#মনের গহীনে সে 🖤
#পর্ব- ২৩
#Jannatul_ferdosi_rimi (লেখিকা)
অন্তুর পরিনতির কথা ভাবতেই, ফের কেঁদে ফেলে মেহেভীন। আরহাম তাকে বুকে আগলে রেখেছে। এতোকিছুর মধ্যে মেহেভীন বেশ বড় এক ট্রমার মধ্যে রয়েছে। সকলে মিলে কিছুক্ষন আগে অন্তুকে হসপিটালে নিয়ে এসেছে। আরিয়ান তার সর্বোচ্চ দিয়ে অন্তুর চিকিৎসা করছে। অন্তুর অবস্হা বেশ খারাপের দিকে চলে যাচ্ছে। মায়রা মিসেস জুলি এবং সেই ধর্ষকদের থানায় নিয়ে গিয়েছে। অন্তুর অবস্হা দেখে মেহেভীন নিজেকে সামলাতে পারছিলো না, তাই আরহাম মেহেভীনকে হসপিটালের বাইরে বাগানে নিয়ে আসে। বেশ কিছুক্ষন পরে, আরহাম মেহেভীনকে সোজা করে বসিয়ে, শান্ত গলায় বলে, ‘ স্টপ জান! আর কাঁদবে না। অনেক কেঁদেছো তুমি। তুমি কী বুঝো না? তুমি কাঁদলে আমার বুকে ব্যাথা করে। যন্ত্রনা হয়। বেশ অদ্ভুদ যন্ত্রনা হয়। ‘
কথাটি বলেই মেহেভীনের থুত্নি উচু করে পরম আদরে ভালোবাসার স্পর্শ একেঁ দেয়। মেহেভীন কিছুটা শান্ত হয়। আরহাম আলতো সুরে প্রশ্ন করে,
‘ এখন কেমন লাগছে? ঠিক আছো তো? ‘
‘ হুম, এখন কিছুটা বেটার লাগছে। ‘
মেহেভীনের উত্তরে, আরহাম মেহেভীনের হাত ধরে অনুনয়ের স্বরে বলে, ‘ যেকোন সম্পর্কে শিকড় হচ্ছে বিশ্বাস, সেই বিশ্বাসের শিকড় একবার নড়ে গেলে, সেই সম্পর্ক ভিত্তিহীন হয়ে যায়। ভালোবাসার থেকেও বিশ্বাসের মূল্য বেশি প্রেয়সী। ‘
আরহামের কথাগুলো নিরবে শুনে আখিজোড়া বুজে কিছুক্ষন ভাবতে লাগলো মেহেভীন। আজ যদি সে আরহামের উপর একটু ভরসা করে, বিয়ের দিন পালিয়ে না যেতো, তাহলে এমন কিছুই ঘটতোই না। অন্তুর এই পরিনতির জন্যে তো কিছুটা হলে সে নিজেও দায়ী। মেহেভীনের ভাবনার মাঝেই, আরহাম ফের বলে, ‘ একটা অনুরোধ রাখবে প্রেয়সী? যতই কঠিন মুহুর্ত আসুক, আমার উপর বিশ্বাস হারাবে না।
তোমার আরহাম সাহেব সবসময় আমাদের ভালোবাসার হেফাজত করবে। ‘
মেহেভীন নাক টেনে হেচকি তুলে কেঁদে দেয়, বুক ফেটে কান্না আসছে তার। মানুষটা তাকে কতটা ভালোবাসে, শুধুমাত্র তাকে তার শত্রুদের নজর থেকে রক্ষা করার জন্যে, দিনের পর দিন নিজের ভালোবাসাকে লুকিয়ে বিয়ের মিথ্যে নাটক করে গিয়েছে অথচ মেহেভীন শুধুমাত্র তাকে ভুলই বুঝে গিয়েছে। মেহেভীন কিছুক্ষন স্হীর থেকে কান্না থামিয়ে, আরহামের সাথে অন্তুর কেবিনের সামনে যায়। কাচের ফাঁক থেকে অন্তুর নিস্তেজ মুখশ্রীখানা দেখা যাচ্ছে। অক্সিজেন দেওয়া হয়েছে অন্তুকে। শরীরে রক্তের পরিমানও কম দেখা যাচ্ছে। আরিয়ান তার সবোর্চ্চ চেষ্টা দিয়ে, অন্য ডক্টরদের সাথে নিয়ে চিকিৎসা করে যাচ্ছে অন্তুর, যেন অন্তুকে বাঁচানো যায়, কিন্তু অন্তুর অতিরিক্ত র/ক্ত/খনন হয়ে গিয়েছে। মানুষরুপী পশুগুলো অন্তুর ধর্ষ/নের পরে তাকে বেশ কিছুক্ষন ছু/ড়ি দিয়ে আঘা/ত করেছে। আরিয়ান একের পর এক ইঞ্জেকশন পুশ করে যাচ্ছে, অন্তুর শরীরে। বেশ কয়েকব্যাগ রক্তও ইতিমধ্যে অন্তর শরীরে দেওয়া হয়েছে, কিন্তু তেমন সুবিধা হচ্ছে না। আরিয়ানের অবস্হা পাগলের মতো হয়ে যাচ্ছে। সময় যত গড়াচ্ছে, অন্তুর অবস্হা ততই অবনতির দিকে যাচ্ছে। মেহেভীন কাচের ফাঁক থেকে সবকিছু দেখে বিড়বিড়িয়ে বলে,
‘ সব আমার দোষ! আমার, আমার! আজ অন্তুর কিছু হয়ে গেলে, আমি অন্তুর মাকে কীকরে জবাব দিবো? আমিও তো দোষী। আমার বন্ধুটা আমার জন্যে শেষ হয়ে যাবে। তাহলেও তো আমিও খু/নি। ‘
মেহেভীনের কথা শুনে আরহাম মেহেভীনের বাহু চেপে শক্ত গলায় বলে,
‘ এইসব কি বলে যাচ্ছো মেহেভীন? এখানে তোমার দোষ কোথায়? ওই ধর্ষক/রা আজ অন্তুর এই অবস্হার জন্যে দায়ী। তার জন্যে ওরা যথাযথ শাস্তি পাবে। ‘
‘ কিন্তু ওদের টার্গেট তো অন্তু ছিলো না আরহাম সাহেব। আমি ছিলাম। আমাকে বাঁচাতে গিয়েই অন্তুর এই অবস্হা। আমি দোষী আরহাম সাহেব। অন্তু যদি না বাঁচে কি হবে আরহাম সাহেব? আমি অন্তুর মাকে কি জবাব দিবো? ‘
মেহেভীন কথাগুলো বলতে বলতে মাটিতে বসে, মাথায় হাত দিয়ে চিৎকার করে কেঁদে উঠে। আরহামও মেহেভীনের পাশে বসে, মেহেভীনের গালে হাত রেখে বলে, ‘ লিসেন মেহেভীন। আমার কথা বুঝার চেষ্টা করো তুমি। এতোকিছুর মধ্যে তোমার দোষ নেই। অন্তু অন্যায় করেছে বলে, আজ তার এই দশা, হ্যা কিন্তু শেষ মুহুর্তে এসে নিজের ভুল বুঝতে পেরে, নিজের জীবনের বিনিময়ে তোমাকে বাঁচিয়েছে। তাই ওই ধর্ষ/ক/দের সব ক্ষোভ অন্তুর উপর গিয়েছে। এতে তোমার দোষ নেই মেহেভীন। প্লিয নিজেকে এইভাবে দোষারুপ করো না। কিচ্ছু হবেনা অন্তুর। আরিয়ান একজন গ্রেট ডক্টর। আরিয়ান তার সর্বোচ্চ চেষ্টা দিয়ে,অন্তুকে ঠিক বাঁচিয়ে নিবে। আমাদের শুধু মহান আল্লাহর উপর ভরসা রাখতে হবে। মহান আল্লাহ তায়ালা মাঝে মাঝে আমাদের পরীক্ষা নিয়ে থাকেন।আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত, তিনি বলেছেন, “বিপদ যত বড় হবে, প্রতিদানও তত মহান হবে। আল্লাহ তা’আলা যখন কোনো জাতিকে ভালোবাসেন তখন তাদেরকে (বিপদেফেলে) পরীক্ষা করেন। যে লোক তাতে (বিপদে) সন্তুষ্ট থাকে, তার জন্য রয়েছে (আল্লাহ্ তা’আলার) সন্তুষ্টি।’
আরহামের কথা শুনে নিজের ভুল ভাবনা থেকে বেড়িয়ে এলো মেহেভীন। এখন তাকে আল্লাহর উপর ভরসা রাখতে হবে। মেহেভীন দেয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে বলে,
‘ আরহাম সাহেব, আমার খুব কষ্ট হচ্ছে। একটু শান্তি লাগবে। আপনি কি আমায় সেই শান্তির সন্ধান দিতে পারবেন? ‘
প্রেয়সীর আবদার ফেলতে পারলো না আরহাম। অকপটে বুঝে ফেললো মেহেভীন এই মুহুর্তে ঠিক কি চাইছে। আরহাম সামান্য হেসে, মেহেভীনকে বুকে নিয়েই, আলতো করে মেহেভীনের মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে থাকে। মেহেভীন যেন অনেকদিন পরে শান্তির ঠিকানা খুঁজে পেলো। কম ঝড় তো বয়ে যাচ্ছে না তাদের উপর দিয়ে। আজ আরহামের ভালোবাসার ছোঁয়ায় একটু একটু করে তাদের জীবনের ঝড় যেন থেমে যাচ্ছে। মেহেভীন ঘুমের দেশে অজান্তেই তলিয়ে গেলো। মেহেভীনকে ঘুমিয়ে যেতে দেখে, আরহাম মেহেভীনকে কোলে নিয়ে, আরিয়ানের কেবিনে থাকা ছোট্ট রেস্ট রুমে শুয়িয়ে দিলো এবং একজন নার্সকে
মেহেভীনের দায়িত্ব দিয়ে, হসপিটাল থেকে বেড়িয়ে গেলো। হুট করেই তার নেত্রপল্লব ক্রোধে টকটকে লাল হয়ে গেলো। আজ যাদের জন্যে মেহেভীন এতো কষ্ট পাচ্ছে, একটি মেয়ের জীবন আজ যাদের জন্যে ঝুঁকিতে, তাদের সে কিছুতেই ছাড়বে না।
মায়রা অফিসে বসে মিসেস জুলির একের পর এক ফাইল চেক করে যাচ্ছে, তাকে রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে এবং সেই ছেলেগুলোকে মায়রার পাশের রুমে রাখা হয়েছে, যেখান থেকে শুনা যাচ্ছে সেই ছেলেদের ভয়ংকর আর্তনাদ। সেই আর্তনাদ শুনে, মায়রার অধরের কোণে বাঁকা হাসি ফুটে উঠে। অফিসার আরহাম হাসান তালুকদারের হাতে পরেছে তারা। আরহাম তার কাঠের লাঠি দিয়ে, সব কয়টা ধর্ষ/কদের ইচ্ছেমতো মে/রে যাচ্ছে। যত বারই তার চোখের সামনে মেহেভীনের অসহায় মুখস্রী এবং অন্তুর সেই রক্তমাখা নিস্তেজ দেহখানা ভেঁসে উঠছে, ততবারই তার মষ্তিষ্কে রক্তচেপে উঠছে। অন্যান্য পুলিশেরাও আরহামের ভয়ংকর রুপ দেখে কেঁপে উঠছে। আরহাম সেই মন্টুর বুক বরাবর লা/ত্থি মে/রে
গর্জন করে উঠে বলে, ‘ জানু/য়ার তোদের সাহস হলো কী করে? আমার বউকে স্পর্শ করার। তোরা আমার ফুলের মতো পবিত্র বউকে কুলশিত করতে চেয়েছিলে?কাপুরুষরা, তাকে কিছু করতে পারলি না বলে, অন্তুর মতো মেয়েটাকে….’
আরহাম আর কিছু বলতে পারলো না। পা থেকে মা অব্ধি নিজের ক্ষোভ ঝাড়তে লাগলো। ধর্ষকগুলো মা/র খে/য়ে একেবারে রক্তা/ক্ত হয়ে, নিস্তেজ হয়ে রয়েছে। আরহাম আরেকজনের চুলের মুঠি ধরে চিৎকার করে বলে, ‘ আজ তোদের এমন অবস্হা করবো, যেন তোদের অবস্হা দেখে, কোন অমানুষ যেন কোন মেয়েকে ধর্ষন করা তো দূর, কোন মেয়ের দিকে বাজে দৃষ্টিতে তাঁকানোর সাহস না পায়। ‘
প্রায় টানা ২ ঘন্টার পরে, আরহাম বেড়িয়ে, একজন সাব ইন্সপেক্টরকে নির্দেশ দেয়,
‘ ওদের কোনরকম চিকিৎসা করানো হবেনা। এইভাবেই পচঁতে থাকবে নরকের কিটগুলো। ওদের এই অবস্হার ছবি তুলে মিডিয়াতে পাঠিয়ে দিন। আমি ওদের ব্রেকিং নিউজে দেখতে চাই। গট ইট? ‘
অফিসার আরহামের আদেশ শুনে দ্রুত পাশের রুমে চলে যায়। আরহাম মায়রার কেবিনে গিয়ে বসে। মায়রা এক পলক আরহামের দিকে তাঁকিয়ে ,প্রশ্ন করে,
‘ মিসেস জুলিকে জিজ্ঞাসাবাদ কী তুমি করবে আরহাম? তিনি পাশের রুমেই অপেক্ষা করছেন। ‘
আরহাম বাঁকা হেসে জবাব দেয়, ‘ অবশ্যই। উনার সাথে আমার বিশেষ জিজ্ঞাসাবাদ পর্ব সারতে হবে। অনেক পুরনো হিসাব চুকাতে হবে, তাইনা? আজ যা কিছু হয়েছে, সবকিছুর জন্যে ওই জঘন্য মহিলাটি দায়ী। অন্তর মায়ের অসুস্হততার সুযোগ নিয়ে, তিনি দিনের পর দিন, অন্তুকে ইউজ করে গিয়েছে। আমার থেকে আমার প্রেয়সীকে কেড়ে নিতে চেয়েছি। আজ উনাকে সব কিছুর জবাব দিতে হবে। ‘
বলেই আরহাম উঠে দাঁড়ায়।
চলবে কি?