মনের গহীনে সে পর্ব-০৩

0
850

#মনের_গহীনে_সে 🤍
#পর্ব-৩
#Jannatul_ferodosi_rimi (লেখিকা)
প্রাক্তন স্বামীর বাসর ঘরের সামনে দাঁড়িয়ে অপমানে নিরবে অশ্রু বিসর্জন দিচ্ছে মেহেভীন। না চাইতেও ঠায় দাঁড়িয়ে রয়েছে আরহামের সদর দরজার সামনে, কারণ আরহামের কড়া নির্দেশ বাসর রাতের এতো সুন্দর ডেকোরেশনে আরহাম এবং মায়রার সুন্দর করে কাপল পিক তুলে দিতে হবে। আরহামের কথার বিপরীতে ভেজা গলায় তেজ দেখিয়ে মেহেভীন উত্তর দেয়, ‘ আপনার এতো স্টাফ থাকতে আমাকে তুলে দিতে হবে কেন? ক্যামেরাম্যানের কি অভাব পরেছে? ‘

‘ স্টুপিডের মতো বেশি কথা বলবে না মেয়ে, আমার বাড়িতে থাকছো, সো আমার প্রতিটা অর্ডার তোমাকে শুনতে হবে বুঝলে? ‘

আরহামের কথায় সায় জানিয়ে মায়রাও অনুরোধের
সুরে বলে, ‘ আরহাম যখন বলছে তুলেই দাও না মেহেভীন। আমি ছবিগুলো ফেসবুকের প্রফাইলে, কভারে দিবো। বিয়ে করে এতো সুন্দর জামাই পেয়েছি, সবাইকে দেখাতে হবেনা? তুলো, তুলো সুন্দর করে তুলো। ‘

‘ এহ! শয়/তান ছে/মড়ির কথা শুনলে গা জ্ব/লে। একদিন বিয়ে হতে না হতেই আমার জামাই বলে বলে সারা বাড়ি মাথায় করে ফেলছি। উফ আমার এতো রাগ হচ্ছে কেন? ‘

মেহেভীনকে বিরবির করতে দেখে আরহাম ভ্রু কুচকে বলে, ‘ স্টুপিডের মতো কি এতো বিড়বিড় করছো? আমাদের কাপল পিক তুলো। ‘ কথাটি বলে আরহাম মায়রার কোমড়ে হাত দিয়ে সুন্দর করে পোজ দেয়।

মেহেভীন আরহামের আইফোনটি হাতে নিয়ে মনে মনে হাজারখানা আরহামকে গা/লি দিয়ে ছবি তুলতে থাকে। না চাইতেও আরহামের হাতের দিকে তার নজর যাচ্ছে, বিরক্তিকর লাগছে সবকিছু তার। মেহেভীন অনুভব করলো তার আখিতে ধরা দিচ্ছে ফোটাফোটা অশ্রু বিন্দু। মেহেভীন কোনমতে ছবি তুলে, মায়রার হাতে ফোনটি দিয়ে আরহামের কক্ষ থেকে প্রস্হান করে।

_____°___

নিজের ঘরে এসে পাইচারি করতে থাকে মেহেভীন। কেন হচ্ছে তার সাথে এমন? এমন বাজে অনুভুতির কারনই বা কি? আরহাম কেন তাকে দিয়ে এইসব করাচ্ছে? মেহেভীন বিছানায় গিয়ে শুয়ে পরল, কিন্তু কিছুতেই তার ঘুম আসছে না। সমস্ত নিদ্রা যেন তার সাথে বেশ অভিমান করে ছুটে পালিয়ে গেছে। শীতের মধ্যেও অদ্ভুদ এক অস্হিরতায় মেহেভীনের শরীরে তাপমাত্রা বেশ যেন এক ডিগ্রি বেড়ে গেলো। মেহেভীন শুয়ে থেকেই, হাতজোড়া পরস্পরের সাথে ঘষে তা আরো উষ্ম করে তুললো। মেহেভীন বুঝতে পারলো তার আজকে আর ঘুম আসবে না। মেহেভীন তার কক্ষ থেকে বেড়িয়ে ছাদের উদ্দেশ্যে রওনা দিলো। ছাদে এসে তার বেশ শীত অনুভব করলো। চারপাশের শীতের ঠান্ডা হাওয়া এসে তার গাঁয়ে আলতো করে ছুইয়ে দিচ্ছে। মেহেভীনের ভালো লাগলো। নেত্রপল্লব
আবেশে বন্ধ করে নিলো, পরক্ষনেই তার মস্তিষ্কে এসে ধরা দিলো আরহাম এবং মায়রার ঘনিষ্ঠ মুহুর্তগুলো। মেহেভীন চট করে তার আখিজোড়া খুলে ফেললো। শীতে মৃদ্যুভাবে কেঁপে উঠলো তার দেহের প্রতিটি অঙ্গ-প্রতঙ্গ। তখনি পিছন থেকে কেউ মেহেভীনের গাঁয়ে চাঁদর দিয়ে আলতো করে জড়িয়ে দিলো। মেহেভীন পিছনে তাকিয়ে আরহামকে দেখে কিঞ্চিৎ নয়, বেশ কড়াভাবে অবাক হলো। বাসর রাত ছেড়ে, আরহাম এখন এখানে কি করছে? আরহাম খানিক্টা ধমকের সুরেই বললো,

‘ এই শীতের রাতে চাঁদর ছাড়া বের হয়েছো কেন? ঠান্ডা লাগলে কি হবে তখন? ‘

আরহামের ধমকের সুরে করা যত্নটুকু হজম হলো না মেহেভীনের। সে মুখ ঘুড়িয়ে খানিক্টা অভিমানের সুরে বললো, ‘ তা নিজের বাসর রাত ছেড়ে, এখানে কি করছেন শুনি? আমি তো আপনাদের বাসর রাতে এসে ডিস্টার্ব করি, তো আমার জন্যে বাসর রাত বাদ দিয়ে এইসব কনর্সান দেখাতে এসেছেন কেন? ‘

মেহেভীনের মনের গহীনে থাকা সুপ্ত অভিমানকে বুঝতে পেরে, খানিক্ষন আলতো হেসে ছাদের রেলিং এ হাত রাখলো। মেহেভীনের প্রশ্নে কোনরুপ জবাব দিলো না।
মেহেভীনের অশ্রুমাখা আখির দিকে তাকিয়ে মুগ্ধ গলায় বললো,

‘ সৃষ্টিকর্তা সবথেকে নিঁখুত করে সৃষ্টি করেছেন মানুষের আখিজোড়া, তাই আখিজোড়ায় আলাদা এক মায়া থাকে, কিছু কিছু মানুষের আখিজোড়া এতোটাই সুন্দর, আমরা তখন সেই মানুষের আখিজোড়াকে ‘মায়াবী’ বলে আখ্যা দিয়ে থাকি। ‘

‘ আমি ঠিক বুঝলাম না। ‘

‘ মেয়ে তুমিও অদ্ভুদ মায়াবী আখিজোড়ার অধিকারী। নিজের আখিজোড়া ভালো করে আয়নায় দেখেছো কখনো? ‘

আরহামের প্রশ্নের জবাবে মেহেভীন তাচ্ছিল্যের সুরে বলে,

‘ তাই বুঝি? ‘

‘ হুম তাই। ‘

‘ অথচ এই আখিতেও অশ্রুপাত দেখতে কিছু মানুষ ভালোবাসে। এতোটাও পাষাণ বুঝি মানুষ হয়? ‘

মেহেভীনের থেকে ‘পাষাণ’ নামক উপাধি লাভ করে সুদীর্ঘশ্বাস ফেললো আরহাম। আরহাম হয়তো মেহেভীনকে কিছু বলতে চাইছিলো,কিন্তু তার পূর্বেই সেখানে মায়রা এসে আরহাম এবং মেহেভীনকে একসাথে দেখে তড়িৎ গতিতে পা চালিয়ে, আরহামকে প্রশ্ন করে, ‘ আরহাম তুমি এখানে? আমি তোমাকে কখন ধরে খুঁজে চলেছি। আমার তো ঘরে একা থাকতে ভয় লাগে বলো? ‘

মেহেভীন মুখ বেকিয়ে মনে মনে বলে, ‘ এতো
বড় দাম/ড়া মেয়ের নাকি আবার ভয় করে, যত্তসব ঢং! ‘

আরহাম মায়রার কথায়, মায়রার গালে হাত রেখে বলো, ‘ আমি তো এখানেই আছি, তোমার পাশেই আছি। ভয় কিসের মায়রা ডার্লিং? একটা ইম্পোর্টেন্ট কল এসেছিলো, তাই ছাদে এসেছিলাম। ‘

আরহাম মায়রার হাত ধরে বলে, ‘ ঘরে চলো আরহাম, আজকে রাত আমাদের জন্যে স্পেশাল। আমি একটা টাইম ও ওয়েস্ট করতে চাইছি না। চলো। ‘

শেষের কথাটি বলে মায়রা মেহেভীনের দিকে তাঁকালো। মেহেভীন শক্ত করে খামচে ধরলো নিজের চাঁদর। আরহামের হাত ধরে মায়রা তাকে ছাদ থেকে নিয়ে গেলো। মেহেভীন ধপ করে বসে পরে। সবকিছু তার কাছে বিষাদময় লাগছে। মেহেভীনের এই বিষাদের কারণ স্বয়ং আরহাম নিজেই।

_____________

সকাল সকাল নিজের ব্যাগ কাধে নিয়ে ভার্সিটির উদ্দেশ্য বেড়িয়ে পরেছে মেহেভীন। ভার্সিটি এসেই মেহেভীনকে দূর থেকে অন্তু এসে তাকে জড়িয়ে ধরলো। অত:পর মেহেভীনের হাত ধরে তাকে ক্যান্টিনে নিয়ে এসে, বসিয়ে প্রশ্ন ছুড়লো,

‘ শুনেছি তোদের ডিভোর্স হয়ে গেছে, আবার আরহাম ভাইয়া আবার বিয়েও করে ফেলেছে। এতো কিছু কিভাবে হলো? ‘

মেহেভীন ক্ষিপ্ত গলায় উত্তর দিলো, ‘ শুধু কি তাই?
বদ লোকটা নিজের বউকে নিয়ে নির্ধিদ্বায় সংসার করছে, কিন্তু আমাকে তার বাড়িতে জোড় করে আটকে রেখেছে তিন মাসের জন্যে। ‘

‘ ডিভোর্স তো হয়েই গেছে, তাহলে তোকে তার বাসায় রেখেছে কেন? তুই ও বা আরহাম ভাইয়ের কথা শুনছিস কেন? ‘

মেহেভীন কপালে হাত রেখে জবাব দেয়, ‘ শুনছি কি সাধে? এই ডিভোর্সের জন্যেই তো এতোকিছু করলাম, কিন্তু যার জন্যে ডিভোর্সটা নিয়েছে, সেই তো জানেনা আমার ডিভোর্সের কথা। ‘

অন্তু কিছুটা মন খারাপ করে বললো, ‘ কিন্তু অভ্র ভাইয়াকে তুই কী করে জানাবি? সে তো তোর বিয়ের বিরহে সমস্ত যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে ফেলেছে। আধুনিক যুগের দেবদাস সে। ‘

কথাটি বলেই শব্দ করে হাসলো অন্তু। মেহেভীনের মুখস্রীতে বিরক্তির রেশ লক্ষ্যনীয়।অর্থাৎ অন্তুর কথা তার তেমন পছন্দ হয়নি। মেহেভীন হতাশার সুরেই বলে,

‘ অভ্র ভাইয়া কি আদোও আমাকে ভালোবাসে? আমি তো সারাজীবন তাকে একপাক্ষিক ভালোবেসে গেলাম। ‘

‘ ভালো না বাসলে কী? তোর বিয়ের কষ্টে সমস্ত যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে ফেলতো?ভালো না বাসলে নিশ্চই তোকে নিজের বড় চাচাতো ভাবির যথাযথ সম্মান টুকু দিতো। তাইনা? ‘

অন্তুর কথায় মেহেভীন চায়ে চুমুক দিয়ে অন্তর কথাগুলো কিছুক্ষন ভাবলো।

_______________
মেহেভীন ভার্সিটি থেকেই এক ক্লাস না করেই বেড়িয়ে গেলো। আনমনে রাস্তার ধার দিয়ে হাটতে হাটতে, রাস্তার মাঝখানে চলে এলো। তখনি একটি বিরাট গাড়ি এসে তার সামনে এসে ব্রেক করলো। গাড়ি থেকে সাদা শার্ট পরিহিত একজন যুবক বেডিয়ে এলো, তাকে দেখে মেহেভীন……

লেখিকা: জান্নাতুল ফেরদৌসি রিমি
চলবে কি?
[কেমন হয়েছে অবশ্যই জানাবেন]💙

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে