#মনের_গহীনে_সে 💜
#পর্ব- ৯
#Jannatul_ferdosi_rimi (লেখিকা)
আরহাম মেহেভীনের কো/মড় পেচিয়ে নিজের সাথে মিশিয়ে রেখেছে,তার গরম নি:শ্বাস মেহেভীনের পিঠে ছুইয়ে যাচ্ছে বারংবার। মেহেভীন ধীর গলায় কাপা কাপা সুরে বললো, ‘ আরহাম সাহেব!ছাড়ুন। ব্যাথা পাচ্ছি। ‘ আরহাম ছাড়লো না, কিছুক্ষন অনুভব করলো তার প্রেয়সীর বুকের স্পন্দন, যার প্রতিনিয়ত কম্পিত হচ্ছে বারংবার। আরহাম মেহেভীনের দিকে গভীর দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো। ভয়ার্থ মুখশ্রী! কাঁপা কাঁপা অধরজোড়া। নেত্রপল্লবে বিরাজমান ভয়ানক নেশা,যা আরহামকে বর্তমানে আকর্ষন করছে। আরহাম নিজেকে নিয়ন্ত্রন করে,মেহেভীনকে ছেড়ে দিয়ে,গাড়ি থেকে বেড়িয়ে গেলো, নয়তো সে ভয়ানক কান্ড ঘটিয়ে ফেলবে। মেহেভীন বুকে হাত দিয়ে জোড়ে জোড়ে নি:শ্বাস ফেললো। আরহামের অদ্ভুদ আচরণ তার কাছে সুবিধার ঠেকলো না। সে জানালার দিয়ে আরহামের দিকে তাঁকালো। আরহাম একটা বোতল হাতে নিয়ে তা থেকে পানি ঢগঢগ করে পান করলো। অত:পর মুখে ভালো করে ছিটিয়ে নিলো। মেহেভীন শুধু নিরব দর্শকের ন্যায় পর্যবেক্ষন করে গেলো। মেহেভীন ও গাড়ি থেকে বেড়িয়ে আরহামের পাশে দাঁড়িয়ে প্রশ্ন ছুড়ে দিলো, ‘ কেন করছেন এইসব? ‘
আরহাম বোতলটুকু এগিয়ে দিলো মেহেভীনের দিকে। মেহেভীন নিলো না। ‘ পানি খেয়ে নাও। স্টুপিড মেয়েদের মাথায় জটিল হিসাব ঢুকবে না। এলোমেলো লাগবে তোমার। হিসাব খুঁজতে গিয়ে তলিয়ে যাবে। ‘
মেহেভীনের কাছে আরহামের কথা অদ্ভুদ ঠেকলো। মেহেভীন যেতে নিলে, আরহাম মেহেভীনের হাত আকড়ে ধরে। মেহেভীন আরহামের দিকে তাঁকাতেই, আরহাম অসহায় আখিজোড়ায় তড়িৎ গতিতে পলক ফেলে সুধায়, ‘ আমি না হয় বলতে পারিনা, তাই বলে কি তুমি বুঝবে না? ‘
কতটা ব্যাথা কতটা আবেগ ছিলো কথাটিতে। না চাইতেও মেহেভীনের আখিজোড়া ছলছল হয়ে উঠে। নিজেকে অসহায় লাগছে তার। বুঝতে গিয়েও বুঝতে পারছে না। তার মস্তিষ্কে শুধুমাত্র মায়রা এবং আরহামের ঘনিষ্টমুহুর্তগুলো হাতছানি দিচ্ছে। আরহাম তার হাতজোড়া ছেড়ে দিয়ে, হতাশ সুরে বললো, ‘ গাড়িতে উঠে পরো মেহেভীন। ‘
মেহেভীন দ্বিরুক্তি দেখালো না। চুপচাপ গাড়িতে বসে পরলো।
___________________
অন্তু তালুকদার বাড়িতে এসে জানতে পারলো মেহেভীন বাড়িতে নেই। তাই আরহামের মায়ের অনুমতি নিয়ে সে মেহেভীনের ঘরে গিয়ে, মেহেভীনের ঘরটা ঘুড়ে দেখছে। আরহামদের বাড়ির প্রতিটি ঘর যেনো এক একটা বড় বড় ড্রইং রুমের ন্যায়। একসাথে অনেকগুলো মানুষ একটি ঘরে খুবই সহজেই থাকতে পারবে। অন্ত গিয়ে মেহেভীনের বারান্দায় দাঁড়িয়ে, চারিপাশ টা ভালো করে পর্যবেক্ষন করলো। আরিয়ান মেহেভীনের ঘরে এসেছিলো, মেহেভীনের সাথে গল্প করতে। মেহেভীনকে ঘরে না পেয়ে সে বারান্দার সামনে গিয়ে দেখতে পেলো অন্তু অপরদিকে ঘুড়ে দাঁড়িয়ে আছে। অন্তু এবং মেহেভীনের শারীরিক গঠনে কিছুটা মিল থাকায়, আরিয়ান অন্তুকে মেহেভীন ভেবে আদেশের সুরে বললো, ‘ মেহু তোর একমাত্র এক্স দেবর, সারাদিন খাটুনি করে বাসায় ফিরলো, অথচ তুই বারান্দায় বসে আছিস? যা গিয়ে আমার জন্যে কফি করে নিয়ে আয়। ‘
আরিয়ানের কথায় অন্তুর মাথায় দুষ্টু বুদ্ধি চাপলো। আরিয়ানের কথা সে অনেক শুনেছে। সে নাকি কলেজের ক্রাশ বয়! আরিয়ানের গলার স্বর শুনেই সে বুঝে ফেলেছে, আরিয়ান স্বয়ং তার পিছনে দাঁড়িয়ে আছে। সে খানিক্টা কেশে গলার স্বর কিছুটা চিকন করে সুধালো, ‘ অসভ্য ছেলে! এক্স ভাবি হই আর প্রেজেন্ট ভাবি হই! ভাবি তো? তাকে অর্ডার করছিস? এতো বড় স্পর্ধা তোর? এখুনি পা ধরে মাফ চা। নাহলে ফুপিকে গিয়ে তোর নামে নালিশ করিয়ে,গালে থা/প্পড় খাওয়াবো। ‘
কথাটি বলে মাফ চাওয়ানোর জন্যে অন্তু নিজের পা পিছন থেকেই বাড়িয়ে দেয়। আরিয়ান গলার স্বর শুনে অনায়েসে বুঝতে পারে মেহেভীন নয় তার সাথে অন্তু ফাজলামি করেছে। রাহেলার থেকে শুনেছিলো সে মেহেভীনের সাথে দেখা করতে অন্তু এসেছে। আরিয়ান ও দুষ্টুমি করে বলে উঠে, ‘ এক্স ভাবি যেহুতু বলেছে, তাহলে মাফ তো চাইতেই হয়। ‘
কথাটি বলেই আরিয়ান পিছন থেকে অন্তুর পা ধরে টে/নে ধরে। টান সামলাতে না পেরে মেঝেতে পরে গিয়ে, কোমড়ে হাত দিয়ে ‘ মাগো’ বলে চেচিয়ে উঠে অন্তু। খিলখিলিয়ে হেসে উঠে আরিয়ান। অন্তু একমুহুর্তের জন্যে স্তব্ধ হয়ে হয়ে যায় আরিয়ানের হাসিমাখা মুখস্রীখানা দেখে। ফর্সা গালের ছোট্ট একটি অংশে একটি তিল দৃশ্যমান, যা হাঁসলে সুস্পষ্ট হয়ে উঠে। বেশ সুন্দর লাগে দৃশ্যটি। ছেলেদের বুঝি হাসলে এতো সুন্দর লাগে? আরিয়ান হাঁসতে হাঁসতে খেয়াল করলো অন্তুর গালে হাত দিয়ে বসে আছে। আরিয়ান কিছুটা ঝুঁকে, অন্তুর মাথা আলতো করে মে/রে বললো, ‘ আরিয়ান হাসান তালুকদারের সাথে চালা/কি করে লাভ নেই মিস বুঝলে? ‘
আরিয়ানের কথার মাঝেই, মেহেভীন তার ঘরে প্রবেশ করে আরিয়ান এবং অন্তুকে মেঝেতে দেখে প্রশ্ন করে, ‘ অন্তু তুই কখন এলি? আর আরিয়ান তোরা এইভাবে মেঝেতে কি করছিস?’
আরিয়ান দ্রুত উঠে যায়। মেহেভীন হাত ধরে অন্তু উঠে দাঁড়ায়। আরিয়ান হাসতে হাসতে জবাব দেয়, ‘ তোর গাঁ/ধা বান্ধুবি দ্যা গ্রেট আরিয়ান হাসান তালুকদারকে বোকা বানাতে চেয়েছিলো, কিন্তু নিজেই বোকা বোনে গেছে। জাস্ট আ ব্লাডি ফুল! ‘
রাগে ফুশতে ফুশতে অন্তু মাথা নিচু করে চেচিয়ে জবাব দেয়, ‘ আমাকে একদম অপমান করবেন না আরিয়ান ভাইয়া। চুপ করুন। ‘
মেহেভীন কিছু না বুঝতে পেরে বললো, ‘ এখানে হচ্ছে টা কী? আমাকে কেউ ক্লিয়ার করে বলবে? অন্তু তুই কি করেছিস? ‘
অন্তু মুখ ঘুড়িয়ে জবাবা দিলো, ‘, তোর এতো কিছু শুনতে হবেনা। ‘
আরিয়ান আরেকদফা হেসে উঠে কোমড়ে হাত রেখে। তাদের কথার মাঝেই নীচ থেকে ‘ স্টুপিড মেয়ে?কোথায় তুমি? ‘ কথাটি ভেঁসে উঠে। মেহেভীনের বুঝতে বাকি নেই, আরহাম তাকে ডাকছে। এই লোক ছাড়া তাকে স্টুপিড বলে ‘সম্মোধন ‘ কে বা করবে? তাই মেহেভীনসহ আরিয়ান এবং অন্তু নীচে নেমে আসে। মেহেভীনকে নীচে নামতে দেখে আরহাম মেহেভীনের হাতে একটা বড় প্যাকেট ধরিয়ে বলে, ‘ তোমার যে কালকে থেকে মাইগ্রেনের ব্যা/থা উঠেছে কাউকে জানাও নি কেন? রাহেলার থেকে আমাকে জানতে হলো। নিজের খেয়াল রাখতে পারো না নাকি? স্টুপিড কোথাকার। ‘
মেহেভীন প্যাকেটে দেখতে পায় তাতে কিছু মাইগ্রেনের ওষুধ আছে। মেহেভীন নাক উচিয়ে আরিয়ানকে উদ্দেশ্য করে বলে, ‘ আরিয়ান তোর ভাইকে বলে দে, নিজের বউকে নিয়ে যেন ব্যাস্ত থাকে। আমার ব্যাপারে যেন নাক টা একটু কম গলায়। ‘
‘ উহু আমি কারো ব্যাপারে নাক গলাচ্ছি না, তুমি যেহুতু আমার বাড়িতে আছো,সুতরাং এইটা আমার একটা কতর্ব্যের মধ্যে পরে। মামার আমানত হিসেবে তুমি আছো আমার কাছে। আমানতের খেয়ানত কি করে করি? আর যাই হোক আরহাম হাসান তালুকদার নিজের ডিউটি খুব ভালোভাবে ফুলফিল করতে পারে, ইউ নো?’
আরহামের কথা শুনে মনটা বেজায় খারাপ হয়ে যায় মেহেভীনের। আরহামের কাছে সে শুধুই দায়িত্ব,কিন্তু কেন এই দায়িত্ব বয়ে বেড়াচ্ছে আরহাম? কেনই বা অভ্রের কাছে তাকে ফিরে যেতে দিলো না সে। আরহাম সুখে থাকুক তার স্ত্রীকে নিয়ে। মেহেভীন তো চায় আরহাম ভালো থাকুক। তবে আরহাম তার ভালো থাকার মাঝখানে কেন মেহেভীনকে দেয়াল হিসেবে তৈরি করছে? মেহেভীন তো চাইনি। আরহাম ভাবুক মেহেভীনের দিকে তাকিয়ে আনমনে বলে উঠে,
‘এট লিস্ট আরহাম তার নিজের মানুষদের খুব যত্ন করে আগলে রাখতে জানে। তুমি কি তা বুঝো স্টুপিড মেয়ে? ‘
মেহেভীন হয়তো শুনেছে কথাটি, কিন্তু কোন প্রতিক্রিয়া দেখালো না। ফ্যালফ্যালে দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো। আরিয়ান মুচকি হাসলো। অন্তুও কিছু বুঝতে পারলো না। আরহাম সিড়ি বেয়ে উপরে চলে গেলো।
__________________
সকালে নাস্তা করার সময় আরহামকে নাস্তা পরিবেশন করে মায়রা আরহামের পাশে বসে পরে। রাহেলা এসে আরিয়ান এবং মেহেভীনের নাস্তা দিয়ে যায়। শিরিন বেগম অসুস্হ থাকায়, তার ঘরে নাস্তা পাঠানো হয়েছে। নাস্তা খেতে খেতেই, মায়রা আবদার জুড়ে বসে আরহামের কাছে।
‘ আরহাম ডার্লিং! আমার কিছু শপিং করার দরকার। তাই আমি ঠিক করেছি, আজকে সারাদিন তুমি এবং আমি শপিং করবো। ‘
আরহাম মায়রার চুল গুলো কানে গুজে দিয়ে বলে, ‘ ওকে! তারপর শপিং শেষে একটা ক্যান্ডেল নাইট ডিনার হয়ে যাক, কি বলো? ‘
মায়রা ‘ ইয়াহু ‘ বলে চেচিয়ে উঠে। আরিয়ান তাচ্ছিল্য হাসি দিয়ে নাস্তা করতে থাকে। আরহাম তাঁকায় মেহেভীনের দিকে। সে একদৃষ্টিতে নাস্তার প্লেটের দিকে তাকিয়ে নাস্তা করে যাচ্ছে, যেন তার সামনে কেউই নেই। প্রতিক্রিয়াহীন একজন রমনী। তখনি সেখানে উপস্হিত হয় অভ্র।
চলবে কি?