মন গোপনের কথা পর্ব-১৬+১৭

0
1116

#মন_গোপনের_কথা
#পর্ব_১৬
লেখনীতে, পুষ্পিতা প্রিমা

পিহুর হাতটা মোচড়ে দিয়ে চলে গেল মাহিদ। নীরা দৌড়ে এসে হায়হায় করে বলল

‘ মাহি তুই আবার মেয়েটাকে মেরেছিস? কি একটা অবস্থা? হঠাৎ তোর হলোটা কি? পিহু তো কিছুই করলো না। তুই এমন করলি কেন? এই মাহি?

মাহিদ একদম পিছু ফিরে তাকালো না। সোজা চলে গেল বাড়ির বাইরে। মুনা তাকে চলে যেতে দেখে বলল

‘ আরেহ আস্তে কথা বল। রিপ শুনলে কেলেংকারী হয়ে যাবে। ওর হয়েছেটা কি?

পরী বলল

‘ আমি ও তো বুঝলাম না ভাইয়ের হঠাৎ কি হলো?

পিহুর হাতে বরফ ম্যাসাজ করতে লাগলো নীরা। পিহু চুপচাপ বসে আছে। ছিকু এসে পিহুর পাশে বসলো। বলল

‘ পিহুকে মেরেছে কেন? মিহি পিহুকে মারে কেন? মিহি বিদ্দব কেন?

নীরা বলল

‘ বেয়াদব তো। মহা বেয়াদব। আল্লায় জানে বউরে না পিটায় বাপের বাড়ি পাঠাই দেয়। এই ছেলের বিশ্বাস নেই৷ মানসম্মানের ধার ধারেনা এই ছেলে।

ছিকু কষ্ট পেল। মিহি কেন পিহুকে মারলো? পিহুর হাতে হাত বুলিয়ে দিল ছিকু। বলল

‘ পিহু কাঁদেনা, কাঁদেনা।

পিহু গালের ভেতর করে হাসলো। মুখ নিচে নামিয়ে বলল

‘ আদর দেন। তাহলে ব্যাথা কমে যাবে।

ছিকু পিহুর গালে আদর দিল। বলল

‘ পিহু আদর দেয় না কেন?

পিহু তার গাল চেপে আদর করে বলল

‘ দিলাম।

নীরা বলল

‘ আদর টাদর পরে চলবে। আগে বলো ব্যাথা লাগতেছে কিনা। মাহি তোমাকে মারলো কেন?

পিহু থেমেথেমে বলল

‘ জানিনা।

নীরা বলল, আজ আসুক। আমি দেব কয়েকটা। বেয়াদব ছেলে।

পিহু চুপ করে থাকলো। কিছুই বলল না। মাহিদ এসে ঘরে গিয়ে চুপচাপ ঘুমিয়ে পড়লো কাউকে দেখা না দিয়ে। মুনা নীরাকে যেতে দিল না। নিজেই ভাত খাইয়ে দিয়ে আসলো মাহিদকে। অবশ্য কান টেনে দিতে ভুলেনি।
সকাল সকাল নীরা তার কান টেনে দিয়ে তুললো। কাঁচা ঘুম ভেঙে যাওয়ায় মাহিদের মাথা গরম হয়ে গেল। বালিশ মেঝেতে ছুঁড়ে মেরে বলল

‘ ধুর বাপের বউ। শান্তিতে ঘুমাইতে দাও বাপ।

নীরা বলল

‘ কাল পিহুকে মেরে পালিয়েছিস কেন বেয়াদব? তোর বাপকে গিয়ে বলব?

মাহিদ চোখ কচলালো। বলল

‘ আমার কথা না শুনলে শালীরে একশ বার মারবো।

নীরা আবার তার কান টেনে ধরে পিঠে কয়েকটা দিল। বলল

‘ দাঁড়া তুই। আমি তোর বাপকে বলো আসি। তুই মাইর খেয়েছিস দেরী হয়েছে। তারপর সই খবর তোর শ্বশুরবাড়ি পাচার করব আমি। দাঁড়া।

‘ দাঁড়াইতে পারব না বাপ। যাও বইলা আসো। আমি কাউরে ভয় পাই না।

নীরা সত্যি সত্যি রিপকে টেনে নিয়ে এল। মাহিদ ভ্যাবাছ্যাঁকা খেয়ে রিপের দিকে তাকিয়ে রইলো। রিপ ও। নীরাকে জিজ্ঞেস করল

‘ কি হয়েছে?

মাহিদ ও অবাক। নীরা আমতাআমতা করতে করতে বলল

‘ এই বজ্জাত ছেলে নাকি কাউকে ভয় পায় না। কি বাবু এখন পাইছো ক্যান? হু হু?

মাহিদ কপাল কুঁচকালো। রিপ বিরক্ত হয়ে যেতে যেতে বলল

‘ তুমি ওর চাইতে বেশি ডেঞ্জারাস নীরা। এই সামান্য কথার জন্য আমাকে এভাবে ডেকে নিয়ে এলে? আশ্চর্য!

রিপ চলে গেল। মাহিদ ধপাস করে আবার বিছানায় শুয়ে পড়ে বলল

‘ ওরেব্বাপ আমি আর ও ঘুমাবো। আমারে ডিস্টার্ব করবানা আর।

ছিকু আসলো দৌড়ে। হাতে আপেল। আপেলে কামড় দিয়ে মাহিদের পিঠের উপর উঠে শুয়ে পড়লো। মাহিদ বলল নড়াচড়া করতে না পেরে বলল

‘ শালা এভাবে শুইছস ক্যান বাপ? তুই কোন মটুরে?

ছিকু আপেল গালে রেখে বলল

‘ মিহি ছিকুকে মটু বলে কেন?

মাহিদ নড়ে ছিকুকে পিঠ থেকে ফেলে দিল। পিঠ দিয়ে চেপে ধরলো। তারপর ফিরে ছিকুর পেটের উপর মাথা রেখে বলল

‘ শালা আমি ঘুমাইতাছি। খবরদার বিরক্ত করবিনা।

ছিকু ভ্যা ভ্যা করে কেঁদে উঠলো। মাহিদ সরে পড়লো দ্রুত। বলল

‘ শালা দূর হ।

ছিকু গেল না। শুয়েই থাকলো। মাহিদ আবার ঘুমে তলিয়ে গেল। ছিকু আপেলের কামড় দিয়ে এক ছোট একটা টুকরো হাতে নিল। মাহিদের গালের কাছে দিয়ে বলল

‘ মিহি মুজা মুজা। মুজা মুজা।

মাহিদ গালের ভেতর ঠেলে ঢুকিয়ে দিল ছিকু। মাহিদ ঘুমের ভেতরে গাল নাড়তে নাড়তে খেল। ঘুমঘুম গলায় বলল

‘ শালা কি দিছস এগুলা?

‘ আপিল দিচি।

ছিকু আবার কামড়ে আপেল হাতে নিল। আবার মাহিদকে খাইয়ে দিল।

__________

পরী এসে ডেকে তুলে ফেলল মাহিদকে। বলল, আর কতক্ষণ ঘুমাবি? উঠ।
মাহিদ উঠলো। এদের জন্য আর ঘুমানো যাবেনা।
ব্রেকফাস্টে খেতে বসেছে সবাই। রিপ বলল, ভাই ঘুম থেকে উঠেছে কখন?

পরী বলল

‘ ফজরের আযানের সময় পাপা। আর ঘুমায়নি, আমাকে ও দেয়নি।
পিহু বলল
‘ একদম বাজে। আমার মুখে বালিশ চাপা দিয়ে পালিয়েছে।
মাহিদ কপাল কুঁচকালো। এই শালা আইজ এত ভালো হইলো কেমনে? তারে জ্বালায় নাই।
সবাই খাচ্ছে। ছিকু রোজ সকালে পুডিং খায়। মুনা আজ ও পুডিং করলো। বলল,
‘ ভাই কি খাবেন আপনি? পুডিং দেব?
ছিকু ঘনঘন মাথা নেড়ে বলল
‘ না।
পরী বলল
‘ পরে খাবে মা। এখন রেখে দাও। আপেল খেয়েছে তাই খেতে চাচ্ছে না।
ছিকু মাহিদের দিকে তাকালো। বলল
‘ মিহি ছিকুর আপিল খিয়েছে কেন? ছিকুর লালা খেয়েছে কেন?
মাহিদ পাউরুটিতে বাটার লাগিয়ে বলল
‘ কিহ?
ছিকু বলল
‘ মিহি ছিকুর কামড়ে দেওয়া আপিল খিয়েছে কেন? মুজা মুজা করে খিয়েছে কেন? ছিকুর লালা খেয়েছে কেন?
মাহিদ ইয়াক বলে উঠলো। বলল
‘ কিহ?
বিছানায় ওই আপেলের টুকরাগুলো তোর গালের? আমাকে খাওয়াইছিলি?

ছিকু মাথা নাড়লো। হাসলো দাঁত দেখিয়ে। মাহিদ ইয়াক ইয়াক করতে লাগলো। পিহুকে হাসতে দেখে রাগ আর ও তরতরিয়ে বাড়তে লাগলো৷ সবার সাথে সাথে রিপ ও আমচকা হেসে উঠলো। পিহু মিটমিট করে হেসে ছিকুকে ইশারায় বলল
‘ ওহ মাই কলিজা। একদম ভালো কাজ হয়েছে । ভাগিনার লালা খাওয়া মামা মাহিদ খান।
মাহিদ আর খেল না। ছিকু খিকখিক করে হাসতে লাগলো পেট চেপে ধরে।
রিক বলল
‘ ভাইয়া আপনি আজ মিহির কাছে যাইয়েন না। খুব মারবে মিহি আপনাকে। খুব রেগে আছে।
ছিকু কোমরে হাত দিয়ে বলল
‘ কেন মারবে কেন?

______

পরী আর ছিকু থেকে গেল। পিহু দশটার দিকে মেডিক্যাল গেল। রিক অফিসের উদ্দেশ্য বেরোচ্ছিল। পিহু ও তার সাথে বেরিয়েছে। হসপিটাল থেকে বেরোতেই তন্মধ্যে নিনিতের সাথে দেখা। নিনিত বলল

‘ আরিশা নিশিতা তোমাকে ফোন করেনি?

পিহু বলল

‘ না স্যার। কেন? কোনো সমস্যা?

‘ আজকে ইমার্জেন্সি কিছু আছে?

‘ না। আমি তো এমনিতেই এসেছি।

‘ তাহলে বাসায় চলো।

‘ বাসায় কেন?

পিহু বোকা চোখে চাইলো। নিনিত বলল

‘ নিশি বলবে তোমাকে। চলো।

পিহু আর কথা বাড়ালো না। নিনিত রিকশা ডাকলো। পথে মাহিদকে দেখে রিকশা থামালো। মাহিদকে ডাকলো। মাহিদ কাছে এলনা। দূরে দাঁড়িয়ে বলল

‘ কি?

‘ বাসায় আসবি আজ? আয় না।

‘ সময় হলে।

‘ চেষ্টা করিস দোস্ত। ফোনে জানাস।

পিহু চুপচাপ বসে রইলো। মাহিদের দিকে একবারের জন্যও তাকালো না। পিহুকে দেখে নিশিতা দৌড়ে এল। টেনে তার ঘরে নিয়ে গিয়ে ঝাপটে জড়িয়ে ধরে উত্তেজিত হয়ে বলল

‘ বান্ধবী আমার বিয়ে তো ঠিক হইয়া গেছে রে। এইবার আমি বউ সাজবো। আহা কি আনন্দ আকাশে বাতাসে।

পিহু অবাকসুরে জিজ্ঞেস করলো

‘ বিয়ে? জিয়াদ ভাইয়ের সাথে?

‘ তো কার সাথে?

‘ ওহ।

পিহুর আচমকা মন খারাপ হয়ে গেল।
নিশিতা বলল,

‘তুই মন খারাপ করলি কেন? বিয়ে তো আমার। ওহ বুঝেছি আমার পরেই তো তোর বিয়ে। তাই মন খারাপ? আরেহ চিল ইয়ার। আমার মা বাবার মতো শ্বশুর শ্বাশুড়ি তুই আর কোথাও পাবি না৷ এইটা তোর বাড়ি।

‘ ভুল কথা। মেয়েদের নিজের কোনো বাড়ি হয় না। বাপের বাড়ি আর শ্বশুর বাড়ি হয়৷

‘ তুই এত বিজ্ঞদের মতো কথা বলছিস কেন রে? ধুর বাদ দে এসব। আমি তো খুব খুশি হয়েছি তোকে দেখে। কিছুক্ষণের মধ্যে মেহমান চলে আসবে। চল মায়ের কাছে।

পিহুকে নিয়ে রান্নাঘরের দিকে ছুটলো নিশিতা। পথেই নিনিতের মুখোমুখি দুজন। নিনিত বলল

‘ এভাবে দৌড়াচ্ছিস কেন? হোঁচট খেয়ে পড়লে কি হবে?

নিশিতা হেসে বলল

‘ আমি নাকি ও?

পিহু তার হাতে চিমটি দিল৷ বলল

‘ চুপ।

নিনিত বোনের দিকে একপলক তাকিয়ে মাথা দুলিয়ে চলে গেল। নিনিতের মা বাবার সাথে দেখা করলো পিহু। তারা তো মহাখুশি পিহুকে পেয়ে। আজ একসাথে মেয়ে জামাই আর ছেলে বউকে বসিয়ে খাওয়াবে। বিয়ের আগের স্মৃতি হিসেবে রাখবেন। বউ আদর, জামাই আদর। পিহু অনেকবার এসেছে এই বাড়িতে। কিন্তু আজকের মতো অস্বস্তি কোনোদিন হয়নি। আড়ষ্টতা ঘিরে ধরেছে তাকে। বারোটার দিকে মেহমান এল। মেহমানদের সাথে পিহুর আলাপ করিয়ে দিলেন নিনিতের মা বাবারা। জিয়াদের পুরো পরিবার এসেছেন। ছেলের পছন্দই তাদের পছন্দ। নিশিতা ও মহাখুশি। হাসি তার ঠোঁট থেকে সরছেই৷ পিহু দেখে আর ভাবে এই মানুষগুলো সবচাইতে সুখী।
জিয়াদকে পিহু কথার এক ফাঁকে বলল
‘ লাকি ম্যান ভাইয়া।
জিয়াদ হেসে বলল
‘ তুমি ও কম লাকি নও কিন্তু। ডক্টর সাহেব খুব ভালো এন্ড হ্যান্ডসাম পারসন।
পিহু একটুখানি হাসলো। আসলেই সে লাকি। না চাইতে ও নিনিত স্যারের মতো মানুষের সাথে জড়িয়ে যাচ্ছে সে। স্যার তার চাইতে ও ভালো কাউকে ডিজার্ভ করে। সে ভালো না। সুন্দর না। কালো।

______

পিহুকে সন্ধ্যা অব্দি থেকে যেতে হলো। নিকিতা বেগম ছাড়ছেন না। রাতটা ও থেকে যেতে বলছেন। এই মেয়েটাকে তার ভীষণ ভালো লাগতো। সেই তখন থেকেই যখন থেকেই নিশিতার সাথে পিহুর পরিচয়। ছোট থেকেই তিনি পিহুকে দেখে আসছেন। স্বভাবপ শান্ত শিষ্ট, ভদ্র একটা মেয়ে। বরাবরই এরকম একটা মেয়েকে ছেলের বউ হিসেবে কল্পনায় এঁকেছেন তিনি। কেমনে যে মিলে গেল! তবে আজ এই মেয়েটির মনের কথাটা জানতে বড্ড ইচ্ছে হলো। তাই তো প্রশ্ন করে বসলো

‘ আমার নিনিতকে তোমার পছন্দ তো পিহু? স্যার হিসেবে নয়, মানুষ হিসেবে ও নয়। তোমার চোখে লাইফ পার্টনার হিসেবে । তোমার মতামত জানাটা আমাদের জন্য ও জরুরি।

পিহু চোখ তুলে আলাভোলা চেহারায় চেয়ে থাকলো৷ কি উত্তর দেবে সে এখন? পিহুর কোনো সাড়াশব্দ না পেয়ে নিকিতা বেগম বলল

‘ কি হলো?

পিহু আমতাআমতা করতে করতে বলল

‘ হ্যা পছন্দ। উনি পছন্দ হওয়ার মতোই একজন মানুষ।

_________

রাতে পিহুকে আর রাখা গেল না। সে চলে যাবে। নিনিত ও বলল থেকে যেতে। পিহু বলল অন্যদিন থাকবে। নিকিতা বেগম ছিকুর জন্য দুটো কেকের বক্স দিয়ে বলল এগুলো পাকা বুড়োটার জন্য। ওকে দেবে। বাচ্চা মানুষ। হাতের দিকে তাকিয়ে থাকো কেউ বাইরে থেকে গেলে। পিহু হেসে ফেলল।
নিনিত রিকশা ডাকলো। দুজনই উঠে পড়লো। রাস্তাটা ঝলমলে। আকাশে চাঁদটি। সড়কবাতির আলো দরকার নেই আজ। রিকশা ভালো লাগছে পিহুর। তবে খারাপ ও লাগছে অকারণে। অস্থির লাগছে কেমন জানি। পাশে বসা মানুষটার জন্য বোধহয়। নিনিত নীরবতা কাটিয়ে প্রশ্ন করলো, এইবার পরীক্ষা কেমন হলো? প্রশ্ন সহজ লেগেছে আমার।
‘ ভালো। কিন্তু কমিউনিটি মেডিসিনে আমার তেমন একটা ভালো হয়নি।

‘ সমস্যা নেই। ফোর্থ ইয়ারে ভালো করবে। প্যাথলজি,মাইক্রোবায়োলজি,ফার্মাকোলজি এই তিনটা ফোর্থ ইয়ারের। আমি জানি তুমি ভালো করবে।

‘ এত কনফিডেন্স নিয়ে কি করে বললেন?

‘ আমার আপনার উপরে বিশ্বাস আছে ম্যাডাম।

কথাটাই কেমন যেন লাগলো পিহুর। উফফ কেন যে এই মানুষটার জীবনে সে এল? আর ও ভালো কেউ আসতে পারতো।

হসপিটাল থেকে কিছুটা দূরে রাস্তার পাশে মাহিদকে দেখা গেল লাবীব আর তপুর সাথে। নিনিত রিকশা থেকে নামলো। রিকশাওয়ালা বলল সাহেব বেশিক্ষণ দাঁড়াইতে পারুম না। আমার পোলাডা অসুস্থ। ঔষধ নিয়া যাইতো হইবো।

নিনিত ওয়ালেট থেকে টাকা বের করে ভাড়া মিটালো। পিহুকে বলল

‘ আমরা অন্য রিকশা নেব। একটু আমার সাথে আসো। মাহিদকে দেখলাম৷

নিনিতের পিছুপিছু পিহু হেঁটে গেল। নিনিতকে ঘাড় ঘুরিয়ে তাকালো সবাই। তপু বলল

‘ নিনিত যে! নিশুর নাকি বিয়ে ঠিক হয়েছে?

‘ তো? তোদের কেন যেতে বললাম আজকে? মাহিদ যাসনি কেন? এই মাহিদ?

মাহিদ কিছু বলতেই যাচ্ছিল। লাবীব পিহুকে বলল

‘ আরেহ পিহু তুমি তো আমাদের ভাবি হয়ে যাবে আর ক’দিন পরে। এখন তো আর নাম ধরে ডাকা যাবে না।

পিহু একটুখানি সৌজন্যেতামূলক হাসলো। মাহিদ বলল

‘ একেবারে তোর বিয়ের পাকা কথার সময় যাব। চিল চিল।

নিনিত তার পিঠ চাপড়ে দিয়ে বলল

‘ তার আগে নিশুর বিয়ে। তখন যাবি না?

‘ যাব যাব।

‘ তুই কি বাড়ি যাচ্ছিস নাকি?

‘ হ্যা।

‘ ওহ তাহলে তো আরিশাকে ও সাথে নিয়ে যেতে পারিস। ও নাকি তোদের বাসায় যাবে। রাহি আর ওর মা নাকি ওখানে?

‘ হুহ।

‘ তাহলে রিকশা ডেকে আনি। আমি গেলে আন্টিদের আবার ঝামেলা বাড়বে । ওনারা ছাড়বেন না কিছু না খাইয়ে। তার চাইতে বরং তুই সহ চলে যাহ।

মাহিদ আর কিছু বলল না। নিনিত পিহুকে বলল

‘ আরিশা ঠিক আছে? তোমার মাহিদ ভাইয়ের সাথে চলে যাও তাহলে?

পিহু মাথা নাড়ালো। রিকশা এল। পিহু উঠে বসলো। নিনিত বলল

‘ মাহিদ উঠে পড়।

মাহিদ চুপচাপ উঠে পড়লো। রিকশা চলতে শুরু করলো। পিহু নড়েচড়ে বসলো একটু। কথা বললো না। রিকশা কিছুদূর যেতেই মাহিদ নিজ থেকেই বলল

‘ নিশুর বিয়ে কখন?

‘ এই মাসের শেষের দিকে।

‘ ওহ। তাইলে তার পরের মাসে তোর বিয়ে। শালী আমার হাতে এখন টাকা পয়সা নাই বাপ। আমি বিয়ার গিফট দিমু কি করে তোদের দুই বান্ধবীদের?

‘ তোমার গিফট না পেলে বিয়ে আটকে থাকবে না মাহিদ ভাই।

মাহিদ চিন্তিত হয়ে বলল

‘ সেটা ঠিক। কিন্তু আমার বিয়ের সময় তোর গিফট আমার চাই। না দিলে বিয়া করতাম না।

‘ কি বলো? গিফট! তোমাকে কি গিফট দেওয়া যায় বলোতো?

‘ তোর যা আছে সব দিয়া দিবি। দরকার পড়লে তোরে দিয়া দিবি।

চলবে,

#মন_গোপনের_কথা
#পর্ব_১৭
লেখনীতে, পুষ্পিতা প্রিমা

রিকশা এসে থামলো খান বাড়ির গেইটের কাছেই। রিকশা থেকে নেমে পিহু বাড়ির দিকে হেঁটে গেল। মাহিদ ভাড়া চুকিয়ে পিহুর পিছু হাঁটতে হাঁটতে বলল

‘ আমি কি তোর জামাই লাগি? তুই ভাড়া দেস নাই ক্যান?

পিহু থামলো। ঘাড় ঘুরিয়ে তাকালো। বলল

‘ জামাই হওয়ার প্র্যাক্টিস করো। তোমার বউ আসতে বেশি দেরী নেই।

মাহিদ চোখ গরম করে চাইলো। পিহু এক দৌড়ে বাড়িতে ঢুকে পড়লো। তখনি ছিকুর মুখোমুখি। সে সোফার উপর বসে আছে। মটু পাতলু দেখছে। হাতে ফুটবল। পিহুকে দৌড়ে আসতে দেখে সে চমকে উঠলো। বলল

‘ ছিকু ভয় পাচি কেন? পিহু দুড়ে আসিছে কেন?

পিহু হেসে তার পাশে গিয়ে বসলো ধপাস করে। মাহিদ ও এল পরপর। ছিকু তাকে দেখে খুশি হলো। দাঁত দেখিয়ে হাসলো। বলল

‘ মিহি ছিকুর জুন্য চকলেট আনিনি কেন?

মাহিদ পকেটে হাত দিয়ে যা পেল তা ছুঁড়ে মারলো ছিকুর দিকে। বলল

‘ ল শালা। তোরে চকলেট চকলেট খাওয়াইতে খাওয়াইতে আমি ফতুর হইয়্যা যামু বাপ।

ছিকু চকলেট পেয়ে মহাখুশি। সেগুলো কুড়িয়ে নিল। পিহু একটা তুলে নিয়ে প্যাকেট ছাড়িয়ে গালে পাচার করে দিয়ে বলল

‘ উম খুব মজা।

ছিকু মন খারাপ করে ফেলল। বলল

‘ পিহু ছিকুর চকলেট খায় ফিলছে কেন? মুজা মুজা বলে কেন?

মাহিদ গিয়ে ছিকুর পাশে বসলো। ছিকুকে তার কোলের উপর নিয়ে বলল

‘ রাক্ষসী ডাক বাপ।

‘ কেন ডাকবু কেন? পিহু রাক্ষুচী কেন?

পিহু নাক ফুলিয়ে মাহিদের দিকে চাইলো। কুশন নিয়ে মাহিদের মুখে ছুঁড়ে মেরে বলল

‘ একদম পঁচাবেনা আমায় মাহিদ ভাই। তুমি আমাকে কি পেয়েছ?

‘ পাইলাম কই বাপ?

‘ ওকে ওসব শেখাবেনা মাহিদ ভাই। ও আমাকে রাক্ষসী ডাকা শুরু করবে আবার। তোমার মুখে তো ভালো কথা নাই।

‘ যে ভালা কথা কয় তার কাছে যাহ। তোরে ধরে রাখছ কে?

পিহু কুশন তুলে আবার ছুঁড়ে মারলো মাহিদের মুখে। ছিকুকে বলল,

‘ আপনাকে কেক দেব না। আপনি আমাকে রাক্ষসী ডেকেছেন কেন?

বলেই হনহনিয়ে চলে গেল সে। ছিকু মন খারাপ করে বসে থাকলো।
মাহিদ হা হু করে হাসলো। ছিকু ও তার সাথে খিকখিক করে হাসলো। রিপ আসলো। বসলো সোফায়। টিভির চ্যানেল পাল্টানোর সময় ছিকু তাকে বলল

‘ বেরিচতার, মিহি পিহুকে রাগায় দিচে কেন? রাক্ষুচী ডাকতে বলেছে কেন?

মাহিদ ছিকুর গাল চেপে ধরলো তার গালের সাথে। বিড়বিড় করে বলল

‘ শালা আর কথা পাস নাই?

ছিকু মাহিদের দিকে চাইলে মুখ তুলে। বলল

‘ মিহি এখুন আদর কচচে কেন?

‘ মাহিদ তাকে ধপাস করে সোফায় ফেলে দিল। তারপর পিঠে চাপড় দিয়ে চলে গেল। রিপ তার যাওয়ার দিকে একটুখানি চোখ তুলে তাকালো।

ছিকু সোফায় ব্যাঙের মতো পড়ে রইলো। রিপ হেসে ফেলল। হেঁটে গিয়ে তাকে কোলে তুলে নিয়ে আবার সোফায় বসে বলল

‘ ভাইকে সবাই একা একা এখানে বসিয়ে রেখেছে কেন?

‘ চবাই ইকা ইকা ছিকুকে ফেলি রাখচে কেন?

রিপ তাকে বুকের সাথে জড়িয়ে ধরে কপালে চুমু দিল। বলল

‘ ছিকু তো একা নয়। বেরিচতার ও আছে।

ছিকু রিপের মুখের দিকে তাকালো। বলল,

‘ বেরিচতার ও আচে কেন?

রিপ হেসে উঠলো।

___________

পিহুর ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে মুখ মোছার তোয়ালে নিল। দেখলো ফোনে নিনিতের কল। পিহু কল ব্যাক করলো। নিনিত কিছুপরেই ফোন তুললো।

‘ আসসালামু আলাইহকুম স্যার।

‘ ওয়ালাইকুমুস সালাম। পৌঁছে গিয়েছ?

‘ হ্যা। আমি আপনাকে জানাতেই যাচ্ছিলাম।

‘ মা জিজ্ঞেস করছিল। ওকে রাখি। টেক কেয়ার। কাল দেখা হচ্ছে।

‘ জ্বি।

ফোন কেটে গেল টুইটটুইট শব্দ করে। পিহু তোয়ালে রেখে দিল। মাহিদ তার ঘরে এসে ধপাস করে বিছানায় শুয়ে পড়লো। ফোনে মনোযোগ দিয়ে বলল

‘ চল।

‘ কোথায়?

‘ আইসক্রিম খামু।

‘ এখন?

‘ হু।

‘ কোথায়? কেন?

মাহিদ লাফ দিয়ে উঠে বসলো। বলল

‘ ওই লেকের পাড়ে যামু। চল, চল। তোর জন সারপ্রাইজ। ছিকু শালারে ও লইয়্যা যামু। চল। আয়।

বলেই মাহিদ রুম থেকে বের হয়ে গেল। পিহু একটি কূর্তি পড়া ছিল কালো রঙের। এটি তাকে রেহান দিয়েছিল। মাহিদ কিছুক্ষণ পর এল ছিকুকে কোলে নিয়ে। ছিকু ও কালো শার্ট পড়েছে। পায়ে সুন্দর একজোড়া জুতো পড়েছে। পিহুকে দেখে বলল

‘ ছিকু ও যাবে কেন? আইসকিম খিতে যাবে কেন?

পিহু হাসলো। মাহিদ যেতে যেতে বলল

‘ তাড়াতাড়ি আয়।

পিহু হেঁটে গেল। নীরা বলল

” এখনই তো এলি? আবার কই যাস?

মাহিদ বলল

‘ যাব আর আসবো। চিন্তা নাই বাপ।

‘ সাবধানে যাস।

তারা বেরিয়ে গেল। মুনা বলল

‘ এরা তিনজন ঝগড়া করতে ও দেরী হয় না। আবার ভাব পড়তে ও দেরী হয় না। তিনজনই এক ক্যাটাগরির।

পরী বলল

‘ একদম। পিচ্চিটাকে দেখোনা। কি খুশি বাইরে যাচ্ছে তাই। এত পন্ডিত!

মুনা হাসলো। বলল

‘ মাহিকে পেলে ও ভীষণ খুশি। আর কাউকে লাগেনা ওর।

___________

লেকের পাড়টা সবসময় আলোকিত থাকে। নানান রকম দোকান বসে, ছোট বাচ্চাদের খেলার জিনিস, ছোট্ট ছোট্ট নিত্যদিনের ব্যবহার করার জিনিস, খাবারের দোকান ইত্যাদি ইত্যাদি। বাতির আলো পড়ছে লেকের স্বচ্ছ জলে। পিহু বলল

‘ তুমি কি কাউকে খুঁজছ মাহিদ ভাই?

মাহিদকে কিছু বলতে হলো না। কোথা থেকে হন্যি হয়ে মাইশা দৌড়ে এল। পাশে একটা ছোট্ট মেয়ে। ছিকু মাহিদের কোলে লাফ দিয়ে উঠলো। বলল

‘ মাইচা আসিছে কেন? মাইচা বিটিফুল কেন?

মাইশা হাসলো। মাহিদের কোল থেকে ছিকুকে নিয়ে আদর করলো। বলল

‘ কেমন আছেন আপনি?

‘ পাইন।

‘ ওরেবাবারে।

পরে মাহিদের দিকে তাকালো মাইশা। বলল

‘ কেমন আছেন?

‘ ভালো। আপনি?

‘ ভালো না থাকলে এখানে আসতাম? হেই পিহু কেমন আছ?

পিহু মাথা নাড়লো। ও এজন্যই এখানে আসা? মাহিদের উপর ভীষণ রাগ লাগলো তার। বউয়ের সাথে দেখা করতে আসবে আসুক গে, পিহুকে সাথে নিয়ে আসার কি দরকার?
ছোট্ট মেয়েটির সাথে সবার পরিচয় করিয়ে দিল মাইশা। ওর নাম আহানা। ক্লাস ফাইভে পড়ে। মাইশার মামাতো বোন। আহানার সাথে ছিকুর ভাব পড়ে গেল। আহানার আঙুল ধরে ধরে হাঁটতে লাগলো সে এদিকওদিক। পিহু বলল

‘ আব্বা আসেন আমার সাথে।

ছিকু গেল না। বলল

‘ আনানার সাথে যাব।

পিহু রেগে বলল

‘ যাও। আর পিহুর কাছে আসলে খবর আছে।

মাহিদ আইসক্রিম কিনে নিয়ে আসলো। সবার হাতে দিল। পিহু নিল না। বলল

‘ আমি বাড়ি যাব।

মাইশা বলল

‘ কেন? আমিই বলেছি তোমাকে নিয়ে আসতে। থাকো না।

মাহিদের হাত থেকে আইসক্রিমটা নিল পিহু। মাহিদ বলল

‘ চিল মুডে থাক। তোর সবকিছুতে এলার্জি কেন?

পিহু রেগে ফোঁসফোঁস করলো। মাইশা হেসে ফেলল। বলল

‘ মিঃ মাহিদ আপনি ওকে রাগিয়ে দিচ্ছেন কেন?

মাহিদ বলল

‘ অলওয়েজ রাগ। এসবের জন্য চাপ নেওয়ার দরকার নেই। এই আয়।

‘ যাব না।

পিহুর কাঠকাঠ গলা উত্তর তৎক্ষনাৎ ফিরে এল।

‘ তো কি করবি?

‘ এখানে দাঁড়িয়ে থাকবো। কোথাও যাব না।

মাইশা বলল

‘ কিন্তু কেন?

মাহিদ বলল

‘ থাকুক।

মাইশা বলল

‘ তো ও এখানে দাঁড়িয়ে থেকে কি করবে?

ছিকু ফিরে তাকালো। তার এক হাতে চিপসের প্যাকেট। অন্য হাতে আইসক্রিম। দৌড়ে পিহুর পাশে গিয়ে দাঁড়ালো সে। পিহু বলল,

‘ চলে যান৷

‘ পিহু ইমুন করে বলে কেন?

মাইশা বলল

‘ আহারে বাবুটা ও কষ্ট পাচ্ছে। পিহু রিল্যাক্স। রাগ কমিয়ে ফেলো এবং চলো।

পিহু ছিকুর হাতের কব্জি ধরলো। ছিকু বলল

‘ ছিকু আইসকিম খিতে পারেনা।

পিহু তার হাত ছেড়ে দিল। ছিকু আইসক্রিম খেতে খেতে হাঁটলো পিহুর আগে আগে। আহানার সাথে কথা বলতে বলতে পিহু এদিকওদিক হাঁটলো। মাহিদ আর মাইশা তখন অন্যদিকে। দোলনা দেখে ছিকু বলল

‘ ওখানে ওখানে।

পিহু বলল

‘ চড়বেন?

ছিকু মাথা দুলালো। পিহু তাকে সেখানে নিয়ে গেল। কিন্তু সে টাকা আনেনি। তাই ওখানকার লোকগুলোকে আঙুল দিয়ে মাহিদকে দেখিয়ে বলল ওনি টাকা দেবেন। ছিকু দোলনায় বসে পড়লো। আহানা পাশাপাশি অন্য দোলনায় বসলো। পিহু ছিকুর পাশটায় বসে পড়লো। ছিকুকে এক হাতে ধরে চোখ বন্ধ করে দুলতে দুলতে মনে পড়লো এক এক কথা। এই এত এত মানুষ আর কোলাহলের মধ্যে ও পিহুর মনে হলো তার মন খারাপের কথাগুলো শোনার একটা মানুষ ও নেই। যে শোনার সে অন্য কারো সাথে ব্যস্ত। তার কাছে নিজেকে লুকোতে ব্যস্ত৷
অন্যদিকে দূরে দাঁড়িয়ে ও তার বন্ধ চোখের পাতা আর বিষন্ন চেহারায় যে চোখ বুলিয়ে গেল একজন তার খবর ও পিহুর নেই। ভীষণ অদ্ভুত!

দোলনা চড়া শেষ হলো। ছিকু আর আহানাকে নিয়ে এদিকওদিক ঘুরাঘুরি করলো পিহু। মাইশা আর মাহিদ ও কিছুক্ষণ পর এল। আহানা চুড়ির দোকান দেখছে। মাইশা বলল

‘ চুড়ি নেবে?

আহানা লাল রঙের চুড়ি হাতে নিল। মাইশা সেগুলো কিনে নিল। মাহিদ ছিকুর জন্য ঘড়ি নিল। চশমা নিল। ছিকু তো মহাখুশি। মিহি এত ভালু কেন? এত গুডবয় কেন তার মাথায় ঢুকেনা। মাহিদ টাকা দিয়ে দিল। মাইশা দিতে দিল না৷ পিহু দাঁড়িয়ে আছে খানিকটা দূরে। মাইশা ঘাড় ঘুরিয়ে বলল

‘ হেই পিহু তুমি কিছু নেবে?
আসো না এখানে। ওখানে দাঁড়িয়ে আছ কেন?

মাহিদ ঘাড় ঘুরিয়ে তাকালো। আবার ও ছিকুর জন্য একটি কাঠের গরুর গাড়ি দেখায় ব্যস্ত হয়ে পড়লো। মাইশা চুড়ি দেখছে। মাহিদ খয়েরী রঙের চুড়ি দেখিয়ে দিয়ে বলল

‘ ওগুলো সুন্দর। দেখতে পারেন।

মাইশা সেগুলো হাতে নিল। বলল

‘ তাইতো। আপনার তো পছন্দ আছে।

পিহুকে ধরে নিয়ে এল মাইশা । সব চুড়ি পিহুর হাতে পড়িয়ে দিতে দিতে বলল

‘ তুমি এসব নাও।

পিহু না না করে উঠলো। সব খুলে ফেলল। বলল

‘ আমি চুড়ি পড়িনা। ওগুলা মাহিদ ভাই আপনার জন্য চুজ করেছে। আপনি পড়ুন।

বলেই মাইশার হাতেে সব চুড়ি পড়িয়ে দিল পিহু। মাইশা শুধু তার দিকে তাকিয়ে আছে অপলক। পরক্ষণে মাহিদের দিকে তাকালো। আবার পিহুর দিকে তাকিয়ে বলল

‘ তো কি পড়ো তুমি? ঘড়ি? ঘড়ি দেখবো।

‘ নাহ।

পেছনে ফিরে ছিকুকে চাইলো পিহু। ছিকু নেই। পিহু বলল

‘ ছিকু? এই আব্বা? ছিকু কোথায় মাহিদ ভাই?

মাহিদ ঘাড় ঘুরালো। ছিকু কোথাও নেই। হাতের সবকিছু রেখে ছিকুকে খুঁজতে চলে গেল মাহিদ। হন্যি হয়ে সবাই খুঁজতে লাগলো ছিকুকে। কোথাও নেই সে। মাহিদ পিহুর কাছে এল। পিহু তখন পাগলের নতো ছিকুকে খুঁজছে। মাহিদ এসে তার হাত টান দিয়ে মোচড়ে ধরে বলল

‘ তোর সাথে না ছিল। কোথায় গেল? তুই কি করছিলি? একটা বাচ্চাকে ও দেখে রাখতে পারিস না?

পিহু ফুঁপিয়ে উঠে বলল

‘ এখানেই তো ছিল।

‘ এখানেই ছিল। তো কি হাওয়া হয়ে গেল?

মাইশা দৌড়ে এসে বলল

‘ ওকে বকছেন কেন? কোথায় গেল বাবুটা?

আহানা বলল

‘ আমি তো চুড়ি দেখছিলাম। ও ঘড়ি আর চশমা নিয়ে খেলছিল। হুট করে কোথায় চলে গেল?

মাহিদ কপাল চেপে ধরলো। পিহু ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে। মাইশা বলল

‘ কেঁদোনা। নিশ্চয়ই কেউ নিয়ে গেছে। মিঃ মাহিদ আপনি ওদিকে যান। আমি ওদিকটাই দেখছি।

মাহিদ চলে গেল। মাইশা ও। পিহু চোখ মুছলো ঘনঘন। কোথায় চলে গেল ছিকু?

________

ছিকুর হাতে চকোচকোর প্যাকেট। হাতে দুটো ঘড়ি পড়ে রয়েছে সে। বুকের সাথে চশমাটা লাগিয়ে রেখেছে। চকোচকো খেতে খেতে সে লোকটিকে বলল

‘ ইখানে মিহি নাই কেন?

লোকটা হাসলো। বলল

‘ কি নাম তোমার? বাড়ি কোথায়? কার সাথে এসেছ?

‘ ইখানে পিহু নাই কেন? মাইচা নাই কেন?

লোকটা হেসে বলল

‘ তুমি এত কেন কেন করো কেন?

ছিকুর এখন কান্না পাচ্ছে। ঠোঁট বেঁকে আসছে তার। চোখ কচলে ঠোঁঠ বাঁকাতে লাগলো সে। লোকটা তাকে কোলে তুলে নিল। বলল

‘ চলো ওই দোকানগুলোর দিকে। তোমার মা বাবা নিশ্চয়ই ওখানে। চলো।

ছিকু লোকটার কোলে উঠতে চাইলো না। দৌড়ে পালালো কেঁদে উঠে। পিহু লেকের পাড় ছেড়ে এসেছে। ছিকু বোধহয় হাঁটতে হাঁটতে এদিকে চলে এসেছে। তার ধারণায় ঠিক হলো। ছিকু দৌড়ে দৌড়ে আসতে লাগলো। পিহু তাকে দেখে দৌড়ে গেল। ছিকু তাকে দেখে ঠোঁট উল্টে কেঁদে দিল। ছিকু হাঁটুগেড়ে হাত টানতেই ছিকু তার বুকে এসে ঝাপটে পড়লো। গলা ধরে মুখ গুঁজে কেঁদে দিল উচ্চস্বরে। পিহু ও তার সাথে সাথে কেঁদে দিল। গালে, কপালে চুমু দিতে দিতে বলল

‘ কোথায় গিয়েছ আব্বা? এভাবে না বলে কেউ যায়?

ছিকু কাঁদতে কাঁদতে নাকমুখ লাল করে ফেলেছে। পিহু তার গাল মুছে দিতে দিতে বলল

‘ আর না আর না। ভয় পেতে হবে না। আমি আছি তো।

ছিকুর কান্না থামলো থেমেথেমে। পিহু তাকে কোলে তুলে নিয়ে জড়িয়ে ধরে রাখলো বুকের সাথে। ছিকু ইদুর ছানার মতো গুঁজে থাকলো। মাহিদ আর মাইশা দু’জনই পিহুকে খুঁজতে এসে এমন দৃশ্য দেখে থামলো। পিহু তাদেরকে দেখে ছিকুকে কোল থেকে নামিয়ে দিল। বলল

‘ ওই তো ওদের কাছে যাও। এই কলিজা!

ছিকু মুখ তুললো। মাহিদ এসে তাকে কোলে নিয়ে ফেলল। জড়িয়ে পিঠে হাত বুলাতে বুলাতে বলল

‘ তোকে নিয়ে তো কোথাও যাওয়া যাবেনা। ভ পাইয়ে দিলি।

মাইশা বলল

‘ উফ বাঁচা গেল। কি পরিমাণ ভয় পেয়েছি বলে বুঝাতে পারব না। আপনি শুধু শুধু পিহুকে বকছিলেন।

ছিকুর গাল মুছে দিল মাহিদ। গালে আদর করে বলল

‘ আর না।

ছিকু তার কাঁধে মাথা ফেলে রাখলো। লোকটা এসে বলল

‘ আপনারা কেমন মা বাবা? বাচ্চাটাকে দেখলাম একা একা হাঁটছে। পাশেই রাস্তা। গাড়ি চলছে অনবরত। যদি রাস্তায় উঠে যেত?

মাহিদ তাকে আর ও শক্ত করে বুকের সাথে চেপে ধরলো।

_________

পিহু দূরে দাঁড়িয়ে আছে। মাইশা ডাকলে ও এল না। শেষমেশ মাহিদকে বলল

‘ ছিকুর বোধহয় ঘুম পাচ্ছে। পিহু ও চলে যেতে চাচ্ছে। আমরা আসি। সাবধানে যাবেন।

মাহিদ রিকশা ডেকে তাদের রিকশায় তুলে দিয়ে ভাড়া মিটিয়ে দিল। মাইশা ছিকুকে আদর করে বলল

‘ টা টা আমাদের বাসায় আসিয়েন কেমন?

ছিকু ড্যাবড্যাব করে তাকালো। ঘুমঘুম গলায় বলল

‘ টা টা। চি ইউ।

মাইশা হাসলো। রিকশা চলতে শুরু করলো। মাহিদ হাঁটা ধরলো। পিহুকে বলল এদিকে আয়। পিহু এল না। সোজা হাঁটা ধরলো। মাহিদ ছিকুকে শক্ত করে ধরে লম্বা লম্বা পা ফেলে গেল। পিহুকে থামিয়ে দিয়ে বলল

‘ সমস্যা কি? কথা কানে যায় না?

পিহু তাকে ডিঙিয়ে আবার হাঁটা ধরলো। ছিকু তখন ঘুমে ঢলে পড়েছে। মাহিদের কাঁধে ঘুমোচ্ছে। মাহিদ কথা বাড়ালো না বেশি।

বাড়ি যেহেতু বেশি দূরে নয়। তাই রিকশা লাগলো না। আসার সময় ও হেঁটেই এসেছে তারা। পাঁচ মিনিটেই পৌঁছে গেল বাড়িতে। পরী এসে কোলে নিল ছিকুকে। বলল

‘ ওমা ওর নাকমুখ লাল কেন? কেঁদেছে মনে হচ্ছে। কে মেরেছে?

মাহিদ বলল

‘ কেউ মারেনি। অনেক কাহিনি। পরে বলব।

পিহু ততক্ষণে তার ঘরে চলে গিয়েছে। মাহিদ তার চলে গিয়ে মুখ হাত ধুলো। নীরা খেতে ডাকছে সবাইকে। মাহিদ এল। পিহু এল অনেক্ক্ষণ পর। তার ও মুখটা ফুলে রয়েছে। মুনা বলল

‘ সমস্যা কি এদের খালা বোনপোর? দুজনেরই চোখমুখ ফোলা।

রিপ খেয়াল করে দেখলো তাই তো। রিক বলল

‘ ওখানে কোনো সমস্যা হয়েছে মামা?

পিহু খেতে খেতে বলল

‘ তেমন কিছু হয়নি বড় মামা।

মাহিদ চুপচাপ খাচ্ছে। পরী বলল, রাহিকে অতগুলো জিনিস কেন কিনে দিলি ভাই? শুধু শুধু টাকা নষ্ট।

মাহিদ বলল

‘ পড়ুক। এগুলো ও পছন্দ করেছে।

নীরা বলল

‘ পিহুকে কিছু কিনে দিসনি?

মাহিদ খাওয়া বন্ধ করলো। অতঃপর বলল

‘ নাহ।

সবাই কেমন যেন চুপ হয়ে গেল। মাহিদ খাওয়া শেষ করে চলে গেল। পিহু ও নিজের ঘরের দিকে যেতেই মাহিদ তাকে হাত ধরে টেনে তার ঘরে ঢুকিয়ে ফেলল। পিহু অবাক হয়ে বলল

‘ কি সমস্যা?

মাহিদ টেবিলের উপর চুড়ি গুলো নিল। পিহুর হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলল

‘ আমার পছন্দের জিনিস। ফালাই দিলে খনর আছে। যাহ৷

পিহু চুড়িগুলো দেখলো৷ বলল

‘ তোমার বউকে দাওনি কেন? ও তোমার পছন্দের মানুষ না।

‘ দিছি। সব তোরে দেখাইতে হবে নাকি?

‘ নাহ। আমি কারো পার্সোনাল লাইফে নাক গলায় না।

‘ ভালা।

‘ আর এই চুড়ি আমি নেব না। তোমার পছন্দের জিনিস তোমার পছন্দের মানুষই ডিজার্ভ করে।

মাহিদ কেড়ে নিল সেগুলো। ছুঁড়ে মারলো দূরে। তারপর পিহুকে বের করে মুখের উপর দরজা বন্ধ করে দিল।

_______________

পরের দিন পিহু চলে চৌধুরী বাড়িতে। পরী ছিকু এল না। তারা আর কিছুদিন থাকবে। নিশিতার বিয়ের দাওয়াত পড়লো। আদি ভেবে পাচ্ছেনা কি দেওয়া যায় নিশিতার বিয়েতে। পিহু বলল, তোমাদের গুলো তোমরা দেবে। আমারটা আমি। আমাকে টাকা দিয়ে দেবে পাপা।

আদি বলল

‘ ওকে ফাইন।

বিয়ের কেনাকাটায় পিহুকে নিয়ে গিয়েছিল নিশিতা। এতে নিশিতার মা অনেক খুশি। বিয়ের কয়েকদিন আগে ও পিহুকে যেতে বলেছিল। কিন্তু পিহু যায়নি। সে মেহেদীর দিন সকালে বাকি ফ্রেন্ডসদের সাথে গিয়েছে। নিশিতা তাদের পেয়ে মহাখুশি। মেহেদী সন্ধ্যায় সব বান্ধবীরা এক রঙের শাড়ি পড়লো। পিহু শাড়ি সামলাতে পারেনা। তাই পড়তে চাইনি। কিন্তু পার্লারের মেয়েগুলো ভালোভাবে পড়িয়ে দিয়েছে। সাজিয়ে দিয়েছে। নিশিতাকে সাজানোর কাজ চলছে তখনো। পিহু আদি ইশা আর বাড়ির সবাই এসেছে শুনে ড্রয়িংরুমে চলে গেল। আদি আফি দেখে হা করে তাকালো। ছিকু লাফ দিয়ে উঠলো। বলল

‘ ও বাপ পিহুকে বিটিফুল লাগে কেন? ছিকু চিনতি পারেনা কেন?

পিহু হেসে তার গাল টেনে আদর করলো। তার সাথে উপরে নিয়ে গেল। পরীও গেল। এশার আযানের আগে আগে নীরা মুনারা এল। পিহুকে দেখে নীরা চোখ কপালে তুলে বলল

‘ ওমা পিহু রাণীরে কি সুন্দর লাগতেছে আপা। দেখো।

মুনা বলল

‘ তাইতো।

পিহু হেসে বলল

‘ মামি তোমরা বসো। মামারা কোথায়?

‘ আছে নিচে।

নিনিত যাচ্ছিল একটা শপিং ব্যাগ নিয়ে। নীরাদের দেখে থেমে গেল। বলল

‘ আন্টি আপনারা খেয়েছেন?

নীরা বলল

‘ হ্যা হ্যা বাবা খেয়েছি। তোমার তো আজ অনেক ব্যস্ততা।

‘ হ্যা। আরিশা তুমি একটু দেখো আন্টিদের কি কি দরকার পড়ে৷

পিহু মাথা দুলালো। নিনিত চলে গেল। নীরা বলল

‘ হু হু দেখো দেখো । এটা তোমারই সংসার আগে পড়ে। তোমারই বাড়ি। তোমরাই দেখে রাখা উচিত।

_______

মাইশাকে দেখে রীতিমতো অবাক হলো পিহু। নিশিতা দৌড়ে গিয়ে ঝাপটে জড়িয়ে ধরলো মাইশাকে। বলল

‘ আমি কতগুলো মেসেজ দিলাম তোমায়। দেখোনি?

মাইশা বলল

‘ চলেই এসেছি। সেজন্য আর রিপ্লাই করিনি। এবার খুশি হয়েছ? এসেছি কিন্তু।

‘ তুমি স্পেশালি মাহিদ ভাইয়ের ফেয়ন্সে। মাহিদ ভাই আমার ভাইয়ার বেস্ট ফ্রেন্ড। আমার বেস্ট ফ্রেন্ডের কাজিন। তুমি না আসলে কেমন যেন বেমানান। খেয়ে নাও চট করে। আর তোমার শ্বশুর শ্বাশুড়িরা ও এসেছে। যাও যাও। চিল করো।

পিহুকে দেখে হাসলো মাইশা। পিহু হাসলো। বলল

‘ মামিরা আম্মাদের সাথে। চলেন ওখানে।

‘ চলো। তুমি আমাকে তুমি করে বলতে পারো।

‘ আপনি করে বলতে ভালো লাগছে।

‘ ওকে।

নীরা তাদের দুজনকে দেখে অবাক হলো। মাইশা গিয়ে সালাম দিল সবাইকে। ইশা বলল

‘ মাইশা না? আসো আসো। আর কে এসেছে তোমার সাথে?

‘ বাবা এসেছে আন্টি।

নীরা বলল

‘ বাহ কি মিষ্টি! কি মিষ্টি মেয়ে৷ তোমার মাহিদের সাথে দেখা হয়ছে?

‘ না আন্টি। কিন্তু আমি ওনাকে দেখেছিলাম বাইরে। পরে কথা বলে নেব।

মাইশার সাথে অনেক আলাপ হলো সবার। পিহু তার হাতের দিকে তাকিয়ে ছিল পুরোটা সময়। হন্তদন্ত হয়ে বাড়ির বাইরে গেল। মাহিদকে দেখে দাঁড়িয়ে পড়লো। মাহিদ চোখ তুলে তার দিকে একপলক তাকিয়ে আবার ফোনে মুখ গুঁজলো। পিহু এগিয়ে গেল। বলল

‘ আমার চুড়ি তুমি মাইশাকে দিয়েছ কেন? চুড়ির কি অভাব পড়েছে?

‘ কে বলেছে ওসব তোর চুড়ি?

‘ আমি বলছি। এটাই সত্যি।

‘ তো কি সমস্যা?

‘ সমস্যা মানে? অবশ্যই সমস্যা। আমার জিনিস অন্য কেউ কেন নেবে?

‘ তুই ওই দুই টাকার চুড়ি কেন পড়বি? আমারই ভুল হয়েছে ওইদিন। তুই দামী মানুষ। ফুটপাতের কম দামের চুড়ি তুই পড়বি কেন? তুই নামকরা ডাক্তার মানুষের মেয়ে, ডাক্তারের বউ। তুই পড়বি স্বর্ণ আর ডায়মন্ড। সস্তা চুড়ি তুই পড়িস না সেটা জানা ছিল না।

‘ আমি কখন বলেছি ওগুলো সস্তা?

‘ বলিসনি। আমি সস্তা সেটা ও কখনো কেউ বলেনি, তবে কাজে বুঝিয়ে দেয়। আর চুড়িও সস্তা সেটা বলিসনি তবে তোর প্রতিক্রিয়া সেটাই বলে দিল।

‘ সবসময় এমন করো তুমি। কথা পেঁচাও শুধু। আমি কখনো দাম নিয়ে কিছু বিবেচনা করিনা। আর তুমি সস্তা সেটা কে বললো? সস্তা তো আমি। আমিই সস্তা, আমিই কালো, আমিই অসুন্দর, আমিই সব।

মাহিদ বিরক্ত হলো। বলল

‘ তোকে কালো বলল কে? ঠাস করে একটা দেব বেয়াদব।

‘ তুমি বলেছ। ছিকুকে বলোনি? আমি শুনেছি। চিন্তা করোনা তোমার কপালে সুন্দরী জুটেছে । আমার মতো কালোটালো কেউ জুটেনি।

মাহিদ তার হাতটা টেনে ধরে চেপে ধরলো। দাঁতে দাঁত চেপে রাগে কিড়মিড় করে বলল

‘ ওসব আমার মনের কথা নয়। আমি ওসব মজা করে বলেছি।

‘ তাহলে কোনটা তোমার মনের কথা? বলো।

মাহিদের হাত আলগা হয়ে গেল। সে ছেড়ে দিল পিহুকে। বলল

‘ দূরে থাক। তুই আস্ত একটা সমস্যা আর মাথা ব্যাথার কারণ। দূরে যাহ। দূরে যাহ।

‘ যাব না। আগে বলো।

মাহিদ ধাক্কা দিল পিহুকে। পিহু টাল সামলাতে না পেরে পড়েই যাচ্ছিল। মাহিদ আবার ধরে ফেলল। দাঁড় করিয়ে বলল

‘ পড়ে গেলে ভালো হতো।

‘ তো ধরেছ কেন?

‘ কারণ।

‘ কারণ?

‘ কারণ ধরা উচিত।

চলবে,,,

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে