#মন_গোপনের_কথা
#পর্ব_৫০
লেখনীতে, পুষ্পিতা প্রিমা
পিহু চোখ বন্ধ করলো। বলল
ছিকু যদি চলে আসে?
আসুক । শালারে কি আমি ডরাই নাকি?
পিহু হাসলো৷ চোখ খুললো। মাহিদের পেছনে আঙুক তাক করে বলল
তাহলে ওটা কে দেখো?
মাহিদ ছিটকে পড়লো। পেছন ফিরে বলল
কে?
পিহু হেসে উঠলো। হাসতে হাসতে দূরে গেল। বলল
আমার কাছে আর কোনো উপায় ছিল না। সরি।
মাহিদ কপাল ভাঁজ করে রাগীমুখ করে চাইলো। পিহু হেসে হাত দেখিয়ে বলল
টা টা মিহি।
বলেই খিক করে হাসলো। মাহিদ বলল
এটা ঠিক হয়নি।
একদম উচিত হয়েছে।
হাসতে হাসতে চলে গেল পিহু। মাহিদের ঘরের পাশ কেটে যেতেই দেখলো ছিকুকে৷ একটা বড় সাইজের ক্রিকেট ব্যাট টানতে টানতে মুনার ঘরের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। পিহু চেয়ে থাকলো৷ ছিকু ব্যাটটা টানতে কষ্ট হওয়ায় ভুরু কুঁচকালো। নাক কুঁচকালো। ঠোঁট ফুলিয়ে বলল
বেট এতু পুঁচা কেন?
পিহু তার কথা শুনে খিক করে হেসে উঠলো। ছিকু সতর্ক হয়ে তাকালো। ব্যাট ছেড়ে দিয়ে খিক করে হাসলো পিহুর সাথে। পিহু কোমরে হাত দিয়ে বলল
আব্বা কি করে?
ছিকু চুরি করে কেন? মিহির বেট চুরি করতে মন চায় কেন?
পিহু অবাক হয়ে বলল
আল্লাহ! মিহি ওখানে আছে। এখন এসে দেখলে কি হবে? চুরি করলে তো আল্লাহ মারবে। এগুলো ভালো কাজ না।
ছিকু মন খারাপ করে ফেলল। বলল
ছিকুর বেট খিলতে মন চায় কেন? আল্লাহ ছিকুকে মার দিবে কেন?
এত বড় ব্যাট আপনি তুলতে পারবেন? আপনার তো ছোট ব্যাট লাগবে। বাসায় তিনটা ব্যাট আছে আপনার।
মিহির বেট বিটিফুল কেন?
পিহু মাথা চাপড়ালো। বলল
উফফ! কি করে বুঝাই?
পিহু দুক্কু পায় কেন? মিহির বেট নিতে দেয়না কেন?
পিহু কোমরে হাত রেখে তার দিকে চেয়ে রইলো। মাহিদ শিঁষ বাজিয়ে আসতেই পিহু দৌড়ে ছিকুর পেছনে গিয়ে দাঁড়ালো। মাহিদ কপাল কুঁচকে তাকালো। ছিকু পিহুর পেছনে লুকিয়ে গিয়ে বলল
ও বাপ মিহি চলি আসিচে কেন?
মাহিদ মেঝেতে পড়ে থাকা তার ব্যাটের দিকে তাকালো। তারপর পিহুর আর ছিকুর দিকে তাকিয়ে বলল
কি চলতেছে এখানে?
তারপর কিছু একটা ভেবে বলল,
ওরেব্বাপ ছিকু শালা তুই আমার ব্যাট নিয়ে কোথায় যাইতেছস? তোর এত্ত বড় কলিজা? তুই আমার ব্যাট চুরি করোস?
ছিকু ভয়ে ভয়ে বলল
মিহির বেট বিটিফুল কেন?
তো বিটিফুল হইবো না? আমার বাপ কিইনা দিছে আমায়। তুই এই ব্যাটের দাম জানোস শালা? তোর বাপ দাদা এরকম ব্যাট কোনোদিন দেখছে কিনা সন্দেহ? তুই এই দামী জিনিস ধরার আগে অযু করছোস?
পিহু হেসে উঠে বলল
তুমি আর কথা পাচ্ছ না?
তুই চুপ থাক। তোর সাথে পরে হিসাবনিকাশ হবে।
পিহু মুখ মোচড়ে দিল। ছিকু বলল
মিহি গুড বয় কেন? ছিকুকে বেট দেয় না কেন?
মাহিদ এগিয়ে গেল। ছিকু দৌড় দিল। পিহু চোখ খিঁচে বন্ধ করে দাঁড়িয়ে থেকে বলল
না না আমি কিছু করিনি।
মাহিদ তার মাথায় টোকা মেরে ছিকুর পেছনে ছুটলো। দৌড়াতে দৌড়াতে ছিকুর প্যান্ট কোমর গলে পড়ে গেল। প্যান্ট তুলে আবার দৌড় দিল সে। মাহিদ তাকে ধরে ফেলল। হাসতে হাসতে মেঝেতে বসে পড়লো ছিকুকে নিয়ে। ছিকু বলল
মিহি ডগ নয় কেন? মিহি ক্যাট নয় কেন?
মাহিদ তার গাল টিপে দিয়ে বলল
তুই আমারে আর পাম দিস না শালা। তুই চোররে আমি মাইয়্যা দিতাম না বাপ। জীবনে ও না৷
ছিকুর মন খারাপ হয়ে গেল। মাহিদের মুখের কাছে মুখ নিয়ে গিয়ে বলল
কেন মিইয়্যা দিতে না কেন?
মাহিদ তার গালে পিঠে ঠাসঠুস মারতে মারতে বলল
তুই বেডা ভালা না। শালা চোর। চুরিচামারি করা পোলার কাছে আমি আমার ছেড়িরে জীবনে ও দিতাম না।
ছিকু নিচের ঠোঁট উল্টালো। বলল
মিহি পুঁচা কেন? দুক্কু দেয় কেন?
মাহিদ তাকে জড়িয়ে ধরলো। দাঁড়িয়ে পড়লো ছিকুকে কোলেসমেত। গালে ঠোঁট চেপে বলল
কান্দিস না জামাই৷ যাহ তোরে আমি এই ব্যাটের চাইতে দামী ব্যাট দিমু যৌতুক হিসেবে। কিন্তু তুই শালা আমার মাইয়্যারে একফোঁটা ও কষ্ট দিতে পারবি না। কথা বলবি নরম কইরা৷ ধরবি ও আস্তে কইরা৷ বুঝছোস? এই ব্যাট দিতাম না। এইটা আমার ব্যারিস্টার বাপের দেয়া জিনিস। বুঝোস নাই?
সব কথা ছিকুর মাথার উপর দিয়ে গেল। সে কিছু বুঝলো না। তবে কান্নাচোখে খিক করে হেসে বলল
মিহি বেট দি ফিলচে কেন?
মাহিদ চোখ রাঙিয়ে তাকালো। কোল থেকে নামিয়ে দিয়ে বলল
শালা তুই কি কানে কম শুনোস নাকি বাপ? না তোরে দেখি মাইয়্যা দেওয়া যাইবো না। তোর অনেক ব্যারাম আছে। নাহ তোরে দিতাম না। তুই কালা। তোরে আমি মাইয়্যা দিতাম না শালা। দিতাম না মানে দিতাম না৷
ছিকু সে কথা শুনে দুঃখে কাঁদতে কাঁদতে মুনার কাছে চলে গেল৷ রিক আর রিপকে নালিশ দিল মিহি তাকে ব্যাট দিচ্ছে না। তারা বলল ব্যাট বল এনে দেবে৷ মিহির ব্যাট দিয়ে খেলার জন্য তাকে অনেক বড় হতে হবে।
পিহু বলল
একদম না৷ বাসায় ব্যাট বল আছে ওর৷ ওর কথায় কান দেওয়ার দরকার নেই।
মাহিদ বলল
শালার আমার জিনিসের দিকে চোখ সারাক্ষণ।
ছিকু রিপের কোল থেকে রেগে বলল
মিহির বেট চুরি করি ফিলবো কেন?
সবাই হেসে উঠলো তার কথায়। রিপ বলল
কেউ বলে বলে চুরি করে ভাই?
পরী মিছিমিছি বুললে বুকা দেয় কেন?
সবাই আরেকদফা হাসলো তার কথায়। মুনা বলল
পরী একদম ঠিক বলেছে। মিছিমিছি বলা একদম ভালো না।
রিপ বলল
আচ্ছা ঠিক আছে। ভাইকে মিহির মতো বড় ব্যাট বল কিনে দেব। ভাই বড় হলে খেলবে।
ছিকু বলল
বেরিচটার বিশিবিশি ভালো কেন? মিহি পুঁচা কেন?
মাহিদ বিড়বিড়িয়ে বলল
শালা আমার বাপরে পটাই ফেলছস তুই। আমার তো এখন বহুত ডর লাগতেছে বাপ৷ কখন তুই আমার বাপরে পটাই আমার ছেঁড়িরে ও লইয়্যা যাস। তুই তো আস্তু একটা ঝুঁকি বাপ। না তোরে এই খান বাড়ি থেইকা দৌড়ানো লাগবো। তোরে এখানে থাকতে দেওনা যাইতো না৷
_________
নিনিত ইজি চেয়ারে বসে দুলছে। মেজাজ খারাপ হয়ে আছে। মা উদ্ভট এক শর্ত দিয়ে বসেছে। বিয়ের জন্য জালিশার মত নিতে বলেছে। আজব! সে বিয়ে করবে বলেছে এটা কি যথেষ্ট নয়? জালিশা তো রাজী ছিল। নাকি এখন মত পাল্টেছে? পাল্টালে পাল্টাক। নিনিতের কি যায় আসে?কানাডিয়ান ডাক্তার বিয়ে করবে করুক। তার কি?
কিন্তু তার বাড়িতে থেকে অন্য ডাক্তারের গুনগান গাইতে পারবে না। কোনোভাবেই নয়। তার বাড়িতে থাকতে পারবে না। ঘর থেকে বের হলেই মায়ের প্যানপ্যানানি। ফোনে বোনের প্যানপ্যানানি। বাইরে গেলে বন্ধুদের প্যানপ্যানানি। যেন বিয়েটা করলে তাদের কোন একটা উদ্দেশ্য হাসিল হবে। মেজাজ চরমভাবে খারাপ হয়ে আছে তার। কি যন্ত্রণা। চশমা খুলে হাতে রাখলো সে। চেয়ার ছেড়ে দাঁড়ালো। হাঁটতে হাঁটতে জালিশার ঘরের দিকে গেল। জালিশা শুয়ে শুয়ে গান গাইছে। আর ফোন টিপছে। নিনিত ঘরের বাইরে দাঁড়িয়ে ডাকলো
ফ্রি থাকলে বেরিয়ে আসো। কথা আছে।
জালিশা চট করে ওড়না টেনে নিল। গায়ে জড়িয়ে কাঁপা-কাঁপা পায়ে বের হলো। বলল
কি কথা?
নিনিত অস্বস্তিতে পড়ে গেল। এদিকওদিক তাকালো। বলল
আমার সাথে আসো।
জালিশা তার পিছুপিছু গেল। নিনিত কিছুদূর যেতেই থেমে গেল। বলল
আর আসা লাগবে না। চলে যাও। পরে বলব।
জালিশা কপাল কুঁচকে চাইলো। চলে আসতেই নিনিত বলল
দাঁড়াও।
জালিশা ঘাড় ঘুরিয়ে চাইলো। নিনিত তাকে পিছু করে দাঁড়িয়ে বলল
মাকে বলবে তোমাকে আমি বলেছি।
কি বলেছেন?
বলেছি আর কি।
আমি আপনার কথার আগামাথা কিছু বুঝতে পারছিনা।
নিনিত তার দিকে ফিরলো। বলল
বলবে আমি বলেছি। মা বুঝে যাবে।
পারব না আমি। কথার আগামাথা নেই। আমাকে পাগল ভাববে।
নিনিত গর্জে বলল
মাকে বলবে আমি তোমাকে বিয়ের কথা বলেছি। রাজী থাকলে হ্যা বলবে, না থাকলে কানাডা চলে যাবে।
জালিশা হা করে চোখ পাকিয়ে চাইলো। নিনিত দ্রুত প্রস্থান নিল।
মানে ওভাবে তাকাতে হয়?লজ্জা শরম বলতে তো কিছু একটা আছে? মায়ের মতো এই মেয়ে ও তাকে হুটহাট লজ্জায় ফেলে দেয়। মেয়েরা ওভাবে তাকালে ছেলেদের লজ্জা লাগে। এটা মেয়েদের বুঝা উচিত। যত্তসব।
জালিশা নিকিতা বেগমের কাছে গেল। তাকে অসময়ে এই ঘরে আসতে দেখে নিকিতা বেগম যা বুঝার বুঝে গেলেন। বললেন
কি বলল?
কিসব উল্টাপাল্টা বলে গেল মামি।
নিকিতা বেগম হাসলেন। বালিশকে কভার পড়িয়ে এগিয়ে এলেন জালিশার কাছে। থুঁতনি তুলে বললেন
আমি হাজারবার নিজের কাছে প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছি কেন এই মেয়েটিকে ছেলের বউ করব। অতএব উত্তর পেলাম, এমন মেয়ে আমি হাজারটা পাব। কিন্তু কেউ জালিশা হবে না। যাইহোক, বোকা, মাথামোটা ছেলেটাকে ধরে রাখার দায়িত্ব নেওয়ার জন্য এবার প্রস্তুত হওয়া দরকার। সবাই তো বউয়ের দায়িত্ব নেয়। তুমি না হয় তোমার এই পাগল জামাইয়ের দায়িত্ব নেবে। কি বলো?
জালিশা হেসে ফেলল। বলল
আমাকে সবাই পাগলার বউ ডাকবে না তো?
হেসে উঠলেন নিকিতা বেগম ও। বললেন
আর কেউ না ডাকলে আমি ডাকব।
______________
রিকশা ভাড়া মিটিয়ে হনহনিয়ে রাস্তা পার হলো মাইশা। লাবীব আর তপু খেয়াল করলো। তপু বলল
এই ছেড়ি রোজ কোথা থেকে আসে রে ভাই? মাহিদ্দে আর নিনিইত্যা কবে আসবে। পা টা গেল দাঁড়াতে দাঁড়াতে।
মাইশা হুট করে তাদের সামনে চলে এল। লাবীব তাকে দেখে কাঁচুমাচু করলো। মাইশা এসে লাবীবের দিকে রেগে তাকালো। তপু বলল
কেমন আছ মাইশা?
ভালো আছি ভাইয়া। আপনি কেমন আছেন?
এইতো ভালো। কোথাও যাচ্ছিলে নাকি?
নাহ। এখানেই এসেছি। আপনাদের খোঁজে।
আমাদের? মাহি আর নিনিত কাকু এখনো আসেনাই। ওদের?
নাহ।
তাহলে।
লাবীব তখন অন্যদিকে ফিরে ফোন টিপছে। মাইশা বলল
লাজুক সাহেবের কথা আছে আমার। এখনো আমাকে লজ্জা পাচ্ছে নাকি?
লাবীব ফিরলো। তপুর দিকে তাকিয়ে বলল
আমার সাথে কি?
আপনি,,
তপু থাকায় বলতে চাইলো না মাইশা। তপু বলল
আমি ওদিকে যাচ্ছি। মাহিরা আসবে। তুমি কথা বলো।
তপু চলে যেতেই লাবীব ও চলে যাচ্ছিল। মাইশা তার সামনে গিয়ে দাঁড়ালো। বলল
আপনি আমার নামে অযথা গুজব রটাচ্ছেন কেন?
আমি? মাথা খারাপ। আপনার নামে আমি কেন গুজব রটাতে যাব? আমার অত বাজে সময় নেই।
সেটা তো জানি আমি। আমাকে মিঃ মাহিদ সবটা বলেছে।
মাহি?
হ্যা।
কি বলেছে?
আপনি নিনিত ভাইয়া আর জালিশার মাঝখানে আমাকে কেন ঢুকিয়ে দিচ্ছেন? আমাকে নিশি ফোন করে বলল। নিনিত ভাইয়ার বাবা বাসায় ফোন করে বলল। এসব কি?
লাবীব মনে মনে মাহিদকে একশএক গালি দিয়ে বলল
শালা আমার নাম দিয়া দিল। আজকে পাই!
মাইশা প্যানপ্যান করতেই আছে। শেষমেষ বলল
আমি যদি এরকম আর আজেবাজে কথা কখনো শুনি আপনাকে একদম,,,
লাবীব সরু চোখে চাইলো।
একদম?
মাইশা আঙুল তুলে বলল,
একদম খুন করে ফেলব।
বলেই হনহনিয়ে রাস্তা পার হলো ।
মাহিদআসতে না আসতেই লাবীব ধপাস করে লাতি মারলো তাকে। বলল
শালা ওই বিচ্ছু মহিলারে আমার পেছনে লাগায় দিছোস কেন? আঙুল দেখিয়ে শাঁসিয়ে চলে গেল।
মাহিদ হো হো করে হেসে উঠলো। বলল
লাইন হওয়ার জন্য মামা দেখা সাক্ষাৎ জরুরী। ঝগড়া হওয়া জরুরী। কথা কাটাকাটি জরুরি। বুঝোস নাই? আমার না হওয়া বউ বলে কথা। একটা দায়দায়িত্ব তো আছে বুঝোস নাই? তোর সাথে লাইন করানোর চেষ্টায় আছি। যাইহোক মামা চালিয়ে যাহ। আর একটা খুশির খবর আছে। আমাগো ডাক্তার সাহেব বিয়েতে রাজী হয়ছে। মানে কি আর কমু?
তপু বলল
হায়রে! শুধু আমিই সিঙ্গেল থেকে গেলাম।
মাহিদ হো হো করে হেসে উঠলো।
লাবীব ফোঁস ফোঁস করতে করতে বলল
ওই মহিলা আমাকে কতগুলো কথা শোনালো এমনিএমনি। এগুলোর কি কিচ্ছু হবেনা? আশ্চর্য!
মাহিদ তার বুকে চাপড় দিয়ে বলল
মাম্মা দিলরে জিগাও। তার দেখা পাইয়্যা দিলের ধারকান তো বাইড়া গেছে৷
লাবীব হাত সরিয়ে বলল
ফালতু কথা বলিস না। মেয়ে কি কম পড়েছে যে ওই মেয়েকে দেখলে আমার ইয়ে হবে?
ইয়ে মানে কি? হুহ হুহ?
তপু হেসে উঠলো। মাহিদকে বলল
তুই পারিস বটে।
_______________
নিনিত আর জালিশার বিয়ের দিনক্ষণ ঠিক করা হলো। দ্রুত সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছেন নিয়াজ সাহেব। আইমিকে রাজী করাতে বহু বেগ পেতে হলো জাবিরকে। সে রাজী ছিল। মাঝখানে কিছু মনোমালিন্যের কারণে ভেবেছে জালিশাকে এখান থেকে নিয়েই যাবে। শেষমেশ কিছুই হলো না। সবকিছু শেষে মেয়েটা ভালো থাকলেই হলো৷ তার সাথে পথ চলার মানুষটা ভালো হোক। তাকে বুঝুক৷ সময় অসময়ে তাকে খুঁজুক৷ এর বাইরে আর কিছু চাওয়ার নেই।
মাহিদ সন্ধ্যে বেলা বাড়ি ফিরলো বিয়ের দিন তারিখের খবর নিয়ে। বাড়ি ফিরে সবাইকে জানালো৷ ঘরে গিয়ে পিহুকে জানাতে গিয়ে দেখলো ঘরটা আবছা অন্ধকার। লাইট জ্বালানো নেই। লাইট জ্বালাতে গিয়ে দেখলো মেঝেতে শাড়ির আঁচল৷ পিহুর চোখাচোখি হলো। পিহু বলল
এলোমেলো হয়ে গেছিল তাই ঠিক করছিলাম। পিহু শাড়ি ঠিকঠাক পড়ে এগিয়ে গেল। দূরত্ব রেখে দাঁড়িয়ে বলল
এভাবে কি দেখছ?
শাড়ি পড়িস না আর।
কেন? শাড়িতে ভালো লাগেনা? তাহলে আর পড়ব না।
মাহিদ তার কাছে গেল। পিহু ওয়ারড্রবের সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে বলল
তুমি বসো আমি চা আনি।
কত ঘুরাচ্ছিস? আমি তোকে পড়তে বারণ করছি এজন্য যে তোর অসুবিধা হচ্ছে। সামলাতে কষ্ট হচ্ছে। থ্রিপিছ পড়িস। আর কি কি লাগবে বলিস।
পিহু বলল
এখন কিছু লাগবে না। শাড়ি পড়তে ভালো লাগে আমার।
গুড।
কপালে কপাল চেপে ধরলো মাহিদ। বলল
বিয়ের তারিখ পড়েছে ওদের।
সত্যি?
হুহ।
খুব মজা হবে।
হুহ।
আচ্ছা যেতে দাও। মাহিদ কপাল আর ঠেসে চেপে ধরলো।
পেটে কিছু একটা স্পর্শ লাগতেই শিউরে উঠলো পিহু। গায়ে কাঁটা দিল। বুঝতে পারলো মাহিদ কিছু একটা দিয়ে আঁকিবুঁকি আঁকছে। পিহু চট করে হাত ধরে ফেলল তার। হাত থেকে নিয়ে ফেলল বস্তুটি । চোখ খুলে দেখলো একটি শুকিয়ে আসা গোলাপ। গন্ধ এখনো আছে। হাসলো পিহু। সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে নাকে দিয়ে গন্ধ শুঁকলো। বলল, কোথা থেকে পেয়েছ এটা? কি সুগন্ধি!
দশ টাকা দিয়ে কিনেছি।
পিহু হাসলো। মাহিদ শাড়ির আঁচল তার মাথায় টেনে দিল। ঘোমটা পড়িয়ে দিল। পকেট থেকে আরেকটি ফুল বের করে কানের পাশে গুঁজে দিল। পিহু ফুলটা ছুঁয়ে আবারও হাসলো।
মাহিদ তার কপাল টেনে এনে গভীর চুমু খেল। দীর্ঘক্ষণ যাওয়ার পরে কপাল থেকে ঠোঁট সরিয়ে বলল
আমি রোজ বাড়ি ফেরার পথে এরকম কুঁচকে যাওয়া বাসি ফুল নিয়ে আসব৷ এতে তোর হবে?
পিহু ফুল থেকে চোখ সরিয়ে তার দিকে তাকালো। নাকে টুপ করে ঠোঁট ছুঁয়ে বলল
খুব হবে।
চলবে,,,,
#মন_গোপনের_কথা
#পর্ব_৫১
লেখনীতে, পুষ্পিতা প্রিমা
হামান দিস্তার আওয়াজে মাহিদের কানটা গেল৷ টিভির সাউন্ড অফ করে নানীকে বলল
কানটা উইড়া যাইতেছে। এগুলা কি করো?
পান ধুঁকি ভাই। তোর বউরে দিছিলাম। তোর বউ এক্কেবারে আমিষ কইরা ফেলছে। একটু গালে না লাগলে ভালা লাগেনা।
আস্তে করো। আমার কান ব্যাথা করতেছে। টিভির সাউন্ড দিল মাহিদ৷ নানী বলল
আমারে আর কতদিন রাখবি এইখানে? আমার আর কি বাড়ি যাওয়া লাগবো না?
বাড়ি যাইয়্যা কি করবা?
তোর বড়নানীর অসুখ৷ আমি না থাকলে নাকি তার দিন কাটেনা৷
বড়নানীরে ও লইয়্যা আসো।
আসবো না। ওই মহিলা কোথাও গিয়ে শান্তি পায় না নিজের ঘর ছাড়া।
তাইলে একা থাকতে বলো। তুমি কোথাও যাইতে পারবেনা।
এটা কোনো কথা হলো? মেয়ের শ্বশুর বাড়িতে যদি মা এতদিন পড়ে থাকে তাহলে ভালো দেখায়?
মুনা আইসক্রিমের কৌটো এনে মাহিদের হাতে দিল। বলল
আপনি আছেন তাই আমাদের খুব ভালো লাগছে খালাম্মা। মা চাচীরা তো আর দুনিয়ায় নেই। তাই আপনি কাছাকাছি থাকলে শান্তি লাগে। এখন যাইয়েন না।
মাহিদ কৌটো হাতে নিয়ে চাইলো। বলল
এটা কি?
আইসক্রিম। কাল পিহু বানিয়েছিল। তুই বাড়ি ছিলিনা, রাতে দিতে মনে ছিল না।
মাহিদ চামচ দিয়ে আইসক্রিম তুলে গালে দিতে যেই যাবে ছিকু দৌড়ে দৌড়ে এল। কোমরে হাত দিয়ে বলল
ছিকুর আইসকিম খায় ফিলো কেন?
মাহিদ কপাল ভাঁজ করে চাইলো। শোয়া থেকে উঠে বলল
তোর আইসক্রিমের মারে বাপ। তোর আইসক্রিম সেটা নাম লিখা আছে নাকি। আমার যেকোনো জিনিসে তোর ভাগ বসাইতে হইবো ক্যান?
মুনা কপাল চাপড়ে বলল
কোথা থেকে চলে এ? খেলে তো ঠান্ডা লেগে যাবে।
ছিকু আইসক্রিম খাবে মানে খাবে। মাহিদ আইসক্রিম দেবে না মানে দেবে না। ছিকু প্রথমে মাহিদের হাতে কামড় দিতে গেল। মাহিদ ছুটে পালালো। ছিকু তার পেছন পেছন দৌড়ে গেল। বলল
কামুড় দি লকতো আনি দিব কেন?
মাহিদ হাসতে হাসতে দৌড়াতে দৌড়াতে বলল
পিহুনি তুই কোথায় রে বাপ? আমারে বাঁচা। ছিকুশালা আমারে কামড় দিতেছে৷ রক্ত আনি দিবে বলে। ওই পিহুনি।
পিহু ছুটে এল। বলল,
আরেহ আরেহ কি করছ? পড়ে যাবে আব্বা। দিয়ে দাও না ওকে আইসক্রিমটা।
না দিমু না। কিল্লাই দিমু শালারে? জীবনে ও দিতাম না।
পিহু কপালে হাত দিল। মুনা আইসক্রিম নিয়ে আসলো। ছিকুকে বলল
ভাই এইতো তোমার জন্য এনেছি। আসো। রাহি?
ছিকু থামলো না। তার মিহিরটা লাগবে।
মাহিদ বলল
বাপরে বাপ তোর জন্য আনছে বাপ। তুই ওইটা খাহ। যাহ।
ছিকু থামলো। বলল
না মিহিরটা খিতে মন চায় কেন?
তোর শয়তানি মন শুধু আমার পেছনে লাগতে চায় শালা।
দাওনা কেন?
দিমু না।
মুনা তার হাতে আইসক্রিমের কৌটো দিল। বলল
খাও। এখানে আর ও বেশি দিছি।
ছিকু মাহিদের দিকে তাকালো। বলল
ওটা খিতে মন চায় কেন?
মুনা তার হাত থেকে আইসক্রিম নিয়ে ফেলল। বলল
মাহি ওটা আমাকে দে। এটা তুই নে। দে তো আব্বা আর কাঁদাস না ওকে। এদিকে আন।
মাহিদ বলল
মাথা খারাপ! জীবনে ও দিতামনা শালারে।
ছিকু মেঝেতে বসে পড়লো। হাত পা নাচাতে নাচাতে বলল
মিহি এতু দুক্কু দেয় কেন?
পিহু বেত নিয়ে এসে বলল
এই পাজি ছেলে উঠো। উঠো বলছি। কিছু হতে না হতেই মেঝেতে বসে পড়বে। একটা দিয়ে বসিয়ে রাখবো। উঠো।
ছিকু গাল ছেড়ে দিল অবশেষে। কাঁদতে কাঁদতে সামনের বুক ভিজিয়ে ফেলল। নাকের পানি চোখের পানি এক করে মেঝেতে লম্বা হয়ে শুয়ে পড়লো। কাঁদতে কাঁদতে বলল
পিহু বুকা দিচে কেন? মারবে বুলচে কেন? মিহি দুক্কু দিচে কেন? পুরীর কাছি চলি যিতে মন চায় কেন?
মুনা মাহিদের দিকে রেগে তাকলো। পিহুর হাত থেকে বেত নিয়ে এগোতেই মাহিদ পালালো। হাসতে হাসতে বলল
ওররে বাপের বড় বইন, তোমার নাতির দোষ দেখোনা?
মুনা থেমে বলল
ওর দোষ দেখলেও কি হবে? ওর কি এখনো বুঝ হয়ছে নাকি? তুই তো বুঝেশুনে করছিস।
মাহিদ বিড়বিড়িয়ে বলল
হুহ বুঝ হয়নি। বউ তো চিনে। শালা ছিকু তোরে আমি হাড়ে হাড়ে চিনি বাপ। তুই পাইকা গেছোস কিন্তু কাউরে বুঝতে দিস না। তোরে আর চিনার বাকি নাই বাপ।
পিহু মাহিদের হাত থেকে আইসক্রিমটা নিয়ে নিল। ছিকুকে দিল৷ মাহিদকে অন্যটা দিল।
ছিকুর কান্না তৎক্ষনাৎ বন্ধ হয়ে গেল। দাঁড়িয়ে পড়লো সে। চোখের পানিতে গাল ভেজা। আইসক্রিম খেতে খেতে মাথা দুলিয়ে দুলিয়ে বলল
উম উম মুজা মুজা। মিহির আইসকিম মুজা নাই।
মাহিদ বলল
শালা তুই চৌধুরী বাড়ি চইলা যাহ। খান বাড়িত তোর জায়গা নাই। শালা চিটিং।
মুনা বলল
বলো একশবার আসবো।
ছিকু বলল
একচো বার কেন? বিশিবিশি নয় কেন?
মুনা হেসে বলল
আচ্ছা বেশিবেশি আসবেন।
বলেই কোলে তুলে নিয়ে গালে আদর দিল। বলল
মিহিকে চুপ দেন।
ছিকু মাহিদের দিকে আঙুল দেখিয়ে বলল
মিহি চোপপ। মিহিকে মারতে মন চায় কেন?
মাহিদ আইসক্রিম খেতে খেতে বলল
চোরের দশদিন। গৃহস্থের একদিন। যেদিন তোরে ধরমু সেদিন তোর আস্ত রাখতাম না বাপ। মনে রাখিস।
ছিকু খিক খিক করে হেসে বলল
উম উম। মুজা মুজা।
________
বিয়ের বাজারের লিস্ট করা হচ্ছে। নিশিতা শ্বশুর বাড়ি থেকে চলে এসেছে। তার একমাত্র ভাইয়ের বিয়ে বলে কথা। নিকিতা বেগম উনার ঘরে বসে রান্নাঘরের প্রয়োজনীয় সমস্ত বাজারের লিস্ট করছেন। নিশিতা পাশাপাশি বসে আছে। আইমি ও তাদের সাথে। কখন কোন জিনিস লাগবে সবকিছুর লিস্ট। জাবির বলেছে কোনো জিনিস যেন বাদ না পড়ে। তার একমাত্র মেয়ের বিয়ে। জালিশা সেই ঘরে ঢুকতে পারছেনা। জড়তা কাজ করছে। লজ্জা ও পাচ্ছে। সে কয়েকবার রুমে উঁকিঝুকি দিয়ে চলে গেল ঘরে। কোথাও বসলে ও শান্তি নেই। শুলে ও শান্তি নেই। হাঁটলে ও শান্তি নেই। কি একটা অবস্থা? বিয়ের আগে প্রত্যেকটা মেয়ের কি এই অবস্থা হয়? কত আকাশ কুসুম কল্পনা জল্পনা, কতশত চিন্তা। এই বিয়ের পরিণতি কি? ডাক্তার কি জোর করে বিয়েতে মত দিয়েছে? এই সম্পর্ক শুধু দায়িত্বের মধ্যে সীমাবদ্ধ থেকে যাবে না তো? প্রত্যেকটা মেয়ে একজন প্রেমিকরূপী স্বামী চাই। যে শুধু ছোঁয়াতে নয়, এক পলক চাহনিতে মন ভালো করে দেবে। হাসির কারণ হবে। চোখের কোণার টলমলে জলের কারণ জানতে চাইবে। হাতে হাত রেখে ভরসা দেবে। চোখ নিভিয়ে বলবে আমি আছি পাশে, ভয় কিসের? যার কাঁধে মাথা রাখলে ক্লান্তি দূর হয়ে যাবে। মুখে না বলে ও শত কথা বলা হয়ে যাবে চোখের ভাষায়। জালিশা তার ব্যতিক্রমী নয়। এমন একটা মানুষ তার চায়।
নিনিত রাতে ডিউটি শেষ করে বাড়ি ফিরলো। নিকিতা বেগম বলে দিলেন কাল যেন হসপিটালে না যায়। বাজার করতে বেরোতে হবে। খুঁতখুঁতে টাইপের সে। কোনো জিনিস অপছন্দ হলে গায়ে দেবে না মানে দেবে না। নিনিত সরাসরি না করে দিল। সে তার বন্ধুদের সাথে বাজার করবে। মেয়েদের সাথে কেন বাজার করতে যাবে? মেয়েরা তাদের কি বুঝবে? মেয়েরা মেয়েদের গুলো বুঝবে।
তার কথা শুনে সবাই ঠোঁট টিপে হাসলো। জালিশা মুখ মোচড় দিল। নিনিত তাকে আঁড়চোখে পরখ করলো। বিড়বিড় করলো
মহা বেয়াদব এই মেয়ে। সিনিয়রকে সম্মান করতে জানেনা। এজন্যই বলে বিদেশে বড় হওয়া মেয়েগুলো আদব কায়দা জানেনা। বিয়েটা হোক, পিটিয়ে একদম সোজা করে ফেলবে সে। এমন কত বেয়াদবকে সে এক মাইরে সোজা করেছে।
তারপরের দিন সবাই বাজারে গেল। নিনিত মাহিদ, লাবীব আর তপুকে বলে রেখেছে। তার রাতে বেরোবে। ডিউটি মিস করা সম্ভব না নিনিতের পক্ষে। জালিশার বাজার করা হয়েছে। লেহেঙ্গা শাড়ি সাজসরঞ্জাম। বাড়ির সবার জন্য ও কেনাকাটা। নিনিতকে ফোনে সব ছবি তুলে পাঠিয়েছে নিশিতা৷ নিনিত বলল
মেয়েদের পছন্দ আমার জানা আছে। ওসব দেখে লাভ নেই।
নিশিতা অবাক হয়ে বলল
সবকিছুতে মেয়েরা লুজার না?
অবশ্যই। আর যাকে সাথে করে নিয়ে গেছিস পছন্দ করার জন্য তার পছন্দ তো একদম জঘন্য।
নিশিতা হেসে পিঞ্চ করে বলল
হ্যা সেটাই তো। নইলে তোমাকে বিয়ে করতো না। পছন্দ অবশ্যই জঘন্য।
নিনিত সাথে সাথে ফোন কেটে দিল। সব মেয়েরা দেখছি একরকম।
মাহিদ ছিকুকে নিয়ে বেরিয়েছে। নিনিতের বিয়ে বাজারে যাবে। ছিকুকেও সাথে আসতে দেখে নিনিত বেশ খুশি। লাবীব আর তপু ও এসে হাজির। তপু বলল
মামা তোগো এসব বিয়ার বাজার করা দেখলে কলিজা ফাইট্টা যায়।
ছিকু নিনিতের কোল থেকে বলল
টপুর কুলিজা ফাটি যায় কেন?
সবাই হো হো করে হেসে উঠলো। লাবীব তাকে কোলে নিয়ে ফেলল। গালে আদর দিয়ে বলল
তো ছিকুসাহেব আজ হঠাৎ এখানে?
নিনি ডততরের বিয়ে কেন?
সবাই আরেকদফা হাসলো। মাহিদ তার গাল টেনে দিয়ে বলল
শালা আমারে ছাড়তেছেনা। কয়, মিহির সাথে যাবু কেন? যিতে মন চায় কেন? আর ও বলছে বলছে, আমার ব্যারিস্টার বাপের সামনে বলছে। বাপ আমারে আদেশ দিছে ওরে নিয়া যাইতে হইবো। তো আর কি করার?
ছিকু বলল
মিহি ইমুন করে বুলো কেন?
মাহিদ বলল
চুপ থাক শালা।
সবাই হেসে উঠলো। নিনিত বলল
তুই ওর সাথে এভাবে কথা বলিস মাহি? কি আদুরে একটা বাচ্চা!
ওরে আর পাম্প দিস না বাপ। শালা এমনি ফুইলা টাইট হইয়্যা আছে। শালার কথার এত দাম। চৌধুরী বাড়ি আর খান বাড়ি মানুষ তার কথায় নাচে। যেইটা বলবো সেইটা করবো। শালা!
ছিকু ঠোঁট ফুলিয়ে বলল
মিহি পুঁচা কেন? চবাই ভালো কেন?
সবাই হাসতে হাসতে নিউমার্কেটের দিকে গেল। নিনিত লাবীব, তপু চিপস চকলেট কিনে দিল ছিকুকে।
অনেক দোকান ঘুরেফিরে পছন্দ করে বন্ধুরা পাঞ্জাবি চুজ করে দিয়েছে নিনিতকে। জাবির বলেছে যেটা পছন্দ হয় সেটা নিয়ে নিতে। যত টাকা হোক।
নিনিত বন্ধুদের জন্য এক রকমের পাঞ্জাবি ও কিনলো। ছিকু থাকায় ছিকুর জন্য ও একটা ছোটখাটো পাঞ্জাবির অর্ডার দিল। যাতে রেডি করে রাখে। মাহিদ বলল
আমাগো কি পাঞ্জাবি নাই বাপ? তোরে এগুলা কে করতে বলছে।
নিনিত বলল
চুপ থাক।
ছিকু খিকখিক করে হেসে বলল
নিনি মিহিকে বুকা দিচে কেন?
মাহিদ বলল
শালা তুই হাসতেছোস? তোরে আইজ আমি এইখানে ফালায় চলি যামু বাপ।
তপু বলল
আমি নিয়ে যাব আমাদের বাসায়।
ছিকু খিকখিক করে হাসলো। রাতের খাবার সবাই রেস্টুরেন্টে খেল। নিনিত ছিকুকে জিজ্ঞেস করলো নিজ হাতে খাবে কিনা। ছিকু মাহিদের দিকে তাকিয়ে থাকলো। মাহিদ বলল,না না কাপড় নষ্ট হবে। ও এখনো খেতে জানেনা ভালো করে।
নিনিত বলল, ওকে তাইলে আমরা খাইয়ে দিই।
ছিকুকে সবার হাতে খেল। মাহিদ বলল
শালা তুই আমার বন্ধুগোরে পটাই ফেলছোস। তুই শালা মেলা চালাক।
ছিকু মাথা দুলিয়ে বলল
মুজা মুজা।
_____
শপিং শেষে মাহিদ আর ছিকুকে রিকশায় তুলে দিল নিনিত। মাহিদ সবাইকে বিদায় দেওয়ার সময় ছিকু হাত নাড়িয়ে সবাইকে বলল
টা টা চি ইউ।
সবাই হেসে টা টা দিল তাকে। রিকশা চলতে শুরু করলো। ছিকু মাহিদের বুকের সাথে লেগে আছে। অনেক্ক্ষণ পর মুখ তুলে মাহিদের মুখের দিকে চাইলো। বলল
নিনি জামাই কেন? বুউ নাই কেন?
বউ আছে বাপ। জালিশা বউ।
ছিকু নেচেনেচে বলল
জানিচা বুউ কেন? পিহু বুউ কেন? নিচি বুউ কেন? মাইচা বুউ নয় কেন?
মাহিদ হো হো করে হেসে বলল
শালা তোর সব মনে থাকে।
ছিকু ও তার সাথে হাসলো। বলল
লাবি জামাই নয় কেন? টপু জামাই নয় কেন? বুউ নাই কেন?
মাহিদ হেসে উঠলো। রিকশাওয়ালা ও হাসলো তার সাথে। ছিকু আঙুল দিয়ে রিকশাওয়ালাকে দেখিয়ে বলল
ইটা মিহির মুতো হাচে কেন?
তোর কথায় হাসে বাপ।
তারা খান বাড়ি পৌঁছে গেল। সবাই খেয়েদেয়ে ঘুমিয়ে পড়তো। ওরা ফিরেনি বলে কেউ ঘুমোয়নি। তাদের ফিরতে দেখে মুনা চলে এল। বলল
ভাই আসো। ঘুম পাড়িয়ে দিই।
ছিকু মাহিদের কোল থেকে নামলো না। গলা আঁকড়ে ধরে বলল
মিহির সাথি ঘুম যাবু কেন? মন চায় কেন?
মুনা বলল
না না। আমার ভাই তো আমার সাথে ঘুমাবে। নানাভাই ডাকে।
মাহিদ বলল
থাক আমার সাথে ।
ছিকু তার কাঁধে মাথা ফেলল। ঘুমে চোখ বুঁজে আসছে তার। ছিকুকে নিয়ে ঘরে চলে গেল মাহিদ। পিহুর চোখ লেগে এসেছিল । মাহিদের গলার আওয়াজ পেয়ে উঠে পড়লো। শাড়ির আঁচলটা খুঁজে নিয়ে গায়ে জড়ালো। দরজা খুলে দিল ঘুমঘুম চোখে। মাহিদ দেখলো ছিকু মাথা ছেড়ে দিয়েছে। ছিকুকে বিছানায় শুইয়ে দিল সে। পিহু বলল
দাভাই কাল আসছে। ওকে নাকি নিয়ে যাবে।
কেন?
ওর পড়াশোনার ক্ষতি হচ্ছে।
পড়াশোনার সময় অনেক আছে।
পিহু ছিকুর পাশে শুয়ে পড়লো। হাত ছিকুর গায়ের উপর রেখে জড়িয়ে ধরলো।
মাহিদ মুখ হাত ধুঁয়ে আসলো। পিহু বলল
সবার শপিং শেষ?
মাহিদ উত্তর দিল
হুহ।
নিকিতা আন্টি ফোন করেছে মায়ের কাছে। আগেভাগে চলে যেতে বলল সবাইকে।
করারই কথা।
মুনা এল। বলল
রাতে কাঁদবে। তখন তোরা সামলাতে পারবি না। আমার নাতি আমি নিয়ে চলে যাই।
পিহু বলল
না না থাক না।
ওর নানা বলতেছে নিয়ে যাওয়ার জন্য। মুনা ছিকুকে কোলে তুলে নিয়ে ঘুমন্ত মুখটাতে আদর করলো। নিয়ে যেতে যেতে বলল
মামার সাথে বেড়াতে ও গিয়েছে আমার ভাই।
ছিকু ঘুম। নইলে, কেন বেড়াতে গিয়েছে সেটা মুনাকেই জিজ্ঞেস করতো।
মাহিদ মুখ মুছে তোয়ালে রেখে দিল। পিহু বিছানায় গড়াগড়ি খেয়ে মাহিদের দিকে চাইলো । মাহিদ ভুরু কুঁচকে তাকালো । ভুরু উঁচিয়ে বলল
কি সমস্যা?
পিহু হেসে শাড়ির দিয়ে মুখ ঢাকলো। বলল
কিছু না।
মাহিদ দরজা বন্ধ করে এসে শার্ট পাল্টালো।
পিহু নিভু নিভু চোখে তার কাজ দেখছে। মাহিদ তাকে দেখে বলল
ঘুমা৷
তুমি আসো।
মাহিদ লাইট নিভালো। গোলাপি রঙের ড্রিমলাইট জ্বালিয়ে পিহুর পাশে গিয়ে বসলো। পিহু মাথার নিচে দুহাত ভাঁজ করে শুয়ে তার দিকে চেয়ে আছে। মাহিদ একটু ঝুঁকে পড়লো৷ মুখের উপর থাকা চুলগুলো কানের পেছনে গুঁজে দিয়ে গালে ঠোঁট চেপে ধরলো। পিহু চোখ বন্ধ করে অনুভব করলো উষ্ণ চুম্বন।
মাহিদ ঠোঁট সরিয়ে শুয়ে পড়লো। পিহুকে ডাকলো,
আয়।
পিহু একটু সম্মতি পেয়ে তার বুকের সাথে লেগে গেল। গুঁজে গেল বক্ষতলে। একটি মজবুত হাতের বাঁধন তাকে ঘিরে নিল। তারপর কিছু সময় যেতেই মুখ তুললো পিহু৷
দাঁড়ালো মুখটাতে হাতের আঙুল চালিয়ে জিজ্ঞেস করলো,
আমায় কেন এত ভালোবাসো?
তুই একটা ভালোবাসা। তাই ভালোবাসি।
পিহু হাসলো। আবার সেই বুকে মাথা রাখলো। এই প্রশ্নের উত্তর এত সহজ তার তো জানা ছিল না।
চলবে,,,