মনের গহীনে সে পর্ব-২১

0
746

#মনের গহীনে সে ❤️‍
#পর্ব- ২১
#Jannatul_ferdosi_rimi (লেখিকা)
মেহেভীনের ছবিটা হাতে নিয়ে শহরের বিভিন্ন জায়গায় পাগলের মতো খুঁজে চলেছে আরহাম। নিজের সমস্ত সোর্সকে কাজি লাগিয়ে দিয়েছে সে কিন্তু ফলাফল শূন্য। অন্যদিকে, মেহেভীন অন্তুর কথা শুনে গাড়িতে উঠতেই, মেহেভীন দেখতে পায় কিছু কালো কুচকুচে হ্যাংলা পাতলা লোক গাড়িতে বসে আছে। তাদের সকলের মুখেই কুৎসিত হাসির রেশ! তাদের মধ্যে একজন বলে উঠলো,’ অবশেষে আমরা আমাদের শিকার পেয়েই গেলাম। ধন্যবাদ তোমাকে অন্তু। আমাদের সাহায্য করার জন্যে। সময়মতো তুমি তোমার পেমেন্ট পেয়ে যাবে। ‘
কথাটি শুনেই মেহেভীনের হাত-পা কাঁপাকাঁপি শুরু হয়ে গেলো। তার মানে অন্তু আরহামের সেই শত্রুদের সাথে মিলে ছিলো। গরীব ঘরের মেয়ে অন্তু, কিন্তু টাকার বিনিময়ে নিজের বন্ধুত্বকে কাজে লাগিয়ে, মেহেভীনের সাথে এতো বড় প্রতারণা করলো। যারা মেহেভীনকে খু/ন করার জন্যে এতোদিন ধরে প্রতিক্ষার প্রহর গুনছিলো, তাদেরকেই এতোদিন ধরে অন্তু সাহায্য করে আসছিলো।মেহেভীন ছলছল নয়নে অন্তুর দিকে তাঁকাতেই, সে দেখতে পেলো অন্তু মাথা নিচু করে রেখেছে। মেহেভীন এতোটা থমকে গিয়েছিলো যে তার মুখ থেকে টু শব্দও বের হচ্ছিলো না। চিৎকার করার শব্দটুকু করার শক্তিও যেন সে পাচ্ছিলো না। নিজের সবথেকে কাছের বন্ধুর থেকে এমন বেইমানি সহ্য করা কারো পক্ষেই সম্ভব নয়। মেহেভীন শুধু মিইয়ে যাওয়া গলায় বললো, ‘ অন্তু! তার মানে আমাকে বাড়ি থেকে পালিয়ে এখানে নিয়ে আসার পরিকল্পনা তোর ছিলো? তুই আমার সাথে এইভাবে বেইমানি করতে পারলি? সামান্য ক’টা টাকার জন্যে? তোকে তো আমি বোন মনে করতাম রে। কেন আমায় ঠকালি? ‘
কথাগুলো বলেই শব্দ করে কেঁদে ফেললো মেহেভীন। সে পুনরায় বললো, ‘ প্রতারক! কম ভালোবেসেছি তোকে? তোর কোনদিন ভালো হবেনা। ঠকিয়েছিস না? একদিন ঠকবি, খুব ভালো করে ঠকবি। মনে রাখবি, অন্যায় করে কেউ পার পায় না। আল্লাহ ছাড় দেন, কিন্তু ছেড়ে দেয় না।’
গাডিতে থাকা গুন্ডাগুলো বিরক্ত হয়ে একে-অপরের দিকে তাঁকিয়ে, মেহেভীনের কান্না শুনে তার মুখে স্প্রে দিয়ে দিলো। সাথে সাথে অজ্ঞান হয়ে ঢলে পরলো মেহেভীন। একজন লোক ফোনে কল করে সেই মহিলাকে জানালো, ‘ ম্যাডাম! কাজ হয়ে গেছে। পাখি এখন আমাদের কবজায়। আমরা এখুনি ডেরায় নিয়ে আসছি। ‘

লোকটি ফোন রাখতেই, গাড়ি চলতে শুরু করলো। মেহেভীনকে নিয়ে তারা চলে গেলো। অন্তু মাটিতে ধপ করে বসে পরলো হাতে মুখ দিয়ে। সে হয়তো অনেক বড় ভুল করে ফেলেছে, টাকার লোভে।

_______________
মায়রা অফিসে বসে একটা ম্যাপ হাতে নিয়ে সমস্ত জায়গাগুলো ভালো করে দেখে নিচ্ছে, কোথায় কোথায় মেহেভীনের যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আরহাম তখনি আরিয়ানকে সাথে নিয়ে কেবিনের চেয়ারে গিয়ে বসে পরে। প্রচন্ড মাথা ব্যাথা করছে তার, তার থেকে বেশি বুকে যন্ত্রনা করছে। মায়রা আরহামের হাতে একটা ফাইল ধরিয়ে বলে, ‘ কিছু জায়গার ডেটেইলস পাওয়া গিয়েছে আরহাম। তুমি চিন্তা করো না আরহাম, আমরা মেহেভীনকে খুঁজে পেয়ে যাবো। ‘

‘ ড্যাম ইট! আমি কেন একটু আগে আসলাম না? তাহলে তো মেহেভীন বেড়িয়ে যেতো না, এম্নিই শত্রুরা মেহেভীনের ক্ষতি করার জন্যে উৎ পেতে রয়েছে। ‘

আরহামের কথা শুনে মায়রাও কিছুটা চিন্তার সুরে বলে, ‘ তার মধ্যে আবার ওই বেস্ট ফ্রেন্ডে কি নাম যেন? অন্তু! ওকেও তো খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। মেয়েটাকে আমার একদমই সুবিধার মনে হচ্ছে না। ‘

মায়রার কথা শুনেই আরহাম ভ্রু কুচকে ফেলে।হুট করে কাকে যেন ফোন করে কিছু বলে। আরিয়ান একপ্রকার তেড়ে গিয়ে বললো, ‘ কার নামে কি বলছো তুমি? তোমার মাথা কি ঠিক আছে? মেহুকে অন্তু নিজের থেকেও ভালোবাসে, তুমি আদোও ভেবে বলছো? অন্তুর মতো ইনোসেন্ট একজন মেয়েকে, এইসব এর মাঝে ফাঁসাচ্ছো তুমি? ‘

মায়রা মুখ বেকিয়ে, আরিয়ানের দিকে আঙ্গুল তাক করে বললো, ‘ দেখো আরিয়ান! আমরা তোমার মতো ইমোশনাল না বুঝলে? ইমোশন দিয়ে কিচ্ছু হয়না। ‘

আরিয়ান ‘ জাস্ট স্টাপ আপ,মায়রা ‘ বলে চেচাতেই, আরহাম টেবিলে একটা জোড়ে একটা পাঞ্চ মে/রে বলে, ‘ এখানে কি শুরু করলি তোরা? না, আমাকে বুঝিয়ে বল? এখন আমাদের সবথেকে বড় টাস্ক হচ্ছে মেহুকে খুঁজে বের করা, তা না করে তোরা ঝগড়া করে যাচ্ছিস? এক একটা সেকেন্ড, আমাদের জন্যে অনেক ইম্পোর্টেন্ট! যত সময় গড়িয়ে যাচ্ছে, ততই মেহুর লাইফের রিস্ক বেড়ে যাচ্ছে। ‘

মায়রা এবং আরিয়ান দুজনেই মাথা নাড়ায় কিন্তু অন্তুকে নিয়ে মায়রার মুখে এমন আজেবাজে কথা শুনে, আরিয়ানের মাথা কাজ করা একপ্রকার বন্ধ হয়ে গিয়েছিলো। অন্তুর প্রতি সেই প্রথম থেকেই আরিয়ানের মনের গহীনে এক বিশেষ জায়গা রয়েছে কিন্তু সে কি আদোও জানে? সে একজন ভুল মানুষকে মন দিয়ে বসেছে। আরিয়ানের ভাবনার মাঝেই, আরহামের ফোনে পুনরায় কল আসে। আরহাম কল রিসিভ করতেই, আরহামের অধরের কোণে আলতো বাঁকা করে হাঁসি ফুটে উঠে। আরহামকে হাসতে দেখে, মায়রা এবং আরিয়ান দুজনেই অবাক হয়ে গেলো। ‘লেটস মুভ! আমাদের একটা সেকেন্ডও ওয়েস্ট করা যাবে না। ‘ আরহাম কথাটি বলেই বেড়িয়ে গেলো।

____________

অপরদিকে, মেহেভীনকে একটি বদ্ধ জায়গা বন্দী করে রাখা হয়েছে। চারপাশে ঘুটঘুটে অন্ধকার। মেহেভীন পিটপিট করে তাঁকিয়ে অন্ধকারের মাঝেও এক মহিলার অবয়া দেখতে পেলো। মহিলা ছেলেগুলোকে বলছে, ‘ ওকে মে/রে দে এখুনি। সময় নষ্ট করবি না একদম। আকবর হোসেন এবং আরহাম হাসান তালুকদারের কলিজার টুকরাকে, তাদের কাছে ফিরিয়ে দিতে হবে না, লাশ করে?যেমন আমার ছেলে এবং আমার স্বামী আমার কাছে ফিরে এসেছিলো। ‘

কথাগুলো বলতে বলতে সেই মহিলার চোখ বেয়ে নোনাজল গড়িয়ে পরে। মহিলার কথাগুলো শুনে ভয়ে হাত-পা কাঁপাকাঁপি হয়ে যায় মেহেভীনের। তার মানে শুধুমাত্র আরহামের প্রতি নয়, তার বাবার প্রতি পুরনো ক্ষোভ থেকেও মহিলাটি তাকে মে/রে ফেলতে চাইছে কিন্তু মহিলার গলার স্বর এতো পরিচিত মনে হচ্ছে কেন? সে ভালো করে তাঁকাতেই একপ্রকার থমকে যায়, আর কত কিছু আল্লাহ তাকে দেখাবে? শেষে কিনা নিজের আপন ফুপু তাকে মা/রতে চাইছে? সে তো জানতো তার ফুপু বিদেশে থাকে স্বামীর সঙ্গে কিন্তু পুরনো শত্রুতার রেশে তার কিংবা তার বাবার সাথে কোন যোগাযোগ নেই,
কিন্তু ফুপু এখানে এলো কী করে? সে তার প্রতিশোধ নেওয়ার জন্যে এতোটাই বেকুল হয়ে গিয়েছে, নিজের ভাইয়ের মেয়েকে খু/ন করতে এতো পরিকল্পনা করেছে। মেহেভীনের মাথা ঘুড়াচ্ছে। একের পর এক কাছের লোকের থেকে আঘাত পেয়ে সে একপ্রকার চূর্ণবিচূর্ন হয়ে গিয়েছে। মিসেস জুলির কথা শুনে , তিন- চারজনছেলেগুলো ভিতরে প্রবেশ করলো। যারা মেহেভীনকে ধরে নিয়ে এসেছিলো।মেহেভীনের দিকে কেমন বিচ্ছিরি লোভাতুর দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো। মেহেভীনের ঘৃনায় গা রি রি করতে লাগলো তাদের দৃষ্টি দেখে। একজন মেহেভীনকে উপর থেকে নীচ অব্দি ভালো করে পরখ নিয়ে বললো, ‘ একে কি এমনি এমনি মা/রবো? একটু টেস্ট করবো না? ‘

‘ কিন্তু ম্যাডাম তো শুধু আমাদের মে/রে ফেলার অর্ডার দিয়েছে।’

‘ আরে ম্যাডাম কিচ্ছু জানবে না। এমন সলিড মা/ল পেয়ে কীভাবে হাতছাডা করি? ফি/গার দেখেছিস ওর? ‘

লোকগুলোর কথা শুনে মেহেভীনের ভয়ে গলা শেষ হয়ে যাচ্ছে। তবে কি তার শেষ পরিনতি এমন ভয়ংকরই হতে চলেছে? বুক ফেটে কান্না আসছে তার। মনে মনে সে আল্লাহর নাম স্বরং করছে। হঠাৎ তার স্মৃতির মধ্যে হাতছানি দিচ্ছে এক সুন্দর মুহুর্ত। অন্ধকারের মাঝে আলোর বার্তা হয়ে মেহেভীনের দিকে হাত বাডিয়ে দিচ্ছে আরহাম। আরহামের হাতের স্পর্শ পেয়ে চটজলদি আরহামের হাত আকড়ে ধরে মেহেভীন। জড়িয়ে ধরে তাকে, যেন বিপদের মধ্যে সবথেকে বড় ভরসার জায়গা সে পেয়ে গিয়েছে। আরহাম শক্ত করে মেহেভীনকে জড়িয়ে ধরে, কিন্তু তা নিছকই মেহেভীনের কল্পনা। নরপশুগুলো তার দিকে এগিয়ে আসছে। মেহেভীন ‘ আরহাম সাহেব ‘ বলে চেচায় উঠে। অন্ধকারের মাঝে সেই পশুগুলো ঝাঁপিয়ে পরে।

অপরদিকে আরহাম গাড়ি সর্বোচ্চ গতিতে গাড়ি চালিয়ে যাচ্ছে। তার মস্তিষ্কে একটা চিন্তায় ঘুড়পাক খাচ্ছে যে করেই হোক তাকে পৌছাতে হবে,নাহলে তার প্রেয়সীর অনেক বড় ক্ষতি হয়ে যাবে।

_____________________
মেহেভীন স্তব্ধ হয়ে বসে আছে। এতো বড় ঘটনা কীভাবে মুহুর্তেই ঘটে গেলো তার চোখের সামনে অথচ সে কিছুই করতে পারলো না। টপটপ করে চোখের জল পরতে লাগলো তার আখিজোড়া দিয়ে। তখনি……

চলবে কি

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে