মনের গহীনে সে পর্ব-০২

0
951

#মনের_গহীনে_সে ❤️
#পর্ব-২
#Jannatul_ferdosi_rimi (লেখিকা)
স্বামীর বিয়ের আসরে দাঁড়িয়ে ডিভোর্স পেপারে গোটা গোটা অক্ষের আরহামের নামখানা দেখে বুকটা ছেদ করে উঠলো মেহেভীনের। তার নেত্রজোড়া না চাইতেও বিয়ের স্টেজে বসে থাকা সুদর্শন পুরুষের দিকে চলে গেলো। যে কিছুক্ষন পূর্বেও তার স্বামী ছিলো, সে একটু পর অন্য কারো স্বামী হয়ে যাবে, ভাবতেই হাত-পা কাঁপছে মেহেভীনের।
আচ্ছা সে তো আরহামকে ভালোবাসেনি, কিংবা বিয়ের পর কখনো সংসারও করেনি, তবে কিসের এতো টান অনুভব হচ্ছে তার? তবে কি তা কবুল নামক পবিত্র শব্দের রেশ! যেই রেশের সুত্র ধরে মেহেভীহের হৃদয়ে অনাবরত জন্ম হচ্ছে আরহামকে ঘিড়ে অনুভতি, মেহেভীনের অজান্তেই। খুব কম মানুষ নিয়ে আরহাম এবং মায়রার বিয়ে হচ্ছে, আরহামের বাড়ির বাগানে থাকা বিশাল হলরুমে। কাঁধে কারো স্পর্শ পেয়ে মেহেভীন পিছনে ঘুড়ে তাকিয়ে দেখে তার বাবা দাঁড়িয়ে আছেন। মেয়ের মাথায় স্নেহের সহিত হাত বুলিয়ে তিনি প্রশ্ন করেন,

‘ এইবার তুই খুশি তো মা? দেখ আরহাম তোকে মুক্ত করে, অন্য কাউকে বিয়ে করছে। ‘

মেহেভীন কোনরুপ জবাব না দিয়ে অধরে জোড় করে সামান্য হাসি ফুটিয়ে আরহামের দিকে তাঁকায়, কিন্তু আরহাম একবারো তার দিকে তাঁকালো না। কাজি সাহেব আরহাম এবং মায়রাকে দিয়ে বিয়ের পেপারে সাইন করিয়ে নিলেন। অত:পর মায়রাকে কবুল বলতে বললে সে দ্রুততম সময়ে কবুল বলে ফেলে, কাজি সাহেব ‘ আলহামদুলিল্লাহ ‘ বলে, আরহামকে কবুল বলতে বলে। মেহেভীনের নিজের বিয়ের সময়ের কথা মনে পরে গেলো। সে আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারলো না, দ্রুত পায়ে বাগানের দিকে চলে গেলো। পিছনে ঘুড়লে হয়তো দেখতে পারতো আরহামের অধরে লেগে থাকা তৃপ্তির হাসি।

হলের হৈচৈ শুনে মেহেভীনের বুঝতে বাকি নেই বিয়ের কাজ সম্পূর্ণ হয়ে গিয়েছে ইতিপূর্বে। মেহেভীনের পিছনে পিছনে তার বাবা আফজাল সাহেব ও আসেন।

‘ মারে, তুই এখানে দাঁড়িয়ে কি করছিস? ভিতরে চল। ‘

বাবার কথায়, মেহেভীন আশেপাশের দিকে তাকিয়ে তড়িঘড়ি করে তার বাবাকে বললো, ‘ বাবা বিয়ে তো হয়েই গেলো, এখন চলো আমরা নিজেদের বাড়ি চলে যাই। ‘

‘ কিন্তু…’

মেহেভীন তার বাবার কথায় কর্ণপাত না করে, তার বাবার হাত ধরে গেটের দিকে নিয়ে যেতেই, দেখতে পায় তার সামনে আরহামের দেহরক্ষীগন বন্দুক হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। মেহেভীন কিছুটা ভয় নিয়ে বলে, ‘ আপনারা এইভাবে দাঁড়িয়ে আছেন কেন? সরুন বলছি, আমরা গাড়ি নিয়ে এখুনি বের হবো। ‘

‘ আমার অর্ডার ব্যাতিত তুমি কেন একটা মাছিও আরহাম হাসান তালুকদারের ত্রিসীমা থেকে বের হতে পারে না, এইটুকু তোমার জানা উচিৎ স্টুপিড মেয়ে। ‘

আরহামের কন্ঠস্বর শুনে তড়িৎ গতিতে পিছনে তাকায় মেহেভীন। মেহেভীন বাবা তা দেখে মুচকি হাসে। আরহাম মেহেভীনের দিকে এগিয়ে এসে একটা কাগজ মেহেভীনের দিকে ছুড়ে দিয়ে বলে,

‘ পেপার টা ভালো করে পড়ো স্টুপিড মেয়ে, শর্ত অনুযায়ী তিন মাস তোমাকে এই আরহাম হাসান তালুকদারের বাড়িতেই থাকতে হবে, আদারওয়াইজ আমি অন্য স্টেপ নিতে বাধ্য হবো। ‘

মেহেভীন কিছুটা সাহস জুগিয়ে বলে, ‘ আমাদের ডিভোর্স হয়ে গেছে, আপনি আবারো বিয়ে করেছেন, তাহলে আমি কেন আপনার বাড়িতে থাকবো? বলতে পারেন? কেন আটকতে রাখতে চাইছেন আমাকে? ‘

শেষের কথাটি কিছুটা চিৎকারের সুরে বলে মেহেভীন। আরহাম তাতে বিরক্ত হয়ে মেহেভীনের কানের কাছে এসে ধীরগতিতে বলে,

‘ আমি কত সুন্দর করে আমার মায়রা ডার্লিং এর সাথে সংসার করছি তা দেখবে না? দেখে নেওয়া কিন্তু ভালো, অভ্রের সাথে সংসার করার আগে একটা ভালো এক্সপ্রেরিয়েন্স হয়ে যাবে। ‘

কথাটি বলেই, আরহাম মেহেভীনের হাত ধরে বাড়ির দিকে নিয়ে যায়। মেহেভীন তার বাবার দিকে অসহায়ভাবে তাকিয়ে বলে, ‘বাবা তুমি উনাকে আটকাও, আমি কিছুতেই এই বাড়িতে থাকবো না। আমি তোমার সাথে বাড়িতে যাবো। ‘

মেহেভীন বাবা হাত উচু করে বললেন, ‘ আমি প্রথমেই সেলেন্ডার করে ফেললাম মামুনি। তুমি নিজে থেকেই আরহামের শর্তের পেপারে সাইন করেছো, এখন আমার কিচ্ছু করার নেই। ‘

মেহেভীন তার বাবার উত্তরে হতাশ হয়ে পরে। আরহাম তাকে একপ্রকার টেনে-হিচড়ে একটি বিশাল কক্ষে ছুড়ে ফেলে। মেহেভীন গিয়ে বিছানায় পরে যায়। আরহাম পকেটে হাত গুজে চারপাশে ভালো করে তাকিয়ে বলে, ‘ এই ঘর থেকে এক পাও বাইরে বের করলে, আমার থেকে খারাপ কেউ হবেনা। গট ইট।’

আরহাম কথাটি বলেই বেড়িয়ে যায়। মেহেভীন রাগে ফুশতে ফুশতে উঠে দাঁড়িয়ে বলে ‘ মঘের মুল্লুক পেয়েছে নাকি? আমাকে ডিভোর্স দিয়ে মুক্ত করলো নাকি উল্টো বন্দী বানিয়ে ফেললো? আমি তো এখন ইচ্ছে করে ঘর থেকে বের হবো। সারা বাড়ি ঘুড়ে বেড়োবো, দেখি কে আমাকে কি করে। ‘

মেহেভীন কথাটি বলে পুনরায় বসে পড়লো। সে বুঝতে পারছে না আরহাম আসলে চাইছে টা কি তার থেকে? ডিভোর্স দিয়ে, পুনরায় বিয়ে করে তাকে কেন আটকে রাখতে চাইছে সে?

মেহেভীন গ্লাস বের করে জগ থেকে পানি নিয়ে ঢগঢগ করে খেয়ে ফেললো। সে ঠিক করলো কালকে ভার্সিটি গিয়ে, সবার প্রথমে তার বেস্ট ফ্রেন্ড অন্তুর সাথে দেখা করবে। অন্তুর সাথে দেখা করে কোন একটা ব্যবস্হা করে, অভ্রের সাথে যোগাযোগ করতে হবে। অভ্রকে জানাতে হবে তার এবং আরহামের ডিভোর্স হয়ে গিয়েছে,কিন্তু অভ্র কি তাকে ফিরিয়ে নিবে পুনরায়? মেহেভীন গ্লাসটা তার বিছানার পাশে রাখতে গিয়ে, শুনতে পেলো বাইরে থেকে আগত কিছু মেয়েদের হাসি ঠাট্টার শব্দ। মেহেভীন দরজা দিয়ে উঁকি দিয়েই দেখতে পেলো, তারা মায়রাকে নিয়ে হাসতে হাসতে আরহামের ঘরের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। সম্পর্কে তারা মায়রার বান্ধুবী। তার মধ্যে একজন হাসতে হাসতে বললো, ‘ আজকে বাসর রাতে আরহাম ভাইয়া দেখিস তোকে ঘুমোতেই দিবে না, এত্তো সুন্দর লাগছে তোকে মায়রা। আরহাম ভাইয়া আজ চোখে সর্ষে ফুল দেখবে।’

মেয়েটার কথা শুনে সকলে হেসে দেয় একসাথে। মায়রা লজ্জা পায় তাদের কথা শুনে। মেহেভীন মুখ বেকিয়ে বলে, ‘ সুন্দর না ছাই। ‘ তার মধ্যে সেখানে আরহামের আগমন ঘটলো। সে সকলকে দেখে বললো, ‘ লেডিস আপাতত আপ্নারা যেতে পারেন, আমার বউকে এবং আমাকে দয়া করে একা ছেড়ে দিন। থ্যাংক ইউ। ‘

আরেকদফা হাসির রোল পরে যায় সেখানে। সকলে হাসতে হাসতে বলে, ‘ ভাইয়ার দিকে তর সইছে না। আপনারই তো বউ, নিয়ে যান আপনি। ‘

মেহেভীন আরহামের কথা শুনে হাতে হাত রেখে বড় বড় চোখ রেখে বলে, ‘ ফুপ্পির বড় ছেলেটা এত্তো বড় নিলর্জ্জ। ছিহ! আমি বহুত বড় বাঁচা বেঁচে গিয়েছি। ছোটবেলা থেকে আমেরিকা থেকে পড়াশোনা করে, তাদের কালচার একবারে শিরায় শিরায় আয়ত্ত করে ফেলেছে। নির্লজ্জ ছেলে কোথাকার। ‘

সকলে মিলে আরহাম এবং মায়রাকে বাসর ঘরে রেখে আসে। মেহেভীন নিষ্পলক কিছুক্ষন চেয়ে থেকে নিজের ঘরের দিকে পা বাড়াতে নিলে, সেখানে একজন স্টাফ এসে মেহেভীনের হাতে দুধের গ্লাস ধরিয়ে দিয়ে বলে, ‘ ম্যাম, বড় ম্যাম( আরহামের মা)
আপনাকে আরহাম স্যার এবং মায়রার ম্যামের ঘরে দিয়ে আসতে বলেছে। ‘

কথাটি শুনে মেয়ে স্টাফটি প্রস্হান করে। মেহেভীন বুঝতে পারছে না তার সাথে হচ্ছে টা কী? ফুপিও তাকে এমন কাজ করতে বললো কেন? মেহেভীন আর কিছু না ভেবে দুধের গ্লাস হাতে আরহামের ঘরে নক দেয়। কিছুক্ষন পর এসে মায়রা দরজা খুলে দেয়। মেহেভীন দেখতে পায়, মায়রার শাড়ি এলোমেলো। চুলগুলো খুলো একেবারে। মায়রাকে এমনভাবে দেখে হাতের মুঠো শক্ত করে ঠায় দাঁড়িয়ে যায় মেহেভীন। মায়রা মেহেভীনকে দেখে মিষ্টি হেসে বলে, ‘ মেহেভীন তুমি? এতো রাতে কোন দরকার? ‘

ভিতর থেকে আরহাম বলে উঠলো, ‘ এতো রাতে কে এসেছে মায়রা ডার্লিং? ‘

‘ মেহেভীন এসেছে। ‘

আরহাম সামান্য ‘ উফ ‘ নামক বিরক্তিকর শব্দ করে বলে,

‘ আজব সামান্য কমনসেন্স কি নেই? এই টাইমে নতুন কপোত কপোতি বিজি থাকতে পারে, তাদের ডিস্টার্ব করা উচিৎ না।এইটাও কি স্টুপিড মেয়েটা জানে না? সামান্য মেনার টুকুও নেই। স্টুপিড মেয়ে একটা। এইসব পাব্লিকদের জন্যে বাইরে ‘নো ডিস্টার্ব ‘ বোর্ডটা ঝুলিয়ে রাখতে হবে। ‘

আরহামের কথায় অপমানে মেহেভীনের আখিজোড়া বেয়ে সামান্য অশ্রু গড়িয়ে পরে। মায়রা তা দেখে বলে, ‘ আরহাম প্লিয স্টপ এইভাবে বলো না। ‘

মেহেভীন মায়রার দিকে তাকিয়ে চোখ পাকিয়ে বলে, ‘ মায়রা আপু কাউকে বলে দিও, কাউকে ডিস্টার্ভ করার ইন্টেনশন আমার নেই। ফুপি দুধটা দিয়ে যেতে বলেছিলো, তাই এসেছি, নাহলে কখনো আসতাম না। ‘

মেহেভীন কথাটি বলে চলে যেতে নিলে…….

লেখিকা: জান্নাতুল ফেরদৌসি রিমি

চলবে কি?

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে