#মনের_গহীনে_সে ❤️
#পর্ব- ১০
#Jannatul_ferdosi_rimi (লেখিকা)
বর্তমান স্বামীর সামনে ভালোবাসার মানুষ এসে হুট করে হাত ধরলে সেই পরিস্হিতি কেমন বিচ্ছিরি হতে পারে, তা আরহামের মুখস্রী দেখলেই স্পষ্ট ধারণা করা যায়। অভ্র হুট করে এসে মেহেভীনের হাত ধরে বলে উঠে, ‘ মেহেভীন চলো। বেশি দেরী করা যাবে না। ‘ অভ্রকে হুট করে আসতে দেখে মেহেভীনও কিছুটা ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যায়। আরহাম হাত শক্ত করে দাঁড়িয়ে, অভ্রের শার্ট একপ্রকার টেনেই, মেহেভীনের থেকে সরিয়ে নিজের সামনা সামনা দাঁড় করিয়ে অধরের অন্তস্হলে জোড়পূর্বক হাসির রেখা ফুটিয়ে বলে, ‘ দেশে ফিরে প্রথমবার আমাদের বাড়িতে এলি তুই, এসেই ভাইদের রেখে, ভাবির কাছে চলে এসেছিস। এইটা কেমন কথা? ভাবি এতোই আপন হয়ে গেলো। ‘
আরহামের সাথে আরিয়ানও তাল মিলিয়ে বলে, ‘ এখন তো মেহেভীন ভাবিই তোর সব হয়ে গেলো, কিন্তু আমরা যে তোর দুইটি ভাই ও আছি। সেদিকে খেয়াল আছে তোর? ‘
মেহেভীনকে ‘ভাবি ‘ সন্মোধন করায় কিছুটা আকাশ থেকে যেন পরলো অভ্র। অবাক হয়ে প্রশ্ন করে, ‘ ভাবি কে ভাবি? ‘
আরিয়ান খাবার খেতে খেতে বলে, ‘ কেন তুই জানিস না? ভাইয়া এবং মেহুর জাস্ট ডিভোর্সের প্রসেসিং চলছে। এখনো কিন্তু পুরোপুরি ভাবে ডিভোর্সটি হয়নি। সো সে হিসেবে মেহু হলো তোর ভাবি, আর তুই হলো তার আদরের দেবরজ্বী। ‘
অভ্র আরিয়ানের কথা শুনে অভ্র আরহামের দিকে রাগান্বিতভাবে তাঁকাতেই,আরহাম বাঁকা হাসি দিয়ে বললো, ‘ তা মেহুর আদরের দেবরজ্বী,ভাবিকে নিয়ে কোথায় যেতে চাচ্ছিলে তুমি? এতো সকাল সকাল! ‘
‘ আমাকে এখন তোকে কৈফিয়ত দিতে হবে?’
আঙ্গুল উচিয়ে আরহামকে প্রশ্ন করে অভ্র। সেই আঙ্গুল হাত দিয়ে নামিয়ে ধীর গলায় আরহাম বলে, ‘ তোর বড্ড সাহস হয়ে গেছে অভ্র, আরহাম হাসান তালুকদারকে আঙ্গুল উচিয়ে প্রশ্ন করছিস। বেশি স্পর্ধা কিন্তু ভালো না। আর হ্যা দিতে হবে মেহেভীন এখনো আইনত আমার স্ত্রী। ‘
মেহেভীন বুঝতে পারলো সে এখন কিছু না বললে, দুই ভাইয়ের মাঝে বেশ বড়সড় ঝগ/ড়া লেগে যাবে। মায়রা শুধুমাত্র ঠায় বসে নিরব দর্শকের মতো দেখে যাচ্ছে সবকিছু। মেহেভীন উঠে আরহাম এবং অভ্রের মাঝখানে দাঁড়িয়ে বলে, ‘ হ্যা আইনত হয়তো আমি এখনো স্ত্রী,কিন্তু তিন মাস পরেই এই কাগজ কলমের সম্পর্ক থেকে আমি মুক্ত হবো। শর্তমতে আমি ফিরে যাবো অভ্র ভাইয়ের কাছে। ‘
কথাটি শুনেই আরহাম হাত মুঠো করে শক্ত করে ফেলে। অভ্র তৃপ্তির হাসি হাঁসে। মেহেভীন নিজেকে শক্ত করে অভ্রকে উদ্দেশ্য করে বলে, ‘ অভ্র ভাইয়া আপনি বসুন। আমি রেডি হয়ে আসছি।’
মেহেভীন উপরে চলে যেতে নিলেই, আরিয়ান মেহেভীনের সামনে এসে শুধায়,’ কিন্তু এতো সকালে অভ্র ভাইয়ার সাথে কোথায় যাচ্ছিস? ‘
‘ আমার কিছু বই কিনতে পুরান ঢাকার দিকে যেতে হবে। এতো দূরে একা যাবো না,তাই অভ্র ভাইয়াকে বললাম। তাছাডা আমাদের তো কিছুটা সময় কাটানো প্রয়োজন বিয়ের আগে, তাই না? ‘
কথাটি বলেই সোজা উপরে চলে গেলো মেহেভীন। একটিবার আরহামের দিকে ফিরেও তাঁকালো না। আরহামের দৃষ্টি মেহেভীনের দিকেই, কিন্তু মেহেভীন সোজা উপরে চলে গেলো। মেহেভীন কাল রাতে কঠোর সিদ্বান্ত নিয়ে ফেলেছে। এইভাবে যন্ত্রনা নিয়ে কতদিন থাকবে সে? আরহাম তো তাকে ডিভোর্স দিয়ে তারই সামনে স্ত্রীকে সুখে সংসার করছে, তাহলে সে কেন পারবে না? অবশ্যই পারবে। তাছাড়া অভ্রের সাথে তো শুরু থেকেই তার বিয়ে ঠিক হয়ে ছিলো। সে রেডি হয়ে নীচে গিয়ে অভ্রের সামনে গিয়ে বলে, ‘ চলুন। আমি রেডি। ‘
অভ্র হাসিমুখে মেহেভীনকে নিয়ে বেড়িয়ে যায়। আরিয়ান ও নাস্তা করে নিজের ঘরের দিকে চলে যায়। সে বুঝতে পারছে তার ভাইয়ের মনে কতটা ভয়ংকর দুর্যোগ চলছে। না পারছে রইতে না পারছে সইতে। আরহাম তার হাতে থাকা গ্লাস টা ফেলে দিয়ে উপরে চলে যায়। সে চাইলেই এখন মেহেভীনকে আটকাতে পারতো কিন্তু সে পারবে না। এতেই মেহেভীনেরই ক্ষতি হতে পারে। চারদিকে শত্রুপক্ষ নজরে রেখেছে সবকিছু।
আরহাম জানালা দিয়ে দেখতে পেলো,মেহেভীন এবং অভ্র একপ্রকার হাঁসতে হাঁসতেই বেড়িয়ে যাচ্ছে। অভ্রের গাড়িতে উঠে যায় মেহেভীন। অভ্রও গাড়িতে উঠে গাড়ি নিয়ে বেড়িয়ে যায়। মেহেভীনও বুঝতে পেরেছে আরহাম তাদের দিকেই তাকিয়ে আছে। মেহেভীন খুব ভালো করেই জানে আরহাম তাকে একা ছাড়বে না, সে ঠিকই তার দেহরক্ষীকে গোপনে অভ্র এবং তার পিছনে পাঠিয়ে দিবে,তবে কি আরহামের মনেও তার বসবাস রয়েছে তাহলে আরহাম কেন তার সাথে এমন করছে? কেন করলো মায়রাকে বিয়ে? যত বারই প্রশ্নগুলো হাতছানি দিচ্ছে তার মস্তিষ্কে সে ততবারই নিরত্তর হয়ে যাচ্ছে।
অপরদিকে, মায়রা আরহামের পাশে দাড়িয়ে অবাক হয়ে প্রশ্ন করে, ‘ তাকে আটকাবে না? ‘
‘ তাকে আটকানোর সাধ্যি আমার নেই। ‘
আরহামের গম্ভীর উত্তর।
‘ এতো ভালোবাসো কেন তাকে? ‘
আরহাম স্মিত হেসে বলে, ‘ কারন আমার মনের গহীনে সে। আমার মনের গহীনে শুধু তারই বসবাস। ‘
কথাটি বলেই আরহাম বেড়িয়ে যায়। আরহাম তার স্টাডি রুমে গিয়ে তার বক্স থেকে একটা চিঠিটি বের করে, চিঠি বললে ভুল হবে, একপ্রকার হুমকির চিঠি পায় সে। মেহেভীন এবং তার বিয়ের দিনই। তাতে লেখা ছিলো, ‘ আরহাম হাসান তালুকদার নিজের ধংশের জন্যে প্রস্তুত হও, তোমার সবথেকে প্রিয় জিনিসকে তোমার থেকে কেড়ে নিবো। তার মৃ/ত্যু নিজ চক্ষে দেখবে তুমি। তুমিও বুঝবে নিজের সবথেকে প্রিয়জনকে হারানোর বেদনা কতটা কষ্টের। তিলে তিলে মর/বে তুমি অফিসার আরহাম হাসান তালুকদার , প্রস্তুত হও। তিনমাস সময় আছে তোমার হাতে। ‘
আরহাম চিঠিটা পড়েই বুঝতে পেরেছিলো, তার খুব কাছের কাউকে তার কোন শত্রু কেড়ে নিতে চাইছে। মায়ের পরে আরহামের কাছে সবথেকে কাছের তার প্রেয়সী মেহেভীন সেই ছোটবেলা থেকে। স্বাভাবিকভাবে আরহামের মায়ের আয়ু সাময়িক, তিনি ক্যান্সারে এমনিতেই মা/রা যাবে। স্বাভাবিকভাবে মেহেভীনকেই তার শত্রু টার্গেটে রেখেছে, কিন্তু কে সেই শত্রু? তার কোন আপনজনকে কেড়ে নিয়েছিলো আরহাম? আরহামের কাছে কোন উত্তর নেই। সেই শত্রুকে যথাসম্ভব ধরতে হবে,তাকে কিছুতেই বুঝতে দেওয়া যাবেনা মেহেভীন আরহামের সবথেকে বড় দূর্বলতা।
আরহাম বিড়বিড়িয়ে বলে উঠে, ‘ আমার হাতে তিন মাস সময় আছে। তার মধ্যে ওই কার্লপ্রিটটাকে ধরতে হবে। বাট হাও? কোন ক্লু খুঁজে পাচ্ছি না। ‘
আরহাম ভাবতে পারলো না। উঠে দাঁড়িয়ে শার্ট গাঁয়ে জড়িয়ে বেড়িয়ে গেলো।
_________________
বইয়ের স্টোরে এসে একের পর এক বই তুলে নিয়ে তা খুটিয়ে খুটিয়ে দেখছে মেহেভীন। অভ্র অস্হির হয়ে মেহেভীনের আশে-পাশে ঘুড়ছে। মেহেভীন এমন ভাবে বই পড়ছে, যেন অভ্র তার পাশে দাঁড়িয়ে আছে সেদিকে তার খেয়ালই নেই, অথচ মেহেভীন এমন ছিলো না, সে সর্বদা অভ্রের মনোযোগ আকর্ষন করতে চাইতো। অভ্র কিছুটা ধীর গলায় মেহেভীনকে সুধালো, ‘ কয়েকদিন পর তো আমাদের, তুমি কি এখনো আমার থেকে দূরে থাকবে মেহেভীন? চলো কিছুটা সময় আমাদের নিজের মতো করে কাটিয়ে নেই। আজকে ক্যান্ডেল নাইট ডিনার হলে কেমন হয়? ‘
কথাটি বলে অভ্র মেহেভীনের হাত ধরতে চাইলে, মেহেভীন চট করে তা সরিয়ে ফেলে বিরক্তির সহিত বলে, ‘ বিয়ে এখনো অনেক দূর। এখন কি এতোটা ক্লজ হওয়া টা ঠিক? অভ্র ভাইয়া? ‘
অভ্র মুখ ঘুড়িয়ে ফেললো। মেহেভীন অভ্রকে গুরুত্ব দিলো না। সে চট করে বললো, ‘ অভ্র ভাইয়া আপনার মনে হুট করে আমার জন্যে ভালোবার উৎপত্তি কীকরে হলো? তাও আমার বিয়ের পরে। ‘
মেহেভীনের সন্দেহীন প্রশ্নের জবাবে অভ্র অবাক হয়ে উত্তর হয়ে বললো, ‘ তোমাকে তো বলেছিলাম মেহেভীন, তোমার থেকে দূরে যাওয়ার পরে আমি বুঝতে পেরেছি আমি তোমাকে কতটা ভালোবাসি। তাছাড়া আমাদের বিয়েতো অনেক আগেই থেকেই ঠিক হয়ে ছিলো, মাঝখান থেকে আরহাম এসে…’
অভ্রের কথার মাঝেই মেহেভীন হাত দিয়ে তাকে থামিয়ে কিছুটা তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে সুধায়, ‘ বুঝলাম, অভ্র ভাই আমার প্রচন্ড পানি পান করতে ইচ্ছে করছে । চট করে একটা পানির বোতল কিনে নিয়ে আসুন। ‘
‘ আমি এখনি নিয়ে আসছি’ কথাটি বলেই অভ্র স্টোর থেকে বেড়িয়ে যায়। অভ্র বেড়িয়ে যেতেই মেহেভীন স্টোরের আরেকপাশে গিয়ে পিছনে ঘুড়ে থাকা ব্যাক্তির পিছনে গিয়ে দাঁড়ায়। যিনি একপ্রকার বই কিনার ভান ধরে, বই হাতে দাঁড়িয়ে আছে। মেহেভীন কিছুটা কেশে বললো, ‘ আরহাম সাহেব আপনার বউ কি জানে? আপনি আপনার সব কাজ ফেলে, আপনার প্রাক্তন বউকে পাহারা দেওয়ার জন্যে বইয়ের দোকানে ঘুড়ে বেড়াচ্ছেন।’
চলবে।