#মনের_গহীনে_সে ❤️
#পর্ব-১৩
#Jannatul_ferdosi_rimi (লেখিকা)
বর্তমান স্ত্রীর সামনে স্বামী তার প্রাক্তন স্ত্রীকে গাড়ি থেকে কোলে করে নামাচ্ছে ব্যাপারটা যেকোন মেয়ের জন্যে কষ্টদায়ক, হয়তো মায়রার ক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম নয়, মেহেভীনের মতে। সে গভীরভাবে উপলব্ধি করতে পারছে মায়রার কষ্ট। মেহেভীনের নজর যায় বারান্দা থাকা মায়রার দিকে। কেমন ছলছল নয়নে তাদের দিকে তাঁকিয়ে রয়েছে। তাই মেহেভীন আরহামের থেকে নিজেকে ছাড়ানোর প্রচেষ্টা করছে, কিন্তু আরহাম মেহেভীনের ইচ্ছেকে নাখোচ করে, কোলে করে সদর দরজার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। আজ তার শখ হয়েছে তার প্রেয়সীকে কোলে করে নিজের বাড়িতে নিয়ে যাবে। তাকে কষ্ট করে হাঁটতে দিবে না। আরহামের বুঝি শখ হয় না? সে কেন প্রতিবার নিজেকে দমিয়ে রাখবে?
‘ কি করছে কি ছাড়ুন? আপনার বউ দেখছে আমাদের। সে কি ভাববে? ‘
মেহেভীনের প্রশ্নে কিছুটা আলতো হেসে আরহাম জবাব দেয়,
‘ মিসেস আরহাম হাসান তালুকদার, আপনিও হয়তো ভুলে গিয়েছেন, আপনিও এখনো পর্যন্ত আমার বউ। ‘
‘ ছাড়ুন প্লিয। নিজের স্বামীর পাশে অন্য কাউকে দেখাটা যে কতটা কষ্টের তা আপনি কখনো উপলব্ধি করবেন না। আমি তো বুঝি। তাই বলছি আমাকে এখুনি নামিয়ে দিন।’
‘ কেন তুমি বুঝি ক্ষনে ক্ষনে তা উপলব্ধি করো? তোমারও বুঝি কষ্ট হয়? ‘
মেহেভীন কিছু না ভেবেই জবাব দিলো, ‘ কষ্ট হবেনা? নিজের স্বামীর নিজের ছাঁয়াকেও সহ্য হয়না। সেখানে তো…. ‘
মেহেভীনের কথার মাঝেই, আরহাম চট করে পাল্টা প্রশ্ন করে বসলো,
‘ তাহলে কি আমাকে তুমি তোমার স্বামীর জায়গাটা আমাকে দিয়ে ফেলেছো।
আচ্ছা কোনভাবে কি তুমি আমাকে ভালোবাসো মেহেভীন বলো না? ‘
শেষের কথাটি কিছুটা আশা নিয়েই বলে আরহাম। আরহামের প্রশ্নে মেহেভীন তার আখিজোড়া নামিয়ে ফেললো। কেন যেন আরহামের চোখের দিকে তাঁকানোর সাহস হচ্ছে না।
সে কি জবাব দিবে বুঝতে পারছে না। হাত-পা কাঁপছে তার। আরহাম কেন তাকে হঠাৎ এমন প্রশ্ন করলো? কি বুঝাতে চাইছে আরহাম? আরহাম এখনো তাকে পাজকোলে বাগানে দাঁড়িয়ে আছে। শীতল হাওয়া এসে তাদের দুজনের দেহকে ছুইয়ে দিচ্ছে বারংবার। মৃদ্যু মৃদ্যু কাঁপছে মেহেভীন। সেই কম্পন অনুভব করে, আরহামের বুকে অদ্ভুদ এক ঝড়ের আভাস এসে নাড়া দিচ্ছে। নিজের প্রেয়সীকে হারিয়ে ফেলার ভয়। মেহেভীন উত্তর না দিয়ে, পুনরায় বললো, ‘ আমাকে নামিয়ে দিন আরহাম সাহেব। ‘
আরহাম মেহেভীনের থেকে জবাব না পেয়ে আশাহত হলো। ভারাক্রান্ত হলো বক্ষ বেদনায়। শুনলো না সে মেহেভীনের অনুরোধ। মেহেভীনকে কোলে নিয়েই সদর দরজা দিয়ে বাড়িতে প্রবেশ করলো।
____________
মায়রাকে মেহেভীন এবং আরহামের দিকে বেদনাদায়ক দৃষ্টিতে তাঁকিয়ে থাকতে দেখে, আরিয়ান পিছন থেকে বলে উঠে, ‘ তোমার কি কোন কারণে কষ্ট হচ্ছে মায়রা? ‘
পিছন থেকে ভারী পুরুষকন্ঠস্বর শুনে পিছনে ঘুড়ে তাঁকায় মায়রা। আরিয়ানকে দেখে দ্রুততার সাথে নিজের নেত্রকোণের অশ্রুটুকু মুছে ফেলে সে। তড়িৎ গতিতে শুধায়, ‘ আমি কেন? কষ্ট পাবো হঠাৎ? ‘
আরিয়ান মায়রার চারদিকে ঘুড়তে ঘুড়তে কিছুটা সন্দেহ প্রকাশ করে বললো, ‘ ডাল মে কুচ কালা হে। আচ্ছা তুমি কোনভাবে নিজেকে আমার ভাইয়ের রিয়েল বউ ভাবতে শুরু করো নি তো? ‘
আরিয়ানের এমন কথায় কন্ঠে কাঠিন্য এনে প্রশ্ন করে, ‘ কিসব যাতা বলা শুরু করেছো তুমি? আমি তো জাস্ট মিশনের কাজে এখানে আছি। ‘
‘ সেইটা আমিও জানি, তুমিও জানো। কিন্তু এই কথাটা বারংবার তুমি ভুলে যাচ্ছো মায়রা। মাকে কি বলেছো আজকে তুমি? কি ভেবেছো মায়রা আমি কিছুই শুনেনি? দরজার আড়ালে আমি সবকিছুই শুনেছি। তুমি কীভাবে মেহুর বিরুদ্ধে মাকে উষ্কে দিচ্ছো। ‘
আরিয়ানের কথায় বারান্দায় বসে জোড়ে জোড়ে শ্বাস ফেলে মায়রা। আরিয়ান মায়রার পাশে বসে ক্ষোভের সহিত বলে, ‘ আচ্ছা তোমার এই কথাগুলো যদি আমি এখন ভাইকে বলে দেই, তাহলে কি হবে বুঝতে পারছো?’
আরিয়ানের এমন কথায় মায়রার মধ্যে ভয় এসে হানা দেয়। আরহাম জানতে পারলে সে কিছুতেই মায়রাকে ছেড়ে দিয়ে কথা বলবে না। হয়তো বাড়িতেই থাকতে দিবেনা। তখন কি করবে মায়রা? মায়রার মনের অবস্হা বুঝতে পেরে, আরিয়ান কিছুটা শান্ত হয়ে মায়রাকে সাবধান করে বলে, ‘ দেখো মায়রা তুমি একজন ক্রাইম অফিসার। নিজের দায়িত্ব সমন্ধে যথেষ্ট ভালো বুঝো তুমি। এইসব করে নিজের এবং ভাইয়ের সম্পর্কটা নষ্ট করো না। নিজের ডিউটি টা মন দিয়ে করো। নেক্সট টাইম যদি তুমি পুনরায় এইসব করতে যাও, তখন কিন্তু আমি চুপ থাকবো না। আই ইউল নট স্পেয়ার ইউ। আমি কিন্তু হুমকি দিচ্ছি না মনে রেখো। ‘
আরিয়ান কথাটি বলেই উঠে চলে গেলো। মায়রা দেয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে মাথা নিচু করে বসলো। সে কি করবে? সে তো সহ্য করতে পারছে না আরহাম এবং মেহেভীনকে। আচ্ছা কোনভাবে কি সে আরহামকে ভালোবেসে ফেললো?
______________
মেহেভীন শিরিন বেগমের পছন্দের চা করে নিয়ে তার রুমের সামনে দাঁড়ালো। ভাবলো আজকে ফুফু এবং ভাগ্নি মিলে বেশ খানিক্ষন আড্ডা দিবে। সে দরজায় কড়া নাড়লো। অপরপাশ থেকে অনুমতি পেয়ে সে চটজলদি ঘরে প্রবেশ করে। হাসজ্বল মুখে শিরিন বেগমের সামনে দাঁড়িয়ে, চায়ের ট্রে টা বিছানায় রেখে বললো, ‘ ফুপি, তোমার তো আমার হাতের দুধা চা অনেক ফেভারিট। তাই নিয়ে আসলাম। চুপি চুপি খাবে কিন্তু আরিয়ান জানলে কিন্তু একটুও পারবে না। বলে দিলাম। আমি বরং দরজাটা বিড়িয়ে দেই? ‘
মেহেভীনকে দেখে শিরিন বেগমের মাথা হুট করে গরম হয়ে গেলো। মায়রার কথাগুলো তার মনে পরে গেলো।
মেহেভীন দরজার কাছে যেতে নিলে, শিরিন বেগম তাকে থামিয়ে বললেন, ‘ তা আর দরকার হবেনা। শুনেছি তুই নাকি সারাদিন অভ্রের সাথে ঘুড়ে বেড়িয়েছিস। মেহেভীন তোর কি মাথায় নেই? তুই এখনো আমার বাড়ির বউ। এইসব বেহায়াপনা কিন্তু আমি সহ্য করবো না। ‘
‘ ফুপি, আসলে আমি..’
মেহেভীনকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে, শিরিন বেগম বললেন, ‘ ব্যাস! অনেক শুনেছি। আমি চা খাবো না। তুমি চা ফেরত নিয়ে যাও। বিরক্ত করবে না এখন। আমি একটু রেস্ট নিচ্ছি। ‘
শিরিন বেগমের কথা শুনে মেহেভীনের মনটা খারাপ হয়ে গেলো। তার ফুপি কখনো তার সাথে এমন গম্ভীর হয়ে কথা বলেনি। আচ্ছা তার ফুপি কি তাকে ভুল বুঝছে কোনভাবে? মেহেভীন চায়ের কাপ নিয়ে বেড়িয়ে গেলো। শিরিন বেগম মুখ ঘুড়িয়ে শুয়ে পরলেন।
____________________
নদীর স্রোতের ন্যায়। সময় তার গতির সাথে সমানভাবে তাল মিলিয়ে বয়ে চললো। তিন মা পেরোতে হাতে কেবল পনেরো দিন বাকি৷ সবকিছু আগের মতোই স্বাভাবিক রয়েছে। মায়রা এবং আরহাম টেবিলে বসে ব্রেকফাস্ট করছে। আরিয়ান ব্রেকফাস্ট না করেই, জরুরী অপারেশনের জন্যে বেড়িয়ে পরেছে। মেহেভীন একপলক আরহাম এবং মেহেভীনকে দেখে, ভার্সিটির উদ্দেশ্য বেড়িয়ে যাচ্ছিলো, তখনি সেখানে অভ্রের মা এসে উপস্হিত। অভ্রের মাকে দেখে আরহাম প্রশ্ন করে, ‘ কাকি তুমি এখানে এতোদিন পরে? ‘
অভ্রের মা মেহেভীনের কাছে এসে, মেহেভীনের মাথায় হাত বুলিয়ে হাসি মুখে বললেন, ‘ তিন মাস পেরুতে তো দেরী নেই। তোদের ডিভোর্সটাও তো হয়ে যাবে। তারপর তো অভ্র এবং মেহেভীনের চার হাত এক করতে হবে তাইনা? তাই ভাবলাম মেহেভীনকে নিয়ে বিয়ের কেনাকাটা শুরু করে দেই। মেহু চলো মা। অভ্র আমাদের জন্যে শপিং মলে অপেক্ষা করবে। ‘
মেহেভীনের বিয়ের কথা শুনে হাতের মুঠো শক্ত করে ফেলে ক্রোধে। তার সামনে তার স্ত্রীর বিয়ের কথা চলছে অথচ সে কিছু করতে পারছে না। আরহাম অদ্ভুদ এক কান্ড করে ফেলে।
চলবে কি?