মনের গহীনে সে পর্ব-১১

0
845

#মনের_গহীনে_সে❤️
#পর্ব-১১
#Jannatul_ferdosi_rimi (লেখিকা)
‘প্রাক্তন বউ তার প্রেমিকের সাথে কীভাবে নিজেদের মতো সময় কাটাচ্ছে তার নজর রাখতে এসেছেন বুঝি আরহাম সাহেব?’
মেহেভীনের প্রশ্নে কাশতে কাশতে আরহামের হাত থেকে বই পরে যায়। সে হয়তো আশা করেনি, মেহেভীন তাকে এতোটা দ্রুত সময়ে চিনে ফেলবে। মেহেভীন আরহামের ভয়ার্থ মুখস্রী দেখে মুখ চেপে হাঁসে। আরহাম দ্রুত বইখানা তুলে, মেহেভীনকে হাসতে দেখে ক্ষিপ্ত গলায় প্রশ্ন করে, ‘ হাঁসছো কেন স্টুপিডের মতো? ‘
‘ কারণ আপনার ভাষ্যমতে আমি স্টুপিড তাই। কিন্তু আপনি প্রথমে বলুন, আপনি অফিসে না গিয়ে আমার উপর গোয়ান্দাগিরি করছেন কেন? ‘

আরহাম পকেটে হাত রেখে কিছুটা ভাব নিয়েই ঠোটের কোণে আলতো হাসি ফুটিয়ে বলে, ‘ আমার এতো ফালতু সময় ওয়েস্ট করার মতো সময় নেই যে তোমার উপর নজরদারী করবো। আমি জাস্ট!’

‘ আপনি জাস্ট? ‘
মেহেভীন ভ্রু কুচকে প্রশ্ন করে আরহামকে ফের প্রশ্ন করে মেহেভীন। আরহাম তার হাতে থাকা উপন্যাসের বইটা দেখিয়ে বলে, ‘ মায়রার নাকি খুব বই পড়ার শখ হয়েছে, তাই এসেছিলাম কিনতে। ‘

‘ তা সেই বই তো লোকাল এড়িয়া থেকেই নিতেই পারতেন। হঠাৎ
পুরান ঢাকায় কেন আসলেন? ‘

‘ আহ আসলে একটা ক্লাইন্ট মিটিংয়ে এদিকে এসেছিলাম, তাই আর কি এই দোকান দেখে ঢুকে পরেছিলাম। ‘

‘ হঠাৎ এদিকে মিটিং পরলো কেন? ‘

আরহাম মেহেভীনের পুলিশের ন্যায় জেরাতে কিছুটা নয় বেশ বিরক্ত আরহাম। একজন ক্রাইম অফিসার হয়ে স্টুপিড মেয়েটার
জেরা নিতে পারছে না আরহাম। আরহামের ভ্যাবাচ্যাকা মুখস্রী দেখে বেশ মজা পাচ্ছে মেহেভীন। সে মুখ চেপে হাঁসছে। আরহাম আঙ্গুল তাঁক করে মেহেভীনকে কিছু বলার পূর্বেই, সেখানে বোতল হাতে নিয়ে অভ্র উপস্হিত হয়। আরহামকে যেন এই মুহুর্তে দেখে বেশ অবাক সে! অবাক হয়েই প্রশ্ন করে,

‘ এখানে কি করছিস তুই? ‘

‘ আমার যতটুকু ধারণা এই শপ টা তোর নয়। সো আমি এখানে কি করছি, তার কোন কৈফিয়ত তোকে দিবো না। ‘

আরহামের থেকে এমন উত্তর পেয়ে অভ্র রাগে দাঁত কটমট করে বলে, ‘ মেহেভীন চলো, আজকে আমরা সারাদিন ঘুড়ে, রাতে ক্যান্ডেল নাইট ডিনারে যাবো। ‘

মেহেভীনও আরহামকে একপ্রকার শুনিয়ে জবাব দেয়, ‘ হ্যা, যাওয়া যায়। চলুন। ‘

মেহেভীনের উত্তর পেয়ে, অভ্র মেহেভীনের হাত ধরলে, তাতে বাঁধ সেঁধে অভ্রের থেকে মেহেভীনের হাত ছাড়িয়ে নেয়। অভ্র ভ্রু নাড়িয়ে প্রশ্ন করলো, ‘ এইটা কী হলো? ‘

‘ আগেই বলেছিলাম বড় ভাবি হয়, যখন তখন হাত ধরবি না। তাও দেখছি তুই বার বার কথার অবাধ্য হচ্ছিস। হাত কি আস্ত রাখতে চাইছিস না? ‘

আরহাম শেষের কথাটি খুব আস্তে করে বলায় মেহেভীন শুনতে পায় না। অভ্র হাত নামিয়ে হুমকিতে একপ্রকার দমে যায়। আরহামের স্বভাব সে জানে। সহজে রেগে যায় না। রেগে গেলে লংকা কান্ড বাঁধিয়ে দেওয়ার ক্ষমতা রাখে। মেহেভীন আরহাম এবং অভ্রের মাঝে দাঁড়িয়ে, আরহামের দিকে রাগান্বিত ভাবে তাঁকিয়ে বলে, ‘ আপনার সমস্যা টা কী বলুন তো? বন্দী তো করেই রেখেছেন, এখন কি আমাকে ঘুড়তেও দিবেন না? ‘

আরহাম প্রশ্নের জবাবে মুচকি হেসে বলে, ‘ দিবো তো। কিন্তু তোমরা দুজন না। আমরা তিনজন। ‘

অভ্র সঙ্গে সঙ্গে বলে উঠে ‘ওয়াট?’

মেহেভীন অবাক হয়ে তাঁকিয়ে থাকে। আরহাম অভ্রের কাঁধে হাত রেখে বলে, ‘ এতো অবাক হওয়া কি আছে ভাই? এতোদিন পরে দেশে ফিরে শুধু ভাবির সাথেই ঘুড়লে চলবে, ভাইয়ের সাথেও তে ঘুড়তে হবে। ভাইকেও টাইম দিতে হবে, তাছাড়া ক্লাইন্টের সাথে মিটিং করে, আমি এখন ফ্রি। সো আমরা একসাথে একদিন ঘুড়তেই পারি, তাইনা? ‘

মেহেভীনের আরহামের কথা শুনে কিছুটা তীক্ন গলায় খৌঁচা মে/রে শুধালো, ‘ কিন্তু আপনার মায়রা ডার্লিং কোথায়? ‘

‘ সে আপাতত তার পাপার বাড়িতে গিয়েছে, আর আমি আমার ভাইয়ের সাথে একটা দিন স্পেন্ড করবো, তাতে কে কী বলবে? ‘

আরহামের জবাবে মেহেভীন থেমে যায়। অভ্র শক্ত মুখস্রীতে দাঁড়িয়ে থাকে। তার সব প্ল্যানের মধ্যে আরহাম যেন এসে জল ঢেলে দিয়েছে। কিছু বলতেও পারছে না। মুখ খিচে দাঁড়িয়ে রইলো সে। আরহাম তা দেখে বাঁকা হাসলো। মেহেভীনের নজরে তা এড়ালো না।

__________

মায়রা আরহামের মায়ের ঘরে এসে দরজায় টোকা দেয়। দরজার শব্দ অনুসরণ করে আরহামের মা মায়রাকে দেখে বলে, ‘ মায়রা তুমি তোমার বাবার বাড়ি থেকে এসেছে? কেমন আছেন তিনি? ‘

মায়রার মা নেই, বাবা আছেন শুধু। ব্যাবসার কাজে বিদেশে ঘুড়ে বেড়ান। কাল রাতে বাংলাদেশে এসেছেন। বাবা এসেছে শুনে, বাবাকে দেখতে ছুটে গিয়েছিলো মায়রা। মায়রা শিরিন বেগমের পাশে বসে বলে, ‘ আলহামদুলিল্লাহ ভালো। আন্টি আপনার শরীর এখন কেমন? ‘

শিরিন বেগম হতাশ হয়ে বললেন, ‘ আগের থেকে ভালো। কিছুক্ষন পরে আরিয়ানের সাথে হসপিটালে যাবো, কিসব ট্রিটমেন্ট নাকি শুরু করবে। আরিয়ান যতই চেস্টা করুক, আমি তো জানি আমার হাতে সময় একদমই নেই। মেহেভীনকে ছোটবেলা থেকেই নিজের ছেলের বউ করার ইচ্ছে ছিলো। ভালোয় ভালোয় বিপদটা কেটে গেলে আরহাম এবং মেহেভীনের সুখের একটা সংসার হবে। ওদের সুখী দেখলে শান্তিতে মর/তে অন্তুত পারবো। ‘

মায়রা শিরিন বেগমের কথা শুনে, কিছুক্ষন নিরব থেকে প্রশ্ন করলো, ‘ আপনার শেষ ইচ্ছে ছিলো মেহেভীনকে নিজের ছেলের বউ হিসেবে দেখে যাওয়া, কিন্তু কেন? হঠাৎ এমন কেন? ‘

‘ হঠাৎ এমন প্রশ্ন করলে যে মা? ‘

‘ না মানে, আপনার কেন মনে হলো না? মেহেভীনের থেকে হয়তো অন্য কেউ আপনার ছেলের বউ হওয়ার যোগ্যতা রাখে। ‘

কথাটি বলেই মাথা নুইয়ে ফেললো মায়রা।

শিরিন বেগম আলতো হেসে নিজের চশমা চোখে দিয়ে পাশে থাকা আরহাম এবং মেহেভীনের একটা ছোটবেলার ছবি মায়রার হাতে দিলো। মায়রা দেখতে পেলো দুই ঝুঁটি করা ছোট্ট একটা মিষ্টি মেয়ে গাছের নীচে বসে ফুলের মালা গাঁথছে ,বয়স আনুমানিক ৬-৭বছর হবে। সেই মেয়েকেই গাছের আড়াল থেকে মুগ্ধ হয়ে ১২-১৩ বছরের কিশোর দেখে যাচ্ছে। পড়নে তার স্কুল ড্রেস। এলোমেলো চুল। ফর্সা ঘামার্ত মুখস্রী।

‘ চিনতে পারছো এদের? ‘

শিরিন বেগমের প্রশ্নে মায়রা শিরিন বেগমের দিকে তাকাতেই, তিনি জবাব দেন, ‘ আমার ছোট্ট আরহাম এবং মেহেভীন। ছবিটা মেহেভীনের বাবা মানে আমার ভাই তুলেছিলো। বাগানটি মেহেভীনদের। দুপুরের দিকে ছোট্ট মেহেভীন গাছের নীচে বিভিন্ন ফুলের গেঁথে মালা বানাতো। আমার ছোট্ট ছেলেটা সেই দৃশ্য দেখতে স্কুল থেকে ক্লান্ত হয়ে প্রতিদিন ছুটে যেতো তার মামুর বাসায়, শুধুমাত্র তার প্রেয়সীকে দেখতে। ছোটবেলা থেকেই মেহেভীনের প্রতি আলাদা এক টান ছিলো আরহামের। অন্য কেউ না বুঝলেও আমি বুঝতাম। আমার ছেলেটা ধীরে ধীরে ভালোবেসে ফেলছে আমার ছোট্ট মেহুকে। ‘

মায়রা ফের ছবিটার দিকে তাঁকালো। শিরিন বেগম পুনরায় বললো, ‘ আমার ছেলেটা ছোট থেকেই চাপা স্বভাবের। অভ্রের সাথে যখন মেহেভীনের বিয়ে ঠিক হলো, তখন আমি দেখেছিলাম আমার ছেলেটা কতটা ভেঙ্গে পরেছিলো। বলতে পারতো না,কিন্তু আমি তো মা। আমি অনুভব করেছিলাম মেহুকে ছাড়া আমার ছেলেটা ম/রেই যাবে। তাই শেষ সময়ে ভাইয়ের কাছে মেহুকে চেয়ে বসলাম। বোনের আবদার রেখে ভাইও তার মেয়েকে আমার ছেলের হাতে তুলে দিলো, কিন্তু হঠাৎ এমন বিপদে সব এলোমেলো হয়ে গেলো। জানিনা আমার মেহু এবং আরহাম কবে এক হবে। ‘

কথাটি বলেই শিরিন বেগম দীর্ঘশ্বাস ফেললো।

অপরদিকে শপিং মলে আরহাম এবং অভ্রের সাথে মেহেভীন একটা পর একটা দোকানে ঢুকে নিজের জন্যে জামা চুজ করছে, কিন্তু তার কোনকিছুই পছন্দ হচ্ছে না। অভ্র কোন জামা পছন্দ করে দিলেই, আরহাম একপ্রকার নাক ছিটকে তা প্রতাক্ষান করে দিয়ে বলে, ‘ ছিহ! তোর চয়েজ এতো বাজে? এইসব রং স্টুপিড মেয়েকে একদম মানাবে না। ‘

মেহেভীনেরও অভ্রের পছন্দ করা জামাগুলো তেমন পছন্দ হয়নি, তা তার মুখস্রী দেখলেই বুঝা যাচ্ছে।

অভ্র কোমড়ে হাত রেখে বলে, ‘ তাহলে কোন রং মানাবে মেহেভীনকে?’

আরহাম তার পাশে থাকা একটা টকটকে সুবুজ পারের লাল টকটকে মেহেভীনের গাঁয়ে জড়িয়ে ধরে, মেহেভীনকে আয়নার সামনে দাঁড় করিয়ে বলে,

‘ দেখো মেয়ে তোমায় লাল শাড়িতে খুব সুন্দর লাগছে। তোমাকে লাল শাড়ি পরলে বউ বউ লাগবে। ‘

আয়নায় নিজেকে দেখে মেহেভীনের অধরের কোণে তৃপ্তির হাসি ফুটে উঠে। যার অর্থ তার পছন্দ হয়েছে। অভ্রের একটা ফোন আসায় সে বিরক্ত হয়ে বাইরে চলে যায়।

মেহেভীন আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে ফের আরহামকে প্রশ্ন করে,

‘ আমাকে বউ বউ লাগবে বুঝি? ‘

‘ হুম টুকটকে বউ। ‘

‘ আসল বউ নাকি নকল বউ? ‘

‘ মনের মতো বউ। ‘

‘ সে বউ আবার কেমন বউ? ‘

‘ যে বউ আমার মনের গহীনে রয়েছে। যাকে ঘিড়ে আমার মনে হাজারো স্বপ্ন। ‘

‘ কে রয়েছে আপনার মনের গহীনে?’

‘হাজারো অভিযোগ তাকে ঘিড়ে, যে রয়েছে আমার মনের গহীনে।’

চলবে কি?
রিচেক দেইনি তাই বানানে অনেক ভুল থাকবে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে