত গুটিয়ে বসে থাকলে চলবে না। বউভাতের পর দিনই আমাকে বের হতে হবে। দরকার হলে রজনীর সাথে দেখা করতে আমি চট্টগ্রাম যাবো। রজনীর মনে আমার জন্য রাগ পুষিয়ে রাখতে দেবো না। নীলকে ও আমি ছাড়ব না। নীলের জীবনটা আমি নষ্ট করে দেবো। কজ এই পর্যন্ত নীল অনেক মেয়ের জীবন নষ্ট করেছে। আমার জীবনটা ও নষ্ট করে দিতো যদি না আমি নিজের চোখে সত্যিটা না দেখতাম।”
এর মাঝেই দরজায় টোকা পড়ল। মল্লিকা চোখের জল মুছে তাড়াতাড়ি করে দরজাটা খোলে দিলো। দরজা খোলেই মল্লিকা অন্তরকে দেখতে পেলো। অন্তরকে দেখা মাএই মল্লিকা দরজাটা ছেড়ে বেডের উপর মাথা নিচু করে বসে পড়ল। অন্তর মল্লিকার দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল,,,,,,
—-“কাঁদছেন কেনো আপনি? কি হয়েছে?”
মল্লিকা চোখের জল গুলো ভালো করে মুছে বলল,,,,,,,
—-“কিছু হয় নি। ভুল দেখছেন আপনি। আমি কাঁদছি না।”
অন্তর মল্লিকার দিকে তেড়ে এসে বলল,,,,,
—-“একদম মিথ্যে বলবেন না। আমি কিন্তু বেশ বুঝতে পারছি আপনি কান্না করছেন!”
মল্লিকা চুপ হয়ে বসে আছে। কিছু বলছে না। নীরবে চোখের জল ফেলছে। অন্তর কিছুটা পেরেশান হয়ে মল্লিকার পাশে বসল। মল্লিকার চোখে জল দেখে অন্তরের কেমন খারাপ লাগা শুরু করল। হুট করে অন্তর মল্লিকার থুতনী ধরে মল্লিকার মুখটা উপরে তুলে মল্লিকার চোখের জল মুছে দিয়ে বলল,,,,,
—-“কি হয়েছে মল্লিকা? প্লিজ আমাকে বলো?”
মল্লিকা ছলছল চোখে অন্তরের দিকে তাকিয়ে আছে। অন্তর মলিন হেসে মল্লিকার দিকে তাকিয়ে বলল,,,,,
—-“সকালে আমার জন্যই তোমার আম্মুর হাতের চড় খেয়েছ। এর জন্য আ’ম স্যরি মল্লিকা। তুমি হয়তো এর জন্যই কাঁদছ তাই না?”
মল্লিকা চোখের জল ছেড়ে বলল,,,,
—-“আপনাকে স্যরি বলতে হবে না। সকালের ঘটনার জন্য আমিই দায়ী। আমার দোষেই আমি চড় খেয়েছি। আপনি শুধু শুধু নিজেকে দোষারোপ করবেন না। একচুয়েলি আব্বুর কথা মনে পড়ছিলো তো তাই কাঁদছিলাম। দেট’স ইট।”
অন্তর মল্লিকার মুখটা ছেড়ে গলা ঝেঁড়ে বলল,,,,,
—-“মন খারাপ করার কিছু নেই মল্লিকা। কালই তো ঐ বাড়িতে যাবে। কয়েকদিন পরিবারের সাথে কাটিয়ে আসলে হয়তো মন ভালো হয়ে যাবে।”
মল্লিকা মলিন হেসে বলল,,,,,
—-“ঠিক বলেছেন!”
কথাটা বলেই মল্লিকা কাবার্ডের কাপড় গুছাতে ব্যস্ত হয়ে পড়ল। অন্তর মল্লিকার দিকে তাকিয়ে মিনিমিন করে বলল,,,,,,
—-“আমি সিউর মল্লিকা আমার থেকে কিছু হিডেন করছে। হয়তো আমাকে বলতে চাইছে না। অন্য কোনো বিশেষ কারণে সে কান্না করছে। যে করেই হোক মল্লিকার মন ভালো করতে হবে। সে আদৌ কখনো চট্টগ্রাম গেছে কিনা তাও আমার জানতে হবে।”
কথা গুলো বলেই অন্তর মল্লিকার মুখোমুখি দাঁড়ালো। মল্লিকা বেশ ব্যস্ত কাবার্ডের কাপড় গুছাতে। অন্তর মলিন হেসে মল্লিকার দিকে তাকিয়ে বলল,,,,,
—-“আচ্ছা মল্লিকা….. আমি কি তোমার সাথে ফ্রেন্ডলি কথা বলতে পারি?”
মল্লিকা কিছুটা আনমনা হয়ে বলল,,,,
—-“হুম বলুন।”
—-“আচ্ছা….তোমার পুরো নাম কি?”
—-“আয়ানা হায়াত মল্লিকা।”
—-“তোমার পুরো নামটাই খুব সুন্দর।”
বিনিময়ে মল্লিকা মুচকি হেসে বলল,,,,
—-“নামটা আমার আব্বু রেখেছে। আচ্ছা….. আপনার পুরো নাম কী?”
—-“শাহরিয়া চৌধুরী অন্তর।”
—-” আপনার নামটা ও কিউট।”
অন্তর মৃদ্যু হেসে বলল,,,,,
—-“জানো মল্লিকা….তোমার চোখ গুলো খুব সুন্দর। আচ্ছা তুমি কি চোখে লেন্স ইউজ করো?”
মল্লিকা কিছুটা রেগে বলল,,,,,
—-“জ্বি না। জন্ম থেকেই আমার চোখ নীল। কেনো আপনার সমস্যা আছে?”
—-“না কোনো সমস্যা নেই। তবে তোমার চোখ গুলো খুবই সুন্দর আর এটরেকটিভ।”
মল্লিকা এক ভ্রু উঁচু করে বলল,,,,,
—-“সত্যি সত্যি বলছেন, নাকি আমাকে মিথ্যে শান্তনা দিচ্ছেন?”
অন্তর কিছুটা সিরিয়াস হয়ে বলল,,,,
—-“সত্যিটা বললাম। তোমার সাথে খামোখা মিথ্যে বলতে যাবো কেনো?”
—-“ওকে মানলাম।”
—-“আচ্ছা মল্লিকা….চট্টগ্রাম তোমার কোনো রিলেটিভ আছে?”
—-“রিলেটিভ নেই, তবে আমার বেস্টুর বাড়ি চট্টগ্রাম।”
অন্তর বেশ আগ্রহ নিয়ে বলল,,,,,,
—-“আচ্ছা তুমি কি কয়েক মাস আগে চট্টগ্রাম গিয়েছিলে?”
—-“গিয়েছিলাম তো। তবে অন্য এক্টা কাজে।”
—-“কি কাজ?”
—-“আপনাকে বলা যাবে না?”
—-“কেনো?”
—-“কারণ কাজটা সিক্রেট। আমার ফ্যামিলির কানে কথাটা গেলে আমাকে খুব বকবে।”
—-“আমি বলব না তোমার ফ্যামিলিকে। প্লিজ বলো না কি কাজে গিয়েছিলে?”
মল্লিকা কপাল কুঁচকে অন্তরের দিকে তাকিয়ে বলল,,,,,
—-“আপনি জেনে কি করবেন?”
অন্তর অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল,,,,,
—-“এক্টা বিশেষ দরকার ছিলো।”
অন্তরের আগ্রহ দেখে মল্লিকা ফিসফিস করে অন্তরের কানের কাছে এসে বলল,,,,
—-“আমার বেস্টুর বিয়ে দিতে গেছি। রেজিস্ট্রি ম্যারেজ বুঝেছেন? বাড়ি থেকে লুকিয়ে গিয়েছিলাম। আব্বু আম্মু শুনলে আমাকে ভর্তা বানিয়ে ফেলত। খুব রিস্ক নিয়ে বাড়ি থেকে বের হয়েছিলাম। একচুয়েলি, আমার বেস্টু এক্টা ছেলেকে পছন্দ করত। ছেলেটা আমাদের এলাকার। আমার বেস্টু কলেজ হোস্টেলে থাকত। হুট করে ওর ফ্যামিলি ওকে ফোন দিয়ে বাড়ি নিয়ে গেলো। বাড়ি গিয়ে সে জানতে পারল ওর ফ্যামিলি ওর বিয়ে ঠিক করে ফেলেছে। সে তো অস্থির হয়ে কান্নাকাটি জুড়ে দিলো। এরপর পিয়াস ভাইয়া মানে আমার বেস্টুর বয়ফ্রেন্ড আমাকে নিয়ে চট্টগ্রাম যায়। চট্টগ্রামের রেজিস্ট্রি অফিসেই ওদের কোর্ট ম্যারেজ হয়। স্বাক্ষী হিসেবে আমি ওদের পাশে ছিলাম। এই হলো কাহিনী। আপনি প্লিজ ভুলে ও আম্মু, আব্বুর কানে এসব দিবেন না। তাহলে আমার খুব প্রবলেম হয়ে যাবে। বুঝেছেন তো আমি কি বলেছে।”
হুট করে অন্তর হাসতে হাসতে মল্লিকাকে জড়িয়ে ধরে বলল,,,,,,
—-“আচ্ছা…তুমি কি ঐদিন কালো বোরখা পড়েছিলে?
মল্লিকা অন্তরের থেকে নিজেকে ছাড়ানোর জন্য বেশ ছুটাছুটি করছে আর বলছে,,,,,,
—-“হুম কালো বোরখা আর কালো নিকাব পড়েছিলাম।”
অন্তর খুশিতে মল্লিকাকে আরো টাইট করে জড়িয়ে ধরে বলল,,,,,,
—-“আমি পেয়ে গেছি তাকে, যাকে আমি এতোদিন ধরে খুঁজছিলাম।”
মল্লিকা ছুটাছুটি বন্ধ করে অবাক দৃষ্টিতে অন্তরের দিকে তাকিয়ে বলল,,,,,,
—-“কাকে খুঁজে পেয়েছেন?”
অন্তর মুখ খুলে যেই না কিছু বলতে যাবে এর আগেই দরজায় খটখট আওয়াজ হলো। মল্লিকা অন্তরের থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে দরজা খুলে দিলো। সাথে সাথেই সাহেদ রুমে ঢুকে পড়ল। রুমে ঢুকেই সাহেদ কোমড়ে হাত দিয়ে অন্তরের দিকে তাকিয়ে বলল,,,,,,
—-“তুই এখানে আর আমি তোকে পুরো বাড়ি খুঁজছি। বিয়ে তোর আর আমরা কিনা খেটে খেটে মরব? চল আমার সাথে। বাইরে অনেক কাজ পড়ে আছে। ভাবীর সাথে পরে ও ইটিস পিটিস করতে পারবি।”
কথাগুলো বলেই সাহেদ অন্তরকে টানতে টানতে রুম থেকে বের হয়ে সোজা বাড়ির বাইরে চলে গেলো। অন্তর বেশ বিরক্তি নিয়ে সাহেদকে উদ্দেশ্য করে বলল,,,,,
—-“ধ্যাত আর টাইম পেলি না? রং টাইমেই তোকে এন্ট্রি নিতে হলো?
—-“কেনো রোমান্স করছিলি নাকি?”
অন্তর সাহেদের হাতটা ছেড়ে সাহেদের কাঁধে হাত রেখে মৃদ্যু হেসে বলল,,,,,,
—-“সাহেদ আমি তাকে পেয়ে গেছি!”
—-“কাকে?”
—-“আমার নীলান্জ্ঞনাকে!”
—-“মানে? কোথায় পেলি?”
—-“আমার রুমে আছে সে!”
—-“তার মানে ভাবীই সে মেয়েটি?”
—-“হুম।”
—-“কিভাবে বুঝলি?”
—-“সে আমাকে গড়গড় করে সব বলে দিয়েছে। কিভাবে সে চট্টগ্রাম গেছে আর রেজিস্ট্রি অফিস ই বা কেনো গেছে!”
সাহেদ এক ভ্রু উঁচু করে বলল,,,,,
—-“তুই কি এখন ভাবীকে ভালোবাসার কথাটা বলে দিবি?”
অন্তর বাঁকা হেসে বলল,,,,
—-“এখন বলব না। আগে মল্লিকার মনে আমার জন্য ভালোবাসা তৈরি করতে হবে। এরপর আমি ওকে আমার মনের কথা বলব।”
—“বাঃহ গুড আইডিয়া। এবার তাহলে মনযোগ দিয়ে আপনার বউভাতের কাজে লেগে পড়ুন। এখন তো আপনার পৌষ মাস চলছে।”
অন্তর হু হা করে হেসে সাহেদের সাথে কাজে লেগে পড়ল।
অন্যদিকে,,,,,,
মল্লিকা রুমের দরজা লাগিয়ে রাগে গিজগিজ করছে আর বলছে,,,,,,
—-“বলা নেই কওয়া নেই হুট করে গায়ের সাথে চিপকে গেলো। অসভ্য ছেলে এক্টা। এখন তো মনে হচ্ছে কাল রাতে মাথা ফাটিয়ে ভালোই করেছিলাম। না হয় আমার সব মান সম্মান লুটে নিতো।”
কথাগুলো বলেই মল্লিকা কাঁথা মুড়ি দিয়ে শুয়ে পড়ল।
#চলবে,,,,,,,,,
#মন_চায়_তোকে
#পার্ট_৬
#নিশাত_জাহান_নিশি
কথাগুলো বলেই মল্লিকা কাঁথা মুড়ি দিয়ে শুয়ে পড়ল।
রাত এগারোটা,,,,,,
বাড়ির সবাই নিজেদের কাজ সেরে ডাইনিং টেবিলে বসে পড়ল ডিনারের জন্য। অন্তর আর সাহেদ ওদের কাজ সেরে ড্রইং রুমে পা দেওয়ার সাথে সাথেই মিসেস অরুনীমা চেঁচিয়ে বলে উঠল,,,,,,
—–“দুজনই আয়। ডিনার করে নে।”
অন্তর এদিক সেদিক চোখ বুলিয়ে মল্লিকাকে খুঁজছে। মল্লিকাকে কোথাও দেখতে না পেয়ে অন্তর কিছুটা উদ্বিগ্ন হয়ে মিসেস অরুনীমাকে উদ্দেশ্য করে বলল,,,,,
—–“আম্মু…মল্লিকা কোথায়?”
মিসেস অরুনীমা মুখটা কালো করে বলল,,,,,
—-“মল্লিকাকে ডেকে এসেছি। বলেছে খাবে না। ঘুমুচ্ছে নাকি!”
অন্তর কিছুটা পেরেশান হয়ে বলল,,,,,
—-“আমি মল্লিকাকে নিয়ে আসছি। এরপর এক সাথে বসে ডিনার করব।”
মিসেস অরুনীমা মুচকি হেসে সম্মতি জানালো। অন্তর আর দেরি না করে সিঁড়ি বেয়ে সোজা উপরে উঠে মল্লিকার রুমের দরজা ধাকাচ্ছে আর চেঁচিয়ে বলছে,,,,,,
—–“মল্লিকা প্লিজ দরজাটা খোলো। আমি রুমে ঢুকব।”
অন্তরের চেঁচামেচির আওয়াজে মল্লিকার কাঁচা ঘুমটা ভেঙ্গে গেলো। পিটপিট চোখে মল্লিকা নাক, মুখ কুঁচকে বিড়বিড় করে বলল,,,,,
—–“ধ্যাত, এই বাড়িতে এক্টু শান্তি মতো ঘুমানো যায় না। একের পর এক লেগেই আছে। কাল থেকে আমি গেস্ট রুমে থাকব। তাহলে অন্তত নিশ্চিন্তে ঘুমুতে পারবো। কেউ এসে ঘুমের মাঝখানে বেঘাত ঘটাতে পারবে না।”
কথাগুলো আপন মনে বিড়বিড় করে মল্লিকা কাঁথা ছেড়ে উঠে বড় এক্টা হাই ধীর পায়ে হেঁটে রুমের দরজাটা খুলে দিলো। অন্তর মুচকি হেসে মল্লিকার দিকে তাকিয়ে আছে। মল্লিকা বড় এক্টা হামি দিয়ে পিছু ঘুরে আবার কম্বল মুড়ি দিয়ে শুয়ে পড়ল। অন্তর বাঁকা হেসে মল্লিকার পাশে বসে আস্তে করে মল্লিকার মুখের উপর থেকে কম্বলটা সরিয়ে দিলো। মল্লিকা চোখ খুলে নাক, মুখ কুঁচকে অন্তরের দিকে তাকালো। অন্তর এক গাল হেসে বলল,,,,,,,
—-“ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে তো চোখ, মুখ ফুলিয়ে রেখেছ। এবার অন্তত শোয়া থেকে উঠে ডিনারটা করে নাও।”
মল্লিকা তেজী কন্ঠে বলল,,,,,,
—-“ডিনার আমি করব না। আগেই শ্বাশুড়ী আম্মুকে বলে দিয়েছি।”
অন্তর বেশ রাগ দেখিয়ে বলল,,,,,
—-“এসব বললে হবে না মল্লিকা। প্লিজ উঠো। ডিনার করে নাও। সবাই তোমার জন্য ডাইনিং টেবিলে ওয়েট করছে।”
মল্লিকা জেদ দেখিয়ে কম্বল মুড়ি দিয়ে কম্বলের নিচ থেকে চেঁচিয়ে বলছে,,,,,,
—-“আপনি হাজার বললে ও আমি খাবো না। সো প্লিজ আপনার টাইম ওয়েস্ট না করে আপনি সবাইকে নিয়ে খেতে বসে যান। আমি সকালে ব্রেকফাস্ট করে নিবো। আর শুনুন…. আমাকে নিয়ে এতো ভাবতে হবে না। আমি চাই না কেউ আমার জন্য ভাবুক।”
অন্তর দাঁত কিড়মিড় শার্টের হাতা ফোল্ড করতে করতে চেঁচিয়ে বলল,,,,,,
—-“খুব জেদ তোমার তাই না? এই অন্তরের চেয়ে ও বেশি জেদ তোমার? এখনি বুঝিয়ে দিচ্ছি কার জেদ বেশি!”
কথাগুলো বলেই অন্তর মল্লিকার শরীর থেকে কম্বলটা সরিয়ে মল্লিকাকে এক টানে কোলে তুলে নিলো। মল্লিকা বেকুব হয়ে অন্তরের দিকে তাকিয়ে আছে। ভূত দেখার মতো চোখ দুটো বড় বড় করে রেখেছে মল্লিকা। অন্তর চোয়াল শক্ত করে মল্লিকার চোখের দিকে তাকিয়ে বলল,,,,,,
—-“বেশি বাড়াবাড়ি করলে এই অবস্থাই হবে। খাবার নিয়ে অনিয়ম আমার একদম পছন্দ না। সকালের খাবার দুপুরে, দুপুরের খাবার রাতে, রাতের খাবার সকালে এসব আমার একদম পছন্দ না। খাওয়া থেকে শুরু করে শাওয়ার, ঘুম, সবকিছুর রেস্ট্রিকশান মেনে তোমাকে চলতে হবে।”
অন্তর কিছুটা থেমে আবার বলে উঠল,,,,,,
—-“ওয়েট, ওয়েট এক্টু আগে কি বললে তুমি? তুমি চাও না কেউ তোমাকে নিয়ে ভাবুক? শোনো মল্লিকা….আমি তোমার বেটারহাফ। তোমার ভালো, মন্দ প্রতিটা জিনিসের খেয়াল আমাকে খুব সুক্ষ্ম ভাবে রাখতে হবে। খেয়াল রাখতে গেলে অবশ্যই তোমার কথা ভাবতে হবে। সো এসব ভাবা ভাবীর চ্যাপ্টার ক্লোজ করে আমার সাথে নিচে চলো। ডিনার টাইম অলরেডি ক্রস হয়ে গেছে।”
কথা গুলো বলেই অন্তর মল্লিকাকে আধ
কোলে করে রুম থেকে বের হয়ে গেলো। ড্রইং রুমের কেউ এখনো অন্তর আর মল্লিকাকে খেয়াল করে নি। মল্লিকা মুখে হাত দিয়ে চোখ দুটো বড় বড় করে এক নিশ্বাসে অন্তরকে বলে উঠল,,,,,,,
—-“এই কি করছেন কি আপনি? আমাকে এভাবে কোলে নিয়ে নিচে যাবেন নাকি? বাড়ি ভর্তি মানুষের সামনে। ছি ছি। কি ভাববে সবাই?”
—-“তুমি ই তো আমাকে বাধ্য করেছ। তুমি যদি প্রথমেই মেনে নিতে তাহলে আমাকে এভাবে সবার সামনে তোমাকে প্রেজেন্ট করতে হতো না।”
—-“ছাড়ুন ছাড়ুন। আর প্রেজেন্ট করতে হবে না। বাড়ির সবাই দেখার আগেই আমাকে নিচে নামিয়ে দিন। আমি পায়ে হেঁটেই যাচ্ছি।”
অন্তর বাঁকা হেসে বলল,,,,,
—-“এই তো গুড গার্ল। ডাইনিং টেবিলে গিয়ে ঠিকঠাক করে খাবে। প্রয়োজনে বেশি বেশি খাবে।”
মল্লিকা মাথা নাঁড়িয়ে হ্যাঁ জানালো। অন্তর চট জলদি মল্লিকাকে কোল থেকে নামিয়ে দিলো। মল্লিকা সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে শাড়ীটা ঠিক করে শুড়শুড়িয়ে নিচে নেমে গেলো। অন্তর মল্লিকার হাঁটা দেখে হু হা করে হেসে শার্টের হাতা ফোল্ড করতে করতে ডাইনিং টেবিলে বসে পড়ল। মল্লিকাকে দেখে উপস্থিত সবার মুখে হাসি ফুটে উঠল। মল্লিকা মলিন হেসে সবার দিকে তাকিয়ে আছে। মিসেস অরুনীমা সবার প্লেইটে খাবার বেড়ে দিচ্ছে। অনন্যা বাঁকা হেসে মল্লিকাকে উদ্দেশ্য করে বলল,,,,,,
—–“বাঃহ বাঃহ বর যাওয়াতে কি সুন্দর ঢ্যাং ঢ্যাং করে চলে এলে। আর আমরা যাওয়াতে তো পাওাই দিলে না। উল্টো আমাদের তাড়িয়ে দিলে। প্রথম দিন থেকেই দেখছি আমার ভাইয়ের প্রতি তোমার ভালোবাসা উতলে উতলে পড়ছে।”
অনন্যার কথা শুনে সবাই হু হা করে হেসে দিলো। অন্তর মুখে মুচকি হাসি ঝুলিয়ে এক ভ্রু উঁচু করে মল্লিকার দিকে তাকিয়ে আছে। মল্লিকা রাগী দৃষ্টিতে অন্তরের দিকে তাকিয়ে আছে আর বিড়বিড় করে বলছে,,,,,
—-“এই অসভ্য ছেলেটার জন্য আমাকে সবার সামনে ছোট হতে হলো। সবাই ভাবছে আমি বর পাগলী। ছি ছি কি লজ্জা কি লজ্জা। লজ্জায় মাটিতে মিশে যেতে ইচ্ছে করছে। দাঁড়া বেটা একবার রুমে যেয়ে নেই তোর বারোটা বাজাব।”
মল্লিকার রাগী দৃষ্টি দেখে অন্তর বাঁকা হেসে মল্লিকাকে চোখে মেরে মল্লিকার হাত ধরে টান দিয়ে অন্তরের পাশের চেয়ারটায় বসিয়ে দিলো। উপস্থিত সবাই অন্তরের কান্ড দেখে মিটিমিটি হাসছে। মিসেস অরুনীমা এবার মল্লিকার প্লেইটে খাবার বেড়ে দিলো। অন্তর ইশারা করে মিসেস অরুনীমাকে বলল মল্লিকাকে আরো খাবার বাড়িয়ে দিতে। মিসেস অরুনীমা ও মল্লিকার প্লেইটে খাবার আরো বাড়িয়ে দিলো। মল্লিকা ঠোঁট উল্টে মিসেস অরুনীমার দিকে তাকিয়ে বলল,,,,,
—-“আম্মু প্লিজ কমাও। আমি এতো খাবার খেতে পারব না।”
অন্তর মুখে খাবারের লোকমা দিচ্ছে আর মল্লিকাকে উদ্দেশ্য করে বলছে,,,,,
—-“আন্টি ফোন করে বলেছে তুমি নাকি রাতে এক্টু বেশি খাবার খাও। না হয় মাঝ রাতে তোমার খুব ক্ষিদে পেয়ে যায়। তখন চেঁচিয়ে পুরো বাড়ি এক করে ফেলো। তাই তোমাকে খাবার বেশি দেওয়া হয়েছে। কথা না বাড়িয়ে চুপচাপ খেয়ে নাও।”
অন্তরের কথা শুনে সবাই মল্লিকার দিকে তাকিয়ে হু হা করে হাসতে নিলেই অন্তর সবাইকে ইশারা করে থেমে যেতে বলল। অন্তরের ইশারা মতো সবাই থেমে গেলো। মল্লিকা নিচের দিকে তাকিয়ে মাথায় হাত দিয়ে বিড়বিড় করে বলল,,,,
—-“ইসসস আম্মু ফোন করে এই গোপন সত্যিটা ও বলে দিয়েছে। এদের নিয়ে আমি কি যে করি। এখন নিশ্চয়ই এই বাড়ির সবাই আমার খিল্লি উড়াবে। ধ্যাত ভাল্লাগে না।”
মল্লিকার মৌণতা দেখে অন্তর ফিসফিস করে মল্লিকার কানে কানে বলল,,,,,,
—-“এখানে লজ্জা পাওয়ার কিছু নেই মল্লিকা। আমার পরিবারের সবাই খুব ফ্রেন্ডলি। তুমি প্লিজ লজ্জা কাটিয়ে খাওয়া শুরু করো। খেয়ে দেয়ে ঘুমাতে হবে। কাল অনেক কাজ আছে।”
অন্তর আবার বাঁকা হেসে বলল,,,,,,
—-“তোমার যদি নিজে খেতে ইচ্ছে না হয়, তবে আমাকে বলো। আমি তোমাকে নিজের হাতে খাইয়ে দিচ্ছি। অবশ্য কেই মাইন্ড করবে না।”
মল্লিকা এবার নিচ থেকে চোখ উঠিয়ে অন্তরের দিকে চোখ লাল করে তাকালো। অন্তর কয়েকটা শুকনো ঢোক গিলে মল্লিকার চোখের দিকে তাকিয়ে বলল,,,,,,
—-“এমা রাগ করলে তো তোমার নীল চোখ গুলো পুরো লাল হয়ে যায়। সাংঘাতিক হিংস্র হয়ে উঠো। এজ লাইক রয়েল বেঙ্গল টাইগারনী।”
রাগে মল্লিকার গাঁ জ্বলে যাচ্ছে। মল্লিকা ঠিক বুঝতে পারছে অন্তর ঠাট্টা করে মল্লিকার খিল্লি উড়াচ্ছে। আচমকাই অন্তর বাঁকা হেসে মল্লিকার মুখে ভাতের লোকমা পুড়ে দিলো। মল্লিকা চোখ বড় বড় করে অন্তরের দিকে তাকিয়ে আছে। উপস্থিত সবাই মল্লিকার দিকে তাকিয়ে মিটিমিটি হাসছে। মল্লিকা লজ্জায় মাথাটা নিচু করে রেখেছে। অন্তর অতো দিকে নজর না দিয়ে মল্লিকার মুখে পর পর ভাতের লোকমা পুড়ে দিচ্ছে। মল্লিকা মুখ বুজে খেয়ে নিচ্ছে। সবাই সামনে আছে বলে সে রিয়েক্ট করতে পারছে না। না হয় এতক্ষনে অন্তরের মাথা ফাটিয়ে দিতো।
প্রায় পনেরো মিনিট পর অন্তর পুরো প্লেইট খাবার মল্লিকাকে খাইয়ে ফিনিশ করিয়েছে। মল্লিকা ঢকঢক করে এক গ্লাস পানি খেয়ে চট জলদি ডাইনিং টেবিল থেকে উঠে সোজা রুমে গিয়ে বেডের উপর বসে পড়ল। মল্লিকা আবার কি মনে করে দৌঁড়ে গিয়ে দরজার খিলটা লাগিয়ে বাঁকা হেসে বলল,,,,,,,
—-“এবার জমবে মজা। কিছুতেই আজ দরজা খুলব না। দেখব বজ্জাত অন্তর রুমে ঢুকে কি করে! হাজার বার উঠ বস করিয়ে এরপর দরজা খুলব। বেটা নির্লজ্জ। বাড়ির সবার সামনে কেমন বউকে গপাগপ লোকমা তুলে দিলো। ছি ছি লাজ লজ্জার বালাই পর্যন্ত নেই।”
অন্তর হাত ওয়াশ করে ডাইনিং টেবিল ছেড়ে রুমের দিকে পা বাড়ালো। অন্তর রুমের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে দরজা ধাক্কা দিয়েই বুঝতে পারল মল্লিকা ভিতর থেকে খিল লাগিয়ে দিয়েছে। অন্তর বেশ বুঝতে পেরেছে মল্লিকা অন্তরের থেকে রিভেন্জ্ঞ নিতে চাইছে। অন্তর বাঁকা হেসে বিড়বিড় করে বলল,,,,
—-“মিস নীলান্জ্ঞনা…. আমি ঠিক বুঝতে পেরেছি আপনার চাল। আপনি নিশ্চয়ই আমাকে হেনস্তা করার জন্য এই চাল টা চেলেছেন। নো প্রবলেম আমি ও কিন্তু কম যাই না। ব্যালকনী দিয়ে রুমে ঢুকব। উল্টে তোমাকে চমকে দিবো।”
কথাগুলো বলেই অন্তর রুমের দরজা ছেড়ে সোজা বাড়ির বাইরে চলে গেলো। মল্লিকা দরজার ফাঁক দিয়ে উঁকি চুকি মেরে অন্তরকে দেখার চেষ্টা করছে। কিন্তু না, অন্তরের ছায়া পর্যন্ত দেখা যাচ্ছে না। মল্লিকা হাল না ছেড়ে কপাল কুঁচকে বেশ আগ্রহ নিয়ে উঁকি চুকি মেরেই যাচ্ছে। প্রায় অনেকক্ষন পর মল্লিকা চোখে মুখে বিরক্তির ছাপ ফুটিয়ে বিড়বিড় করে বলল,,,
—-“আজব…. লোকটা কি মুহূর্তের মধ্যেই উবে গেলো? এক্টু আগেই তো দেখেছিলাম দরজার সামনে। ক্ষনিকের মধ্যে হাওয়া হয়ে গেলো? নিশ্চয়ই সাথে আলগা কিছু আছে। বাপরে বাপ এই ছেলে থেকে যথেষ্ট দূরে থাকতে হবে।”
ঐদিকে,,,,
অন্তর বাড়ির পাইপ লাইন বেয়ে সোজা ওর রুমের ব্যালকনীতে উঠে পড়ল। মল্লিকা এখনো উঁকি দিয়ে দরজার সাথে চিপকে আছে। অন্তর রুমে ঢুকে মল্লিকার কান্ড দেখে মনে মনে হেসে কুটিকুটি। এর মাঝেই হুট করে কারেন্ট চলে গেলো। অন্তরদের বাড়ির জেনারেটর টা ও কয়েকদিন ধরে ডিস্টার্ব দিচ্ছে। তাই পুরো রুম অন্ধকার হয়ে আছে। মল্লিকা দরজা ছেড়ে এক্টু দূরে দাঁড়িয়ে এক নাগাড়ে শুকনো ঢোক গিলছে আর চোখ, মুখ খিঁচে জোরে চিৎকার দিয়ে বলছে,,,,,
—-“অন্তর আপনি কোথায়? প্লিজ তাড়াতাড়ি চলে আসুন। আমার ভীষণ ভয় করছে।”
অন্তর বেশ বুঝতে পেরেছে মল্লিকা ভীষন ভয় পাচ্ছে। তাই সে আর চুপ করে না থেকে প্যান্টের পকেট থেকে ফোনটা বের করে ফ্ল্যাশ লাইট অন করে মল্লিকার মুখের সামনে ফ্ল্যাশ লাইটটা ধরল। মল্লিকা মুখ থেকে হাত সরিয়ে কাঁপা কাঁপা চোখে ফ্ল্যাশ লাইটের দিকে তাকালো। অন্তরের মুখটা স্পষ্ট হওয়ার সাথে সাথেই মল্লিকা অবিশ্বাস্য দৃষ্টিতে অন্তরের দিকে তাকিয়ে জোরে চেঁচিয়ে বলল,,,,,,,
—-“ভূতততততত!”
অন্তর বেকুব হয়ে এদিক সেদিক কিছুক্ষন চোখ বুলিয়ে মল্লিকার চোখের দিকে তাকিয়ে বলল,,,,,,
—-“ভূত কোথায়?”
মল্লিকা কাঁপা কাঁপা হাতে এক আঙ্গুল অন্তরের দিকে উঠিয়ে কাঠ কাঠ গলায় বলল,,,,,
—-“আপনিই তো ভূত। আমি তো দরজা আটকে রেখেছিলাম। আপনি নিশ্চয়ই ভূত হয়ে রুমে ঢুকেছেন!”
মল্লিকার কথা শুনে অন্তর হু হা করে হেসে বলল,,,,,,
—-“শুনো মল্লিকা….তুমি চলো ঢালে ঢালে, আমি চলি পাতায় পাতায়। তুমি কি ভেবেছ? দরজা আটকে রাখলেই আমাকে রুমে ঢুকা থেকে আটকাতে পারবে? কক্ষনো না। অন্তরকে দমিয়ে রাখা এতো সহজ নয়।”
অন্তরের কথা শুনে মল্লিকা বেশ ভাবনায় পড়ে গেছে। ব্যাপারটা ভয় পেয়ে উড়িয়ে দেওয়ার মতো না। বেশ চিন্তার বিষয়। রুমের দরজা ছাড়া আর কোন দিক দিয়ে রুমে ঢুকা যায় সে নিয়ে মনে মনে চর্চা করছে মল্লিকা। অন্তর মজা করে মল্লিকার চোখে ফ্ল্যাশ লাইট ধরে বাঁকা হেসে বলল,,,,,,,
—-“ভয় পাওয়ার কিছু নেই মল্লিকা। আমি তোমার বেটারহাফ অন্তর। কোনো ভূত প্রেত নই। একচুয়েলি আমি ব্যালকনী দিয়ে রুমে ঢুকেছি। তোমাকে চমকে দিবো বলে।”
মল্লিকা কয়েকটা স্বস্তির শ্বাস ছেড়ে অন্তরের হাত থেকে ফ্ল্যাশলাইট টা ছিনিয়ে সোজা ব্যালকনিতে চলে গেলো। অন্তর ও মল্লিকার পিছু পিছু ব্যালকনীতে গিয়ে দাঁড়ালো। মল্লিকা ফ্ল্যাশ লাইট দিয়ে নিচের দিকে তাকিয়ে অন্তরের রুমে ঢুকার উৎস খুঁজছে। বাড়ির পাইপ লাইনটা মল্লিকার রুমের ব্যালকনীর পাশে। যেকোনো কেউ অনায়াসে পাইপ লাইন বেয়ে ব্যালকনী দিয়ে রুমে ঢুকতে পারবে। তবে পাইপ লাইন থেকে ব্যালকনীতে জাম্প দেওয়ার সময় কোথাও না কোথাও লেগে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে। বিশেষ করে হাত কেটে যাওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
মল্লিকা তাড়াতাড়ি নিচ থেকে চোখ উঠিয়ে অন্তরের দিকে ফিরে হুট করে অন্তরের হাত দুটো চেইক করা শুরু করল। অন্ধকারে কিছুই দেখা যাচ্ছে না। এর মাঝেই হুট করে কারেন্ট চলে এলো। কারেন্ট এসে যাওয়াতে মল্লিকার জন্য বেশ সুবিধেই হলো। মল্লিকা খানিক উদ্বিগ্ন হয়ে অন্তরের দুটো হাত ই সমান ভাবে চেইক করছে। অন্তর মলিন হেসে মল্লিকার দিকে তাকিয়ে আছে। আচমকাই মল্লিকার চোখ গেলো অন্তরের ডান হাতের কব্জির দিকে। কব্জির নিচের জায়গাটা ছিলে অনবরত রক্ত বের হচ্ছে। মল্লিকা বেশ পেরেশান হয়ে অন্তরের দিকে তাকিয়ে বলল,,,,,,
—-“ব্যাথা লাগছে না আপনার?”
—-“নো ডিয়ার। সামান্য এক্টু কেটেছে।”
—-“মিথ্যে বলছেন আপনি।”
—-“কিভাবে বুঝলে?”
—-“ক্ষত দেখলেই তো বুঝা যায়। কি দরকার ছিলো এতো রিস্ক নিয়ে ব্যালকনী দিয়ে রুমে ঢুকার?”
—-“রিস্কটা না নিলে তো আজ রুমেই ঢুকতে পারতাম না। সারা রাত তুমি আমায় দরজার বাইরে দাঁড় করিয়ে রাখতে।”
—-“আমি খুব খারাপ তাই না? কারণে, অকারণে আপনাকে কষ্ট দেই!”
#চলবে,,,,,,,,