#মন_গোপনের_কথা
#পর্ব_৩৪
লেখনীতে, পুষ্পিতা প্রিমা
মাহিদের ঘরে গেল ছিকু। মাহিদের দেখা নেই। তারপর হেঁটে পিহুর ঘরে গেল। দেখলো পিহু ও ঘরে নেই। কি আশ্চর্য!
রেগে গেল ছিকু। মিহি আর পিহু নাই কেন?
রেগে হন্যি হয়ে পরীর কাছে গেল। বলল
‘ পিহু আর মিহি নাই কেন? চুর কেন? লুকি থাকে কেন? ছিকুর রাগ লাগে কেন?
পরী বলল
‘ কেন ওরা কোথায় যাবে? আছে ভালো করে দেখে আসেন।
ছিকু গেল না। দুহাত কোমরে রেখে গালফুলিয়ে পরীর দিকে চেয়ে রইলো। পরী হেসে ফেলল। কোলে তুলে তার গালের সাথে ছিকুর গাল লাগিয়ে বলল
‘ কি সমস্যা? ঘুমাবেন না? মিহি আর পিহুকে কি দরকার আপনার?
‘ মিহির সাথি ঘুম দেব কেন?
‘ ও বাবা মিহির সাথে ঘুম দেবেন? আচ্ছা চলেন।
পরী মাহিদের ঘরে গেল। ঘর ফাঁকা। ছিকু চেঁচিয়ে বলল
‘ মিহি এখুনো নাই কেন?
পরী বলল
‘ আস্তে। এভাবে কেউ চিল্লায়? পিহুর ঘরে বোধহয়।
পিহুর ঘরে গিয়ে ও মাহিদকে পেল বা পরী। এমনকি পিহুকে ও নয়। ছিকু আবার গর্জে বলল
‘ পিহুচুন্নি ইখানে নাই কেন? লুকি গিছে কেন? ছিকু কামড়ে দেবে কেন?
‘ কামড়ে দেবেন? কি আশ্চর্য আপনি রাক্ষস কেন?
‘ কেন? ছিকু রাক্ষুচী কেন? ছিকুকে ভয় লাগে কেন?
পরী খিক করে হেসে ফেলল। ছিকু পরীর নাকের উপর ঠাস করে হাতের তালু বসিয়ে রেগে বলল
‘ পুরী হাচে কেন?
পরী নাকের উপর হাত দিয়ে বলল
‘ মেরেছেন? আর কথা বলবেন না আমার সাথে। যান। কোল থেকে নামেন।
ছিকু পরীর মুখের দিকে চেয়ে রইলো। পরী তাকে কোল থেকে নামিয়ে দিতে গেলে ছিকু নামলো না। শক্ত করে পরীর গলা ধরে থাকলো। কাঁদোকাঁদো গলায় বলল
‘ পুরী দুক্কু পাচে কেন?
পরী এক হাত দিয়ে মুখ ঢেকে রাখলো। ছিকু সরানোর জন্য প্রাণপণ চেষ্টা করতে করতে সক্ষম হলো। তারপর খিক করে হেসে দিল। পরী না হাসায় আবার রেগে তাকালো। তারপর পরীর নাকে পাপ্পি দিয়ে বলল
‘ পুরীকে আদোল কচচি কেন?
‘ মেরেছেন তাই আর কি? আবার বলে কেন?
আমি আজ বলে দেব তোমার পাপাকে। বলব ছিকুর সাথে যাতে কথা না বলে।
ছিকু কান্নাকান্না চোখে চেয়ে রইলো। পরী তাকে নিয়ে নীরার কাছে গেল।
_______
রিপ কলম চালানো থামালো। তার ফাইলের দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে থাকা নীরাকে বলল
‘ নীরা কথা শোনো।
নীরা তাকালো।
‘ কি?
রিপ মাথার পাশে দেখিয়ে দিয়ে বলল
‘ এদিকে একটু টিপে দাও তো। কেমন ধরে আছে।
নীরা বলল
‘ তেল দেবেন?
‘ ধ্যাত কিসের তেল?
‘ তো কি? বছর ছ মাসে ও তো তেল দেন না।
নীরা সত্যি সত্যি তেল নিল। রিপের মাথার উপর তেল ভর্তি হাতের গালু বসিয়ে দিয়ে বলল
‘ আহ শান্তি শান্তি।
রিপ হতভম্ব। চেঁচিয়ে বলল
‘ আহা কি করেছ এসব? উফফ।
নীরা হেসে বলল
‘ একদম ঠিক কাজ করেছি। বাপ বেটা দুজনেই তেল ছুঁবেনা জীবনে ও। ঢং করে।
রিপ চেয়ার ছেড়ে দাঁড়ালো। নীরা ভড়কে গিয়ে বলল
‘ তো কি হয়েছে? আশ্চর্য! মানুষ কি তেল দেয় না?
রিপ নীরার কাছে এগিয়ে গেল। নীরার বেণুনী করা চুলের আগা টেনে ধরে তার মাথা থেকে তেল মুছতে মুছতে বলল
‘ তেল দিতে বারণ করেছিলাম।
‘ শুনব না। শুনিনি।
রিপ তেল মুছা শেষ করে বলল
‘ তুমি এমন কেন?
‘ আপনার মনের মতো।
রিপ আর কিছু বলতে পারলো না৷ নীরা হেসে বলল
‘ কি দেখেন?
‘ একটা আজব মানুষকে দেখছি।।
নীরা বলল
‘ ধুরর শরম করে আমার।
রিপ হেসে উঠলো আওয়াজ করে।
পরী এসে বলল
‘ কি নিয়ে হাসাহাসি হচ্ছে?
রিপ তাকালো।
‘ পরী? এসো মা। ভাই এখনো ঘুমোয়নি?
‘ না পাপা। ভাইকে খুঁজছে? ভাই আর পিহু কোথায়? ওদের তো খুঁজে পেলাম না।
নীরা রিপ একে অপরের দিকে তাকালো। নীরা বলল
‘ কেন? কোথায় যাবে?
রিপ বলল
‘ আশেপাশেই আছে হয়ত। নিচে দেখেছ?
‘ নেই।
‘ বাইরে?
‘ না দেখিনি। ওখানে কেন যাবে ওরা? দুজনের এত সখ্যতা হলো কখন? হাঁটতে বসতে ঝগড়া করে।
‘ কে জানে?
নীরার দায়সারা কথা। পরী বলল
‘ আচ্ছা ছাদে বোধহয়।
ছিকু বলল
‘ কেন ছাদে কেন?
‘ হয়ত ওখানে গল্পগুজব করছে।
নীরা বলল
‘ তাই হবে হয়ত। থাক গে গল্পগুজব করুক।
ছিকু জোরগলায় বলল
‘ কেন গুজুগুজু করবে কেন?
রিপ বলল
‘ আচ্ছা আচ্ছা ভাইকে নিয়ে যাও তুমি।
পরী বলল
‘ যাব?
‘ হ্যা।
পরী যাওয়ার সময় মুনা বলল
‘ কোথায় যাচ্ছ?
‘ ছাদে। ভাইরা নাকি ওখানে।
মুনা ও সাথে যেতেই পিহুর সামনাসামনি পড়ে গেল তারা। পিহু দৌড়েই আসছিল। তাদেরকে দেখে ভড়কে গেল। বড়বড় চোখ করে চোরা মুখ করে চাইলো। নীরা ও আসলো সেখানে। ছিকু বলল
‘ পিহু লুকি থাকে কেন?
পিহু অস্বস্তি কাটিয়ে উঠতে ছিকুকে কোলে তুলে নিল। চলে যেতেই পরী বলল
‘ দাঁড়াও। তোমার গায়ে এই ওড়নাটা কার?
পিহু শেষ। কি বলবে এখন সে? আল্লাহ!
মুনা বলল
‘ ওর আর কি।
‘ না, ওর এরকম ওড়না কোথাথেকে আসবে?
মাহিদ ততক্ষণে সবার পেছনে এসে উপস্থিত। বড় গলা করে বলল
‘ কিতা হয়ছে এইখানে?
মুনা সব বলল। পিহু কোনোদিকে তাকালো। পেছনে আঙুল করে বলল
‘ মাহিদ ভাই দিছে। মাহিদ ভাই।
পরী, মুনা একসাথে বলল
‘ মাহি? কেন?
মাহিদ শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো। শালী তারে ফাঁসাই দিল।
‘ আমি কিছু জানিনা বলে,পিহু ছিকুকে নিয়ে দৌড় দিল।
সবাই ঝাপটে ধরলো মাহিদকে। পরী বলল
‘ তো আমারটা কই?
মাহিদ বলল
‘ ধুরর বাপ, তোমারে না বিয়ার সময় দিছি। ওরে ও বিয়ার সময় দিতাছি আর কি। পড়াই দেখতাছি কালা বেডিরে ধলা ওড়নায় মানায় কিনা।
‘ ওহহহ।
নীরা বলল
‘ বাহ সুন্দর লাগতেছে পিহুরে। কালা হইলে কি হইবো? ওর বরের কাছে ওই হইবো বিশ্বসুন্দরী। ওর মতো মেয়ে হয় নাকি?
মাহিদ কপাল কুঁচকে বলল
‘ হ। আর কথা পাওনা। কালা বেডিরে কালা না কইয়্যা ধলা যে কইবো বুইঝা নিবা তার মাথার স্ক্রু ঢিলা।
নীরা বলল
‘ হ বুঝি। আমার আশেপাশের সব মানুষই স্ক্রু ঢিলা টাইপের।
মাহিদ কেমন করে তাকালো। মেরিমার কথা তো সুবিধার ঠেকতেছেনা বাপ।
ঘরে গিয়ে পিহু ছিকুকে বিছানায় বসিয়ে ধপাস করে শুয়ে পড়লো। বালিশে মুখ গুঁজে বলল
‘ ছিঃ ছিঃ এসব কি হচ্ছে?
ছিকু পিহুর পিঠের উপর উঠে বসলো। বলল
‘ পিহু নজ্জা পাচে কেন?
পিহু সে অবস্থায় হাসতে লাগলো।
_____________
ঘর থেকে বেরোনোর মুহূর্তে নিনিতের সামনাসামনি পড়ে গেল জালিশা। নিনিত বলল
‘ কি অবস্থা?
জালিশা উত্তর দিল না। চলে যাওয়ার সময় নিনিত বলল
‘ এটা বেয়াদবি না?
‘ কোনটা?
‘ এই যে উত্তর না দিয়ে চলে যাচ্ছিলে।
‘ আমি বেয়াদব না। এর চাইতে ও বেশি কিছু। কথা বলবেন না।
‘ বলব না। বলতাম না এরকম বেয়াদবি করবে জানলে। স্টুপিড।
জালিশা তার যাওয়ার দিকে তেজীচোখে চাইলো। আইমি এসে বলল
‘ কোনো সমস্যা?
‘ নোহ আম্মি। অল ফাইন।
‘ তাহলে চেহারা এত শুঁকিয়েছে কেন? তোমার মামির সাথে বেশি বকবক করতে যেওনা। উনি টেনশনে আছেন।
‘ কেন?
‘ নিনিতের বিয়ে নিয়ে বোধহয় কোনো সমস্যা হয়েছে।
জালিশা মাথা নাড়লো। বলল
‘ আমি ওনাদের মন খারাপের কারণ হবো না আম্মি। তুমি টেনশন ফ্রি থাকতে পারো।
নিশিতা এসে জালিশাকে টেনে নিয়ে গেল নিকিতা বেগমের কাছে। জালিশা হতভম্ব। নিকিতা বেগম তাকে দেখলেন চোখ তুলে। পাশে থাকা গ্লাস তুলে পানি খেয়ে বললেন
‘ বসো।
জালিশা বসলো না। নিশিতা বলল
‘ বোস।
জালিশা চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকলো। তাকে কি কিছু বলবে মামি?
নিকিতা বেগম পানি খেয়ে ধীরেধীরে এগিয়ে এল। বলল
‘ তোমাকে সোজাসাপটা কয়েকটা প্রশ্ন করি?
‘ হুহ।
নিশিতার দিকে তাকালো নিকিতা বেগম। নিশিতা চলে গেল। নিশিতা চলে যেতেই নিকিতা বেগম বললেন
‘ পিহুর বাবার সাথে তোমার পরিচয় কিভাবে?
‘ পিহুর বাবা?
‘ হ্যা।
‘ কেন? আমি তো পিহুর বাবাকে দেখিইনি কখনো।
‘ মিথ্যে।
ভড়কে গেল জালিশা। হালকা কেঁপে উঠলো। কত আপন ভাবে সে এদের। আর তারা?
গোলগাল মুখটা ভয়ে চুপসে রইলো।
‘ কেন মিথ্যে বলছো তুমি?
‘ আমি মিথ্যে বলছিনা মামি। আমি সত্যিই চিনিনা।
‘ চেনো তুমি। চেনো বলেই ওসব কথা বলেছ। কেন বলেছ ওসব? কেন বলেছ নিনিতকে তোমার।
উফফফ।
জালিশা মুখ ছোট করে দাঁড়িয়ে রইলো। নিকিতা বেগম বললেন
‘ যাও এখান থেকে। আমার ভালো লাগছেনা। কি হলো?
জালিশা ফুঁপিয়ে উঠলো। রুম থেকে বের হতেই নিশিতার সামনাসামনি পড়লো। নিশিতা বলল
‘ মায়ের কথায় কিছু মনে করিস না। পিহুকে মা সেই অনেক আগে থেকে ভেবে রেখেছে তাই এসব মানতে কষ্ট হচ্ছে।
‘ আমি পিহুর জায়গা নিতে চাই না।
‘ চাস না?
জালিশার শক্ত জবাব।
‘ নাহ।
নিশিতা বলল
‘ তাহলে কেন আদি আঙ্কেলকে ওসব কথা বলতে গেলি। ওনি তো পিহুর বাবা, ওনার খারাপ লাগতে পারে ওসব কথায়।
‘ আদি আঙ্কেল? আদি আঙ্কেল পিহুর বাবা?
‘ হ্যা।
জালিশার পায়ের তলার মাটি যেন সরে গেছে। মাথার চুল আঁকড়ে ধরলো সে।
নিনিত এসে বলল
‘ কি সমস্যা?
নিশিতা সরে পড়লো চুপচাপ।
‘ তোমার কি হয়েছে আবার?
জালিশা তার দিকে মুখ তুলে তাকালো। বলল
‘ শুনবেন? শুনে কি করবেন?
‘ কিছু সাজেশন তো দিতে পারি।
‘ সাজেশন? আমার সাজেশন চাই না ডক্টর।
‘ তাহলে বিনামূল্যে উপদেশ দিই কিছু। কনট্রোল ইয়োর ইমোশন। খুব খারাপ জিনিস এটা।
জালিশা ফুলেফেঁপে চেয়ে রইলো। নিনিত হেসে উঠলো। বলল
‘ ওভাবে তাকাতে অধিকার লাগে। তুমি কোনো অধিকারে তাকাচ্ছ?
‘ আপনি আমার ইমোশন নিয়ে মজা করছেন না?
‘ করছি?
‘ কোন অধিকারে।
‘ সবকিছু করতে অধিকার লাগবে এটা ও কেউ রাখেনি।
‘ ডক্টর আপনি।
‘ আমি ঠিক।
‘ আর আমি?
‘ ভুল। ভুলভাল মানুষকে নিয়ে ভাবতে নেই। আমি মানুষের মনের দায়িত্ব নিতে ব্যর্থ হতে চাই না। তুমি তোমার মতো ভালো থাকো। আমাকে থাকতে দাও।
‘ কি বলতে চাচ্ছেন আপনি? আমি আপনাকে অশান্তিতে রেখেছি?
‘ শান্তি ও তো দিচ্ছ না। যেদিকে যাচ্ছি সেদিকে কেন তোমার নাম আমাকে শুনতে হচ্ছে? আমি মোটেও ভালো থাকতে পারছিনা। তুমি মেয়েটাই একটা জ্বলজ্যান্ত অসুখ।
নিনিত চলে গেল বলেই। জালিশা বিড়বিড় করলো
‘ আমি অসুখ?
______________
সকাল সকাল বাড়িতে মাইশাকে দেখে হতভম্ব পিহু। মাহিদের সাথে হেসেখেলে খাওয়াদাওয়া করছে। পিহুকে ও ডাকলো। নীরার তো খুশির শেষ নেই। সব এগিয়ে এগিয়ে দিচ্ছে। পিহু ফুলতে ফুলতে অবশিষ্ট কিছু নেই। রিপ ও বাদ যায়নি। সবার মধ্যমণি এখন মাইশা। ছিকু ও মাইশার কোলে। বেয়াদব ছেলে। আর পিহু পিহু করলে এক চড়ে দাঁত ফেলে দেবে। মাহিদ একবার পিহুর দিকে আড়চোখে তাকালো। পিহু আঙুল দেখিয়ে ইশারায় বলল
‘ এটা খুলে ফেলে দেব একদম।
মাহিদ কপাল কুঁচকে চাইলো। আবার এই সেই কথায় ব্যস্ত হয়ে পড়লো। পিহু চুপচাপ কোনো কথা বলেনি। বলছে না। তার কিসের কথা?
মাইশা দুপুরে খাওয়া দাওয়া করে পিহুর কাছে আসলো। সে চলে যাবে। পিহু তাকে দেখে দাঁড়িয়ে পড়লো। বলল
‘ বিকেল অব্ধি থাকুন।
‘ না পিহু। মা ফোন করছে বারবার। তোমার জন্য একটা জিনিস এনেছি।
বলেই ব্যাগ থেকে একটি ঝকঝকে প্যাকেট জাতীয় কিছু বের করলো। পিহু বলল
‘ কি এটা?
‘ খুলে দেখো।
পিহু খুললো সেটি। দেখলো একটি ছবি। সাথে সাথে মাইশার দিকে চোখ তুলে তাকালো পিহু। মাইশা হেসে বলল
‘ আরেহ দেখো।
পিহু ছবিটার দিকে তাকালো৷ দেখলো তার আর মাহিদেরই একটা ছবি। দুজন দাঁড়িয়ে আছে যোজন যোজন দূরত্বে। পিহুর মুখে আকাশসম অভিমান। মাহিদ আঁড়চোখে অভিমানের কণা গুনতে থাকা সেই প্রেমিক। পিহু ছবিটা পেছনে লুকিয়ে ফেলল। মাইশা তার কান্ড দেখে হেসে ফেলল৷ হাসতে হাসতে গাল টেনে দিয়ে বলল
‘ তোমাকে এভাবে কতবার দেখে তুমি জানো? হায়হায় তুমি দেখছি লজ্জা পাচ্ছ। ওসব কোনো ব্যাপার না। তোমার বন্ধু না হলেও মিঃ মাহিদের খুব ভালো বন্ধু আমি। লজ্জার কোনোকিছু নেই। তবে একটা কথা বলি, তোমার মন খারাপের কারণ হওয়া মানুষটাই কিন্তু দিনশেষে তোমার মন ভালো করার ঔষধ। ওসব মানুষকে একেবারে বেঁধে ফেলতে হয়। বেঁধে রাখতে হয়। অল দ্য বেস্ট। একেবারে বিয়েতে দেখা হচ্ছে। আমি কিন্তু এক সপ্তাহ আগে দাওয়াত চাই।
পিহু বোবা হয়ে চেয়ে রইলো। মাইশা হেসে বলল
‘ কি একটা অবস্থা!
মাইশা চলে গেল। মাহিদ তাকে দিয়ে এসে বাড়ি ফিরলো। নীরা এসে বললো
‘ পিহুকে তো নিনিতের মা ফোন দিছে। ওদের আকদের কথা শোনা যাচ্ছে।
‘ তো আমি কি করুম?
নীরা গজগজ করে বলল
‘ গর্তে বইসা থাক ইঁদুরের বাচ্চা।
মাহিদ হেসে বলল
‘ আইচ্ছা।
নীরা বলল
‘ হাসবি না মাহি। তোরে না বলছি পিহুর মতো বউ লাগবে আমার।
‘ মতো টতো লাগতো না আর। অরিজিনিয়াল ভার্সনরে লইয়্যা আসুম।
কথাটা স্বাভাবিক গলায় বলে সোফায় বসে টিভিতে মন দিল মাহিদ। নীরার মনে হলো সে কানে ভুল শুনেছে। তাই কানে আঙুল দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকলো। না সে ঠিকই শুনেছে। এই তো বাছাধন লাইনে আইছে।
_________
পিহু বই নিয়ে একটু টেবিলে বসেছে। তার পড়ায় মন বসছেনা। ওদিকে কি হলো কিছু জানেনা। খচখচানিটা কমছেনা। ছিকু এসে বকবক করতে করতে কোলে ঘুমিয়ে পড়লো। পিহু তাকে শুইয়ে দিয়ে পাশে শুয়ে পড়লো।
মাহিদের ফোন এল তক্ষুণি। পিহু সাথেসাথে ফোন তুললো।
‘ বাইরে আয়।
‘ কেন?
‘ আয় আয়।
‘ যদি কেউ দেখে?
‘ লাইন ক্লিয়ার।
‘ ধুরর।
‘ আয় আয়।
পিহু গেল সবার চোখকে ফাঁকি দিয়ে। বাইরে আবছা আলো। বাগানের গাছের ফাঁকে ফাঁকে জোনাজি পোকা দেখা যাচ্ছে। পুরোনো গাছটি থেকে বকুল ফুলের গন্ধ আসছে। পিহু ছুটে গেল। এদিকওদিক তাকাতে লাগলো। কাউকে চোখে পড়লো না। ভয় লাগতে শুরু করলো পিহুর। মাহিদ পেছন থেকে এসে ডাক দিতেই পিহু চমকে উঠলো। দেখলো মাহিদের মুখে কাপড়চোপড় পেঁচানো। পিহু বলল
‘ এসব কি পেঁচিয়েছ?
‘ খুলে দে।
পিহু কাপড়টি খুলতেই দেখলো মাহিদের কপালে একটি কাপড় বাঁধানো। পিহু মাহিদের মাথা নিচে নামিয়ে এনে কাপড়ে লেখাটি পড়তে চাইলো। আবছা আবছা আলোয় পড়লো, তিন চার এক মিলে কত হয়?
পিহুর কপালে ভাঁজ। কপালের কাপড়টা খুলে নিয়ে বেশ মনোযোগ দিয়ে চাইলো কাপড়টা। আচমকা কাপড়টি লুকিয়ে ফেলল পিহু। হেসে ফেলল মাহিদের দিকে তাকিয়ে। বলল
‘ এক, চার, তিন হয় গাঁধা।
মাহিদ বলল
‘ সব মিলে কত হয়?
পিহু দুটো আঙুল দেখিয়ে বলল
‘ দুই।
মাহিদ আঙুল দুটোর দিকে তাকালো। আঙুল দুটো টেনে নিজের কাছে নিয়ে এল। বলল
‘ এবার বুঝা দুই কেমনে।
‘ এক আছে, তিন আছে, চার ও আছে কিন্তু মাঝখানে দুই নেই। তাই দুই।
মাহিদ হাতের বাঁধন শক্ত করে বলল
‘ ধুরর বাপ উত্তর পছন্দ হয় নাই।
পিহু হেসে বলল
‘ না দুই। দুই। দুই। দুই।
‘ কেমনে?
‘ কারণ দুই মানে দুটো মানুষ। যেমন আমি আর তুমি।
‘ তুই আর আমি কি?
পিহু বেশ চিন্তায় পড়ে গেল। কিছুক্ষণ পরে বলল
‘ তুমি আর আমি বলে কিছু হয় না। আমিই তুমি। তুমিই আমি।
‘ তুই আর আমি বউ জামাই হমু বাপ। সোজাসাপটা বইলা দিবি। আমারে শরম পাবি কিল্লাই? আমারে শরম পাইয়্যা কাম নাই। তোর শরম টরম সব আমি।
পিহু বলল
‘ যাহহহহহ।। তুমি বেয়াদব।
মাহিদ তার মাথা বুকে ঠেকিয়ে আবার ছেড়ে দিল। ছেড়ে দিয়ে বলল
‘ হ বাপ। বুইঝা পাইছি আমি বেয়াদব।
পেরেম টেরেম বহুত হয়ছে। যাহ এবার ঘুমা। তুই ঘুমা, আমারে ঘুমাতে দে।
পাঠক বাপদের ও ঘুমাতে দে।
চলবে,
#মন_গোপনের_কথা
#পর্ব_৩৫
লেখনীতে, পুষ্পিতা প্রিমা
সকাল সকাল পিহু চৌধুরী বাড়িতে চলে এল। রিপ নিয়ে এসেছে। পিহু মেডিক্যালে যাবে তাই। নীরা যদিও আসতে দিচ্ছিল না। কিন্তু পিহু আর থাকতে চাইলো না। অনেক বেড়ানো হয়েছে। ইশা রিপকে বলল
‘ রিপদা তুমি দুপুরে খাওয়া দাওয়া করে যেও।
‘ সম্ভব না ইশু। কোর্টে যেতে হবে। আমি পিহুর সাথে সেজন্য বেরিয়ে পড়েছি। ওকে একা ছাড়তে মন সায় দিচ্ছিল না। আমি আবার আসবো। ভালো থাক।
‘ কিন্তু তুমি আর কবে আসবে। খেয়ে যাও না। কোর্টকাছারি তো সারাবছরই করছ। প্লিজ প্লিজ।
‘ এগুলো কেমন আবদার ইশু? এভাবে বললে তো যেতে পারিনা। কিন্তু যেতে হবে। শোন তোর হাতের রান্না খাওয়ার অনেক সুযোগ আসছে সামনে। তখন মনভরে খাব। চিন্তা নেই।
ইশা রহস্যময় হাসলো। রিপ বলল
‘ এখন ছাড়। পরে আসবো। আসবো যখন বলেছি তখন আসবো। নইলে এক কাজ কর না। তুই গিয়ে বেড়িয়ে আয়। যাবি যাবি করে আর গেলি না।
‘ যাব কিছুদিন পর। তুমি থাকো না।
‘ আর বলিস না। আসি। ভালো থাকিস৷ পরী আর ছিকু কিছুদিন থাক। মাহির সাথে চলে আসবে। ভালো থাকিস। যাস। হ্যা?
ইশা দু পাশে মাথা দুলালো। বলল
‘ তুমি ও এসো। নইলে আমি ফোন করে করে খুব জ্বালাবো।
রিপ হেসে বলল
‘ আচ্ছা।
_________
ঘুম থেকে উঠে মাহিদ শুনলো ডাক্তারের বাচ্চি চইলা গেছে। সকাল সকাল মেজাজ খারাপ হয়ে গেল তার। কিছুদিন পর তার ইসতিরি হইবো অথচ তারে না কইয়্যা চইলা গেছে। শালীরে পাইলো এমন মারা মারবো বাপের নাম ভুইলা যাইবো।
ছিকু এসে মাহিদের কোলে উঠার জন্য হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলল
‘ মিহি কুলে কুলে।
মাহিদ কোলে তুলে নিয়ে বলল
‘ শালা বুইড়া। তোর লাগি কিছুদিন পর বউ আনতে হইবো। তোর এখনো কোলে চড়ার ঢং গেল না। বুইজ্জা বেডা।
ছিকু বোকাসোকা গলায় প্রশ্ন করলো
‘ কেন? ছিকু বুজজা বিডা কেন?
‘ ধুর হ শালা। কিছুদিন পর তোর দাঁড়ি উঠবো আমার মতো। আমার ব্যারিস্টার বাপ তো আমারে দাঁড়ি রাখতে দেয়নাই। কিন্তু তোরে তোর বাপ মানা করতে পারবো না। কারণ তোরে আমি হিরো বানামু শালা। তুই সুন্দরসান্দর আছোস।
‘ কেন? ছিকু হিরু হুবে কেন? কেন বাপ কেন?
‘ ওরেব্বাপ কেন কেন বন্ধ কর। নইলে তোরে এক আছাড় দিমু এহন।
ছিকু মাহিদের গলা জড়িয়ে ধরে কাঁধে মাথা ফেলে রেখে বলল
‘ ছিকু গুড বয় কেন? মিহি ব্যাড বয় কেন?
নীরা তোয়ালেতে হাত মুছতে মুছতে এল। বলল
‘ মাহি তোরে কি নিনিত ফোনটোন দেয়নাই?
‘ টোন দিছে।
‘ ধুর মজা করিস না। আমি সিরিয়াস।
‘ আমি ও সিরিয়াস। পিহুনির জামাই মোরে ফোন দেইনাই।
নীরা কেমন করে তাকিয়ে চলে গেল। ছিকু নীরার যাওয়া দেখে মাহিদকে প্রশ্ন করলো
‘ মিহি নিনিকে ফুনটন দিনাই কেন?
মাহিদ হো হো করে হেসে উঠলো৷
____________
পিহু মেডিক্যালে মাত্রই পা দিয়েছে। নিনিতকে সে দেখেছে। নিনিত তাকে এখনো দেখেনি। পিহু সরে গেল। ক্লাসে যাওয়ার আগেই নিশিতা এল। বলল
‘ ফার্মাকোলজির শিটগুলো তোর কাছে আছে?
‘ হুহ।
নিশিতা বলল
‘ আমাকে দিস।
‘ নিস।
‘ তুই কি আমার উপর কোনো কারণে রেগে আছিস?
পিহু চুপ থাকলো। হয়ত রাগ অভিমান ছিল। কিন্তু এতটা দূরে সরে আসবে পিহু ভাবতে পারেনি। নিজ থেকে সেটা স্বীকার ও করতে পারছেনা। নিজেরই কষ্ট হচ্ছে। যতটা তাড়াতাড়ি সম্ভব সরে পড়ার চেষ্টা করলো পিহু। নিশিতা তার পেছনে গিয়ে ঝাপটে জড়িয়ে ধরলো। বলল
‘ আমি আমার আগের বান্ধবীকে মিস করছি। আমার ভুল থাকলে শাস্তি দে। কিন্তু এমন করিস না।
পিহুর গলা ভার হয়ে থাকলো। নিশিতা তার সামনে চলে এল। বলল
‘ দেখ, তুই আমার বেস্টি। তুই কতদিন আমার সাথে আগের মতো কথা বলছিস না, হাসছিস না। আমার কষ্ট হচ্ছে রে বিশ্বাস কর।
পিহু মাথা নিচে নামিয়ে নিল। নিশিতা তাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো। বলল
‘ এই আমাকে ও একটু জড়িয়ে ধর তো। মান অভিমান একটু ঘুচিয়ে ফেলি। তুই আমার ভাইয়ের বউ হবি তো।
পিহু কিছু বলতেই যাচ্ছিল শেষ কথাটা শুনে আটকে গেল কথা। বলা হলো না। তবে নিশিতাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো৷ ফুঁপিয়ে উঠলো। যার মানে এই, আমি তোর এই আশা কখনো পূরণ করতে পারব না রে।
_________
নিনিত মাত্রই ছবিগুলো হাতে নিয়েছে। সামান্য কৌতুহল কাজ করছিল মাইশার হাতের ছবিগুলো দেখার জন্য। ছবিগুলো দেখার সাথে সাথে আগ্রহ মিটেনি বরঞ্চ হাজার ও প্রশ্ন এসে জমা হলো মনে। মাইশা দিব্যি বাবোলগাম চিবিয়ে যাচ্ছে। কিছুক্ষণ পর বলল
‘ বুঝেছেন কিছু?
নিনিত বোকাসোকা চোখে চাইলো। বোবামুখে চেয়ে থাকলো। মাইশা হাসলো। ছবিগুলো কেড়ে নিয়ে বলল
‘ এবার বলুন তো আমি ভালো ফটোগ্রাফার না? ক্যামেরা ছাড়া এত সুন্দর ছবি নিলাম।
নিনিত এখনো চুপ।
‘ কি মিন করতে চাইছেন আপনি?
‘ কেন? আমার তোলা ছবি তো কথা বলে।
নিনিতের হাঁসফাঁস লাগলো। মাইশা বলল
‘ দেখুন আমার মনে হলো এই বিষয়টা আপনার জানা দরকার। বিয়ে একটা জন্মজন্মান্তরের সম্পর্ক। এটাকে নিয়ে হেলাফেলা করা উচিত না। যেটা আপনি এবং মিঃ মাহিদ করছেন। আপনি জালিশাকে এড়িয়ে যাচ্ছেন আর মিঃ মাহিদ পিহুকে। কেন সেটা আমি জানিনা। কিন্তু এটা ভুল৷ এই মানুষগুলো কিন্তু আমাদের জীবনে সবচাইতে সঠিক মানুষ। আমি আপনাকে জ্ঞান দেওয়ার কেউ না,তারপর ও বলছি জালিশাকে একটু বুঝতে শিখুন। ও কোনোদিক দিয়ে আপনার চেয়ে কমতি না। ও যতটা সুন্দর ওর মনটা তার চাইতে ও বেশি সুন্দর। আমি ওর সাথে অল্প মিশেই বুঝতে পেরেছি। যেমনটা মিঃ মাহিদ আর পিহুকে। আপনি মিঃ মাহিদকে আমার নামটা বলবেন না। উনি আমাকে অনেক বিশ্বাস করে। এবং ভালো বন্ধু মনে করে। আমি ওনার বিশ্বাস ভাঙতে চাই না। ওনার কথাবার্তায় যা বুঝলাম ওনি আপনাকে কিংবা পিহুকে বলার সুযোগটুকু পায়নি। ওনাকে কেউ সুযোগটা দেয় নি। তারপর এতসব হয়ে গেল। আপনি ও ওর পাশে ছিলেন না। এইবার তো সব জানলেন।
নিনিত হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে রয়েছে। মাইশা তারপর চলে গেল৷ নিনিত কতক্ষণ একিভাবে বসে ছিল তার জানা নেই। সব যেন মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে। ভীষণ রকম রাগ, আর জেদ হচ্ছে। কেন হচ্ছে তা জানা নেই।
হসপিটাল থেকে সোজা রাস্তায় চলে এল সে। পথে নেমে মেডিক্যাল গেইট পার হয়ে কলেজ গেইট ধরতেই মাহিদকে দেখা গেল রাস্তার বিপরীতে। যেখানে বেশিরভাগ সময় ও দেখা যায় তাকে। নিনিতকে দেখে সবাই মিলে কি কি যেন বলে হেসে উঠলো। নিনিত তাদের পাশে গিয়ে দাঁড়ালো। মুখটা থমথমে। মাহিদ তার পিঠ চাপড়ালো। বলল
‘ তোর আবার কিতা হয়ছে বাপ? মুখটা অমন কইরা রাখছোস ক্যান? বিয়া করবি, তাই চিল থাকবি।
নিনিত হাত সরিয়ে বলল
‘ একা আয়। কথা আছে।
মাহিদের সাথে সাথে সবাই হাসলো। মাহিদ হেসে উড়িয়ে দিয়ে বলল
‘ একা একা ক্যান? সবার সামনে বল বাপ। একা যাইতে পারুম না।
নিনিত তার হাত ধরলো। বলল
‘ চল। কথা আছে।
মাহিদ হেসে উঠে নিনিতের পেটে হালকা ঘুষি মারলো। বলল
‘ আরেহ বইলা ফেল যা বলার। লজ্জা পাইতাছোস ক্যান?
‘ লজ্জা কেন পাব? চল কথা আছে।
মাহিদ গেল না। নিনিত বলল
‘ ভীষণ জরুরি কথা আছে তোর সাথে চল। আরিশার ব্যাপারে।
মাহিদের হাসিহাসি চেহারা নিভু নিভু হয়ে গেল। পরক্ষণে হেসে উঠে বলল
‘ ওরে নিয়ে কি কথা? তোর বউ কি আমারে দিয়া দিবি নাকি?
মাহিদের কথা শুনে সবাই হেসে উঠলো। নিনিত ঘুষিটা একদম নাকঠোঁট বরাবর বসিয়েছে বোধহয়। সবার হাসি বন্ধ হয়ে গেল। মাহিদ কয়েক পা পিছিয়ে গেল মুখে হাত দিয়ে। সবাই চরম অবাকের পর্যায়ে। তপু বলল
‘ এটা কি করলি দোস্ত? ও তো মজা করে বললো। তোর বউকে নিয়ে খারাপ কিছু তো বলেনি৷
মাহিদ শুধু অবাক চোখে নিনিতের দিকে চেয়ে থাকলো। নিনিত রক্তাক্ত চোখে তাকালো তার দিকে। আঙুল তুলে বলল
‘ তোর বন্ধু দরকার নেই আমার। বন্ধুত্বের সংজ্ঞাটা শিখে নিস ভালো করে।
গজগজ করে কথাটুকু বলে চলে গেল সে৷ মাহিদের ঠোঁটে ভীষণ জ্বালা করছে। ফুঁলে ছিঁড়ে গেছে। লাবীব বলল
‘ ওকে কি পাগল হয়ে গেছে নাকি রে? কি হলো? দাঁড়া আমি পানি আনি। ঠোঁট তো ফুলে গেছে দোস্ত৷ রক্ত দেখা যাচ্ছে।
মাহিদ ঠোঁট মুছে বলল
‘ চলে যাবে। বাসায় যাহ। কথা হবে।
তপু আর লাবীবকে বিদায় দিয়ে মাহিদ বাড়ি ফিরে এল। নীরা তাকে দেখে হায়হায় করে উঠলো। বলল
‘ এই অবস্থা কেন মাহি? কার সাথে ঝগড়া করেছিস? কি হয়েছে?
মাহিদ কোনোটারই উত্তর দিল না। সোজা ঘরে চলে গেল। মুনা বলল
‘ জোরাজোরি করিস না। যা বলার এমনিতেই বলবে। এক কাজ কর নিনিতকে ফোন দে। ও ভালো জানবে।
নীরা তাই করলো। নিনিত ফোন তোলার সাথে সাথে বলল
‘ আমি ওই নামের কাউকে চিনিনা। আমার কাছে কোনো খবর নেই আন্টি।
নীরা তার কথা শুনে যেন আকাশ থেকে পড়লো। এসব কেমন কথা? তারমানে তার আর মাহির মাঝে কোনো ঝামেলা হয়েছে?
_____
ছিকু বি অক্ষরটা লিখে পিহুকে দেখিয়ে বলল
‘ বিটিফুল কেন?
পিহু বলল
‘ সি লিখেন।
‘ কেন চি লিখবু কেন?
‘ মাথার জন্য।
ছিকু সি লিখলো। ডি লিখলো। তারপর বলল
‘ ছিকুর মুনে নাই কেন?
পিহু বলল
‘ ডি’ র পরে ই হয়।
‘ কেন? ই হয় কেন?
পিহু হেসে তার গাল টেনে দিয়ে বলল
‘ আমার কলিজা।
ছিকু পিহুর গাল টেনে দিল। তখনি পিহুর ফোন বেজে উঠলো। নিশিতা ফোন করেছে। পিহু ফোন তোলার সাথে সাথে সে বলল
‘ মাইশা কয়েকদিনের মধ্যে তোর এত আপন হয়ে গেল? তাকে মনের কথা সব বলে দিতে পেরেছিস আর আমি? বাহ!
ভালোই। আমার ভাইকে বিয়ে করবি না সেটা সোজাসাপ্টা বলে দিতে পারিসনাই? মেয়ে কি কম পড়েছে আমার ভাইয়ের জন্য? কি দরকার ছিল এত ঢং করার? আমাকে বলে দিলে তো হতো। একেবারে না করে দিতাম।
পিহু বলল
‘ তুই এভাবে কথা বলছিস কেন?
‘ তো কিভাবে বলব? অনেক তো করেছিস। এবার একটু অফ যাহ না। শুরুতেই বলে দিলে আজ এতকিছু হতো না। নাকি তোকে আমার ভাই জোর করেছিল? কাজটা তুই ভালো করিসনি।
‘ আমার সাথে তুই এভাবে কথা বলতে পারিস না নিশু।
‘ পারি কারণ এখন আমি যার সাথে কথা বলছি তার সাথে এককালে আমার বন্ধুত্ব ছিল। এখন নেই। আমার বান্ধবী মরে গেছে। আমু তোর বন্ধু হতে পারলাম কই? আমি তোকে নিয়ে যতটা ভাবি তুই তার দু আনা ও ভাবিস না। ভালো থাক। সুখী হ।
নিশিতা ফোন কেটে দিল। পিহু ফুঁপিয়ে উঠে ওড়না দিয়ে মুখ ঢাকলো। ছিকু ড্যাবড্যাব চোখে তাকিয়ে থাকলো। ঠোঁট টেনে বলল, পিহু কাঁদে কেন?
ইশা এসে বলল
‘ পিহু তোমার ফোনে কি ব্যালেন্স আ,,,,,,
ইশা থামলো। বলল
‘ কি হয়েছে সোনা? পিহুকে মেরেছেন?
‘ পিহুকে ফুন বুকা দিচে কেন? পিহু কাঁদে কেন? ছিকুর দুক্কু লাগে কেন?
পিহু তাড়াতাড়ি গাল মুছে নিজেকে সামলে বলল
‘ ফোনে ব্যালেন্স আছে আম্মা। নিয়ে যাও।
ইশা ফোনটা তুলতে তাকিয়ে থাকলো পিহুর দিকে। ছিকুকে কোলে নিয়ে চলে গেল।
ইশা যেতেই পিহু আবার মুখ ঢেকে নিল ওড়নায়।
রাতে খাবার দাবার খেয়ে ঘুমাতে যাওয়ার প্রস্তুতি চলছে তখন। পিহুর ফোনে মাহিদের কল এল৷ পিহু ফোন তুললো খানিক্ষন পরে। মাহিদ বলল
‘ এতক্ষণ লাগে ক্যান?
‘ সবসময় ফোনের কাছে বসে থাকবো নাকি? কেন ফোন করেছ? কি চাই?
‘ এমন খ্যাঁকখ্যাঁক করে কথা বলতেছস কেন? সব বিরক্ত শুধু আমার উপর ঝাড়িস কেন?
‘ সবকিছুর মূল তুমি তাই। এই যে এতকিছু হচ্ছে সব তোমার জন্য।
‘ আমি?
‘ হ্যা তুমি। লজ্জায় তো আমি মুখ দেখাতে পারব না। নিশি আমাকে ভুল বুঝলো। আন্টি ভুল বুঝলো। স্যার হয়ত দেখলেই পাশ কাটবে। আমি কি করব তুমি বলতে পারো?
‘ পাশ কাটতে দিচ্ছিস কেন? পাশাপাশি হাঁট। সমস্যা কি? আমি যখন এতই সমস্যা তখন সরে যাচ্ছি। তোরে ফোন ও আর কেউ দিত না। যাহ থাক তুই তোর মতো। খবরদার যদি আমার খোঁজখবর নিস তোরে জিন্দা খবর দিমু। খোঁজখবর নিবিনা। মরলে ও নিবিনা। রাখ। তোরে ছাড়া আমার বেশ চলবো।
চলবে,