মনের গহীনে সে পর্ব-০৪

0
884

#মনের_গহীনে_সে 🤍
#পর্ব- ৪
#Jannatul_ferfosi_rimi (লেখিকা)
নিজের স্বামীর ওয়ালপেপারে তার প্রাক্তন স্ত্রীর ছবি দেখে খুব একটা অবাক হলো না মায়রা। আরহামের অজান্তে সেই ছবি সযত্নে ডিলেট করে দিলো। আরহাম গাড়িতে বসে ল্যাপটপের কাজ করছিলো, সে মায়রার কান্ড অকপটে দেখে নিলো, অথচ একটি বাক্যও উচ্চারণ করলো না তার বিপরীতে। শুধু মুখ দিয়ে বললো ‘ থ্যাংস মায়রা, আমার খেয়াল ছিলো না। ‘
মায়রা বিপরীতে সৌজন্যমূলক হাসি দিলো।

_______________

গাড়ি থেকে সাদা শার্ট পরিহিত একজন সুদর্শন যুবককে দেখে ছুটে গিয়ে তাকে জড়িয়ে ধরলো মেহেভীন। যুবকটিও পরম মমতার সাথে মেহেভীনকে জড়িয়ে, মেহেভীনের মাথায় হাত বুলিয়ে প্রশ্ন করলো, ‘ কেমন আছেন ভাবি? ‘
মেহেভীন যুবকের থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে মুখ ফুলিয়ে জবাব দেয়, ‘ ভাবি না ছা/ই, তোর ভাইয়ের কর্মকান্ডের কথা কি কিছুই জানিস না আরিয়ান? ‘

আরিয়ান আঙ্গুল তার থুত্নিতে রেখে কিছুটা ভাবার্থ ভঙ্গিমায় দাঁড়িয়ে থেকে চট করে জবাব দিলো,

‘ উপ্স! তুই তো এখন আমার এক্স ভাবি। মায়ের থেকে সবকিছুই শুনেছি। আমার ভাবি এখন…

আরিয়ানের বলার মাঝেই মেহেভীন ব্যাঙ্গার্থ অর্থে বলে, ‘ সে আর কেউ নয় বরং তোর ভাইয়ের মায়রা ডার্লিং! ‘

মেহেভীনের অঙ্গভঙ্গি দেখে শব্দ করে হেঁসে ফেলে আরিয়ান। হাঁসতে হাঁসতেই বললো,

‘ আমার এখন বড্ড আফসোস হচ্ছে রে মেহু! ভাইয়ের সেকেন্ড বিয়েটা খেতে পারলাম না, জরুরী কনফারেন্সে সিলেটে যেতে হলো দশদিনের জন্যে। তার মধ্যে আমার ভাই দুই- দুইটা বিয়েও করে ফেললো,অথচ দেখ আমার মতো হ্যান্ডসাম কিউট ছেলের জন্যে, একটা বউ তো দূরে থাক, একটা গার্লফ্রেন্ড ও নেই। আফসোস রে! কি করলাম লাইফে? ‘

মেহেভীন গম্ভীর সুরে জবাব দেয়, ‘ ভাইয়ের দ্বিতীয় বিয়েতে ভাইয়ের থেকে তোকে বেশি খুশি দেখাচ্ছে। ‘

‘ তা তো হবোই, ভাইয়ের সদ্য বিয়ে হয়েছে বলে কথা। তাও আবার সেকেন্ড ম্যারেজ। ইন্টারেস্টিং! কেন কেন তুই খুশি হয়েছিস না? ‘

আরিয়ান মেহেভীনকে চোখ টিপ দিয়ে প্রশ্ন করে। মেহেভীন কিছুক্ষনের জন্যে নিরব থেকে, আরিয়ানের পেটে কনুই দিয়ে গু/তা মে/রে জবাব দেয়, ‘ তোর মতো বদ/মাইশের এই জন্যেই কপালে জিএফ জুটে না। এখন আমার ভালো লাগছে না। আমাকে বাড়ি নিয়ে চল। ‘

‘ জু হুকুম মেরে রানি। চল, বাড়ির দিকে যাওয়া যাক।’

আরিয়ানের কথার বিপরীতে, মেহেভীন সামান্য হেসে আরিয়ানের গাড়িতে উঠে বসে। আরিয়ান হাসান তালুকদার, আরহামের ছোট ভাই। একজন বিরাট বড় চিকিৎসক। বয়সে মেহেভীনের থেকে বড় হলেও, ছোটবেলা থেকেই দুজনে খুব ভালো বন্ধু, বলতে গেলে দুজন দুজনের বেস্ট ফ্রেন্ড।

_____________

আরিয়ান মেহেভীন একসাথেই বাড়িতে ফিরলো। আরিয়ানকে দেখে আরহামের মা ছুটে তার ছেলেকে একপ্রকার ঝাপটে ধরে আনন্দের সহিত বললেন,

‘ আরিয়ান বাবা তুই এসেছিস? আসতে কোন সমস্যা হয়নি তো? ইসস রে আমার ছেলেটা ঠিকমতো খাওয়াদাওয়াও করেনি, এই দশদিনে কেমন শুকিয়ে গিয়েছিস। আমি কিন্তু আজ কোন কথা শুনবো না, আমার পাশে বসিয়ে তোকে নিজ হাতে খায়িয়ে দিবো।’

কথাটি শুনেই শিরিন বেগম সব স্টাফদের হাক ছেড়ে ডাকতে ডাকতে বললেন, ‘ এই তোমরা কোথায় সবাই? আমার ছেলে এসেছে, খাবারের ব্যাব্সহা করো, ফাস্ট। ‘

আরিয়ান তার মমতাময়ী মায়ের কর্মকান্ড দেখে তার হাত ধরে শুধায়, ‘ সব হবে মা, তুমি একটু রিলাক্স হও। আচ্ছা মা, ভাইয়া কোথায়? ‘

‘ সে অফিসের একটা জরুরী মিটিং এ বেড়িয়েছে। সাথে মায়রাকেও নিয়ে গিয়েছে। বিয়ের পরে কই একটু ছুটি নিবে, না তা তো নিলোই না, উল্টো বউটাকেও রেস্ট নিতে দিলো না। জামাই-বউ চললো অফিসে। ‘

মেহেভীন শিরিন বেগমের কথা শুনে থমথম করে ফেলে মুখস্রী। নিজের অজান্তেই বলে ফেলে,
‘ অফিসেও কি মায়রা- টায়রাকে না গিয়ে গেলে হয় না? ২৪ ঘন্টাই বুঝি বউকে দেখতে হয়? লোকটা এতো বউ পাগল কেন? অসহ্য। ‘

মেহেভীনের কথায় আরিয়ান মেহেভীনের কাছে এসে সন্দেহান চোখে তাকিয়ে বললো’ মেহু তুই কি কিছু বললি? ভাইয়ের বউ নিয়ে বাড়াবাডি কি সহ্য হচ্ছে না তোর? ‘

মেহেভীন তড়িৎ গতিতে আমতা আমতা করে জবাব দেয়, ‘ আমার? আমার সহ্য হবেনা কেন? আমি তো মজা করে বললাম, আরহাম ভাইকে কয়দিন পরে সবাই বউ পাগল বলে ডাকবে। ‘

‘ ওহ আচ্ছা, আচ্ছা। ‘

কথাটি বলে আরিয়ান মুখ চেপে হাসলো। মেহেভীন যেন হাফ ছেড়ে বাঁচলো। আরিয়ান তার মাকে প্রশ্ন ছুড়ে দিয়ে বললো,

‘ মা, আগে বলো সব মেডিসিন নিয়েছো? তুমি কিন্তু বড্ড অবহেলা করো। ‘

শিরিন বেগম সামান্য হেসে জবাব দেয়, ‘ বাবারে, আরহাম আর তুই থাকতে আমি কি ওষুধ নিয়ে অনিয়ম করতে পারি বল? তোরা তো বুঝতে চাস না, ওষুধ খেয়েই বা কি হবে? আমার হাতে যে সময় কম।
চলে তো যেতেই হবে। ‘

মায়ের আগত মৃ/ত্যুর কথা শুনে বুক মোচর দিয়ে উঠে আরিয়ানের, সঙ্গে সঙ্গে মেহেভীন তার ফুপিকে জড়িয়ে ধরে অভিমানের সুরে বলে,

‘ এইসব কি বলছো ফুপি? কিচ্ছু হবেনা তোমার। তুমি ঠিক সুস্হ হয়ে যাবে। ‘

শিরিন বেগম শুধু মেহেভীনের মাথায় হাত রেখে দীর্ঘশ্বাস ফেলে। ছোটবেলা থেকেই মায়ের আদর মেহেভীন তার ফুপুর কাছেই। মা ম/রা মেয়েকে নিজের সন্তানের মতো আগলে রেখেছেন সবসময় শিরিন বেগম। তাইতো শেষ সময়ে এসে নিজের ছেলের সাথে মেহেভীনের সুখের সংসার দেখে যেতে চেয়েছিলেন, কিন্তু আফসোস তা হলো না।আরিয়ান কপাট রাগ দেখিয়ে বলে, ‘ মা তোমাকে কতবার বলেছি আমি? এইসব কথা একদম বলবে না। ভালো লাগে না আমার। তবুও বলো এইসব কথা। তোমার ছেলের উপর কি তোমার ভরসা নেই? দূর খাবোই না কিছু। ‘

আরিয়ান অভিমানের সাথে মুখ ফিরিয়ে সিড়ি বেয়ে উপরে চলে যায়। শিরিন বেগম মেহেভীনের দিকে তাকিয়ে আলতো হেসে বলে, ‘ ছেলেটা আমার বড্ড অভিমানী। যাই গিয়ে ছেলেটার রাগটুকু কমানোর ব্যাবস্হা করে আসি। মা পাগল ছেলে হয়েছে দুটো আমার। ‘

শিরিন বেগমের কথা শুনে মেহেভীনও হেসে উঠে।

____________

মেহেভীন এককাপ চা নিয়ে নিজের বারান্দায় এসে দেখে আরহামদের গাড়ি প্রবেশ করছে গেট দিয়ে। আরহাম এবং মায়রা হাসতে হাসতে গাড়ি থেকে বের হচ্ছে। মায়রা হাসতে হাসতে আরহামের গাল ধরে টেনে দেয়। আরহাম মাথা চুলকে লাজুক হাসে। তা দেখে আরেকদফা হাসে মায়রা। মেহেভীন দ্রুত তার ঘরে চলে আসে। বিকাল থেকে এমনিতেই তার মাথা ধরে আছে, তার মধ্যে আরহামের কান্ড দেখে তার মাথা আরো ধরে আসছে। বিছানার উপর বসে বিরক্তির সহিত বলতে থাকে,

‘ আমাকে এই বাড়িতে রেখেছে নিজেদের রংঢং দেখানোর জন্যে। আমি সব বুঝে গিয়েছি। এক নম্বারের ব/দ লোক হচ্ছে আরহাম হাসান
তালুকদার। ব/দ লোকটাকে হারে হারে চিনি আমি।’

মেহেভীন তার ফুপুর ঘরে চলে গেলো,সেখানে মাথা ব্যাথার ওষুধ থাকলেও থাকতে পারে।

আরহাম অফিস থেকে এসে মেহেভীনের কক্ষের সামনে এসে উঁকি দিয়ে দেখে মেহেভীন নেই। আরহাম কি ভেবে যেন তার মায়ের ঘরের সামনে গিয়ে শুনতে পেলো,তার মা মেহেভীনকে বলছেন,

‘ মেহু তুই এখানে? কিছু লাগবে? ‘

‘ তোমার কাছে কি মাথা ব্যাথার ওষুধ আছে ফুপু? আসলে আমার মাথা ব্যাথা করছে। ‘

শিরিন বেগম মেহেভীনের হাতে ওষুধ দিয়ে প্রশ্ন করেন, ‘খেয়েছিস কিছু? ‘

‘ না ফুপি। আসলে খাবো না আজকে। শরীর টা ভালো লাগছে না। ‘

‘ স্টুপিডের মতো খাবে না কেন? না খেয়ে শরীর তো হেংলা পাতলা করে রেখেছো। আয়নায় নিজেকে দেখেছো ঠিক করে?’

মেহেভীন এবং আরহামের মায়ের কথার মাঝেই, আরহাম তার মায়ের ঘরে প্রবেশ করে মেহেভীনকে প্রশ্ন করে । আরহামকে দেখেই ঘাড় ত্যাড়ামি করে জবাব দেয় একপ্রকার , ‘ হ্যা আমার তো মায়রা আপুর মতো জিরো ফিগার নেই, নিজেকে আয়নায় দেখবো কী করে বলুন তো? ‘

কথাটি বলেই শুকনো মুখে বেড়িয়ে যায় মেহেভীন। আরহাম সুক্ষ্ম দৃষ্টিতে সেদিকে তাকিয়ে বিরক্তির সহিত বলে, ‘ স্টুপিড কোথাকার। জাস্ট আ রিডিকিউলাস। দেখেছো মা তোমার ভাইয়ের মেয়ে কেমন বা/ড় বেড়েছে। ‘

আরহামের মা উচ্চস্বরে বললেন, ‘ তুই ও কম বাডাবাড়ি করছিস না। এমনিতেই মেয়েটার শরীর ভালো না। বেশি বাড়াবাড়ি কিন্তু ভালো নয় আরহাম।’

আরহাম নিষ্চুপ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে।

_________________
গভীর রাতে মেহেভীন অনুভব করে কেউ তাকে হেচকা টান দিয়ে শুয়া থেকে উঠিয়ে ফেলেছে। মেহেভীন চিৎকার করতেই………

চলবে কি??

লেখিকা: জান্নাতুল ফেরদৌসি রিমি
[কেমন হয়েছে জানাবেন কিন্তু🖤)
আসসালামু আলাইকুম

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে