মন গোপনের কথা পর্ব-৪০+৪১

0
1010

#মন_গোপনের_কথা
#পর্ব_৪০
লেখনীতে, পুষ্পিতা প্রিমা

নীরা নীল বেগুনি আকাশি আর ও কয়েক রঙের শাড়ি বিছানায় বিছিয়ে রেখেছে। এখন রিপের অপেক্ষা করছে। এই মানুষ গোসল করতে গিয়েছে সেই কখন! কচ্ছপের মতো এত ধীর। আল্লাহ এত বলে বলে ও শোধরাতে পারলো না নীরা। রিপ বের হলো অনেক সময় নিয়ে। নীরার সাথে সে কথা বলছেনা সেই অনেক্ক্ষণ। তারপর ও মুখ ফসকে বের হয়ে এল
নীরা তাড়াতাড়ি পাঞ্জাবি বের করো। জুতো বের করে দাও। কুইক। দেরী হয়ে গেছে অনেক।
নীরা খিক করে হেসে দিল। রিপ তার দিকে তাকিয়ে চুপ হয়ে গেল। নিজে নিজে পাঞ্জাবি খোঁজায় লেগে গেল। তন্নতন্ন করে খুঁজে ও মেহেদী রাতে পড়ার জন্য রাখা পাঞ্জাবিটা খুঁজে পেল না। পাবে কি করে সেটা নীরা বালিশের তলায় রেখেছে। শেষমেশ ক্লান্ত হয়ে মুনাকে ডাকলো। মুনা এসে বলল
আমি শাড়িতে পিন করছি। তোর বউকে বল। এসব রাগারাগি ছাড়। ওরা ছেলেমেয়ে দুটোর কারণে তোরা রাগারাগি করছিস কেন?

সেটা তোমার ভাইকে কে বোঝাবে আপা?

মুনা চলে গেল। রিপ বলল

আমার জিনিস যেন খুঁজে দেয়। দেরী হয়ে যাচ্ছে।

আমি কেন খুঁজে দেব?

রিপ আর কিছু বলতে না পেরে চুপচাপ চলে যাচ্ছিল ঘরের বাইরে। নীরা দৌড়ে গিয়ে সামনে দাঁড়ালো। বলল

উফফ আপনি রাগ করেন কেন শুধুশুধু? এগুলো কি? ধুর ভালো লাগেনা।

রিপ কথা বলল না। নীরা তাকে জড়িয়ে ধরে বুকে মাথা রেখে বলল

ওই বালিশের নিচে আছে।

রিপ এবার ও কথা বলল না। নীরা বলল

আমার শাড়ি চুজ করে দেন। নইলে ছাড়ছিনা
হুহ।

দেরী হয়ে যাচ্ছে আমার।

যাক।

শেষমেশ রিপ বলল

বেগুনিটা ঠিক আছে।

এগুলো কোনোটা না। আজ গায়ে হলুদ। হলুদ টাইপের পড়া দরকার।

নীরা অবাক করা চোখে তাকিয়ে বলল

যাহব্বাবা আপনি তো দেখছি সবকিছুতে পাক্কা। আচ্ছা ঠিক আছে পড়বো কিন্তু আপনি তো আমার জন্য হলুদ শাড়ি কিনেননি। তাহলে পড়বো কি করে?

তোমার গায়ে হলুদেরটা পড়ো। ওটা ভালো। তোমাকে ভালো লাগবে।

ঠিক আছে। তো কথাগুলো এভাবে বলছেন কেন? সুন্দর করে বলেন। নইলে ছাড়বো না। কি আশ্চর্যের কথা, এখন তো খুব ভয় হচ্ছে আমার। ছেলেবউকে কিছু বলা যাবেনা আপনি নিজেই রাগ করে বসে থাকবেন।

কেন কিছু বলবে। ও শুধু ছেলে বউ নয়। মেয়ে আমার।

ওরেবাবারে ঠিক আছে। মাহিকে ও বলো দেব। তোর বউ আর কিছু পাক না পাক একজন ভালো শ্বশুর পেয়ে গেছে। সাব্বাশ। এবার হাসুন।

রিপের গাল টেনে ধরে বলল

হাসুন হাসুন। হাসুন না। আজ আমাদের বাচ্চার গায়ে হলুদ। হাসুন। নইলে শাড়িটাড়ি মারে বাপ।

রিপ গরম চোখে তাকালো।

এসব কি ভাষা।

নীরা জিভে কামড় দিল।

হাসুন।

হেসেছি।

কোথায়?

উফফ ছাড়ো তো নীরা। পাঞ্জাবিটা নিতে চলে গেল সেটা বলে। নীরা হেসে ফেলল। উফফ নীরা ডাকটা শুনতে পেল অবশেষে। তারমানে রাগ কচুমার্কা রাগ কমেছে। রাগ করলে ভুলেও নাম ধরবেনা এই ব্যারিস্টার।

____________

পিহুকে সাজাচ্ছে। পরী সাজরুম থেকে চলে এসেছে ঘরে। ছিকু ঘুমোচ্ছে। এসে দেখলো এখনো ঘুম। এখন ঘুমাচ্ছে ভালো। নইলে রাত জাগতে পারবেনা। ছেলের দুগালে কপালে আদর দিয়ে উঠে দাঁড়ালো সে। আয়নার সামনে গিয়ে মাথার খোঁপা ঠিক করার একসময় দরজা খুলে কেউ একজন ঘরে ঢুকলো। বলল

পাপা এখনো ঘুম। গুডবয়।

পরী বলল

ইয়েস। আমার ছেলে বলে কথা।

সাথে সাথে দুটো হাত এসে বন্দী করলো তাকে। কাঁধে থুতনি ঠেকিয়ে বলল

তাই? ছেলে আমার না।

নাহ।

বলেই হাসলো পরী। রেহান ছোট ছোট চোখ করে আয়নার পরীকে বলল

বেশ লাগছে।

তাই?

আমি মিথ্যে বলিনা।

পরী হেসে উঠলো। সামনে ফিরে বলল

এই হচ্ছে ভাই। বোনের বিয়েতে কি দৌড়াদৌড়ি। ঘেমে গেছেন। মুছে দেই। ওয়েট।

শাড়ির আঁচল তুলে কপালের ঘাম মুছে দিতেই রেহান তার কপাল টেনে ঠোঁট ছোঁয়ালো। নাকে নাক ছুঁয়ে বলল
মনে পড়ে এ দিনটার কথা?

ভীষণ! তবে আফসোস ও হয়। আবার ও যদি ফিরে আসতো। খুব এনজয় করতাম।

তখনি বিছানার কাছ থেকে চেঁচামেচি ভেসে এল। দুজনেই আলাদা হলো ঠিক তবে সাথেসাথে হেসে উঠলো ছিকুর কথায়।

বিছানায় দাঁড়িয়ে কোমরে হাত দিল। নাকফুলিয়ে বলল

পুরীকে আদোল করো কেন? ছিকুকে আদোল করোনা কেন?

রেহান হেসে এগিয়ে গিয়ে তাকে কোলে নিয়ে পরীর কাছে এল। গালে আদর দিয়ে বলল

দিলাম।

ছিকুর রাগ এখনো কমেনি। রেহান তার চোখ চেপে ধরে পরীর গালে ঠোঁট ছোঁয়াতেই পরী হেসে উঠলো। ছিকু হাতটা সরিয়ে বলল

পুরীকে লুকিলুকি আদোল করো কেন?

রেহান পরী দুজনই জিভ কামড় দিল। হায়হায় এই ছেলে তো ইজ্জত সম্মান সব ধুলোয় মিশিয়ে দেবে।

__________

রিপের বন্ধু বান্ধব এসেছে। আত্মীয় স্বজন সবার খাওয়া দাওয়া শেষ হয়েছে। মাহিদের গায়ে হলুদের জন্য আনা কেক ও কাটা হয়েছে। মাইশা, নিশিতা আর জালিশা অনেক মজা করলো। ওদিকে ইশা ফোনের উপর ফোন দিচ্ছে। বেশি রাত হয়ে গেলে আনন্দ হবে না। রিপ বলল, ইশু আমি ছেলেমেয়েদের পাঠিয়ে দিচ্ছি। আমরা তো কাল যাচ্ছি। বুঝিস তো অনেক আত্নীয় স্বজন।

আচ্ছা যারা আসতে চায় তাদের সবাইকে আসতে বলো।

মাহিদ ও যাবেনা বললো। কিন্তু মাইশা নাছোড়বান্দা। মাহিদকে যেন টেনে হিঁচড়ে নিয়ে গেল এমন অবস্থা। মাহিদ মনে মনে বিড়বিড় করলো

জামাই বেইচা খাইবো এই ছেমড়ি।

_____________

সবাই চৌধুরী আসতেই চৌধুরী বাড়ি মেতে উঠলো। সবাই বাড়ির বাইরে। ইশা মিষ্টির প্লেট নিয়ে সবাইকে নিয়ে ছুটলো। ছোট্ট একটি বাচ্চা মেয়ে দৌড়ে এসে মায়ের আঙুল ধরে বলল

মা পিহু আপুর বর ও এসেছে।

মেয়েটির মা হাসলো। বলল

বরকে তো অনেকবার দেখেছি। এবার জামাই রূপে দেখবো।

মাহিদের পেটে গুঁতো দিল তপু। বলল

মামা বিসমিল্লাহ বইলা পা রাখো শ্বশুর বাড়িতে।

মাহিদ বলল

ধুর এমন করতেছোস কেন তোরা? আমার শরম করে। যামুনা ওখানে।

নিনিত সহ সবাই হো হো করে হেসে উঠলো।মাইশা জালিশা আর নিশিতার হাসি থামছেনা। মাহিদ সবার মাঝে অসহায়। আইমি হেসে বাড়ির ভেতরে চলে যেতেই ইশার মুখোমুখি পড়লো। ইশা হেসে জড়িয়ে ধরলো। নিকিতা বেগম বলল

আচ্ছা আমরা ভেতরে যাই। এত তাড়াহুড়োর কিছু নেই। আপনি জামাইকে মিষ্টি খাওয়ান।

মাহিদ ইশাকে দেখে সবার পেছনে চলে গেল। বলল

ওরেব্বাপ বেশি শরম করতাছে আমার।

ইশা হেসে বলল

মাহি? সামনে আয়।

নিনিতকে দেখে মিষ্টি এগিয়ে দিল ইশা। বলল

তুমি খাও আব্বা।

আমি কেন?

ইশা জালিশার দিকে তাকালো। হেসে জালিশাকে মিষ্টি খাইয়ে বাকিটুকু নিনিতের দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বলল

এই মিষ্টিটা ও তো আমাদের মেয়ে। সো তুমি আরেকটা জামাই।

নিনিত মিষ্টিমুখে রেখে গম্ভীর দৃষ্টিতে জালিশার দিকে চাইলো। জালিশা অসহায় চোখে চাইলো। যার অর্থ, আমি কি করেছি?

সবাইকে মিষ্টি খাইয়ে শেষমেষ মাহিদের কাছে গেল ইশা। আজ একদম অন্যরকম লাগছে তাকে। ইশা গালভরে হেসে বলল

লজ্জা পাচ্ছিস? এই এদিকে তাকা।

মাহিদ মাথা চুলকে বলল

না তাকামু না ৷ আমি বাড়ি যামু।

ইশা হেসে তার কান চেপে ধরলো। বলল

‘ তাই? তোর এত লজ্জা শরম এতদিন কই ছিল? আমার তো জানা ছিল না তোর শরম।

নিজে নিজে মিষ্টি খেয়ে বাড়ির ভেতর হুড়মুড়িয়ে ঢুকে পড়লো সে। যথাসম্ভব পরীর ঘরে গিয়ে দরজা লক করে বসে থাকবে। কিন্তু ছিকু শালা সেটা হতে দিল না। চিল্লিয়ে নেচেনেচে বলল

ওহ ওহ মুজা মুজা। মিহি আসিচে কেন? মিহি বিটিফুল কেন? মিহি বর কেন? মিহির বিয়ে কেন?

মাহিদ শেষ। সবাই হেসে লুটোপুটি খাচ্ছে ছিকুর কথায়। জালিশা গালে হাত দিয়ে বলল

মাশাল্লাহ কি কিউট একটা বাচ্চা!

ছিকু সবাইকে চোখ ছোট করে করে চাইলো। জালিশাকে দেখে বলল

ইটা মাইচার নয় কেন?

মাইশা এসে কোলে তুলে নিয়ে বলল

এইতো মাইচা। কেমন আছেন রাহিসাহেব?

ছিকুকে রাহিচাহেব ডাকু কেন?

জালিশা বলল

আমি আমি। আমাকে দাও মাইশা। আমি আদর করব।

নিশিতা বলল

আদর না। গালটা টেনে ছিঁড়ে দে।

ছিকু বলল

নিচি পুঁচা কথা বুলে কেন?

জালিশা তার কথা শুনে হাসি থামাতে পারছেনা। ছিকু তার কোলে চলে গেল এবার। জালিশা তাকে আদর করতেই সে ভীষণ লজ্জা পেল। হাত দিয়ে মুখ ঢেকে বলল

জানিচা নজ্জা দেয় কেন?

জালিশা হেসে কুটিকুটি। আইমিকে গিয়ে বলল

আম্মি দেখো কি কিউট। ওর নাম নাকি ছিকু। আমি ওকে সাথে করে নিয়ে যাবো।

আইমি বলল

আপনি যাবেন আমাদের সাথে?

ছিকু মাথা দিয়ে জালিশাকে মেরে বলল

কেন? ছিকুকে চুরি করি ফিলবে কেন? জানিচা পুঁচা কেন?

জালিশা বলল

আচ্চা চুরি করব না। কিন্তু আমার সাথে নিয়ে যাব কেমন?

ছিকু আবার ও লজ্জা পেল।

_________

পিহু কেকের সামনে থেকে সরে আসলো। মাইশা এসে জড়িয়ে ধরলো। বলল
কি অবস্থা?
ভালো। আর কে কে এসেছে?
সবাই এসছে। জালিশা এল ছিকুকে নিয়ে। পিহু বলল
আব্বা কোল পেয়ে গেছে। ছিকু হাসলো। পিহু বলল, কি সুন্দর হাসি!

নিশিতা এল। পিহু বলল

আন্টিরা আসেনি?

এসেছে।

ওহ।

একটু পরে বলল,

স্যার?

সবাই এসেছে।

আচ্ছা, ঘরে চল।

ঘরে কেন? যাব না। চল তুই।

পিহু থেমে গিয়ে প্রশ্ন করলো

কোথায়?

মাহিদ ভাই ও এসেছে। চল।

নাহ। আমি এখন কোথাও যাব না।

মাইশা বলল

বললেই হলো? চলো। দুজনকে একসাথে বসিয়ে মেহেদী পড়াবো। চলো।

পিহুকে টেনে নিয়ে গেল সবাই। মাহিদের সামনাসামনি দাঁড় করিয়ে দিয়ে মাইশা বলল

দেখি একে অপরের দিকে তাকাও তো। মিঃ মাহিদ ভাই তাকান। পিহু!

কেউ কারো দিকে তাকালো না। নিশিতা মেহেদী এনে মাইশার হাতে দিল৷ মাইশা মাহিদের হাত টেনে ধরে পিহুকে বলল

নাও তোমার নাম লিখে দাও।

পিহু মাথা তুললো না। মেহেদী ও নিল না।

মাইশা বলল

ইটস ওকে। মিঃ মাহিদ দেখি আপনি লিখুন।

মাহিদ বলল

কি?

আপনার নাম লিখুন।

কেন?

আরেহ লিখুন।

মাহিদের হাতে মেহেদী ধরিয়ে দিল। মাহিদ এদিক ও যেতে পারলো না, ওদিক ও যেতে পারলো না। শেষমেশ পিহুর হাতটা ধরতে হলো। মাইশা বলল

আগে আপনার নাম লিখুন।

মাহিদ লিখলো। মাইশা মেহেদী নিয়ে একটি লাভ শেপ এঁকে দিল। তারপর বলল

এবার পিহুর নাম লিখুন। লিখুন তাড়াতাড়ি।

মাহিদের লিখা শেষ হতেই পিহু হাত কেড়ে নিয়ে চলে গেল। মাহিদ ঠোঁট কামড়ে মাইশার দিকে চাইলো। মাইশা হেসে বলল

কি আর করার। আপনার হাত আমাদেরকেই রাঙাতে হবে। বাট নো ওয়ারি, সময় একদিন ঠিকই আসবে আপনার।

সবাই মিলে অনেক মজা মাস্তি করলো। জালিশা গান ছেড়ে ছিকুকে স্টেজে দাঁড় করিয়ে দিল। ছিকু নেচে নেচে গাইলো

” সিটি মার সিটি মার সিটি মার সিটি মার ”

মাহিদ তার পেছনে গিয়ে প্যান্ট নিচে নামিয়ে দিল। ছিকু নাচা থামিয়ে প্যান্ট উপরে তুলে দিয়ে বলল

মিহি ডগ,মাংকি,ক্যাট। মারি ফিলবো। মিহি অচুভ্য, বিদ্দব।

পরী মাথা চাপড়ে বলল

দেখেছিস এই ছেলের কান্ড!

পিহু বলল

ওকে নিয়ে আসো। আমি রাখব।

পরী বলল

থাক। ওখানে মজা করুক। তোমাকে জ্বালাবে।

____________

সবাই বসে গল্পগুজব করছিল। নিকিতা বেগমের মুখ সেই তখন থেকে ভার। তিনি মন খুলে কারো সাথে তেমন কথা বলছেন না। নিনিতকে ও তেমন দেখা যাচ্ছেনা।
আদি জালিশাকে খুঁজে আনলো। নিনিতের কাছে নিয়ে আসলো। দুজনকে একসাথে এনে হাতে হাত মিলিয়ে দিয়ে বলল

নেক্সট প্রজেক্ট এরা। মাহিদ পিহুর বিয়ে চুকে যাক।

নিনিত হা করে তাকিয়ে আছে। জালিশার চোখে বিস্ময়। আদি নিনিতের কাঁধে হাত চাপড়ে বলল

আমি এই চার হাত শীঘ্রই এক দেখতে চাই। তুমি একদিন এই মেয়েটাকে নিয়ে এতটা সুখী হবে আমার প্রতি কৃতজ্ঞতায় তোমার চোখ চকচক করবে। তুমি মিলিয়ে নিও আমার কথা।

নিনিত জালিশার দিকে চাইলো। জালিশা বোকাচোখে চেয়ে থাকলো। যার অর্থ আমি কি করেছি?

আইমি বলল

আরেহ রাখো। একটা খেয়ে একটু জিরোতে তো দাও।

আদি হাসলো। জালিশা ছাড়া পেয়ে পালালো। ইশশ কি লজ্জা! ডাক্তার কেমন বোকা বোকা চোখে তাকায় থাকে। তার প শরম করে।
আদি নিকিতা বেগমকে বলল
আমি কি সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছি আপা?
তিনি মাথা নাড়লেন। তবে খুব খুশি হয়েছে এমন না। তবে আদির দৃঢ় বিশ্বাস জালিশা পিহুর শূন্যতা একদিন ঠিকই ভরিয়ে দেবে। ওনি জালিশাকে পেয়ে ভীষণ খুশি হবেন। শুধু সময়ের অপেক্ষা।

চলবে,,,,,

#মন_গোপনের_কথা
#পর্ব_৪১
লেখনীতে, পুষ্পিতা প্রিমা

বাড়িতে মেহমানের সমাগম। নীরা ছোটাছুটি করছে এদিক-ওদিক। এত কাজ! জিরোনোর সুযোগ নেই। সেই সকাল থেকে। একটু শোয়ার জোঁ নেই। মাহিদ ৯টার পরে ঘুম থেকে উঠলো। নীরা অবশ্য অনেকবার ডেকে দিয়ে গেছে। কিন্তু সে উঠেনি।

হাই তুলতে তুলতে ব্রাশ হাতে নিয়ে অলস ভঙ্গিতে রুম থেকে বের হলো সে। বসার ঘরের দিকে যেতেই দেখলো অনেক মহিলার সাথে তার নানী বসে আছে। মাহিদকে দেখে বলল

ভাই তোর যে ঘুম। বাপরে বাপ। কথায় বলেনা যার বিয়ে তার হুশ নাই, পাড়া পড়শীর ঘুম নাই। ঠিক তাই। তোকে কতবার ডেকেছি হিসেব নেই। তুই ঘুমাচ্ছিস তো ঘুমাচ্ছিস।

পাড়া পড়শীকে ঘুমাতে বারণ করছে কে?

সবাই হেসে ফেলল। নাজিয়া বানু বললেন

সে কথা রাখ। শুনছি পিহুর লগে নাকি তোর এখনো বনিবনা হয়নি। এটা কোনো কথা? বনিবনা না হলে সংসার করবি কিভাবে?

সংসারের মারে বাপ। সংসার,,,

নীরা এসে তাকে টেনে নিয়ে গেল। ঠাস করে পিঠে চড় বসিয়ে কান মলে দিয়ে বলল

বেয়াদব। এতগুলো মেহমানের সামনে যা তা বলছিস। তোর আক্কেল হবে কখন? কাল বাদে পরশু বাচ্চাকাচ্চার বাপ হবি।

খারাপ কি বলছি?

চুপ থাক। একটা কথা ও বলবিনা। পরীর সাথে কথা হয়েছে?

না ছিকুশালার মা তো ফোন করেনাই।

করবে। যা বলবে তা শুনবি। আর করবি।

কি বলবে?

আমি কি জানি।

নীরা চলে গেল। মুনা এসে বলল

মালার অর্ডার দিছে।

হ দিছে। গরুর মালা কিনতে বলছি।

মুনা তেজী চোখে তাকিয়ে বলল

তোকে সবকিছু নিয়ে মজা করতে হয় না? তুই এমন কেন? বিয়ে একবার হয় মাহি।

দুইবার হতে পারবো না কে বলছে? শালী তিড়িংবিড়িং করলে পিটাইয়া সোজা বাপের বাড়ি পাঠাই দিমু। তারপর আরেকটা বিয়া করুম।

মুনা গালে হাত দিল। বলল

তাই! তাহলে তো পিহুকে সাবধান করতে হচ্ছে। আমি এখনি বলে দেব।

যাও। যাও। কেডা ভয় পায় তারে?

মুনা সিরিয়াস ভঙ্গিতে হেঁটে চলে যাচ্ছিল। মাহিদ গিয়ে তাকে আটকে বলল

আরেহ না না বাপের বড় বইন। এগুলা তো মজা করছি বাপ৷

মুনা জোরে তার কান মোঁচড়ে দিল। বলল

মেয়েটাকে ভীষণ জ্বালাবি বুঝতে পারছি । তোর মতো ইবলিশ এত ভালো বউ পাইতেছে এটা তো কপাল।

মাহিদ ভাব নিয়ে বলল

বাপরে বাপ। আমার মতো হিরোরে পাইয়্যা গেছে এইডা তার সাত কপাল।

মুনা বলল

নাহ তোর সাথে আর কোনো কথা নাই। তুই সবসময় এক খাঁটি সরেস।

________________

পিহুর সাজগোছের কাজ চলছে। ছিকু পিহুর সামনের চেয়ারে বসে রয়েছে। সে ও আজ সাজবে। পিহু সাজলে সে সাজবে না কেন? পিহুকে সাজানো মেয়েগুলোকে একে একে পরখ করছে সে। তারপর পিহুকে পরখ করছে৷ কিছুক্ষণ পর বলল

কুলে বুসবো ?

মেয়েগুলো প্রশ্ন করলো৷

কার?

পিহুর কুলে বুসবো কেন?

পারবেন না। ওকে সাজাচ্ছি।

ছিকু ঠোঁট টানতে টানতে কেঁদেই দিল। পিহু চোখ খুলে বলল

ওকে কাঁদাবেন না। একটু আসতে দেন।

কিন্তু।

একটু আদর করে দেই৷ তারপর সরে যাবে।

মেয়েগুলো সাইড দিল৷ পিহু হাত বাড়িয়ে বলল

আসো কলিজা৷

ছিকু দৌড়ে গেল। এক লাফে পিহুর কাছে গেল। কোলে উঠে পিহুর মুখের দিকে খানিকক্ষণ চেয়ে রইলো৷ পিহু বলল

আব্বা কি দেখে?

পিহু রাক্ষুচী কেন?

সবাই হেসে উঠলো৷ পিহু তার গালে আদর দিয়ে বলল

এগুলো তো সাজিয়েছে। আপনি ওই চেয়ারে বসুন। পিহুর এক্ষুণি হয়ে যাবে। তারপর সারাক্ষণ কোলে বসে থাকতে পারবেন আপনি।

ছিকু সরলো না। পিহুর মুখে আঙুল দিয়ে ছুঁয়ে বলল

ওবাপ পিহু ভূত কেন? রাক্ষুচী কেন?

পিহু হেসে বলল

যান। ওই চেয়ারে গিয়ে বসুন।

ছিকু তাকে ঝাপটে জড়িয়ে ধরে রাখলো। সে কিছুতেই ছাড়বে না। পরী রেহান এল, রাইনা এল। ইশা এল, আদি ও এল। কারো কোলে সে গেল না। হাত পা এমনভাবে ছুঁড়ছে যে সবার নাকমুখ ফেটে যাওয়ার অবস্থা। পিহুর ওকে কাঁদাতে ইচ্ছে হলো না। তাই মেয়েগুলোকে বলল

ওকে কোলে বসানো অবস্থায় সাজাতে। কিন্তু মেয়েগুলো রাজী হলো না। বলল, সাজ অসুন্দর হলে আমাদের সুনাম নষ্ট হবে। অতঃপর পিহু সিদ্ধান্ত নিল ছিকুকে ঘুম পাড়িয়ে দেবে। ছিকুর চোখে ঘুম নামতে দেরী হলো। পিহুর সাজ শেষ হতে হতে ও দেরী।

_____________

নিনিতের ফোনে ফোন যাচ্ছে না। মাহিদের হাত থেকে ফোন কেড়ে নিয়ে লাবীব তার হাতে পাগড়ি ধরিয়ে দিল। বলল

ও তোরে ফোন করবে ফ্রি হলে। কাজের চাপে আছে। ডাক্তার মানুষ বুঝিসই তো।

শালারে আইজ ও ডাক্তারি করোন লাগবো।

ডাক্তার মানুষের রাতদিন নাই বাপ। ওদের কাছে সবকিছুর আগে রোগী।

মাহিদ পাগড়িটা রেখে দিল। নীরা শাড়ির কুঁচি সামলাতে সামলাতে এল। বলল

আব্বা আমাকে কেমন লাগছে বল।

মাহিদ তাকে দেখে বলল

বাহবা তোমারে ফাটাফাটি লাগতেছে মেরিমা।

নীরা লজ্জা পেয়ে বলল

যাহ, মাশাল্লাহ বল।

মাহিদ জোরে বলল

মাশাল্লাহ। মেরিমা যাতে কখনো বুড়া না হয়।

নীরার সাথে সাথে বাকিরা সবাই হেসে ফেলল।

নীরা মাহিদের কাছে এগিয়ে এল। শেরওয়ানির কলার ঠিক করে দিতে দিতে বলল

আমার বাচ্চারে কি সুন্দর লাগে? মাশাল্লাহ মাশাল্লাহ। কারো যেন নজর না লাগে।

নজর দিয়া ফেলছে বাপ।

কে দিছে? হায় আল্লাহ! কি বলিস?

তপু হেসে বলল

আন্টি পিহুর কথা বলতেছে তোমার বজ্জাত ছেলে।

নীরা হেসে বলল

ওহ। পিহু তো দেবেই। এক কাজ করিস, তুই তো তারে নজর দিয়ে দিবি। বুঝেছিস?

নজর কেমনে দেয়?

নীরা হেসে বলল

দেখো কি বলে ছেলে? সব কি আমি শিখায় দেব তোরে? পাগল ছেলে।

তার নানী বলল

ভাই এদিকে আয় তোরে আমি শিখায় দেই নজর কেমনে লাগে।

মাহিদ গেল। কপাল কুঁচকে বলল

বলো৷

নাজিয়া বানু বললেন

নীচু হ। কানে কানে কয়। নইলে লজ্জা পাবি।

মাহিদ নীচু হলো। নাজিয়া বানু ফিসফিস করে বললেন

হা করে পলকহীন তাকায় থাকবি। দেখবি নজর পড়ে যাবে। চোখ সরাবিনা।

মাহিদ সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে বলল

কচুর বুদ্ধি দাও বুড়ি। এই কচুমার্কা বুদ্ধি দিয়া তুমি আমার নানার লগে সংসার করছ কেমনে সেটাই তো বুঝে পাইতাছিনা বাপ।

নাজিয়া বানু হেসে ফেলল। হাসতে হাসতে একসময় বলল

হয়ছে। এখন তো বেরোবি। যাহ সবাইরে সালাম কইরা ল। আজ বিয়া না। সবার দোয়া নিতে হয়।

মাহিদ গালফুলিয়ে।

আরেহ যাহ না।

রিপ রিক একসাথে আসলো। রিক বলল,

সবাই রেডি হলে গাড়িতে গিয়ে বসো। বাকিদের পাঠিয়ে দিয়েছি।

নাজিয়া বানু বলল

ভাই যাহ সবাই একসাথে আছে। যাহ দোয়া নে।

মাহিদ রিককে সালাম করলো। রিক তাকে বুকে জড়িয়ে বলল

আরেহ তোরে দোয়া করবো না কারে করবো বাপ? তুই আমাদের একটামাত্র প্রদীপ। যাহ বউ লইয়্যা আয়৷ ভালা থাক। ভালা রাখ। সুখী হ।

রিপকে সালাম করলো। রিপ মাথায় হাত বুলিয়ে দিল। বুকে জড়িয়ে অতঃপর বলল

অনেক তো ছেলেখেলা হলো। এইবার দায়িত্ব কর্তব্য গুলোর প্রতি নজর দেওয়া দরকার। ভালা থাকাটা যেমন জরুরি, আপন মানুষদেরকে ভালা রাখাটা ও জরুরী। বেঁচে থাক। ভালো মানুষ হ।

মাহিদ মাথা নাড়ালো ভদ্রতাসহিত। নানীর কাছে যেতেই নানী বলল

ভাই কিচ্ছু চাইনা। শুধু একটা পুতুল চাই। ওর মুখ দেখার পর যেন আমি মরি শুধু এই দোয়া করবি। তোর বাচ্চাকাচ্চা দেখুম এগুলো আমার কাছে কত বড় স্বপ্ন তুই জানিস না।

সবাই হাসতে থাকলো। মাহিদ নানীকে জড়িয়ে ধরে ফিসফিস করে বলল

কান উইড়া গেল বাপ। বেয়াদব বুড়ি।

নাজিয়া বানু হাসতে লাগলেন। মুনাকে সালাম করতেই মুনা মুখে হাত বুলিয়ে আদর করে দিয়ে বলল

তুই আমাদের সবার কত আদরের জানিস? তোকে দেখামাত্রই সবাই বলে তুই আদরে আদরে বাঁদর হয়েছিস। কিন্তু এখন বিয়ে করছিস। এখন থেকে আর কোনো বাঁদরামি চলবে না কিন্তু। কোনো বেকার ছেলেকে কেউ বউ দেয় না। সেটা পিহু তাই তোর কাছে আসছে। তার অভিযোগের কোনো জায়গা রাখবি না। খুব ভালো থাক। এই ঘর সংসার আলো কর। আমাদের তাড়াতাড়ি নাতি নাতনির মুখ দেখা। যাতে সারাক্ষণ এই কিচিরমিচির শব্দে মেতে থাকে।

বিয়া এখনো করিনাই বাপ। নাতি নাতনিরে লইয়্যা টানাটানি শুরু কইরা দিছো।

মুনা হেসে বলল,
আজই হয়ে যাবে। এবার যাহ তোর মায়ের কাছে।

নীরা চুপচাপ দাঁড়িয়ে ছিল। মাহিদ গিয়ে সালাম করার আগেই নীরা তাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো। হু হু করে কেঁদে দিতেই মাহিদ হেসে ফেলল। মুনা বলল

ওমা কাঁদছিস কেন? দোয়া করে দে। মায়ের দোয়া বেশি কাজে লাগে।

মাহিদ বলল

মেরিমা তোমার সাজগোছ ভ্যানিশ বাপ।

নীরা ফুঁপিয়ে উঠে বলল

বউ পেয়ে অনেক ছেলে মা বাপকে ভুলে যায়। আমার ওগুলো মনে পড়লেই কান্না আসে।

মাহিদ এবার জোরে হেসে দিয়ে নীরাকে জড়িয়ে ধরে রেখে বলল

ওসব ফালতু বিষয় নিয়ে কেন মাথা ঘামাও?মুনা বলল

এসব কি বলছিস? পিহু ওরকম মেয়ে নয়। ও সংসার বেঁধে রাখতে জানবে। সবাইকে বেঁধে রাখতে জানবে।

আমি জানি। তাও আমার কান্না পাচ্ছে।

নীরার বাচ্চামো দেখে রিপ বলল

এসব পিহু শুনলে কি বলবে? কি মনে করবে? নীরা এসব কি ভাবো তুমি? তোমার মাথায় কি ভালো কিছু আসেনা?

মারাম্মা নাম ধরতে পারিনাই তার জ্বলানি শুরু হয়ে গেছে। মাহি তোর বাপের জন্য তোর বউরে কিছু বলা যাইবো না।

রিপ চলে গেল।

নীরা মাহিদের মুখ ধরে কপালে গভীর স্নেহের স্পর্শ দিয়ে বলল

আমার বাচ্চা। বেঁচে থাক। আল্লাহ তোর সব বিপদআপদ কাটিয়ে দিক। ভালো মানুষ হ। ভালো স্বামী হ। তুই অবশ্যই আমার ভালো সন্তান। ভালো সন্তানই থাকবি আমি জানি। খুব খুব সুখী হ আমার বাচ্চা।

মাহিদ তাকে জড়িয়ে ধরে বলল

আইচ্ছা।

______________

বরপক্ষ চলে এসেছে পিহুর মুখমণ্ডল কালো মেঘে ছেয়ে গেছে। এই বাড়ি, বাড়ির প্রত্যেকটা মানুষের জন্য তার মন কেমন করছে। ইশা খাইয়ে দিচ্ছিল ছোট ছোট লোকমা করে। মন খারাপ দেখে বলল

কি হলো?

আর খাব না আম্মা।

ইশা পানি খাইয়ে মুখ মুছে দিল টিস্যু দিয়ে। চলে যাওয়ার সময় জিজ্ঞেস করলো

একদম মন খারাপ করবেন। নীরা আর রিপদাকে কি বলব আমি? তুমি তো দূরে কোথাও যাচ্ছ না।

পিহু তাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে রাখলো। ইশা মাথায় চুমু বসিয়ে বলল

আচ্ছা আমি এখন কোথাও যাচ্ছিনা।

ইশাকে খুঁজতে খুঁজতে আদি পিহুর ঘরে চলে এল। পিহুকে ইশার বুকে মুখ গুঁজে রাখতে দেখে ইশারায় জিজ্ঞেস করলো

কি হলো?

ইশা বলল

ডাকুন।

আদি ঘরে ঢুকে এসে বলল

পিহুর হলো?

পিহু মুখ তুললো। আদি কাছে এসে মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলল

মাশাল্লাহ আমার পুতুলকে দারুণ লাগছে।

পিহু দাঁড়িয়ে তাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলল

পাপা,,, আমার,,

গলা বুঁজে আসলো তার। আদি মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলল

কি হয়েছে আম্মার? এগুলো তো ছিকু সোনার কাজ। পিহু তো বাচ্চা নয়।

পিহু ফোঁপাতে ফোঁপাতে কথা বলতে পারলো না। নীরা ঘরে চলে এল। ইশাকে জড়িয়ে ধরে বলল

চলো এসেছি বান্ধবী। যাহ তোর ভাইরে জামাই বানালাম এবার তোরে বেয়াইন বানাইলাম। দেখি দেখি আমার বৌমাকে কেমন লাগতেছে।

ইশা বলল

তোর বৌমা তো কাঁদছে।

নীরা আদির কাছ থেকে পিহুকে টেনে নিয়ে এল। চোখের জল মুছে দিয়ে বলল

কেন কাঁদো আম্মাজান? আমরা কি তোমার পর? তুমি তো যখন চাও তখন আসতে পারবা এখানে।

পিহু ফুঁপিয়ে উঠে কান্না আটকালো। নীরা হেসে বলল

তোমার শ্বশুর আব্বা তো বৌমার নামে কোনো ত্যাঁড়াব্যাঁকা কথা শুনতেই চায় না। আহা কি কপাল তোমার। অবশ্য আমার শ্বশুর আব্বাজান ও এমন ভালো ছিল। যাইহোক কান্না থামাও। কি সুন্দর লাগছে। কারো নজর যেন না লাগে।

_____________

ঘুম থেকে উঠা মাত্রই রেহান ছিকুকে মাহিদের কাছে নিয়ে গেল। মাহিদকে দেখামাত্র ছিকু দাঁত দেখিয়ে খিক করে হাসলো। তার গায়ে মাহিদের পাঞ্জাবির সাথে ম্যাচ করা গোল্ডেন কালার পাঞ্জাবি। মাহিদ বলল

তুই তো লম্বা ঘুম দিছস বাপ।

তপু চিমটি কেটে বলল

শালা চুপ কর। তুই জামাই। তোরে সবাই দেখতেছে।

মাহিদ চুপ থাকলো। নিশিতা এসে বলল

বর তো দেখি এসে বসে আছে।

চুপ থাক বেডি। বেশি ফটরফটর করিস না।

নিশিতা জিভ কামড় দিয়ে

ছিঃ ছিঃ মাহিদ ভাই বিয়ের সময় ও এইসব গালাগালি তোমার মুখ থেকে সরেনা? ছিঃ।

সর, নাটক করিসনা। তোর ভাই কই? শালা এত দেরী করতাছে কেরে?

ভাইয়ার আসতে দেরী হবে।

কেন?

ইমার্জেন্সি একটা অপারেশন পড়েছে। ডাক্তারদের কাছে সবকিছুর আগে রোগীই ইমপোর্টেন্ট মাহিদ ভাই। কিন্তু ভাইয়া বলেছে রাগ না করতে, তোমাদের বাড়ি পৌঁছে যাবে ভাইয়া।

এই জালিশারে তোর ভাইয়ের বউ বানাইবি কখন?

নিশিতা জালিশার দিকে তাকালো। জালিশা হঠাৎ লজ্জা পেয়ে গেছে। নিশিতা বলল

ভাইয়া যখন বলে তখন।

না বললে?

না বললে নাই।

শালী জিয়েদ্দের বউ তোর ভাইরে কেমতে রাজী করোন লাগে সেইটা মাহিদ খান ভালা কইরা জানে।

জানলে তো ভালোই। তাড়াতাড়ি রাজী করাও। আমি ও ভাইয়ের বিয়া খায়। তুমি বন্ধু না? বন্ধু সব পারে।

জালিশা ছিকুর কাছে চলে গেল। ছিকু তার কোলে এল। কিন্তু কিছুক্ষণ পর নেমে গিয়ে মাহিদের কোলে উঠলো। তারপর আবার নেমে নিশিতার কোলে, তারপর মাইশার কোলে। মাহিদ তার কান্ড দেখে বলল

শালারে এক আঁছাড় দে। এত তিড়িংবিড়িং কেমনে করে শালা?

নিশিতা বলল

মামার মতো হয়ছে আর কি।

মাহিদ চোখ গরম করে তাকালো। মাইশা হেসে বলল

মিঃ মাহিদ সিরিয়াসলি বলছি আপনি আজকের দিনেও ভীষণ মজার মুডে। সত্যি অনেক শেখার আছে আপনার কাছ থেকে।

তো কাঁদুম ক্যান? কাঁদবো তো ডাক্তারের বাচ্চি।

সবাই একসাথে হেসে উঠলো।
নিয়মকানুন মেনে অবশেষে বিয়েটা হলো। তারপর পিহুর যাত্রা শ্বশুরবাড়ি। ছিকু পিহুর কান্না দেখে একপাশে শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। জালিশা কত করে কোলে ডাকলো। সে গেল না।

আদি আফি মাহিদের হাতে পিহুর হাত তুলে দিল। আফি বলল

শোন ব্যারিস্টারের পোলা এইডা হলো আমার মা। আমি ছোড মা ডাকি। তুই আমার মারে ভালা রাখবি। কান্দাবি না। বুঝছোস?

মাহিদ মাথা নাড়ালো। আদি বলল

আমি আমার একটা অংশ তোমাকে দিয়ে দিলাম। এবার সেটাকে যত্ন করে রাখার দায়িত্ব তোমার।

রিপ বলল

আরেহ ও আমারই মেয়ে। আমার মেয়ে হয়েই থাকবে। এত চিন্তার কিছু নেই।

ইশা কাঁদছে তাই রিপ তার মাথায় হাত রেখে বলল

ইশু তুই তোর বাড়িতে তোর মেয়ে দিচ্ছিস। তাহলে কেন কাঁদছিস। তুই যেমন ভালো ছিলি তেমন তোর মেয়েও ভালো থাকবে। আমি ওর কোনো অযত্ন হতে দেব না। কাঁদিস না।

পরী, রেহান এসে পিহুকে ইশার কাছ থেকে ছাড়িয়ে নিল। পরী চোখের কোণায় জমে উঠা জল মুছে পিহুকে বলল

তুমি মামার বাড়ি যাচ্ছ পিহু। এই দেখো বনু আমরা, আমরা সবাই যাব কিছুক্ষণ পর। আর কান্না নয়। এবার কান্না থামাও।

ছিকু,,? ছিকু কোথায়?

পরী এদিকওদিক চাইলো। ছিকুকে দেখিয়ে দিয়ে বলল

ওই তো একা একা দাঁড়িয়ে আছে দেখছি। মানিক এখানে আসেন। পিহু ডাকছে।

সে এল। ছিকু বসলো তার সামনে। পিহুকে কাঁদতে দেখে ছিকু আলাভোলা চোখে চেয়ে থাকলো। পিহু তাকে শক্ত করে চেপে জড়িয়ে ধরলো। অসংখ্য আদর দিয়ে আবার জড়িয়ে ধরে বলল

কলিজা আই লাভ ইউ।

আলাভিউ পিহুচুন্নি।

পিহু তাকে চেপে ধরে আর ও জোরে কেঁদে দিল। রিপ এসে মাথায় হাত রাখতেই পিহু বলল

আমি ওকে ছেড়ে যাব না। কোথাও যাব না।

রিপ বলল

ঠিক আছে। ছিকু ও যাবে আমাদের সাথে।

পিহু মুখ তুলে বলল

সত্যি?

রিপ মাথা নাড়লো। পিহু আবারও কেঁদে দিল। রাইনা বলল

তুই সব কান্না আজই কেঁদে ফেলছিস নাকি রে পিহু? রেহান ওকে গাড়িতে বসিয়ে দিয়ে আয়।

রেহান আসতেই পিহু বলল

দাভাই আমি,,

রেহান হেসে বলল

চলো তো। আমরা ও যাচ্ছি। চলো চলো।

কোলে তুলে গাড়িতে বসিয়ে দিল সে। মাহিদ চেপে বসলো। ছিকুকে মাঝখানে বসিয়ে দেওয়া হলো। মাহিদ বলল

শালা ভিলেন আইছে। বাসর রাতে ও দেখা যাইবো শালা বইসা থাকছে।

বলতে না বলতে ছিকুকে চিমটি দিল মাহিদ। ছিকু লাফ দিয়ে বলল

মিহি চিমুট দেয় কেন?

পিহু তাকে কোলে বসিয়ে বুকের সাথে জড়িয়ে ধরে রাখলো। ছিকু মাহিদকে মুখ মোচড়ে দিয়ে বলল

মিহি পুঁচা জামাই কেন? অচুভ্য জামাই কেন?

চলবে,

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে