মনের গহীনে সে পর্ব-১২

0
835

#মনের_গহীনে_সে ❤️
#পর্ব- ১২
#Jannatul_ferdosi_rimi (লেখিকা)
‘মেহেভীনের ইচ্ছে ছিলো আরহামের থেকে ডিভোর্স নিয়ে, অভ্রের কাছে ফিরে যাওয়া। সে তো আরহামকে নয় বরং অভ্রকে ভালোবাসে। সে ঠিকও করে ফেলেছে ডিভোর্সের পরে,অর্থাৎ তিনমাস পরে অভ্রকে বিয়ে করবে। তখন আরহাম কি করবে আন্টি? ‘
মায়রার প্রশ্নে কিছুটা নড়েচড়ে বসে শিরিন বেগম। সত্যিইতো বিয়ের পরে একদিনের জন্যেও আরহামকে নিজের স্বামী হিসেবে মেনে নিতে পারেনি মেহেভীন। তিনমাসের সময়টুকু শেষ হয়ে গেলে মেহেভীন ঠিকই ফিরে যাবে অভ্রের কাছে তখন কি করবে আরহাম? আরহামের মা চিন্তিত হয়ে প্রশ্ন করলেন মায়রাকে, ‘ কিন্তু মা, ডিভোর্স পেপারটাও তো নকল বানিয়েছে আরহাম, তবে মেহেভীন কী করে যাবে? ওদের তো আসলে ডিভোর্সটা হয়নি। ‘

মায়রা আরহামের মায়ের পাশে বসে, আরহামের মায়ের হাত ধরে গম্ভীর সুরে জবাব দেয়, ‘ ডিভোর্সটা হয়নি কিন্তু হতে কতক্ষন? মেহেভীন কখনো আরহামকে ভালোবাসেনি। মেহেভীনের মন-প্রান জুড়ে শুধু অভ্র ছিলো। যখন বিপদটা কেটে যাবে তখন সব সত্যি জানার পরেও অভ্রের কাছে ফিরে যেতে, মেহেভীন আরহামের কাছে জোড় করে ডিভোর্স চাইবে। হয়তো মেহেভীনকে আরহাম জোড় করে আটকাতে পারবে, কিন্তু ভালোবাসা? সেইটা কি পাবে কখনো? আরহামের কি ভালোবাসা পাওয়ার অধিকার নেই আন্টি। ‘

ছেলের ভবিষ্যতের তিক্ত বেদনার কথা চিন্তা করে, শিরিন বেগমের মায়ের মন অদ্ভুদ এক ভয় প্রবেশ করলো। আরহামের জন্যেই তিনি মেহেভীনকে বউ করে নিয়ে এসেছিলেন, কিন্তু মেহেভীন তো অভ্রের জন্যে তাকে ছেড়ে দিতে পারে, তখন কি করবে শিরিন বেগম? কীকরে সামলাবেন ছেলেকে? নিজের মনকে সামলিয়ে নিম্ন সুরে শিরিন বেগম শুধায়,

‘ মেহেভীন নিশ্চিত আমার ছেলেকে ভালোবেসে ফেলবে দেখো। ‘

‘ ভালোবাসার হলে আগেই ভালোবাসতো। তা যখন হয়নি, এখন তা হবে তা কী করে আশা করেন? তাছাডা এখন তো অভ্রও দেশে ফিরে এসেছে। আশা করি আমার কথাগুলো ভেবে দেখবেন আন্টি। উঠছি এখন। কিছু লাগলে জানাবেন। ‘

কথাটি বলে আরহাম এবং মেহেভীনের ছোটবেলার ছবিটা খাটের কোনায় সযত্নে রেখে, শিরিন বেগমের ঘর থেকে বেড়িয়ে গেলো মায়রা। শিরিন বেগম পরে গেলেন বেশ দুটানায়। কী করবেন ভেবে পাচ্ছেন না।

__________________

আরহামের কথা শুনে আরহামের দিকে অদ্ভুদ ভাবে তাকিয়ে রইলো মেহেভীন। কে রয়েছে আরহামের মনের গহীনে? মায়রা? মায়রাই হবে হয়তো।মায়রা আরহামের স্ত্রী। কিন্তু তবুও মেহেভীনের আরহামের মুখ থেকে শুনতে ইচ্ছে হলো, কে সে?যে রয়েছে আরহামের মনের গহীনে। মেহেভীন হুট করে প্রশ্ন করে বসলো, ‘ কে রয়েছে আপনার মনের গহীনে?’

আরহাম স্মিত হেসে জবাব দিলো, ‘ আমার প্রেয়সী।’

‘ কে আপনার প্রেয়সী? ‘

‘ যাকে আমি ভালোবাসি। ‘

‘ ভালোবাসি ‘ শব্দটি শুনে বুক ছেদ করে উঠলো মেহেভীনের। লোকটার মুখে ভালোবাসি শব্দটি কতটা শ্রুতিমধুর শুনাচ্ছে। লোকটা মায়রাকে ভালোবাসে,তাইতো মায়রাকে বিয়ে করেছে, লোকটা কি প্রতিদিন মায়রাকে বলে? ‘মায়রা আমি তোমাকে ভালোবাসি। ‘ কথাটি বুঝি খুব ভালো লাগে মায়রার। মায়রার তখন বুঝি নিজেকে ভাগ্যবতী লাগে। হয়তো তখন মেহেভীনকে কয়েকশ ধন্যবাদ ও জানিয়ে দেয়। তাদের জীবন থেকে সরে যাওয়ার জন্যে। মেহেভীনের নেত্রপল্লব ছলছল হয়ে উঠলো। বুক হয়ে উঠলো ভারি। আরহাম আয়নায় দিয়ে দেখতে পেলো তার প্রেয়সীর নেত্রপল্লবে জমা থাকা বেদনাদায়ক অশ্রু। আরহামের ইচ্ছে হলো সেই অশ্রুটুকু সযত্নে মুছিয়ে দিতে, কিন্তু সে নিজেকে দমিয়ে রাখলো। মেহেভীনের সামনে দাঁড়িয়ে, মেহেভীনের মাথায় আলতো টুকা মে/রে বললো, ‘ স্টুপিড মেয়ের মতো কাঁদছো কেন? ‘

মেহেভীন সঙ্গে সঙ্গে নিজের আখিজোড়ার অশ্রু মুছে দ্রুততার সঙ্গে আরহামের কথার বিরোধিতা দেখিয়ে বললো, ‘ কই কাঁদছি? বোধহয় ময়লা ঢুকে গেছে। ‘
মেহেভীনের মিথ্যে কথা ধরতে পেরে ভেবে আলতো হাসলো আরহাম। স্মিত হেসে জবাব দিলো, ‘ এতো ভাবতো যেও না মেয়ে, তুমি তো স্টুপিড, এতো জটিল হিসাব মাথায় ঢুকবে না। উল্টো হিসাবে গড়মিল করে ভ্যা ভ্যা করে কেঁদে ফেলবে। যেমন এখন কাঁদছো। ছিচকাদুনি মেয়ে একটা! ‘

মেহেভীন কোমড়ে হাত গুজে হাত উচিয়ে রেগে তেড়ে গিয়ে প্রশ্ন করলো, ‘ কি বললেন? আমি ছিচকাদুনি?’

‘ছিচকাদুনিই তো। কথায় কথায় কেঁদে দাও। ধরো টিস্যুটা নিয়ে জল মুছে ফেলো। ‘

কথাটি বলে পকেট থেকে টিস্যু বের করে মেহেভীনের দিকে আরহাম বাড়িয়ে দিলো। মেহেভীন নিলো না। মুখ ঘুড়িয়ে ফেললো। আরহাম মেহেভীনকে জোড় করে মেহেভীনকে নিজের দিকে ঘুড়িয়ে, টিস্যু দিয়ে যত্ন সহকারে মেহেভীনের অশ্রু মুছে দিলো। মনে মনে সে বিরাট এক সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললো, ‘ তোমার আখিজোড়ায় অশ্রুপাত ঘটাতে দিবো না প্রেয়সী। আজীবন যত্নে রাখবো তোমার প্রতিটি অশ্রুর কণা। ‘

মেহেভীন কি আরহামের মনের সেই কথা শুনলো? হয়তো শুনেনি। আশে-পাশের সকলে মেহেভীন এবং আরহামের দিকে মুগ্ধ হয়ে তাঁকিয়ে আছে। একজন মহিলা আগ বাড়িয়ে এসে, মেহেভীনকে উদ্দেশ্য করে বললেন, ‘ বরের সাথে ঝগড়া করে কান্নাকাটি করছেন বুঝি? কিন্তু দেখুন আপনার বর কত সুন্দর করে আপনার চোখের জল মুছিয়ে দিচ্ছে। সত্যিই আপনি ভাগ্যবতী। ‘

মেহেভীনের কিছু বলার পূর্বেই মহিলাটি চলে যায়। আরহাম মিটমিটিয়ে হাসে। অভ্র এসে শুনতে পায় মহিলার কথাটি। সঙ্গে সঙ্গে তার মেজাজ তিক্ত হয়ে উঠে। সে মেহেভীনের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করে,

‘ তা কি ঠিক করলে? কোনটা নিবে? ‘

মেহেভীন অভ্রের জামা সরিয়ে রেখে আরহামের পছন্দ করা শাড়িটা দেখিয়ে বলে, ‘ এই শাড়িটা বেশ সুন্দর। আমি এই শাড়িটা নিবো। ‘

অভ্র মেহেভীনের উত্তর বেশ অসন্তুষ্ট তা তার মুখশ্রীতেই স্পষ্ট! সে বিল দিতে চাইলে, আরহাম আগ বাড়িয়ে নিজের ক্রেডিট কার্ড কাউন্টারে জমা দিয়ে বলে, ‘ আজকের বিল টা না হয় আমিই দেই? ‘

‘ কেন তুই কেন আমার হবু বউয়ের শাড়ির বিল দিবি?’

অভ্রের প্রশ্নে আরহাম স্মিত হেসে জবাব দেয়, ‘ ভুলে যাবিনা, সে এখনো আমার স্ত্রী। ‘

অভ্র বিরক্তির সহিত মেহেভীনের দিকে তাকিয়ে বলে, ‘ মেহেভীন আমরা কি ক্যান্ডেল লাইট ডিনারে যেতে পারি? আশা করি এখন কেউ আমাদের মাঝখানে ঢুকতে যাবে না। ‘

শেষের কথাটি আরহামকে উদ্দেশ্য করে বলা হয়েছে সে তা খুব ভালো করেই জানে। সে ঠায় দাঁড়িয়ে থেকে গম্ভীরভাবে দেখতে থাকে অভ্রের কান্ড।

‘মেহেভীন আমার গাড়িতে চলো। ‘

মেহেভীন একপলক আরহামের দিকে তাকিয়ে মাথা নাড়িয়ে, গাড়িতে উঠতে নিলে, আরহাম মেহেভীনকে সঙ্গে সঙ্গে মেহেভীনকে পাজকোলে তুলে নিলো। আরহামের কাজে অভ্র এবং মেহেভীন দুজনেই হতবাক! অভ্র ক্ষিপ্ততার সুরে জবাব দিলো,

‘ এইটা কি হলো? ‘

‘ রাত ১০টা বাজতে চললো। আই থিংক বিদেশে থেকে তোর এইটা মনে নেই যে তালুকদার বাড়ির বউ হাজবেন্ড ছাডা একা রাত ১০টার পর বাড়ির বাইরে থাকতে পারবে না। এইটা বাড়ির রুলস! মেহেভীন যেহুতু এখনো আমার বউ তাই তাকেও সেই রুলস মেইনটেইন করতে হবে, গট ইট? ‘

কথাটি বলেই মেহেভীনকে নিজের গাড়িতে তুলে, অভ্রের দিকে তাকিয়ে চোখ মে/রে। শিষ বাজাতে বাজাতে গাড়িতে চড়ে, গাড়ি ঘুড়িয়ে বাড়ির দিকে নিয়ে গেলো আরহাম। সেখানে দাঁড়িয়ে হাত মুঠো করে শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো অভ্র। এইবারও তার এবং মেহেভীনের মাঝখানে এসে, আরহাম সব প্ল্যান নষ্ট করে দিলো।

_____________

অপরদিকে শিরিন বেগমের ঘর থেকে বেড়িয়ে মায়রা বারান্দায় এসে দাঁড়ালো। সে শিরিন বেগমকে এতোগুলো কথা কেন বললো জানেনা, হয়তো সে কাজটি ঠিক করেনি, কিন্তু সে কি করবে? আরহামের পাশে মেহেভীনকে সে সহ্য করতে পারছে না। সে জানে আরহাম মেহেভীনকে ভালোবাসে। তবে সে কেন সহ্য করতে পারছে না তাদের একসাথে? মায়রার মাঝখানে ভারী পুরুষকন্ঠে কেউ বলে উঠে,

চলবে কি?

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে