#মন_গোপনের_কথা
#পর্ব_৩০
লেখনীতে, পুষ্পিতা প্রিমা
এসব কথায় আমি গলছিনা। পথ ছাড়ো। যাব।
মাহিদ পথ ছাড়লো না। রেগে তাকিয়ে থাকলো। ফোঁসফোঁস করে শ্বাস ছাড়ছে। পিহু আঁড়চোখে তাকালো। বলল
‘ স,,রো। কি আশ্চর্য!
‘ সরুম না। তুই যা করার কর বেডি।
পিহু দাঁতে দাঁত কিড়মিড় করে উঠে বলল
‘ বেয়াদব মানুষ। সারাক্ষণ গালি লেগে থাকে মুখে।
তারপর আঙুল তুললো পিহু। মাহিদের মুখের সামনে আঙুল নেড়েনেড়ে বলল
‘ শোনো ওই মাইশা মেয়েটা বোকা তাই তোমাকে বিয়ে করছে। কোনো চালাকচতুর মেয়ে তোমাকে এটলিস্ট বিয়ে করবে না। একে তো ভাইবা পরীক্ষায় ফেল মারছো, দুই সারাক্ষণ গালাগালি করো। কিন্তু আমার এখন বড্ড আফসোস হচ্ছে মাইশার জন্য।
‘ চুপ থাক শালী।। আমার নিনিইত্যার জন্য দুঃখ লাগতাছে। তোর মতো আহাম্মক তার বউ হইতাছে সেইটা ভেবে। বেচারা সুন্দর সান্দর পোয়া, তোর মতো কালা বেডিরে বিয়া করতাছে। তুই সেইজন্য চাঁদ হাতে পাইছোস পাইছোস ভাব লস আমার লগে।
পিহুর নাক কাঁপতে লাগলো তরতরিয়ে। মাহিদ বলল
‘ এক ঘুষি মাইরা নাক ফাটায় দিয়ুম বাপ। নাক ফুলাইতাছোস কিল্লাই?
পিহু তাকে জোরে ঠেলে দিয়ে হনহনিয়ে হেঁটে ঘরের ভেতরে ঢুকে পড়লো। ধপ করে দরজা বন্ধ করে দিল।
মাহিদ বলল
‘ ধলা রে ধলা বলতে পারলে কালা রে কালা বলতে পারুম না ক্যান? তোরে কি এহন ধলা বলতে হইবো বাপ। ঢং করোস৷ শালী তোর ঢং দেখার জন্য কি আমি বইসা আছি?
মাহিদ ও হনহনিয়ে চলে গেল।
_______
সকালে ঘুম ভাঙতেই মাহিদ নিজের পিঠের উপর ভার কিছুর আভাস পেল। ফোঁস ফোঁস করে শ্বাস ফেলছে। নড়তে পারলো না সে। ধীরেধীরে পিঠের উপর থেকে ভার জিনিসটা সরাতেই ধপাস করে পড়ে গেল সেটা । মাহিদ তার পাশে দেখলো একটি মানুষের বাচ্চা। ঘুমাচ্ছে। কিন্তু তারমধ্যে ও কপাল কুঁচকানো। পরী এসে বলল
‘ ভাই তুই উঠেছিস? ঘুম থেকে উঠেই তোর ঘরে চলে এল। তোর কাছে নাকি ঘুমাবে।
‘ হ বাপ ভালা কাজ করছে তোমার পোলা। শালা আমার পিঠের উপর ঘুমায় গেল? শালা তার বাপের কেনা বালিশ পাইছে?
পরী হেসে বলল
‘ ওভাবে বলছিস কেন? আমার বাচ্চা তোকে কত দেখতে পারে জানিস?
ছিকু নড়েচড়ে উঠলো। চোখ বন্ধ রেখে ওপাশ ফিরে ঘুমাতে ঘুমাতে বলল
‘ বুলে দো ইয়ামপুওওচি,,বোওওল৷
মাহিদ বলল
‘ শালা কি বলল?
পরী হেসে বলল
‘ ওই মটু পাতলু দেখে না? ওখানে যে পুলিশটা আছে ওটা নাকি এগুলা বলে।
মাহিদ ছিকুর পাশে ধপাস করে শুয়ে পড়লো। টেনে তার পেটের উপর শুয়ে দিয়ে পিঠ চাপড়ে চাপড়ে বলল
‘ শালা তুই চিংগাম শালার ফ্যান? শালা আর হাঁদারাম পেলিনা। ওই মটু উঠ বাপ।
ছিকু মিউমিউ করে বলল
‘ কেন? ছিকুকে মটু ডাকো কেন?
হেসে ফেলল মাহিদ। দুহাতে জড়িয়ে আদর করলো। তার পাশে ফেলে বুকে জড়িয়ে ধরে বলল
‘ বাপের বইনের বাচ্চি শালা ছিকুর মা তুমি তোমার কাজে যাও বাপ। তোমারে আর লাগতো না। আমরা ঘুমাইতাছি।
পরী বলল
‘ আচ্ছা কিছুক্ষণ পর উঠে যাস কেমন?
‘ ধুরর বাপ।
পরী হেসে চলে গেল। ছিকু ছোট্ট নাক দিয়ে ফুঁসফুঁস করে শ্বাস ছেড়ে ছেড়ে ঘুমাচ্ছে। মাহিদ তার নাকের উপর আলতো কামড় বসিয়ে বলল
‘ শ্লা তোরে আমার কাছে ঘুমাইতে হইবো ক্যান বাপ?
ছিকু তার বুকে আর ও গুঁজে গেল। মাহিদ নড়েচড়ে বলল
‘ শালারে শালা আমার সুড়সুড়ি লাগতাছে বাপ। তুই শালা এত নরম কিল্লাই?
________
ব্রেকফাস্ট শেষ করে মাহিদ আফির পাশে বসে গল্পগুজব করছিল। পিহু এসে এদিকওদিক তাকালো। সে ছিকুকে খুঁজছে। আফি বলল
‘ কি খুঁজতাছো আম্মা?
‘ ছিকু কোথায়? একবার ও পড়তে বসেনি কেন এখনো? খেয়ে কোথায় চলে গেল?
ছিকু সোফার পেছন থেকে বলে উঠলো
‘ কেন? ছিকু নাই কেন? ছিকুর পড়তে মন চায় না কেন?
মাহিদ হা হু করে হেসে বলল
‘ একদম ভালা কাজ। আমি ভাইবা পরীক্ষায় ফেল মারছি, ছিকুশালা মেট্রিকে ফেল মারবো, ইন্টারে ফেল মারবো। পদে পদে ফেল মারবো শালা।
পিহু গটগট পায়ে হেঁটে ছিকুর কাছে এগিয়ে গেল। ছিকু তাকে আসতে দেখে দৌড়ে মাহির কোলের উপর উঠলো। গলা ধরিয়ে ঝাপটে ধরে জড়িয়ে ধরলো। মাহিদের বুকে মুখ লুকিয়ে বলল
‘ ও বাপ পিহু ডগ কেন? ভয় পাচি কেন?
মাহিদ দুহাত দিয়ে তার পিঠ ঢেকে বলল
‘ তোরে কে নিয়া যায় দেখি?
পিহু আর দাঁড়ালো না। ফোঁসফোঁস করতে করতে চলে গেল৷
______
পরী মাহিদকে বলল, ভাই আজ রাতে আমি বিরিয়ানি রান্না করব। তুই আজকে থেকে যাহ। বড় পাপাকে বলেছি সব বাজার করে নিয়ে আসতে। শুধু আজ থাক ভাই। প্লিজ!
তোর রেহান ভাইয়ার কাছ থেকে কাপড়চোপড় পড়িস।
মাহিদ বলল
‘ হ, কাল কইবা, মাহি আমি গরু রানতাছি তুই যাস না ভাই। আমারে বোকা পাইছো বাপ? থাকুম না।
ইশা বলল
‘ এমন করছিস কেন? আমি রিপদাকে ফোন করে বলে দিয়েছি। যাস না মাহি। থাক না। ছিকু ও কত খুশি তোকে পেয়ে।
ছিকু বলল
‘ মিহি পুঁচা কেন? ছিকুকে ফেলে চলি যায় কেন?
কোমরে দুহাত রেখে কপাল কুঁচকে কথাটুকু বলল ছিকু। মাহিদ দাঁত চেপে বলল
‘ শালা তুই সর। তোর লগে কে কথা কয়৷? তুই ক্যান ফটরফটর করোস বাপ? দূর হ। ফুট শ্লা।
ছিকুর দুক্কু লাগলো। নিচের ঠোঁট উল্টে কান্নামাখা গলায় বলল
‘ মিহি বিশিবিশি বুকা দেয় কেন? দুক্কু লাগে কেন?
ইশা হেসে ফেলল। ছিকুকে কোলে নিয়ে আদর করে বলল
‘ মিহিকে দুমদাম মারবো।
তখনি ইশার ফোন এল। ২৮২৮২ নাম্বার থেকে। ইশা কেটে দিয়ে ফোন কানে দিয়ে ছিকুকে কোলসমতে হেঁটে হেঁটে কথা বলতে লাগলো। একপর্যায়ে বলল
‘ হ্যা আপা সবাই ভালো আছে। নিনিতরা সবাই ভালো আছে?
তারপর ওপাশে কি বলছে তা তো শোনা যাচ্ছে না। ইশা কিছুক্ষণ পর আবার বলল
‘ হ্যা হ্যা আমি ওর আব্বাকে বলেছি। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব তত তাড়াতাড়ি বিয়ের তারিখ ফেলে দিতে। সমস্যা নেই আগামী মাসেই তারিখ ফেলতে বলব।
পরী ভুরু কুঁচকে ইশার দিকে চেয়ে রয়েছে। মাহিদ ফোন টিপছে। ইশা ফোন রাখার সাথে সাথে ছিকু বলল
‘ ইশুবুনু ফুনে কথা বলে কেন?
ইশা তার গালে আদর বসিয়ে বলল
‘ পিহুর বিয়ে তো। বিয়ে খাবেন না?
‘ কেন? পিহুর বিয়ে কেন? বিয়ে খায় কেন?
ইশা হেসে ফেলল। পরী বলল
‘ ওটা নিকিতা আন্টি ছিল আম্মা?
‘ হ্যা।
ইশা ছিকুকে মাহিদের কাছে নিয়ে গেল। মাহিদের কোলে বসিয়ে দিয়ে বলল
‘ মাহি পিহুর বিয়ের এক সপ্তাহ আগেই কিন্তু তুই চলে আসবি। ঠিক আছে? তুই না ওর মাহিদ ভাই। বুঝেছিস?
মাহিদ ফোন থেকে মাথা তুললো। ছিকুকে পাশে বসিয়ে বলল
‘ হ বুঝছি। এক সপ্তাহ ক্যা এক মাস আগে আইসা বইসা থাকুম। শালীরে তাড়াতাড়ি তাড়ামু।
ইশা কপাল কুঁচকে বলল
‘ এভাবে কেউ বলে? পিহু শুনলে এখন,,,,
‘ শালী হুনলে কি করবো? প্যা পু কইরা কান্দা ছাড়া শালী কিছু পারে? শালী।
ইশা বলল
‘ ঠিক আছে। নিনিতের বউ হোক তারপর ডাকিস শালী।
মাহিদ হো হো করে হেসে উঠে বলল
‘ বল্টুর বউ শালী। একশবার বলুম।
ইশা কেমন করে তাকিয়ে চলে গেল। ছিকু মাহিদের কোলের উপর উঠে এল। দাঁড়িয়ে মাহিদের মুখোমুখি হলো। মাহিদের দু গালে দুহাত রেখে প্রশ্ন করলো
‘ মিহি পিহুকে ছালী বুলে কেন?
মাহিদ নাক দিয়ে ছিকুর নাকে দুম করে মেরে সোফায় ফেলে গালে চেপে চুমু খেয়ে বলল
‘ চুপ থাক শালা। তুই শালার কেন কেন শুইনা কচু গাছে ফাঁস খাইতে মন চাই বাপ।
ছিকু পড়ে থাকা অবস্থায় বলল
‘ মিহি বিশিবিশি আদর করে কেন? মারে কেন?
মাহিদ তার পিঠ চাপড়ে দিয়ে বলল
‘ তুই মুটু তাই তোরে আদর লাগে বাপ।
___________
নিজ হাতে বিরিয়ানি রান্না করছে পরী। পিহু তার ঘরে পড়ছে। ছিকু আজ মাহিদকে পেয়ে বড়লোক। পিহুর ধারেকাছেও নেই। মাহিদের সাথে দৌড়াদৌড়ি খেলছে। রাইনা তাদের দুজনকে দৌড়াদৌড়ি করতে দেখে বলল
‘ এই ছেলেটা নাকি কয়দিন পর বিয়ে করবে। এখনো বাচ্চামো স্বভাব যায়নি। কি করছিস মাহি ও পড়ে যাবে তো।
মাহিদ ছিকুকে ধরলো। দুজনেই হাঁপিয়ে উঠেছে ইতোমধ্যে। মাহিদ ছিকুকে কোলে তুলে নিয়ে যেতে যেতে বলল
‘ শালারে আইজ কিমা বানামু। তারপর গপাগপ খাইয়া ফালামু।
ছিকু কান্নামুখর চেহারায় বলল
‘ ও বাপ মিহি ছিকুকে খিয়ে ফিলবে কেন? ছিকু ভয় পাচে কেন?
পিহুর রুমে গিয়ে বিছানায় ছিকুকে ছুঁড়ে মারলো মাহিদ। ছিকু ফোমে গেঁথে গিয়ে আরাম পেল। খিকখিক করে হেসে বলল
‘ মিহি আবার।
পিহু ঘাড় ঘুরিয়ে চাইলো। দাঁড়িয়ে পড়লো।
‘ আমার ঘরে কি? আমি পড়ছি। সবাই বের হও।
‘ চুপ বেডি। তুই বিয়া পাস করবি, এত কিসের পড়া তোর বাপ? যাহ সর। ফুট।
পিহু রাগান্বিত চেহারায় চাইলো। ছিকু রেগে বলল
‘ মিহি আবার।
মাহিদ তাকে উপর থেকে আবার ফেলে দিয়ে বলল
‘ শালা তোরে নিয়া যাই কই?
পিহু অবাক হয়ে বলল
‘ কি করছ তুমি? ওর লাগলে কি হবে? ওর শরীরের হাড় এখনো নরম।
‘ আইছে দরদ দেখাইতে। মা’র চাইতে মাসির দরদ বেশি। ডাক্তারি শিখাইস না বাপ। তোর দু নম্বরী ডাক্তারি আমার শিখন লাগতো না। যাহহ।
মাহিদ ছিকু দু’জনই দুষ্টুমি করতে করতে রুম ফাটিয়ে হাসাহাসি করতে লাগলো। পিহু পরীর ঘরে চলে গেল। এই বেয়াদব দুটো না নিজেরা পড়ে, না আরেকজনকে পড়তে দেয়। বেয়াদব।
_______
রাতে জম্পেশ খাওয়া দাওয়া চললো। মাহিদ খেয়ে পেটে হাত বুলাতে বুলাতে বলল
‘ শালা ছিকু আর আমি আইজ বেশি খাইয়া ফেলছি বাপ।
ছিকু ও মাহিদের মতো পেটে হাত বুলাতে লাগলো। একপর্যায়ে সোফায় শুয়ে শার্ট তুলে পেট চাইলো। বলল
‘ ও বাপ ছিকুর পেট এতু বড়ো কেন? বিশিবিশি খায় ফিলচি কেন?
মাহিদ পেটে টোকা মেরে বলল
‘ তোর পেট বাপ রাক্ষস।
‘ কেন রাক্ষুচী কেন?
_____
সবাই যে যার ঘরে ঘুমিয়ে পড়েছে। পিহু বিছানায় কোলে বালিশ নিয়ে পড়ছে গালে হাত দিয়ে। ঢুলে ঢুলে পড়তে পড়তে একসময় দরজা খুলে ঘরে কেউ ঢুকে এল। পিহু চমকে উঠলো। বলল
‘ এখানে কি চাই? একদম ভালো হবে না। যাও বলছি।
মাহিদ এগিয়ে এল। ধপাস করে বিছানায় এসে বসলো। বলল
‘ চুপ বেডি তোর লগে গল্প করতে আইছি। ঘুম আইতাছে না। তোর বাপের বাড়িতে আমার ঘুম আসেনা বাপ।
‘ ঢং। যাও এখন।
মাহিদ গেল না। বরঞ্চ ধপাস করে শুয়ে পড়ে বলল
‘ ধুর বেডি ঘুম আইসলে আমারে কোলে কইরা ওই ঘরে দিয়া আসিস।
পিহু অবাক হয়ে বলল
‘ এই বুইজ্জা বেডাকে আমি কোলে নিব? পাগল আমি? অদ্ভুত।
পিহু টেবিলে গিয়ে বসলো। মাহিদ পিহুর ফোন টিপতে শুরু করলো। পিহু পড়তে পড়তে একসময় খেয়াল হলো মাহিদ ফোন টিপতে টিপতে ঘুমিয়ে পড়েছে। সর্বনাশ।
পিহু চুপিসারে ডাকল
‘ মাহিদ ভাই উঠো। এই মাহিদ ভাই?
মাহিদ নড়েচড়ে উঠে আবার ঘুমিয়ে পড়লো। পিহু পড়লো মহামুশকিলে। পিহু ফোন নিয়ে রিংটোন বাজালো। মাহিদ একসময় বিরক্ত হয়ে চোখ পাকিয়ে চাইলো। পিহু ভড়কে গিয়ে রিংটোন বন্ধ করলো। মাহিদ লাফ দিয়ে উঠে বসলো। চোখ কচলে বলল
‘ এই বেডি তুই রাত জাইগা পেরেম করোস?
‘ না।
আবার কি যেন ভেবে বলল
‘ হ্যা। তো?
মাহিদ তেড়ে এল। ঘুমঘুম গলায় বলল
‘ তুই আমারে ফালাইয়া অন্য কারো লগে পেরেম করবি ক্যান?
কথাগুলো চিল্লিয়ে বলছে মাহিদ। পিহু বলল
‘ আহা চেঁচাচ্ছ কেন? সবাই ঘুমোচ্ছে।
‘ ঘুমোক। শুনুক।
পিহু ও চেঁচিয়ে বলল
‘ আমি একশবার রাত জেগে ডাক্তারের সাথে কথা বলব। তাতে তোমার কি? হ্যা? ঢং করো? যাও এখন।
মাহিদ হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে পিহুর হাত টেনে ধরলো। মোচড়ে ধরে বলল
‘ তোরে না আমি ভালা টালা বাসি। তারপরও তুই পেরেম করোস অন্য কারো লগে? আমারে কি পাগল পাইছোস শালী?
পিহু বড় বড় চোখ করে চাইলো। ঠোঁট টিপা হাসি লুকিয়ে বলল
‘ আচ্ছা। ভালা টালা বাসো? এগুলা আবার কেমনে বাসে?
পিহুকে রসিকতা করতে দেখে তরতরিয়ে রাগ বাড়লো মাহিদের। কি করবে কি করবে ভেবে পেল না। টেবিলের দিকে এগিয়ে গেল। পিহু দৌড়ে গিয়ে তার সামনে দাঁড়ালো। বলল
‘ উফ ঝামেলা করো না তো। এখান থেকে যাও। একজনকে বিয়ে করবে, আবার আরেকজনকে নাকি ভালা টালা বাসে। যত্তসব ঢং।
‘ আমি তোরে ছাড়া কাউরে বিয়া করতাম না বাপ। আমি তোরে বিয়া না করলে তুই ভালা জামাই পাবি। তোরে ভালা জামাই দেওয়া যাইতো না বাপ৷ তুই পরে আমার লগে ভাব দেখাবি। তোরে আমি হাড়েহাড়ে চিনি।
‘ কিন্তু আমি তোমাকে বিয়ে করব না। বললেই হলো? আশ্চর্য।
মাহিদ তার হাত চেপে ধরলো জোরে। বলল
‘ ক্যান করবি না?
‘ করব না মানে করব না। আমাকে অনেক কষ্ট দিছ তুমি। নাহ একদম বিয়ে করব না তোমাকে। তোমার বন্ধুকে করব।
‘ ওরেব্বাপ এমন করোস কিল্লাই? তোরে আমি ভালা টালা বাসি বলছি না? তুই বিয়া না করলে তোরে আমি খুন করুম শালী তারপরও কারো লগে বিয়া হইতে দিতাম না বাপ।
পিহু মুখ মোচড়ে বলল
‘ করব না মানে করব না।
মাহিদ রেগে বলল
‘ তাইলে তোরে এখন খুন করুম আমি।
‘ আমি মরে গেলে তুমি কিন্তু বেশি কাঁদবা। হুহ।
‘ যাহ বেডি। ডরাই না আমি। তুই মইরা যাহ তবু ও তরে নিনিইত্যার কাছে দিতাম না বাপ।
চলবে,
#মন_গোপনের_কথা
#পর্ব_৩১
লেখনীতে, পুষ্পিতা প্রিমা
মাহিদকে ঠেলে ঘর থেকে বের করে দিল পিহু। দরজা বন্ধ করে দিল। তারপর রুমের লাইট বন্ধ করে ধপ করে শুয়ে পড়লো। মাহিদ মাথার চুল চুলকে যেতে যেতে বলল
‘ শালীর একটা চুল ও রাখুম না কাল সকালে। কত্ত বড় সাহস আমারে বাইর কইরা দিল।
পিহু কানে বালিশ চাপা দিয়ে ঘুমোলো। উফফ কি একটা জ্বালা৷ কানে ওসব কথা বাজতেই আছে। কি লজ্জাশরমের কথা।
একদম খুব ভোরে ছিকুর চেঁচামেচিতে পিহুর ঘুম ভাঙলো। এখনো কাকপক্ষী ও উঠেনি তারআগেই ছিকুসাহেব উঠে গেছে। গায়ে সাদা পাঞ্জাবি, মাথায় সাদা টুপি । পিহু বলল
‘ কি সমস্যা আপনার?
‘ ছিকু দাদুর সাথি নামাজ পচচে কেন? পিহুকে দাদু নামাজ পুড়ার জুন্য ডাকে কেন?
পিহু বলল
‘ যাচ্ছি। আপনি যান।
ছিকু গেল না। দৌড়ে গিয়ে একটি চিকন বেত খুঁজে আনলো। পিহুকে দেখিয়ে দেখিয়ে কপাল ভাঁজ করে বলল
‘ পিহুকে ইটা দিয়ে মারতে মন চায় কেন? দাদু মারতে বলছে কেন?
পিহু হেসে ফেলল৷ উঠে বসলো। বিছানা থেকে নেমে ছিকুকে তার কাছে টেনে এনে গাল টেনে দিয়ে বলল
‘ ওরেবাবা আব্বা আমায় শাসন করে?
‘ ছাচন করি কেন?
পিহু হেসে তার গালে আদর দিল। বলল
‘ এক্ষুণি যাচ্ছি কলিজা। আপনি যান।
ছিকু চলে গেল।
_____________
সোফার উপর বিড়াল ছানার মতো ঘুমোচ্ছে ছিকু। ইশা এসে তাকে দেখে বলল
‘ এত এত সকাল সকাল ওকে উঠতে বলে কে? দেখো তো কোথায় ঘুমোচ্ছে।
মাহিদ মাথার চুল ঝাড়তে ঝাড়তে এল। ছিকুকে ঘুমোতে দেখে হেসে ফেলল। বলল
‘ ছিকুশালা ওখানে ঘুম কেন?
ইশা বলল
‘ দেখেছিস কান্ড? একটু কোলে নে মাহি পড়ে গেলে তো বিপদ৷
মাহিদ গিয়ে তাকে কোলে তুলে নিল। আদি এসে মাহিদের সামনাসামনি বসলো। বলল
‘ কি অবস্থা মাহিদ সাহেব?
‘ এখন কোনো অবস্থা টবস্থা নাই বাপ। বেড়াইতে আসছি।
আদি হেসে বলল
‘ বিয়েশাদীর কি অবস্থা? দেরী আছে নাকি শীঘ্রই?
মাহিদ মনে মনে বলল
‘ শালা শ্বশুর!
‘ দেরী নাই। বিয়াতে দেরী করতে নাই।
আদি হেসে উঠলো।
মাহিদ চা নাশতা খাওয়ার পরপরই বেরিয়ে গেল। পিহু তার সামনে আসেনি। তার ভীষণ লজ্জা লজ্জা পাচ্ছে মাহিদ ভাইকে দেখলে।
___________
মাত্রই ডিউটি সেড়ে বাড়ি ফিরেছে নিনিত। নিকিতা বেগমের চিল্লাচিল্লি শুনতে পাচ্ছে সে। সে ফ্রেশ হলো মাত্র। নিকিতা বেগম চলে এলেন তার রুমে। বলল
‘ তোর সাথে কি পিহুর কোনো সমস্যা হয়েছে নিনিত?
নিনিত অবাক গলায় বলল
‘ নাহ। কেন?
‘ তো সমস্যা না হলে চৌধুরী সাহেব কেন বলল আমাদের আরেকটু সময় নেওয়া উচিত? হ্যানত্যান ? কেন? তোর সমস্যা নাকি পিহুর?
চিল্লাচিল্লি কেন করছে তা দেখার জন্য জালিশা মাত্রই নিনিতের ঘরের কাছাকাছি এসে দাঁড়িয়েছে। নিনিত কারো পায়ের আভাস পেয়ে দরজার কাছে গিয়ে দাঁড়ালো। তারপর বের হলো। জালিশা তাকে দেখে ভয়ে চমকে উঠলো। আমতাআমতা করতে করতে বলল
‘ মাত্রই,,,
‘ তোমার ঘরে যাও।
জালিশা মন খারাপ করে চাইলো।
‘ কি হলো? যাও।
জালিশা মন খারাপ করে চলে গেল। নিনিত ঘরে ঢুকে বলল
‘ মা শোনো,
‘ কিচ্ছু শুনতে চাই না আমি। চৌধুরী সাহেব কি লুকোতে চাইছেন আমার কাছ থেকে? তুই নিশ্চয়ই সব জানিস।
নিনিত বলল
‘ মা আমাকে কিছু বলতে তো দাও।
নিকিতা বেগম হাত ছাড়িয়ে হনহনিয়ে বের হয়ে গেল। নিশিতাকে ডেকে বলল
‘ পিহুর কি কারো সাথে সম্পর্ক টম্পর্ক আছে?
‘ না মা। ও তো ওসবে ছিল না কখনো। আমি সত্যি বলছি। আমি ওকে চিনি খুব ভালো করে।
‘ তোর ভাই কাউকে পছন্দ করে?
‘ ভাইয়া? মা তুমি কি পাগল? ভাইয়া পড়ালেখা ছাড়া কিছু বুঝে? তবে পিহুকে পছন্দ করে অবশ্যই।
নিকিতা বেগম শান্তি পেলেন না। তাই ইশাকে ফোন করলেন। ইশা প্রচন্ড ভড়কে গেল নিকিতা বেগমের গলার স্বর শুনে। শেষমেষ বলল, আমি পরীর আব্বার সাথে কথা বলে আপনাকে সব জানাচ্ছি।
ভীষণ চিন্তায় পড়ে গেল ইশা। কি বলে ফেলেছে ডক্টর?
__
নিনিত আদিকে ফোন করলো। আদি সাথে সাথেই ফোন তুলে বলল
‘ কি ব্যাপার? তোমার মা বকেছে?
‘ স্যার জালিশার আমাকে পছন্দ হতেই পারে। কিন্তু আমি তাকে পছন্দ করিনা। পছন্দ নাই হতে পারে। আমার পরিবার ও তাকে পছন্দ করে না। অপছন্দ করি কিংবা করে এমনও না। ও ভালো মেয়ে। কিন্তু আমার পরিবার আরিশাকে পছন্দ করে। আপনি প্লিজ বিয়েটা ভাঙবেন না।
‘ কিন্তু নিনিত…..
‘ আরিশা ভালো থাকবে স্যার। আপনি আমার উপর আমার পরিবারের উপর বিশ্বাস রাখতে পারেন।
কথাটুকু বলে ঘাড় ঘুরাতেই আবছা আলোয় দাঁড়ানো একটি রমণীকে চোখে পড়লো নিনিতের। আদি কি বলল সেদিকে আর কান গেল না। প্রতিভিম্বটির দিকে এগিয়ে যেতেই মেয়েটি সরে গেল। নিনিত শক্ত গলায় ডাক দিল
‘ জালিশা দাঁড়াও। আর এক পা ও এগোবে না। দাঁড়াও বলছি।
জালিশা এক পা ও দাঁড়ালো না। রুমের দরজা বন্ধ করে কম্পিত পায়ে হেঁটে আয়নার সামনে গিয়ে দাঁড়ালো। তার হাত পায়ের সাথে সাথে ঠোঁট কাঁপছে। কাঁপছে চোখের পাতা। আয়নায় নিজের প্রতিভিম্বটিকে ভেঙে চুরমার করে দিতে ইচ্ছে হলো। তার সব সৌন্দর্য কেন এত তুচ্ছ? সে যাকে এত করে চায় তার কাছে তার কোনো মূল্যই নেই। ঠোঁট ভেঙে কান্না এল তার। এই নৈঃশব্দ্য ঘেরা রাতে ভিজে গেল তার মাথার নিচে আস্ত একটা বালিশ। কোথাও ভীষণ রকম যন্ত্রণা হচ্ছে। এত করে ভালোবাসার পরে ও যে তাকে ছাড়া অন্য কারো কাছে নিজের ভালো থাকা খুঁজে, সে মানুষটা তার না হোক। না হোক তবে।
নিনিত ভীষণ অসহায় বোধ করলো। তাইতো মাঝরাত্রে বন্ধুকে ফোন দিল। মাহিদ ফোন তুলে রসিকতা করে বলল
‘ ডাক্তার শালা এতরাতে কি মনে করে? কি অবস্থা।
‘ দোস্ত আমি একদম ভালো নেই৷ আমাকে সাহায্য কর। আমি কি করব কিছুই বুঝে উঠতে পারছিনা। আমি কাউকে কষ্ট দিতে চায় না। মাকে ও না, কাউকে ও না। আমার জন্য কেউ কষ্ট পাক সেটা আমি চাই না। তারপরও আমার দ্বারা ভুল হয়ে যাচ্ছে।
তুই কিছু একটা কর। জালিশাকে প্লিজ একটু বুঝা এসব ওর আবেগ। ও এখনো ছোট তাই ওসব পাগলামি করছে। প্লিজ কিছু একটা কর৷
মাহিদ বলল
‘ আমার কিছু করার নেই দোস্ত। শুধু বলব জালিশার জায়গায় নিজেকে দাঁড় করা। ব্যস।
চলবে,,,