মন গোপনের কথা পর্ব-২৮+২৯

0
1042

#মন_গোপনের_কথা
#পর্ব_২৮
লেখনীতে, পুষ্পিতা প্রিমা

চা নাশতা সেড়ে রিকের সাথে টিভিতে নিউজ দেখতে বসেছে পিহু। কিছুক্ষণ পর সে মেডিক্যালের উদ্দেশ্যে বের হবে। নীরা গরম গরম পেঁয়াজু ভেজে আনলো। বলল

‘ নাও এগুলা খাও। ঝাল ঝাল করে বানাইছি।

পিহু প্লেটটা হাতে নিল। বলল

‘ কালারটা সুন্দর হয়েছে।

নীরা হাসলো৷ পিহু রিককে বলল

‘ মামা খাও।

‘ তুমি খাও। আমি তেলের জিনিস তেমন খাই না।

‘ একটা নাও শুধু । ঠান্ডা হয়ে গেলে খেতে ভালো লাগবে না।

রিক তার জোরাজোরিতে নিল। পিহু সোফায় হেলান দিয়ে আয়েশ করে বসে পেঁয়াজু খেতেই কোথাথেকে মাহিদ উড়ে আসলো। প্লেট থেকে দু তিনটা একসাথে হাতের মুঠোয় নিয়ে চিবোতে চিবোতে পিহুর কাছ থেকে দূরত্ব রেখে বসলো। শার্টের কলার পেছনে ঠেলে দিয়ে বলল

‘ তারপর?

পিহু নাক ফুলিয়ে চেয়ে রইলো তার দিকে। মাহিদ পেঁয়াজু বাকিগুলো হাতে রেখে অন্য হাতে আর ও কয়েকটা নিয়ে ফেলল। প্লেটে আর দুটো বাকি রইলো। পিহু চিল্লিয়ে নীরাকে ডাকলো

‘ মামি?

রিক চমকে উঠলো।

‘ কি হয়েছে?

মাহিদকে দেখে আর কিছু বুঝার বাকি রইলো না কারো। নীরা মুনা ছুটে আসলো। নীরা হায়হায় করে বলল

‘ তোরে ডাকছি না? তুই ওরগুলা খাচ্ছিস কেন? আশ্চর্য।

‘ মেরিমা কবি বইলা দিছে, যাহা পাও, তাহা খাও।

পিহু বলল

‘ গু খাও। এগুলো কেন খাচ্ছ?

সবাই আচমকা হেসে উঠলো পিহুর কথায়। মাহিদ হো হো করো হেসে লুটিয়ে পড়লো পিহুর পাশে। পিহু সরে বসলো। মাহিদ হাসতে হাসতে সোফা কাঁপিয়ে ফেলল। পিহু ফোঁসফোঁস করতে করতে বলল

‘ আমি হাসার কি বলেছি?

সবাই হাসি চাপা দিল। শুধু মাহিদের হাসি এখনো থামেনি। পিহু বাকি পেঁয়াজুগুলো মাহিদের মুখের উপর ফেলে প্লেট দিয়ে দুম করে পিঠে মেরে চলে গেল।

নীরা মাহিদকে বলল

‘ একদম ভালো হয়ছে।

মাহিদ হাসতে হাসতে ধপাস করে সোফা থেকে পড়ে গেল। সবাই চোখ পাকিয়ে চেয়ে থাকলো। মাহিদ তাড়াতাড়ি দাঁড়িয়ে প্যান্ট ঝেড়ে বলল

‘ শালী তোর কারণে হয়ছে ডাক্তারের বাচ্চি।

নীরা বলল

‘ ও কিছু করেনাই। সবসময় ওর দোষ দিবিনা।

মাহিদ বিড়বিড় করল

‘ শালার বাপের বউ।

_______________

পিহু গায়ে এপ্রোন আর ব্যাগ নিয়ে বসার ঘরে চলে এল। মুনা ভাতের প্লেট নিয়ে দৌড়ে আসলো। বলল

‘ আসো। ইশু বলবে আমার মেয়েকে খালি পেটে বের করে দিয়েছে।

পিহু বলল

‘ নাআআ। আমি সকালে ভাত খাই না মামি। খাব না।

নাকমুখ তুলে রাখলো পিহু। মুনা লোকমা বাড়িয়ে দিয়ে বলল

‘ শুধু দুটো। মাহিকে ডাকি দাঁড়াও। মাহি! এই মাহি?

মাহিদ খান এল হেলেদুলে হেঁটে। চুলগুলো হাত দিয়ে ফ্যাশন করে আসতে আসতে বলল

‘ কিতা হয়ছে বাপের বড় বইন?

‘ ভাত খাবি আয়।

পিহুকে আগাগোড়া পরখ করে কপাল কুঁচকালো মাহিদ। পিহু মুখ মোচড়ে দিল। মাহিদ মুনার হাতে প্লেটের দিকে তাকিয়ে বলল

‘ এগুলা সব আমি খামু। আর কোনো হারামিরে ভাগ দিমুনা বাপ।

মুনা হেসে পিহু না শোনেমত বলল

‘ সবসময় ওর পেছন লাগিস কেন? এমনিতে তো জীবনে ও সকালে ভাত গিলিস না।

‘ এহন গিলুম৷ শালীরে দিমু না৷ শালী আমার বাড়ির ভাত খাইবো কিল্লাই?

মুনা এক লোকমা দিল। মাহিদ অন্যরকম ভঙ্গিতে চিবোতে লাগলো পিহুর দিকে চেয়ে চেয়ে। পিহু মুখ ফিরিয়ে নিল। মাহিদ তার সামনে গিয়ে খেতে লাগলো। মুনা কপাল চাপড়ে বলল

‘ আল্লাহ কি দিয়ে বানাইছে এই ছেলেকে?

পিহু তন্মধ্যে চেঁচিয়ে উঠলো। ব্যাগ সোফা ছুঁড়ে মেরে পা নাচিয়ে বলল

‘ ছোট মামা দেখো মাহিদ ভাই কেমন করে?

মাহিদ হেসে ফেলল। ঢকঢক করে পানি খেয়ে কয়েক ফোঁটা পিহুর মুখে ছুঁড়ে মেরে বলল

‘ বল্টুর বিবিজান তুই চিড়িৎচিড়িৎ গরম হইয়্যা যাস ক্যান বাপ?

পিহু রাগে কিড়মিড় করে উঠলো। মুনা বলল

‘ ধুরর বাবা আমি এসবে নাই। আমি রিপকে ডাকি। দাঁড়া।

মাহিদ বাড়ি থেকে বের হয়ে গেল। পিহু সোফায় গালফুলিয়ে বসে রইলো। চেহারায় রাগের আভা। রিপ এসে বলল

‘ কি হয়েছে? কোথায় মাহি?

পিহু বলল

‘ চলে গেছে।

রিপ বলল

‘ আচ্ছা। ও আসুক। আমি দেখব। তুমি খেয়ে নাও। আমি গাড়িতে তুলে দিয়ে আসি।

মুনা তাকে কয়েক লোকমা জোরপূর্বক খাইয়ে দিল। তারপর বের হয়ে গেল পিহু। মেডিক্যালে পৌঁছুতেই নিশিতা ছুটে এল। হেসে বলল

‘ আমি তোর জন্য অপেক্ষা করছিলাম রে।

‘ কেন?

‘ তুই আমার সাথে ওভাবে কথা বলছিস কেন আজকাল?

মন খারাপ হলো নিশিতার। পিহু তাকে পাশ কাটিয়ে চলে গেল।

__________

বাড়ি ফিরতেই ছিকুর মুখোমুখি হলো পিহু। ছিকু তাকে দেখে ছুটে এসে বলল

‘ পিহুর জুন্য মন পুড়িচে কেন?

পিহু তাকে কোলে তুলে নিয়ে গালে টাপুসটুপুস চুমু খেয়ে বলল

‘ আব্বার জুন্য মন পুড়িচে কেন?

ছিকু খিকখিক করে হেসে ফেলল। চিল্লিয়ে চিল্লিয়ে পিহুর কোলে নেচেনেচে বলল

‘ ওহ ওহ পিহুচুন্নি আসিচে কেন? ওহ ওহ মুজা মুজা।

নাচতে নাচতে পিহুর নাকে মাথা লেগে গেল। পিহু বলল

‘ উফফ।

ছিকু কাঁদোকাঁদো চেহারায় বলল

‘ পিহু দু্ক্কু পাচে কেন? কান্না করে না কেন?

পিহু বলল

‘ চুপ বাজে ছেলে৷ ব্যাথা দিয়ে আবার বলে দুক্কু পাচে কেন?

সবাই আসলো। পিহু বলল

‘ দেখেছ আসার সাথে সাথে কোলে চড়ে বসেছে।

রাইনা বলল

‘ এভাবে বলছিস কেন? আমার ভাই কাল তোর কথা কতবার বলেছে জানিস? তোর জন্য পেট ও পুড়ছে, মন ও পুড়ছে। সব পুড়ছে।

পিহু ছিকুর দিকে তাকিয়ে বলল

‘ ওমা তাই? পিহুর জন্য মন পুড়ছে কলিজার? কলিজা পুড়েনি?

‘ কুলিজা পুড়িচে কেন?

পিহু খিক করে হেসে তাকে বুকের সাথে শক্ত করে চেপে ধরে কপালে টুক্কুস করে চুমু দিল।

______________

খাবার টেবিলে সবার অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে নিনিত গম্ভীরমুখে এসে বসলো নিশিতার পাশে। জালিশা এতক্ষণ বকবক করছিল নিনিত আসায় চুপ হয়ে গেল। পানির গ্লাস নিয়ে পানি খেতে লাগলো। তার মা আইমি ডাক দিল।

‘ খাওয়ার আগে পানি খাচ্ছ কেন জালিশা? কতবার বলতে হয়?

জালিশা গ্লাস রেখে দিল। নিকিতা বেগম খাবার বেড়ে দিতে দিতে বলল

‘ তোকে কখন থেকে ডাকছিলাম নিনিত। একটু সাড়া দিলেই তো হয়।

নিনিত জবাব দিল না। চুপচাপ বসে রইলো। জালিশার কপালে ভাঁজ পড়লো। এই ডাক্তারের সমস্যা কি?

চুপচাপ খেতে লাগলো সবাই। নিকিতা বেগম বললেন

‘ জিয়াদ তো জার্মানি তে চলে যাবে। আইমি ও বললো ওরা তাড়াতাড়ি ফিরে যাবে। আমার মনে হয় চৌধুরী সাহেবের সাথে কথা বলা দরকার। কি বলিস নিনিত?

নিনিত এবার ও জবাব দিল না। নিশিতা বলল

‘ মা পিহুর সাথে তো তোমার ফোনে কথা হয়। ওকে বলো না আমার সাথে কথা বলতে। আমার সাথে আজকাল কেমন করে যেন কথা বলো।

নিনিত চোখ তুলে তাকালো নিশিতার দিকে।

‘ কেন?

নিশিতা ভড়কে গেল।

‘ সত্যি বলছি ভাইয়া। আমি কিছুই জানিনা।

জালিশা ভাত নাড়তে লাগলো শুধু। এত সুন্দর একটা মেয়ে তাদের সামনেই ঘুরঘুর করে তাদের কি চোখে পড়ে না? শুধু ওই মেয়েটার কথা। মেয়েটাকে কি না করবে জালিশা নিজে ও জানেনা।

নিনিত খেয়ে চলে যাওয়ার সময় নিকিতা বেগম বলল

‘ আমি তাহলে কথা বলি। হ্যা?

নিনিত জালিশার দিকে তাকালো একবার। তারপর চলে গেল। আইমি বলল

‘ নিনিত তো লজ্জা পেতে ও শিখে গেছে। বাহবা।

জালিশা খাবারে পানি ঢেলে দিল। আইমি বলল

‘ এটা কি করলে?

‘ আর খেতে ইচ্ছে করছে না

আইমি কিছু বলতে যাচ্ছে। জাবির তার হাত ধরে বসিয়ে দিল। বলল

‘ পরে ঠান্ডা মাথায় বুঝিয়ে বলো।

_____________

বাড়িতে গুঞ্জন হচ্ছে কিছু একটা নিয়ে। পিহু পড়ার টেবিল থেকে উঠে বসার ঘরের দিকে যেতেই সবার কথা শুনলো। ছিকু মেঝেতে বসা। মাথা নিচু করে ঘোড়ার গাড়ি নিয়ে খেলছে। সবাই আলাপ করছে। পিহু কিছু্ক্ষণ দাঁড়িয়ে আবার ঘরে চলে গেল। মন বসছেনা পড়ায়। সবার সামনে চলে এসে ছিকুকে কোলে তুলে নিল। সবাই তার দিকে তাকালো। আদি বলল

‘ ছিকুসোনাকে তোমার কাছে নিয়ে যাও। পড়াও।

পিহু চলে গেল ছিকুকে নিয়ে। ছিকুকে টেবিলের উপর বসিয়ে দিয়ে বলল

‘ আব্বা ওখানে কি বলছে সবাই?

ছিকু তার দিকে ড্যাবড্যাব চোখে তাকালো। পিহু তার জাতে চুমু দিয়ে বলল

‘ কি দেখেন? বলেন না।

‘ চবাই পিহু পিহু বুলে কেন?

‘ সেটা তো জানি। কি নিয়ে কথা হচ্ছিল?

ছিকু আর কিছু বলতে পারলো না। শুধু খেলতে খেলতে বকবক করলো

‘ চিংগুম কে চাঙ্গু চে বাচনা ইয়াম্পুচিবল, বুলে দো ইয়াম্পুচিবল!

পিহু তাকে বই ধরিয়ে দিয়ে বলল

‘ এখান থেকে পড়ুন। এল ফর লায়ন।

‘ এল ফল লায়ন কেন? ছিকু ভয় পাচে কেন?

‘ চুপ। বলুন এম ফর ম্যাংগো।

‘ ম্যাংগো খেতে মন চায় কেন? ম্যাংগো মুজা মুজা কেন?

পিহু কপাল চাপড়ালো৷ বলল

‘ অশিক্ষিত থাক। যাহ আর পড়ামু না শালা।

ছিকু খিকখিক করে হেসে বলল

‘ পিহু মিহির মুতো বলে কেন? কেন বাপ কেন?

___________

সন্ধ্যা থেকে পিহুকে ফোন দিয়ে যাচ্ছে মাহিদ। রাত দশটা বাজলে ও পিহুর ফোন তোলার নামগন্ধ নেই। পিহু ইচ্ছে করেই ফোন তুলছে না। বইয়ে মুখ গুঁজে বসে আছে। ছিকু ঘুমায় রাত একটা দেড়টার দিকে। পিহুর সাথে বসে থাকে। পিহু টেবিলে পড়ছে৷ ছিকু টেবিলের উপর। বইয়ে সিংহ, বাঘ, সাপ এগুলো পরখ করে করে দেখছে। আঙুল দিয়ে ছুঁয়ে ছুঁয়ে ও দেখছে। পিহু বই থেকে মাথা তুলে বলল

‘ ঘুম পাচ্ছে আমার। আপনি কখন ঘুমাবেন?

‘ ছিকুর ঘুম আচেনা কেন?

‘ আসবে কোথাথেকে? সন্ধ্যায় ঢুসে ঢুসে ঘুমিয়েছেন। এখন আমাকে জ্বালাচ্ছে।

ছিকু আবার বইয়ের পৃষ্ঠা উল্টানোতে মনোযোগ দিল। একপর্যায়ে সিংহ, বাঘের ছবি আর দেখতে পেল না। হাউমাউ করে কেঁদে উঠলো আচমকা। পিহু দৌড়ে গিয়ে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলে বুকের সাথে।
কি হয়েছে, কি হয়েছে বলতেই ছিকু কেঁদেকেঁদে বলল

‘ টাইগার নাই কেন? মাংকি নাই কেন?

পিহু হেসে বলল

‘ ওহ এই কথা?ওগুলো অন্য পৃষ্ঠাতে আর কি।

ছিকুকে শান্ত করালো। পিহু নিজেই ঘুমিয়ে পড়লো। ছিকু তার বসে বসে ফোন নিয়ে খেলছে। এক পর্যায়ে দেখলো ফোনে কে যেন কথা বলছে। ছিকু ফোনটার কাছে শুয়ে পড়লো। মুখ লাগিয়ে ডাকল

‘ ইখানে মিহি কেন?

মাহিদ মাত্রই বাইরে থেকে বাড়িতে পা রেখেছে। ছিকুর গলা শুনে বলল

‘ পিহু কোথায়?

‘ কেন? মিহি পিহুকে খুঁজি পায় না কেন? পিহু ঘুম কেন?

‘ এক কাজ কর। জগ দেখতেছোস আশেপাশে?

‘ দিখি কেন?

‘ জগের পানি ঢেলে দে শালীর মুখের উপর৷ দে। তোরে চকলেট দিমু৷ চিপস দিমু।

ছিকু খাট থেকে নামলো। জগ তুলতে পারলো না। ফোনের কাছে এসে বলল

‘ ছিকু পানি নিতি পারিনা কেন? দুক্কু পায় কেন?

‘ শালা। তাইলে এক কাজ কর। তোর খালার সব চুল টেনে দে।

ছিকু পিহুর গায়ের উপর উঠে বসলো। চুল দুমুঠোয় ধরে টানতে টানতে বলল

‘ মিহি চুল টানিত বুলছে কেন? পিহু দুক্কু পায় কেন?

পিহু চেঁচিয়ে উঠলে চুলে হাত দিয়ে। ধমকে বলল

‘ কি হচ্ছে এসব? আম্মার কাছে দিয়ে আসব?

ছিকু ঠোঁট ফুলিয়ে বলল

‘ পিহু বুকা দিচে কেন? মিহিকে বুকা দেয় না কেন?

পিহু দেখলো ফোনে মাহিদের কল। পিহু ফোন কেটেই দিচ্ছিলো। মাহিদ বলল

‘ তোর সমস্যা কি? ফোন ধরোস না ক্যা?

‘ আশ্চর্য! তোমার সাথে কেন কথা বলতে হবে? আমি ব্যস্ত আছি।

‘ কি নিয়ে ব্যস্ত আছিস?

‘ জানোনা? বিয়ে নিয়ে ব্যস্ত আছি৷ কেনাকাটা করতে যাব কাল। লিস্ট করছি। রাখো।

মাহিদ রাখলো না৷

‘ তোর কেনাকাটা আর বিয়ের গুষ্ঠিরে কিলাই। কারে বিয়া করবি তুই?

‘ জানো না? তোমার বন্ধুকে। তুমি একটা কাজ করো। আমার পেছনে অযথা সময় ব্যয় না করে নিজের পেছনে সময় দাও। আমাকে নিয়ে ভাবার অনেক মানুষ আছে। তোমাকে ভাবতে হবে না। তুমি ওই মাইশাকে নিয়ে ভালো থাকো। সামনে আমার বিয়ে, আমাকে ডিস্টার্ব করো না আর। লোকে শুনলে, দেখলে খারাপ কথা রটাবে।আমি আর কলঙ্কিত হতে চাইনা৷ তোমাকে ও কলঙ্কিত করতে চাই না। ভাইবোনের সম্পর্ক অটুট থাক। আমি চাই। তুমি ও নিশ্চয়ই চাও৷

‘ খবরদার ফোন রাখবি না পিহু।

পিহু ফোন রাখলো। শুধু রাখলো না বন্ধ ও করে দিল।
পিহু ফোন কেটে দিতেই মাহিদের হাতের হাতের ফোনটা রাগের শিকার হয়ে তিনটি ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়লো৷

পিহু ছিকুকে বলল

‘ সোজা আম্মার ঘরে যান। পাপা এসেছে। যান।

ছিকু যেতে যেতে নাকমুখ কুঁচকে মুখ মোচড়ে বলল

‘ পিহু টাইগার কেন? লায়ন কেন? মাংকি কেন? মিহি গুড বয় কেন?

চলবে

#মন_গোপনের_কথা
#পর্ব_২৯
লেখনীতে, পুষ্পিতা প্রিমা

পিহু আর পরী আদির সাথে একটু কেনাকাটায় বেরিয়েছে। সাথে ছিকু তো আছেই। ছিকুর জন্য ও কিছু কেনাকাটা দরকার। রান্নাঘরের জন্য দরকারি জিনিসপত্র। আর মাসের বাজার।
পরী আর পিহুর আঙুল ধরে মাঝখানে হাঁটছে ছিকু। বকবক করছে। কেউ তার কথার উত্তর দিচ্ছে না। কতক্ষণ বকবক করবে? ছিকু ভীষণ রেগে গেল। দুজনের আঙুল ছেড়ে দিয়ে কোমরে হাত রেখে দাঁড়িয়ে গেল। পরী বলল

‘ কি হয়েছে?

‘ কিউ ছিকুর সাথি কথা বুলে না কেন?

আদি হেসে ফেলল। বলল

‘ আচ্ছা আমার সাথে আসেন। আমি কথা বলি।

আদি তাকে কোলে তুলে নিল। পরী বলল

‘ আব্বা কোল থেকে নামিয়ে দাও। হাঁটুক কিছুক্ষণ।

‘ কেন পরী ছিকুকে নামি দিতে বলে কেন?

পরী বলল

‘ একদম চুপ।

ছিকু ঠোঁটের উপর আঙুল রাখলো।

পরী পিহুকে বলল

‘ পাপা বাজারটা সেড়ে নিক। আমরা অন্যদিকে যাই?

পিহু সায় দিল।

‘ কিন্তু ছিকু?

‘ ও আমার সাথে সাথে থাকবে।

আদির কোল থেকে ছিকুকে নিয়ে ফেলল পিহু। তারপর অন্য দোকানে ঢুকে পড়লো। আদি বাজার করে নিতে চলে গেল। পিহু আর পরী ছিকুর জন্য জুতো আর পাতলা গেঞ্জি কিনলো কয়েকটা। ছিকু ভারী কাপড় পড়তে চায় না। খালি গায়ে ও থাকতে চায় না। তার আবার বিশিবিশি নজ্জা করে।

পরী পিহু কিছু দোকানে কেনাকাটা সাড়তেই ছিকু একটি ছোট্ট বেবি ডলের কাছে ছুটে গেল। হাত ধরে ঝাঁকিয়ে বলল

‘ তুমি ছিকুকে দিখো কেন? কথা বলোনা কেন?

পিহু আর পরী চেয়ে থাকলো তার দিকে। ছিকু বকবক করতেই লাগলো। পিহু ডাক দিল

‘ কলিজা ওটা তো ডল।

‘ কেন ডল কেন?

পিহু তার কাছে গিয়ে বলল

‘ এটা মানুষ নয় তাই এটা ডল।

‘ কেন মানুষ নয় কেন?

মাহিদ এসে দাঁড়ালো পরীর পাশে। হাতে জুসের বোতল, বিস্কিট আর চিপসের প্যাকেট। পরী বলল

‘ এসেছিস? আমি তো ভাবলাম তুই আসবি না।

ছিকু মাহিদকে দেখে লাফ দিয়ে উঠলো। নেচেনেচে বলল

‘ ওহ ওহ মিহি আসিচে কেন? ছিকুর খুচি লাগে কেন?

মাহিদ তার গাল টেনে দিয়ে কোলে তুলে নিয়ে আদর করে বলল

‘ শালা তোরে বহুত মিস করছি বাপ। বুকে আয়। বুকে আয়।

ছিকুর মুখ থেকে হাসি সরছেনা৷ পিহু অন্যদিকে মুখ ফিরিয়ে আছে অনেক্ক্ষণ। পরী বলল

‘ পিহু চলো।

পিহু বলল

‘ আমি বাসায় ফিরে যাই যেগুলো কিনেছি সেগুলো নিয়ে।

‘ কেন? তুমি তো নিজের জন্য কিছু কেনোনি এখনো।

‘ আমি পরে নেব। চলে যাই?

পরী কিছু বলল না। পিহু কেনা জিনিসপত্র নিয়ে চলে গেল। মাহিদ তার যাওয়ার পথে তাকিয়েই রইলো। তারপর কেনাকাটা শেষে পরীদের সাথে করে চলে গেল। ছিকু তাকে ছাড়ছেনা। মিহির সাথে তার খেলতে মন চায় কেন?

মাহিদকে দেখে ইশা খুশি হলো। বলল

‘ তুই কেমনে এলিরে মাহি? কত আসতে বলি তোকে। আসিস না।

মাহিদ সোফায় গা এলিয়ে আসলো। ছিকুকে পাশে বসিয়ে বলল

‘ সেটা বড় কথা নয়। বড় কথা হইতাছে তোমার এই নাতি আমারে শেষ কইরা ফালাইছে বাপ। কোল থেকে নামলো না শালা।

ইশা হেসে বলল

‘ এমন করে বলছিস কেন? তোকে কত দেখতে পারে আমার ভাই৷

ছিকু বলে উঠলো। মিহি ছিকুকে ছালা ডাকে কেন?

সবাই হেসে উঠলো। মাহিদ তার পিঠ চাপড়ে দিয়ে বলল

‘ তোরে একশবার শালা ডাকুম বাপ।

‘ কেন ডাকবে কেন? কেন বাপ কেন?

মাহিদ এসেছে শুনে ঘর থেকে ও বের হলো না একবার পিহু। রাতে খাবার টেবিলে যাও দেখাদেখি হলো পিহু তাড়াতাড়ি খেয়ে চলে গেল।

ঘুমাতে যাওয়ার সময় আজব কান্ড ঘটলো। পিহুকে নিশিতা ফোন দিচ্ছেনা অনেকদিন। হঠাৎ করে ফোন এল। পিহু ফোন রিসিভ করার জন্য বাইরে বের হলো। সবাই ঘুমিয়ে পড়েছে বোধহয়। শুধু পরীর ঘরে লাইট জ্বলছে। ছিকু বোধহয় এখনো ঘুমোয়নি। পিহু রুমের বাইরে পা রাখলো। সাথেসাথে কে যেন মুখ চেপে ধরে সামান্য আবছা আলোকিত জায়গায় নিয়ে দাঁড় করালো পিহুকে৷ পিহু হতভম্ব।
মাহিদ হাত নামাতেই পিহু শুধু রেগে চেয়ে থাকলো। কোনো কথা বললো না। মাহিদ বলল

‘ শালী দেখা দেস না কিল্লাই বাপ?

পিহু কথা বলল না৷ মাহিদ কতকিছু বলল। পিহু গললো না। মাহিদ কান এক হাতে ধরলো। পিহু কপাল কুঁচকে তাকালো। মাহিদ বলল

‘ মাফ কর বাপ। তোর লগে আর মশকরা করতাম না।

‘ কেন আমার রাগ ভাঙাতে এসেছ? আমি রাগলেই বা তোমার কি? আমি কে তোমার?

কথাগুলো গর্জে বলল পিহু। তারপর চলে যেতে চাইলে মাহিদ তার পথ আটকালো। পিহুকে তার পড়নের শার্টের পকেট দেখিয়ে দিয়ে বলল

‘ তুই এই বুক পকেটের মানুষ বাপ।

চলবে,

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে