#মন_গোপনের_কথা
#পর্ব_১৪
লেখনীতে, পুষ্পিতা প্রিমা
পিহুর পরীক্ষা শেষ হয়েছে। ছিকু তার কাছে পড়তে বসেছে। কিছুক্ষণ পড়তে পড়তে ক্লান্ত হলে ধপাস করে শুয়ে পড়লো লম্বা হয়ে। পিহু বলল
‘ কি হয়েছে আব্বা?
‘ ছিকু ঘুম।
পিহু তাকে তুলে আবার কোলে বসালো। বইয়ে আঙুল দিয়ে পড়াতে পড়াতে বলল
‘ আই মিনস আমি। ইউ মিনস তুমি।
ছিকু বলল
‘ আই মিনস ছিকু। ইউ মিনস পিহু।
পিহু তার গালে চটাস করে চুমু দিয়ে বলল
‘ ওমা কি ট্যালেন্ট আমার কলিজার।
পরী এসে বসলো। বলল
‘ পড়া হচ্ছে নাকি শুধু আদর চলছে?
পিহু বলল
‘ পড়ছি তো আমরা। না কলিজা?
ছিকু ঠোঁট ফুলিয়ে বলল
‘ পরী আদর করতে দেয় না কেন?
পরী বলল
‘ চুপ বাজে ছেলে। পড়ো চুপচাপ। কেন কেন করা বন্ধ করো।
বলেই চলে গেল পরী। পিহু ছিকুকে বুকে জড়িয়ে ধরে কপালে গালে আদর করে বলল
‘ আমার কলিজা আজ পড়ে সব শেষ করে ফেলবে। চলেন চলেন শুরু করি।
ছিকু বলল
‘ সব শিষ করব কেন?
পিহু হেসে ফেলল।
___________
ফোনটা টেবিলের উপর রেখে নীরা মাহিদকে বলল
‘ ধর পিহুর মতো মাইয়্যা। আমি পাইয়্যা গেছি বাপ।
মাহিদ ফোনের দিকে তাকালো না। ফোন ঠেলে দিয়ে বলল
‘ ভালা। যাও লইয়্যা আসো তারে। কোলে নিয়া বইসা থাকো।
নীরা কপাল কুঁচকালো। মাহিদের মাথায় চটাস করে চাটি মেরে বলল
‘ অসভ্য ছেলে সংসার কি আমি করব? নাকি তুই করবি? কালই তো বললি আমার পছন্দের মেয়েকে বিয়ে করবি। এখম আবার এরকম বলছিস কেন?
মাহিদ টেবিলে মাথা রাখলো। বলল
‘ বললাম তো বাপের বউ বিয়া করুম। বিয়া করুম না সেটা ত কইনায়। যাও বিয়ের আয়োজন করো। যাও।
‘ এটা কোনো কথা? আগে তো মেয়ের বাড়িতে প্রস্তাব পাঠাতে হবে। কিন্তু যদি জিজ্ঞেস করে ছেলে কি করে?
‘ বলবা সরকারি চাকরি করে। চাকরি তো পাবই। আজ না হয় কাল। শালা ভাইবা পরীক্ষায় আমারে ফেল করাইয়া দিল। শালা টাকলুরে যদি হাতে পাইতাম। ইট দিয়ে বাড়ি মেরে মাথা দু ফাঁক কইরা দিতাম।
নীরা খিক করে হেসে বলল
‘ আচ্ছা আচ্ছা ঠিক আছে। কিন্তু তোর আব্বা বলতেছে মেয়ে দেখে পছন্দ হলে নিশানা দিয়ে রাখনের জন্য। তোর চাকরি হলেই বিয়ে। আমি তো সেইরকম করে তোর জন্য বউ আনবো। একটা কানাকড়ি ও নিমুনা তোর শ্বশুরের থেইকা। পালকি করে নিয়ে আসবো বউ। মেয়েটা তো হেব্বি আছে আব্বা। পিহুরে বলছি পিহুর মতো মাইয়্যা দেখতে, পিহু তো আর ও বেশি সুন্দর মাইয়্যা খুঁজে দিছে। দেখ তোর গায়ের রঙ আর মাইয়্যাটার গায়ের রঙ একদম হুবহু সেম। মানাইবো তো। দেখ না একবার।
মাহিদ ফোন ঠেলে দিয়ে বলল, ধুর বাপ ৷
নীরা মুখ মোচড় দিয়ে বলল, হুহ, বাপের মতো সারাক্ষণ ভাব লইয়্যা থাকে। বাপকা ব্যাটা। ঢং।
মুনা এসে বলল
‘ কি হয়েছে আবার?
নীরা ফোন নিয়ে গিয়ে বলল
‘ আপা এইটা আমার মাহির বউ হবে। বাড়ির খোঁজ পাইছি। কি সুন্দর নাহ?
‘ এটা পিহুর মতো কোথায় হলো? পিহুর রঙ তো শ্যামলা, বড় বড় চোখ, আদুরে চেহারা। এই মেয়ের চেহারা ও সুন্দর কিন্তু রঙ তো ফর্সা। আর পিহুর মতো ডাক্তার তো নয়। আমি তো পিহুর মতো কিছুই দেখলাম না।
‘ ফর্সা হলে তো আর বেশি ভালো। থাক থাক। এইটা ভালো আছে। পিহু মতো না হোক, পিহুর পছন্দ তো। পিহু পছন্দ করে তার মাহিদ ভাইয়ের জন্য বউ খুঁজে দিছে। এইটার চাইতে ভালো কিছু আর আছে? পিহু খুশি তো হবে। ননদ আর ভাইয়ের বৌয়ের মিল পড়লেই হলো।
মুনা মাথা নেড়ে বলল
‘ তা ঠিক। দেখ কথাবার্তা বলে। তোর যখন ছেলেকে বিয়ে করানোর শখ জাগছে। জামাই ও পেয়েছিস একটা। তোর কথায় কথায় হ্যা হ্যা। বাচ্চা বউ তার।
নীরা হঠাৎ লজ্জা পেয়ে গেল ছেলের সামনে অমন কথা শুনে। ধুরর আপাটা ও বেশি। ব্যারিস্টার তার কথায় হ্যা বলবে না কেন? নীরা তার একটা মাত্র বউ বলে কথা।
মাহিদ মায়ের দিকে চোখ তুলে তাকালো। বলল
‘ মেরিমা এসব বিয়ে টিয়ে বাদ দাও। একটা কাজ করি। তোমার আর আব্বার বিবাহ বার্ষিকীটা উদযাপন করি। সেটা ভালো হবে না। তোমরা তো এখনো বুড়া হওনাই।
‘ কি বলে এই ছেলে? বুড়া হমু ক্যান? আমি কত বাচ্চা বয়সে তোর বাপের কাছে চলে আসছি তুই জানোস? তোর বাপ তো মাগার এত বাপ দেখাইতো আমার লগে। হুহ, এখন আমার ভাব দেখে কে? আমার ভাবের ঠেলায় তোর বাপ ফিনিশ। তুই আসবি শোনার পর থেইকা তো একদম চোখে হারায়ছে। একবার আমার পিছপিছ আমার বাপের বাড়ি চলে গেল, সে কি কান্ড! আমার বাপ মহাশয় তো হেব্বি খুশি। এডভোকেট জামাই দাওয়াত ছাড়া বউয়ের পিছপিছ চইলা আইছে। আমার বাপের খুশি দেখে কে? আমি ও শালা কম না। তোর বাপরে নাকানিচুবানি খাওয়াইছি হেব্বি। এমন ভাব মারছি তোর বাপ শুধু হাবাগোবার মতো আমার দিকে তাকাইছিল। আমি ভাব দেখাইতে দেখাইতে আবার তোর বাপের লগে পরের দিন চইলা আসছি।
মুনা হেসে উঠলো। মাহিদ গালে হাত দিয়ে হা করে মায়ের দিকে তাকিয়ে আছে। মুনা হাসতে হাসতে বলল
‘ তুই পারিস ও নীরু। আমি তো ভাবছি রিপটার মাথা এখনো ঠিক আছে কিভাবে? আমার ভাইটাকে তো তুই জ্বালিয়ে মারিস রে।
নীরা ভাব নিয়ে বলল
‘ মাগোমা তোমার ভাই তো একদম সাধুপুরুষ। আমাকে কত জ্বালায় সেটা খবর আছে কারো?
‘ সে যাই বলিস। তুই বেশি জ্বালাস আমার ভাইটাকে। এখন তো আরেক বাঁদর ও আছে। মা ছেলে দু’টোই আমার ভাইটার মাথা খেয়ে ফেলিস।
মাহিদ বলল
‘ আবার আমারে টানতাছো ক্যান জেঠার বউ? আমি ভালা মানুষ। ভালা মানুষ বইলা এতক্ষণ তোমাদের বকরবকর শুনতাছি চুপচাপ।
‘ কি আমি বকরবকর করি? আমি? তুই এটা বলতে পারলি আমার বাচ্চা হয়ে?
মুনা হাসতে হাসতে রুম থেকে বের যেতে যেতে বলল
‘ আর কিছুক্ষণ এখানে থাকলে আমার পেট ব্যাথা হয়ে যাবে। বাপরে বাপ কেমনে যে পারে এরা মা ছেলে?
মুনা যেতেই নীরা হাসলো। মাহিদের পিঠ চাপড়ে দিয়ে বলল
‘ আইচ্ছা তুই থাক। আমি যাই। পিহুকে ফোন দিয়ে মেয়েটার ব্যাপারে আর ও কিছু জেনে নিস।
মাহিদ চেয়ার ছেড়ে বিছানা ধরলো। ধপাস করে শুয়ে পড়লো। ফোন টিপে কল দিল পরীর ফোনে। ছিকু শালার সাথে কথা আছে। শালার জন্য মনপুড়ে।
পরী ফোন ধরলো না। ছিকু শালাই ধরলো। বলল
‘ বোল না মিহি বোল না।
মাহিদ বলল
‘ কি কস শালা?
‘ গান কচছি কেন? ছিকুর গান বিটিফুল বলোনা কেন?
‘ কি গান আবার?
ছিকু উদাম পেটে হাত বুলাতে বুলালো। গা দুলে দুলে কানের ফোন মুখের কাছে এনে গাইলো।
‘ ছুটিয়া না ছুতে মুচ
রং তেরা ধুলনা
ইকি তিরে বাজা দুজা
মেরা কুন মুল না
বোলনা মিহি বোলনা
বোলনা মিহি বোলনা
মিহি গান কচচি। বিটিফুল বলোনা কেন? ছিকুর গান চুন্দর কেন?
মাহিদ হা করে থাকলো। বলল
‘ চুপ থাক শালা। তুই আমার নাম লইয়্যা গান করতাছোস? আমি কি তোরে গান শোনার লগে ফোন দিছি বাপ?
‘ কেন ফুন দিচো কেন?
‘ তোর মা খালা কনডে ক শালা।
‘ পরী ইখানে নাই কেন? পিহু ফুনে কথা বলে কেন?
‘ কার লগে কথা কয়?
‘ মিহি পুঁচা কথা বলে কেন?
” চুপ বেডা। যেটা কইতাছি সেইটার উত্তর দে বাপ। তোর খালারে গিয়া একটা ধাক্কা মার জোরে। যাতে হাত থেইকা ফোন পইড়া যায়। যাহ। নইলে তোর পেট কেটে ফেলব আমি। যাহ।
ছিকু মুখ নিচু করে পেটের দিকে তাকালো। পেটে হাত বুলিয়ে বলল
‘ কেন পেট কাটিবে কেন? ছিকুর কান্না পায় কেন?
‘ তুই যাবি বাপ?
ছিকু হেঁটে হেঁটে চলে গেল। পিহু নিনিতের মায়ের সাথে কথা বলছিল। ছিকু তাকে ধাক্কা দিতেই পিহু সামনে ঢলে পড়লো। ফোন ছুটে গেল হাত থেকে। পিহু
‘ছিকু’
বলে ডাক দিতেই ছিকু দৌড়ে পালালো ওরে মা ওরে বাপ বলে। রুমে এসে ফোন কানে তুলে বলল
‘ মিহি পিহুকে ধাক্কা দিচি কেন? মিহি পুঁচা কথা শিখায় দিচে কেন? পিহু বিথা পাচে কেন?
পিহু রুমে ঢুকলো না আর। কোমরে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে রইলো।
মাহিদ হাসতে হাসতে বলল
‘ ওরে বাপ আমার। সাব্বাশ বেটা। তোরে এক গেলাস করলার জুস খাওয়ামু খুশিতে।
ছিকু খুশি হয়ে গাইলো।
‘ বোল না মিহি বোল না।
পরে পিহুকে দেখে জোরে চিৎকার দিল। বলল, ওবাপ পিহু সব শুনে ফিলচে কেন? পিহুকে ভয় লাগে কেন?
ফোন খাটে পড়ে রইলো। পিহু গিয়ে ফোন তুললো। দেখলো ফোন কেটে দিয়েছে অলরেডি। ছিকু ভয়ার্ত চোখে চেয়ে রইলো পিহুর দিকে। পিহুর হাঁটুমুড়ে বসলো। গুলুমুলু চটকিয়ে দিয়ে বলল
‘ কি বলেছিল মিহি?
‘ পিহুকে ধাক্কা দিতি বলেছে কেন? পিহুকে ব্যাথা দিতে বলেছে কেন?
________
মাহির জন্য নাকি মেয়ে দেখছিস? কখন? মেয়ে কোথাকার? আমাদের তো বললি না।
নীরা বলল
‘ মন খারাপ করিস না ইশু। তোর ভাইপো ভাইবা পরীক্ষায় ফেল মারছে। এখন সে ক্রিকেট চ্যাম্পিয়ন হবে। ক্রিকেট ক্রিকেট নাম জপতেছে সারাক্ষণ। চাকরি বাকরি করার মুডে নাই। তাই তারে সোজা রাখার জন্য একটা বউ লাগবো। সাথে আমাদের সবাইরে দেখাশোনার জন্য।
ইশা হেসে বলল
‘ ঠিক আছে। মাহির তো এখন বিয়ের বয়স বরাবর। ঠিক আছে দেখ। মেয়ে ভালো হলে তো ঠিক আছে। তোর ছেলে যা পাজি, ওকে সোজা করতে সেরকম মেয়ে লাগবে।
‘ হ্যা। তোরে পিহু ছবি দেখাইনাই?
ইশা বলল,
‘ নাহ।
‘ ওমা একি কথা? পিহুরে ডাক। ছবি দেইখা নে। তাড়াতাড়ি বল কেমন দেখতে মেয়ে। আমি তোর মতামত জানার জন্য তোরে ফোন দিছি।
ইশা বলল
‘ আচ্ছা আমি দেখছি।
পিহুকে ডাকলো ইশা। পিহু এসে বলল
‘ কি হয়েছে আম্মা?
‘ মাহির জন্য যে মেয়েটাকে দেখছে সে মেয়েটার খোঁজ নাকি তুমি দিয়েছ? দেখি ছবিটা দেখাও তো।
পিহু ফোন নিয়ে এসে ছবি দেখালো। ইশা বলল, মাশাল্লাহ অনেক সুন্দর। মাহির সাথে মানাবে তো।
ছিকু এসে ব্যাতিব্যস্ত হয়ে বলল
‘ আমাকে দেখায় না কেন? মিহির বুউ দিখতে মন চায় কেন?
ইশা তাকে কোলে তুলে নিল। ছবি দেখিয়ে বলল
‘ এই তো মিহির বুউ। বিটিফুল না?
‘ বিটিফুল কেন? মিহির বুউ চুন্দর কেন?
পিহু চলে গেল। ইশা বলল
‘ মেয়েটার নামটা কি পিহু? পিহু?
পিহুর উত্তর এল না। ছিকু বলল
‘ পিহু কুথা বলেনা কেন?
‘ কে জানে?
_________
উকিল জমির মিয়া সুদর্শন পাত্রের ছবিটা সবার উপরে রেখে মুহিবউদ্দীমকে বললেন
‘ ব্যারিস্টার রেজওয়ান খানকে নিশ্চয়ই চেনেন সাহেব?
‘ কে না চেনে।
‘ এটা ওনার একমাত্র ছেলে। আপনার মেয়েকে ব্যারিস্টারের স্ত্রীর আর ছেলের বড়ই মনে ধরেছে। আমাকে তাড়াতাড়ি জানাতে বলেছে আপনাদের মতামত।
মুহিবউদ্দীন অন্যসব ছবি দেখলো ও না। অবাক চোখে পাত্রের ছবি আর বায়োডাটার দিকে চোখ বুলাতে বুলাতে বলল
‘ রেজওয়ান খানের ছেলে? ওনারা সত্যি অনেক ভালো মনের মানুষ। এত যশ, প্রতিপত্তি হয়েছে চলাফেরায় বিন্দুমাত্র তা বুঝা যায় না। অতি সাদামাটা মানুষ তারা। আমার বড়ই পছন্দের ব্যাক্তি ব্যারিস্টার সাহেব। ব্যারিস্টারের বড় ভাইয়ের সাথে ও তো পরশু আমার দেখা হলো। ওনাদের বোনটা চৌধুরী বাড়ির ছোট বউ মনে হয়। চৌধুরী সাহেবদের সাথে ও ভালোই সম্পর্ক ওনাদের। ওনাদের সাথে সম্পর্ক করতে কোনো দ্বিধা নেই আমার। তারপরও আমি মাইশা আর তার ভাইয়ের সাথে কথা বলি। মেয়ের মতামত তো লাগবেই।
জমির মিয়া হাসিমুখে বাড়িটা ছাড়লেন। নীরাকে ফোন করে সব খুলে বললেন। নীরার মুখ কালো হয়ে গেল। পাত্রকে তো পছন্দ করেছেই কিন্তু তার আগে বড় কথা হলো পাত্রের বাবাকে খুব বেশি পছন্দ হয়েছে। নীরা হিংসে হলো। তার ব্যারিস্টারকে কেন পছন্দ করতে যাবে। বেটা বেয়াদব। কিন্তু পরক্ষণে খুশিতে নাচতে নাচতে চৌধুরী বাড়িতে খবরটা দিল নীরা। পিহুকে ফোন করে বলল
‘ আম্মাজান তাড়াতাড়ি আমাদের বাড়িতে আসো। মিষ্টিমুখ করা লাগবো তো। মাহিরে সেইরকম পছন্দ হয়েছে নাকি। মেয়ের বাবার পছন্দ মানে মেয়ের ও পছন্দ। আমার মাহি কি কম নাকি কোনদিক দিয়ে? আমার বাচ্চা তো একটুকরা চাঁদ।
পিহু উত্তেজিত হয়ে বলল
‘ তাই? তাহলে তো খুব খুশির খবর? আমি নিজেই মিষ্টি নিয়ে যাচ্ছি। মাহিদ ভাইকে বাসায় থাকতে বলো। আমি নিজের হাতে মিষ্টি খাওয়াবো। বিয়ের খুশিতে মিষ্টি।
‘ আইচ্ছা। আসো আসো।
পরদিন পরী ছিকুর সাথে পিহু ও গেল খান বাড়ি। ছিকু তো মহাখুশি। মিহির সাথে তার দেখা হবে। কোলে চড়া যাবে। মাইর খাওয়া যাবে। কি মুজা?
মিষ্টির প্যাকেটটা পিহুর হাতেই ছিল। তারা বাড়িতে ঢোকার সাথে সাথে নীরা ছুটে এল। চোখেমুখে খুশির ঢল। বলল
‘ আরও একটা খুশির খবর। মেয়ের বাবা জানিয়েছে মাহির চাকরি হয়ে গেলেই তারা মেয়ে তুলে দেবেন। কি খুশির খবর। তোমরা এত মানিক ক্যান আম্মাজান। আসার সাথে সাথে খুশির খবর ও নিয়া আসছো।
পরী বলল
‘ যাক। এই বাড়িতে বউ আসবে। এইবার আর আমাকে শুনতে হবেনা বাড়িটা খালি হয়ে আছে।
মুনা ছিকুকে কোলে তুলে নিল। আদরে আদরে ভরিয়ে দিয়ে বলল
‘ কেমন আছে আমার ভাই?
‘ মিহি নাই কেন? মিহিকে মিচ করি কেন?
নীরা বলল
‘ সে তো বহুদূরে ক্রিকেট ম্যাচ খেলতে গেছে। জেলার বাইরে। অনেকদূর। ফিরতে ফিরতে রাত হবে। থাক সমস্যা নাই তার মিষ্টি তার জন্য বরাদ্দ থাকবো।
পরী পিহু একসাথে হাসলো।
________
মাহিদ আসলো রাতে। ক্রিকেট ম্যাচে আজ হেরেছে। ইজ্জত সম্মান সব ডুবেছে। মাথা খারাপ। বাড়ি ফিরে চুপচাপ ঘরে গিয়ে গোসল নিল। ছিকু তার ঘরে গেল। ওয়াশরুমের দরজা ধাক্কা দিতে দিতে বলল
‘ মিহি ছিকুর সাথে কথা বলেনি কেন? কোলে নেয়নি কেন?
মাহিদ সোপ গায়ে মাখা অবস্থায় দরজা খুললো। ছিকুর গায়ে ফেনা লাগিয়ে দিয়ে কাছে টেনে গালে চুমু খেল। বলল
‘ আদর বাকি থাক বাপ। আমি গোসল সেড়ে আইতাছি।
ছিকুর মাথা দুষ্টু বুদ্ধি এল। ভেতরে ঢুকে ঝর্নার ট্যাপ মোচড়ে দিল। পানিতে জবজবে ভিজে উঠতেই সে নেচে উঠে গাইলো
‘ বোল না মিহি বোল না।
মাহিদ তাকে কোলে নিয়ে আদর দিতে দিতে বলল
‘ শালা তোর আমার লগে গোসল করতে মন চায়। কর। তোরে আইজ পানিতে চুবায় রাখুম।
মাহিদ গোসল থেকে বের হলো উৎপুল্ল মনে। কিন্তু নিচে গিয়ে সবার মুখে এক এক কথা শুনে রাগ বাড়লো তরতরিয়ে। হেরে যাওয়ার খারাপ লাগাটা মাথা চাড়া দিয়ে উঠলো। পিহুকে দেখা গেল না আশেপাশে। বিরক্ত হলো মাহিদ। রাতের খাওয়ার সময় দেখা হলো দুজনের। পিহু তার সাইড কেটে সরে পড়লো। খাওয়ার টেবিলে রিপ টুকটাক কথা বললো পিহুর সাথে। খাওয়ার টেবিলেই মাহিদ জানতে পারলো তার হবু স্ত্রীর নাম মাইশা। ওই মাইশা নয়তো। যেটা ভাবলো ঠিক সেটাই। নীরার ফোনে দেখলো মাইশারই ছবি। সব রাগ গিয়ে পড়লো পিহুর উপর।
খেয়েদেয়ে সবাই তখন ঘুমের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেছে। ছিকুকে ঘুম পাড়িয়ে পিহু তখন মাত্রই বারান্দায় এসে দাঁড়িয়েছে। চুল খুলে দিয়েছে। নরম রেশমী চুল গুলো দিয়ে সুগন্ধি বেরোচ্ছে শ্যাম্পুর। ঠান্ডা বাতাসে মনপ্রাণ জুড়িয়ে যাচ্ছে। কোথা থেকে যেন মাহিদ হনহনিয়ে এল। যেন অনেক আগে থেকেই পিহুকেই খুঁজছিল সে। পিহুর হাত ধরে টেনে নিয়ে গেল। বাড়ির বাইরে দাঁড় করিয়ে মুখের উপর দরজা বন্ধ করে দেওয়ার সময় বলল
‘ এই বাড়িতে এসেছিস কেন? মিষ্টি খাওয়ানোর জন্য? ওয়েট।
বলেই মাহিদ কোথায় যেন চলে গেল। পিহু শান্ত, স্থির চোখে পাগলামি দেখছে। মাহিদ গিয়ে আবার এল। হাতে মিষ্টির প্যাকেট। পিহুর মুখের উপর ছুঁড়ে মারলো প্যাকেটটি। যদি ও সেটাতে সীমিত মিষ্টি ছিল। পিহু মুখ সরাতেই মিষ্টিগুলো নিচে পড়লো। মাহিদ গর্জে বলল
‘ দূর হ। একদম পা রাখবিনা আমার বাড়িতে। আমার বিয়ে হলে তোর কি? তোর এত খুশি কিসের? তোর এত নাচানাচি কিসের? আমার বিয়ের বয়স হয়ছে, বিয়ে আমি করবোই। সেখানে তোর এত বাড়াবাড়ি কিসের? তুই মেয়ের খোঁজ দিয়েছিস বলে? তুই না দিলে আমি তাকে খুঁজে পেতাম না। আরেহ আমার তাকে খুঁজতেই হতো না। আমি তোর আগেই তারে ঠিক করে রাখছি। তুই খোঁজ না দিলে ও আমি তাকেই বিয়ে করতাম। এবার যাহ। তুই খবরদার ভুলেও আমার সামনে আসবি না।
পিহু তখন ও শান্ত। শান্ত গলায় বলল
‘ আফসোস হচ্ছে আমার। ভীষণরকম আফসোস হচ্ছে তোমার বউয়ের জন্য। কারণ তুমি কখনোই তাকে তোমাকে দিতে পারবে না। কারণ কি জানো কারণ তুমি নিজের মধ্যেই নেই মাহিদ ভাই।
মাহিদ ধপ করে দরজা বন্ধ করলো ওর মুখের উপর। সোজা ঘরে চলে গেল। রাগে মাথার চুল ছিঁড়তে ইচ্ছে করছে তার। ক্রিকেট ব্যাডটা টেবিলের উপর ছুঁড়ে মারলো। তারপর শুয়ে পড়লো।
রিপ বাড়ির দরজা খুলে দিল। পিহু তখনি নিজের সরূপ লুকোতে ব্যস্ত হয়ে পড়লো। রিপের চোখ তার ভেজা গাল এড়ায়নি। কোমল গলায় বলল
‘ আসো মামা । রাত হয়েছে অনেক। ঘুমিয়ে পড়া দরকার।
পিহু নরম পায়ে হেঁটে ঢুকলো বাড়িতে।
চলবে,,,,,
#মন_গোপনের_কথা
#পর্ব_১৫
লেখনীতে, পুষ্পিতা প্রিমা
সকালে ব্রেকফাস্টের সময় মাহিদকে দেখা গেল না। ছিকু চেয়ারের উপর দাঁড়িয়ে পুডিং কেটে চামচ গালে দিয়ে বলল
‘ মিহি কুথায়? আচে না কেন?
নীরা তার গাল টেনে টাপুসটুপুস আদর করে বলল
‘ বাবুসোনা মিহি পড়াতে গেছে। বন্ধুর নাকি কোচিং সেন্টার আছে। ইন্টারের ব্যাচ। ওখানে পড়াবে।
পরী বলল
‘ কোচিং?
‘ হ্যা। লাবীবের কাজিনের । পরীক্ষার্থীদের জন্য এক্সট্রা গাইড দরকার নাকি ওই কোচিংয়ে। মাহি ফ্রি আছে। তাই গেল আর কি।
ছিকু পানির গ্লাস নিতে চাচ্ছে। নিতে পারছেনা। মুনা এসে পানি খাইয়ে দিল। বলল
‘ ভাই পুডিংটা পুরো খেতে হবে তো।
‘ কেন পুরু খেতে হবে কেন? ছিকু খেতে মন চায় না কেন?
পরী বলল
‘ ঠাস করে দেব একটা। প্রয়োজনে অপ্রয়োজনে ও কেন কেন করবে।
ছিকুর ঠোঁট উল্টানো শুরু হতে লাগলো ধীরেধীরে। মুনা তাকে কোলে নিয়ে বুকের সাথে জড়িয়ে ধরে আদর করতে করতে বলল
‘ একদম নয়। পরীকে মারব। আমার ভাইকে বকেছে?
‘ কেন বুকেছে কেন? পরী ছিকুকে আদর দেয় না কেন?
রিক হেসে বলল
‘ মুনা ওকে আমার কোলে দাও। তুমি আর নীরু খেয়ে নাও।
ছিকু রিকের কোলে চলে গেল। রিপ বলল
‘ ছিকু কি পড়াশোনা করছে?
ছিকু ডাগরডোগর চোখে চাইলো। কপাল কুঁচকে গেল তার। নাক কুঁচকে গেল। সাথে ঠোঁট ও ফুলে উঠলো। চেহারাটা দেখতে মজা লাগছে। যে কারো দেখলে হাসি পাবে। রিপ হেসে ফেলল। পরী বলল
‘ দেখেছ পাপা পড়ার কথা বললে চেহারা এরকম করে তাকায়।
ছিকু ওভাবেই তাকিয়ে থাকলো। রিক হেসে উঠে ছিকুর মুখ লাগিয়ে রাখলো তার মুখের সাথে। তারপর গভীর চুম্বন আঁকলো কপালে। বলল
‘ অনেক বড় হবে আমার ভাই।
‘ ছিকুকে ভাই ডাকু কেন?
সবাই আরেকদফা হাসলো। পরী বলল, সবাই আপনার বাজে প্রশ্নের দিতে বসে নেই। ছিকু নাক ফুলিয়ে তাকালো পরীর দিকে। পিহু বলল
‘ কলিজা আপনি পিহুর কাছে পড়েন না? সেটা বলেন না সবাইকে।
ছিকু সাথে সাথে প্রশ্ন করলো।
‘ কেন? বলব কেন?
পিহু হতাশ হলো। নাহ এই ছেলের সাথে কোনো কথা বলা যাবে না।
মাহিদ বারোটার সময় ফিরলো। মুনা বলল, পরী আসার সময় কাল মিষ্টিদই এনেছিল। খাবি?
‘ এখন না।
বলেই নিজের ঘরের দিকে হাঁটা ধরলো সে। দ্রুত গোসল নিল। রোদ আর রাস্তাঘাটের ধুলোবালিতে ঘেমে যা তা অবস্থা। গোসল শেষে গায়ে ঢিলেঢালা টি শার্ট জড়ালো সে। থ্রি কোয়াটার প্যান্ট পড়ে গামছা গলায় ঝুলিয়ে মাথা মুছতে মুছতে বিছানায় পড়ে থাকা ফোনের কাছে এগোলো। কানে গানের আওয়াজ এল। সেই আওয়াজ অনুসরণ করে রুম থেকে বের হলো মাহিদ। হাঁটতে হাঁটতে গিয়ে পৌঁছুলো পরীর ঘরের সামনে। ভেতরে ফোনে গান চলছে। গানের সাথে সাথে হাত পা কোমর দুলিয়ে দুলিয়ে নাচছে ছিকু। পিহু শুয়ে শুয়ে একের পর এক গান দিচ্ছে। জিজ্ঞেস করছে
‘ এই গানটা সুন্দর আব্বা?
ছিকু মাথা দুলিয়ে দুলিয়ে নাচতে লাগলো। গায়ে কাপড় নেই। হাঁটুর উপর অব্দি ছোট সাইজের একটি লিনেন কাপড়ের প্যান্ট। গরমে ঘামছে তাই মুনা তাকে এটা পড়িয়ে রেখেছে। ছিকু এইবার আরামবোধ করছে। তাইতো খুশিতে নাচছে। মাহিদ পেছনে হাত গুটিয়ে দাঁড়িয়ে ছিকুর নাচ দেখতে লাগলো। ছিকু গানের সাথে সাথে তাল মিলিয়ে গাইলো
হাচ মেরী পরম পরম
পরম পরম পরম চুন্দুরী
হাচ মেরী পরম পরম
পরম পরম পরম চুন্দুরী
মাহিদের পেট ফাটা হাসি জমে থাকলো গালের ভেতর। পিহু আরেকটা গান দিল। ছিকু নাচ থামিয়ে দিল। কোমরে হাত রেখে নাকমুখ কুঁচকে মাহিদের দিকে তাকালো। কিছু বলার আগেই মাহিদ চুপিসারে তাকে কোলে তুলে মুখ চেপে ধরে তার ঘরে নিয়ে আসলো। বিছানায় ধপাস করে ছুঁড়ে মারলো। ছিকু হাত পা ছড়িয়ে শুয়ে পড়ে প্রশ্ন করলো
‘ মিহি লুকোলুকি করে পিহুকে দিখে কেন? কেন বাপ কেন?
মাহিদ তার গালে পিঠে ঠাসঠুস মেরে বলল
‘ তুই শালা ভারী বেয়াদব। তুই যে পেট দেখায়, বুক দেখায় ছোড প্যান্ট পড়ে তিড়িংতিড়িং করে নাচতাছোস তোরে আমি কিছু কইছি শালা? তুই পুরুষজাতির কলঙ্ক। বেডা বেয়াদব।
পিহু এসে দাঁড়ালো দরজার কাছে। ছিকুকে মাহিদের কাছে দেখতে পেয়ে চলেই যাচ্ছিল। আবার দাঁড়ালো একটুখানি।
ছিকু ড্যাবড্যাব করে মাহিদের দিকে তাকিয়ে বলল
‘ কেন? ছিকুকে বিদ্দব ডাকো কেন? মিহি বিদ্দব কেন? পিহুকে লুকোলুকি করে দিখে কেন?
মাহিদ সাথে সাথে তার গাল চেপে দিল। বলল
‘ শ্লা তোর খালা কালা মানুষ। তারে কিল্লাই আমি লুকায় লুকায় দেখুম? কিল্লাই? ফালতু কথা কস।
‘ কেন মিহি পিহুকে কালা বলে কেন?
মাহিদ চুপ করে থাকলো। না এই শালার লগে কোনো কথা নাই। অ কে অজগর বানিয়েই ছাড়বে।
______
দুপুরে সবাই একসাথে খেতে বসলো। মাহিদের সাথে ছিকু ও এল। পিহু রিপ আর পরীর মাঝখানে বসেছে। মাহিদ গিয়ে রিপের পাশে ছিকুকে দাঁড় করিয়ে দিয়ে নিজে ও চেয়ার টেনে বসলো। ছিকু চেয়ারে বসলে টেবিলের কিছুই দেখতে পায় না। কারণ সে ছোট মানুষ। তাই দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে খায় ও৷ অবশ্য এ নিয়ে তার ও দুঃখের শেষ নেই। কেন সে সবার মতো বসে বসে খেতে পারেনা। কেন?
নীরা আর মুনা ও এসে বসলো। মুনা বলল
‘ কয়েক মাস তো গেল। পরীক্ষা আবার কবে মাহি?
মাহিদ খেতে খেতে তাকালো। তার উত্তর রিপ দিয়ে দিল।
‘ একটু দেরী আছে।
নীরা বলল
‘ আল্লাহ এইবার যাতে পাস হয়ে যায়। এটা কোনো কথা? ভাইবা পরীক্ষায় মানুষ ফেল করে? ফেল না করলে এক্ষুণিই বউ নিয়ে আসতে পারতাম।
মুনা হেসে বলল
‘ ওর পরীক্ষার সাথে বিয়ের কি সম্পর্ক? ওর বউ দিনে কি এক মণ চালের ভাত খাবে নাকি? আমরা যা খাব তাই তো খাবে। এখনই তো নিয়ে আসতে পারিস। চাকরির কথা কি তোরা বলছিলি নাকি?
নীরা অন্যমনস্ক হয়ে বলল
‘ তাই তো। সেটা তো ভেবে দেখিনি। সমস্যা কি? ব্যারিস্টার তার নিজের বউ ও পালবে, ছেলের বউ ও পালবে। কি আশ্চর্য! আমি তো এটা ভেবে দেখিনি। আজকে একটা কাজ করি। মাইশাকে আজ একবার আমাদের বাড়িতে আসতে বলি। মাহি তুই কি বলিস?
মাহিদ খেতে ব্যস্ত। উত্তর দিল না। খাওয়া শেষে চলে যাওয়ার সময় রিপ তাকে থামিয়ে দিল। বলল
‘ তোর মায়ের প্রশ্নের উত্তর দে।
মাহিদ মাথা চুলকে বলল
‘ ওসব আমি জানিনা মা।
তারপর পর চলে গেল।
পরী হেসে ফেলল। বলল
‘ ছোট মা ভাই লজ্জা পাচ্ছে।
ছিকু প্রশ্ন করলো।
‘ কেন? মিহি নজ্জা পাচচে কেন?
_____________
মাইশার মা পরপর অনেকগুলো কাপড় বের করে বিছানায় বিছিয়ে রেখেছেন। মাইশা টেবিলে বসে ফোনে মগ্ন। তিনি এই পঞ্চমবারের মতো মেয়েকে ডেকে বললেন
‘ খয়েরী রঙেরটা পড়। এটাতে তোকে দারুণ লাগবে।
মাইশা ফোনটা রেখে দিল। বলল
‘ মা প্লিজ। আমি ওদের বাড়ির বউ হয়ে যাইনি এখনো। আর আমি ওই বাড়িতেও যাচ্ছি না। জাস্ট মিঃ মাহিদের সাথে দেখা করব। কিছু কথা আছে। এসব নিয়ে বাড়াবাড়ি করোনা তো।
‘ কিন্তু মিসেস খান যে বলল।
‘ ওনি তো বলবেনই। তুমি ওনার ছেলেকে বলোনি? আমি মিঃ মাহিদকে আগে থেকে চিনি। আমি চাই ওনার সাথে আমার আগে বন্ধুত্বটা হোক। তারপর বাকিসব।
মরিয়ম বেগম মাথা নাড়ান। বললেন
‘ তাও এই খয়েরীটা পড়। এটা তোকে বেশি মানাবে।
মাইশা সেটা হাতে নিল। বলল, এবার খুশি?
মরিয়ম বেগম হাসলেন।
মাহিদের সাথে ছিকু ও বের হলো। সাথে পরী। মাইশার সাথে সে পরিচিত হবে। পিহু বেরোতে চাইলো না। নীরা মুনা জোর করে তাকে পাঠালো। একা একা এখানে কি করবে? তার চাইতে বরং ঘুরে আসা ভালো।
বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশেই পার্কের কাছাকাছি জায়গায় মাইশার আসার কথা ছিল। পরী মাহিদকে বলল
‘ ও কোথায় রে?
মাহিদ আইসক্রিম খেতে খেতে বলল
‘ আসবে।
ছিকু এদিকওদিক তাকিয়ে পিহুকে বলল
‘ মাইচা এখুনো আচে না কেন?
পিহু হেসে উঠলো। বলল
‘ মাইশা সাজগোজ করে আসতেছে কলিজা। হবু বরের সাথে দেখা বলে কথা। চলেন আমরা অন্যদিকে যাই।
পরী বলল
‘ কোথায় যাবে?
‘ আমরা ওদিকটাই যাই দিদিয়া। ওখানে অনেক বাচ্চা আছে।
পিহু যেতে না যেতেই মাইশা চলে এল। সৌজন্যেমূলক হাসলো। বলল
‘ আসসালামু আলাইকুম।
সরি ফর লেট। রিকশা পাচ্ছিলাম না।
পরী বলল
‘ ওয়ালাইকুমুস সালাম। ইটস ওকে। কেমন আছ?
‘ আলহামদুলিল্লাহ। আপনি কেমন আছেন?
‘ আলহামদুলিল্লাহ আমিও ভালো।
মাহিদ চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইলো। মাইশা বলল
‘ মিঃ মাহিদ চুপচাপ কেন? আর ইউ ওকে?
মাহিদ মাথা নাড়ালো। মাইশার সাথে অনেক কথাবার্তা হলো পরীর। পরী তারপর মাহিদ আর মাইশাকে একা ছেঁড়ে দিল। বলল, তোমরা কথা বলো, আমি রাহি আর পিহুকে দেখি কোথায় গেল ওরা?
পরী যেতেই মাইশা চুপ হয়ে গেল। মাহিদ ও চুপ। কোনো কথা হলো না অনেক্ক্ষণ। তারপর মাইশা নিজেই কথা বললো।
‘ মিঃ মাহিদ কারা মানুষকে কনফিউজডে ফেলে দিতে পারে বলুন তো?
‘ ডক্টর। রাইট?
মাইশা হাসলো। বলল
‘ ইয়েস। জিনিয়াস পারসন।
‘ থ্যাংকস।
‘ মিঃ মাহিদ। আজকে সন্ধ্যার কফিটা তাহলে আমিই খাওয়াই। প্লিজ।
‘ ওকে।
মাইশা পরীকে ডাক দিল। পিহুকে দেখে হাসলো মাইশা। বলল
‘ হেই পিহু কেমন আছ? তুমি এতক্ষণ কোথায় ছিলে?
পিহু হাসলো। বলল
‘ ঘুরছিলাম।
ছিকু বলল
‘ এটা মাইচা কেন? মিহির বুউ কেন?
উপস্থিত লজ্জায় পড়ে গেল মাহিদ আর মাইশা৷ পিহুর দিকে রেগে তাকালো মাহিদ। সব এই বেয়াদবের দোষ। পিহু সেদিকে তাকালো ও না। মাইশা ছিকুকে কোলে নিল। বলল
‘ কত্ত কিউট করে কথা বলে বাবুটা। আপু আপনার বাবুকে আমি নিয়ে যাব। দেবেন?
ছিকু মাইশার কোল থেকে নেমে যাওয়ার জন্য ধস্তাধস্তি লাগালো। মাইশা বলল
‘ আচ্ছা আচ্ছা ঠিক আছে বাবু। আপনাকে কোথাও নিয়ে যাব না।
‘ মাইচা ছিকুকে বাবু বুলে কেন?
মাইশা হেসে উঠলো। ওয়াও ভেরি ফানি একটা গুলুমুলু বাচ্চা।
রেস্টুরেন্টে ঢুকে নাশতা সাড়লো সবাই। তারপর আর ও কিছুক্ষণ ঘুরাঘুরি করে মাইশাকে রিকশায় তুলে দিল। মাইশা চলে যেতেই আরেকটা রিকশায় পরী, ছিকু আর পিহু উঠে বসলো। মাহিদ পরের রিকশায় বাড়ি গেল। বাড়ি ফিরতেই নীরা জেরা করলো পরীকে । মাইশার কথাবার্তা কেমন? মেয়েটা ঠিক কেমন তা শুনতে মরিয়া হয়ে উঠলো সে। পরী বলল, খুব মিষ্টি একটা মেয়ে। ভাইয়ের পাশে দারুণ লেগেছে।
‘ পিহু তোমার কেমন লেগেছে?
‘ যার সাথে বিয়ে হবে তার ভালো লাগলেই হলো। ওনি খুব ভালো মেয়ে আমি যতটুকু জানি। খুব মিশুক ও। তোমার সাথে ভালো জমবে মামি।
‘ থ্যাংকিউ আম্মাজান। আমি তোমার উপর ভরসা করে ভুল করিনাই। তোমারে আদর দিলাম যাও।
পিহু হেসে বলল, নিলাম।
‘ ছিকুকে আদর দাও না কেন?
‘ বাবুসোনা তোমারে ও আদর দিলাম যাও।
মাহিদ টিভির রিমোট চেপে টিভি বড় করলো। বিরক্ত হয়ে বলল
‘ মা এসব বকরবকর অন্যকোথাও গিয়ে করো।
মুনা বলল
‘ ওমা! দেখা করতে গেলি। হবু বউয়ের সাথে ছবি টবি তুলিস নি মাহি?
মাহিদ টিভিটাই বন্ধ করে দিল। পরী বলল
‘ ওদের মধ্যে এখনো জড়তা কাজ করছে মা। ওগুলো কাটিয়ে উঠুক তারপর ছবি তোলার কথা বলতে হবে না। কিছুদিন পরিচিত হোক। একে অপরকে জানুক।
মুনা পিহুকে বলল
‘ পিহু তোমার আর নিনিতের কয়েকটা ছবি দিও তো। কাল আমার ছোট ভাইয়ের বউ নিনিতের ছবি দেখতে চাইছিল। তোমাদের কাপল ছবি দেখতে চেয়েছে।
‘ দিদিয়ার ফোনে আছে।
পরী বলল
‘ হ্যা আমার কাছে আছে তো।
মুনা ছবিগুলো দেখে দেখে বলল
‘ দুজনকে সুন্দর লাগছে। মানিয়েছে খুব। একেবারে রাজযোটক। তোমরা কি ফোনে কথা টথা বলোনা নাকি?
‘ বলি। উনি হসপিটালে বিজি থাকেন বেশিরভাগ সময়। তাই সবসময় বলা হয় না।
নীরা বলল,, মাগোমা এরা ফোনে ও না হয় কথা বলে। আমাদের বেলায়, ধুর আমার
কথা না হয় বলি। ব্যারিস্টার ফোনে কথা বলা দূরে থাক। সামনাসামনি যদি জিজ্ঞেস করি কেমন আছেন? খাইছেন? নাউজুবিল্লাহ। ব্যাটা একটার ও উত্তর দিত না। কি পরিমাণ ভাব যে দেখাইতো। আমার ইচ্ছা করতো মাথা ফাটাই দিই। কিন্তু আমার ভবিষ্যৎ বাচ্চা মানে মাহির কথা ভেবে মারিনাই। সে বাপ কোথায় পাইতো আবার?
মাহিদ হনহনিয়ে চলে গেল। ঘরে গিয়ে চিল্লিয়ে পিহুকে ডাকলো। সবাই ভড়কে গেল। মুনা বলল, আবার কি হলো রে?
পিহু বলল
‘ আমি দেখছি।
নীরা বলল
‘ ও আল্লাহ আবার কি হলো?
পিহু যেতেই মাহিদ ধপাস করে দরজা বন্ধ করলো। পিহুর গলা চেপে ধরে দেয়ালে লাগিয়ে রাখলো৷ পিহু ছাড়ানোর চেষ্টা করলো না। কারণ গলাটা সামান্য করে ধরেছে মাহিদ। পরক্ষণে মাহিদকে জোরে ধাক্কা মারলো পিহু। বলল
‘ কি সমস্যা তোমার?
মাহিদ কিছু একটা বলতে গিয়ে ও বলতে পারলো না। শুধু বলল
‘ তুই তোর বাপকে গিয়ে বলবি তুই বিয়ে করবি না। আমার বাপকে গিয়ে বলবি আমি ও এখন কোনো বিয়ে টিয়ে করব না।
পিহু বলল
‘ তোমাকে এখন কেউ জোর করছেনা। আর আমি বিয়ে করবো। কেন করব না?
মাহিদ তার হাত তারই পিঠের সাথে চেপে ধরলো। পিহু বলল
‘ লাগছে আমার।
মাহিদ দাঁতে দাঁত চেপে বলল
‘ লাগুক৷ যা বলেছি তাই কর চুপচাপ নইলে খুব খারাপ হবে। তুই কাঁদবি।
পিহু চোখ উল্টে তার দিকে তাকালো। কিছুক্ষণ পরেই বলল
‘ আমি কেঁদেছি, তুমি ও একটু কাঁদো। নোনা পানির স্বাদ নাও। স্বাদটা বুঝা দরকার তোমার।
চলবে,,,,