মনের গহীনে সে পর্ব-১৯

0
748

#মনের গহীনে সে ❤️
#পর্ব- ১৯
#Jannatul_ferdosi_rimi (লেখিকা)
কিছুক্ষনের মধ্যেই অভ্র এবং মেহেভীনের বিয়ের কার্যক্রম শুরু হয়ে যাবে। বরযাত্রি ইতিমধ্যে চলে এসেছে মেহেভীনদের বাড়িতে। ছোটখাটোভাবেই সবকিছু আয়োজন করেছেন মেহেভীনের বাবা, যদিও এইসবে মোটেও মত নেই তার, তবুও মেয়ের জেদের কাছে একপ্রকার হার মেনে তিনি সবকিছু করেছেন। তবুও তার মনের কুঠিরে এক ক্ষীন্ন আশা উঁকি দিচ্ছে বারংবার হয়তো শেষ সময়ে কোন এক মিরাক্কেল ঘটলেও ঘটতে পারে। মহান আল্লাহ তায়ালার দরবারে তিনি দুই হাত তুলে মোনাজাত করেছেন যেন তার মেয়ে তার ভুল বুঝতে পারে, তিনি আশাবাদী শেষ মুহুর্তে এসে হয়তো সব ঠিক হলেও হতে পারে। অভ্রের মা এসে মেহেভীনের বাবার সাথে বিভিন্ন খোশগল্পে মেতে উঠছেন, আরহামের বাবাও সৌজন্যতার খাতিরে সকলের সাথে কথা বলছেন। অভ্র বার বার স্টেজে বসে উপরের দিকে তাঁকাচ্ছে। মনটা কেমন করে যেন উঠছে। অজানা এক ভয় উঁকি দিচ্ছে বারংবার। যতক্ষন পর্যন্ত বিয়ের কার্যক্রম সমাপ্ত না হচ্ছে ততক্ষন পর্যন্ত সে শান্তি পাবে না। কালকে থেকে মেহেভীনের কার্যক্রম তার কাছে সন্দেহের ঠেকছে। অভ্র তার একজন কাজিন বোনকে ডেকে বলে, ‘ তুই গিয়ে এখুনি মাকে গিয়ে বলে, মেহেভীনকে নিয়ে আসার জন্যে তাড়া দিতে। বেশ দেরী হয়ে যাচ্ছে। ‘
অভ্রের কাজিন বোন লিনা কিছুটা দুষ্টু হেসে বললো,
‘ অভ্র ভাই দেখি এখন থেকেই বউ পাগল হয়ে গিয়েছে। আর কলেজ লাইফে থাকতে আমাদের কাউকে পাত্তাও দিতি না, এমনকি মেহুকেও ইগনোর করতি। হুট করে কি এমন পেলি মেহুর মধ্যে?ভালোবাসার উধয় ঘটলো কি করে?’

অভ্র প্রতিউত্তরে বাঁকা হাসি দিয়ে শুধু বললো,

‘ তোকে যা বললাম তাই কর। এট নি কস্ট মেহুকে যত তাড়াতাড়ি স্টেজে নিয়ে আসার ব্যাবস্হা কর। ‘

অভ্রের কথা শুনে লিনা গিয়ে অভ্রের মাকে জানালো অভ্রের কথা। অভ্রের ইচ্ছেতে তিনি মেহেভীনের বাবাকে তাড়া দিয়ে বললেন যেন মেহেভীনকে নিয়ে আসা হয়। অপরদিকে মেহেভীন বধু বেশে নিজের রুমে পাইচারি করে যাচ্ছে। বরযাত্রি এসেছে শুনে মনে তার অদ্ভুদ এক ভয়ের সৃষ্টি হয়েছে, যদিও সে জানে আরহাম ঠিক সময়ে এসে বিয়ে আটকে দিবে, তবুও ভয় যেন তার কাটছেই না। মেহেভীন সেদিন হসপিটালে আরহামের সকল কথাই শুনে ফেলেছিলো। সে জেনে গিয়েছে আরহাম এবং মায়রার বিয়ে সম্পূর্ন নাটক, তাইতো আরহাম যেন সব নিজে থেকে স্বীকার করে,তাই অভ্রের সাথে বিয়ের ছোট্ট নাটক করছিলো মেহেভীন,কিন্তু হীতে বিপরীত হয়ে যাবে না তো? মেহেভীনের সাথে তো আরহামের ডিভোর্সটাও হয়নি। সেই পেপারে আরহাম সাইন করলেও, মেহেভীন সেই পেপারে সাইন করেনি।মেহেভীনের ভাবনার মাঝেই, লিনাসহ অভ্রের কিছু কাজিন মেহেভীনের কক্ষে প্রবেশ করে। লিনা বলে, ‘ মেহেভীন নীচে সকলে বিশেষ করে তোমার হবু বর তোমাকে ডেকে পাঠিয়েছে, তিনি যেন আর তর সইতে পারছে না। চলো কিছুক্ষনের মধ্যেই বিয়ে শুরু হয়ে যাবে। ‘

লিনার কথা শুনে অন্তু ভিতু চোখে মেহেভীনের দিকে তাঁকাতেই, মেহেভীন তার আখিজোড়া দিয়ে তাকে আশ্বস্ত করে, বড় বড় নি:শ্বাস ফেলে অভ্রের কাজিনদের সঙ্গে নীচে চলে যায়।

অপরদিকে….
আরহাম একটা শার্টের সাথে ব্লাক ব্লেজার পরে ঝাঁকড়া চুলগুলো সামনে এনে স্পাইক করে , সারা গাঁয়ে ব্রান্ডের পারফিউম ছিটিয়ে নিয়ে, আয়নায় নিজেকে ভালো করে দেখে নেয়। বিছানার পাশেই একটি ছোট ফ্রেম ছিলো। সেই ফ্রেমে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে আরহাম এবং মেহেভীনের সেই ছোটবেলার ছবি। যেখানে মেহেভীন গাছের নীচে বসে খেলছিলো এবং স্কুল পড়ুয়া আরহাম স্কুল ড্রেসে গাছের আডাল থেকে তার প্রেয়সীকে মুগ্ধতা নিয়ে দেখছিলো। আরহাম সেই ফ্রেমখানা হাতে নিয়ে বুকের মাঝে মিশিয়ে, আখিজোড়া নিবদ্ধ রেখে শুধায়,

‘ আমি ক্ষনে ক্ষনে উপলব্ধি করেছি প্রেয়সী, তুমি হীনা আমি সম্পূর্ণ শূন্য এক পথের পথিক। ‘

আরহাম ছবিখানার দিকে কিছুক্ষন তাঁকিয়ে ফের বলে,
‘সময় এসেছে তোমাকে নিজের করে নেওয়ার। এইবার আর কোন লুকোচুরি নয়। আমি চাইলেও তোমাকে নিজের থেকে দূরে সরাতে পারছি না। হয়তো আর কখনো পারবোও না, কিন্তু কথা দিচ্ছি সবসময় সকল বিপদ থেকে তোমায় আগলে রাখবো প্রেয়সী। একটু অপেক্ষা করো আমি আসছি। ‘
আরহাম কথাগুলো বলে ফ্রেমটা সযত্নে টেবিলের পাশে রেখে দেয়।অত:পর একটা ব্লাক সানগ্লাস পরে সিড়ি বেয়ে নীচে নেমে এলো। আরহামকে দেখে সকলের চোখ যেন ছানাবড়া হয়ে গেছে। আরিয়ান এবং মায়রা আরহামকে দেখে উঠে দাঁড়ালো। আরহাম আরিয়ান এবং মায়রার সামনে দাঁড়িয়ে বললো, ‘ ভালো লাগছে তো আমায়? ‘
আরিয়ান কিছু বলার পূর্বেই, মায়রা আরহামকে সম্পূর্ণ পর্যবেক্ষন করে আনমনে বলে উঠলো,
‘জাস্ট আ হিরো। ‘
মায়রার কথা শুনে আরিয়ান কিছুটা কেশে উঠতেই, মায়রা নিজেকে সামলে নিলো। আরিয়ান নিজের কলার ঠিক করে,আরিয়ান আরহামের কাঁধে হাত রেখে বললো, ‘ ভাই! তোকে তো আজ কোন বলিউডের হিরোর থেকে কম লাগছে না। কি ব্যাপার? বউয়ের বিয়ে আটকাতে যাচ্ছিস নাকি তার বিয়েতে গিয়ে তোর বউয়ের বান্ধুবীদের পটাতে যাচ্ছিস? ‘

আরহাম ভ্রু কুচকে আরিয়ানের কথার বিপরীতে গম্ভীর সুরে বলে,

‘ অভ্র নামক ভিলেনের থেকে হিরোইনকে বাঁচাতে হলে,হিরোর এন্ট্রি তো হতেই হবে তাইনা? ‘

‘ জিও ভাই। ‘ কথাটি বলেই আরিয়ান সিটি মারে। আরহাম মুচকি হাসি উপহার দেয়।

_______________

অভ্রের কাজিনদের সঙ্গে মেহেভীন নীচে নেমে স্টেজের দিকে আসে। অভ্র মেহেভীনকে উপর থেকে নীচ অব্দি একপলক দেখে মুচকি হেসে বলে,

‘ রেইলি মেহেভীন ইউ আর লুকিং সো মাচ গর্জিয়াস। কাম হেয়ার। আমার পাশে এসে বসো। ‘

কথাটি বলেই অভ্র হাত বাড়িয়ে দেয়, তখনি কাজি সাহেব বলে উঠেন, ‘ প্লিয আপনারা সবাই দ্রুত করুন। আমার আরো কিছু কাজ রয়েছে। ‘
মেহেভীন এক পলক অভ্রের হাতের দিকে তাঁকায়,আরেকবার সদর দরজার দিকে তাঁকায়। বুক কেমন যেন তার ধরফর করছে। আরহাম এখনো আসেনি, তবে কি আরহাম আসবে না? তার বিশ্বাস কি হেরে যাবে? কিন্তু সে কিছুতেই অভ্রকে বিয়ে করবে না। মেহেভীন হুট করে বলে উঠে,

‘ আমার কাউকে জরুরী ফোন করতে হবে। আমি এখুনি আসছি। ‘

‘ মানে? এই সময় কাকে ফোন করবে তুমি?’

অভ্রের প্রতিউত্তরে কিছুটা ভয়ে ভয়ে মেহেভীন বলে,

‘ আমি এখুনি আসছি। প্লিয গিভ মি আ ফাইভ মিনিটস। ‘

কথাটি বলেই মেহেভীনকে কাউকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে, উপরে চলে যায়। মেহেভীনের পিছনে পিছনে অন্তুও যায়। মেহেভীন উপরে গিয়ে আরহামের নাম্বারে ডায়াল করে, কিন্তু আরহামের নাম্বার বন্ধ। মেহেভীন এইবার সত্যিই ভয় পেয়ে যায়। সে অন্তুর দিকে তাঁকিয়ে বলে,

‘ এখন কি হবে অন্তু? উনি তো ফোনই ধরছে না। আমরা বিয়েটা আটাকাবো কি করে?’
অন্তু কিছুক্ষন ভেবে অত:পর বলে উঠে,

‘ আইডিয়া! তোকে পালাতে হবে। ‘

‘ ওয়াট? এখন আমি পালাবো? ‘

‘ নাহলে, বিয়েটা আটকাবি কি করে? তোর আরহাম সাহেব, যার উপর ভরসা রেখে এতো বড স্টেপ নিলি, সে তো এখনো এলো না। এখন কি করবি? অভ্রকে বিয়ে করে ফেলবি। ‘

মেহেভীন অন্তুর কথা ভেবে দেখলো, এখন পালানো ছাডা তার হাতে কোন উপায় নেই, তাই অন্তুকে সঙ্গে নিয়ে, মেহেভীন তাদের পিছনের দরজা থেকে বাইরে বেড়িয়ে গেলো।
_____________

কাজি সাহেব কিছুক্ষন বসে থেকে, ফের বিরক্ত হয়ে বলে, ‘ আবার কি শুরু করলেন আপনারা? আমার তো দেরী হয়ে যাচ্ছে। বিয়েটা কি আদোও হবে? ‘

অভ্র এইবার নিজেকে দমিয়ে রাখতে পারেনা। একপ্রকার চেচিয়ে বলে, ‘ বিয়ে তো অবশ্যই হবে এবং আজকেই হবে। আমি নিজে গিয়ে মেহুকে নিয়ে আসছি। ‘

‘ ওয়েট! জাস্ট ওয়েট! এতো তাড়া কিসের তোর?’

আরহামের কন্ঠ কানে আসতেই, অভ্র পিছনে ফিরলো। মেহেভীনের বাবা আরহামকে দেখে স্বস্হির নি:শ্বাস ফেললেন। যাক শেষ রক্ষা তবে হয়েছে।’

চলবে কি?

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে