#মনের গহীনে সে 🖤
#পর্ব- ২২ [ পরিনতি]
#Jannatul_ferdosi_rimi (লেখিকা)
মেহেভীনকে কাঁদতে দেখে শক্ত করে বুকের মাঝে শক্ত করে আকড়ে ধরে আরহাম। মেহেভীন হিচকি তুলে কেঁদেই যাচ্ছে। মেহেভীনের কান্নার আওয়াজে আরহামের বুকের ভিতরে মোচর দিয়ে উঠছে কখনো। খারাপ লাগলেও সে মেহেভীনকে থামালো না। প্রিয়জনদের কাছ থেকে এতো বড় প্রতারণা সত্যিই বেদনাদায়ক। তার মধ্যে সবেমাত্র বেশ কঠিন ধাক্কার সমুক্ষীন হয়েছে মেহেভীন। তাকে নিজেকে সামলানোর সময়টুকু দেওয়া তো প্রয়োজন। মেহেভীনের মনে পরে যায় কয়েক ঘন্টার আগের কথা…
লোকগুলো এগিয়ে আসছিলো মেহেভীনের দিকে। তখনি সেখানে একজন ছেলে এসে বলে, ‘ বস তাড়াতাড়ি আসুন, পাশের রুমে আগুন লেগেছে। ‘
‘ আগুন ‘ লাগার শব্দ শুনে ছেলেগুলো দৌড়ে পাশের রুমে ছুটে চলে যায়। মেহেভীন ভয়ে জড়োসড়ো হয়ে বসে থাকে। তখনি সেখানে হুট করে লুকিয়ে অন্তু চলে আসে। অন্তুকে দেখে আরেকটু পিছে হটে যায় মেহেভীন। সে রাগে ক্ষিপ্ত হয়ে, অন্তুর দিকে ঘৃণার দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বলে, ‘ তুমি? তুমি এখানে কেন এসেছো? আর কত ঘৃণা পেতে চাও তুমি? কি মজা দেখতে এসেছো? দেখতে এসেছো? কী করে আমাকে ধ/র্ষন করে, খু/ন করবে। সেই মজা নিতে এসেছো? আচ্ছা বসো বসো! ভালো করে বসে, মজা দেখো। তোমার থেকে আর কিই বা আশা করে যায়? বেইমান একটা! ‘
মেহেভীনের শেষের কথাগুলো বুক ছেদ করে উঠলো
অন্তুর। তার মা ছাড়া তার কেউ নেই পৃথিবীতে। সেই মায়ের কঠিন রোগ ধরা পরেছে। অনেক টাকা লাগবে। সেই টাকা জোগাড় করতে না পারলে, তার মাকে বাঁচানো যাবে না। অন্তু যথাসাধ্য চেষ্টা করেছিলো টাকা জোগাড় করার। কিন্তু সে ব্যার্থ হয়েছিলো, তখনি বিশাল এক অংকের টাকার অফার পায় মিসেস জুলির কাছ থেকে। তখন নিজের বিবেকে, মনুষ্যত্বকে একপ্রকার বিসর্জন দিয়ে, নিজের প্রানের প্রিয় বেস্ট ফ্রেন্ডকে তার শত্রুদের হাতে তুলে দেয় সে। কিন্তু মনের এক কোণে অনুতপ্তের এক আলোর রেশ ফুটে উঠে। মেহেভীনের থেকে ‘বেইমানির ‘ কটাক্ষ বানী শুনে নিজেকে সামলাতে পারেনি সে। ছুটে চলে এসেছে সে। পাশের ঘরে আ/গুন সে নিজেই লাগিয়েছে। সে জানে তার মা যদি জানতে পারে, তা মেয়ে একজন মেয়ের জীবনের বিনিময়ে পাওয়া টাকা থেকে তার চিকিৎসা করাচ্ছে, তাহলে তো অন্তুর মা এমনিতেই মা/রা যাবে। সবকিছু ভেবে দীর্ঘশ্বাস ফেলে, অন্তু মেহেভীনের কাছে এগিয়ে, মেহেভীনের হাতের বাঁধন খুলতে খুলতে বলে, ‘ আমি জানি বোন, আমি তোর চোখে একজন বেইমান। নিকৃষ্ট একজন মেয়ে। আমি লোভী আমি জানি কিন্তু শেষ সময়ে এসে আমার বিবেক আমাকে এখানে অব্ধি আসতে বাধ্য করেছে।
তুই যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আমার সাথে চল। আমি তোকে তোর আরহাম সাহেব এর কাছে পৌঁছে দিবো। দয়া করে আমার কথাটা শুন প্লিয! ‘
মেহেভীন এক হেচকায় অন্তুর হাত সরিয়ে দিয়ে, অন্তুর গালে ঠাটিয়ে চ/র বসিয়ে দিয়ে বলে, ‘ লজ্জা করে না? এই মুখ আমার সামনে আসতে? তুই তো বেস্ট ফ্রেন্ডের নামের কলঙ্ক! তোকে থু মার/তে ইচ্ছে করছে। কী করে ভাবলি? আমি তোকে আবারোও বিশ্বাস। ‘
‘ এখানে থাকলে এমনিতেও তোকে মর/তেই হবে মেহু। প্লিয পিছনে একটা দরজা আছে। জলদি বেড়িয়ে যা। ‘
মেহেভীন এবং অন্তুর কথাকাটাকাটির মাঝে অন্তু শুনতে পায় সেই ছেলেগুলোর পায়ের আওয়াজ। সেই ছেলেগুলো আসছে। অন্তু মেহেভীনের হাত টেনে একেবারে জোড় করে পিছনের দরজা দিয়ে, একপ্রকার ধাক্কা দিয়ে বলে, ‘ মেহু! তুই এখুনি পালিয়ে যা। ‘
‘ কিন্তু অন্তু! ‘
‘ কোন কিন্তু, পালিয়ে যা মেহেভীন, সময় নেই। নাহলে ওরা মে/রে ফেলবে তোকে। প্লিয চলে যা। আল্লাহর কসম! তুই চলে যা। আমি ওদের হয়ে কাজ করেছি। ওরা আমার কিচ্ছু করবে না। তুই দয়া করে পালিয়ে যা। ‘
ততক্ষনে ছেলেগুলো রুমে ঢুকে চিল্লিয়ে বলে, ‘ কি হচ্ছে এখানে? ‘
ছেলেগুলোর কন্ঠ শুনে মেহেভীনের মুখের উপর দরজা লাগিয়ে দিয়ে, সেই দরজার সামনে ভয়ে ভয়ে দাঁড়িয়ে থাকে অন্তু। ছেলেগুলো মেহেভীনকে না দেখে ক্ষেপে যায় এবং অন্তুকে দেখে তাদের বুঝতে বাকি থাকেনা, অন্তু সব কান্ড ঘটিয়েছে। একজন ছেলে অন্তুর গাল চেপে ধরে ‘ কু/ত্তার বা/চ্চা কী করলি তুই এইটা? আমাদের থেকে এতো মোটা অংকের টাকা নিয়ে, আমাদের সাথেও বেইমানি করলি? ‘
আরেকজন চ্যালাও সাথে তাল মিলিয়ে বলে, ‘ শা/লি একটা দু/মুখো সাপ। ‘
অন্তু নিজের মুখ ছাড়িয়ে চেঁচিয়ে বলে, ‘ হ্যা নিয়েছি টাকা! টাকার লোভে আমি অন্ধ হয়ে, নিজের মনুষ্যত্বকে একপ্রকার হারিয়ে ফেলেছিলাম, কিন্তু এখন আমি যা করেছি, একদম সঠিক করেছি। তাতে আমার বিন্দুমাত্র আক্ষেপ ও নেই। ‘
সেই ছেলেটি অর্থাৎ মন্টু চেচিয়ে বলে ‘ এতো তেজ! এতো কিছুর পরেও, শা/লিকে ভালো করে ধরে ফেল তোরা। ওর তেজ আমি আজকে কমাবো। এমনিতেও ওই মেয়ে তো হাতের বাইরে চলে গিয়েছে। খুঁজেও লাভ হবেনা। কিন্তু একে কিছুতেই ছাড়া যাবে না। আমাদের করা এতোদিনের পরিকল্পনা বেস্তে দিয়েছে। ও কীভাবে সমাজে মুখ দেখায়, আমিও দেখবো। ‘
মন্টুর কথায় সকলে তাল মিলিয়ে হিংস্র পশুর ন্যায় এগিয়ে যায় অন্তুর দিকে।
_______________
অপরদিকে, মেহেভীনও উপায় না পেয়ে দৌড়াতে থাকে। সে জানে না, সে কোথায় যাচ্ছে, কিন্তু তাকে যে করেই হোক আরহামের সাথে যোগাযোগ করতে হবে। অন্তুর যাই বলুক, সে জানে অন্তুর জীবন কতটা ঝুঁকিপূর্ন। অন্তুকে বাঁচাতেই হবে তাকে। সে বেইমানি করলেও শেষ পর্যন্ত নিজের বিবেকের তাড়নায় পরে, মেহেভীনকে বাঁচিয়েছে, তাকেও যে করেই হোক অন্তুকে বাঁচাতে হবে। হাটতে হাটতে মেহেভীন এক গাড়ির সামনে চলে আসে। মেহেভীনকে দেখে আরহাম গাড়ির ব্রেক কষে,পিছনে পুলিশের ফোর্সের গাড়িগুলোও ছিলো। গাড়ি থেকে আরহাম বেড়িয়ে আসে। আরহামের সঙ্গে মায়রা এবং আরিয়ানও বেডিয়ে আসে।আরহামকে দেখে এক দৌড়ে ছুটে গিয়ে, আরহামকে জড়িয়ে ধরে জোড়ে জোড়ে নি:শ্বাস ফেলতে ফেলতে হাপাতে থাকা মেহেভীন। মেহেভীনকে দেখে যেন কলিজায় পানি চলে আসে আরহামের। তার প্রেয়সীকে সে পেয়েছে। মহান আল্লাহর কাছে লাখ লাখ শুকরিয়া জানায় সে। অত:পর আরহাম মেহেভীনের গালে হাত রেখে বলে, ‘ মেহু! তুমি ঠিক আছো তো? এইভাবে হাপাচ্ছো কেন? আর সেই গু/ন্ডা গুলো কই যারা তোমাকে কিডন্যাপ করেছিলো। ‘
মেহেভীন জোড়ে জোড়ে নি:শ্বাস নিতে নিতে বলে, ‘ আমাদের সময় নেই আরহাম সাহেব। দ্রুত চলুন, নাহলে অন্তুকে ওরা মে/রে ফেলবে। প্লিয চলুন। ‘
আরিয়ান উত্তেজিত হয়ে বলে, ‘ ওরা অন্তুকে মে/রে ফেলবে মানে? কারা মে/রে ফেলবে? কোথায় অন্তু? ‘
মায়রা আরিয়ানকে শান্ত করে, মেহেভীনকে জানায় সে যেন তাদের সেখানে নিয়ে যায়।
মেহেভীন আরহামসহ সকল পুলিশ ফোর্সকে নিয়ে সেই ডেরায় পৌঁছে যায়। পুলিশ এসেছে শুনে মন্টু ও তার চ্যালাপ্যালা এবং মিসেস জুলি পালিয়ে যেতে চাই কিন্তু তারা ব্যার্থ। পুলিশ তাদের অ্যারেস্ট করে ফেলে। মিসেস জুলি একবার আরহাম এবং মেহেভীনের দিকে তাঁকায়। মেহেভীন ঘৃণায় মুখ সরিয়ে ফেলে। তাদের পুলিশের গাড়িতে উঠানোর সাথে সাথে আরিয়ান, আরহাম, মেহেভীন এবং মায়রা সেই রুমে ছুটে যায়, যেখানে অন্তুকে রাখা হয়েছিলো। মেহেভীন রুমে গিয়েই মুখ চেপে চিৎকার করে উঠে। আশে-পাশে ছেড়া-জামা কাপড় ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। পাশেই রয়েছে রক্তাক্ত নিস্তেজ অন্তুর দেহখানা। মানুষরুপে সেই পশুগুলো ছিড়ে/ছিড়ে খেয়েছে অন্তুকে। অন্তু পিটপিট করে মেহেভীনের দিকে তাঁকিয়ে আছে। আরিয়ান এক মুহুর্তের জন্যে থমকে যায়, নিজের প্রিয় মানুষের এমন করুন দশা দেখে।
মেহেভীন কাঁদতে কাঁদতে নিজের ওড়না নিয়ে এগিয়ে যায় অন্তুর দিকে। আরিয়ানও নিজেকে সামলিয়ে, নিজের গাঁয়ের ব্লেজার টুকু ভালো করে অন্তুর গাঁয়ে জড়িয়ে রাখে। তার আখিজোড়াও অশ্রুসিক্ত হয়ে উঠেছে। অন্তু মেহেভীনের হাতখানা চেপে, কাঁপাকাঁপা গলায় শুধায়, ‘ সত্যিই আজ আমি আমার বেইমানির শাস্তি পেয়ে গেলাম মেহু। ‘
চলবে কি?