মনের গহীনে সে পর্ব-২০

0
754

#মনের গহীনে সে ❤️
#পর্ব- ২০
#Jannatul_ferdosi_rimi (লেখিকা)
ভরা বিয়ের আসরে, আরহাম গিয়ে অভ্রের গালে ঠাটিয়ে থা/প্পড় বসিয়ে দেয়। অভ্র গিয়ে ছিটকে নীচে বসে পরে। অভ্রের মা এবং মেহেভীনের বাবাসহ সকলে হতভম্ব হয়ে যায়, কিন্তু এর মাঝেও কিছু মেয়েরা আরহামের দিকে মুগ্ধতা নিয়ে তাঁকিয়ে রয়েছে, যেন তাদের সকলের মাঝে কোন বলিউডের হিরোর আবির্ভাব ঘটেছে এবং সে ইতিমধ্যে তার ফাইটিং স্কিল ও দেখানো শুরুও করে দিয়েছে। ব্যাপারটা বেশ মজাদার লাগছে তাদের কাছে। অভ্র নিজেকে দমিয়ে রাখতে পারেনা, আরহামের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে, আরহামের কলার ধরে চেচিয়ে বলে, ‘ তোর মোটিভ কি আরহাম? ভরা বিয়ের আসরে আমার গাঁয়ে হা/ত তুলেছিস। এতো বড় সাহস পেলি কোথা থেকে? আমি খুব ভালো করে জানি, তুই আমার এবং আমার মেহুর বিয়ে আটকাতে চলে এসেছিস। কিন্তু আজকে আমি মেহুকে নিজের বউ করেই ছাড়বো।’

কথাটি বলার সঙ্গে সঙ্গে আরহাম পা বেঁকিয়ে অভ্রের বুক বরা/বর লাত্থি মারে। অভ্র খানিক্টা পিছে হটে যায়। অভ্রের মা হায়হুতাশ করে অভ্রের বাবাকে ঝাঁকিয়ে বলে, ‘ তুমি এখানে কি করছো? তোমার ভাইয়ের ছেলে তো আমার ছেলেকে মে/রেই ফেলবে? তুমি কি কিছু বলবে না? ওরে কেউ আমার ছেলেকে কেউ বাঁচাও নাহলে এই গু/ন্ডা ছেলে আমার ছেলেকে মে/রেই ফেলবে। ‘

আরহাম ফের অভ্রের গাল চেপে গর্জন করে বলে, ‘ ইউ ব্লাডি রাস্কেল! তোর ওই নোংরা মুখ থেকে আমার প্রেয়সীর নাম একদম উচ্চারণ করবি না। ‘

‘ আরহাম আমার ছেলেকে ছেড়ে দে, বলছি। তুই কি চাস? আমার ছেলেকে মে/রে একাই সব সম্পত্তি ভোগ করবি তো? তোর চালাকি কি আমরা বুঝি না?’

অভ্রের মায়ের কথা আরহাম বাঁকা হেসে বলে,

‘ অন্যকে দোষ দেওয়ার পূর্বে, নিজের ছেলের কুকীর্তি সম্পর্কে অবগত হওয়া খুব প্রয়োজন কাকি।
তোমার দুশ্চরিত্র ছেলে ঠিক কি কি করেছে, তা তুমি জানোও না। ‘

‘ কি করেছে আমার ছেলে? ‘

অভ্রের বাবার প্রশ্নে, অভ্রের মা কিছু বলতে চাইলে, অভ্রের বাবাকে তাকে থামিয়ে দিয়ে, আরহামকে ফের জিজ্ঞাসা করেন, ‘ আরহাম আমি তোমার কাছে কিছু জানতে চাইছি। কি এমন দুশকর্ম করেছে আমার ছেলে?’

আরহাম তার পকেট থেকে একটা পেনড্রাইভ বের করে, সকলকে দেখিয়ে বলে, ‘ আমি জানি আমার কথা হয়তো অনেকেই বিশ্বাস করবে, তাই প্রমান নিয়ে এসেছি। আপনারা সকলে দেখুন, তারপর নিজেরাই বিচার করুন। ‘

আরহাম কথাটি বলেই, আরিয়ানকে ভিতরে আসার অনুমতি দেয়। আরিয়ান এবং মায়রা একসাথে ভিতরে প্রবেশ করে। মায়রার সাথে একজন মেয়ে ছিলো, তাকে দেখেই অভ্রের হাত-পা অনাবরত কাঁপতে থাকে। সে কখনোই ভাবেনি, তার সত্যি এমনভাবে সকলের সামনে চলে আসবে, তার মাথা কাজ করছে না। মেয়েটা কেমন ঘৃণার দৃষ্টি নিক্ষেপ করে অভ্রের দিকে তাঁকিয়ে রয়েছে। আরিয়ান তার ব্যাগ থেকে একটা ল্যাপটপ বের করে। আরহাম সেই ল্যাপটপে প্রেনড্রাইভটি ঢুকিয়ে দিয়ে, একটা ভিডিও প্লে করে, সকলের সামনে তা রাখে। তাতে আবছা আলোয় খুব ভালোভাবে মেয়েটির চেহারা বুঝা না গেলেও, অভ্রের মুখ স্পষ্ট। দুজন ঘনিষ্ট ভাবে একটি রুমে চাদর মুড়িয়ে নিজেদের ঢেকে রেখেছে। মেয়েটি অভ্রের বুকে মাথা রেখে বলে, ‘ তুমি কি সত্যিই মেহেভীনকে বিয়ে করবে অভ্র? ‘

অভ্র মেয়েটি মাথায় হাত বুলিয়ে বলতে থাকে, ‘ নো ডার্লিং! কোথায় তুমি আর কোথায় ওই ক্ষ্যাত মেহু! ওকে আমি ছোটবেলা থেকেই পাত্তা দিতাম না। ইভেন আমাদের যখন বিয়েও ঠিক হয়ে ছিলো তখনোও আমি জাস্ট আরহামকে বাজি মাত করার জন্যে বিয়েতে রাজি হয়েছিলাম। ওই মেহুকে বিয়ে করার কোন ইন্টেনশন আমার নেই। আরহাম ছোট বেলা থেকে সবসময় আমাকে দেখিয়েছে, আমি ওর থেকে সবসময় পিছিয়ে। আমার পছন্দের জিনিস আরহাম সবসময় পেয়েছে। সকলের কাছে আরহাম হিরো এন্ড আমি জিরো! আম আ বিগ লুজার আর কিছুই নয়। এইটাই সবসময় প্রুফ করেছে আরহাম।এমনকি পুলিশে সিক্রেট অফিসার হিসেবেও আরহাম সিলেক্টেড হয়েছে যেখানে এতো পরিশ্রম করার পরেও, আমি হয়েছি বার বার রিযেক্টেড! বিসনেজেও সকলে এক নামে আরহাম হাসান তালুকদারকে চিনে। অথচ আমার কোন দামই নেই, বাট এইবার আমি হারবো না। আরহামের সবথেকে প্রিয় জিনিসকে আমি ওর থেকে কেড়ে নিয়ে, আমি ওকে হারিয়ে দিবো। ‘

অভ্রের কথা শেষ হওয়ার পর পরেই ভিডিওটি আরহাম বন্ধ করে দেয়। অভ্রের বাবা নিজের মাথায় হাত দিয়ে ফেলেন, নিজের ভাইয়ের সাথে হিংসে করে এতো বড় ধবংশলীলা শুরু করে দিয়েছিলো তার ছেলে। ভাবতেই ঘৃণায় গা রি রি করেছে তার।
অভ্রের মা ছেলের কুকীর্তির সম্পর্কে আগে থেকেই অবগত ছিলেন, তাই তিনি খুব একটা অবাক হননি কিন্তু এইভাবে ছেলের সত্যি সামনে চলে আসবে তা ভাবতেও পারেননি তিনি। আরহাম সেই মেয়েটাকে ডেকে বলে, ‘ সুহানী? তুমি কি কিছু বলবে? ‘

সুহানী এগিয়ে এসে, অভ্রের দিকে তাকিয়ে বলে, ‘ অভ্র যখন দেশের বাইরে ছিলো, তখনি অভ্রের সাথে আমার পরিচয় হয়। আমাদের মধ্যে ঘনিষ্ট সম্পর্ক গড়ে উঠে। অভ্র আমাকে প্রমিজ ও করে সে আমাকে বিয়ে করবে, সে শুধু আরহামকে বাজি মাত করার জন্যে মেহেভীনের সাথে বিয়ের নাটক করবে কিন্তু মেহেভীনকে বিয়ে করবে না। কিন্তু কাল সে আমাকে স্পষ্ট জানিয়ে দেয়, সে মেহেভীনকে বিয়ে করবে, কারণ সে কিছুতেই আরহামের কাছে মেহেভীনকে ফিরে যেতে দিবে না। সেই রেকডিংও আমার কাছে আছে। চাইলে শুনাতে পারি, এতোটাই দিনের পর দিন হিংসে করে এসেছে সে আরহামকে। ‘

আরহাম অভ্রের সামনে দাঁড়িয়ে বলে, ‘ আমি আমার সমস্ত সোর্স কাজে লাগিয়ে, সুহানীকে খুঁজে বের করেছি এন্ড সব প্রমাণও, যাতে তুই শেষ মুহুর্তে অস্বীকার না করতে পারিস।’

অভ্র মাথা নিচু করে ফেলে, সে চাইলেও কিছু বলতে পারছে না। আরহাম তার কাকাকে উদ্দেশ্য করে বলে,

‘ শুধুমাত্র আমার ভাই বলে আমি অভ্রকে ছেড়ে দিতে পারবো না কাকা। আজকে অভ্র আমার প্রেয়সীর দিকে হাত বাড়িয়েছে, সে তার শত্রুতা যদি আমার মধ্যে সীমাবদ্ধ করতো, তবে আমি হয়তো কিছু বলতাম না, কিন্তু ব্যাপারটা আমার প্রেয়সীর জীবনের, আর একটু দেরী করলে বোধহয় আমার মেহেভীনের জীবনটাই শেষ হয়ে যেতো, তাই আমি ঠিক করেছি, আমি আমার ফিভটি পার্সেন্ট বিসনেজের শেয়ার যা অভ্রের নামে ছিলো, তা আমি ফেরত নিয়ে নিলাম, এখন থেকে অভ্র আমাদের কম্পানির এমডি নয় বরং একজন নরমাল কর্মচারী হয়ে থাকবে।’

অভ্রের বাবাও সায় মিলিয়ে বললেন, ‘ তুমি যা ভালো বুঝো তাই করো আরহাম বাবা। এই কুলাঙ্গার ছেলের হয়ে আমি তোমাকে কিচ্ছু বলতে যাবো না। ‘

অভ্রের মা তার স্বামীকে ঝাঁকিয়ে বলতে লাগলেন, ‘ তুমি কি পাগল হয়ে গেলে? আমাদের ছেলে তো পথে বসে যাবে। ‘

অভ্রের বাবা, নিজের স্ত্রীকে নিজের থেকে সরিয়ে বললেন, ‘ চুপ! একদম চুপ করবে তুমি। আজ যা কিছু হয়েছে তা শুধুমাত্র তোমার জন্যেই হয়েছে। ছেলেকে সবসময় অন্যায় করতে উৎসাহ জুগিয়েছো তুমি, আর আমি তোমাকে কি দোষ দিবো? আমি নিজেও তো একজন ব্যার্থ বাবা! সবসময় অন্যায় দেখেও না দেখার ভান করে এসেছি, আজ ছেলেকে সঠিক শিক্ষা দিলে, আমার ছেলে আজ অমানুষ না হয়ে, আরহামের মতো আদর্শবান একজন মানুষ হতো। ‘

অভ্রের মা অভ্রের বাবা কথা শুনে চুপ হয়ে গেলেন, সত্যি আজ ছেলের অধ:পতনের পেছনে তারই সবথেকে বড় ভুমিকা। অভ্র রাগে- দু:খে, ক্ষিপ্ত হয়ে বিয়ে বাড়ি থেকে বেড়িয়ে গেলো। অভ্রের পিছনে অভ্রের মাও বেড়িয়ে গেলেন। সকলের কাছে ক্ষমা চেয়ে, অত:পর অভ্রের বাবাও বিদায় নিয়ে চলে গেলেন। তখনি আরহাম জানতে পারে, মেহেভীনকে কোথায় পাওয়া যাচ্ছে না। আরহাম দ্রুত মেহেভীনের ঘরে গিয়ে, মেহেভীনকে তন্ন তন্ন করে খুঁজে চলেছে কিন্তু মেহেভীন কোথাও নেই, তখনি আরহাম একটি চিরকুট পায়। তাতে লেখা রয়েছে, ‘ আমি ভেবেছিলাম আরহাম সাহেব, আপনি হয়তো আসবেন, কিন্তু আপনি এলেন না। শুধুমাত্র আপনার নিজ মুখ থেকে ‘ভালোবাসি ‘ শব্দটা শুনার জন্যে আমার এতো বড় রিস্ক নেওয়া, কিন্তু শেষ অব্দি আপনি এলেন না। এতোটাই অভিমান হয়েছে বুঝি আমার উপর? কিন্তু তাই বলে তো আমি অভ্র ভাইকে কিছুতেই বিয়ে করতে পারবো না, তাই উপন্তর না পেয়ে, আমি পালানোর সীধান্ত নিয়েছি। অনেক দূরে চলে যাবো আমি। ‘

কথাগুলোর শেষে আরেকটি কথা ছোট করে লিখে রেখেছে মেহেভীন চিরকুটে, ‘ আমরা কি তবে ভুল মানুষকে নিজের মনের গহীনে ঠাই দেই আরহাম সাহেব? ‘

আরহামের আখিজোড়া ছলমলে হয়ে উঠছে বারংবার। চিরকুটখানা নিজে বুকের সাথে মিশিয়ে, ভেজা গলায় শুধায়, ‘ আমার উপর একটু ভরসা রাখতে পারলে না প্রেয়সী? ‘

মেহেভীনের বাবা আরহামের হাত ধরে একপ্রকার কেঁদেই বলে ফেললেন, ‘ আরহাম বাবা! আমার মেয়ে কোথায় চলে গেলো? আমার মেয়ে যে বড্ড অভিমানী, কোথায় পাবো, তাকে এখন? ‘

আরহাম মেহেভীনের বাবাকে শান্ত করে বলে, ‘ মামু! চিন্তা করবে না। আমি আমার প্রেয়সীর গাঁয়ে আচ টুকুও লাগতে দিবো না। ‘

আরিয়ান চারিপাশে একবার পরখ করে নিয়ে বললো৷ ‘ ভাই আমাদের এখন এক সেকেন্ডও টাইম ওয়েস্ট করা উচিৎ না। মেহুকে যত আরলি পসিবল, আমাদের খুঁজে বের করতে হবে। ‘

আরহাম সায় জানিয়ে, মায়রার উদ্দেশ্যে বলে,’ সব সোর্স কাজি লাগিয়ে দাও মায়রা। লাস্ট এক ঘন্টার মধ্যে আমি মেহুকে নিজের সামনে দেখতে চাই। ‘

মায়রা মাথা নাড়িয়ে কাউকে ফোন করে। আরিয়ান ও আরহাম বেড়িয়ে যায়, মেহেভীনকে খুঁজতে।

______________
অপরদিকে,
মেহেভীন অন্তুর সাথে দৌড়ে পালিয়ে বাড়ি থেকে অনেকটুকু পথ চলে এসেছে। দূর- দূরান্তে কোনপ্রকার গাড়ির কোন ছায়াটুকুও অব্দি দেখা যাচ্ছে না। মেহেভীন অন্তুকে বলে, ‘ এ তুই আমাকে কোথায় নিয়ে এলি অন্তু? একদম জনশূন্য জায়গা। কোন গাড়িও দেখতে পারছি না। গাডি ছাড়া আমরা হেটে হেটে কীভাবে যাবো? ‘

তখনি একটা মাইক্রো গাড়ি মেহেভীনদের সামনে চলে আসে।

‘ এইতো গাড়ি চলে এসেছে, মেহেভীন চল আমরা উঠে পরি। ‘

অন্তুর কথা শুনে মেহেভীন কিছুটা সংদেহ নিয়ে বললো,’ কিন্তু এখানে গাড়ি কি করে এলো? আর আমরাই বা এই গাড়িতে উঠবো কেন?’

অন্তু একটু ঘাবড়ে গিয়ে, মেহেভীনের কাঁধে হাত রেখে বললো, ‘ আরে, এতোক্ষন তো তুই গাড়ি নেই বলে চেচাচ্ছিলে আর এখন এতো প্রশ্ন করছিস কেন? আমি রাস্তায় যেতে যেতে, মাইক্রো ভাড়া করে ফেলেছিলাম, কল দিয়ে। তুই উঠ না। ‘

নিজের বেস্ট ফ্রেন্ডের কথা শুনে মেহেভীন মাইক্রো গাড়িতে উঠে পরে,তখনি…

চলবে কি?।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে