মনের গহীনে সে পর্ব-২৪

0
733

#মনের গহীনে সে 🖤
#পর্ব- ২৪ [অচীনের ডাক]
#Jannatul_ferdosi_rimi (লেখিকা)
আরিয়ান হতাশ হয়ে অন্তুর পাশে বসে পরে। অন্তুর অবস্হা অবনতির দিকে। অন্যান্য ডক্টররা একপ্রকার হাল ছেড়ে দিয়েছে।অন্তুর বেঁচে থাকার আশা একেবারেই নেই। আরিয়ান তা বুঝতে পেরেও,মানতে চাইছে না। আরিয়ান অন্তুর হাত ধরে কান্নামিশ্রিত গলায় বলে উঠে, ‘ অন্তু! কেন করলে এমন? কি অদ্ভুদ দেখো? আজ এতোকিছুর পরেও, তোমার উপর বিন্দুমাত্র ঘৃণা আসছে না। কতজনই বা পারে? নিজের ভুলটাকে এইভাবে শুধরে নিতে।নিজের জীবনের বিনিময়ে, অন্যকে বাঁচিয়ে তুলতে। সত্যিই তুমি অন্যন্যা। একবার চোখ মেলে তাঁকাও। ‘

আরিয়ান কথাটি বলেই পরম যত্নের সাথে অন্তুর মাথায় হাত বুলায়। মেয়েটি নিজের মায়ের জন্যে মিসেস জুলির কথায় এতোদিন কাজ করে এসেছে তবুও শেষ পর্যন্ত নিজের ভুলটাকে বুঝে,মেহেভীনকে বাঁচিয়ে নিজের জীবনকে মৃ/ত্যুর দিকে ঠেলে দিয়েছে।অন্তুর জন্মের সময়ই তার বাবা মা/রা যায়।
ছোট থেকেই একা মাকে নিয়ে সংগ্রাম করে যাচ্ছে সে। নিজে কষ্ট করে টিউশিউনি করে পড়াশুনা চালিয়ে গিয়েছে। আরিয়ানের মনের সবটুকু জুড়ে অন্তু এই কয়েকদিনে বেশ ভালোভাবে জায়গা করে নিয়েছিলো। অন্তু যেদিন প্রথম আরিয়ানের বাসায় এসেছিলো, তখনি আলাদা এক ভালোলাগা কাজ করেছিলো অন্তর প্রতি আরিয়ানের। আজও সেই কথা মনে পরে গেলে অধরের কোণে মুচকি হাঁসি ফুটে উঠে আরিয়ানের। আরিয়ানকে বোকা বানাতে গিয়ে, নিজেই মেঝেতে গিয়ে পরে গিয়েছিলো অন্তু। তা দেখে আরিয়ানের সেই কি হাঁসি। বাঁকা দাঁতের হাসির সৌন্দর্যে সেদিন অন্তুও মুগ্ধ হয়ে গিয়েছিলো, অথচ আজ সেসব দিন অতীত! সুখময় এক অতীত।

আরহাম মিসেস জুলিকে যেখানে রাখা হয়েছে, সেখানে যায়। আরহামকে দেখে তাচ্ছিল্যের এক হাসি দেয় মিসেস জুলি। আরহামের আখিজোড়া দিয়ে যেন আগুনের গোলা বের হচ্ছে। মহিলা না হলে এতোক্ষনে মিসেস জুলিকে গলা টি/পে মে/রে দিতো। আজ মিসেস জুলির মতো জঘন্য মহিলার জন্যে এতোগুলো জীবন বিপন্ন। আরহাম এবং মেহেভীন এতোদিন আলাদা ছিলো, এমনকি অন্তুর এমন করুন পরিনতির জন্যে মিসেস জুলিই দায়ী। আরহাম মিসেস জুলির সামনে দাঁড়িয়ে, হাত মুঠো করে শক্ত গলায় বললো,’ কেন আপনার নোংরা গেমে অন্তুর মতো মেয়েকে ইউজ করলেন? আজ মেয়েটা মৃত্যুর পথযাত্রী। ‘আরহামের প্রশ্নে মিসেস জুলি বলে উঠে,
‘ বেচারা অন্তু ভেবেছিলো আমি শুধু তোমার থেকে মেহেভীনকে আলাদা করতে চাই বলে, মেহেভীনকে নিজের কাছে নিয়ে আসবো, তাইতো টাকার বিনিময়ে আমার হয়ে এতোদিন ধরে কাজ করে এসেছে, কিন্তু যখনি সে জানতে পারে আমি মেহেভীনকে মে/রে ফেলবো। বন্ধুত্বের টানে একেবারে ছুটে এসে, আমার সব প্ল্যানে জল ঢেলে দেয়। ব্লাডি গার্ল। তাই আমার ছেলেরা তাকে তার যথার্থ শাস্তি দিয়েছে। ‘

আরহাম ক্ষেপে গিয়ে, টেবিলে জোড়ে বারি দিয়ে বলে, ‘ এতোটা জঘন্য মানুষ কী করে হয়? নিজের ভাইয়ের মেয়েকে শেষে কিনা আপনি ধর্ষন করিয়ে, মে/রে ফেলতে চাইছিলেন? এতোটা নির্মম কি করে হলেন আপনি? আপনাকে নিজের খালা ভাবতেও আমার ঘৃণা হচ্ছে। ‘

মিসেস জুলি সঙ্গে সঙ্গে চেচিয়ে জবাব দেয়, ‘ কিসের ভাইয়ের মেয়ে হ্যা? ওই মেয়ে কোন আমার ভাইয়ের মেয়ে না। আকবর হোসেন আমার সৎ ভাই। আর ওই মেহেভীন আমার সৎ ভাইয়ের মেয়ে। তোমার মাও তো আমার সৎ বোন।সৎ কখনো আপন হয়না। শুধুমাত্র আমি নিজের পছন্দে পালিয়ে বিয়ে করেছি বলে, আমাকে সব সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করেছে আকবর। আমি দ্বিতীয় পক্ষের ছিলাম বলে, তোমার মা-মামারা সবসময় নিজেদের কর্তিত্ব ফলাতে চেয়েছে আমার উপর। ‘

‘ সেটা আপনার ভালোর জন্যেই করা হয়েছিলো, মিসেস জুলি। আপনি একজন ড্রাগ ডিলারের হাত ধরে পালিয়েছিলাম। সে অসৎ মানুষের সাথে থেকে আপনিও আজ এমন এক জঘন্য পর্যায়ে চলে গিয়েছেন। লজ্জা করেনা? এতো বড় অপরাধ করেও, এইভাবে চেচিয়ে যাচ্ছেন।’

মিসেস জুলি অট্টহাসিতে ফেটে পরে, আরহাম শক্ত মুখে দাঁড়িয়ে রয়েছে। রাগে তার হাত-পা কাঁপছে। মিসেস জুলি হঠাৎ হাসি থামিয়ে বললেন,

‘ দিলারকে আমি ভালোবাসতাম। দিলার আমার ভালোবাসা পেয়ে, একটু একটু করে ভালো হয়ে যাচ্ছিলো, কিন্তু তুই কী করলি? আমার দিলারকে মে/রেই ফেললি? এমনকি আমার দশ বছরের ছেলেকেও মে/রে ফেললি তুই? তখন মনে হয়নি আরহাম? তোর খালা কীভাবে বাঁচবে? স্বামী-সন্তান ছাড়া। ভালোবাসা ছাড়া। না ওই আকবর হোসেন ভেবেছে, না তুই ভেবেছিলি। আকবর আমাকে সাহায্যও করেনি। কারন আমি তার অমতে বিয়ে করেছি। আমাকে একেবারে নি:শ্ব করে দিয়েছিলি তোরা। তাই আমি তোদের সবথেকে কাছের মানুষ, মেহেভীনকে শেষ করে দিতে চেয়েছিলাম। বুঝাতে চেয়েছিলাম, কাছের মানুষের মৃত্যু ঠিক কতটা কষ্ট দেয়। কতটা গভীর যন্ত্রনা হয়।
আমার আজও মনে পরে আমার বুক শুন্য করে আমার ছোট্ট ছেলেটার লাশ আমাদের বাড়িতে এসেছিলো। একদিকে দিলারের লাশ, আরেকদিকে আমার ছেলের লাশ। আমার কি অবস্হা হয়েছিলো সেদিন? আচ্ছা আমার ছোট্ট ছেলেটা কি করেছিলো? কেন তাকে মে/রেছিস তোকে? ‘

মিসেস জুলির কথা শুনে, আরহামের মনে পরে যায় তিন বছর আগের কথা। গোপন সুত্রে সে জানতে পেরেছিলো, দিলার আজ বড মাফিয়া রিকের সাথে ডিল ফাইনাল করতে এসেছে শহরের এক ক্লাবে। রিকের সাথে এক পর্যায়ে বেশ ঝামেলা হয় দিলারের। দিলারের সাথে তার ছোট্ট ছেলেটিও ছিলো। দিলারকে মার/তে গিয়ে তখন দিলারের ছেলের উপর গু/লি ছুড়ে রিক। তখন পাগলপ্রায় হয়ে, রিকের উপর পাল্টা গু/লি চালায় দিলার।
উপর মহলের নির্দেশে আরহামরা সেখানে গিয়ে আক্রমন করে, কিন্তু দিলার পালিয়ে যেতে নিলে, আরহাম তাকে ইনকাউন্টার করে, তখন সেই গু/লিতে মা/রা যায় দিলার। কিন্তু রিকের লোকরা মিসেস জুলিকে ভুল তথ্য দিয়েছে যে, দিলারের সাথে তাদের ছেলেকেও আরহাম মেরেছে। আরহাম কিছুক্ষন চুপ থেকে শান্ত গলায় বলে,

‘ দিলার তার অন্যায়ের জন্যে শাস্তি পেয়েছে কিন্তু ইরাককে আমি মারেনি। আপনি এতোদিন ভুল জেনেছেন। রিক মেরেছিলো ইরাককে। ‘

মিসেস জুলি আরহামের দিকে তাঁকাতেই, আরহাম মাথা নাড়িয়ে, ঘৃণার সুরে বলে উঠে,

‘ একজন অপরাধীর জন্যে এতোদিন ধরে কম পাপ করেননি আপনি। ভুলটাকে পুঁজি করে আমার প্রেয়সীকে টার্গেট করে, আমাদের শাস্তি দিতে চেয়েছিলেন, কিন্তু দিনশেষে আদোও কি পেলেন আপনি? একজন মেয়ে আজ তার জীবন হারাতে চলেছে, শুধুমাত্র আপনার জন্যে। আমি আপনার সর্বোচ্চ শাস্তি দেওয়ার চেষ্টা করবো। মনে রাখবেন। জেলেই আজীবন একরাশ মানুষিক অশান্তি নিয়ে, পঁচে মরবেন আপনি। ‘

কথাটি বলেই আরহাম বেডিয়ে যায় গটগট পায়ে।

অপরদিকে, মেহেভীন নামাযে দু হাত তুলে মোনাজাত করে আল্লাহর দরবারে অন্তুর জন্যে দোয়া করে। অত:পর নিজেকে শান্ত করে, ধীর পায়ে
অন্তুর কেবিনের দিকে যায়। অন্তু যা করেছে তারপরে তার উপর কোনপ্রকার ঘৃণা নেই মেহেভীনের। নিজের জীবনকে বিপন্ন করে মেহেভীনকে বাঁচিয়েছে সে। অন্তুকে দেখার শক্তিটুকুও পাচ্ছে না সে। সে কেবিনের বাইরে দাঁড়িয়েই, আশেপাশে তাঁকাচ্ছে। তার আখিজোড়া শুধুমাত্র তার আরহাম সাহেবকেই খুঁজে বেড়াচ্ছে। অবশেষে একজোড়া ভরসার হাত খুঁজে পেলো মেহেভীন। আরহাম এসে শক্ত করে মেহেভীনের হাতখানা মুঠোয় ভরে নিলো। আরহামকে দেখেই শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো মেহেভীন। হেচকি তুলে কাঁদতে কাঁদতে সে বলে উঠলো, ‘ আরহাম সাহেব! অন্তু….’

আর কিছু বলতে পারলো না সে। সময়ের সাথে সাথে
তার কান্নার বেগ বৃদ্ধি পাচ্ছে। আরহাম মেহেভীনের মাথায় হাত বুলিয়ে বললো, ‘ কোন চিন্তা করো না প্রেয়সী। আজ অন্তুর অবস্হার জন্যে যারা দায়ী, যাদের জন্যে এতোদিন আমরা কষ্ট পেয়েছি। আলাদা থেকেছি, আজ সকলকে তোমার আরহাম সাহেব শাস্তি দিয়েছে। মিসেস জুলির সর্বোচ্চ শাস্তির ব্যাবস্হা আমি করবো। ‘

আরহামের কথা শুনে, কিছুটা হলেও শান্ত হলো মেহেভীন। তাদের কথার মাঝেই, একজন মধ্যবয়স্ক মহিলা দৌড়াতে দৌড়াতে মেহেভীনের কাছে ছুটে আসে, তিনি সম্পর্কে অন্তুর মা। অন্তুর মাকে দেখে, মেহেভীন অন্তুর মায়ের হাত ধরে বলে, ‘আন্টি আপনি এখানে? আপনি এই শরীর নিয়ে কেন আসতে গেলেন? ‘

অন্তুর মা কাঁদতে কাঁদতে বলেন, ‘ আমি নিউজ দেখেছি মা, আমি কী করে না এসে পারি মা বলো? ছোটবেলা থেকে কম কষ্ট করেনি আমার মেয়ে। সে আজ মৃত্যুপথযাত্রী। আজ আমার মেয়ে সমাজের কাছে ধর্ষিতা। আমি কী করে সহ্য করবো? মেয়ের এই দশা? ‘

অন্তুর মায়ের কথা শুনে মেহেভীন কি বলবে বুঝতে পারবে না। আজ অন্তু তাকে না বাঁচালে, সেও আজ ধর্ষিতা রুপে সমাজে কাজে পরিচিত পেতো, তখন কেমন হতো তার জীবন? অন্তুর মা ফের বলে,

‘ মেহু মা, আরহাম বাবা, আমাকে তোমরা আমার মেয়ের কাছে দয়া করে নিয়ে যাও। ‘

অন্তুর মায়ের কথায়, অন্তুর মাকে কেবিনে নিয়ে আসা হয়। আরিয়ানকে অন্যান্য ডক্টররা বুঝাতে বুঝাতে ক্লান্ত! কিন্তু আরিয়ান কিছুতেই বুঝতে চাইছে না যে, অন্তু বাঁচবে না। ডক্টর সৈভিক বলে,

‘ ডক্টর আরিয়ান ট্রাই টু আন্ডারস্টান্ড! উনার শরীর থেকে অনেক ব্লাস লস হয়ে গিয়েছে। উনাকে বাঁচানো সম্ভব নয়। ‘

সৈভিকের কথা শুনে মেহেভীন থমকে যায়। অন্তুর মা মুখ চেপে কেঁদে উঠে।
‘ জাস্ট স্টপ! আমি আরো বড় বড় ডক্টর হায়ার করবো। দরকার পরলে, আমি আমার অন্তুকে দেশের বাইরে নিয়ে গিয়ে চিকিৎসা করাবো। তবুও ওকে বাঁচতেই হবে। ‘

কথাটি বলেই আরিয়ান অন্তুর পাশে বসে, অন্তুর গালে হাত রেখে, অনুরোধের সুরে বলে, ‘ অন্তু! এই অন্তু! দয়া করে চোখ খুলো লক্ষীটি। দেখো কেউ তোমার উপর রেগে নেই। সবাই তোমাকে ভালোবাসবে। আমিও তোমাকে অনেক ভালোবাসি। কখনো বলা হয়ে উঠেনি, তবে আজ বলছি হ্যা, আমার মনের গহীনে অন্তু নামক মেয়েটির বসবাস। যে হুট করে ঝড়ের মতো আমার জীবনে এসেছিলো, কিন্তু আমি তাকে জড়ের মতো হুট করে আমার জীবন থেকে বিলিন হয়ে যেতো দিবো না। ‘

আরিয়ান কথাটি বলেই কেঁদে ফেলে। আরহাম গিয়ে আরিয়ানের কাঁধে হাত রাখে। বড্ড বেশি ভালোবেসে ফেলেছে তার ভাই অন্তুকে। সে নিজেও উপলব্ধি করেছে, ভালোবাসার মানুষকে হারানোর যন্ত্রনা কতটা তীব্র! তখনি অন্তু হুট করে, মৃদ্যু মৃদ্যু করে আখিজোড়া মেলে তাঁকায়। মেহেভীন তা দেখে খুশি হয়ে বলে, ‘ সবাই দেখো, অন্তুর জ্ঞান ফিরছে। ‘

আরিয়ানও তা দেখে খুশি হয়ে, অন্তর হাত ধরে বলে উঠে, ‘ আমি জানতাম, তোমার কিচ্ছু হবেনা। আল্লাহ ঠিক আমার প্রার্থনা শুনবে। ‘

অন্তু মেহেভীনকে হাত বাড়িয়ে ডাকে। মেহেভীন অন্তুর কাছে গিয়ে, অন্তুর কপালে চুমু দিয়ে বলে, ‘ এখন সব ঠিক হয়ে যাবে অন্তু। তুই আমার জন্যে যা করলি, এখন তুই শুধু তাড়াতাড়ি সুস্হ হয়ে যা। ‘

অন্তু জোড়ে জোড়ে নি:শ্বাস নিয়ে বলে, ‘ আমি আমার বেইমানির শাস্তি পেয়েছি মেহু। তুই আমাকে সবসময় ভালোবেসেছিস, কিন্তু আমি শেষে তোকেই বিপদের মুখে ঠেলে দিলাম। ‘

‘ প্লিয অন্তু, এইসব কথা বাদ দাও। অনেক হয়েছে তো। ‘

আরহামের কথায় অন্তু বলে উঠে,
‘ না, আরহাম ভাইয়া আমাকে বলতে দিন, আমি অনেক বড় অন্যায় করেছি। আপনারা বড় মনের মানুষ, তাই আমাকে ক্ষমা করে দিয়েছেন। আমার হয়ে শুধু একটা উপকার করবেন আপনারা? আমার অসুস্হ মাকে দেখে রাখিয়েন, আমি ছাডা, আমার মায়ের কেউ নেই। ‘

‘ এইসব কথা বলার মানে কি? কিচ্ছু হবেনা তোমার। আমি একজন ডক্টর হয়ে বলছি তোমায়। ‘

আরিয়ানের কথায়, অন্তু আলতো হেসে জবাব দেয়, ‘ সময় আজ বড্ড কম আরিয়ান ভাইয়া। ‘

অন্তুর কথা শুনে সকলে অবাক হয়ে উঠে।

‘ সময় কম মানে? কিচ্ছু হবেনা তোমার। আমি তোমায় আগলে রাখবো আমার মনের গহীনে। রেখে দিবো আজীবন। ‘

‘ আমি তো সবসময় আপনার মনের গহীনেই ছিলাম, আছি, আজীবন থেকে যাবো। এখন আমাকে আমাদের ক্ষনিকের ভালোবাসার স্মৃতিকে নিয়ে বিদায় নিতে হবে, বিচ্ছেদ যে আসন্ন। ‘

‘ আমাদের ভালোবাসার কাছে দুনিয়ার সকল বিচ্চেদ ফিঁকে হয়ে যাবে অন্তু। তুমি থেকে যাও শুধু। ‘

‘ থেকে গেলাম আপনার হয়ে, কথা দিলাম আমি না থাকলেও, আপনি সর্বদা আমায় ক্ষনে ক্ষনে প্রকৃতির মাঝে উপলব্ধি করবেন। ভালোবাসি, বড্ড বেশি ভালোবাসি আপনাকে। আমি বেইমানি করলেও, আমার ভালোবাসায় কোন মিথ্যে ছিলো না আরিয়ান ভাইয়া। ‘

আরিয়ান শুধু চুপচাপ হাত মুঠো করে, অন্তুর কথা শুনে যাচ্ছে। হুট করে অন্তুর শ্বাস কষ্ট বেড়ে যায়, চোখমুখে ভয়ংকর অন্ধকার হানা দিচ্ছে। মৃত্যু যে আজ তার আসন্ন, তা নিয়ে কোন সন্দেহ নেই। তবুও বহু কষ্টে সে আরিয়ানের দিকে হাত বাড়িয়ে অনুনয়ের সুরে বলে, ‘ শেষবারের মতো আমায় একটু ভালোবাসা দিবেন আরিয়ান? আমার যে আপনার ভালোবাসার বড্ড বেশি প্রয়োজন। ‘

আরিয়ান ছুটে গিয়ে শক্ত করে অন্তুকে বুকে জড়িয়ে, পরম ভালোবাসা নিয়ে ললাটে ভালোবাসার স্পর্শ একেঁ দিয়ে, বিড়বিড়িয়ে বলে, ‘ তোমায় আমি হ্রদমাঝারে আবদ্ধ করে দিবো, কোথাও যেতে পারবে না তুমি। ‘

অন্তুও মুচকি হেসে আরিয়ানের শার্টের কলার চেপে ধরে আস্তে আস্তে আরিয়ানের বুকে ঢলে পরে। তার শরীর ধীরে ধীরে ঠান্ডা হয়ে আসে। হ্রদস্পন্দন থেমে যায়, আরিয়ান তা উপলব্দি করতে পারে। আরিয়ানের আখিজোড়া বেয়ে টুপটুপ করে জল, অন্তুর নিবদ্ধ আখিজোড়াতে গড়িয়ে পরে। মেয়ের মৃত্যুতে অজ্ঞান হয়ে পরে অন্তুর মা। আরহাম ও মাথা চেপে বসে পরে। মেহেভীন স্তব্ধ হয়ে পরে। মায়রা এসে এমন দৃশ্য দেখে কেঁদে ফেলে। আরিয়ান অন্তুর নিথর দেহকে আকড়ে ধরে বসে থাকে।

শব্দসংখ্যা- (১৮২০)
ভালো থেকো প্রিয় অন্তু।
চলবে কি?

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে