#মনের_গহীনে_সে 💝
#পর্ব-১৫
#Jannatul_ferdosi_rimi (লেখিকা)
আরহামের সামনে অন্য ছেলে তার স্ত্রীকে স্পর্শ করেছে জোড় করে, তা দেখে নিজের নিয়ন্ত্রন একেবারে হারিয়ে ফেলে সে। সে অভ্রের থেকে মেহেভীনকে ছাড়িয়ে নেয়। আরহামকে দেখে একমূহুর্তের জন্যে তৃপ্তির হাসি দেয় মেহেভীন। ভরসা পায় সে। যেন আরহামকে এখন তার সবথেকে প্রয়োজন ছিলো। আরহাম অভ্রের শার্টের কলার ধরে, অভ্রের নাক বরাবর ঘু/ষি দেয়। সঙ্গে সঙ্গে অভ্র ছিটকে মাটিতে পরে যায়। আরহাম উগ্র মেজাজে হুংকার ছেড়ে বলে, ‘ হাউ ডেয়ার ইউ? ইউ ব্লা/ডি? আমার ওয়াইফকে তার পারমিশন ছাড়া টাচ করার? অনেক সহ্য করেছি অভ্র তোর নাটক। নাও ইনাফ,ইজ ইনাফ! ‘ বলেই আরহাম ফের অভ্রকে
মা/রতে গেলে অভ্রও পাছে আরহামকে আ/ঘাত করে বলে, ‘ কিসের বউ তোর? নিজে দ্বিতীয় বউ নিয়ে সমানে মেহেভীনের সামনে সংসার করছি তার বেলায় কিছু না? তখন কি আমরা কেউ তোর ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করেছি? তাহলে তুই কেন আমার এবং আমার হবু বউয়ের ব্যাপারে বার বার ঢুকছিস?’
আরহাম কথাটি শুনে অভ্রের শার্টের কলার ঝাঁকিয়ে বলে, ‘ কতবার বলবো তোকে? মেহু এখনো আমার স্ত্রী।’
কিছুক্ষনের মাঝেই বিষয়টি হাতাহাতির পর্যায়ে চলে যায়। উৎসুক জনতার ভীর জমিয়ে, দুই ভাইয়ের মারা/মারি বেশ উৎসাহের সাথে ভিড় জমিয়ে দেখছে। যেন তারা বেশ মজা পাচ্ছে। আরহামের সাথে অভ্র একদম/ই পেরে উঠছে না। বিশাল দেহীর শারীরিক গঠনে বেশ কিছুটা এগিয়ে আরহাম। তাছাডা সে একজন ট্রেনিং প্রাপ্ত স্পাই অফিসার। তার সাথে মা/রামারিতে পেরে উঠা সাধারন মানুষের জন্যে বেশ কঠিন ব্যাপার। মেহেভীন আরহামের রা/গে ভয়েস শিউরে উঠেছে। আরহামের এমন ভয়ংকর রাগের সাথে কখনো পরিচিত হয়নি মেহেভীন। তবুও মেহেভীন ক্ষীন্ন সাহস জুগিয়ে আরহামের সামনে গিয়ে, আরহামকে টেনে ধরে বললো, ‘ থামুন আরহাম সাহেব! কি করছেন কি?’
‘ স্টুপিড মেয়ে আমার সামনে থেকে এখুনি সরে যাও। নাহলে তোমাকেও কিন্তু….’
‘ নাহলে আমাকেও কি? আমাকেও মার/বেন বুঝি? মা/রুন তবে! তবুও এইভাবে শপিং মলে দুই ভাই
মা/রা/মারি করে লোক হাসাবেন না প্লিয। ‘
মেহেভীনের কথা শুনে নিজের হাত গুটিয়ে নেয় আরহাম। তবুও তীব্র ক্ষোভ নিয়ে রাগে ফুসতে ফুসতে অভ্রের দিকে ভয়ংকর দৃষ্টিতে তাঁকিয়ে থাকে।
অভ্রের মা এসে নিজের ছেলে র/ক্তা/ক্ত অবস্হায় দেখে সঙ্গে সঙ্গে ছেলেকে তুলে দাঁড় করান তিনি। আতংকিত গলায় শুধায়, ‘ অভ্র, বাবা! তোর এই অবস্হা হলো কি করে? ‘
তিনি কথাটি বলেই, আরহামের দিকে নজর দেন। তার বুঝতে বাকি থাকে না, ঘটনাটি আসলে কি ঘটেছে। তিনি আরহামের দিকে তেড়ে গিয়ে প্রশ্ন করলেন, ‘ আরহাম তুই? কেন মে/রেছিস এইভাবে আমার ছেলেকে? ‘
আরহাম সঙ্গে সঙ্গে জবাব দিয়ে বলো, ‘ তা তোমার সুপ্ত্রকেই জিজ্ঞাসা করো কাকি। আমি লাস্টবারের মতো ওয়ার্ন করে দিলাম, আমার ওয়াইফের সাথে কোনরকম অভদ্রতা আমি সহ্য করবো না। আজকে তো মেরে/ছি, নেক্সট টাইম একেবারে…’
আরহাম কিছু বলার পূর্বেই, মায়রা সেখানে উপস্হিত হয়ে, আরহামের হাত ধরে আড়ালে নিয়ে যায়। আরহাম আড়ালে এসে মায়রার হাত ছাড়িয়ে নেয়। তার মষ্তিষ্কে ভয়ংকর রাগ চেপে বসেছে। সে মেহেভীনের বিপদের খবর শুনে, শপিং মলে এসে যখন দেখতে পায় অভ্র মেহেভীনের ইচ্ছের বিরুদ্ধে, মেহেভীনকে বাজেভাবে স্পর্শ করার প্রচেষ্টা করছে তখন সে তার নিয়ন্ত্রন করে ফেললো।
‘ আরহাম এইসব কি শুরু করেছো তুমি? ভুলে গেলে? শপিং মলে শত্রু গুলো রয়েছে। ‘
‘ তো কি করতাম আমি? ওই রাস্কেল টা আমার প্রেয়সীর দিকে হাত বাড়িয়েছে, ভাবতে পারছো তুমি? আমার ভালোবাসার দিকে, অথচ আমি চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকতাম? ‘
কথাটি বলেই জোড়ে জোড়ে নি:শ্বাস ফেলে, দেয়ালে সজোড়ে আঘাত করে আরহাম। নিস্তব্ধ পরিবেশ। অশান্ত পরিবেশ মুহুর্তের মধ্যেই যেন পিন পিন নিরবতায় পরিপূর্ন হয়ে গেলো। মায়রা জানে আরহাম মেহেভীনকে ভালোবাসে তবুও তার মন সায় দিতে চায় না। বারংবার শুধু যেন ঠাওড়ায়,’আরহাম আমাকে ভালোবাসলে কি খুব অন্যায় হয়ে যেতো? দেখো আমি তোমাকে কতটা ভালোবাসি, অথচ তুমি বুঝতেও চাও না। ‘
কিন্তু আফসোস! চাইলেও সেই কথাগুলো মায়রা বলতে পারবে না। কথাগুলো রয়ে যাবে মায়রার মনের গহীনে আজীবন।
__________
মেহেভীন অভ্রের দিকে হাত বাড়িয়ে, তাকে উঠতে সাহায্য করলো। অভ্রের মা মেহেভীনের দিকে তাঁকিয়ে বললেন, ‘ তোমাকেও বলি বাপু! তোমার হবু স্বামীকে তোমার সামনে মে/রেই যাচ্ছে,অথচ তুমি চুপ ছিলে?’
অভ্র মাটি থেকে উঠতে উঠতে তার মায়ের কথাকে দ্বিরক্তি জানিয়ে বলে, ‘ আহ, মা! তুমি মেহেভীনকে কিছু বলো না। ‘
কথাটি বলেই অভ্র মেহেভীনের দিকে তাঁকিয়ে আলতো হেসে জবাব দিলো, ‘ তুমি বাড়ি যাবে তো? চলো তোমাকে পৌঁছে দেই। ‘
অভ্রের মা ছেলের দিকে অবাক হয়ে তাঁকিয়ে রইলেন। তার ছেলেটা এতোটা শান্ত কী করে? মেহেভীন কিছুটা ইতস্ত হয়ে বললো, ‘ আপনার তো নাক বেয়ে র/ক্ত গডিয়ে পরছে। আপনি হসপিটালে চলুন। ‘
অভ্র তার নাকে হাত দিয়ে আলতো হেসে জবাব দেয়, ‘ ও কিছু না। আগে চলো তোমাকে পৌঁছে দেই। ‘
‘ কিন্তু তোর তো অবস্হা খারাপ অভ্র। আগে হসপিটালে যাই। ‘
মায়ের কথা শুনে অভ্র কিছুটা নিম্ন গলায় মেহেভীনের দিকে তাঁকিয়ে শুধায়, ‘ আরহাম আবারো চলে আসতে পারে। আমাদের একসাথে দেখে আবারোও প্রব্লেম ক্রিয়েট করতে পারে। তার থেকে বরং মেহেভীন তুমি বাসায় চলে যাও। আমি আমার ড্রাইভারকে তোমার সঙ্গে পাঠিয়ে দিচ্ছি। আমি মায়ের সাথে হসপিটালে যাচ্ছি। ‘
‘ ঠিক আছে, কিন্তু আমি একাই যেতে পারবো। আপনি নিশ্চিন্তে যান। ‘
‘ সিউর? ‘
‘ হু। ‘
‘পৌঁছে আমাকে কল করে জানিও। ‘
মেহেভীন মাথা নাডিয়ে সায় জানিয়ে, দ্রুত স্হান ত্যাগ করে। মেহেভীন চলে যেতেই, অভ্র কাউকে ফোন করে বলে, ‘ পেপারস রেডি করুন যত তাড়াতাড়ি সম্ভব যেন সবকিছু হয়ে যায়। আমি কিছু শুনতে চাইছি না। ‘
কথাটি বলেই অভ্র ফোন টা কট করে কেটে দিলো। অভ্রের মা ছেলের দিকে প্রশ্ন করলেন, ‘ কাকে ফোন করেছিলি? ‘
‘উকিলকে, মেহেভীন এবং আরহামের ডিভোর্স পেপার যত তাড়াতাড়ি সম্ভব তৈরি হয়ে যাবে। তিন মাসের আগেই আমি মেহেভীনকে বিয়ে করবো।’
‘কি বলছিস কী? ‘
‘ মা, তুমি যত তাড়তাড়ি সম্ভব বিয়ের আয়োজন শুরু করে দাও। ‘
কথাটি বলে নিজের ঠোটের কোণে লেগে থাকা র/ক্ত টুকু মুছে ফেলে অভ্র বাঁকা হাসে। আজকে তাকে সকলের সামনে অপদস্ত করে আরহাম যেন তার জেদকে তিন গুন বাডিয়ে দিয়েছে। এখন যেকোন মূল্যে সে মেহেভীনকে আরহামের থেকে কেড়ে নিবে। অভ্র বিড়বিড়িয়ে বলে, ‘ আরহাম হাসান তালুকদার গেট রেডি ফর দ্যা টুইস্ট! এইবার কিন্তু আমি হারবো না। ‘
_________
পিনপিন নিরবতা ভেঙ্গে মায়রা চট করে আরহামকে ঝাঁকিয়ে বলে, ‘ আরহাম তুমি কি একটা কথা ভেবেছো? ক্রিমিনাল রা মেহেভীনের ক্ষতি করার জন্যে শপিং মলেই রয়েছে এন্ড তুমি আজকে যা কান্ড করলে, আমি ডেম সিউর ওরা এখন সবটা বুঝে গিয়েছে। ওরা কিন্তু মেহেভীনের ক্ষতি করে ফেলতে পারে, যেকোন সময়ে।’
মায়রার কথা গুলো গুরুত্ব সহকারে শুনে হাতের মুঠো করে তৎক্ষনাৎ বলে আরহাম’ লেটস মুভ মায়রা। আমার মেহেভীনকে বাঁচাতে হবে। ‘
____________
আরিয়ান গাড়ি নিয়ে বেডিয়েছিলো হসপিটালের উদ্দেশ্যে। মাঝ পথে মেহেভীনের বেস্ট ফ্রেন্ড অন্তুকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে, ব্রেক কষে। গাড়ি থেকে বেড়িয়ে অন্তুর সামনে দাঁড়িয়ে প্রশ্ন করে, ‘এই কাঠফাটা রোদে দাঁড়িয়ে কি করছো? ‘
আরিয়ানের গলার স্বর শুনে তৎক্ষনাৎ মাথা উচু করে, কিছুটা ক্লান্ত সুরে উত্তর দেয়, ‘ ভার্সিটি শেষে বাসের জন্যে অনেক্ষন যাবত অপেক্ষা করছিলাম,কিন্তু পাইনি। তাই হেটেই বাড়ি ফিরছিলাম। ‘
‘ এসো। আমি তোমাকে পৌঁছে দিচ্ছি৷ ‘
অন্তু তাতে দিরুক্তি জানিয়ে বলে, ‘ না তার দরকার হবেনা। আমি একাই চলে যেতে পারবো। ‘
কথাটি বলে হাটতে গিয়ে হুট করে মাথা ঘুড়িয়ে হোচট খাওয়ার পূর্বেই আরিয়ান অন্তুকে ধরে ফেলে। আরিয়ান শাসনের সুরে বলে, ‘ বেশি কথা বলবে না। তোমার অবস্হা ভালো না। গরমে ঘেমে বোধহয় প্রেসার টা লো হয়ে গিয়েছে। এই অবস্হায় একা মোটেও তোমার জন্যে ঠিক নয়। ‘
অন্তু কিছুটা ইতস্তত হয়ে নিজেকে আরিয়ানের থেকে সরিয়ে, গভীর কন্ঠে জবাব দিলো, ‘ আমাকে নিয়ে আপনার এতো না ভাবলেও চলবে। ‘
‘ উহু! আমি তোমাকে স্পেশালি এতো ইম্পোর্টেন্স দিচ্ছি না, জাস্ট একজন ডক্টর হয়ে নিজের ডিউটি টা ফুলফিল করছি। বুঝলেন ম্যাডাম? ‘
কথাটি বলেই চোখ টিপ মে/রে নিজের সানগ্লাস পরে নিলো আরিয়ান। অন্তু ক্ষীন্ন হাসলো।
‘ তো যাওয়া যাক? ‘
আরিয়ানের প্রশ্নে প্রতিউত্তরে সায় জানিয়ে, আরিয়ানের গাড়িতে উঠে পরলো অন্তু। আরিয়ান গাড়িটা ঘুড়িয়ে নিলো। হয়তো দুজনের মধ্যেই সুক্ষ্ম এক অনুভুতি মনের গহীনে নাড়া দিচ্ছে।
_______________
আরহাম আজকে যা করেছে, তাতে আরহামকে যথেষ্ট অস্বাভাবিক ঠেকছে মেহেভীনের কাছে। নিজে বিয়ে করে দিনের পর দিন সুখে কাটাবে অথচ মেহেভীনকে অভ্রের পাশে সহ্য করতে পারবে না। এ কেমন কথা? কিন্তু আরহাম যখন তাকে সকলের সামনে মেহেভীনকে নিজের ‘স্ত্রী’ সন্মেধোন করে প্রতিবাদ করেছিলো, তখন এক মুহুর্তের জন্যে এক ভালো লাগার শীতল হাওয়া বয়ে ছিলো মেহেভীনের অন্তুরজুড়ে। মেহেভীনের ভাবনার মাঝেই সে বিকট এক আওয়াজ শুনে কানে হাত রেখে, মাটিতে বসে পরে। এই আওয়াজ সে আরহামের বাড়িতেও শুনেছিলো। গুলির ভয়ংকর এক আওয়াজ! পরক্ষনেই দ্বিতীয়বার সেই একই আওয়াজ হয়। দূর থেকে ধেঁয়ে আসে রিভলবার থেকে ছোড়া
গু/লি…..
চলবে কি?
[রিচেক দেইনি। যথেষ্ট তাড়াহুড়ো নিয়ে লিখিছি। অনেক ভুল থাকবে🙂ধন্যবাদ]