#মন_গোপনের_কথা
#পর্ব_২৪
লেখনীতে, পুষ্পিতা প্রিমা
পিহু ছিকুর দিকে তাকালো। এখনো কোমরে হাত দিয়ে কপাল ভাঁজ করে গাল ফুলিয়ে তাকিয়ে রয়েছে ছিকু। সে রেগে আছে ভীষণ। রাগার কারণ হচ্ছে মিহি তাকে আদর না করে চলে গেল কেন? সব রাগ এখন পিহুর উপর গিয়ে পড়েছে।
ইশা কানের দুলটি দেখতে দেখতে বলল
‘ মাহি এটা দিতে এসেছে? তো বাসায় আসবে না? উঠোন থেকে কেউ চলে যায়? কেমন ছেলে ও?
পিহু চুপচাপ। রাইনা বলল
‘ তোর কি হলো রে পিহু?
পিহু রাইনার দিকে তাকালো। বলল
‘ কই কিছু হয়নি তো। আমি ঘরে যাই।
পিহু চলে গেল। ছিকু চেঁচিয়ে বলল
‘ পিহু চলি গিচে কেন?
রাইনা তাকে কোলে তুলে নিল। বুকে জড়িয়ে ধরে কপালে আদর দিয়ে বলল
‘ আপনি এত রেগে আছেন কেন?
‘ দাদু কেন কেন বলে কেন?
রাইনা হাসলো।
_______
পিহু ঘরে এসে বিছানায় শুলো বই নিয়ে। ফোন দিল মাহিদকে। মাহিদ ফোন তুললো না। কয়েকবার রিং হয়ে গেল। পিহু আর দিল না। ঘন্টাখানেক পরে কি মনে করে আবার ফোন দিল। মাহিদ ফোন তুলে গর্জে বলল
‘ তোর সমস্যা কি বাপ? আমারে কি আমার বউয়ের লগে সময় টময় কাটাইতে দিবিনা? যাহ ফোন রাখ। আমি আমার বউয়ের লগে আছি। রাখ। খবরদার আর ফোন দিবিনা।
পিহু ফোনটা না কেটে ছুঁড়ে মারলো খাটের এককোনায়। বালিশটা ফেলে দিল মেঝেতে। ইশা এসে এমন কারবার দেখে বিস্ময় নিয়ে পিহুর দিকে তাকালো। পিহু তখন বিছানায় মুখ চেপে শুয়ে আছে উপুড় হয়ে। ইশা চুপিসারে বালিশটা তুলে পিহুর পাশে বসলো। পিহু তার উপস্থিতি টের পেয়ে নড়েচড়ে মুখ মুছলো বিছানার চাদরে। ইশা তার দিকে চেয়ে রইলো একদৃষ্টে। পিহু উঠে বসলো। মুখ অন্যদিকে করে রাখলো। ইশা বলল
‘ কি হয়েছে?
‘ কোথায় কি হয়েছে আম্মা ?
‘ বালিশ ছুঁড়ে মেরেছ কেন?
‘ ভুলে পড়ে গেছে।
ইশা তার পাশ ঘেঁষে বসলো। বলল
‘ আমার দিকে তাকাও।
পিহু তাকালো না। ইশা তার সামনে গিয়ে বসলো । পিহু অন্যদিকে ফিরে যেতেই ইশা আটকালো। তার দিকে ফিরিয়ে সামনাসামনি বসে জিজ্ঞেস করলো
‘ কি হয়েছে মাহির সাথে?
পিহু মাথা নিচু করে নিল।
‘ কিছু হয়নি আম্মা।
‘ তাহলে রাগ, চোখে পানি এসব আপনাআপনি?
‘ ওসব আমার আর মাহিদ ভাইয়ের ব্যাপার। তোমাকে অত চিন্তা করতে হবে না। তেমন সিরিয়াস কিছু নয় আম্মা।
ইশা অদ্ভুত এক চাহনি ফেলে চেয়ে থাকলো পিহুকে। শেষমেশ বলল
‘ সিরিয়াস কিছুই হয়েছে। আর সেটা আমি বুঝতে পারছি। আমি তোমার মা পিহু। কি লুকচ্ছ আমার কাছ থেকে?
পিহু উঠে দাঁড়ালো।
‘ কি লুকোবো আম্মা? আমি কি ছোট বাচ্চা যে জেরা করছ?
‘ কত বড় হয়েছ সেটা দেখতেই পাচ্ছি।
পিহু আবারও ইশার দিকে ফিরে তাকালো।
‘ আমার সত্যি কিছু হয়নি আম্মা। কতবার বলব আর? তোমার কিছু জানার থাকলে মাহিদ ভাইকে জিজ্ঞেস করো।
বলেই পিহু রুম থেকে বেরিয়ে গেল। ইশা মাহিদকে ফোন দিবে দিবে করে আর দিল না। বিষয়টা আর ও খুঁটিয়ে দেখা দরকার।
__________
মেডিক্যালে মাত্রই পা রেখেছে পিহু। নিশিতা কোথা থেকে এসে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরলো পিহুকে। বলল
‘ বান্ধবী আরেকটু আগে আসলে কি হতো?
পিহু উত্তর দিল না। নিজেকে ছাড়িয়ে নিল। নিশিতা তার গাল টেনে দিয়ে বলল
‘ কথা বলছিস না কেন?
পিহু এবার ও জবাব দিল না। পিহু এগোতেই নিশিতা পথ আটকে দাঁড়ালো। বলল
‘ রাগ করেছিস? কিন্তু কেন?
‘ তোর উপর রাগ কেন করব? তুই কে আমার?
নিশিতার কপালে ভাঁজ পড়লো।
‘ কে মানে? আমি তোর,,
‘ আমার আগের বান্ধবীটা হারিয়ে গেছে। আমি তোকে চিনিনা। আমি আগের নিশুকে খুঁজে পাচ্ছিনা ইদানীং।
নিশিতা হেসে ফেলল। পিহুকে ঝাপটে জড়িয়ে ধরে বলল
‘ কেন রাগ করিস রে? কি হয়েছে তোর?
পিহু এবার চুপ করে থাকলো। নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে চলে গেল।
নিশিতার মন খারাপ হয়ে গেল ভীষণ। পিহুর হঠাৎ কি হলো?
__________
হসপিটাল থেকে আদি মাত্রই বেরিয়েছে। ইশার দেওয়া লম্বা একটা লিস্ট পড়ে আছে। এগুলো বাজার করে নিয়ে বাড়ি ফিরতে হবে। মার্কেটের দিকে রওনা দিল সে। কয়েকটা বাজার করে অন্য দোকানের ঢুকে পড়লো। পরিচিত কয়েকজনের সাথে দেখা সাক্ষাৎ হলো। ইতোমধ্যে হাতের ব্যাগ ভারী হয়ে এসেছে।
হঠাৎ একটি মেয়েকে চোখে পড়লো। যাকে সে আসলেই খুঁজছিলো। মেয়েটি ও তাকে দেখে ভুরু কুঁচকালো। হাতের ভ্যানিটি ব্যাগ দুলাতে দুলাতে এগিয়ে এল। হাস্যজ্জ্বল চেহারা।
‘ আসসালামু আলাইকুম স্যার।
‘ ওয়ালাইকুমুস সালাম।
‘ আপনাকে না হসপিটালে দেখেছিলাম।
‘ হ্যা। নাম কি তোমার?
‘ জালিশা মেহফুজ।
দুজনে হাঁটতে হাঁটতে অনেক কথা বললো। আদি জিজ্ঞেস করলো।
‘ বাড়ি কোথায় তোমার?
‘ আমাদের বাড়ি? আমাদের বাড়ি তো সিলেটে। কিন্তু নিজ বাড়িতে থাকিনা আমরা। কানাডা থেকে ফিরেছি। এখন মামার বাসায় আছি ।
‘ ওহ আচ্ছা। আচ্ছা।
‘ নিনিত কে হয় তোমার?
‘ ডক্টর?
‘ হ্যা।
‘ কাজিন প্লাস মাই ফিউচার।
বলেই হাসলো জালিশা।
‘ সিউর?
কপাল কুঁচকালো জালিশা।
‘ সিউর হতে হবে কেন?
আদি হেসে ফেলল। বলল
‘ নাহ। তুমি কি আইসক্রিম খেতে পছন্দ করো?
‘ ইয়েস।
‘ তাহলে আইসক্রিম কিনে দিলে খাবে?
জালিশা মাথা নাড়লো।
‘ কেন?
আদি আইসক্রিম কিনে দিল। বলল
‘ নাও। তুমি তো আমার মেয়ের বয়সী। স্যার না ডেকে আঙ্কেল ডাকতে পারো। কেউ কিছু দিলে নিতে হয়।
জালিশা আইসক্রিম নিল। খেতে খেতে বলল
‘ ডক্টর খুব ভালো না?
‘ খুবব।
‘ ডক্টর ডাকটা সুন্দর নাহ আঙ্কেল?
‘ একদম।
‘ আপনি আমার পাপার মতো। পাপার সাথে ও আমি সব শেয়ার করতে পারি। পাপা আমার বন্ধু।
‘ বাহ, খুব ভালো। বিয়ে কখন তোমার আর ডক্টরের?
‘ খুব তাড়াতাড়ি। আপনাকে দাওয়াত করব আমি। আপনি আসবেন তো?
‘ কেন নয়?
‘ কিন্তু একটা সমস্যা আছে আঙ্কেল।
‘ কি সমস্যা?
জালিশার মুখ অন্ধকার হয়ে গেল সঙ্গে সঙ্গে। আদি বলল
‘ আমাকে ও বন্ধু মনে করো৷ বলো কি সমস্যা? আমি তোমাকে হেল্প করতে পারি।
‘ ডক্টরের সাথে অন্য কারো বিয়ে বিয়ে গুঞ্জন আছে। খুব শীঘ্রই হয়ত বিয়ে ও ঠিক হয়ে যেতে পারে। আমি খুব ভয়ে আছি। ডক্টরের সাথে কাউকে দেখলে মাথা খারাপ হয়ে যায় আমার। ভালো লাগেনা। ওই মেয়েটাকে দেখলে প্রচুর রাগ হয়। ইচ্ছা করে,,
‘ থামলে কেন? কি ইচ্ছে করে?
জালিশা জিভে কামড় দিল।
‘ আমি আপনাকে সব কেন বলছি?
আদি হাসলো। বলল
‘ চিন্তা নেই। আমি কাউকে বলব না। বরঞ্চ তোমাকে সাহায্য করতে পারি৷ নিনিত আমার স্টুডেন্ট।
‘ সত্যি?
‘ হুহ।
জালিশার বুক ভার কিছুটা কমে এল। মনের কথা কাউকে বলতে পেরে। আম্মি যে কেন বলে বেশি কথা বলতে নেই। কথা না বললে তো শান্তি লাগেনা তার। কথা বলে হালকা লাগলো তার। আদিকে খুব মনে ধরলো তার। তাই বলল
‘ আপনি আমার সাথে আসুন না। সবাই খুব খুশি হবে।
আদি বলল
‘ না না। অন্য একদিন।
‘ তাহলে আমি আসি।
আদি সায় দিল।
চলে গেল জালিশা৷ আদি বাড়ি ফিরে এল। তার কিছু পরেই পিহু বাড়ি ফিরলো। চেহারা অন্ধকার তার। নিশিতার সাথে একদম কথা বলেনি আজ। নিশিতা ও আর কথা বলতে আসেনি। এককোণায় বসেছিল।
পিহু গোসল করে নিয়েছে। খেতে ডাকছে তাকে। তার যেতে দেরী হওয়ায় আদি নিজেই আসলো। বলল
‘ খেতে আসো।
‘ যাচ্ছিলাম পাপা। কিছু বলবে?
আদি তার মুখের দিকে চেয়ে থাকলো। পরক্ষণে জড়িয়ে ধরে কপালে স্নেহের পরশ দিল। পিহু তাকে বুকে গুটিসুটি মেরে বলল
‘ কি হয়েছে? এনিথিং রং?
খানিকটা মুখ তুললো পিহু। আদি বলল
‘ তুমি তাকে ভালোবাসো?
পিহু ভড়কে গেল। পাপা এমন প্রশ্ন কখনো করেনা তাকে। হঠাৎ আজ কেন?
‘ বাবাকে বন্ধুর মতো সব শেয়ার করা যায় পিহু। ভালোবাসো?
‘ কাকে?
‘ নিনিত।
পিহু কি বলবে? ভালোবাসেনা কথাটা বলা যায় না। খারাপ শোনায়।
তবে সে এটুকু জানে নিনিতকে সে রেসপেক্ট করে। ছাত্রী শিক্ষকের সম্পর্কটাকে সে শ্রদ্ধা করে। সম্পর্কটা ও সুন্দর।
এর বাইরে কখনো কিছু ভাবেনি। ভাবা বারণ তার জন্য।
আদি বলল
‘ পিহু?
পিহু চমকে উঠলো৷ সরে পড়ে বলল
‘ আম্মা ডাকছে। বকাবকি শুরু করবে আমায়। আসো।
আদি বলল
‘ কিছু একটা জিজ্ঞেস করেছি পিহু।
পিহু ঘর থেকে বেরিয়ে গেল।
________
রাত সাড়ে দশটা।
খাবার টেবিলে বসে ঝিমুচ্ছে মাহিদ। ঢুলছে। রিক এসে তার কান টেনে দিয়ে চেয়ার টেনে বসলো। মাহিদ আশেপাশে কারো দিকে না তাকিয়ে বন্ধ চোখে কান চেপে ধরে বলল
‘ ধুর শালা। কান ধরোস কিল্লাই বাপ? ঘুমাইতাছি চোখে কি মালা দিছোস শালা?
রিক হেসে উঠলো উচ্চস্বরে। রিপ দাঁড়িয়ে চেয়ে থাকলো মাহিদকে। এই ছেলেটা কি? কোথা থেকে এসব আজব আজব কথা শিখেছে? এগুলো কোনো ভাষার মধ্যে পড়ে?
মাহিদ রিকের হাসির আওয়াজ শুনে চমকে তাকালো। বড় বড় চোখ করল রিপের দিকে তাকিয়ে। ঢোক গিলে মাথা নিচে নামালো। বিড়বিড় করে বলল
‘ বাপের বড় ভাই তুমি মজা নিতাছো কিল্লাই বাপ?
রিপ চেয়ার টেনে বসলো। নীরা মাহিদের চুল টেনে দিয়ে বলল
‘ বলি দুপুরে একটু ঘুমা। নাহ বাঁদরের মতো দৌড়া ছাড়া তোর তো আর কোনো কাজ নাই। এখনো ঘুমের জন্য চোখ খুলতে পারতেছেনা। নাহ আমাকে বউ নিয়ে আসতে হবে। বউয়ের মাইর খাইলে তুই সোজা হবি।
মাহিদ চেয়ারে মাথা এলিয়ে দিয়ে খিক করে হেসে উঠে আবার হাসি চেপে গেল।
শালার বউ নাকি তারে মারবো? কত্তবড় বুকের পাটা মাহিদ খান ও দেইখা নিবো। পিটাইয়া বাপের বাড়ি পাঠাই দিবো একদম। হুহ।
ঝিমুতে ঝিমুতে ভাত খেতে পারছেনা সে। না খেয়ে পালাতে ও পারছেনা৷ শালার বাপ বইসা আছে। মা তো নাছোড়বান্দা। নীরা এসে খাইয়ে দিতে দিতে বলল
‘ বাবুসোনা বউ তোমারে খাওয়াই দিবো না আমি না থাকলে। না খাওয়ায় উপোস রাখবো। বলবো খাইলে খা, না খাইলে না খা। আমার বাপের কি?
রিক হেসে উঠে বলল
‘ দারুণ বলেছিস নীরু।
রিপ বলল
‘ তুমি থামবে নীরা ? এত কথা কেন বলো? ওকে খাইয়ে দাও চুপচাপ। কাল থেকে দুপুরে ওর বাড়ি থেকে বেরোনো বন্ধ।
মাহিদ বিড়বিড় করে বলল
‘ শালার বাপ। জারি করছে মার্শাল ল।
খেয়েদেয়ে রিপ ঘরে চলে এল। ল্যাপটপ অন করলো। দু তিন মিনিটের কিছু কাজ আছে। সেগুলো করার এক ফাঁকে দেখলো হোয়াটসঅ্যাপে একটি মেসেজ এসেছে। রিপ মেসেজটি ওপেন করলো। চাপা হাসলো সে। নীরাকে ডেকে বলল
‘ মাইশা কি বলেছে দেখো।
নীরা দেখলো। হাসলো সে। মাইশা তখন অনলাইনে ছিল। নীরা তাকে ভিডিও কল দিতেই মাইশার হাস্যোজ্জ্বল চেহারা ভেসে উঠলো স্ক্রিনে। নীরা বলল
‘ আল্লাহ বাঁচায় রাখুক আম্মা। অনেক বড় উপকার করলে। একজন ভালো জীবনসঙ্গী আসুক তোমার জীবনে।
মাইশা হাসলো। বলল
‘ আপনাদের জন্য কিছু করতে পেরে আমি ধন্য আন্টি। এই যে আমাকে আম্মা ডাকেন। কি যে ভালো লাগে আমার। এই ডাকটা আমার কাছে অনেক মূল্যবান। আমি এই ডাকটা সবসময় শুনতে চাই। এটি ডাকা বন্ধ করবেন না আন্টি।
নীরা হাসলো। বলল
‘ ঠিক আছে। ঠিক আছে। বন্ধ করতাম না বাপ।
রিপ গরম চোখে তাকালো। মাইশা খিক করে হেসে বলল
‘ আপনার ছেলে নিশ্চয়ই আপনার কাছ থেকে এসব বলা শিখেছে? আমার কাছে দারুন লাগে। ভীষণ হাসি পায়।
‘ একদম না আম্মাজান। আমি আমার বাচ্চার কাছ থেকে এগুলা শিখছি। এগুলো যদি আমি বলতাম আগো থেইকা, তাইলে এই ব্যারিস্টার তো আমারে বিয়া করতো না। তিনি তো সভ্য ভদ্র মানুষ।
মাইশা হেসে ফেলল। হাসতে হাসতে বলল
‘ আপনি খুব মজার মানুষ আন্টি।
‘ তাই? কিন্তু ব্যারিস্টার তো বলে,,,
রিপ তাকে থামিয়ে দিয়ে বলল
‘ আমার দোষ গুন বলার জন্য মেয়েটাকে বসিয়ে রেখেছ তুমি?
নীরা বলল
‘ তাইতো তাইতো। ঘুমায় পড়ো আম্মাজান। অনেক রাত হয়ছে। টা টা।
মাইশা সালাম দিয়ে চলে গেল। ফোন বিচ্ছিন্ন করলো।
___________
কিছুক্ষণ পরেই ভোররাত। মাহিদের আর ঘুম আসছেনা। শুধু গড়াগড়ি করছে বিছানায়। ফোন টিপে পিহুকে ফোন দিল। পিহুর ফোন তোলার নামগন্ধ নেই। শুয়ে শুয়ে চোখ বন্ধ রেখে পিহুর ফোনে কয়বার ফোন দিল ঠিক হিসেব নেই।
একটা সময় ফোন রিসিভ হলো। পিহু ঘুমের ঘোরে আছে। গলা লেগে যাচ্ছে। ঘুম জড়ানো গলায় বলল
‘ কে?
‘ তোর জামাই বাপ। ফোন ধরোস না কিল্লাই?
‘ মাহিদ ভাই?
‘ চুপ বেডি। আমি তোর ভাই লাগি এইডা তোরো ঢোল পিডাইয়া সবাইরে জানাইতে হইবো ক্যান?
‘ মুখ সামলাও। মাঝরাতে ফোন দিয়ে তুইতোকারি করছো অন্যের বউয়ের সাথে। লজ্জা নেই?
‘ লজ্জা বাপেরে বস্তাবন্দি করছি। লজ্জা বাপ বহুত ক্ষতি করছে আমার। শুধু লজ্জা পাইতে থাকলে তো হইবো না। পেরেম পিরিতি ও করা লাগবো। লজ্জা রাখলে তো ওসব ইয়ামপসিবল। তাই ওগুলারে লাত্তি মারছি বাপ।
‘ ইশশ কি কথার ছিঁড়ি।
‘ চুপ থাক শালী। দেখি গান শোনা। আমার ঘুম আইতাছে না।
‘ পারব না। তোমার বউকে বলো না। সে গান শোনায় না তোমাকে? এত বড় একটা বুইজ্জা বেডারে নাকি গান শুনাইয়া ঘুম পাড়ানো লাগবে। যত্তসব।
মাহিদ সেইরকম রেগে গেল। বসে পড়ে বলল
‘ শালীরে শালী তুই বুইজ্জা বেডা ডাকছোস কারে? আমারে দেখতে কি বুইড়ার মতো লাগে? আমি এহনো জোয়ান পোলা। বিয়া করিনাই এহনো। তুই আমারে বুইজ্জা বেডা ডাকছোস কিল্লাই?
‘ একশবার ডাকব। তুমি কি বাচ্চা যে তোমাকে গান শুনিয়ে ঘুম পাড়াতে হবে? হুহ ঢং।
মাহিদের বসা থেকে আবার ও ধপাস করে শুয়ে পড়লো। বলল
‘ আমি তোর বাচ্চার বাপ শালী। আগে,,,,,,
পিহু আর শুনলো না। ফোনটা দূরে ছিটকে ফেলে কান চেপে ধরলো বালিশে। ছিঃ ছিঃ কি লজ্জার কথা। নাউজুবিল্লাহ।
বিড়বিড়িয়ে বলল
‘ তুমি বেয়াদব মাহিদ ভাই।
চলবে,
#মন_গোপনের_কথা
#পর্ব_২৫
লেখনীতে, পুষ্পিতা প্রিমা
পিহু কোনো কথা বলছেনা দেখে মাহিদ ফোনটা কেটে দিয়ে ঘুমিয়ে পড়লো। কিন্তু পিহু ঘুমোতে পারলো না। সকাল হওয়া অব্দি তার কানটা শুধু জ্বালাপোড়া করেছে। ফোনটা না তুললে এরকম বেয়াদব মার্কা একটা কথা তাকে শুনতে হতো না। ছিঃ ছিঃ মাহিদ ভাই এত বেয়াদব তার জানা ছিল না। পিহু ব্রাশ করতে আনমনা হলো। ছিকু এসে তার কোলের উপর উঠে বসলো। ব্রাশ এগিয়ে দিয়ে বলল
‘ পিহু বিরাশ করি দেয় না কেন?
পিহু বলল
‘ উফ আপনি আর কখন ব্রাশ করা শিখবেন?
‘ চিখবো না কেন?
পিহু তাকে আয়নার সামনে দাঁড় করিয়ে দিয়ে ব্রাশ করিয়ে দিল ছোট্ট ব্রাশটা দিয়ে। বলল
‘ এর পরের বার থেকে মার চলবে।
ছিকু ফুঁপিয়ে উঠে বলল
‘ পিহু বুকা দিচে কেন?
পিহু হেসে উঠে বুকে জড়িয়ে ধরলো তাকে।
____________
ইশা ছাদ থেকে নিয়ে আসা কাপড়গুলো ভাঁজ করছে।
বিছানা উপর সব কাপড় ভাঁজ করে রাখতে রাখতে আদিকে বলল
‘ ও তো চাপা স্বভাবের। কাউকে কিছু বলতে চায় না। আমাকে ও বলতে চায় না। লজ্জা পাচ্ছে হয়ত। আপনাকে একেবারেই বলবে না। এক কাজ করুন, পরীকে জিজ্ঞেস করতে বলুন। পরীকে তো বলবে।
‘ পরী?
‘ হুম।
‘ এখন তো পিহু বাড়িতে নেই। এখন বলি পরীকে?
‘ বলুন।
আদি পরীর ঘরের দিকে পা বাড়ালো। পরী ওয়াশরুমে। ছিকুকে গোসল করাচ্ছে। ছিকু নিজে নিজে আগ বাড়িয়ে পরীকে তার কাপড়গুলো ধুঁয়ে দিচ্ছে। পরী তাকে অনেক বার বারণ করেছে। সাবান লাগাতে পারছেনা ভালো করে। ছিকু বিরক্ত হলো। পরীর দিকে রেগে তাকিয়ে বলল
‘ পুরী কাপড় ধুঁতি দেয় না কেন?
পরীর হাতের ঠাস ঠাস চড় বসে গেল ছিকুর উদাম পিঠের উপর। ফর্সা পিঠে চড়ের লাল ছোপ বসে গেল। জ্বলে উঠতেই ছিকু চেঁচিয়ে ঠোঁট উল্টে কেঁদে দিল। পরী বলল
‘ একদম চুপ। সোজা হয়ে দাঁড়াও। সাবান মেখে দিই। নড়াচড়া করলে আর ও কয়েকটা দেব। আমার কাজ করে উল্টায় দিচ্ছে একদম।
ছিকু চেঁচাতে চেঁচাতে কাঁদতে লাগলো। পরী বালতি থেকে মগ কেটে ছিকুর মাথার উপর পানি দিতে লাগলো। ছিকু লাফাতে লাপাতে কাঁদলো। পরী তাকে কোলে তুলে নিয়ে এল। গা মুছিয়ে দিতে দিতে বলল
‘ কান্না বন্ধ। নইলে আর ও কয়েকটা পড়বে।
তখনি আদি এল। আদিকে দেখে ছিকু আর ও জোরে কেঁদে উঠলো। আদি বলল
‘ কি হয়েছে ভাই? আসো আসো। কেন মেরেছ পরী?
‘ দুষ্টুমি করছিল আব্বা। আমাকে পুরো ভিজিয়ে দিল। আমি না গোসল নিয়েছি৷ কতক্ষণ ধরে ডাকছি গোসল করতে, আসছেই না। আর যখন এল আমাকে নাকি কাপড় ধুঁয়ে দিচ্ছে।
আদি বলল
‘ এভাবে মারতে হয়? তোমার বড়মা নামাজ পড়ছে। এখন আসবে।
‘ আসুক। বেশি আদরে আদরে বাঁদড় বানাচ্ছে সবাই।
আদি হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলল
‘ আসো ভাইয়া।
ছিকু এল না। বরঞ্চ লুকিয়ে গেল পরীর পেছনে। তার গায়ে কাপড়চোপড় নেই। ঠোঁট উল্টে উল্টে কাঁদতে লাগলো সে। আদি তার লুকোনোর কারণ পেয়ে হেসে দিল। এগিয়ে গিয়ে পরীর পেছন থেকে কোলে তুলে নিল। তার ড্রব থেকে গেঞ্জি আর প্যান্ট নিয়ে বলল
‘ আমরা ইশুর কাছে যাই।
ছিকু কাঁদতেই থাকলো। মুখ লাল হয়ে গেল। আদি যাওয়ার সময় পরীকে বলল
‘ কাজ শেষ হলো একবার এদিকে এসো মা। কথা আছে।
‘ ঠিক আছে আব্বা।
ইশার কাছে যেতেই ছিকু ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলো। ইশা বলল
‘ ওমা! এই অবস্থা কেন সোনা? কে মেরেছে?
আদুরে কথা শুনে ছিকুর নিচের ঠোঁট উল্টে এল। ঠোঁট বেঁকিয়ে ভ্যাঁ করে জোরে কেঁদে উঠে বলল
‘ পুরী মিরেচে কেন?
আদি তার গালের জল মুছে দিয়ে আদর দিয়ে ইশার কাছে দিয়ে ফেলল। ইশা শাড়ির আঁচল তুলে তার গাল মুছে দিয়ে বুকে জড়িয়ে ধরে বলল
‘ পরীকে খুব মারবো সোনা। আর কেঁদোনা। চকলেট দেব।
ইশা কাপড় পড়াতে নেবে তখনি রাইনা এল। ছিকুর পিঠ দেখে বলল
‘ তোর মেয়ের কান্ড দেখেছিস ছোট? পিঠ তো লাল হয়ে গেল। আল্লাহ!
ও দুষ্টুমি এখন করবে না তো কখন করবে? তাই বলে এভাবে মারতে হয়? ছোটবেলায় ও করেনি দুষ্টুমি? মহা বজ্জাত ছিল একটা। কেউ কিছু বললেই মাথা ঠুকাতে থাকতো। আর সে এখন করছে শাসন। ছোট থাকতে সবাই এমন করে। সহ্য করতে পারলে থাকতে বল, নইলে চলে যেতে বল তোর মেয়েকে৷
আদি বলল
‘ আরেহ আস্তে বলো না আপা। শুনলে রেগে যাবে।
‘ রেগে যাক তোর মেয়ে। ও আমার নাতি। আমার ছেলের মানিক। আমার জ্বলে না?
ছিকুর দুগালে আদর দিতে দিতে নিয়ে চলে গেল রাইনা৷ বলল
‘ তোমাকে বলছিনা দাদুর সাথে গোসল করে নিতে। নাওনি কেন? এখন তো মাইর খেলে।
ছিকু ঠোঁট উল্টে উল্টে আর ও কাঁদতে লাগলো৷ আফি ঘর থেকে বেরিয়ে এসে বলল
‘ আমার ভাই ওভাবে কান্দে ক্যা? বাড়ির মানুষগুলা কি হাওয়া হইয়া গেছে?
রাইনা ছিকুকে নিয়ে হনহনিয়ে ঘরের ভেতর ঢুকে পড়ে বলল
‘ আসছে দরদ দেখাতে। এতক্ষণ লন্ডনে ছিল। আমার ভাইটাকে এভাবে মারতেছে কেউ দেখেনি।
আফি ছিকুর দিকে তাকালো। আহারে ভাইটার চোখমুখ ফুলে গেছে। রাইনা কোলে বসিয়ে কাপড় পড়িয়ে দিল ছিকুকে। নিজ হাতে ভাত খাওয়ালো। তারপর কোলে নিয়ে ঘুম পাড়ালো বহুকষ্টে। পরী এসে খোঁজ নিতেই রাইনা ধমকে বলল
‘ কেউ নাই এখানে।
পরী বলল
‘ ঘুমিয়ে গেছে?
‘ জানিনা। যাহ তোর খোঁজ নেওয়ার দরকার নাই।
পরী থমথমে মুখে সরে যেতে যাচ্ছিল। রেহান তখনি মাত্রই বাড়ি ফিরেছে। পরীর মুখ থমথমে দেখতেই প্রশ্ন করলো
‘ কি হয়েছে মা?
‘ তোর বউকে জিজ্ঞেস কর। মেরে পিঠ লাল করে ফেলেছে আমার নাতির।
পরী ফুঁপিয়ে উঠে চলে গেল।
রেহান মায়ের ঘরে ঢুকে ছিকুকে ঘুমন্ত অবস্থায় দেখলো। মুখটা ফুলে আছে। আর ও বেশি আদুরে লাগছে। কপালে, গালে কয়েকবার চুমু খেল রেহান। রাইনাকে বলল
‘ কেনসাহেব আজকে মার খেল তাহলে। পরীর কপালে হেব্বি দুঃখ আছে আজ।
রাইনা বলল
‘ হয়ছে। আমাকে আর শোনাস না কোনোকিছু।
রুম থেকে বের হয়ে গেল রাইনা। রেহান ছিকুর মাথায় আর ও একটি চুমু খেয়ে কোলে তুলে নিয়ে চলে এল তার ঘরে। পরীকে বলল, নিয়ে এসেছি পরী।
পরী দৌড়ে এল। ছিকুকে কোলে নিয়ে বুকে জড়ালো শক্ত করে। কপালে গালে গভীর চুমু দিয়ে বলল
‘ খুব রাগ আমার উপর। রাগ ভাঙাতে হবে ঘুম থেকে উঠলে।
রেহান বলল
‘ একদম। মেরেছ কেন আমার ছেলেকে?
_______________
পিহু ঘুমিয়েছে মেডিক্যাল থেকে ফিরে। আর কিছুক্ষণ পর মাগরিবের আজান পড়বে। তাই পরী তাকে ডেকে দিল। পিহু উঠলো না। পরী তার পাশে শুয়ে সুড়সুড়ি দিল পিহুর কানের ভেতর। পিহু নড়েচড়ে বলল
‘ ঘুমাচ্ছি দিদিয়া।
পরী বলল
‘ দেখে আসো কে এসেছে।
পিহু চোখ খুললো। তবে মাথা তুললো না। বলল
‘ কে?
‘ নিনিত।
লাফ দিয়ে উঠে বসলো পিহু। বলল
‘ কখন? কেন?
পরী হেসে ফেলল। বলল
‘ মজা করছিলাম। আসলে খুশি হতে?
পিহু আবার ও ধপাস করে শুয়ে বলল
‘ কেন মজা করো দিদিয়া?
পরী হেসে পিহুর নাক টেনে দিল। বলল
‘ তোমার বিয়ে খুব শীঘ্রই। নিনিতের মা ফোন করে বলেছে।
পিহু অবাক গলায় বলল
‘ কিন্তু পাপা যে বলল দেরী আছে। আমাকে সময় দেবে। কেন এত তাড়াহুড়ো?
‘ যত তাড়াতাড়ি শুভ কাজ সেড়ে ফেলা যায় ততই মঙ্গল।
পিহুর থমথমে চেহারা খেয়াল করলো পরী।
‘ তোমার নিনিতকে তো পছন্দ। নিনিতের ও তোমাকে পছন্দ। তাহলে সমস্যা কোথায়?
‘ স্যার সত্যি ওরকম বলেছে।
পরী আমতাআমতা করতে করতে বলল
‘ অপছন্দ তো নয়। নইলে ওর ফ্যামিলিকে সাপোর্ট তো করতো না। তারমানে কি দাঁড়ায়? হুহ হুহ?
পিহু খাট থেকে নেমে আদির কাছে ছুটলো। পরী ও তার পিছুপিছু ছুটলো। দেখলো বিছানার উপরে খেলছে ছিকু। আশেপাশে তাকে ঘিরে সবাই বসে আছে। পরী ছিকুর দিকে তাকিয়ে মন খারাপ করে ফেলল। রাইনা তাকে দেখে চলে গেল।
পিহু আদিকে খুঁজতে বসার ঘরের দিকে চলে গেল। পরী গিয়ে বসলো ছিকুর পেছনে। কানে চুমু খেয়ে বলল
‘ মানিক রাগ করেছে?
ছিকু পরীর দিকে ফিরে চাইলো। আবার খেলতে লাগলো। ইশা ঠোঁট চেপে হেসে বলল
‘ কি রাগ?
পরী তার গালে চুমু দিতেই ছিকু বিছানায় লুটিয়ে পড়লো। বালিশে মুখ লুকিয়ে রাখলো। পরী হেসে ফেলল। শার্ট উল্টে তুলতুলে পিঠটাতে অসংখ্য আদর দিল। তারপর তার কোলে নিয়ে জড়িয়ে ধরলো বুকের সাথে। ছিকু ঠোঁট উল্টাতে লাগলো। পরী তার গালে, কপালে চুমু দিতে দিতে বলল
‘ আর মারব না আমার সোনামানিককে। আর কান্না নয়।
মায়ের বুকের উম পেয়ে বুকের সাথে লেপ্টে থাকলো ছিকু বেড়াল ছানার মতো। ইশা বলল
‘ দেখেছ মায়ের উপর রাগ কিংবা অভিমান কোনোটা বেশিক্ষণ থাকেনা। মা মা-ই হয়।
আদিকে খুঁজে পেল না পিহু। আদি ফিরলো রাতে। পিহু বলতে গিয়ে আর কিছু বলল না। তবে ভীষণ রেগে থাকলো আদির উপর।
____________
আদি চেম্বারে বসে রয়েছে। নিনিত সেক্রেটারিকে বলল
‘ স্যার ফ্রি আছে?
‘ হ্যা স্যার।
নিনিত ভেতরে ঢুকে পড়লো। আদি তাকে দেখে বলল
‘ বসো। দেরী হলো কেন?
নিনিত চেয়ার টেনে বসে বলল
‘ মা ফোন করেছিল একটু তাই। কেন ডেকেছেন স্যার? কোনো জরুরি কিছু?
আদি নড়েচড়ে বসলো। হেসে বলল
‘ নার্ভাস ফিল করার কোনো দরকার নেই। একটা ছোট্ট প্রশ্ন করার জন্য তোমায় ডেকেছি। সোজাসাপটা বলে ফেলি।
নিনিতকে অসহায় দেখালো। স্যার কি জিজ্ঞেস করবে তাকে?
আদি তার দিকে পানির গ্লাস বাড়িয়ে দিল। হেসে বলল
‘ পানি খাও।
নিনিত পানি খেল।
আদি বলল,
‘তুমি আমার ছেলের মতো নিনিত । তুমি এমনিতেই জানো যে আমার সব স্টুডেন্ট থেকে তুমি আমার সবচাইতে পছন্দের একটা স্টুডেন্ট। আমার সাথে অন্যরকম একটা সম্পর্ক আছে তোমার। যদি ও আর ও একটা সম্পর্কে জড়াতে যাচ্ছি আমরা। তোমার কি মনে হয় তোমার ঠিক কোন গুনটা দেখে আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি আমার মেয়েকে তোমার কাছে দেব?
নিনিত ভ্যাবাছ্যাঁকা খেয়ে বলল
‘ আ’ম নট সিউর স্যার। বন্ধুমহলে সবাই আমাকে বেকুব, গাঁধা বলে ডাকে। আমার কোনো ভালো গুণ আমার সত্যি জানা নেই। তবে এটা বলতে পারি যে আমি একজন বেস্ট টিচারের বেস্ট স্টুডেন্ট হতে পেরেছি।
আদি হেসে বলল
‘ তুমি খুব সহজ সরল একটা ছেলে নিনিত৷ আর এই সহজ সরল ছেলেটাকে কেউ একজন খুব ভালোবাসে।
‘ কে?
নিনিতের কৌতূহলী প্রশ্ন। আদি হেসে উঠলো।বলল
‘ বাহ আগ্রহ তো আছে।
নিনিত লজ্জা পেয়ে গেল। আদি বলল
‘ ইটস ওকে৷ এত লজ্জা পাওয়ার কি আছে? যেটা বলছিলাম তুমি পিহুকে পছন্দ করো?
নিনিত হা করে তাকালো। আদি বলল
‘ আসলে আমি প্রস্তাবটা দেওয়ার সাথে সাথে তোমার মা বাবার কাছ থেকে পজিটিভ ফিডব্যাক পাব এটা কখনো ভাবিনি। পিহুকে যে তারা ও পছন্দ করে রেখেছে সেটা জানতাম না আমি। ওনারা যখন রাজী আছেন তখন আমি তোমাদের দুজনকে জুড়ে দিতে চেয়েছি কিন্তু তোমাদের দুজনের মত নিইনি। তার ও কারণ ছিল৷ কারণ তোমাদের একে অপরকে অপছন্দ করার কোনো কারণ আমি দেখিনি৷ তারপর ও আজ জিজ্ঞেস করছি। তোমার যদি অন্য কাউকে ভালোলেগে থাকে, কিংবা অন্য কাউকে পছন্দ, তাহলে আমাকে বলতে পারো উইথআউট হেজিটেশন।
‘ আপনার হঠাৎ এরকম কেন মনে হলো স্যার, যে আমার অন্য কোথাও পছন্দ থাকতে পারে।
‘ মনে হতেই পারে নিনিত। আমার তোমাদের দুজনেরই মতামত নেওয়ার দরকার আছে। যদি ও এই কাজটা আর ও অনেক আগেই দরকার ছিল।
‘ আমার অন্য কোথাও পছন্দ নেই স্যার। আমি জানি আপনি কিংবা আমার মা বাবা আমার জন্য অলওয়েজ বেস্টটা চুজ করবেন।
‘ পরিবারের কথা বলছিনা। তোমার কথা বলছি। যদি ও প্রশ্নটা কেমন হয়ে যায় তারপরও ও বলছি, পিহুর জায়গায় অন্য কাউকে কিভাবে দেখবে তুমি? যদি সে তোমাকে, তোমার সবকিছুকে ভালোবাসে।
নিনিতের চেহারার রঙ পাল্টে গেল।
‘ আমি বিশ্বাস করিনা এমন কেউ আছে। থাকলে ও তা দুদিনের। ভালোবাসা জিনিসটা হুট করে হয়ে যাওয়া কোনো ব্যাপার নয় স্যার। আরিশা আমাকে যতটুকু চেনে, অন্য কেউ আমাকে ততটুকু চিনবেনা।
‘ আমরা আসলেই যা দেখি তার বাইরে ও কিছু থাকে নিনিত। তুমি এখন যা দেখছ তার বাইরে ও কিছু আছে। তোমার পিহুকে ভালোলাগে। পিহুর তোমাকে। আর এই ভালোলাগা ব্যাপারটা দারুণ সুন্দর। তবে ভালোলাগার বাইরে ও যদি তোমাকে কেউ অন্যচোখে দেখে সেটার নামই ভালোবাসা। ভালোবাসা শব্দটা ভীষণ জটিল। তেমন ভয়ংকর সুন্দর।
তোমাকে কেউ পাগলের মতো করে ভালোবাসে কথাটা শুনলে তোমার ভেতরে নিশ্চয়ই খুশি কাজ করবে। খুশির পাশাপাশি আর ও একটি জিনিস কাজ করে সেটা হচ্ছে এড়িয়ে যেতে পারার মতো একটা প্রবণতা। কারণ আমরা যখন জানতে পারি যে আমাকে কেউ ভালোবাসে তখন আমরা খুব বেশি উপরে উঠে যাই। না চাইতে পেয়ে যাওয়া জিনিসটাকে আমরা মূল্যায়ন করিনা। কিন্তু ভালোবাসা পা দিয়ে ঠেলে দেওয়ার মতো জিনিস নয় নিনিত। এটি সম্মানের। এটি পবিত্র। তোমাকে সত্যি কেউ একজন খুব বেশি ভালোবাসে। তোমার থাকে মূল্যায়ন করা উচিত। তুমি কি বুঝতে পারছ আমি কার কথা বলছি?
নিনিত ভীষণ বিস্ময় নিয়ে বলল
‘ স্যার আমি সত্যি কিছু বুঝতে পারছিনা। আপনি কার কথা বলছেন?
আদি ও খানিকটা বিস্ময় হলো। নিনিত জানেনা জালিশার কথা? মেয়েটা এত চটপটে অথচ মনের কথা চেপে রেখেছে? কি অদ্ভুত!
আদি বলল না জালিশার কথা। শুধু বলল
‘ সেটা তোমাকে বুঝে নিতে হবে নিনিত। এতটা অবুঝ হলে তো চলে না। নিজের জিনিস নিজেকেই বুঝে নিতে হয়। আমরা তাদের কাছেই ভালো থাকি যারা আমাদের ভালোবাসে। নইলে একটা সময় গিয়ে ঠিক আফসোস হবে। কিন্তু তখন আর কিছু করার থাকে না। তাই সময় থাকতে নিজের মানুষকে নিজেকেই খুঁজে নিতে হয়, বুঝে নিতে হয়। আর তোমার পরিবার ও সেটায় চায়। ওরা চাই তুমি ভালো থাকো। সে যার সাথেই হোক না কেন। তাদের পছন্দের মানুষের সাথে তুমি ভালো থাকবে এটা কেউ গ্যারান্টি দিয়ে বলতে পারবে না নিনিত।
নিনিতকে ভাবিয়ে তুললো বিষয়টা। স্যার এসব কি বলছে? যেতে যেতে সে আবারও পিছু ফিরলো। বলল
‘ আপনি তাকে চেনেন স্যার?
আদি হাসতে হাসতে বলল
‘ চিনি চিনি।
‘ কে সে?
‘ বলতে পারি এক শর্তে৷ তুমি তাকে কিছু বলতে পারবেনা।
‘ কিচ্ছু বলব না। প্রমিজ।
‘ সত্যি!
‘ তিন সত্যি।
আদি কাগজে কিছু একটা লিখে বাড়িয়ে দিল নিনিতের দিকে। বলল, ঔষধ টা বাড়িতে গিয়ে খাবেন। এখন না, এখানে না।
নিনিত হেসে উঠলো। যাওয়ার আগে আবার পিছু ফিরে বলল
‘ ঔষধটা তার আগে খেয়ে ফেললে কি কোনো প্রবলেম হবে স্যার?
আদি হেসে উঠলো উচ্চস্বরে।
__________
মাহিদ বিছানায় শুয়ে শুয়ে গেমস খেলছে ফোনে। নীরা দুধের গ্লাস এনে ধপাস করে টেবিলে। বলল
‘ তুই কি শুরু করছিস মাহি? সারাদিন মাঠে থাকিস৷ তোর কি পরীক্ষাটা দিতে হবে না? বিয়েশাদি করবি না তুই?
‘ করুম। বউ ঠিক আছে। এত চিন্তা কিসের লাগি করো বাপের বউ?
নীরা ফোঁসফোঁস করে বলল
‘ মাইশা তোরে বিয়া করবোনা বলছে। আমার পিহুর মতো বউ চাই।
মাহিদ ফোন রেখে হা করে তাকালো নীরার দিকে। নীরা বলল
‘ দুধটা খা। সুবুদ্ধি হোক। মাঝেমাঝে তাপড়াইতে মন চায় তোরে গাঁধা।
নীরা হনহনিয়ে চলে গেল। মাহিদ দুধের গ্লাস হাতে নিল। দুধটা নাড়তে লাগলো তারপর এক চুমুক খেল৷ আরেক চুমুক খেতেখেতে কল দিল পিহুকে৷ পিহু বই খুঁজে পাচ্ছে না তার। মাথা খারাপ। এদিকে ফোন তোলার সাথে সাথে মাহিদ বলল
‘ ওই শালী তুই দুই নম্বরি কাজ কিল্লাই করছোস বাপ? তোর বাপ আর তোরে কি আমি সাধে দুই নম্বরী বলি?
পিহু বলল
‘ ফোন রাখছি। আমি বই খুঁজে পাচ্ছি না।
পিহু ফোন বিছানায় রেখে দিল। টেবিলে এসে বই খুঁজতে লাগলো তন্নতন্ন করে। ফোনটা বাজতেই লাগলো। পিহু ফোন তুলবে না। তার নতুন বইটা কোথায় চলে গেল?
ইশা তার রুমে ঢুকে ফোনটা তুললো। রিংটোন বন্ধ হতেই পিহু ঘাড় ঘুরিয়ে তাকালো। ততক্ষণে মাহিদ বলল
‘ ও বাপরে বাপ। শালী ডাক্তারের বাচ্চি তুই এত ভাব দেখাস কিল্লাই বাপ?
মেরিমা কইছে তোর মতো বউ লইয়্যা আসতে। আমি তোরে আর বিশ্বাস করিনা। তোর উপর বিশ্বাস করা যাইতো না বাপ। তুই দুই নম্বর জিনিস ঢুকায় দিতাছোস। এখন তোর মতো কাউরে আমার চাই না। আমার এহন তোরে চাই। ব্যস। তুই তোর বাপোরে কহ তার আদরের ঝি’রে আমি কিডন্যাপ করুম বাপ। রাখতাছি এহন। আমি কিডন্যাপ করার যন্ত্রপাতি যোগাড় করি।
ইশা ততক্ষণে কান থেকে ফোন সরিয়ে নিয়েছে। পিহু এসে ফোনটা নিয়ে বলল
‘ মাহিদ ভাই মজা করেতেছে। সবসময় করে।
বলেই অপ্রস্তুত হাসলো পিহু। মাহিদ ভাই কি উল্টাপাল্টা কিছু বলছে নাকি?
ইশা চুপচাপ রুম থেকে বের হয়ে গেল।
চলবে
রিচেক করা হয়নি।