মন গোপনের কথা পর্ব-৪৬+৪৭

0
1129

#মন_গোপনের_কথা
#পর্ব_৪৬
লেখনীতে, পুষ্পিতা প্রিমা

ছিকুর কথায় কেউ এল না। সবাই কাজে ব্যস্ত। রিক আর রিপ বাসায় নেই। ছিকু কাউকে না পেয়ে আবার রান্নাঘরে গেল। থপ করে বসে মেঝেতে কপাল ঠুকতে ঠুকতে বলল

চবাই দুক্কু দেয় কেন?

কপাল ঠুকতে ঠুকতে কেঁদে দিল। মুনা ছুটে গেল। পরীকে বলল

ও কি বলছে একটু দেখ না।

পরী বলল

ঠাস করে একটা মারো। ওর সাথে সাথে ঢং করবে কে সারাক্ষণ।

ছিকু চেঁচিয়ে কাঁদছে। মুনা বুকে জড়িয়ে ধরে আদরসোহাগ দিয়ে কান্না থামালো। বলল

কোথায় যেতে হবে?

উখানে।

উখানে, কোনখানে?

ছিকুর সাথি ।

আচ্ছা চলেন।

ছিকু কোল থেকে নেমে গেল। টাইট হয়ে দাঁড়িয়ে থেকে বলল

চবাই যাবে।

সবাইকে যেতে হবে?

ছিকু মাথা নাড়লো। নীরা ঘাড় ঘুরিয়ে বলল

আচ্ছা যাচ্ছি। চলেন।

পরী ও যাবে।

পরীকে ও যেতে হবে? পরী আয় তো মা কি বলছে দেখে আসি।

পরী বলল

তোমরা যাও। আমি কাজ করছি।

ছিকু নিচের ঠোঁট উল্টে কেঁদে দিল।
পরী চেঁচিয়ে বলল

আচ্ছা যাচ্ছি।

ছিকুর কান্না সাথে সাথে থেমে গেল। গাল মুছে নাক টেনে বলল

রেহানকে বুলে দিবো পরী বিশিবিশি পুঁচা। পুঁচা কেন?

পরী ধমক দিতেই ছিকু দৌড়ে রান্নাঘর থেকে বের হয়ে গেল। মুনার আঙুল ধরে নিয়ে যেতে যেতে বলল

ওহ ওহ মুজা মুজা।

কি মুজা?

ছিকু আঙুল টেনে নিয়ে যেতে যেতে মাথা দুলালো। বলল

মুজা মুজা। মিহি মার খাবে কেন?

মাহিদের ঘরের সামনে গিয়ে ছিকু থামলো। দরজা খোলা। ভেতরে লাইট জ্বলছে। এরকম তো আগে ছিল না। গ্লাস টা ও নিচে রেখে গিয়েছিল সে। সেটা ও নেই। ভাবতে ভাবতে ছিকুর কপাল কুঁচকে এল।

চেঁচিয়ে বলল

মিহি পিহুকে লুকি ফিলছো কেন? গিলাস লুকি ফিলছো কেন? মিহি লুকি আছো কেন?

মাহিদ ভেতর থেকে আওয়াজ করলো।

একশ বার লুকামু শালা। তোর বাপের কি? তোর চৌদ্দ গুষ্টিরে ডাইকা আন। শালা ভিলেন।

সবাইকে ঘরে নিয়ে এল ছিকু। মুনা বলল

তুই ওর সাথে এভাবে কথা বলিস মাহি?

তো কিভাবে কইতাম?

ছিকু এদিকওদিক তাকিয়ে বলল

পিহুকে লুকি ফিলছো কেন? দজজা বাধি দিছো কেন?

মাহিদ উপুড় হয়ে শুয়ে ফোনে গেমস খেলতে খেলতে বলল,

একশবার দিয়ুম।

নীরা বলল,

পিহু কোথায় রে?

মাহিদ ইশারায় বলল,

ওয়াশরুমে।

নীরা মুনা পরী বুঝলো। ছিকু বুঝলো না। বিছানায় উঠে গেল। মাহিদের পিঠের উপর বসে চুল গুলো হাতের মুঠোয় নিয়ে টানতে টানতে বলল

পিহুকে আনি দাও। লুকি ফিলচো কেন? এখুন আনি দাও।

মাহিদ উল্টে গিয়ে ছিকুকে ধপাস করে ফেলে দিল। ছোট্ট শরীরটা টেনে এনে গালে ঠাসঠুস মারতে মারতে বলল

একশবার লুকামু। তুই কি করবি? কি করবি বাপ? কহ।

ছিকু ঠোঁট টেনে বলল

পিহুকে লুকি ফিলচো কেন?

বলতে না বলতেই কান্না শুরু করলো। নীরা বলল

আহা কাঁদছো কেন বাবুসোনা? পিহু তো ওয়াশরুমে।

পিহু ভেজা মুখে বেরিয়ে এল। তোয়ালে নিয়ে মুখ মুছতে মুছতে হেসে বলল

পিহুকে কি দরকার? মন পুড়ছে?

ছিকু কান্না থামিয়ে চোখ উল্টে তাকালো। পেটে হাত দিয়ে বলল

পেট পুড়িচে কেন? মিহি পিহুকে লুকি ফিলচে কেন?

পিহু ঠোঁট টিপে হাসলো। মাহিদ সবাইকে বলল

তোমরা তোমাগো কাজে যাও বাপ। এইখানে দাঁড়ায় দাঁড়ায় শালার তামাশা দেখার দরকার নাই।

সবাই হাসতে হাসতে চলে গেল। পিহু ছিকুর পাশে এসে বসলো। তাকে কোলে তুলে নিয়ে দু গালে আদর দিয়ে বলল

কলিজার পেট পুড়িচে?

ছিকু মাথা নাড়লো। মাহিদ বলল

পানি ঢাইলা দে বাপ। তোর আর ও কতকিছু পোড়ে আল্লায় জানে।

মিহি বিদ্দব, অচুভ্য।

পিহু খিক করে হেসে তাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো।

ছিকু মুখ তুলে বলল

পিহু মিহির ঘরে ঘুম দেয় কেন? পিহুর ঘর নাই কেন?

পিহু হেসে ফেলল। মাহিদ হা করে তাকিয়ে থাকলো। তারপর পিহুর পেছনে এসে বসলো। কাঁধে থুঁতনি রেখে ছিকুর গাল টেনে দিয়ে বলল

শালা তোর চোখ দুটা সব দিকে যায়। তুই তো আস্ত একটা জ্বলজ্যান্ত ঝুঁকি। তোরে এইখানে থাকতে দেওয়া যাইবো না। তুই আমারে আমার বউয়ের লগে পেরেমটেরেম করতে দিবিনা বাপ।

ছিকু মাহিদকে পিহুর কাঁধ থেকে ঠেলে সরিয়ে দিতে চাইলো। বলল,

মিহি সরি যায় না কেন?

পিহু হাসতেই আছে। মাহিদ পিহুকে এবার জড়িয়ে ধরলো। বলল

সরব না। তুই কি করবি কর।

পিহু হাসতে হাসতে বলল

আরেহ ছাড়ো। ও সারাক্ষণ বলতে থাকবে।

বলুক। শালার মুখ সেলাই করে দিমু আমি।

ছিকু ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে রইলো। বলল

মিহি চবচময় ছিকুকে বুকা দেয় কেন? আদুর করেনা কেন?

বাদুড়রে নাকি আদুর করতাম!

বাদুড় ডাকো কেন? পিহুর কোল থেকে নেমে গেল সে। বিছানা থেকে নেমে মুখ মোচড় দিয়ে বলল

মিহি ডগ। ক্যাট।

মাহিদ নিচের ঠোঁট কামড়ে তার কাছে ছুটে গেল। ছিকু একদৌড় দিল। পিহু দুজনের পেছনে ছুটতে ছুটতে বলল

এভাবে দৌড়াচ্ছ কেন ওকে ? পড়ে ব্যাথা পাবে।

মাহিদ ছিকুকে খপ করে ধরে ফেলল। ছিকু চেঁচিয়ে চেঁচিয়ে বলল

ও বাপ মিহি ধরি ফিলচে কেন?

মাহিদ বলল

আর ক্যাট ডাকবি? আর ডগ ডাকবি? আমি তোর শ্বশুর বাপ। কি ডাকবি কহ। শ্বশুর।

চচুর।

ধুরর হাঁদারাম।

ধুরর আদারাম।

মাহিদ হো হো করে হেসে উঠলো। হাসতে হাসতে পিছু ফিরতেই পিহুকে দেখলো। পিহু চোখ ছোট ছোট করে তাকিয়ে কোমরে হাত রেখে বলল

ওকে কি ডাকতে বলেছ?

মাহিদের হাসি থেমে গেল। আমতাআমতা করতে করতে মাথার পেছনে চুলকাতে লাগলো। তারপর সোজা হেঁটে চলে গেল। ছিঃ ছিঃ ডাক্তারের বাচ্চি সব শুইনা ফেলছে।

ছিকু পিহুর শাড়ি ধরে টানতে টানতে বলল

মিহি চচুর কেন? মিহি আদারাম কেন?

পিহু হেসে উঠলো। কি জবাব দেবে সে?

________________

রেহান এসেছে পিহু আর পরীকে নিয়ে যাবে। সব গোছগাছ হয়েছে। নীরা বলল,

বেশিদিন থাকা লাগবে না। দুদিন থাকলে যথেষ্ট।

পিহু কিছু বলল না। পরী বলল

ছোটমা দুদিন খুব কম হয়ে যাচ্ছে না?

ওকে তো আবার মেডিক্যালে যেতে হবে। পড়াশোনা শুরু করতে হবে না। ওদিকে যদি বেশিদিন থাকে তাহলে আমাদের সাথে সময় কাটালো কই? মেডিক্যালের পড়াশোনার অনেক চাপ। ঠিক আছে পিহু যেটা চায়। আমি আর কি বলব?

পিহু কিছু বলল না। রেহান বলল

পিহু কি বলো?

আমি কিছু জানিনা।

মুনা বলল

আচ্ছা সে পরে দেখা যাবে। এখন যাচ্ছে যাক। আল্লাহ সহায় হোক। মাহি কোথায়?

পরী বলল

ভাই তো খেলতে চলে গেল। ও নাকি পরে যাবে বলছিল।

ঠিক আছে।

রেহান বলল

গাড়িতে গিয়ে বসো সবাই।

সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে তারা বেরোলো। ছিকু যাওয়ার সময় সবাইকে টা টা দিল। মুনা বলল, আবার এসো ভাই।

পিহু বলল, কলিজাকে আমি আবার আমার সাথে নিয়ে আসবো।

ছিকু ভীষণ খুশি হয়ে বলল,

পিহু বিশিবিশি ভালো কেন?

পাম্প দেওয়া হচ্ছে?

ছিকু খিকখিক করে হাসতে লাগলো।

_________

পরী পিহু আসায় চৌধুরী বাড়ির সবাই ভীষণ খুশি। আফি বলল

আমার আম্মাগো নাই তাই পুরা বাড়ি খালি। আমার ভাই নাই পুরা বাড়ি ঠান্ডা। যেন কোনো কাকপক্ষী ও নাই।

ছিকু আফির কোলে ঝাপ দিল। তারপর রাইনার কোলে। তারপর ইশার কোলে। তার আনন্দের শেষ নেই।

ইশার কাছে গেল পিহু। সালাম করে জড়িয়ে ধরলো। ইশা মুখে হাত বুলিয়ে আদর করে বলল

সব ঠিকঠাক আছে? নীরু কতদিন থাকতে বলল?

জাস্ট দুদিন।

আমাকে ও তো ফোনে একথা বলল।

তুমি কিছু বলোনি? শুধু দুদিন কেন?

আমি কিছু বলিনি কারণ ও খুব সিরিয়াস হয়ে কথাটা বলছিল।।

পিহুর মন খারাপ হয়ে গেল। ইশা বলল, আচ্ছা সেসব নিয়ে ভাবতে হবেনা। আমি মাহিকে বলে দেখি।

পাপা তো সন্ধ্যায় আসবে।

হুম। ঘরে যাও এখন। মাহি কখন আসবে বলল?

আমাকে তো কিছু বলেনি। দাভাইকে বলেছে বোধহয়৷

রেহান বলল

পরে আসবে বললো কাকিয়া৷ এগজেক্টলি বলেনি কখন আসবে? তুমি ফোন দিয়ে দেখো পিহু।

পিহু মাথা নাড়লো।

_____

পিহু গিয়ে আফিকে জড়িয়ে ধরলো। বলল

বড়পাপা, কেমন আছ তুমি?

আফি হাসতে হাসতে বলল

আমার খোঁজ খবর রাখনোর মানুষ চইলা গেছে। কি করে ভালা থাকি আম্মা জান?

পরী বলল

আচ্ছা? আমরা কেউ তোমার খোঁজ খবর রাখিনা?

তুমি ও চইলা গেছ। তাই বলতেছি আম্মা।

রাইনা ইশাকে বলল

দেখেছিস ছোট? এই লোকের মতো আজব মানুষ আর দেখেছিস? আমরা কেউ খোঁজ খবর রাখিনা?

পিহু বলল

তুমি সবসময় বড়পাপার সাথে এভাবে খ্যাঁকখ্যাঁক কেন করো বড়মা? আমি না থাকলে আর ও বেশি বেশি করো না?

আফি বলল

একদম ঠিক কথা। একদম ঠিক। সবসময় এমন করে।

শোনো বড়পাপা তোমার সাথে যদি সবসময় এমন করে তুমি আমার এখানে চলে যাবে। আমি তোমাকে আমার কাছে রেখে দেব। তারপর ওরা যখন হুটহাট বাজারে যাওয়ার, আর টুকটাক কাজ করানোর মানুষটা পাবেনা তখন মজা বুঝবে।

এটা কেমন কথা আম্মা?ওইটা তোমার শ্বশুর বাড়ি। মাইয়্যার শ্বশুর বাড়িতে বাপ থাকবো এটা কোনো কথা?

কেন থাকতে পারেনা ? তুমি আমার কাছে থাকবে। ব্যস।

আফি হেসে মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলল

আল্লাহ বাঁচায় রাখুক। আল্লায় আমার ভাইরে এগুলা না দিলে আমারে নিয়া এত ভাবত কে?

পিহু হেসে বলল

আমি তো তোমার মেয়ে।

মাইয়্যা না বলছি কবে? আমি তো সবাইরে বইলা বেড়ায় আমার তিনটা ছানা।

________________

আদি বৃষ্টিতে ভিজে বাড়ি এল সন্ধ্যার দিকে। পিহু তোয়ালে নিয়ে দৌড় দিল। হাত থেকে ব্যাগ নিয়ে ফেলল। আদি তাকে দেখে হেসে ফেলল। বলল

আমার মা তো চলে এসেছে দেখছি।

পিহু তাকে গিয়ে ঝাপটে ধরলো। বলল

আমি তোমাকে খুব মিস করেছি পাপা।

আদি মাথায় হাত বুলিয়ে বলল

আমি ও তো আমার মাকে মিস করেছি। ভীষণ। এখন ছাড়ো তুমি ভিজে যাচ্ছ তো।

পিহু তোয়ালে দিয়ে মাথা মুছে দিয়ে চশমা খুলে নিয়ে বলল,

ভিজেছ কিভাবে? গাড়ি করেই তো এলে। গাড়িটা নষ্ট হয়ে গেল মাঝপথে৷ সেটা ঠিক করার জন্য ছোটাছুটি করতে গিয়ে এই অবস্থা। ড্রাইভার আঙ্কেল অসুস্থ। ওনাকে ভিজতে দিলাম না তাই।

ওহ।

মাহি আসেনি?

নাহ।

কেন?

কখন জানি আসবে বলছে।

এটা কোনো কথা হলো? নতুন জামাই সে। ভালো রান্নাবান্না করতে হবে।

সব রেডি করে রাখা আছে। শুধু রান্না বসিয়ে দিলে হবে।

ফোন করোনি?

করেছি।

কি বলল?

পিহু আমতাআমতা করে বলল

তেমন কিছু বলেনি। তখন খেলার মাঠে তাই।

চলে আসতে বলো। রাতে জামাই শ্বশুর মিলে দুমচে খাওয়াদাওয়া হবে।

আচ্ছা বলব।

__________

মাহিদ খেলার মাঠ থেকে ভিজে পুড়ে এল। ক্রিকেট ব্যাড সোফার সাথে হেলান দিয়ে রাখতে না রাখতে নানী এসে বলল,

ওই বেটা তুই তোর শ্বশুর বাড়ি যাবিনা?

কেন?

কি বলে কেন? তোর বউ গেছে তুই যাবিনা?

সে তার বাপের বাড়ি গেছে? ওইখানে আমি কি করব?

নানী লাঠি দিয়ে গুঁতো মেরে বলল

বউয়ের লগে যাওয়া লাগে। এগুলো কোনো কথা? যা গোসল টোসল কইরা সাজগোজ কইরা চইলা যাহ। তোর ফুপী ফোন দিছিলো। তোরে পাঠাইতে বলছে শীঘ্রই। যাহ।

মাহিদ দু চোখ বন্ধ করে বলল

আমি ক্লান্ত বাপ। কোথাও যেতে পারব না আজ।

নীরা এসে ধপাস করে পানির গ্লাস রাখলো টেবিলে। বলল

তো খেলতে গিয়েছিস কেন? বিয়েশাদি করেছিস তারপরও খেলা টেলা নিয়ে থাকিস তুই। বাচ্চা কাচ্চা হইলে ও খেলা নিয়ে থাকিস। তোকে আর কিছু করতে হবে না।

আশ্চর্য! খেলাকে টানো কেন সবসময়? মানুষ বুড়ো হলে ও খেলে। এখন খেলব না কখন খেলব?

তো তোরে কি আমি খেলতে বারণ করছি? খেল না। খেলার একটা সময় আছে তো। তুই সেই কোন সকালে বের হবি, তারপর সন্ধ্যায় ফিরবি। এটা কোনো কথা হলো?
ঝড় বৃষ্টির দিনে তুই বাইরে থাকলে আমাদের চিন্তা হয় না?.

ঝড় ছিল না সারাদিন। খেলা শেষ হয়ে গেছে তার আগে। ফিরতে দেরী হয়েছে।

তো নাওয়া খাওয়া ছেড়ে মানুষ খেলা খেলে? যেকোনো কিছুর একটা লিমিট থাকে মাহি। এই এলাকায় ও তো খেলিস না,তোর বাপ ও চেনেনা অমন জায়গায় খেলতে চলে যাস তুই। কাউকে কিছু বলার প্রয়োজন মনে করিস না। পিহু ফোন দিচ্ছিল সকাল থেকে৷ একবার ও ফোন তুলছিস?

তুলছি।

কখন?

দেড় টাই।

মহৎ কাজ করে ফেলছিস। ওকে কখন যাবি বলছিস?

কিছু বলিনাই।

তো কি বলছিস।

খেলার মাঠে আছি। ফোন দিতে বারণ করছি।

মুনা বিড়বিড় করলো

একটু ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে ও কথা বলতে পারেনা গাঁধা।

নীরা আর কিছু বলতে না পেরে, করতে না পেরে হনহনিয়ে চলে গেল। মুনা এসে বলল

বাড়িতে অশান্তি করিস না আর। তোর বাপ এসে এসব শুনলে রাগারাগি করবে। নতুন বিয়ে করেছিস এখন কত নিয়ম মানতে হবে তোকে।

মানব না কখন বলেছি ?

সেটা তো বলিসনি। যাবি সেটা ও তো বলছিস না৷

নীরার প্যানপ্যানানি ভেসে আসছে। খেলা করলে হবে তাকে। খেলা তাকে ভাত দেবে। বাপের টাকায় খাচ্ছে পড়ছে তাই খবর নেই। টাকা পয়সা কামাই করা ছাড়া তাকে বউ দিছে এটাই বেশি। টাকা না থাকলে বউ যাইতে ও দেরী নাই।

মুনা বলল

বাজে কথা রাখ তো।

মাহিদ পা বাড়ালো । নীরা বলল

ওখানে তাড়াতাড়ি যেতে বলো আপা। নইলে আমি বেরিয়ে যাব বাড়ি থেকে। সবসময় ওর কথা চলবে না এই বাড়িতে।

যাবে যাবে। মাহি তাড়াতাড়ি যাহ। আর অশান্তি করিস না৷

মাহিদ ঘরে চলে গেল। গোসল করে বের হয়ে তোয়ালে দিয়ে মাথা মুছতে মুছতে ফোন হাতে নিতেই দেখলো পিহুর অনেকগুলো ফোন। ফোন ব্যাক করলো সে । পিহু তার ফোন পেয়ে ভড়কে গেল। কোনো বকাঝকা করবে না তো আবার। ভয়ে ভয়ে ফোন রিসিভ করলো সে৷ কানে তুলতেই মাহিদ বলল

কি?

কি মানে?

এত ফোন কেন?

তুমি আজ আসবে না?

নাহ।

ওহ।
কেন আসবে না?

বৃষ্টি পড়তেছে বেশি তাই বেরোবো না।

ওহ।
তো কবে আসবে?

জানিনা।

ওহ। আচ্ছা।

রাখছি।

আজ আসো না। আম্মা আব্বা বলছিল। আসতে হয়।

মাহিদকে কথা বলতে না দেখে পিহু বলল

আচ্ছা আসতে হবে না। রাখি।

ফোন নিজে থেকেই রেখে দিল পিহু। হাতের মুঠো দেয়ালে ঠেকাতে ঠেকাতে বিড়বিড় করলো

জন্মের ঘাড়ত্যাড়া।

ইশা তার ঘরে আসলো। বলল

মাহিকে ফোন দিয়েছ?

দিছে।

কি বলল?

আসবে না। বৃষ্টি হচ্ছে তাই বেরোতে ইচ্ছা করতেছে না।

এটা কেমন কথা? ওকে ফোন দাও আবার। আমি কথা বলি।

পিহু বলল

আমি পারব না। তুমি দাও।

আচ্ছা ফোন দাও আমাকে। আমি কথা বলি।

ইশা ফোন দিল। মাহিদ ফোন তুললো। ইশা বলল

মাহি আমি তোর ফুপী বলছি।

বলো।

আসবি না আজ?

মাহিদ চুপ করে থাকলো। ইশা বলল

চলে আয়। এখানে আসলে ভালো লাগবে। নীরু কি বকাঝকা করছে নাকি?

তেমন কিছু না।

ইশা হেসে উঠে বলল

আমি জানি। আচ্ছা বাদ দে। তোর মা তো। একটু বকাঝকা শুনতে নয় মায়ের কাছে। চলে আয়। আমি তোর পছন্দের রান্নাবান্না করছি। চলে আয়। হ্যা?

মাহিদ কি বলল তা স্পষ্ট না। ফোন রাখতেই পিহু জিজ্ঞেস করলো।

আসবে বলছে?

স্পষ্ট বলেনি। মনে হয় আসবে।

তুমি কিছুক্ষণ পর আবার ফোন দিও।

পিহু বলল

আচ্ছা।

_______

মাহিদকে নতুন শার্ট প্যান্ট পড়ে আসতে দেখলো নানী। বসার ঘরের দিকে আসতেই বলল

যাচ্ছিস নাকি?

কোথায়?

তোর শ্বশুরবাড়ি।

মাহিদ উত্তর দিল না।

চুপ কেন? যাচ্ছিস?

হুহ।

বাহ মত পাল্টেছে তাইলে। ভালা। যাহ। নীরু তোর ছেলে বাইর হইতেছে।
শোন ভাই।

মাহিদ ঘড়ির বেল্ট লাগাতে লাগাতে বলল

কিহ?

খালি হাতে যাস না।

জানি।

কি জানোস।

ছিকুর জন্য চকলেট চিপস।

ধুরর ছিকুসোনার জন্য তো বাধ্যতামূলক ওগুলা।

তো?

তো মানে কি? তোর বউয়ের জন্য। মানে পিহুর জন্য।

পিহুর জন্য কি?

কিছু নিয়ে যাবি আর কি। বাইরে থেকে জামাই কিছু নিয়ে গেলে বউমানুষ খুশি হয় বুঝোস না? আমি ও তো এককালে বউ আছিলাম। তোর নানা আমার জন্য কত কি আনতো। বাজার থেকে ফেরার সময় চুলের ফিতা চুড়ি কানের দুল কত কি আনতো। সবার কাছ থেকে লুকায় লুকায় আচার আনতো।

লুকাতো কেন?

আরেহ বুঝোস না তখনকার মানুষ তো বউসোহাগা বেডামানুষরে কাপুরুষ ডাকতো। তাই আর কি! আজকালকার পোলাপানগুলা তো বউপাগলা সোহাগ। কিছুই বলতে হয় না কাউরে । কাউরে শরম ও করেনা। আমি তো তোরে তেমন ভাবছিলাম। কিন্তু তুই দেখি কিছুই জানোস না।

ওহ।

ওহ মানে কি? কিছু নিয়ে যাস।

হুহ।

কি হুহ? বিয়ার রাইতে ও তো কিছু দিলিনা। বিয়ার রাইতে কিছু দিতে হয় জানোস না?

কি দিতে হয়?

আমার মাথা। শুধু আদর দিলে তো চলবো না। কিছু উপহার দিতে হয়। ওই রাইত মনে রাখার জন্য। বুঝোস না?

তো এখন?

এখন আর কি করবি? তুই তো নাকি কিছুই দিলিনা। আমারে বলছে।

কে?

তোর বউ।

কি বলছে?

বলছে শুধু আদরসোহাগ দিছে, অন্য কিছু দেয়নাই।

মাহিদ ঝাড়ি মেরে বলল

ধ্যাত। সবসময় ফালতু কথা।

নানী খিকখিক করে হেসে ফেলল।

লজ্জা পাইছোস? তুই আমার ভাই। তোর লগে মশকরা করবোনা তো কার লগে করব? তুই তো কিছুই জানিস না তাই তোরে শিখায় দিতাছি।

শিখানো লাগবে না।

তার গলার আওয়াজ শুনে নীরা মুনাকে বলল

যাচ্ছে?

হ্যা। ছাতাটা দিয়ে আয়।

নীরা ছাতা নিয়ে গেল। মাহিদ দাঁড়িয়ে ছিল। নীরা গিয়ে ছাতা বাড়িয়ে দিল। বলল

সাবধানে যাস। নে ছাতা।

মাহিদ অন্যদিকে তাকিয়ে ছাতা নিল। নীরা বলল

টাকা লাগবে আর?

না।

ওহ আজ তো টাকা কামাই করেছিস। ভুলে গেছিলাম। ঠিক আছে। দোয়া দরুদ পড়ে গাড়িতে উঠিস। ফি আমানিল্লাহ।

মাহিদ মাথা নাড়ালো।

বের হয়ে গেল। নানী পান চিবোতে চিবোতে বলল

তোর পোলা তোর সাথে সেইরকম রাগ করছে নীরু। তোর দিকে তো তাকালো ও না।

আর কিছু না জানুক, বাপের মতো কথায় কথায় রাগ করাটা ঠিক জানে। বাপ বেটার ঢং দেখলে বাঁচি না।

মুনা বলল

তোর কি রিপকে যেখানে সেখানে না টানলে হয় না?

মাফ চাই বাপ। আর কিছু বলব না।

__________

মাহিদ ছিকুর জন্য চিপস ললিপপ বিস্কিট কিনলো। আফির জন্য দুটো বেনসন। না নিয়ে গেলে সবার সামনে তাকে আবার লজ্জায় ফেলে দেবে। কিছু ফলমূল কিনলো। নানীর কথাটা মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে। এখন মনে হচ্ছে কিছু কিনে না নিয়ে গেলে বড় ধরণের অপরাধ হয়ে যাবে। কসমেটিকসের দোকানে গিয়ে সে থামলো। অনেকগুলো মেয়ে কেনাকাটা করছে। ভীড় একটু কমে আসতেই সে দোকানে ঢুকলো। দোকানদার বলল

কি নিবেন ভাই?

মাহিদ মেয়েগুলোর হাতের দিকে তাকালো। কারো হাতের সাথে তো মিলছেনা।

কি নিবেন?

চুড়ি।

ভাবির জন্য?

জ্বি।

কোনগুলো নেবেন?

যেগুলো সুন্দর লাগবে ওগুলো নেন।

দোকানদার হা করে তাকিয়ে থাকলো। পাশে দাঁড়ানো মেয়েদুটো হাসছে তার কথায়। দোকানদার অনেক চুড়ি বের করলো তার সামনে। বলল

কোনগুলো সুন্দর লাগবে দেখেন। ইমিটিশনের উপর নেবেন? অনেক ডিজাইন আছে।

না ওগুলো আছে। কাচের চুড়ি। শাড়ির রঙের। নীল শাড়ি আছে, নীল চুড়ি দেন।

এগুলো নেন। লাল শাড়ি আছে? লাল শাড়ির সাথে লাল চুড়ি ভালো লাগবে।

দেন।

খয়েরী রঙের দেব?

হ্যা।

তিন রঙের চুড়ি প্যাকেজিং করে দিল দোকানদার। মাহিদ পে করে বলল

এগুলো মেয়েরা কেনে? মানে পড়তে চায়?
দোকানদার আওয়াজ করে হেসে দিয়ে বলল

পড়তে চায় মানে। ভাবি দেখবেন হেব্বি খুশি হবে।

মাহিদ বেরিয়ে এল। চিন্তায় পড়ে গেল। পিহুর এগুলো পছন্দ হবে কিনা। নিশিতার বিয়ের সময় শুধু এ ধরণের চুড়ি পড়তে দেখেছে। কিনে যখন ফেলেছে তখন আর কি করার? রিকশা ডেকে উঠে বসলো। দশ বারে মিনিট লাগলো চৌধুরী বাড়ি পৌঁছুতে। গেইট ঠেলে ঢুকতেই দেখলো ছিকু দক্ষিণ দিকে মুখ করে দাঁড়িয়ে কি যেন করছে একা একা। মাগরিবের আজান তো সে কবে পড়েছে। এখন বাড়ির বাইরে কেন? মাহিদ চুপিসারে হেঁটে গেল। মাহিদকে দেখে ছিকু চমকে গেল। প্যান্ট টেনে তুলে হাত দিয়ে মুখ ঢেকে বলল

ছিকু সুসু করিচে। মিহি নজ্জা দিতে আসিচে কেন?

মাহিদ হেসে উঠলো। শালা তুই এইখানে দাঁড়ায় দাঁড়ায় মুতোস? লজ্জা শরম নাই তোর? বেয়াদব।

ছিকু লজ্জা পেয়ে দৌড়ে বাড়ির ভেতর। আফি বলল

আস্তে ভাই।

ছিকু নাচতে নাচতে বলল

মিহি আসিচে ওহ ওহ মিহি আসিচে।

সবাই বিস্ময় নিয়ে তাকালো। হাসি ফুটলো সবার মুখে। ছিকু তার চিপস চকলেটের প্যাকেট নিয়ে মেঝেতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে গুণতে লাগলো

ওয়ান টু টিরি ফুর ফেভ সিকস

সবাই তার কান্ড দেখে হাসছে। ইশা বলল

সোনা কি করছে? মেঝেতে কেউ এসব রাখে?

ছিকু দাঁড়িয়ে পড়লো। কোমরে এক হাত রেখে অন্য হাতে পাঁচটা আঙুল দেখিয়ে বলল

মিহি ললিপপ বিশিবিশি দেনাই কেন?

পরী গুণে বলল

পুরো এক প্যাকেট আনছে। আর ও বলে। এক চড় দেব।

মাহিদ হেসে তার গাল টেনে দিয়ে বলল

বেশিবেশি আনতাম না বাপ।

ছিকু চকলেট গুনতে বসে গেল।

সবার সাথে কুশলাদি বিনিময় পর ইশা বলল

নীরু বকাঝকা করছে নাকি?

মাহিদ মাথা চুলকে বলল

করে মাঝেমধ্যে।

ইশা হাসলো। বলল

মায়েদের চিন্তা হয় তাই বকাঝকা করে। মাথা ভিজেছে বোধহয়। মুছে ফেল। পরী পিহুকে ডেকে দাও।

পরী ছিকুর মাথার চুল আঁচড়ে দিতে দিতে বলল

ভাই তুই ঘরে যাহ। পিহু বই পড়ছিল দেখলাম। হাতে ওটা কি?

মাহিদ চুড়ির শপিং ব্যাগটা পেছনে লুকিয়ে বলল

পিহুর।

পরী হেসে ফেলল। ইশা ও হেসে চলে গেল। পরী বলল

ও আচ্ছা আচ্ছা। যাহ।

আফি বলল

যাহ যাহ বউয়ের কাছে যাহ। তোর বউ তোরে দেখে খুশি হয়ে যাবো। সিগারেট আইনা ভালা করছোস ব্যারিস্টারের পোলা। তোর আক্কেল আছে। আমারটারে দশবার বলতে হয়।

পরী নাকফুলিয়ে বলল

আসুক। আমি বলে দেব আজ।

বলোগা তোমার জামাইরে। শালা তার চাচার মতো হয়ছে। আমারে সিগারেট কিনে দিতে যত কিপ্টামি।

ছিকু বলল

মিহি ছিকুর জুন্য চিগিট আনিনি কেন?

পরী বলল

চুপ। কিসের চিগিট?

ছিকু ঠোঁট টানলো। পরী হেসে বুকে জড়িয়ে চুমু দিল। বলল

নয়।

ছিকু কান্নাকান্না গলায়

দচ।

আচ্ছা দশ।

_______

মাহিদ পিহুর ঘরে গেল । পিহু দরজা ঠেলে কাউকে ঢুকতে দেখে ঘাড় ঘুরাতেই মাহিদকে দেখলো। তাড়াতাড়ি ছুটে এল। টেবিল থেকে ওড়না নিয়ে গায়ে দিয়ে বলল

তুমি?

মাহিদ কিছু বলল না। পিহু তার কাছে গিয়ে হাতের শপিং ব্যাগটা নিল। দেখলো ভেতরে বক্স জাতীয় কিছু। দেখার আগেই মাহিদ কেড়ে নিয়ে বলল

কিছু না।

দেখিনা কি? কি ওগুলা? কার জন্য?

তোর না।

ওহহ।

মন খারাপ হয়ে গেল পিহুর। মাহিদ হেঁটে গিয়ে টেবিলের উপরে রাখলো শপিং ব্যাগটা। পিহু ঘর থেকে বের হয়ে গেল। কিছুক্ষণ পর ফিরে এল কিছু নাশতা আর ফ্রুট নিয়ে। মাহিদ বলল

আমি খেয়ে এসেছি।

এগুলো খাও। আম্মা বানিয়েছে।

ট্রে রেখে পিহু টেবিলের উপর পড়ে থাকা বইগুলো গুছাতে লাগলো। মাহিদ বলল

তুই খেয়েছিস?

হ্যা।

কয়দিন থাকবি?

দশদিন।

আচ্ছা।

বইগুলো আওয়াজ করে করে রাখতে লাগলো পিহু। মাহিদ বলল

এদিকে আয়।

আমি খেয়েছি।

এমনি আয়।

কাজ করছি।

পরে করিস।

পিহু আর কিছু বলল না। মাহিদ পায়েস টুকু খেল৷ ট্রে বেডসাইড টেবিলে রেখে বিছানায় ধপাস করে শুয়ে বলল

ট্রে টা দিয়ে আসি।

দরকার নেই।

পিহু ট্রে টা নিতে গেল। মাহিদ ওড়না ধরে টানতে লাগলো। পিহু ওড়না কেড়ে নিতেই মাহিদ হাত ধরে টান দিয়ে তার উপর টেনে আনলো। পিহু বলল

দরজা খোলা৷ ছিকু চলে আসবে৷ ছাড়ো।

আসুক। শালারে কে ভয় পায়?

যে কেউ চলে আসতে পারে।

আসুক। আমার বাপের কি?

পিহু তার সাথে না পেরে শান্ত হয়ে গেল। মাহিদের মুখের উপর চুল পড়তেই পিহু চুলগুলো কানের পেছনে গুঁজে নিল। মাহিদ পিহুকে পাশে ফেলে দু হাত দুপাশে রেখে ঘিরে ধরলো। নাকে নাক ঘষে বলল

তোর শাড়ি কই?

আছে।

শাড়ি না পড়লে বউ বউ লাগেনা।

আমি কার বউ?

আমার।

কি রকম বউ? ফোন দিছিলাম আসবে কি না জিজ্ঞেস করতে । বললে, ফোন না দিতে। আর দেব না।

আরেহ আরেহ তুই আমার সামান্য কথায় রাগ করা কখন শুরু করলি। ফোন বন্ধ করছিলাম তাই বারণ করলাম। ফোন দিলে তো আমাকে ফোনে পেতিনা।

ওগুলো কি এনেছ?

কোনগুলো?

পিহু কথা না বলে মুখ ঘুরিয়ে রাখলো। মাহিদ হেসে দিল। নাক, ঠোঁট পিহুর গালে চেপে ধরলো। তারপর মুখ তুলে কানেকানে বলল

এগুলা তোর৷

পিহু দেখার জন্য উঠে যাওয়ার চেষ্টা করলো। মাহিদ নাকে নাক চেপে ধরে বলল

এখন না।

কখন? কি এনেছ দেখি না?

পরে দেখিস। একটা কথা বল। আমার চাকরি না হলে কি করবি?

কেন হবে না?

ধর হয়নি। তখন কি করবি?

কি করব আর?

বেকার মানুষের সাথে কয়দিন থাকতে পারবি?

উল্টাপাল্টা কথা কেন বলো? তুমি ভালো একজন স্টুডেন্ট। বেকার থাকবে কেন?

বল না কি করবি? ছেড়ে যাবি?

পাগলের মতো কথা বলো কেন? বেকারের সাথে ছেড়ে যাওয়ার কি সম্পর্ক?

তাহলে মা কেন বলল বেকার হয়ে বউ পেয়েছি এটা অনেক। তবে বউ যেতে বেশি দেরী নেই।

ওহ এই কথা? রাগ করে বলেছে। মায়েরা কত কথা বলে। সব কি কানে নিতে আছে নাকি?

তারমানে যাবিনা?

কোথায় যাব? তুমি চাকরি না করলে আমি ডাক্তারি করব। হয়ে যাবে। সবসময় ছেলেরাই চাকরি করে ঘর সংসার চালাবে এটা কোথায় লেখা আছে?

মাহিদ হেসে ফেলল। বলল

জিনিয়াস।

পিহু ও হাসলো। দুহাত দিয়ে গলা জড়িয়ে ধরে বলল

এবার ছাড়ুন বরসাহেব। ছিকুসাহেব যদি ভুলেভালে দেখে ফেলে তাহলে সব শেষ।

বলতে না বলতে গুনগুন করে নিজে কথা বলতে বলতে ছিকু এল। পিহু চোখ বন্ধ করে বলল

কাম সাড়ছে।

মাহিদ সরলো না। ছিকু পিটপিট করে তাকালো। কিছুক্ষণ পর বলল

মিহি পিহুকে আদর কচচে কেন? পিহু ছুটু কেন?

পিহু মাহিদের পিঠে মুখ চেপে ধরে বলল

এবার একে থামাও। সব তোমার দোষ।

চলবে,

#মন_গোপনের_কথা
#পর্ব_৪৭
লেখনীতে, পুষ্পিতা প্রিমা

মাহিদ গালে হাত দিয়ে ছিকুর দিকে পলকহীন তাকিয়ে রইলো। পিহু ঘর থেকে বের হয়ে গেল। ছিকু কোমর থেকে হাত নামিয়ে বলল

পিহু চলি গিচে কেন?

তোর কথার অত্যাচার সইতে না পেরে।

পুঁচা কথা বলো কেন?

চুপ। এদিকে আয়।

ছিকু এল। বলল

পিহু ছুটু কেন? পিহুকে আদর দিচো কেন? ছিকুকে আদর করোনা কেন?

মাহিদ তার গাল টেনে ধরলো। আলতোকরে ঠাসস করে গালে মেরে বলল

তুই আমাগোরে কি পেরেম টেরেম করতে দিবিনা শালা?

দিবোনা কেন? পিরিম করো কেন?

মাহিদ হো হো করে হেসে ফেলল। ছিকু তার সাথে সাথে হাসলো। মাহিদ আঙুল দিয়ে তার পেটে গুঁতো মেরে বলল

তুই আমার জামাই হবি।

হুবোনা কেন?

না না জামাই হবি।

না হুবোনা।

না না হবি।

না না জেমাই হুবো কেন?

আমার মাইয়্যারে তোর কাছে দিয়া দিমু।

মিইয়া কুথায়? ইখানে নাই কেন?

মাহিদ তার কানে কানে বলল

তোরে বলুম না।

কেন বলবে না কেন? তুমি ডগ কেন?

মাহিদ এবার তার পেটটা মুঠোতে নিয়ে টেনে আনলো। ছিকু বলল

দুক্কু দাও কেন? উফফ।

মাহিদ বলল

তুই আমারে কুত্তা ডাকছোস কিল্লাই? কিল্লাই ডাকছোস?

ডগ কুত্তা কেন?

তোর ডগ কওনের গুষ্ঠিরে কিলাই বাপ। কুত্তা ডাকবি। রাখ তোর ডগ।

মিহি কুত্তা কেন?

মাহিদ হা করে চেয়ে থাকলো। কপাল চাপড়ে বলল

আমারে ডাকতে কইনাই শালা।

মিহিকে ডগ বলতে মন চায় কেন?

মাহিদ তাকে কোলে তুলে বিছানায় ছুঁড়ে মারলো। বালিশ দিয়ে চেপে ধরলো। আবার বেডশীট তুলে ঢেকে দিল। বালিশ দুটো দিয়ে ঢেকে দিল। বলল

তুই থাক বাপ। শালা কেন কেন কইরা মাথাটা শেষ কইরা দিল। শালা ডাক্তারের নাতি।

পিহু এসে বিছানার এই অবস্থা দেখে হায় হায় করে উঠলো।

আমার বিছানার এসব কি করেছ?

মাহিদ আলাভোলা চোখে তাকালো। বলল

আমি করিনাই। তোর বোনপো করছে।

পিহু কোমরে হাত দিয়ে দাঁড়ালো। ছিকু কাঁথার আর বালিশ সরিয়ে মুখটা বের একটুখানি চাইলো। পিহুকে রাগতে দেখে আবার ঢুকে পড়ে বলল

পিহু রাগি গিচে কেন? মিহি আদোর করেনি কেন?

পিহু খিক করে হেসে আবার হাসি চাপা দিল। মাহিদ হাসতে হাসতে বিছানায় শুয়ে পড়লো। মাহিদের হাসি শুনে কাঁথার ভেতরে ছিকু ও হাসতে লাগলো খিকখিক করে। পিহু মাহিদকে বালিশ দিয়ে মারতে মারতে বলল

সব তুমি করেছ। ও এখন থেকে এসব বলতে থাকবে। অসভ্য মানুষ।

মাহিদ ছিকুর সাথে কাঁথার ভেতরে ঢুকে পড়ে বলল

আর মারিস না বইন। মাফ কর।

পিহু ঘর থেকে বের হয়ে গেল। ইশা আর পরীকে গিয়ে বলল

ওরা আমার ঘরের কি অবস্থা করেছে দেখে আসো।

মাহি আর ছিকু?

হ্যা।

মামা ভাগিনা এক হলে আর কি?

মাহিদ আর ছিকু মিলে বিছানা ভালো করে গুছিয়ে ফেলল। মাহিদ ছিকুকে বলল

কাম কর কাম কর। আমার এরকম জামাই পছন্দ। বিয়ার পর আমার মাইয়্যা তোর কাম করবো না। তোর কোনো কাম করতে দিবিনা খবরদার। যদি শুনি তুই কাম করাইতাছোস তাইলে তোর খবর আছে। দিনে দিনে আইসা মাইয়্যা লইয়্যা যামু আমি। আমার নাম মাহিদ খান। খান বংশের পোলাগো এখনো চিনোস নাই তুই।

মাহিদের কথাগুলো ছিকুর মাথার উপর দিয়ে গেল। ঠিক করা বিছানায় গড়াগড়ি খেয়ে বলল

‘ মিহি বিশিবিশি কথা বুলে কেন?

মাহিদ তার পিঠে মেরে বলল

চুপ শালা। আমার কথা হুন। তুই কুনো মাইয়্যার দিকে তাকানোর আগে দশবার ভাববি। কথা বলার আগে একশবার। খবরদার তোরে যদি দেখি কোনো মাইয়্যাগো লগে ভাবসাব করতাছোস তাইলে তোরে আমি খাইছি। তোরে সোজা মাইয়্যা দিতাম না।
ছিকু মাহিদের মুখ বরাবর মুখ আনলো। ছোট্ট দুহাত দিয়ে মাহিদের ছোট ছোট দাঁড়িগুলো আঙুল দিয়ে ছুঁয়ে ছুঁয়ে বলল

কেন মিইয়্যা দিবেনা কেন?

যা কইছি তা মাথার ভেতর ঢুকা। দুবার কথা কইতাম না। তুই আমার দাঁড়ি লইয়্যা টানাটানি লাগাইছোস কিল্লাই?

ছিকু জবাব দিল না। সে ব্যস্ত।

মাহিদ তাকে পাঁজাখোলা করে নিয়ে আদর করতে করতে বসার ঘরে নিয়ে চলে এল। ছিকু খিকখিক করে হাসতে হাসতে বলল

মিহি ছিকুকে পিহুর মুতো আদর দেয় কেন?

মাহিদ তার গাল টিপে দিয়ে বলল

কারো সামনে বললে তোরে খাইছি বাপ। মাইয়্যা দিমু না তোরে। মানে বউ পাইতি না।

ছিকুর বউ লাগবে। তাই ভয়ে সে কোনো কথা বলবে না আর। মিহি তাকে বুউ দিবে না৷

পিহু রান্নাঘর থেকে এল। বলল

আমার ঘর গুছিয়েছ দুজনে?

মাহিদ মাথা নাড়লো। পিহু বলল

গুড। নইলে তো আজ দুজনের খবর ছিল।

ছিকু গালে হাত দিয়ে খিকখিক করে হেসে বলল

পিহু মিহিকে বুকা দেয় কেন?

পিহু বলল

দুটোই পাগল।

____________________

রাতে জামাই আদরের আয়োজন। অনেক রান্নার পদ করেছে ইশা আর রাইনা মিলে। তার দুটো মেয়ে জামাইকে আজ জামাই আদর। ছিকু রেহান আর মাহিদের মাঝখানের চেয়ারে দাঁড়িয়েছে। সে সবার বড় জামাই। তাকে বাদ রেখে কোনো জামাই আদর চলবেনা। কবুতরের মাংস খেতে পছন্দ করে ছিকু। নরম নরম মাংস। গরুর মাংস আর মুরগীর মাংস খেতে দিলে চিবিয়ে চিবিয়ে ফেলে দেয়। মাছ এখনো খেতে জানেনা। মাহিদ তাই তাকে শুধু কবুতরের মাংস দিল। ছিকু খেতে খেতে মাথা দুলালো।

মুজা মুজা।

মাহিদ বলল

চুপচাপ খা।

ছিকু ধমক দিয়ে বলল

মিহি চোপপপ।

সবাই একসাথে হেসে ফেলল। আদি বলল

মামাকে চোপ দিচ্ছ?

ডততর চোপপপ করেনা কেন? বিশিবিশি কথা বুলে কেন?

রেহান বলল
এভাবে বলেনা পাপা।

রাইনা বলল

ঠিকই তো বলছে আমার ভাই। তোরা খাওয়ার সময় এত কথা বলবি কেন?

আদি আফিকে বলল

আমাদের টাইট দেওয়ার মানুষ তো চলে এসেছে দাভাই।

আফি বলল

হ। আমার ভাই তোরে সোজা করবো।

আমাকে না। তোমার সিগারেট খাওয়া বন্ধ করবে। সো নিজেরটা ভাবো আগে।

ছিকু ধমক দিয়ে বলল

ডততর পুঁচা কেন? বিশিবিশি কথা বুলে কেন?

আদি বলল

আচ্ছা চুপ করলাম ভাই।

পরী বলল

ওমা! আপনি সবাইকে শাসন করছেন? কি আশ্চর্য!

মাহিদ তাকে চিমটি মেরে ফিসফিসিয়ে বলল

পন্ডিত হয়ছে শালা।

মিহি ছিকুকে চিমুট মারে কেন?

পিহু এসে বলল

চুপচাপ খাও। ওকে নিয়ে পড়েছ কেন? আর কিছু দেব?

মাহিদকে কিছু বলতে না দিয়ে ছিকু বলল

পিহু মিহিকে বুকা দিচে কেন? মিহি পিহুকে চিমুট দেয় না কেন? আদর কচচে কেন?

পানির গ্লাসে পানি ঢালতে গিয়ে পিহু পানি ঢেলে দিল টেবিলে। খুকখুক করে মাহিদ কেশে উঠলো৷ সবাই চুপচাপ মাথা নিচু করে করে খাচ্ছে। পরী রেহানের সাথে ঠোঁট টিপে হেসে দ্রুত সরে পড়লো হাসার জন্য। এই ছেলেটা কেমনে যে এত কথা বলে! আল্লাহ!
লজ্জায় পিহুর কান দিয়ে ধোঁয়া বের হচ্ছে।
আদি ইশাকে বলল

মিষ্টি মাহিকে দেখো। ঝালে কাশি উঠেছে বোধহয়।

মাহিদ চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো। ইশা বলল

ওমা খাওয়া শেষ?

হ্যা হ্যা। সরো আমি যাই।

মাহিদ চলে গেল। পা টিপে টিপে পিহু ও চলে যেতেই টেবিল কাঁপিয়ে হেসে উঠলো সবাই। ছিকু শুধু সবার মুখের দিকে তাকিয়ে রয়েছে। তার ছোট্ট মাথায় কিচ্ছু ঢুকলো না। শুধু ঢুকলো সবাই হাসছে তাকে ও হাসতে হবে। তাই কদুর বিচির মতো দাঁতগুলো দেখিয়ে হাসতে লাগলো।

___________

গেমস গেমস খেলতে ফোন হাতে ঘুমিয়ে পড়েছে মাহিদ। পিহু এসে দেখলো এলোমেলো হয়ে ঘুমোচ্ছে সে। পিহু ফোনটা নিয়ে ফেলল। ছিকুর কথা মনে পড়তেই হাসি পেল। ইজ্জত সম্মান কিছুর কিছুই রাখলো না ছেলেটা। এত পাকনামি কেন যে করে?
মাহিদের ফোন বেজে উঠলো তারমধ্যে। পিহু তাড়াতাড়ি ফোনটা সাইলেন্স করে দিল। ঘুম ভেঙে যাবে। দেখলো নীরার ফোন থেকে কল এসেছে। পিহু ফোন তুললো। সালাম দিতেই নানীর গলা ভেসে আসলো।

আমার ভাই কোথায় রে?

ঘুমোচ্ছে।

ওহহ। খাওয়াদাওয়া করছোস সবাই?

হ্যা, তুমি করেছ?

হ্যা করেছি। ঘুমাতে যাওয়ার আগে ভাবতেছি আমার ভাইরে একটা ফোন দেই। কথা বলি। নীরুরে বললাম তাই ফোন দিতে। যাওয়ার সময় তো রাগ করেই গেল।

কেন? রাগ করলো কেন?

তোর শ্বাশুড়ি বকাঝকা করছে খেলাটেলা নিয়ে। এই আর কি!

ওহহ।

আইচ্ছা রাখ। আমার ভাইয়ের খেয়াল রাখিস।

আচ্ছা রাখো।

হুন নাতবৌ।

হ্যা বলো।

তোর শ্বাশুড়ি সইরা গেছে। তোরে একটা কথা বলি।

বলো না।

আমার ভাই তোরে কিছু দিছে?

উহু। ঢুসে ঢুসে ঘুমাচ্ছে দেখছ না।

আরেহ তোর জামাইরে ঘুম থেইকা তোল। এই রাতগুলা কি আর আসবো নাকি? এখন চুটিয়ে প্রেম করবি। সাজগোজ করবি। আনন্দে থাকবি। গল্প করবি। কত শত কথা বলবি। কতশত আবদার করবি। আবদার না করলে তোরে কি দিব?

কি আবদার করব? ও টাকা পয়সা কামাই করলে তখন করবো।

ওমা তাই নাকি? আইচ্ছা তাইলে তো ভালো। তোমারে তাইলে আদরসোহাগে পোষাইতেছে। আমারে আবার শুধু আদরে পোষাইতোনা। তাই কত আবদার করতাম। ভালা ভালা। সুখে থাক। স্বামীসোহাগী হ। ফোন রাখি।

পিহু ছোট্ট করে আওয়াজ করলো, হুহহ।

তারপর মাথায় চট করে বুদ্ধি এল তারজন্য তো কিছু এনেছিল মাহিদ। কিন্তু সেগুলো কোথায়। সেগুলো খুঁজতে খুঁজতে পাগল হলো পিহু। পেল না।
ভীষণ রাগ হলো। কি এনেছে সেগুলো না দিয়ে ঘুমোচ্ছে। সারাঘরে একলা একা বকবক করতে করতে অনেক সময় পার হওয়ার পরে শপিং ব্যাগটা পেল পিহু। তাড়াতাড়ি দম বন্ধ করে খুলে দেখলো তিন রকমের কাঁচের চুড়ি। খুশিতে চোখজোড়া চকচক করে উঠলো তার। সেগুলো হাত দিয়ে ছুঁয়ে কিছুক্ষণ চুপ করে বসে থাকলো। তারপর চুড়িগুলো পড়ে দেখলো। লাল চুড়ির সাথে লাল শাড়ি পড়লো। আবার নীল চুড়ির সাথে নীল শাড়ি পড়লো।
মাহিদ ঘুমোচ্ছে বড় বড় শ্বাস ফেলে। পিহু তার গয়নার বাক্সটা খুলে তার অন্যান্য চুড়িগুলো নিল। মাহিদের আনা চুড়িগুলো রেখে এই চুড়িগুলো দুহাত ভর্তি করে পড়ে নিল। তারপর আয়নায় বারবার চেয়ে চেয়ে নিজে নিজে হাসলো। খয়েরী রঙের শাড়িটা আর পাল্টালো না। কিছুক্ষণ একা একা ঘরে হাঁটাহাঁটি করলো। তারপর ভাবলো শাড়ি খুলে ফেলবে। কিন্তু না। আবার গিয়ে বিছানায় বসলো। ঘুমানোর চেষ্টা করলো ঘুম এল না। মাহিদের মাথার কাছে গিয়ে বসলো আবার। চুলে বিলি কাটলো। কপাল থেকে চুল সরিয়ে কপালে ঠোঁট ছুঁয়ালো। তারপর মাথার সাথে মুখ লাগিয়ে কিছুক্ষণ চোখ বন্ধ করে রইলো। আঙুল দিয়ে মাহিদের মুখে আঁকিবুঁকি আঁকতে আঁকতে একসময় মনে হলো মাহিদ তার হাতটা ধরে ফেলেছে। পিহু চমকে উঠলো। চোখ খুলে তাকাতেই দেখলো মাহিদ ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে রয়েছে। বলল

কি সমস্যা?

পিহু উত্তর দিল না। মাহিদ তাকে খেয়াল করলো। পিহু খানিকটা লজ্জা পেলে ও বুঝতে দিল না। পিহুর হাতের দিকে নজর গেল তার। হাত ভর্তি চুড়ি। সব নামীদামী চুড়ি। বড় বালাগুলো স্বর্ণের। এগুলো পড়েছে কেন? সে যে আনলো ওগুলো কি পছন্দ নয়?

পিহু সরে পড়লো। মাহিদ একলাফে বিছানা থেকে নেমে চুড়িগুলো খুঁজতে গিয়ে দেখলো সেগুলো আগের জায়গায় রাখা আছে। প্যাকেট খোলা হয়েছিল। তারমানে পিহু দেখেছে। তারপরও পড়েনি। শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো সে। নড়লো না। পিহু হাতে পড়া চুড়ি গুলোর আওয়াজ করতে করতে মাহিদের সামনে এল। হাত দেখিয়ে বলল

বলো কেমন লাগছে? সুন্দর না?

মাহিদ উত্তর দিল।

হ্যা।

পিহু হাসলো। শাড়ি দেখিয়ে বলল

শাড়িটা সুন্দর না?

মাহিদ তাকে আগাগোড়া দেখে বলল

হুহ।

শাড়িটার সাথে চুড়িগুলো খুব মানিয়েছে। তাই না?

মানাইনি।

মাহিদ হেঁটে বিছানায় গিয়ে বসলো। পিহু তার পেছনে গিয়ে বসলো। কাঁধে থু্ঁতনি রেখে বলল

রাগ করেছ কেন? রাগ তো আমার করা দরকার।

তুই রাগ করবি কেন?

করব না? আমাকে একবার ও বললে না কেমন দেখতে লাগছে। আবার বললে মানাইনি।

মানিয়েছে। দামী জিনিস অবশ্যই মানাবে। সস্তা জিনিসে মানাইনা।

মাহিদ উঠে দাঁড়ালো। চুড়িগুলো সে ফেলে দেবে। কোনো দরকার নেই। শালা দোকানদার তো ভীষণ ঠকবাজ মানুষ। কি বলে তাকে গছিয়ে দিল চুড়িগুলো।

পিহু ভাবলো, ধুরর এই ব্যাটা কিচ্ছু বুঝেনা।

মাহিদ চুড়িগুলো নিয়ে বের হয়ে যাওয়ার সময় পিহু পথ আটকালো। বলল

কোথায় যাচ্ছ?

বাইরে?

কেন? এগুলো কার জন্য এনেছ? তাকে দিতে যাচ্ছ?

মাহিদ ভুরু কুঁচকে চাইলো। পিহু মন খারাপ করে চলে গেল। চুপচাপ বসে থাকলো। মাহিদ এসে চুপচাপ পিহুর সামনে বসলো। বলল

এগুলো তো তোর জন্য আনছি। আমি তোর জন্য না এনে আর কার জন্য আনবো?

পিহু চোখতুলে তাকালো। পা গুটিয়ে নিয়ে বলল

আমার জন্য?

হ্যা।

আমার জন্য আনলে সেগুলো না দিয়ে ঘুমাচ্ছিলে কেন?

মাহিদ এবার হাসলো একটুখানি। একটু কাছ ঘেঁষে বসলো। বলল

তুই এজন্য রাগ করছিস? আমি ভাবলাম তোর এগুলো পছন্দ হইনাই। তোর পছন্দ হয়ছে?

পিহু উত্তর দিল না। মাহিদ বলল

হাত দে। এগুলো খুলে দেই।
পিহু দিল না। মাহিদ নিজেই ডান হাতটা নিল। চুড়িগুলো এক এক করে খুলে তার আনা চুড়িগুলো পড়িয়ে দিল। তারপর হাতদুটো হাতের মুঠোয় এনে দীর্ঘ চুম্বন বসালো। পিহু নাকিসুরে বলল

এখনো বলোনি আমাকে কেমন লাগছে?

মাহিদ হাসলো। পিহুর কানের দুপাশে হাত গলিয়ে মুখটা কাছে এনে নাকের ডগায়, ঠোঁটের ব্যক্তিগত কাজ সেড়ে কানে কানে বলল

তুই এলোমেলোতে সুন্দর। অগোছালোতে সুন্দর। সাজগোছে সুন্দর। সাজগোছ ছাড়া আর ও সুন্দর। তোর কালো চুল সুন্দর। তুই বুড়ো হলে, তোর কুঁচকে যাওয়া চামড়া আর পেকে যাওয়া চুল ও আমার কাছে সুন্দরই থাকবে। তুই মানুষটাই সুন্দর। তুই পুরোটা সুন্দর ডাক্তারের বাচ্চি, কারণ তুই আমার মানুষ। নিজের মানুষ কখনো অসুন্দর হয় না।

চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে