মন গোপনের কথা পর্ব-১৮+১৯

0
1067

#মন_গোপনের_কথা
#পর্ব_১৮
লেখনীতে, পুষ্পিতা প্রিমা

নিশিতার সাজগোছ শেষ। তার কোলের উপর ছিকু বসে আছে। সে সন্দেশ খাচ্ছে। দু হাতে দু পিস সন্দেশ। খেতে খেতে নিশিতার দিকে চোখ তুলে চাইলো। নিশিতা তার গালে টাপুস করে আদর দিয়ে বলল

‘ কি দেখে রাহিয়ান সাহেব?

‘ বুউ দিখি। নিচি বুউ কেন?

নিশিতা হাসলো। বলল

‘ নিচি বউ কেন এটা ও বলতে হবে?

‘ বলবে না কেন?

নিশিতা আবার ও হাসলো। ছিকু তার দিকে সন্দেশ বাড়িয়ে দিয়ে বলল

” সন্দেচ খাওনা কেন?

নিশিতা একটুখানি খেল। বলল

‘ ইয়াম্মি।

ছিকু কপাল কুঁচকে বলল,

‘ মুজা মুজা বলোনা কেন?

নিশিতা হেসে চেয়ারে বসে থাকা পিহুর দিকে তাকালো। মনমরা হয়ে বসে রয়েছে পিহু । নিশিতা বলল

‘ ওই তোর আবার কি হলো? মুখটা বাংলা পাঁচের মতো করে রেখেছিস কেন?

মাইশা চোখ তুলে তাকালো। পিহু চমকালো। বলল

‘ হ্যা?

নিশিতা বলল

‘ মন খারাপ কেন?

পিহু অপ্রস্তুত হাসার চেষ্টা করলো। বলল

‘ নাহ এমনি। তুই চলে যাচ্ছিস তাই খারাপ লাগছে।

‘ বাকিরা তো আছে। মিমি, ঝুমা। আরেহ চিন্তা নাই দোস্ত আমরা তো হসপিটালের পেছনে বাসা নেব। ওখানে থাকবো। রোজ দেখা হবে ইয়ার।

‘ তারপরও।

ছিকু ড্যাবড্যাব চোখে তাকালো পিহুর দিকে। নিশিতার কোল থেকে নেমে পিহুর কাছে গেল। পিহুর তার দিকে চোখ নিচে নামিয়ে তাকালো। বলল

‘ আব্বা কি দেখে ?

‘ পিহুর মন খারাপ কেন?

পিহু হাসলো। মুখ নিচে নামিয়ে ছিকুর গালে আদর দিয়ে বলল

‘ এই তো হাসলাম।

ছিকু সন্দেশ বাড়িয়ে দিল। পিহু একটুখানি খেয়ে বলল

‘ খুব মজা।

ছিকু দু’পাশে মাথা দুলিয়ে বলল

‘ মুজা মুজা।

রেহান আর পরী আসলো তখন। নিশিতা দাঁড়িয়ে পড়লো। পরী বলল, বসো বসো। রাহি কোথায়?

ছিকু গোলগাল চোখ করে তাকালো। রেহান হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলল

‘ কাম কাম।

ছিকু দৌড়ে গেল। রেহান তাকে কোলে তুলে গালে ঠোঁট চেপে বলল

‘ আপনি আন্টিদের সাথে কি করছেন পাপা ?

‘ নিচি, পিহু, মাইচা আন্তি কেন?

সবাই হেসে উঠলো একসাথে। রেহান হেসে বলল

‘ সবাইকে নাম ধরে ডাকে এই ছেলে। নাম ধরে ডাকা ভালো না তো।

‘ কেন ভালু না কেন?

বলেই আবার সন্দেশ খেল ছিকু। পরী বলল

‘ সারাক্ষণ মিষ্টি খাচ্ছে। পেট ব্যাথা করলে আমি নেই।

‘ কেন পরী নেই কেন?

সবাই আরেকদফা হাসলো। নিশিতা বলল

‘ উফ এই গুলুমুলুটাকে কি করতে যে ইচ্ছে করে!

রেহান বলল

‘ তোমরা সবাই মিলে আমার ছেলের সাথে এমন করলে হবে?

‘ এমন করব না মানে। আমি আপনার ছেলেকে মেয়ে জামাই বানাবো। হু।

নিশিতা কথায় সবাই হাসলো। ছিকু বলল

‘ কেন মিয়ে জামাই বানিবে কেন?

‘ বানাবো না? এত সুন্দর কিউট একটা ছেড়া আপনে। নো নো আমি এই সুযোগ হাতছাড়া করব না রেহান ভাইয়া। খবরদার আমার মেয়ে জামাইকে অন্য কারো হাতে তুলে দেবেন না।

পিহু বলল

‘ আল্লাহ! আমার কলিজার বউ? কলিজা জামাই হবে? না না আমার কলিজা ছোটই থাক। বড় হওয়া লাগবেনা। বড় হয়ে গেলে আমি আদর দেব কাকে?

ছিকু কি বুঝলো কে জানে? খিকখিক করে হাসলো দাঁত দেখিয়ে। পরী বলল

‘ ওমা? আপনি হাসছেন কেন? কাতুকুতু কে দিল?

‘ ভূতে কুতুকুতু দিচে কেন?

আরেকদফা হাসির ফোয়ারা বয়ে গেল সেখানে।

__________

অনেক মানুষের সমাগম পুরো বাড়িটাতে। নীরা মাহিদকে খুঁজে পাচ্ছে না। কি খেয়ে দেয়েছে কে জানে? দেখা ও দেয় না।
হাঁটতে নিশিতার ঘরে বেয়ে যেতেই পাশের একটা ঘরে দেখলো নিনিত তার মামিদের সাথে কথা বলছে। মাঝেমধ্যে সেখানে হাসাহাসি ও হচ্ছে। নীরা উঁকি দিল। দেখলো সেখানে পিহু ও আছে। হয়ত মামিদের সাথে পিহুর পরিচয় করিয়ে দিচ্ছে নিনিত। নীরাকে উঁকি দিতে দেখলো নিনিত। বলল

‘ আরেহ আন্টি ভেতরে আসুন না। আসুন।

নীরা অপ্রস্তুত হাসলো। বলল

‘ মাহিটা যে কোথায়? তাকে একবারও দেখতে পেলাম না আব্বা। তুমি দেখছ?

‘ হ্যা। আমি তো কিছুক্ষণ আগেই এলাম। বাইরে স্টেজ সাজাচ্ছে ওরা সবাই মিলে। আমরা সবাই মিলে কিছুক্ষণ আগেই খাওয়াদাওয়া করেছি। চিন্তা নেই।

নীরা স্বস্তি পেল। বলল

‘ আচ্ছা আচ্ছা। পিহু কি করে এখানে?

পিহু তাকালো। কিছু বলতে যাওয়ার আগেই নিনিত বলল

‘ মামিরা ওকে দেখতে চেয়েছিল তাই নিয়ে এলাম। পিহুকে দরকার?

নীরা বলল

‘ না না। থাক। কথা বলুক। আমি আসি। হ্যা?

‘ আচ্ছা।

নীরা চলে গেল। নিনিত বলল

‘ আরিশা তুমি থাকো। কথাবার্তা বলো। আমি আসছি। দেখে আসি কাজ কতটুকু গড়ালো। শেষের দিকে সব।

পিহু মাথা নাড়ালো। নিনিত যেতেই নিনিতের মামি পিহুর থুঁতনি তুলে ধরে বলল

‘ ওই পুঁই কালারের শাড়ি পড়া মহিলাটি কি তোমার মা?

‘ জ্বি।

‘ ওহ। আমাদের সাথে কথা বললো তো। মা মেয়ের চেহারার মিল আছে। ওই ছোট বাচ্চার মা এটা তোমার আপু?

‘ হ্যা আমার বড় বোন। আর ওনার পাশেরটা তার বর। আমার দাভাই।

‘ ওহ আচ্ছা। এখন যে এল উনি তোমার মামি না?

‘ জ্বি। একটা কথা বলি? কিছু মনে করোনা কেমন?

‘ বলুন না। তোমার আপু তোমার বড় মামিকে মা ডাকে কেন?

পিহু একটু ভড়কে গেল। একদৃষ্টে চেয়ে থেকে কিছু ভাবলো কিছুক্ষণ। তারপর বলল

‘ আমার আপু ওখানে বড় হয়েছে। তাই মা ডাকে। আর বড় মামাকে বাবা ডাকে।

‘ ওহহ।

‘ অনেক হাসিখুশি সুন্দর পরিবার তোমাদের। আজকাল অমন দেখা যায় না। তুমি ও অনেক আদুরে একটা মেয়ে। আমার ননদ একদম পারফেক্ট ছেলের বউ পছন্দ করেছে। আমরা খুব খুশি হয়েছি। যাক তোমার বাবা ও ডাক্তার, জামাই ও ডাক্তার। তুমি ও ডাক্তার। সব মিলে ছক্কা।

পিহু একটু মলিন হাসলো। বলল

‘ আচ্ছা আপনারা বসুন। আমি নিশুর কাছে যাই। ওকে এখন বের করবে বোধহয়।

‘ আচ্ছা যাও।

পিহু বেরিয়ে এল। বুকটা ভীষণ রকম ভার হয়ে আছে। অবর্ণনীয় যন্ত্রণাগুলো গলায় কাঁটার মতো বিঁধছে। এই যন্ত্রণা থেকে কবে মুক্তি মিলবে তার? কেন জেনেশুনে এক ভয়ানক বিষমানবকে ভালোবাসতে গেল সে? না ভুলে থাকা যায়, না ঘৃণা করা যায়।
মাঝেমাঝে মনে হয় তাকে খুব ভালোবাসে মাহিদ ভাই, আবার মাঝেমাঝে মনে হয় পিহু ভালোবাসা পাওয়ার মতো কেউ না। দুটো চোখে অতরকম ভাষা কি করে হতে পারে? বোধহয় সব পিহুরই ভুল। তবে কি তার মাহিদ ভাইকে ভালোবাসাটা ভুল? তার ডাক্তারকেই ভালোবাসা উচিত ছিল বোধহয়। অন্তত দিনশেষ এত দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে আসতো না। ভালোবাসা শব্দটা এত তিক্ত হয়ে উঠতো না। রোজ রোজ এভাবে দুমড়েমুচড়ে মরতে হতো না। জেনেশুনে বিষ পান বোধহয় একেই বলে।
প্রসাধনীর প্রলেপের উপর কয়েকটা জল জমে গেছে ইতোমধ্যে। কে যেন পিহুর হাত ধরে ডাকা শুরু করলো। পিহু চমকে উঠলো।

‘ কে?

‘ আমি। মাইশা। তুমি এখানে দাঁড়িয়ে আছ কেন? সবাই খুঁজছে তোমাকে। চলো।

পিহু তাকিয়ে থাকলো মাইশার দিকে। আশ্চর্য একটা কথা তো তার মাথায় আসেনি। মাহিদ ভাই বিষমানব সবার ক্ষেত্রে নয়। এই মেয়েটার ক্ষেত্রে একদমই নয় ৷ এই মেয়োটার সাথে সবসময় ঝগড়া হয় না। কথা কাটাকাটি লাগেনা। মনোমালিন্য হয় না। তাহলে সব তার সাথে কেন হয়?

‘ কি দেখছ?

‘ হ্যা?

‘ ওভাবে কি দেখছ?

পিহু তোতলালো। বলল

‘ কই না তো। চলুন।

পিহু হেঁটে গেল। মাইশা তার চলে যাওয়া দেখলো। তারপর নিজেও সেদিকে পা বাড়ালো।

____________

স্টেজ সাজানোর কাজ শেষ। নিশিতাকে নিয়ে যাওয়ার জন্য তৈরি করতে বলা হয়েছে। পিহু নানারকম আইটেম গুলোর ঢালা চেক করে নিয়ে সবার হাতে এক একটা ঢালা দিল। ছিকু দৌড়ে দৌড়ে আসলো। পিহুর কাছে এসে থামলো। কোমরে হাত রেখে দাঁড়ালো। পড়নে তার লাল সাদা ডোরাকাটা টি শার্ট। কালো থ্রি কোয়াটার প্যান্ট। পড়নে সাদা কালো কেডস৷ পিহু ডাকল

‘ কলিজা?

‘ উম।

‘ কি চাই আপনার।

‘ ইটা।

ঢালার দিকে আঙুল দেখিয়ে দিল সে। পিহু হেসে বলল ঢালা নিবেন?

‘ হ্যা নিব না কেন?

পিহু তাকে একটি ফুলের হালকা ভারের ঢালা দিল। ছিকু সেটি নিল। বলল

‘ মিচতি দাও না কেন?

পিহু হেসে ফেলল। বলল

‘ মিষ্টির ঢালা তো অনেক ভার কলিজা। আপনি ক্যারি করতে পারবেন না।

‘ কেন পারব না কেন?

পিহু হাসলো। মাইশা একটি ঢালা তিনটা মিষ্টি রেখে ঢালাটি ছিকুকে দিল। বলল

‘ আপনি এইবার নিতে পারবেন বাবু।

ছিকু খুশি হলো। ঢালাটি নিয়ে মাইশাকে বলল

‘ মিচতি কম কেন? বিশিবিশি নাই কেন?

মাইশা কপাল চাপড়ে বলল

‘ হায় আল্লাহ এই ছেলে তো একদম পেকে গেছে পিহু।

পিহু হাসলো। ছিকুর ঢালায় আরেকটি মিষ্টি দিয়ে বলল

‘ এখন বিশিবিশি হয়েছে আব্বা৷

ছিকু দাঁত দেখিয়ে হাসলো পিহু তার মাথায় মুখে হাত বুলিয়ে আদর করে বলল

‘ চলেন।

ছিকু পিহুর সাথে সাথে হাঁটলো। ইশা মুনা নীরা তাকে দেখে হাসলো। পরী রেহানকে বলল

‘ দেখেছেন ছেলের কান্ড? সবার সাথে সাথে তার ও তাল মিলাতে হবে।

‘ পিহু যা করবে। ওর ও তা করতেই হবে।

নিচে যাওয়ার সাথে সাথে কোথা থেকে মাহিদ এসে পেছন থেকে ছিকুকে কোলে তুলে নিল পিহুর পাশ থেকে। ছিকুর হাতে তখনও ঢালাটি ধরা। সে রেগে গেল। বলল

‘ মিহি এখুন কুলে নিচে কেন? মিচতি পড়ি যাবে কেন?

মাহিদ তার গালে টাপুসটুপুস আদর বসিয়ে বলল

‘ শালা মিষ্টি দে। মিষ্টি খামু।

বলেই একটি মিষ্টি খপ করে গালে ভেতর পাচার করে দিল। ছিকু চেঁচিয়ে উঠে বলল

‘ মিহি মিচতি খায় ফিলছে কেন?

মাহিদ তার গালে মিষ্টির অর্ধেক ঢুকিয়ে দিল। ছিকু আর কথা বলতো পারলো না। মাহিদের দিকে তাকিয়ে থাকলো। মাহিদ হাসলো। ছিকু আর না পেরে হেসে দিল। মিষ্টি খেতে খেতে কি কি সব বলতে লাগলো অস্পষ্ট ভাবে। মাইশাকে দেখে বলল

‘ আপনাকে তো দেখাটেকা যাচ্ছে না। কি অবস্থা?

‘ আমি তো এখানেই আছি। আপনাকেই তো দেখা যাচ্ছে না। আন্টি ও খুঁজছিল আপনাকে।

‘ আমি ওখানেই ছিলাম। স্টেজ সাজাচ্ছিলাম। ঠিক আছে। এনজয় করুন। আমি ছিকুকে নিয়ে যাই।

বলেই মাহিদ ছিকুকে নিয়ে চলে গেল। ছিকু যেতে যেতে বলল

‘ মিহি পিহুর সাথে কথা বলেনা কেন?

মাহিদ তার গাল নিজের গাল দিয়ে চেপে ধরে বলল

‘ চুপ থাক বাপ।

‘ কেন চুপ থাকবো কেন?

মাহিদ তাকে নিয়ে গিয়ে স্টেজে বসিয়ে দিল। নিশিতাকে ও সেখানে বসানো হলো। নিশিতা তাকে একহাত দিয়ে ধরে রেখে বলল

‘ রাহি সাহেব কি কি খাবেন?

ছিকু কেক দেখিয়ে বলল

‘ ওটা খাব।

নিশিতা কেক কেটে তাকে খাইয়ে দিল সবার প্রথমে। ছিকুকে দিয়ে শুরু হলো অনুষ্ঠান। পিহু এসে ছিকুর পাশে বসলো। আরেকটা কেক কেটে ছিকুর হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলল

‘ নিচিকে খাইয়ে দেন।

ছিকু সেটা নিয়ে নিশিতাকে খাইয়ে দিল। নিশিতা তার ছোট আঙুলগুলো কামড়ে ধরলো। ছিকু চেঁচিয়ে বলল

‘ ও বাপ নিচি ইমুন করে কেন? কামুড় দেয় কেন? নিচি রাক্ষুচী কেন?

স্টেজের নিচে অবস্থান করা সবাই হেসে ফেলল।
নিশিতা পিহুকে ও বসিয়ে রাখলো তার পাশে। তারপর নিনিতকে ডেকে বলল

‘ ভাইয়া তাড়াতাড়ি আসো।

নিনিত বলল

‘ এখন না। কাজ আছে আমার।

বলেই চলে যেতে যাচ্ছিল। নিশিতা বলল

‘ ধুর তাড়াতাড়ি আসো না। আসো আসো। আসো না?

নিনিত আর না পেরে গেল। নিশিতা তাকে পাশে বসিয়ে বলল, হেই ক্যামেরাম্যান! মাহিদ ভাই, তপু ভাই, ছবি তুলো ভালো করে। মাহিদ ঘাড় ঘুরিয়ে তাকালো না। তপুকে বলল

‘ ছবি তুলে নে তো।

নীরা তাকে ছুটে এল। বলল

‘ কোথায় ছিলি আব্বা? তোকে আমি খুঁজছিলাম। কি খেয়েছিস?

‘ ওসব নিয়ে চিন্তা করতে হবে না।

নীরা হেসে তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিল। বলল

‘ ওই দেখ পিহু আর নিনিত। কি সুন্দর লাগতেছে দুইজনকে।

মাহিদ তাকালো না।

‘ তুই আর মাইশা ও ছবি তোল। দাঁড়া আমি মাইশাকে ডাকি। দাঁড়া।

মাহিদ চুপ করে থাকলো। নীরা গিয়ে মাইশাকে ধরে আনলো কিন্তু মাহিদকে সেখানে আর নেই। তাকে আর খুঁজে পাওয়া গেল না।

নীরা তপুকে বলল

‘ মাহি কোথায় গেল রে তপু?

তপু বলল

‘ এখানেই তো ছিল আন্টি। তোমার ছেলেটা ভূতের মতো। এই আছে এই নেই।

নীরা চিন্তিত হলো। ইশা এসে বলল

‘ কি হয়েছে রে নীরু?

‘ মাহিটা হুট করে কোথায় যেন চলে গেল ইশু। মাইশার সাথে কয়েকটা ছবি নিতে বলছিলাম।

‘ মাহি বোধহয় লজ্জা পাইছে। তোর ছেলেটাকে বুঝা যায় না।

‘ একদম বাপের মতো।

ইশা হাসলো। বলল

‘ কপাল করে এমন মানুষ পেয়েছিস।

নীরা বলল

‘ ঠিক ঠিক।

বলেই দুজনেই হেসে উঠলো একসাথে।

______________

পিহু স্টেজ থেকে নেমে ছিকুকে খুঁজছে। কিন্তু পাচ্ছে না। পরীর কাছে গেল। পরী বলল

‘ রাহি তো আমার কাছেও আসেনি। তোমার দাভাইয়ের কাছে ও নেই।

রেহান বলল

‘ চিন্তা নেই। ও মাহিদের কাছে। ফোন দিয়ে জেনে নাও।

পরী সাথে সাথে ফোন দিল। ওপাশ থেকে মাহিদ বলল ছিকু তার সাথে আছে। রেহান বলল, দেখেছ? আমি ঠিক বলিনি।
পরী হাসলো। পিহুকে বলল

‘ ওকে ছাড়া সময় কাটেনা তোমার? বিয়ে হয়ে গেলে তখন কি করবে?

পিহু চোখ তুলে তাকালো। প্রচন্ড মন খারাপ নিয়ে বলল

‘ কেন? আমার সাথে নিয়ে যাব। ওর ভাত কি কম পড়ে যাবে?

পরী তার গাল টেনে দিয়ে বলল

‘ রাগ করছ কেন? মজা করছিলাম। আজ তোমার খুব কিউট লাগছে। তাই না?

রেহান বলল

‘ আসলেই। সেটা আমরা বললে হবে? ডাক্তার বাবু বলেছে তো?

পিহু কপাল কুঁচকে তাকালো। ধ্যাত বলে চলে গেল সেখান থেকে। রেহান বলল

‘ এই কি হলো? পিহু?

পরী বলল

‘ লজ্জা পেয়েছে। আপনি না ভাই? ওভাবে বললেন কেন?

‘ আমাকে লজ্জা পাওয়ার কি আছে?

_____________

অনেক রাত হয়েছে। অনুষ্ঠান মাঝপথে। কিছুক্ষণ পর থেকে নিশিতাকে মেহেদী লাগানো হবে। মাহিদ ছিকুকে নিয়ে আসলো। এসেই চেপে বসলো নিশিতার পাশে। মাথা চাপড়ে দিয়ে বলল

‘ কেক আর কাউরে দিতাম না বাপ। সব আমি আর আমার ভাগিনা মিলে খামু। তোরা অনেক খাইছোস।

নিশিতা মাথার পেছনে চেপে ধরে বলল

‘ আল্লায় জানে পিহুনি তোমার মাইর কেমনে খায় এত? একটাতে আমি বেহুশ। লাগছে মাহিদ ভাই।

‘ ঢং করিস না বাপ। তাড়াতাড়ি কেক কাট।

‘ দাঁড়াও আমি কাউরে ডাকি। মাইশাকে ডাকি?

‘ নাহ।

ছিকু এত কথাটথার মুডে নেই। সে কেক খাবে। ডান হাত কেকের উপর বসিয়ে একমুঠ নিয়ে ফেলল। তারপর গালে দিল। গালের সাথে লেগে গেল সব কেক। সবাই হো হো করে হেসে উঠলো। ছিকু কেক খেতে খেতে সবার দিকে বোকাসোকা চোখে তাকালো। বলল

‘ চবাই হাচে কেন? ছিকুর নজ্জা করে কেন?

বলেই হাত দিয়ে মুখ ঢাকলো সে। ডান হাতের সব কেক মুখে লেগে গেল। নিশিতা আর ও কিছু নিয়ে ছিকুর সারামুখে লাগিয়ে দিল। ছিকু কান্না করে দিবে এমন অবস্থা। মাহিদ কেক কেটে নিজে নিজে খেয়ে নিল। নিশিতাকে বলল

‘ তুই অনেক খাইছোস। এবার রেস্ট নে শালী।

খেয়ে আরেকটু কেটে সেটি হাতে নিয়ে নিশিতার গালের একপাশে লাগিয়ে দিল মাহিদ। নিশিতা চেঁচিয়ে উঠে বলল

‘ ইননা খেলব না আমি। এটা কি হলো? মাহিদ ভাই এটা কি করলে?

নাকিসুরে কাঁদতে লাগলো নিশিতা। তারপর সুযোগ বুঝে কেক নিয়ে মাহিদের দুগালে বসিয়ে ঘষে দিল নাকেমুখে। মাহিদ শেষ। ছিকু খুশিতে লাফ দিয়ে উঠলো। মাহিদের কোলে উঠে বসলো। নিজের মুখ মাহিদের মুখের সাথে ঘষা মেরে বলল

‘ মিহি ছিকুর সাথে ভূত হয়ে গেছে কেন? কেন বাপ কেন?

নিশিতা হাসলো। আরেক পিস কেক নিয়ে ছিকুকে দিল। ছিকু সেটি একটু করে খেয়ে দুহাতে মেখে নিল। সুন্দর করে মাহিদের মুখে প্রলেপ দিতে দিতে বলল

‘ মিহি ভূত কেন ? ছিকুর মুতো ভূত কেন? মিহিকে ভয় লাগে কেন?

মাহিদ সর্বশেষে বলল

‘ তোর কাম শেষ হয়ছে শালা?

নিনিত এসে এসব দেখে বলল, হায় হায় এসব কি?

নিশিতা টিস্যু দিয়ে গালের এক পাশটা মুছতে মুছতে বলল

‘ মাহিদ ভাই আর কি।

ছিকু মাহিদকে ভূত বানিয়ে দিল। অন্যদিকে নাচগান হচ্ছে। নিশিতার ছোট ছোট মামাতো বোনগুলো নাচছে। ছিকু সেখানে চলে গেল দৌড়ে দৌড়ে। তাদের মাঝখানে ঢুকে পড়ে নাচতে লাগলো হাত তুলে পা তুলে।

‘ অ্যারে দেদে দে দে দে দে ইয়া হাম তুচচে লে লে।
চিটি মার চিটি মার চিটি মার চিটি মার চিটি মার।

পরী তাকে ডাক দিয়ে বলল

‘ সোনা পড়ে যাবে। চলে এসো।

ছিকু চেঁচিয়ে চেঁচিয়ে বলল

‘ মার চিটি, মার চিটি, মার চিটি, মার চিটি মার।
পরীর সাথে সাথে সবাই হেসে উঠলো।

মুখের কেক ধোয়ার জন্য ওয়াশরুমের দিকে পা বাড়ালো মাহিদ। নিকিতা বেগমের সাথে দেখা পথে। তিনি বললেন

‘ তোর একি অবস্থা রে মাহিদ?

‘ আগে মুখ ধুয়ে আসি বাপ। এখন কোনো কথা বলতে পারুম না। সরো সরো।

‘ তুই কি হলি? না পুত, না ভূত।

বলেই হাসলেন তিনি। মাহিদ ওয়াশরুমের দিকে পা বাড়ালো। সেখানে পিহুর মুখোমুখি। কপাল কুঁচকে তাকালো পিহু। যেন মাহিদের এই রূপ দেখে সে বড়োই বিরক্ত। আঁড়চোখে পরখ করে কি যেন বিড়বিড় করলো সে। এইবার মাহিদ সরু চোখে তাকালো। সমস্যা কি?

পিহু দাঁড়াতে চাইলো না আর। চলে যেতেই শাড়ির আঁচলে টান পড়লো। পেছনে না ফিরেই গর্জে বলল

‘ শাড়িটা আমার না।

মাহিদ ছেড়ে দিল সাথেসাথে। দু গালে ভালোভাবে হাত ঘষলো। তারপর নিঃশব্দে হেঁটে এসে দাঁড়ালো পিহুর পেছনে। খুব কাছটায়। হাত দুটো নিয়ে গিয়ে সোজা পিহুর গালে বসিয়ে দিল। পিহু শিউরে উঠলো।
হাত দুটোর উপর নিজের হাত বসিয়ে শক্ত করে ধরে ছুঁড়ে ফেলল।
তারপর মাহিদের দিকে গরম চোখে তাকালো। যেন এখনি সব ভস্ম করে দেবে। তবে মুখ ফুটে কথা বললো না। মাহিদ বেশিকিছু করলো না আর। শুধু এগিয়ে গিয়ে তার গাল পিহুর দু গালে লাগালো৷
পিহু শক্ত হয়ে গেল৷ পিহুকে এই অবস্থায় দেখে আকাশ বাতাস কাঁপিয়ে হেসে উঠলো মাহিদ। হাসতে হাসতে তার হাত দুটো পিহুর গাল আকঁড়ে ধরলো। পিহু বিড়বিড়িয়ে রাগে কিড়মিড় করে বলল

‘ তোমার ছায়ায় আমার অস্বস্তি। ছোঁয়াতে মরণ। আমায় ছাড়ো মাহিদ ভাই।

মাহিদ ছাড়লো না। বরঞ্চ তখনই তার ভেজা ঔষ্ঠাধরের দীর্ঘ প্রত্যক্ষ চুম্বন চেপে বসলো পিহুর ললাটের চারপাশে। আর বন্ধ চোখের পাতায়।
আর কানে আসলো, আমি রোজ মরি, এবার তুই ও মরে যাহ।

চলবে,,,,,

#মন_গোপনের_কথা
#পর্ব_১৯
লেখনীতে, পুষ্পিতা প্রিমা

ছিকু কোমড়ে হাত দিয়ে দাঁড়ালো। কপালের মাঝখানে তার ভাঁজ। গালে কেক লেগে তো এমনিতেই ভূত সেজে আছে। ঠোঁট ফুলিয়ে বলল

‘ মিহি পিহুকে আদর কচচে কেন? ছিকুকে মারে কেন?

পিহু বন্ধ চোখ ঝট করে খুলে ফেলল। দূরে গিয়ে চমকে তাকালো ছিকুর দিকে। মাহিদের কোনো প্রতিক্রিয়া নেই। যেন সবই স্বাভাবিক। ছিকু আবার চিল্লিয়ে বলে উঠলো

‘ মিহি পিহুকে কেক লাগায় দিচে কেন?

পিহু চোখ বড় বড় করে তাকালো। মাহিদ হো হো করে হেসে উঠে ছিকুর কাছে গিয়ে পাঁজাখোলা করে কোলে তুলে নিল। পিহু সেই সুযোগে দৌড়ে পালালো। কি হলো এসব? তার হৃৎস্পন্দন দ্রুত হচ্ছে। ঘেমে উঠেছে পিহু।
ছিকুর গালে ঠাসঠুস করে মারলো মাহিদ। বলল

‘ তুই শালা সবসময় আমার পেছনে পইড়া থাকোস ক্যান? তোর লাগি কি পেরেম টেরেম করতে পারুম না বাপ? তুই শালারে এত কথায় হয় না ক্যান?

ছিকু নাক ফুলিয়ে বলল

‘ পিহুকে আদর কচচো কেন? ছিকুকে আদর করোনা কেন? মারো কেন? ছিকু দুক্কু পায় কেন?

মাহিদ তার গালে চুমু খেল। ছোটখাটো কামড় বসিয়ে দিয়ে বলল

‘ যাহ বাপ আদর করলাম। তুই তোর খালার লগে জিতাজিতি করতে আসোস কিল্লাই? তোরে এত আদর করি তারপরও তোরে কুলাইনা বাপ।

‘ কেন পিহু বাবু কেন? পিহু আদর খায় কেন?

মাহিদ কপাল চাপড়ালো। বলল

‘ শালারে শালা আর কইস না বাপ। আমার শরম লাগতাছে। হেব্বি শরম লাগতাছে।

‘ কেন ছরম লাগে কেন?

ছিকু বোকা বোকা চাহনি নিক্ষেপ করে প্রশ্নটা করলো।

মাহিদ হেসে ফেলল। তাকে ভালো জড়িয়ে ধরে তার গালের কেক ছিকুর গালে লাগিয়ে দিতে দিতে ওয়াশরুমে পা রাখলো। তারপর ছোট্ট মুখটা ভালো করে ধুয়ে দিল ঢলেঢলে। ছিকু মুখ ধুঁয়ে আয়নায় নিজেকে দেখে বলল

‘ ছিকু বিটিফুল কেন? মিহি ভূত কেন?

মাহিদ তার মুখ ধুলো। ফেইসওয়াশ দিতে দেখে ছিকুর রাগ হলো। বলল

‘ ছিকু ইটা দেয়নি কেন? মিহি দেয় কেন?

মাহিদ মুখ ধুয়ে হাত ঝাড়া মারলো ছিকুর মুখে। বলল

‘ চুপ থাক শালা। তোরে ফেসওয়াশ দিমুনা। তুই এগুলা দেওয়ার যোগ্য না। তুই এখনো পুটিমাছ।

‘ কেন? জুগ্য না কেন? ছিকু পুতিমাছ কেন?

মাহিদ আবার হাসলো আওয়াজ করে। ছিকুর পিঠ চাপড়ে দিয়ে বলল

‘ শালা তোর কেন কেন প্রশ্নের উত্তর এখনো আবিষ্কার হয়নি বাপ। তোর কেন কেন শুইনা মাঝেমাঝে আমার মইরা যাতে ইচ্ছা করে বাপ।

ছিকু কষ্ট পেল। মিহি তার জন্য মরি যাবে কেন? এতটা দুঃখ পেল যে তার কান্না কান্না পেল। চোখ পিটপিট করে একবার খুললো একবার বন্ধ করলো সে। মাহিদ বড় করে নিঃশ্বাস নিল। বলল

‘ ওরেবাপ তুই শালা এত নাটক পারোস। তোরে নিয়া আমি কই যামু কহ । তুই শালা এত রঙভঙ শিখছোস কোথা থেইকা?

ছিকু ঠোঁট উল্টে বলল

‘ মিহি মরি যাবে কেন?

মাহিদ হেসে ছিকুকে কোলে তুলে নিল। শক্ত করে জড়িয়ে ধরে কপালে, মাথায়, গালে চুমু দিয়ে বলল

‘ ওরেব্বাপ তুই তো আমারে দেখতে পারোস ভালা। যাহ তোরে ছাইড়া কোথাও যাইতাম না বাপ। মরি যাইতাম না।

ছিকু খুশি হলো। বলল

‘ মিহি গুডবয় কেন?

মাহিদ হেসে উঠলো হো হো করে। পরীর বাচ্চা ছিকু এত চালাক! শালারে কোনো কথা শিখায় দিতে হয় না।

___________________

নিশিতাকে মেহেদী পড়ানোর জন্য সবাই পিহুকে খুঁজছে। মাইশা একহাতে পড়াবে আর পিহু অন্যহাতে। কেউ যখন পিহুকে খুঁজে পেল না মাইশা বলল, আমি ওকে খুঁজে আনি।
নীরা বলল
‘ হ্যা হ্যা আম্মা একটু খুঁজে আনো। নিয়ে আসো ওকে।
ইশা বলল
‘ পিহুর কি হলো আজ?
মুনা বলল
‘ ওর কি শরীর খারাপ লাগছে নাকি। আমি ও খেয়াল করলাম কেমন মনমরা মনমরা আজ সারাদিন।
ইশা বলল
‘ সকালে তো ঠিকঠাক ছিল। ও এমনিতেই শরীর খারাপ করলে ও কাউকে বলেনা। আমাকেই দেখতে হয়।

পিহু তার দু গালে লেগে থাকা কেক মুছে বেরোতেই যাচ্ছিলো। গালের পাশে পানি লেগে থাকায় মাইশা তাকে দেখে ভুরু কুঁচকালো। বলল

‘ ওখানে পানি কেন?

পিহু তোতলাতে তোতলাতে বলল

‘ ছিকু কেক লাগিয়ে দিয়েছে ওর হাত থেকে তাই মুছে নিলাম।

মাইশা পিহুকে ধরে নিয়ে এল। সবাই তাকালো তার দিকে। পিহুর অস্বস্তি হচ্ছে। সে অনবরত ঘামছে। এই শাড়ি, প্রসাধনী তার অসহ্য লাগছে। খুলে ছুঁড়ে ফেলতে ইচ্ছে করছে।
ইশা এসে বলল,
‘ পিহু তোমার কি শরীর খারাপ লাগছে মা?
পিহু আমতাআমতা করতে করতে বলল
‘ না আম্মা। আমি তো ঠিক আছি। কেন?
ইশা তার মুখে হাত বুলালো। বলল
‘ শরীর খারাপ লাগলে বলো। হ্যা।
পিহু মাথা নাড়ালো। মাইশা তাকে ডাকলো। পিহু গিয়ে নিশিতার পাশে বসলো। মেহেদী পড়িয়ে দিতে দিতে বলল
‘ আমাকে এখানে থাকার জন্য জোর করিস নারে। আমাকে বাড়ি যেতে হবে।

‘ কেন কেন? আমি তোকে আর মাইশাকে ছাড়ব না। কিছুতেই না। কালকে আমার সাথে ক্লাবে যাবি। ব্যস।

পিহু বলল

‘ না মাইশা থাকুক না। আমাকে যেতে হবে রে। আমাকে কিছু মেডিসিন নিতে হবে।

‘ কি মেডিসিন? ভাইয়া আছে না? ভাইয়াকে বলব এনে দিতে। ডোন্ট ওয়ারি।

‘ আমি যাব। জোর করিস না দোস্ত।

নিশিতা মন খারাপ করে বসে থাকলো। মাইশা বলল

‘ আমাকে ও তো বাবার সাথে ফিরতে হবে। আমি তো থাকতে পারব না।

‘ যাও যাও। কাউকে লাগবেনা আমার।

মুখ গোঁমড়া করে বসে রইলো নিশিতা। পিহু মেহেদী পড়াতে পড়াতে আনমনা হয়ে গেল। মাইশার চোখ গেল সেদিকে। পিহুর হাতের দিকে একপলক তাকালো সে। তার কিছুক্ষণ পর নীরবতা ভেঙে দিয়ে বলল

‘ এনি প্রবলেম পিহু?

পিহু ধ্যান ভাঙলো। চমকে উঠে সে বলল

‘ কি?

মাইশা বলল

‘ তোমার ফুল নষ্ট হচ্ছে। মনোযোগ নেই বোধহয়।

পিহু তাড়াতাড়ি মেহেদী মুছে নিল। বলল

‘ হ্যা আর ভুল হবে না।

নিশিতা নিনিতকে ডাক দিল।

‘ ভাইয়া এদিকে আসো তাড়াতাড়ি।

নিনিত হাতের কাজ রেখে এগিয়ে এল। স্টেজের নিচে দাঁড়িয়ে বলল

‘ কি হয়েছে?

‘ পিহু,মাইশা নাকি চলে যাবে।

নিনিত কপাল কুঁচকালো। পিহু আমতাআমতা করতে করতে বলল

‘ আসলে স্যার আমার,,

নিনিত বলল

‘ বাসা থেকে কোনোকিছু আনতে হবে?

‘ হ্যা।

‘ তোমাকে যেতে হবে?

‘ হু।

‘ ঠিক আছে। এখন সবার সাথে বেরিয়ে পড়বে। আর কাল ঘুম থেকে উঠেই চলে আসবে যা লাগে তা নিয়ে। এবার খুশি নিশু?

নিশিতা মাইশার দিকে তাকালো। নিনিত বলল

‘ মাইশা ঠিক আছে আমার কথা? আপনাকে ও আসতে হবে।

মাইশা মাথা দুলালো। নিশিতা গাল ফুলানো কমালো। পিহু তার হাতে চিমটি কেটে বলল

‘ তোর সবসময় বাড়াবাড়ি।

নিশিতা হাসলো। মেহেদী পড়ানো শেষ হতে না হতেই মাহিদের সাথে ছিকু এল অনেকক্ষণ পর। ছিকুর দু হাতে দুটো বেলুন। খেলছে সে। পরী বলল

‘ এগুলো কে দিছে আব্বা?

‘ মিহি।

মাহিদ ফিসফিস করে বলল

‘ তোরে কিল্লাই এগুলা দিছি সেগুলো একমাত্র আমিই জানি।

ছিকু দাঁত দেখিয়ে হেসে পিহুকে ডাক দিল। বলল

‘ পিহু মিহিকে মিহিদি দেয় না কেন?

পিহু শুনে ও চোখ তুলে তাকালো না। হাত তরতর করে কাঁপতে কাঁপতে লাগলো তার। কোনোমতো আঁকা শেষ করে তাড়াতাড়ি স্টেজ থেকে নামলো সে। বাড়ির ভেতরে ঢুকে পড়লো দ্রুত। আদি আর রিপের সামনাসামনি পড়ে গেল তখনি। আদি বলল

‘ এভাবে দৌড়াচ্ছিলে কেন?

‘ আমরা কখন বেরোবো পাপা?

‘ এখন। তোমার মেহেদী পড়ানো শেষ হওয়ার অপেক্ষায় ছিলাম।

‘ আমার কাজ শেষ।

‘ ওকে। সবাইকে বলো। গাড়ি এক্ষুণি চলে আসবে।

রিপ বলল

‘ তুমি এভাবে ঘামছো কেন মামা?

পিহু তোতলাতে তোতলাতে বলল

‘ জানিনা এমনি বোধহয়।

‘ এমনি?

______________

গাড়ি এসে দাঁড়ালো দুই বাড়ির মানুষের জন্য। রিপ নীরা মুনা আর রিককে গাড়িতে বসিয়ে মাহিদের জন্য দাঁড়িয়ে থাকলো। আদি বলল
‘ উঠে পড়।
‘ মাহি আসেনি তো।
আদি ঘাড় ঘুরিয়ে পেছনে তাকালো। বলল
‘ মাহি কোথায়?
‘ আসবে। ছিকুর সাথে বোধহয়।
তখনি পিহু আর পরী এল। আদি বলল
‘ ওই গাড়িতে বসো তোমরা।
পিহু এদিকওদিক তাকিয়ে বলল
‘ মাইশারা কি চলে গিয়েছে পাপা?
রিপ বলল
‘ আমি ওকে আর ওর বাবাকে গাড়িতে তুলে দিয়েছি। তোমরা উঠে বসো। তোমাকে তো আবার তাড়াতাড়ি ফিরতে হবে।
পিহু গাড়িতে উঠে বসলো। মাহিদ ছিকুকে নিয়ে এল। ছিকু চেঁচিয়ে বলল,

‘ ছিকু মিহির সাথে যাবে কেন? মিহির সাথে ঘুম দেবে কেন?

পরী বলল

‘ না। আপনি সবাইকে জ্বালাবেন। দরকার নেই। চলে আসেন।

ছিকু মুখ কালো করে ফেলল। মাহিদ ইশারায় পরীকে বলল গাড়িতে উঠে বসো। পরী গাড়িতে উঠে বসলো। রাইনা পেছন থেকে বলল

‘ ওকে নিয়ে তাড়াতাড়ি গাড়ি ছেড়ে দিতে বল রেহান। তোর ছেলেটা দারুণ পাজি হয়েছে।

রেহান মাথা নাড়লো। ছিকুর কাছে গিয়ে হাত বাড়িয়ে বলল

‘ চলে আসেন। মিহি ঘুমাবে।

‘ নাহ।

ছিকু মাহিদের গলা আঁকড়ে ধরে রাখলো। মুখ গুঁজে রাখলো। সে যাবে না। মাহিদ বলল

‘ শালা আমার সুড়সুড়ি লাগতেছে বাপ। ছাড় আমারে। আমি তোর হাগুমুতু পরিষ্কার করতে পারুম না বাপ । যাহ তুই।

ছিকু তাকে ছাড়লো না । ওভাবেই বলল

‘ কেন যাব কেন? ছিকুর ঘুম পায় কেন?

রেহান ও ড্রাইভারের পাশে বসে পড়লো। আদি পরী পিহুর পাশে বসে বলল

‘ মাহি এদিকে নিয়ে এসো ওকে।

মাহিদ এগিয়ে গেল। ছিকুকে আদির কোলে দিতে বহু কষ্ট পোহাতে হলো। গাড়ি ছেড়ে দেওয়ার আগেই দেখলো পিহু চুপচাপ পাথরের ভঙ্গিতে বসে রয়েছে। কোনোদিকে তার হেলদোল নেই।

ছিকু চিৎকার করে হাত পা দুরুমদারুম নাচাতে নাচাতে কাঁদলো । পরী হাত ধরলো, আদি ধরলো মাথা। তারপর গাড়ি ছেড়ে দিতেই আদি বলল

‘ ওই দেখেন বাইরে ভূত। কান্না করলে নিয়ে যাবে।

ছিকু কান্না থামালো। বাইরে চোখ রেখে প্রশ্ন করলো

‘ কেন? নিয়ে যাবে কেন?

আদি বলল

‘ আপনি কাঁদছেন তাই।

ছিকু কিছুক্ষণ চুপ থেকে আবার ও চিৎকার করে কেঁদে উঠলো। বলল

‘ মিহির কাছি যাবু কেন?

আদি সান্ত্বনার বদলে হেসে ফেলল আওয়াজ করে। ইশা পেছন থেকে বলল

‘ সোনা বাসায় গিয়ে চকলেট দেব আপনাকে। মিহিকে আবার কাল দেখতে পাবেন তো।

ছিকু কেঁদে কেঁদেই বলল,

‘ ইশু ছোনা ডাকে কেন?

আদি হেসে ফেলল হঠাৎ। রেহান আর ড্রাইভার ও। পরী আর রাইনা মিটমিট করে হাসলো। ইশা রেগে বলল

‘ এখানে হাসার কি হলো ডক্টর?

আদি বলল

‘ ঠিক আছে হাসলাম না আর মিষ্টি।

বলেই আবার হাসলো আদি। ইশা রাগে ফোঁসফোঁস করে উঠলো। পরী আদিকে বলল

‘ তুমি আম্মাকে সারাক্ষণ পঁচাও কেন আব্বা ?

‘ আমি পঁচালেই পঁচতে হবে কেন?

_____________

ঘুম থেকে উঠতে দেরী হয়ে গেছে পিহুর। নিশিতার ফোনে কল দিতেই নিশিতা রেগে বলল

‘ ফোন দেওয়ার দরকার নাই আর। আর আসিস না।

‘ রাগ করছিস কেন নিশু? মাইশা এসেছে?

‘ আসেনি। তুই ও আসিস না। দরকার নাই তোদের। যাহ।

ফোন কেটে দিল নিশিতা। পিহু তাদের বাসায় গেল না। সোজা পার্লারে চলে গেল। রাস্তায় মাইশার সাথে দেখা হলো। মাইশা বলল

‘ তুমি ও এখন? আমি ভাবলাম শুধু আমার দেরী হয়েছে।

পিহু বলল

‘ ও রাগ করে বসে আছে। আমার তো ঘুম ভাঙতে দেরী হলো।

‘ কি করব আর? রাগ ভাঙাতে হবে।

পিহু চুপ করে থাকলো। মাইশা বলল

‘ তোমাকে একটা প্রশ্ন করি?

‘ হুম।

‘ মিঃ মাহিদ আর তোমার সাথে কি ঝগড়া হয়েছে?

পিহু চমকে উঠলো। আমতাআমতা করলো সে। মাইশা হেসে ফেলল। বলল

‘ আমার ও এমন একটা কাজিন আছে। পরিচয় করে দেব পরে। ওর সাথে সারাক্ষণ আমার ঝগড়া লেগে থাকে। তোমার আর মিঃ মাহিদের যেমন ঝগড়া লাগে।

পিহু হাসলো একটুখানি। পার্লারে পৌঁছে অনেক কষ্টে নিশিতার রাগ ভাঙাতে হলো। তারপর সাজগোছ কমপ্লিট হলো একটু দেরীতেই। নিনিত ফোনের উপর ফোন করে যাচ্ছে। গাড়ি আসলো তাদের ক্লাবে নিয়ে যাওয়ার জন্য। পিহু খয়েরী রঙের গাউন পড়েছে। মাইশা ব্লু রঙের। ক্লাবে পৌঁছাতে আর ও আধঘন্টার মতো সময় লাগলো। মাইশার সাথে তার দুইটা আন্টি পার্লারে এসেছিল। তারাসহ পৌঁছে গেল ক্লাবে। পৌঁছুতেই সবাই বউ দেখার জন্য ঝাঁপিয়ে পড়লো। পিহু সেই ভীড়ের মাঝখানে গেল না। অন্যদিকে ছুটতে না ছুটতেই দেখলো ছিকু বরের জন্য সাজানো স্টেজে উঠে দাঁড়িয়ে নানারকম এঙ্গেল থেকে ছবি তুলছে। সাদা শার্টের উপর নানারকম কালো শেপের ডিজাইনের শার্ট পড়া ক্যামেরাম্যান মাহিদ। মামা ভাগিনার খুনসুটি দেখার মতো। মাহিদ যেরকম বলছে সেরকম করছে ছিকু। একসময় পিহুকে চোখে পড়লো ছিকুর। সে চিৎকার করে বলে উঠলো, পিহু দেখে আছে কেন? পিহু হাসে কেন?

মাহিদ ঘাড় ঘুরিয়ে পিহুর দিকে তাকালো। পিহু দ্রুত অন্যদিকে হাঁটা ধরলো। তবে বেশিদূর পালাতে পারলো না। মাহিদের মুখোমুখি হলোই। ভয় পেয়ে গেল সে। মাহিদ ভুরু উঁচালো। বলল

‘ সমস্যা কি?

‘ কিছু না।

বলেই আশেপাশে তাকিয়ে পিহু চলে যাচ্ছিল। মাহিদ ঘুরে এসে তার সামনে দাঁড়ালো। পিহু মুখ তুলে রেগে তাকালো। বলল

‘ পথ ছাড়ো।

মাহিদ পথ ছাড়লো না। পিহু এদিকওদিক তাকিয়ে উশখুশ করতে লাগলো। তারপর আবারও চোখ তুলে তাকালো। তারপর একেবারেই চোখ সরিয়ে বলল

‘ আমাক যেতে হবে।

‘ তোকে ধরে রাখছে কে?

পিহু চোখ তুলে তাকালো। বলল

‘ তাহলে সামনে দাঁড়িয়ে আছ কেন?

‘ দেখছি।

পিহি উশখুশ করে উঠলো। হাত মোচড়াতে মোচড়াতে বলল

‘ কি দেখছ?

‘ কিছু না।

পিহু সরে যেতেই মাহিদ আবারও তার সামনাসামনি দাঁড়িয়ে বলল

‘ পালাচ্ছিস কেন?

পিহু মুখ তুললো। বলল

‘ তো কি করব?

‘ দাঁড়িয়ে থাক।

পিহু এবার চলে যাচ্ছে। মাহিদ তার পথ আটকে গর্জে বলল

‘ কোথায় যাচ্ছিস?

‘ জাহান্নামে। সমস্যা কি তোমার?

‘ এখানে থাক।

‘ ওখানে সবাই আছে।

‘ ওখানে যাওয়ার দরকার নেই।

‘ কেন?

মাহিদ উত্তর দিল না। মাইশা পিহুকে ডাকছে। পিহু সরে পড়ার সময় মাহিদ বলল

‘ খবরদার নড়বি না এক পা ও।

মাইশা এল। বলল

‘ পিহু চলো নিশিতা ডাকছে।

পরক্ষণে মাহিদের দিকে তাকিয়ে হাসলো। বলল

‘ আপনি ও আসুন না।

মাহিদ মাথা নাড়ালো।

‘ যাব।

মাইশা পিহুর হাত ধরলো। বলল

‘ চলো না।

পিহু মাহিদের দিকে তাকালো। তারপর মাইশার সাথে যেতে যেতে বলল

‘ স্যারকে দেখেছেন?

‘ স্যার? মিঃ নিনিত। হ্যা তোমাকে দেখতে না পেয়ে জিজ্ঞেস করছিল তুমি এসেছ কিনা।

মাইশার সাথে কথা বলতে বলতে পিহু একবার মাহিদের দিকে ফিরে তাকালো। দেখলো ফুলেফেঁপে থাকা এক ভয়ংকর নিউক্লীয় বোমা। এখনি ঠাসস করে ফাটবে আর সবকিছু পুড়ে ছাই হয়ে যাবে। ছিকু ও পিহু আর মাইশার পেছন পেছন দৌড়ে যেতে যেতে পেছন ফিরে তাকিয়ে বলল

‘ মিহি ইকা কেন? মিহির সাথি কিউ নাই কেন? মিহিকে ভূতে খিয়ে ফিলবে কেন?

মাহিদ বিড়বিড় করে বলল

‘ শালা তোরা আমারে কি পাইছস বাপ? একেকডারে খুন করুম আমি। সবার আগে ওই ডাক্তারের বাচ্চিরে করুম। শালী কি পাইছেডা কি?

___________

বর এসেছে। ছেলেরা সবাই ফিতা কাটবে। নিনিত এসে মাহিদকে ধরে নিয়ে গেল। বলল, তুই একা একা কি করিস ওখানে। ফিতা কাটবো। চল।
মাহিদ গেল চুপচাপ। ফিতা কাটার সময় বরপক্ষ টাকা ছাড়তে চাইলো না। মাহিদ ্ কাঁচি না দিয়ে বলল

‘ শালার জামাই টাকা ছাড়ো। নইলে কাঁচি ও দিতাম না, বউ ও দিতাম না বাপ। মশকরা করো? আমরা মশকরার মুডে নাই। টাকা বাইর করো।

সবাই হো হো করে হেসে উঠলো তার কথায়। নিনিত তার পিঠ চাপড়ে দিয়ে বলল

‘ ফাটিয়ে দিয়েছিস মামা।

মাহিদ কলার ঝাঁকিয়ে বলল

‘ মাহিদ খান বলে কথা।

বরপক্ষ নাছোড়বান্দা মাহিদের পাল্লায় পড়েছে। টাকা না দিয়ে উপায় আছে? টাকা দিল। মাহিদ কাঁচি দিল শেষমেশ। ফিতা কেটে জামাই ঢুকলো।

ছিকু নাচতে নাচতে বলল

‘ নিচির জামাই আসিছে। ওহ ওহ জামাই আসিচে। কেন আসিচে কেন?

ইশা তার নাচ দেখে হাসতে হাসতে বলল

‘ আপনার এত খুশি কিসের ভাই? আপনি এভাবে নাচছেন কেন?

‘ নিচির জামাই আসিচে কেন? বুউ আসেনি কেন?

” নিশিই তো বউ।

‘ কেন? নিচি বুউ কেন?

ইশা হেসে উঠলো আবার। ছিকু আবার নাচতে লাগলো। একবার এক পা এক হাত তুললো, আবার আরেক পা আরেক হাত তুললো। কোমর দুলিয়ে দুলিয়ে গাইলো

‘ ডুম্পাছালে ডুম্পাছালে ডুম, ডুম, ডুম।

ইশা হাসতে হাসতে ঢলে পড়ার অবস্থা হলো।

__________

বরকে মালা পড়ানোর সময় এল। বউয়ের বোন কিংবা বান্ধবীরা মিষ্টি খাওয়াবে আর মালা পড়াবে। পিহুর হাতে মালা, মাইশার হাতে মিষ্টি। বাকিরা তাদের পেছন পেছন এল। পিহু বরকে বলল

‘ জিয়াদ ভাইয়া টাকা বের করো। দশ দশ।

মাহিদ বলল

‘ এদের দশ টাকা দিয়ে দূর দূর করে তাড়াও তো। শালার ফকির। বিয়া বাড়িতে ও শান্তি নাই।

মাইশা আর বাকিরা খিক করে হেসে উঠলো। মাইশাকে দেখে মুখ সংযত করে ফেলল মাহিদ। পিহু নাকফুলিয়ে তাকালো। নিনিত হেসে পিঠ চাপড়ালো মাহিদের। বলল

‘ তুই পারিস বটে।

মাহিদ মাথা দুলালো। পিহু চেঁচিয়ে বলল

‘ আমি দশ হাজার বলেছি। দশ টাকা বলিনি। কানে বেশি শুনে।

মাহিদ কপাল কুঁচকে তাকালো। কিছু বলতে গেল কিন্তু মাইশা থাকায় কিছু বললো না। বরপক্ষ টাকা ছাড়তে চাইলো না। শালা বাবুরা এমনিতেই আট খসিয়েছে। আবার দশ? বরের বন্ধু বলল

‘ পান বানিয়ে খাওয়ান বেয়াইন । তারপর দেখা যাবে।

পিহু ভ্যাবাছ্যাঁকা খেল। মাইশা বলল

‘ আমি বানাতে পারি পান। মিঃ মাহিদ একটা পান এনে দিবেন?

মাহিদ ছিকুকে ডাকলো। বলল

‘ যাহ পান লইয়্যা আয় ডক্টরের মায়ের কাছ থেকে?

‘ নিনি ডততর?

‘ হ।

নিনিত হেসে ফেলল ছিকুর কথা শুনে।

ছিকু গেল। নিকিতা বেগমকে বলল,

‘ মিহি পান দিতি বুলেচে কেন?

‘ পান?

ছিকু তাকিয়ে থাকলো। মুনা বলল

‘ মাহি পান দিতে বলছে বোধহয়।

নিকিতা বেগম একটি পান ধরিয়ে দিয়ে গাল টেনে দিল ছিকুর। ছিকু পান নিয়ে গেল। এসে পান বাড়িয়ে দিয়ে রেগে বলল

‘ নিনির আম্মো গাল টানি দিচে কেন?

মাহিদ তার পিঠ চাপড়ে দিয়ে বলল

‘ আমারে ক্যান জিগাইতাছোস? ডক্টরগেরে জিগা।

নিনিত হেসে ছিকুকে কোলে তুলে নিয়ে আদর করে বলল

‘ ছিকু ব্যাথা পেয়েছে?

‘ বিথা পাইনি কেন?

নিনিত আবার হাসলো।

মাইশা পান বানিয়ে দিল। বরের বন্ধুরা পাঁচ হাজার দিল। বলল

‘ আর নাই।

পিহু বলল

‘ অসম্ভব। এগুলো দিয়ে কি হবে? আমরা অনেক জন এখানে। টাকা ছাড়ুন। বিয়ে একদিনই তো হচ্ছে। রোজ রোজ তো হবে না। কিপ্টামি চলবেনা জিজু।

বর চুপচাপ হাসলো। বলল

‘ আমার হাতে কিছু নাই।

‘ নাই বললে তো শুনবো না।

শেষমেশ আট হাজারে সবাই চুপ মারলো। কারণ ওদিকে নিনিতের বাবা চেঁচামেচি শুরু করে দিয়েছে। পিহু সবাইকে টাকা ভাগ করে দিয়ে ফেলল। নিজেরটা নিজের কাছে রাখলো।

তারপর বর বউয়ের সাথে তাদের সবাইকে খেতে বসতে হলো। পিহুকে নিনিতের পাশে নিয়ে গিয়ে বসিয়ে দিল সবাই মিলে।
রেহান পরীকে ও নিয়ে আসলো নিয়াজ সাহেব। ছিকু বসলো মা বাবার মাঝখানে চেয়ারে। সে বসে টেবিলের উপরে কিছু দেখতে পারেনা তাই তাকে পরী দাঁড় করিয়ে দিল। বলল,
‘ আমি খাইয়ে দেই আব্বা?
ছিকু রেগে গেল। সে হাত দিয়ে খাবে। কেন পরীর হাতে খাবে? সে সবার মতো হাত দিয়ে খাবে। রেহান বলল, আচ্ছা আচ্ছা আপনি একা একা খান। আপনার জন্য প্লেট আনা হয়েছে।
ছিকু খুশি হলো।

মাইশা বসলো পিহুর অন্যপাশে। মাহিদকে খুঁজতে খুঁজতে নিয়ে এল নিনিতের বাবা। পিঠ চাপড়ে দিয়ে বলল, ব্যারিস্টারের পোলা তুই যাস কই হুটহাট? হবু বউয়ের লগে বইসা ভাত খা। বোস।

মাহিদ বসলো চুপচাপ। আগ বাড়িয়ে কিছু খেল না। মাইশা বেড়ে দিতে দিতে বলল এগুলা দিই? ওটা দিই?
মাহিদ চুপচাপ মাথা দুলালো। মাইশা মনে মনে ভাবলো, এই মানুষটা তো ভীষণ অদ্ভুত!

পিহু ছিঁড়ে ছিঁড়ে চিংড়ি খাচ্ছে। নিনিত বলল
‘ তোমার না চিংড়িতে এলার্জি। অন্য কিছু খাও। এটা রাখো।
পিহু হাত দিয়ে চিংড়ি ঢেকে নিল। না আমি এটাই খাব।
নিনিত হেসে ফেলল তার কান্ড দেখে।

মাহিদ এদিকওদিক তাকালো। দেখলো নিশিতা মাথা নিচু করে একটু একটু খাচ্ছে। মাহিদ বলে উঠলো,

‘ ওই নিশুর বাচ্চা নিশু তুই মাথা নিচু করে খাইতেছোস কিল্লাই? দুনিয়ার সব শরম তোর আইজ চইলা আসছে না? ঢং করোস? এমনিতে তো জামাই জামাই কইরা নাচতে নাচতে বেহুশ।

মাহিদের কথা শুনে জিয়াদ সহ টেবিল কাঁপিয়ে হেসে উঠলো সবাই। নিশিতার কান দিয়ে যেন গরম ধোঁয়া বের হচ্ছে। সে মাথা আর ও নামিয়ে ফেলল। মাহিদ ভাইটার মুখে একদম লাগাম নেই।

হাসতে হাসতে নিনিতের কাশি উঠে গেল। পিহু পানি বাড়িয়ে দিল। মাহিদের দিকে তাকিয়ে ভাবলো ছিঃ ছিঃ এত ঠোঁটকাটা মানুষ ও হয়?
ছিকু চেঁচিয়ে বলল
‘ মিহি নিচিকে বুকে কেন? নজ্জা দেয় কেন? মিহি পুঁচা কেন?
মাহিদ চোখ লাল করে তাকালো। ছিকু হাতের ভাতের মুঠো গালে ঢুকিয়ে দিয়ে মাহিদের দিকে চোখ লাল করে তাকালো। সবাই আবার ও হেসে উঠলো।
ছিকু চিকেন হাতে নিয়ে ভাত চিবোতে চিবোতে বলল
‘ মিহিকে ইটা দিয়ে মারতে মন চাই কেন?
সবার আরেকদফা হাসলো।
মজা হাসির মধ্যে দিয়ে খাওয়া শেষ হলো সবার।

তারপর এল বধূ বিদায়ের সময়। যাওয়ার সময় নিনিতকে ঝাপটে ধরে সে কি কান্না নিশিতার! নিনিত আবেগ কনট্রোল করে বোনের মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে স্নেহের পরশ দিল। বলল

‘ আরেহ বেশিদূর তো না। কাঁদার কি দরকার?

নিশিতা কার কথা শোনে? মা বাবাকে জড়িয়ে ধরে ও হাউমাউ করে কেঁদে উঠলো। মাহিদ সেখানে গিয়ে বলল
‘ তোরে তো লন্ডন পাঠাইতাছি না বাপ? কান্দোস কিল্লাই?

নিশিতা ফুঁপিয়ে উঠলো। পিহু থমথমে মুখে এককোণায় দাঁড়িয়ে রইলো। ইশা বলল, ওর কাছে যাও না। তুমি ওর বেস্ট ফ্রেন্ড না?
পিহু ধীরপায়ে হেঁটে গেল। নিশিতা তাকে ঝাপটে জড়িয়ে ধরলো। কেঁদেকেঁদে বলল
‘ তুই আমার আম্মা আব্বার মেয়ে হয়ে উঠিস পিহু। আমার ভাইকে ভালো রাখিস।
তার কথায়, কান্নায় পিহুর চোখের কোণায় জল জমে উঠলো। টুপটাপ কয়েকটা ফোঁটা পড়ে গেল নিশিতার কাঁধে। পিহু তাকে ছাড়লো। চলে যেতেই মুখোমুখি হলো নিনিতের। হাতের কব্জি দিয়ে চোখের কোণা ঘষলো পিহু। চোখ নামিয়ে নিল নিচে। অনুভব করলো তার ভীষণ কষ্ট হচ্ছে। কারণ জানা নেই।
নিনিতের সামনে থেকে সরে পড়লো সে। সরতে না সরতেই আবারও মাহিদের মুখোমুখি হয়ে গেল পিহু। মাহিদ চোখ অন্যদিকে ঘুরিয়ে নিল।

চলবে,

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে