#মনের গহীনে সে ❤️
#পর্ব- ১৭
#Jannatul_ferdosi_rimi (লেখিকা)
মেহেভীনের বিয়ের খবর কানে আসতেই, হাতের গ্লাস টা ছুড়ে ফেলো দিলো আরহাম। নিজেকে সামলানো যেন তার কাছে বেশ মুশকিল হয়ে যাচ্ছে। হাতের সামনে যাই পাচ্ছে তাই ছুড়ে মার/ছে সমান তালে। ক্রধে তার রগ গুলো ফর্সা ললাটে জুড়ে স্পষ্ট বিদ্যমান হয়ে গেলো। যদিও সে নিজ ইচ্ছেতেই তার মনের বন্দীনীকে মুক্ত করে দিয়েছিলো, তবুও কেন তার এতো যন্ত্রনা হচ্ছে? অসহ্য লাগছে সবকিছু। আরহামের ফোনে কিছুক্ষন আগে অভ্রের ফোন এসেছিলো, আরহাম কিছুটা অবাক হয়ে রিসিভ করতেই, অভ্র কিছুটা কুটিল হেসে শুধায়,
‘ কিরে আরহাম? নিজের প্রাক্তন বউ এবং নিজের ভাইয়ের বিয়েতে আসবি না বুঝি? তোর ইনফরমেশন এর জন্যে জানিয়ে রাখি, কালকে আমার এবং মেহেভীনের বিয়ে।আজকে কিন্তু আমাদের গাঁয়ে হলুদ। সেখানে অবশ্যই তোকে আসতে হবে। তাছাড়া প্রাক্তন বউকে হলুদ শাড়িতে দেখার লোভ আশা করি, তুই ধরে রাখতে পারবি না।ঠিক টাইম মতো চলে আসিস, টাটা৷ ‘
মেহেভীন এবং অভ্রের বিয়ের কথা শুনে মুহুর্তেই নিজেকে নিয়ন্ত্রন রাখতে পারে না আরহাম। ছুড়ে চুরমার করে ভেঙ্গে ফেলে সেই ফোন। আরহামের মনের অবস্হা কিছুটা আন্দাজ করতে পেরে উচ্চস্বরে হেসে উঠে অভ্র। সে তো এতোদিন এইটাই চেয়েছিলো। আরহামকে প্রতি পদে পদে সে ক্ষত/বিক্ষত করে ফেলবে। সে তার লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে ভেবেই প্রশান্তির এক নি:শ্বাস ফেলেলো।
আরহামের দরজার বাইরে থেকে সবকিছুই শুনতে পারছে মায়রা এবং আরহাম। মায়রা যথেষ্ট ভালোবাসে আরহামকে, নিজের ভালোবাসার মানুষকে হারানোর তীব্র ব্যাথা সে ক্ষনে ক্ষনে উপলব্ধি করেছে, সেই একি কষ্ট আরহাম ও সহ্য করে যাচ্ছে ভেবেই বুক ভারি হয়ে উঠে মায়রার। আরহামের বেদনাতে তার বুকও ব্যাথিত হয়ে উঠছে।
আরিয়ান তীক্ষ্ণ নজরে শুধু দেখে যাচ্ছে, কোনরুপ প্রতিক্রিয়া করছে না।
‘ আমার মনে হয়, আমাদের উচিত আরহামকে আটকানো, নাহলে নিজের ক্ষতি করে ফেলবে। ‘
মায়রা কথাটি বলে দরজা কড়া নাড়তে চাইলে, আরিয়ান খপ করে মায়রার হাত ধরে ফেলে। মায়রা তার হাতের দিকে তাঁকায়,যেখানে শক্ত করে আকড়ে ধরেছে এক জোড়া হাত।
কিছুটা গম্ভীর সুরে সে মায়রার দিকে উদ্দেশ্য করে বলে,
‘ আপাতত ভাইকে একেলা থাকতে দাও। ভাই নিজের ভেতরে থাকা জমে থাকা অজস্র বিরহ তার রাগের মাধ্যমে বহি:প্রকাশ ঘটাচ্ছে। তাই বলছি আপাতত ভাইকে ছেড়ে দেওয়ায় বেটার। ‘
আরিয়ানের কথা শুনে মায়রাও ব্যাপারটা ঘাটলো না। সেও আরিয়ানের সাথে নীচে চলে গেলো।
__________
আকবর হোসেন মেয়ের দিকে ফ্যালফ্যালে দৃষ্টিতে তাঁকিয়ে রয়েছেন। মেয়ে ঘোর পন করে রেখেছে সে অভ্রকেই বিয়ে করবে এমনকি কালকের মধ্যেই। কিন্তু সে কিছুতেই বুঝতে পারলো না আরহাম তাকে কতটা ভালোবাসে। মৃতপথযাত্রী বোনের শেষ আবদারেই আরহামের হাতে তুলে দিয়েছিলো আকবর সাহেব, কিন্তু মেহেভীনের এমন কান্ডে আরহাম কিংবা শিরিন বেগমের মনে কতটা ভয়াবহ প্রভাব ফেলবে তা ভেবেই শিউরে উঠছেন তিনি।বাবার মনের ভাব ক্ষীন্ন আন্দাজ করতে পেরে, মেহেভীন কিছুটা অভিমানের সুরেই বলে,
‘ বাবা তুমি কি চাও না আমি বিয়ে করে সুখে সংসার করি? অভ্র ভাইয়া কোন দিক দিয়ে খারাপ বলো?’
‘ কিন্তু মা, আরহাম তোমার জন্যে বেস্ট। আমি মানুষ চিনতে ভুল করে নি। তুমিই কিন্তু সত্যি ভুল করছো মেহু। একবার ভেবো দেখো তুমি।’
‘কিসের ভিত্তিতে তুমি এমন কথা বলছো বাবা? আমাদের মাঝে তিন মাসের চুক্তি হয়েছিলো, তা পূরণ হয়ে গিয়েছে। তাছাডা উনি মায়রা আপুর সাথে দিনের পর দিন ধরে সংসার করে যাচ্ছে তাও আমারই সামনে! তখন আমার কেমন লেগেছে বলতে পারো বাবা? আমার কি দোষ বলো তুমি? আমার কি একটা সংসার পাওয়ার অধিকার নেই? এমন কাউকে কি আমি ডিসার্ভ করি না? যে শুধু আমার একান্ত আমার হয়েই থাকবে। ‘
শেষের কথাগুলো অভিমানের সহিত বলে মেহেভীন ঘরের দিকে চলে যায়। আকবর সাহেব স্তব্ধতা নিয়ে বসে পরেন। তিনি চাইলেও মেয়েটাকে সত্যি কথাগুলো বলতে পারছেন না। মেয়েটা আরহামকে যেমনটা ভাবছে, তা ঠিক নয়। যেই মিথ্যেকে কেন্দ্র করে মেহেভীন তার মনের কুঠিরে কঠিন অভিমান পুষে রেখেছে তা নিতান্তই অর্থহীন। বাস্তব তো অন্য কিছু যা মেহেভীনের ধারনার বাইরে। মা ম/রা মেয়েটিকে নিজের হাতে করে যত্ন করে বড় করেছেন তিনি। একরোখা জেদি মেয়ে তার। সে যখন ঠিক করেছে সে অভ্রকে বিয়ে করবে, সে তাই করবে। তাকে কেউ আটকে রাখতে পারবে না। তবে কি সত্যি সব শেষ হয়ে গেলো?
_______________
অভ্রের মায়ের এক প্রকার জোড়াজুড়িতেই, অভ্রের বাড়িতে ছোট করে গাঁয়ে হলুদের অনুষ্টানের করা হয়েছে, যদিও নিজের একমাত্র ছেলের বিয়েতে কোনপ্রকার এলাহীভাবে আয়োজন করা হচ্ছে না ভেবেই তার মন ক্ষুন্ন হয়ে যাচ্ছে, যদিও তার ছেলের জেদের কাছে একপ্রকার হার মেনেই তিনি মেহেভীনকে ঘরের বউ করছে। নাহলে এমন ডিভোর্সী মেয়েকে তার ঘরের বউ করার ইচ্ছে তার কোন কালেই ছিলো না। মেহেভীন ও অভ্রের মায়ের অনুরোধে ছাদে আয়োজিত হলুদের অনুষ্টানে স্টেযে বসে আছে। আশে পাশে উপস্হিত সকলেই, তাকে দেখে কানাঘুষা ইতিমধ্যে শুরু করে দিয়েছে। একজন তো অভ্রের মাকে বলেই ফেললো,
‘ অভ্র আমাদের লাখের মধ্যে এক! দেশে কি মেয়ের অভাব ছিলো? এমন ডিভোর্সী মেয়েকে ঘরের বউ করছো? যে কিনা তোমারই ভাসুরের ছেলের প্রাক্তন বউ। শেষে কিনা নিজ ভাইয়ের ডিভোর্স দেওয়া বউকে অভ্র বিয়ে করছে ছিহ! বলে কি? অভ্র এমন কাজ করছে কি করে?ওর কি কোন লজ্জা নেই?’
সেই মহিলার সাথে তাল মিলিয়ে বাকিরাও একি কথা বললো। অভ্রের মা কপাল চাপড়ে বললো,
‘ আর কি বলবো ভাবি? কপাল খারাপ হলে যা হয়। মেয়ে কি আর ভালো মেয়ে? নাহলে নিজের সংসার ভেঙ্গে, সেই প্রাক্তন স্বামীরই ভাইকে কেউ বিয়ে করতে চায়? বিশ্বাস করো তোমরা। আমার অভ্রের কোন দোষ নেই। মেয়েটাই তো ফুশলে ফাশলে আমার সরল ছেলেটাকে বিয়ে করাতে রাজি হলো। নাহলে আমার হিরের মতো ছেলেকে বিয়ে করার জন্যে মেয়েরা লাইন দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ‘
অভ্রের মায়ের এমন কথা মেহেভীনের কানে পৌঁছাতেই, সে নিজেকে নিয়ন্ত্রন করতে পারলো না৷ গটগট পায়ে অভ্রের মায়ের এবং সেই মহিলাদের সামনে দাঁড়িয়ে হাতে তালি দিতে দিতে বললো,
‘ বাহ বাহ মিসেস তালুকদার! সত্যিই গিরগিটির থেকেও বেশি রং বদলান আপনি। নিজে যেচে পরে অভ্রকে নিয়ে দিনের পর দিন আমার মাথাই ধুলাই করলেন, আমাকে দিয়ে ডিভোর্সটাও করিয়ে দিলেন।
এই বিয়ের জন্যে পায়ে পরতেও যেন আপনি পিছপা করতেন না, এমন তড়জোড় করেছিলেন আপনি৷ যেই নিজের ছেলের চরিত্রের দিকে আঙ্গুল পরলো, তখনি সেই আঙ্গুল আমার দিকে বাড়িয়ে দিলেন আপনি? খুব সহজ না? একটা মেয়েকে চাইলেই সকলের সামনে চরিত্রহীন খারাপ প্রমাণ করা যায়। আসলে আমাদের সমাজের নীতিই হয়ে গেছে এমন। কখনো কোন ছেলের দোষ দেখা হয়না। তার চরিত্র নিয়ে কথা বলা হয়না। তুমি মেয়ে, তার মানে তোমারই দোষ। দোষ থাকলে তা তোমারই হবে। এমন একটা তকমা আমাদের সমাজের কিছু মানুষ মেয়েদের গাঁয়ে লাগিয়ে দিয়েছে। কিন্তু কেন? মেয়েরাই কেন বার বার এইসব সহ্য করবে বলতে পারবেন আপনি?’
মেহেভীনের কথা শুনে উপস্হিত সকলে চুপ হয়ে যায়। মেহেভীন রাগে ফুশতে থাকে। অভ্র দূর থেকে অবস্হা বেগতিক দেখে মেহেভীনকে দূরে সনিয়ে এনে বলে, ‘ শান্ত হও মেহু। একবার শুধু আমাদের বিয়েটা হয়ে যাক, তারপর কেউ আমাদের দিকে আঙ্গুল তুলে তাঁকানোর সাহস পাবেনা। ‘
মেহেভীন ফের তাচ্ছিল্যের এক হাসি দিয়ে ছাদের রেলিং ধরে দাঁড়ায়। অভ্রের জরুরী এক ফোন চলে আসায় সে অন্যদিকে চলে যায়। তখনি সেখানে বিদুৎ হঠাৎ করে চলে যায়৷ মেহেভীন অনুভব করে সে শুন্যে ভাঁসছে। কে তালে কোলে তুলে নিলো? কে সেই অচেনা আগুন্তক।
চলবে কি?