#মন_গোপনের_কথা
#পর্ব_২০
লেখনীতে, পুষ্পিতা প্রিমা
নিশিতার বিয়ের সব ঝামেলা চুকে গিয়েছে। নিশিতার শ্বশুর বাড়ি যাওয়ার কথা ছিল মাহিদের। নিনিত তাকে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব পৌঁছে যেতে বলেছে। মাহিদের সেদিন ক্রিকেট ম্যাচ ছিল। তাই সে যাইনি। যাবেনা সেটা নিনিতকে বলেনি। নিনিত সেখানে গিয়ে মাহিদের জন্য অপেক্ষা করতে লাগলো। কারণ মাহিদ বলেছে সে সোজা নিশিতার শ্বশুর বাড়ি পৌঁছে যাবে। নিনিত মাহিদকে ফোনে পেল না। শেষমেশ পিহুর কাছে গেল। পিহু জানালো তার মাহিদ ভাইয়ের সাথে ফোনে কথা হয়নি। নিনিত তাই নীরার কাছে ফোন দিল। নীরা বলল, ও তো ম্যাচ খেলতে গেছে আব্বা। তোমাকে বলে নাই।
নিনিত বলল
‘ আমাকে তো বলছিল একা একা আসবে। আমি আর জীবনে ও ওকে কোথাও যেতে বলব না।
নিনিত রেগে ফোন রেখে দিল। নীরা রিপকে সাথে সাথে ফোন দিয়ে বলল
‘ মাহি কি করেছে দেখেছেন? নিনিতকে কথা দিয়ে নিশিতার শ্বশুর বাড়ি আর যাইনি। এটা কোনো কথা? নিনিত কিভাবে রাগ করলো!
রিপ চুপচাপ শুনলো। শেষে বলল
‘ ও সন্ধ্যায় যাবে। আমাকে বলেছে। ওরা বন্ধু বন্ধু সব ম্যানেজ করে নেবে। তুমি চিন্তা করো না।
নীরা রাগে ফোঁসফোঁস করে বলল
‘ ওহ আচ্ছা। আচ্ছা। বাপ ছেলে তলে তলে ঠিক। শুধু আমিই কিছু জানিনা। আমারে তো দরকার নাই।
রিপ হাতের কলম রেখে চেয়ারে মাথা এলিয়ে দিল। বলল
‘ সামান্য ব্যাপার নিয়ে,
নীরা ফোন কেটে দিল। সে ভীষণ রেগে গেছে। রিপ পুনরায় ফোন দিল। নীরা ফোন তুললো না। পরপর সাত আটবার কল আসার পর নীরা ফোন তুলে বলল
‘ কি চাই? কি সমস্যা?
‘ আপনি কি ব্যারিস্টারের বউ বলছেন?
নীরা কিছুক্ষণ চুপ থাকলো। গালে হাত চেপে দিয়ে হাসি চেপে বলল
‘ ইননা। কোন ব্যারিস্টার? কোনো ব্যারিস্টার মিনিস্টারকে আমি চিনিনা। ফোন রাখেন। অসভ্য পুরুষ মানুষ। অন্যের বউকে ফোন দিতে লজ্জা করেনা?
ওপাশ থেকে ভরাট গলার হাসি স্পষ্ট শুনতে পেল নীরা। রাগে কিড়মিড় করে সে বলল
‘ আবার হাসেন? বেয়াদব মানুষ। আমাকে রাগিয়ে আবার হাসেন কেন?
‘ আপনি এত রাগ দেখান কেন? অন্যের জামাইয়ের সাথে এত রাগ দেখান কিভাবে?
‘ কি? অন্যের জামাই? কার জামাই? ওমা আমি আমার জামাইয়ের সাথে কথা বলছি। অন্যের জামাই হতে যাবে কেন? অন্যজনের অত স্পর্ধা হয়ছে নাকি আমার জামাই নিয়ে টানাটানি করার?
রিপ আবার হাসলো। বলল
‘ তাহলে শেষমেশ আত্মসমর্পণ!
‘ একদম না। আমি আপনাকে চিনিনা। ফোন রাখেন। আর ফোন দিলে খবর আছে।
রিপ হেসে বলল
‘ ঠিক আছে।
____________
ম্যাচ শেষ করে বাড়ি ফিরলো মাহিদ। বাড়িতে ঢুকতে ঢুকতে নীরা মুনাকে ডাক দিল। মুনা ছুটে এল। বলল
‘ এসেছিস? যাহ তাড়াতাড়ি গোসল নে। নিশিতার শ্বশুরবাড়ি যাবি তো।
‘ মেরিমা কই?
‘ তোর মা তোর আর তোর বাপের উপর সেইরকম রেগে আছে। তোরা বাপ পুত নাকি তলে তলে এক। তোর মাকে কিছুই জানাস না।
মাহিদ হাসলো। ডাকলো, মেরিমাআআআচআ,,,
নীরা শুনলো কিন্তু এল না। মাহিদ হেলেদুলে নিজের ঘরে চলে গেল। গোসল নিয়ে ওয়াশরুম থেকে বের হতেই দেখলো নীরা হাতে একটা প্লেট নিয়ে হাজির।
‘ এই আপেলের টুকরোগুলো খেয়ে যেন বের হয়।
মাহিদ মাথা মুছতে মুছতে নীরার কাছে গেল।হাত দিয়ে নীরাকে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরে বলল
‘ ওমা মেরিমা রাগ করো কিল্লাই বাপের বউ?
নীরা ধস্তাধস্তি করতে করতে বলল
‘ হুহ, কে তোর বাপের বউ? আমি কারো বউ না। কারো মা না। ছাড়।
মাহিদ হো হো করে হাসলো। নীরার কপালে ঠেসে চুমু খেয়ে বলল
‘ ধুর মাইয়্যা এত রাগ টাগ ভালা লাগেনা বাপ। বাপের লগে এত রাগ দেখাও ক্যান?
নীরা শান্ত হলো। মাহিদের পিঠে চড় মেরে বলল
‘ মাথা মুছ বেয়াদব ছেলে। মাথা মুছতে তোর এত আলসেমি ক্যান বুঝিনা আমি।
মাহিদ নীরাকে তোয়ালে ধরিয়ে নিল। নীরা মাথা মুছে দিতে দিতে বলল
‘ মাইশা আমারে একটা কথা বলছে।
মাহিদ থেমে গেল। মুখ থেকে হাসি উবে গেল। বলল
‘ কি বলেছে?
নীরা ব্যস্ত হয়ে তোয়ালে ঝাড়তে ঝাড়ত বলল
‘ বলছে আর কি। তোরে বলা যাবে না যতক্ষণ না তার উপযুক্ত প্রমাণ আমি না পাই।
মাহিদ নীরার সামনে গিয়ে দাঁড়ালো। বলল
‘ আমায় বলো মা।
নীরা অন্যদিকে চোখ ঘুরিয়ে বলল
‘ বলব না। বলতে পারব না। তোর বাপকেই তো সব বলিস, আমাকে তো কিছু বলিস না। তাই তোকে ও কিছু বলব না আমি।
মাহিদ একদৃষ্টে তাকালো নীরার দিকে। বলল
‘ মা হেয়ালিপনা ভালো লাগেনা। সোজাসাপ্টা বলো কি হয়েছে। নইলে আমি এক্ষুনি মাইশার কাছে যাব।
‘ যাবিই তো। মাইশা নিশিতার শ্বশুর বাড়িতেই আছে। পিহু ওকে সাথে করে নিয়ে গেছে।
মাহিদ তাড়াহুড়ো করে আলমিরায় শার্ট খুঁজতে ব্যস্ত হয়ে পড়লো। নীরা নিজে গিয়ে খুঁজে দিল। বলল
‘ এই শার্টে তোকে ভালো লাগে।
মাহিদ কেড়ে নিল। চুপচাপ পড়ে নিল শার্ট। হাতের ঘড়ি খুঁজতে ব্যস্ত হলো। নীরা ঘড়ি, পারফিউম জুতো খুঁজে দিল। বলল
‘ নিজের জিনিস নিজেকে খুঁজে নিতে আর বুঝে নিতে হয় মাহি।
মাহিদ তাকিয়ে থাকলো নীরার দিকে কেমন চোখে । নীরা তার শার্টের কলার ঠিক করে দিল। হাতের কব্জিতে ঘড়ি পড়িয়ে দিতে দিতে বলল
‘ অবাক হয়ে কি দেখছিস? আমি কি ভুল কিছু বলেছি? হারিয়ে যাওয়া টাকা, ধনসম্পদ, স্বাস্থ্য, সুখ, সব ফিরে আসে। কিন্তু,,
এবার মাহিদের দিকে চোখ তুললো নীরা। মুখের দুপাশে হাত রেখে হেসে বলল
‘ সময় আর মানুষকে ফিরে আসেনা।
মাহিদ পায়ে জুতো পড়ে নিল। কোনো কথা না বলো চুপচাপ বেরিয়ে পড়লো। নীরা তার পেছন পেছন ছুটে বলল, মাহি কিছু তো মুখে দিলিনা। এই মাহি?
_____________
মাহিদকে দেখে নিশিতা খুশি হয়ে গেল। বলল, মাহিদ ভাই তুমি দুপুরে এলেনা কেন? কত মজা হয়েছিল তখন।
‘ তোমার জন্য সবাইকে রেখে দিয়েছি। রাতের খাবার খাইয়ে সবাইকে ছাড়ব।
‘ আমি আসব সেটা কে বলছে?
‘ আন্টি ফোন করে ভাইয়াকে বলছে। ভাইয়া তো খুব রেগে আছে তোমার উপর।
‘ এখন কোথায়?
‘ ওই তো জিয়াদের সাথে ছাদে। যাও না। সবার জন্য নাশতা পাঠাচ্ছি।
মাহিদ চলে গেল। নিনিত তাকে দেখে মুখ ফিরিয়ে নিল। মাহিদ গিয়ে পিঠ জড়িয়ে ধরে বলল
‘ শালা রাগ করোস ক্যা?
নিনিত বলল
‘ নিজের বোন হলে যেতে পারতি? আমি তোকে কাল রাত থেকে কত করে বললাম যে আজ নিশুর শ্বশুর বাড়ি আসতে হবে। তোর ম্যাচটাই ইমপোর্টেন্ট হয়ে গেল?
‘ তুই তো আমার দোস্ত। তুই বুঝবি কিন্তু ওদের আমি অনেক আগেই কথা দিয়েছিলাম যে আমি খেলতে যাব। সরি রে দোস্ত।
জিয়াদ হেসে বলল
‘ ভালোই হয়েছে। সবাইকে রেখে দিতে পেরেছি। চলো মাহিদ নাশতা সেড়ে ফেলি।
মাহিদ নিনিতের পিঠ চাপড়ে দিয়ে বলল
‘ রাগ কমা শালা।
নিনিত কথা বলল না। তবে মাহিদ যে শেষমেশ এসেছে সে এটাতে খুশি।
ছোট্ট করে সন্ধ্যার খাওয়া দাওয়া হলো। কম বেশি মেহমান আছে এই বাড়িতে। পিহু মাইশা আর বাকিরা গল্প করছিল নিশিতার সাথে। ইশা ফোন করায় পিহু একটু বের হয়েছে রুম থেকে। দেখলো মাহিদ নিশিতার ঘরের দিকে তাকিয়ে ফোন কথা কানে দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। পিহু বেরোতেই পিহুর মুখোমুখি হয়ে গেল। একপলক তাকিয়ে সরে পড়লো মাহিদ। পিহু মন খারাপ করে অনেক্ক্ষণ ঠাঁই দাঁড়িয়ে রইলো দরজার কাছটাই। মাহিদ আর এল না। পরে ইশার সাথে কথা বলে রুমে ঢুকে পড়লো পিহু। মাইশা তখন গল্পে মশগুল বাকিদের সাথে। পিহু তাকে ডাকলো। বলল
‘ আপনার ফোন কোথায়?
মাইশা কথা থামিয়ে বলল
‘ ব্যাগে।
পরে আবার কথায় ব্যস্ত হয়ে পড়লো সে। কিন্তু যখন ফোন হাতে নিল তখন দেখলো অনেকগুলো কল এসেছে মাহিদের ফোন থেকে। মাইশা ফোন হাতে নিয়ে রুম থেকে বের হতেই যাচ্ছিল। একটি শক্তপোক্ত হাত টেনে নিয়ে গেল তাকে।
পিহুর চোখ এড়ালো না সেটি।
মাইশা হতভম্ব মাহিদের আচরণে। বিস্ময় নিয়ে বলল
‘ কি হয়েছে মিঃ মাহিদ? আমি কি কোনো দোষ করেছি?
মাহিদ নিজেকে শান্ত রাখার চেষ্টায় থাকলো। হাতের আঙুল দিয়ে মুখ মুছে জিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে বলল
‘ আপনার ফোন চেক করেছেন? কতবার কল দিয়েছি?
‘ সরি। সাইলেন্ট ছিল। আমাকে ডাকতে পারতেন। কোনো সমস্যা?
‘ মাকে কি বলেছেন আপনি? মা সেটা আমাকে বলতে চাইছেনা। কি বলেছেন?
মাইশা একটু ভড়কে গেল। আমতাআমতা করতে করতে বলল
‘ ওটা এমন একটা কথা যেটা শুধু আমার আর আন্টির মাঝখানে শোভা পায়। আপনাকে সেটি বলা যায় না মিঃ মাহিদ।
মাহিদের কপালে ভাঁজ। মাইশা বলল
‘ আর কিছু জিজ্ঞেস করবেন?
মাহিদ চুপ করে থাকলো। মাইশা বলল
‘ তাহলে আমি আসি।
মাহিদ মাথা নাড়লো একটুখানি। রাতের খাওয়া দাওয়া শেষ হলো। পিহু চুপচাপ। সবাই এত মজামাস্তি করছে তার সেদিকে মনোযোগ নেই। সবাই বেরোনোর পূর্বে নিশিতা নিনিতকে জড়িয়ে ধরে আবার কান্নাকাটি শুরু করলো। নিনিত হেসে ফেলল বোনের ছেলেমানুষী দেখে। কপালে চুমু দিয়ে বলল
‘ আমি ঘনঘন আসব বনু। এভাবে কেউ কাঁদে? তুই এভাবে কাঁদলে আমার যেতে ইচ্ছে করে।
‘ যেওনা। কেউ যেওনা৷
নিনিত আবারো হাসলো। মাথায় ঘনঘন হাত বুলিয়ে বলল
‘ মাহি আমরা আসব না? পরশু আসব। মাহি ঠিক আছে?
মাহিদ মাথা নাড়লো। নিশিতা বলল
‘ পাক্কা!
‘ পাক্কা।
‘ পিহু আর মাইশাকে ও নিয়ে আসবা।
‘ আচ্ছা আচ্ছা।
‘ পিহুকে তাড়াতাড়ি আমাদের বাড়িতে নিয়ে আসো না। আম্মা আব্বা এখন পুরো বাড়িতে একা। তুমি তো হসপিটালে সময় কাটাও। পিহুকে নিয়ে আসো। কখন আনবে?
নিনিত তারপর মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলল
‘ আনব।
নিশিতা খুশি হলো। পিহুকে বলল
‘ বান্ধবী এবার তোর বিয়ে খাব। মাহিদ ভাই তোমার বিয়ে ও খাব। মাইশুকে তাড়াতাড়ি নিয়া যাও। তোমাদের দুজনের বিয়েতে হেব্বি আনন্দ করব আমি। কি খুশি!
নিনিত বলল
‘ তাহলে এবার আসি? ভালো থাকিস। আর তুই আর জিয়াদ তো যাবি পরশু দিন আমাদের সাথে।
নিকিতা আবার তাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে পাখির ছানার মতো গুঁজে গিয়ে কেঁদে উঠলো। পিহুর দিকে চোখ যেতেই চোখ সরু হলো নিনিতের। বেরোনোর সময় বলল
‘ তোমার কি মন খারাপ?
পিহু তোতলাতে তোতলাতে বলল
‘ নিশুর জন্য খারাপ লাগছে।
‘ তাহলে পরশু বাসায় চলে এসো। ও তো আসবে।
পিহু মাথা দুলিয়ে বলল
‘ চেষ্টা করব।
__________
সবাই একে একে একেক রিকশায় উঠে চলে গেল।
মাইশা বলল,
‘ পিহু তুমি ও আসো না। আমরা একসাথে যাই।
নিনিত বলল
‘ আরিশা তো আপনার আর ও সামনে লেগে যাবে। আপনি একা একা অতদূর যেতে পারবেন?
‘ কেন পারব না? পারব।
নিনিত বলল
‘ না আপনার বাবা কি বলবে আপনাকে একা ছাড়লে। মাহিদ তো আছে। ও দিয়ে আসুক।
মাহিদ তখন ফোনে মগ্ন। নিনিত বলল
‘ মাহিদ শুনছিস?
মাহিদ চোখ তুলে বলল
‘ কি?
‘ মাইশাকে দিয়ে আয়। তোর রেসপনসেবলিটি এটা।
মাহিদ বলল
‘ সিএনজি ডাক। রিকশা তো আর লাগছেনা।
‘ এখন সিএনজি কোথায় পাব? বাসস্ট্যান্ডের দিকে যেতে হবে।
‘ যাওয়া যাক।
নিনিত বলল
‘ আরিশা, তোমরা হাঁটতে পারবে?
মাইশা বলল
‘ কেন পারব না। এই তো সামনেই।
‘ তাহলে চলুন।
চারজনেই হেঁটে বাসস্ট্যান্ডে পৌঁছালো। তারপর সিএনজিতে উঠে পড়লো।
প্রথমেই নিনিত নেমে পড়লো। তারপর চৌধুরী বাড়ির সামনে পিহু। পিহু নামতেই মাহিদ পেছনে এসে বসলো। মাইশা হা নেড়ে বলল
‘ পিহু আবার দেখা হবে। বাই।
পিহু মাথা দুলালো। সিএনজি আবার ছেড়ে দিল। মাইশা বলল
‘ আপনাকে তো পিহুর সাথে একবার ও কথা বলতে দেখলাম না।
‘ দরকার ছিল না। এমনি এমনি কি কথা বলব?
‘ ওহ।
তারপর মাইশা নেমে গেল। মাহিদকে বলল
‘ আমাদের বাসায় আসুন না। মা বাবা খুশি হবে।
‘ আজ না অন্য একদিন।
আর কিছুদূর গিয়ে মাহিদ নামলো খান বাড়ির সামনে।
বাড়িতে ঢুকতেই রিপের সাথে দেখা হলো মাহিদের।
‘ মাইশা আর পিহুকে বাড়িতে নামিয়ে দিয়েছিস?
‘ হ্যা।
‘ ঘুমিয়ে পড়।
নীরা তার সামনে এসে বলল
‘ মাইশা কিছু বলেছে তোকে?
মাহিদ দৃঢ়ভাবে তাকালো নীরার দিকে।
‘ বলেনি। বলবে না বলেছে
‘ ভালো করেছে। গাঁধা একটা৷
‘ কেন গাঁধা ডাকছ মা? কি করেছি আমি?
” গাঁধা জানেনা সে কেন গাঁধা। তোর দশা ও তাই। সেসব কথা থাক, নিশিতার বিয়ে তো চুবিয়ে গেল। এবার পিহুর বিয়ে ও খুব দেরী নেই। প্রস্তুতি নে।
‘ ওর বিয়েতে আমার কিসের প্রস্তুতি?
নীরার রাগ লাগলো। মাথায় চাটি মেরে বলল
‘ কাঁদার। তোর বোন না পিহু। বোনের বিয়েতে কাঁদবিনা?
মাহিদ আর কিছু বলল না। সোজা ঘরের দিকে চলে গেল শেষমেশ মা ও কি শুরু করলো তার সাথে?
________
ঘুমিয়ে পড়ার আগমুহূর্ত। মুখ হাত ধুঁয়ে ফ্রেশ হয়ে এসেছে নিনিত৷ ভীষণ ঘুম পাচ্ছে। কিন্তু তখনি তার ফোন বেজে উঠলো। ফোন তুলে কানে দিল নিনিত।
‘ কেমন আছ?
‘ খুব ভালো ডক্টর । আপনি কেমন আছেন?
‘ এইতো ভালো আলহামদুলিল্লাহ।
‘ আপনি কি ঘুমিয়ে পড়েছেন?
‘ নাহ ৷ তবে এক্ষুনি ঘুমিয়ে পড়ব। গুড নাইট।
‘ ফোন রাখছেন কেন? আমি তো নিশুর বিয়ের ছবিগুলো চাচ্ছিলাম। তাড়াতাড়ি দিন তো। কাল থেকে বলে যাচ্ছি আপনার তো হুশ নেই একদম।
‘ কাল সকালে মেইল করে দেব। এখন রাখছি।
‘ আপনার হবু বউয়ের ছবি যেন মিস না হয়৷ ওকে?
‘ ওকে। তুমি ডক্টর ডাকা শুরু করলে কখন থেকে?
‘ আমার তো ডক্টর ডাকতেই ভালো লাগে ভাইয়া।
নিনিত হেসে উঠলো। বলল
‘ আঙ্কেল আন্টি কেমন আছে?
‘ খুব ভালো। আপনি বিয়ে কখন করছেন?
‘ দেরী আছে।
‘ তাই? ভেরি গুড। শুভ কাজ যত দেরীতে হয় ততই ভালো।
নিনিত আবার ও হেসে উঠলো। বলল
‘ শুভ কাজে দেরী করতে নেই বলে, বোকা। তুমি দেখছি কথা ও ঠিকঠাক বলতে জানোনা। কি আশ্চর্য!
‘ আপনার কাছ থেকে শিখব। আপনি তো খুব ভালো টিচার।
‘ গুড। বাংলাদেশে চলে এসো। শেখাবো।
‘ সেটা আপনাকে বলতে হবেনা।
‘ মানে?
‘ মানে কিচ্ছু না।
‘ তুমি ভীষণ অদ্ভুত মেয়ে।
ওপাশ থেকে হাসির শব্দ এল।
বিছানায় শুয়ে পড়লো নিনিত। বলল
‘ আচ্ছা রাখো এখন। ঘুমাই।
‘ কেন? আপনার হবু বউয়ের সাথে কথা বলেন না?
‘ নাহ।
‘ কেন?
‘ আমি তোমার সিনিয়র কিন্তু ।
‘ জানি। বলুন না৷ কথা বলেন না?
‘ বিয়ের পর হবে যত কথা। রাখো। তুমি তো ভীষণ পাকনা হয়ে গেছ।
‘ হু খুব। ওকে ঘুমান। কিছুদিন পর থেকে তো আর ঘুমাতে পারবেন না।
নিনিত ভ্যাবাছ্যাঁকা খেয়ে বলল
‘ কি বললে?
খিকখিক করে হেসে ফোন কেটে দিল মেয়েটি।
চলবে,,,,
#মন_গোপনের_কথা
#পর্ব_২১
লেখনীতে, পুষ্পিতা প্রিমা
ছিকুর চেঁচামেচিতে ঘুম ভাঙলো পিহুর। ছিকু তার গায়ের উপর উঠে বসে গাড়ি চালাচ্ছে।
ভুউউ ফিপফিপ।
পিহু সোজা হয়ে শুতে পারলো না সেজন্য। বহুকষ্টে ছিকুকে তার পাশে ফেলল। তারপর বুকে জড়িয়ে ধরে মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বলল
‘ কলিজা উঠে গেছেন?
ছিকু আপেলে কামড় দিতে দিতে বলল
‘ উতি গেছি কেন? পিহু এখুনো উতেনি কেন?
পিহু হাসলো। ছিকুর মাথায় টুপটাপ আদর দিয়ে বলল
‘ কি খাচ্ছেন?
‘ আপিল।
‘ আমাকে ও দেন।
ছিকু কামড় দিয়ে আপেল তার হাতে নিল। পিহুর দিকে বাড়িয়ে দিল। পিহু হেসে ফেলল। আড়মোড়া ভাঙতে ভাঙতে বলল
‘ পঁচা কেন আব্বাটা। এভাবে কেউ কাউকে দেয়?
‘ মিহি ইমুন করে খিয়েছে কেন?
পিহু তার গালে ঠেসে চুমু খেয়ে বলল
‘ মিহি পঁচা তাই। পিহু তো পঁচা না। পিহু ভালো।
ছিকুর কষ্ট লাগলো। মিহিকে পিহু পঁচা বলেছে কেন?
‘ কেন মিহি পুঁচা কেন? পুঁচা বলো কেন?
পিহু তার চেহারার ভঙ্গিমা দেখে খিক করে হেসে ফেলল । কোলে নিয়ে গালটা চেপে দিয়ে আদর করে বলল
‘ ওরে বাবারে মিহিকে কেউ পুঁচা ও বলতে পারবে না। কি দরদ! কি দরদ!
ছিকু এখনো কপাল কুঁচকে আছে। পিহু কান ধরে বলল
‘ ওকে বাবা কান ধরলাম। আর ডাকব না পুঁচা।
ছিকুর কপালের ভাঁজ মিলিয়ে গেল । আপেলে কামড় বসিয়ে মাথা দুলিয়ে বলল,
‘ উম উম মুজা মুজা।
আবার ও হেসে ফেলল পিহু।
__________________
মাহিদের গায়ে জ্বর এসেছে। এখনো সকালের বিছানা ছাড়তে পারেনি সে। নীরা ডাকতে এসে দেখলো গা পুড়ে যাচ্ছে। হন্তদন্ত হয়ে রিপের কাছে গেল সে। বলল
‘ মাহির খুব জ্বর ব্যারিস্টার।
রিপ মাত্রই কোর্টে বেরোচ্ছিল। নীরার মুখ থেকে এমন কথা শুনে বলল
‘ কখন থেকে?
‘ কাল রাতে তো ঠিক ছিল।
রিপ ইনফ্রারেড থার্মোমিটার দিল নীরার হাতে। বলল
‘ তাড়াতাড়ি চেক করো।
নীরা থার্মোমিটার নিয়ে ছুটলো। রিপ তার পেছন পেছন গেল। নীরা মাহিদের কাছে গিয়ে থার্মোমিটার ঠোঁটের ভেতর দিল। বলল
‘ মাহি চোখ খোল। জ্বর এসেছে কাউকে বলবি না? আশ্চর্য! এভাবে শুয়ে থাকলে জ্বর কমবে?
মাহিদ চোখ খুললো একটু একটু করে। থার্মোমিটার নিয়ে ফেলে বলল
‘ ধুর কিছু হয়নাই বাপের বউ।
নীরা হেসে মিনমিন করে বলল
‘ তোর বাপ।
‘ কোথায়?
‘ ওটা কি।
মাহিদ চোখ ঘুরিয়ে রিপকে দেখে মুখে থার্মোমিটার দিল আবার। নীরা দেখলো জ্বর ১০২। রিপ বলল
‘ ডাক্তারকে ফোন করো। এসে দেখে যাক। আজ বাইরে যাওয়ার দরকার নেই আর।
বলেই রিপ চলে গেল। মাহিদ লাফ দিয়ে উঠে বসলো। বলল
‘ মা আজকে আমার খেলা আছে। ধুর বাপ বইসা থাকতে পারুম না ঘরের ভিতর। তোমার ব্যারিস্টারকে জামাইরে বুঝাও।
নীরা চিন্তিত গলায় বলল
‘ একদম বায়না ধরবি না মাহি। জ্বর থাকলে মাথা ঘুরায়। কোথাও যাবি না আজ। আমি ডক্টর ওয়াজিদকে ফোন করি। উনি এসে দেখে যাক। তোর আব্বা ঔষধ পাঠিয়ে দিবে।
মাহিদ আড়মোড়া ভেঙে উঠে ব্রাশ হাতে নিল। মুখ হাত ধুয়ে ফোন তুলে পিহুর ফোনে ফোন দিল। পিহু চমকালো তার ফোন পেয়ে। ফোন তুলে ছিকুকে ধরিয়ে দিল। ছিকু ফোন তুলে বলল
” হাই মিহি। হাউ আর ইউ। আ’ম ফাইন থেংকিউ।
মাহিদ হো হো করে হেসে দিল। পিহু ও হাসি চেপে ধরে রাখলো। এই ছেলেটা কি বলে এসব?
মাহিদ বলল
‘ শালা, আ’ম ফাইন কমু আমি। তুই শালারে এসব শিখাইছে কে বাপ? তোর অশিক্ষিত খালা? শালী তোরে ভালা কিছু শিখাইতে পারেনাই। ওরে ফোন দে বাপ।
‘ মিহি চকাল চকাল পুঁচা কথা বলে কেন?
‘ ফোন দিতে কইতাছি বাপ।
ছিকু ফোন দিল পিহুকে। পিহু ফিসফিস করে বলল
‘ তুমি বলো না। আমি বলব না।
‘ কেন? পিহু কথা বলবেনা কেন?
‘ ফোন দে। নইলে গিয়া ঠাস ঠাস চড় বসামু শালীরে।
পিহু ফোন নিল। কিছু বলার আগেই মাহিদ বলল
‘ ওই তুই এত ঢং দেখাস কিল্লাই? ফোন ধরোস না ক্যান? নাটক করোস? আমার জ্বর উঠছে তুই তাড়াতাড়ি আয়। বুঝছোস? কথা বলোস না ক্যান? তাড়াতাড়ি আয়। আয় আয়।
‘ কেন আসব আমি? তোমার বউকে বলো আসতে। আমি তোমার বউ নাকি? যাব না আমি। আমি অনেক বিজি।
পিহু ফোন কেটে দিল। মাহিদ ফোনটা বালিশের উপর ছুঁড়ে মারলো।
নীরা এসে বলল, কি হয়ছে?
‘ পিহুর বাচ্চিরে আসতে বলছি। শালী মুখের উপর বলে দিল আসবে না। হাতের কাছে পেলে মেরে ফেলব একদম।
নীরা ঠাঁই দাঁড়িয়ে রইলো। বলল
‘ কি বললি? পিহু?
মাহিদ নীরার দিকে তাকালো। বলল
‘ কি? ধুর বাপ মাথা ব্যাথা করতাছে। আমি ঘুমাই।
নীরা তাকে শুতে দিল না। বলল
‘ এদিকে আয় খাইয়ে দিই। ডাক্তার এক্ষুণি এসে পড়বে।
‘ খামু না।
নীরা তাকে জোর করে খাইয়ে দিল। মুনা এসে বলল
‘ অসুখবিসুখ হলে তুই তো আর ও বাচ্চা হয়ে যাস মাহি। সেই তুই বিয়ে করবি?
‘ তো করুম না? বিয়ার সাথে অসুখ-বিসুখের কি সম্পর্ক?
নীরা বলল
‘ ধুর এই পাগলের সাথে কথা বলো না আপা। জ্বরের ঘোরে পাগলের প্রলাপ করতেছে। ইচ্ছা করে একদম ঠাস করে কয়েকটা দেই। রোদ খাইয়া খাইয়া জ্বর বাঁধাইছে বেয়াদব।
মাহিদ খেয়ে নীরার কোলেই ঘুমিয়ে পড়লো। পিহু ফোন দিল নীরার ফোনে।
‘ জ্বর কত মামি?
‘ ১০২।
‘ আচ্ছা রাখি।
পিহু ফোন কেটে দিল। এল আধঘন্টার ভেতরে। সাথে ছিকু। মাহিদের ঘরের সামনে এসে ছিকুকে কোল থেকে নামিয়ে দিল পিহু৷ ছিকু দৌড়ে ঢুকলো মাহিদের ঘরে৷ এক লাফে মাহিদের গায়ের উপর উঠে বসলো। মাহিদের মুখের দিকে মুখ নিয়ে গিয়ে ফিসফিস করে বলল
‘ মিহির অচুখ কেন? মিহির দুক্কু কেন? দুক্কু চলি যায় না কেন?
পিহু আসার সময় ঔষধ ও নিয়ে এসেছে। নীরাকে বলল, পাপা বলেছে এখন একটা এন্টিবায়োটিক খাওয়াতে। জ্বর পড়ে যাবে। আর জ্বর পড়ে গেলে জাস্ট এইস দিবে, এন্টিবায়োটিক আর না।
‘ আমি তো ডাক্তাররে আসতে বলেছি আম্মা।
‘ মানা করে দাও।
নীরা ফোন করে মানা করে দিল।
মাহিদ ছিকুকে দেখে বুকের উপর টেনে নিল। দুগালে চুমু দিয়ে বলল
‘ তুই শালারে আমি খুঁজতাছি বাপ। তোরে আদর করি আয়।
ছিকু আদর পেয়ে বলল
‘ কেন আদর করো কেন? মারোনা কেন?
‘ তোরে আদর করলে ও দোষ।
‘ কেন দুষ কেন?
‘ চুপ বেডা। মুখে মুখে কথা কস কিল্লাই বাপ?
ছিকু মাহিদের মুখ হাত দিয়ে ধরে বলল
‘ কেন মুখি মুখি কথা বুলবোনা কেন?
মাহিদ আর কিছু বলল না। পরক্ষণে লাফ দিয়ে উঠলো মাহিদ।
‘ শালা ছিকু তুই আইছোস কার লগে?
‘ পিহু আনিচে কেন?
‘ পিহু? এই ডাক্তারের বাচ্চি লুকায় আছোস ক্যান? এইদিকে আয়।
পিহু দাঁড়িয়ে থাকলো দরজার বাইরে। মাহিদ লাফ দিয়ে বিছানা থেকে নামলো। পিহু দৌড়ে চলে যাচ্ছিল। মাহিদ খপ করে তার হাত ধরে টেনে নিয়ে এল। বলল
‘ জলপট্টি দে বাপ। সেবা কর। আমি তোর বড়ভাই। ভাইয়ের সেবা কর। ভালা জামাই পাবি।
‘ ভালা জামাই আমার আছে। ছাড়ো।
পিহুকে বিছানায় বসিয়ে কোলে মাথা রাখলো মাহিদ। বলল
‘ চুপ বেডি। জলপট্টি দে। কপাল ফাইট্টা যাইতেছে।
পিহু তার মাথা সরিয়ে দাঁড়িয়ে পড়লো। দ্রুত প্রস্থান করতেই ওড়নায় টান পড়লো তার। মাহিদ তার ওড়নার কোণা কপালে চেপে ধরে চোখ বন্ধ করে আছে। পিহু হতাশ হলো। উফ সে কেন এই মায়া অগ্রাহ্য করতে পারেনা? চেয়ারে বসে কপালে জলপট্টি লাগালো পিহু। নীরা আসতে চাইলো৷ কি মনে করে আর এল না। দরজার কাছ থেকে ফিরে গেল।
জলপট্টি সরিয়ে পিহুর হাতটা কপালে চেপে ধরে চোখ বন্ধ করে রাখলো মাহিদ। পিহু হাতটা সরিয়ে নিল। মাহিদ ঝট করে চোখে বিতৃষ্ণা নিয়ে চাইলো। অসহায় কন্ঠে বলল
‘ হাতটাই তো চাইলাম। নিলি ক্যান?
পিহু নিজের ভেতরে কিছু একটা চেপে আবার হাতটা কপালে রাখলো। ছিকুকে বলল
‘ মামার জন্য আপিল আর মালটা নিয়ে আসো নানুমণির কাছ থেকে। যাও।
ছিকু চলে গেল ভালো ছেলের মতো। পিহু মাহিদকে বলল
‘ আমাকে ডেকেছ কেন?
‘ সেবা করবি।
‘ আমার বিয়ে হয়ে গেলে তখন কি করবে?
পিহু উত্তর শোনার জন্য কান একটু নিচে নামিয়ে উদগ্রীব হয়ে বসে রইলো। মাহিদ কিছুক্ষণ পর বন্ধ চোখে বলল
‘ বিয়ে হয়ে গেলে কি হয়ছে? আমি তোকে ডাকতে পারুম না?
‘ নাহ। বিয়ে মানে বুঝো? আমি অনেক দূরে চলে যাব মাহিদ ভাই। তুমি ডাকলে ও আসতে পারব না।
‘ আমি যাইতে দিমুনা। আরেহ তোরে ছাড়া আমার চলে নাকি? যাইস না। যাহ তোরে আর মারুম না।
‘ কথাগুলো চোখ খুলে বলো।
মাহিদ আর জবাব দিল না। পিহু ডাকল
‘ ঘুমাচ্ছ কেন? কথা বলো। মাহিদ ভাই? আমি কিন্তু চলে যাচ্ছি।
মাহিদ কপালে রাখা হাতটা ভালোভাবে চেপে ধরলো। বিড়বিড় করে বলল
‘ নাহ। তোরে ছাড়া আমার চলবো না।
______
পিহু আর ছিকুকে যেতে দিল না নীরা। রিপ দুপুরের দিকে বাড়ি ফিরলো। পিহুকে বলল, থেকে যাও মামা। পরে যেও।
আদি ফোন করলো তখনি।
‘ মাহির জ্বর কমেছে?
রিপ বলল
‘ খানিকটা।
‘ না কমলে আরেকটা এন্টিবায়োটিক দিতে বলসি রাতে। ইনশাআল্লাহ কমে যাবে। আর আমাকে আপডেট জানাস।
রিপ বলল
‘ ঠিক আছে। ইশুকে বলিস পিহু আর ছিকুভাই যাচ্ছেনা আজ।
‘ ওকে।
সারাটাদিন বিছানায় ছিল মাহিদ। নিনিত ও ফোন করেছে এরমধ্যে। নীরার কিছু ভালো লাগছেনা। তার দৌড়াদৌড়ি করা বাচ্চাটা বিছানায় পড়ে আছে। সন্ধ্যার দিকে মাথা তুলতে পারলো মাহিদ। জ্বর তখনো আছে। গা পুড়ে যাচ্ছে।
ছিকু এসে তার পাশে বসলো। বলল
‘ মিহির অচুখ চলি যায়নি কেন?
মাহিদ হাসলো। তাকে বসালো কোলের উপর। বলল
‘ তোর খালা কোথায়?
‘ খালা নাই কেন?
‘ কোথায়?
ছিকু হাত ঘুরিয়ে বলল
‘ নাই।
মাহিদের কোল থেকে নেমে গেল ছিকু। দরজার কাছে গিয়ে বলল
‘ পিহু মিহির সাথি লুকুলুকি খেলে কেন?
মাহিদ দাঁড়াতেই যাচ্ছিল। ছিকু খিকখিক করে হেসে একদৌড় দিল।
পিহু রান্নাঘরে। মুনা আর নীরার কাজ দেখছে। যেমন সে বাড়িতে ও ইশা,রাইনা আর পরীর কাজ দেখে। মুনা বলল
‘ রান্না পারো আম্মু?
‘ ভাত আর চা পারি মামি । ডিম উল্টাতে পারিনা। মাছ মাংস পারিনা।
মুনা হেসে ফেলল। ওসব করতে করতে শিখে ফেলবে। মেয়েরা পারেনা এমন কোনো কাজ নেই।
নীরা বলল
‘ মাহির জন্য একটু চা দেই। গরম গরম খেলে ভালো লাগবে। পিহুর হাতের চা খাই আজকে?
পিহু খুশি হয়ে বলল
‘ সত্যি? তাহলে বানাই। খাবে?
‘ ওমা খাব না কেন?
পিহু নিজের হাতে চা বানালো। নীরা টেস্ট করে বলল, দারুণ হয়েছে। যাও তোমার ছোট মামাকে দিয়ে এসো।
পিহু নিয়ে গেল। ঘরের সামনে গিয়ে বলল
‘ আসব মামা?
রিপ ঘাড় ঘুরিয়ে তাকালো।
‘ হ্যা আসো আসো।
পিহু টেবিলে চা রাখলো। রিপ পেয়ালায় চুমুক দিয়ে পিহুর দিকে তাকালো।
‘ ডিফারেন্ট টেস্ট। তুমি করেছ?
পিহু হাসলো।
‘ বসো।
পিহু ল্যাপটপে চোখ রেখে বলল, কি কাজ করছিলে মামা?
ডকুমেন্টসগুলো দেখছিলাম। আর এই ফাইলের সাথে ম্যাচ করে কিনা দেখছিলাম।
পিহু বলল
‘ আমি দেখি।
‘ পারবে। ওগুলো তেমন জটিল কোনো কাজ না।
পিহু ডকুমেন্টসগুলো পড়তে পড়তে বলল
‘ তুমি কোর্টে কিভাবে রায় দাও মামা? দুই পক্ষের প্রত্যেকটা এভিডেন্সগুলো খুবই শক্ত।
‘ হ্যা। একপক্ষ তো অবশ্যই দোষী। আর আমরা চোখে যেটা দেখি সেটা সবসময় সত্যি হয় না। আর যেটা দেখিনা সেটাই সত্যি হয়। তবে আইন সবসময় প্রমাণের উপর ভিত্তি করে রায় দিতে বলে । তাই সেক্ষেত্রে আমার সন্দেহ হলেও কিছু করার থাকেনা। তবে আমার যাকে সন্দেহ হয় তার বিপরীত পক্ষকে সবার অগোচরে সাপোর্ট করি। যাতে সঠিক প্রমাণ খুঁজে পায়।
‘ ওহহহ। অনেক টাফ সাবজেক্ট।
‘ হুম। তোমার পড়াশোনার কি অবস্থা?
‘ চলছে। ফোর্থ ইয়ারের প্রিপারেশন শুরু করব।
রিপের কয়েকটা কাজ পিহুই করে দিল। কিছু নোট করার দরকার ছিল ওগুলো ও পিহু করে দিল। নীরা এসে বলল
‘ গল্পগুজব শেষ হলো মামা ভাগিনার?
রিপ বলল
‘ আজ তোমার বকা আমায় শুনতে হবে না।
পিহু লিখতে লিখতে বলল
‘ মামি তোমাকে বকে?
নীরা বলল
‘ একদম ফালতু কথা। আমি খুব ভালো।
পিহু হেসে উঠলো। বলল
‘ বড়মা আর বড়পাপাও সারাক্ষণ কথা কাটাকাটির তালে থাকে।
রিপ পিহুর লিখা দেখলো। নীরা বলল
‘ মাইশার সাথে এখনি কথা বলে আসছি। মাহির কথা জিজ্ঞেস করছিল। ওর জ্বর কমছে কিনা জিজ্ঞেস করছিলো।
রিপ পিহুর দিকে তাকালো। বলল
‘ মাইশা আসলে আমার কাজগুলো ও করে দিতে পারবে।
পিহু লিখা থামাতে গিয়েও থামালো না। লিখতেই লাগলো। রিপ বলল
‘ মামা তোমার হাত ব্যাথা করবে। বাকিগুলো আমি লিখব।
‘ আমি এর চাইতে ও বেশি লিখি মামা।
পিহুর গলায় তেজ। নীরা তার মাথায় হাত বুলিয়ে বলল
‘ নিয়াজ সাহেব কপাল করে এমন একটা ছেলের বউ পাবে।
পিহু উঠে দাঁড়ালো। কলম রেখে যেতে যেতে বলল
‘ হয়েছে। আমার গুনগান কাউকে গাইতে হবে না আর। মাইশা বেশি ভালো।
পিহু বেরিয়ে যেতেই রিপ হেসে উঠলো। খাতার লিখাগুলোর দিকে তাকিয়ে বলল
‘ মাইশা বেশি ভালো নীরা। তাই না?
নীরাও হেসে উঠলো।
হনহনিয়ে যেতে যেতে মাহিদের ঘরের কাছে গিয়ে থামলো পিহু। চোখে টলমল করছে জল। চোখ চেপে মুছলো সে। দেখলো মাহিদ ঘরে নেই।
পিহু বারান্দায় পা রাখতেই দেখলো মাহিদ বারান্দায় দাঁড়িয়ে রয়েছে। নয়নতারার পাতাগুলো দুলছে গ্রিলের সাথে। মাহিদ তার উপস্থিতি টের পেয়ে পেছন ফিরলো। মজা করে বলল
‘ ভাবলাম তুই শ্বশুরবাড়ি পালিয়েছিস।
পিহু তেড়ে গিয়ে বুকে ধাক্কা দিল। মাহিদ এক পা ও নড়লো না। হাসলো বরঞ্চ। পিহু ফুঁপিয়ে উঠে বলল
‘ সবার মতো তুমিও মজার তালে থাকো। আমি কাউকে বলে বলে যাব না। এমন ভাবে যাব কেউ টেরও পাবেনা।
মাহিদ আবার ও হাসলো। পিহুকে টেনে মাথা বুকে রাখলো। মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলল
‘ তোরে কোথাও যাইতে দিতাম না বাপ।
ছিকু এসে কোমরে হাত দিয়ে দাঁড়ালো। নাক ফুলিয়ে গাল ফুলিয়ে বলল
‘ কেন? মিহি পিহুকে জড়িয়ে ধচচে কেন? পিহু কাঁদে কেন?
চলবে,