মনের অরণ্যে এলে তুমি পর্ব-২৩+২৪

0
838

#মনের_অরণ্যে_এলে_তুমি
#তাহিরাহ্_ইরাজ
#পর্ব_২৩

নিকষ কৃষ্ণ রজনী। ঘরোয়া পোশাক পরিহিত ইরহাম সিঁড়ি বেয়ে নেমে আসছে। হাতে মোবাইল। মোবাইল স্ক্রল করতে করতে ডাইনিং এরিয়ায় উপস্থিত হলো। সেথায় পূর্ব হতেই উপস্থিত ছিল হৃদি। স্বামীর জন্য খাবার পরিবেশন করতে ব্যস্ত মেয়েটি। ইরহাম চেয়ার টেনে বসলো। মোবাইল রাখলো টেবিলের ওপর। হৃদি মুচকি হেসে ওর প্লেট সোজা করে দিলো। ভাত বেড়ে দিলো প্লেটে। ইরহাম নিজেই ফিশ কারি নিয়ে নিলো। হৃদি গ্লাসে পানি ঢেলে পাশের চেয়ারে বসলো। দেখতে লাগলো স্বামীর ভোজন। নিঃশব্দে আহার সম্পন্ন করে উঠে দাঁড়ালো মানুষটি। হৃদি এঁটো থালা-বাসন নিয়ে কিচেনে অগ্রসর হলো। বেসিনে হাত ধৌত করে কক্ষের দিকে এগিয়ে গেল ইরহাম। কাজকর্ম সেরে হৃদিও নিজেদের কক্ষের দিকে ধাবিত হলো।
.

বেডের হেডবোর্ডে হেলান দিয়ে বসে ইরহাম। চোখে রিমলেস চশমা। হাতে একটি রাজনৈতিক বই। ইংরেজি ভাষায় লিখিত। হৃদি ড্রেসিং টেবিলের সম্মুখে বসে। হাতেপায়ে নাইট ক্রিম মেখে চুল আঁচড়ে নিলো মেয়েটি। টুল হতে উঠে বিছানার ধারে এলো। বসলো স্বামীর পাশে। তাকে বই পড়তে দেখে উঁকি দিলো বইয়ের নাম দেখতে। ইংরেজি ভাষার বই তাও আবার রাজনীতি বিষয়ক। কি রষকষহীন রে বাবা! হৃদি বিরক্তিসূচক শব্দ করে বললো,

” আপনার মধ্যে রষকষের ‘র’ও নেই তাই না? ”

বই পড়া থেমে গেল। অর্ধাঙ্গীর পানে প্রশ্নবিদ্ধ চাহনিতে তাকালো ইরহাম। হৃদি তর্জনী দিয়ে বইটি দেখিয়ে বললো,

” দিনভর রাজনীতি রাজনীতি। এখন রাতেও বিদেশি রাজনীতি! আপনি পারেনও বটে। ”

তর্জনী সরিয়ে হৃদি দীর্ঘশ্বাস ফেলল। হেডবোর্ডে হেলান দিয়ে একাকী বলতে লাগলো,

” আমরা আসলেই দুই মেরুর পাবলিক। ওপর ওয়ালা এমন জুটি বানালো! আমাদের মধ্যে ক্যামনে কি ভাই? ”

ইরহাম বইয়ের পাতায় দৃষ্টি নিবদ্ধ করে বললো,

” রাতদুপুরে চিন্তা করে চোখের নিচে ডার্ক সার্কেল বানানোর দরকার নেই। সময় হলে সবই হবে। ”

হৃদি জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে শুধালো,

” কি হবে? কিসের কথা বলছেন? ”

ওর পানে তাকালো মানুষটি। চোখের ভাষায় অদ্ভুত মা-দকতা। ছুঁয়ে যাচ্ছে অন্তঃস্থল। বুঝিয়ে দিচ্ছে সুগভীর কিছু ভাবনা। শিউরে উঠলো মেয়েটি। লালিমা লেপে গেল দু কপোলের ত্বকে। ত্বরিত দৃষ্টি সরিয়ে নিলো হৃদি। লাজুক স্বরে থেমে থেমে বললো,

” এমন করে তাকাবেন না ইরহাম। লাজে ম র ণ নিশ্চিত আমার। ”

অধর কা’মড়ে হাসলো মানুষটি। ইচ্ছে সত্ত্বেও আর দুষ্টুমি করলো না। মনোযোগ নিবদ্ধ করলো বইয়ে। লাজুকতার ন্যায় মিইয়ে মেয়েটি। মন্থর গতিতে শয্যা গ্রহণ করলো। দেহে জড়িয়ে নিলো পাতলা কাঁথা। ওপাশ ফিরে শুয়ে সে। ইরহাম আড়চোখে দেখে মৃদু হাসলো। শব্দহীন আকর্ষণীয় সে হাসি!

নিশুতি রাত। চিন্তিত বদনে কক্ষে বসে পল্লবী। রাহিদের মা। ঘেমেনেয়ে একাকার অবস্থা ওনার। দুরুদুরু করছে বুক। চিন্তার পাহাড়ে চাপা পড়ে যাচ্ছেন উনি। আচমকা ওনার ধ্যান ভঙ্গ হলো। আঁতকে উঠলেন উনি। কলিংবেলের আওয়াজ ভেসে আসছে। সে এসেছে! এসেছে। বিছানার চাদর মুঠোবন্দী করে আতঙ্কিত ভঙ্গিতে বসে রইলেন উনি। অনুভব করতে পারলেন এই কক্ষের দিকেই এগিয়ে আসছে মানুষটি। প্রতিটি পদচারণায় ওনার বুকের ভেতর কাঁপন সৃষ্টি হলো। বিন্দু বিন্দু ঘাম গড়িয়ে পড়ছে কপোল ছুঁয়ে। অতিরিক্ত ভয়ে কেঁপে উঠলেন উনি যখন কক্ষে প্রবেশ করলো মানুষটি। কিছু বুঝে ওঠার আগেই পেছন হতে চুলের একাংশ শক্ত মুঠি করে ধরলো মানুষটি। পল্লবী পিছু ঘোরা মাত্রই শক্তপোক্ত পাঁচ আঙ্গুলের ছাপ অঙ্কিত হলো ওনার কপোলের ত্বকে। হতভম্ব চাহনিতে স্বামীর পানে তাকালেন পল্লবী। বাঁ হাতে চুলের মুঠি ধরে ডান হাতে স্ত্রীর চোয়াল শক্ত করে চেপে ধরলেন জহির সাহেব। রাগে র’ক্তিম ওনার মুখশ্রী। হিসহিসিয়ে বলে উঠলেন উনি,

” মা* ! তোর কলিজা অনেক বড় হয়ে গেছে তাই না? ভয়ের থলি ছোট হয়ে গেছে? বহুদিন খাতির করি না, তাই কি ভাবছিস? জহির নেতিয়ে পড়ছে? হাতে চুড়ি পড়ে ঘোরে? ”

ক্রন্দনরত পল্লবী ভেজা কণ্ঠে বলতে লাগলেন,

” বি বিশ্বাস করো। আমি মারিয়াকে সেরকম কিছু বলিনি। ও ও-ই.. ”

আরো শক্ত করে চোয়াল চেপে ধরলেন জহির সাহেব। দন্ত আঘাত করছে পল্লবীর মুখের ভেতর। র*ক্তক্ষরণ হবার উপক্রম। যন্ত্রণায় মৃদু আর্তনাদ করে উঠলেন উনি। তাতে বিন্দুমাত্র ভ্রুক্ষেপ না করে জহির সাহেব
ক্ষি প্ত স্বরে বলতে লাগলেন,

” একদম চুপ। তোর এই ব্লা!ডি মুখে আমার মারুর নাম নিবি না। তোর কি যোগ্যতা আছে ওর নাম মুখে নেয়ার? হাঁ? ফকি* একটা। ”

পল্লবী আহত কণ্ঠে বলে উঠলেন,

” বউ হই তোমার। ”

জহির সাহেব বিদ্রুপের হাসি অধরে এনে স্ত্রীকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিলেন। ভারসাম্য হারিয়ে পড়তে গিয়েও পড়লেন না পল্লবী। ওনার দিকে তাকিয়ে মানুষটি বলতে লাগলো,

” বউ নস। তুই হলি আমার জীবনের সবচেয়ে বড় মিস্টেক। তোর মতো অপদার্থ, আনকালচারাল ভূতকে বিয়ে করে আমার জীবনটা জাস্ট শেষ হয়ে গেল। ইয়্যু আর গুড ফর নাথিং। ”

তীব্র অসন্তোষ প্রকাশ পাচ্ছে ওনার চেহারায়। স্তব্ধ হয়ে বিছানায় বসে পড়লেন পল্লবী। ওনার ভালোবাসার মানুষটির চোখে আজ উনি এতটাই নিচ! হেয়! হাহ্! এরেই বলে নিয়তি! বি-ষাক্ত পরিণতি! জহির সাহেব স্ত্রীর দিকে আঙ্গুল তুলে শাসনের সুরে বললেন,

” আজ হয়েছে। হয়েছে। দ্বিতীয়বার আমার ফোন ধরার মতো দুঃসাহস দেখাবি না। আর যদি মারুর সঙ্গে মিসবিহেভ করেছিস তো দেয়ালে পুঁ তে দেবো। জাস্ট
পুঁ তে দেবো। মনে রাখিস। ”

গায়ে থাকা কোট খুলে বিছানায় স্ত্রীর মুখে ছুঁড়ে ফেললেন উনি। বড়বড় কদম ফেলে বেরিয়ে গেলেন কক্ষ হতে। বেদনাদায়ক চাহনিতে স্বামীর গমন পথে তাকিয়ে পল্লবী। আরো একজন এ দৃশ্য দরজার আড়ালে দাঁড়িয়ে দেখলো। নামেমাত্র বাবার রাজকন্যা! রায়না! আবেগপ্রবণ হয়ে মেয়েটা দৌড়ে নিজের ঘরে চলে গেল। পেছনে রয়ে গেল শোকে পাথর এক নারী।

দিবাকরের আলোয় উজ্জ্বল বসুন্ধরা। কিচেনে ব্যস্ত সময় পাড় করছে মেয়েটি। চিড়া খুব ভালোমতো ধৌত করে একটু শক্ত অবস্থায় ঝাঁঝড়ির মধ্যে তুলে পানি নিংড়ে নিলো। রাখলো একটি থালায়।

” এবার লবণ ও চিনি মিশিয়ে কিছুক্ষণ রেখে দিতে হবে। ”

মালিহার নির্দেশনা পালন করলো হৃদি। মায়ের কথামতো আলু, পেঁয়াজ ও আদা ঝিরঝির করে কাটলো। বেশ ভোগান্তি পোহাতে হলো বৈকি। রান্নায় অনভিজ্ঞ হলে যা হয়। কাঁচালঙ্কা কাটার সময় বারবার অসুবিধা হচ্ছিল। মালিহা তা লক্ষ্য করে বললেন,

” দেখি আমাকে দে। ”

হৃদি আপত্তি জানিয়ে বললো,

” নো বঙ্গ মাদার। আমাকেই করতে দাও। তুমি করলে আমি শিখবো কি করে বলো তো? ”

মালিহা মুচকি হেসে বললেন,

” ঠিক আছে। কর। কিন্তু সাবধানে। ”

হৃদি মিষ্টি হেসে সম্মতি জানালো। মালিহার নির্দেশনা মোতাবেক কর্ম সম্পাদন করতে লাগলো। একসময় চিড়া সম্পূর্ণ ভাবে ভাজা সবজির সঙ্গে মিশে গেল। গ্যাস বার্নার হতে নামিয়ে নিলো হৃদি। মায়ের কথামতো পরিমাণ মতো ঘি এবং গরম মশলা দিয়ে চিড়া হালকা করে নাড়তে লাগলো। অতঃপর সম্পন্ন হলো ‘ চিঁড়ের পোলাও ‘ রেসিপি। প্রথমবারের মতো লাঞ্চ আইটেম রান্না। উচ্ছ্বসিত হৃদি টুপ করে চুমু এঁকে দিলো মায়ের কপোলে। হেসে উঠলেন মালিহা। যত্ন সহকারে হৃদির কানের পিঠে গুঁজে দিলেন কিছু চুল। উত্তেজনা বিরাজ করছে মেয়েটির অন্তঃপুরে।
.

শুক্রবার আজ। ছুটির দিন। পরিবারের সদস্যরা সকলেই বাড়িতে। ইরহাম সকাল সকাল বাহিরে গিয়েছিল। কিয়ৎক্ষণ পূর্বে ফিরেছে। লাঞ্চ সেরে আবার বের হবে। দুপুরবেলা এখন। লাঞ্চের সময় হয়ে গেল। একে একে ডাইনিংয়ে উপস্থিত হলো পরিবারের সদস্যরা। বসলো চেয়ারে। হৃদি এবং মালিহা খাবার পরিবেশনের দায়িত্বে। হৃদির ঝলমলে মুখশ্রী দেখে ইরহাম কিছুটা অবাক হলো! তবে সকলের উপস্থিতিতে কিছু বললো না। তবে রাজেদা খানম ঠিক প্রশ্ন করে বসলেন,

” কি রে বুইন? মুখ এত চকচক করতাছে ক্যান? বহুত খুশি মনে হইতাছে। কোনো সুখবর আছে নি? ”

হতবিহ্বল হলো ইরহাম! খুকখুক করে কেশে উঠলেন এজাজ সাহেব। মালিহা লজ্জায় পড়ে গেলেন শাশুড়ি মায়ের কথা শুনে। হৃদি প্রথমে বুঝতে পারেনি। তবে স্বামীর হতবিহ্বল চেহারায় দৃষ্টি নিবদ্ধ হতেই বিষয়টা বোধগম্য হলো। লাজে আর’ক্ত হলো মুখশ্রী। মিনমিনে কণ্ঠে বললো,

” দাদি কিসব বলছো? অমন কিছুই নয়। ”

রাজেদা খানম বেজার মুখে বললেন,

” তাইলে কি? ”

হৃদি হাসিমুখে বললো,

” আছে কিছু। সময়মতো বলবো নে। এখন সবাই খেতে বসো তো। ”

কথা না বাড়িয়ে হৃদি খাবার পরিবেশন করতে লাগলো। সঙ্গে মালিহা। চিঁড়ের পোলাও দেখে স্বাভাবিক ভাবেই খুশি হলো উপস্থিত সকলে। ইনায়া উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে বললো,

” ওয়াও! চিঁড়ের পোলাও! কতদিন পর। উফ্! কি দারুণ! থ্যাংকস আম্মু। ”

মালিহা মুচকি হেসে পুত্রবধূর দিকে তাকালেন। হৃদি প্রসন্ন চোখে তাকিয়ে। সবাইকে খাবার পরিবেশন করে শাশুড়ি, বৌমা খেতে বসলো। হৃদি প্লেটে চামচ নড়াচড়া করছে। উত্তেজনায় ভুগছে বেশ। প্রথমবারের মতো এমন রান্না। ভালো হয়েছে তো? সবাই খেয়ে সন্তুষ্ট হবে নাকি অসন্তুষ্ট? স্বামী, শ্বশুর, দাদি শাশুড়ির দিকে তাকাতে লাগলো মেয়েটা। কারোর প্রতিক্রিয়া বোঝা যাচ্ছে না। খানিক বাদেই শোনা গেল ইনায়ার উচ্ছ্বসিত কণ্ঠ,

” আম্মু অসাম হয়েছে পোলাওটা! হাত দাও তো। চুমু দেবো। এমন ফাটাফাটি রান্নার জন্য একখান চুমু দিতেই হবে। ”

মালিহা হাসিমুখে বললেন,

” চুমু দিতে হলে আমাকে নয় বরং তোর ভাবীকে দে। ”

” কেন? ভাবীকে কেন? ” অবুঝের মতো প্রশ্ন করে বসলো ইনায়া।

” কারণ রান্নাটা আমি নই বরং তোর ভাবী করেছে। ”

হৃদি তৎক্ষণাৎ বলে উঠলো,

” তবে অল ক্রেডিট গৌ’জ টু মা। মায়ের হেল্প ছাড়া এতটা করতে পারতাম না। থ্যাংকস মা। ”

মালিহা মুচকি হেসে ধন্যবাদ গ্রহণ করলেন। অবাক নেত্রে তাকিয়ে বাকিরা! হৃদি রান্না করেছে? অভাবনীয় কাণ্ড বটে! ইরহাম প্লেটে থাকা চিঁড়ের পোলাও এর দিকে একপলক তাকিয়ে সহধর্মিণীর পানে তাকালো। চোখেমুখে তার তৃপ্তির আভা। মুচকি হেসে খেতে লাগলো সে। এজাজ সাহেব এবং তার গুণধর পুত্র ব্যতিত সবাই বেশ প্রশংসা করলো। খুশিমনে সে প্রশংসায় ভেসে গেল হৃদি।
.

সমতল আরশির সম্মুখে দাঁড়িয়ে ইরহাম। পরিহিত সফেদ পাঞ্জাবির বোতাম আটকে নিচ্ছে সে। হঠাৎ চমকে গেল!

” গিফট কোথায়? ”

বাম পাশে তাকালো ইরহাম। হাত বাড়িয়ে দাঁড়িয়ে হৃদি।

” কি হলো? গিফট দিন। ”

” কিসের? ” গম্ভীর স্বরে শুধালো মানুষটি।

হৃদি হাত নামিয়ে বিস্মিত কণ্ঠে বললো,

” মানে কি? বাড়ির বউ প্রথমবার রান্না করলে কিছু দিতে হয় জানেন না? সবাই কম-বেশি কিছু দিয়েছে। তো আপনি বাদ যাবেন কেন? আফটার অল স্বামী মহাশয় হোন। ”

তাড়া দেখিয়ে, ” দিন দিন। বিলম্ব না করে গিফট দিন। কি দেবেন? ”

ইরহাম এসবে পাত্তা না দিয়ে বাহিরে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হতে লাগলো। মসৃণ কেশে হেয়ারব্রাশ চালনা করে চোখে পড়ে নিলো চশমা। কব্জিতে গলিয়ে নিলো রিস্ট ওয়াচ। পকেটে কার রিং এবং ওয়ালেট পুরে স্ত্রীর দিকে ঘুরে দাঁড়ালো। অসন্তুষ্ট বদনে দাঁড়িয়ে মেয়েটি। উপহারের জন্য অধীর অপেক্ষায়। বক্র হেসে এগিয়ে এলো মানুষটি। হৃদির সন্নিকটে দাঁড়িয়ে মৃদু কণ্ঠে শুধালো,

” উপহার চাই? ”

ঝলমলে হাসিতে ইতিবাচক মাথা নাড়ল হৃদি। উপহার চাই তার। চোখের ইশারায় হাত বাড়িয়ে দিতে বললো ইরহাম। খুশি খুশি দ্রুত হাত বাড়িয়ে দিলো মেয়েটি। ওর উচ্ছ্বসিত নয়নে নয়ন স্থির রেখে কোমল হাতটি স্পর্শ করলো স্বামী নামক মানুষটি। হালকা শিউরে উঠলো হৃদি। ওর বাড়িয়ে দেয়া হাতটি আস্তে ধীরে উল্টে ধরলো ইরহাম। চমকিত নেত্রে তাকিয়ে মেয়েটি। কি করতে চাইছেন উনি! হাতের উল্টো পিঠে ওনার কি কাজ! হাতটি উল্টে ধরলেন কেন! সহসা ভাবনায় ছেদ পড়লো। শিহরণে আবিষ্ট হয়ে কম্পিত হলো চিত্ত। ইরহামের হাতের মুঠোয় পেলব হাতটি। তর্জনীতে আলতো করে ছুঁয়ে দিলো উষ্ণ পরশ। আবেশে মুদিত হয়ে আসছে নেত্র জোড়া। ওর নয়নে স্থির নভোনীল চক্ষুদ্বয়। চশমার অন্তরাল হতে নে”শালো চাহনিতে তাকিয়ে। সে নে”শা মন্থর গতিতে ছড়িয়ে পড়ছে মেয়েটির রন্ধ্রে রন্ধ্রে। উত্তাল ঢেউ আছড়ে পড়ছে মানসপটে। ধীরে ধীরে সময় নিয়ে বাকি চার আঙ্গুলেও ওষ্ঠের ছোঁয়া এঁকে দিলো মানুষটি। নে’শাতুর স্পর্শের মাধ্যমে একান্ত সঙ্গিনীকে উপহার প্রদান করলো। অভাবনীয় মা-দকতাময় স্পর্শে বিহ্বল হৃদি! স্বামীর নে’শাতুর চাহনি আর সইতে পারলো না। দ্রুততার সহিত হাতটি ছাড়িয়ে নিয়ে বেরিয়ে গেল কক্ষ হতে। পেছনে রয়ে গেল অর্ধাঙ্গ। যার অধরে লেপ্টে প্রসন্ন ছাপ।

চলবে.

#মনের_অরণ্যে_এলে_তুমি
#তাহিরাহ্_ইরাজ
#পর্ব_২৪

নিশুতি রাত। বেলকনিতে দাঁড়িয়ে ইনায়া। শীতল হাওয়া ছুঁয়ে যাচ্ছে কায়া। উড়ু উড়ু করছে উন্মুক্ত কেশরাশি। দৃষ্টি নিবদ্ধ তার আকাশের বুকে উজ্জ্বল নিশাকরে। মানসপটে বারংবার ভেসে উঠছে এক মুখশ্রী। র’ক্তিম যার চক্ষু জোড়া। বড় দুর্বোধ্য চাহনি। রাগত বদনে তাকিয়ে বুঝি। কিচ্ছুটি বলছে না। না শুনছে। করে যাচ্ছে শুধু অভিমান। অভিমান! আসলেই কি তাই? অভিমান তো তার সঙ্গে হয় যারে আপন মানে হৃদয়। সে তো রাহি ভাইয়ার আপন কেউ নয়। যদি হতো এতখানি অবজ্ঞা সইতে হতো না। তবে কি করে এ অভিমান হিসেবে অভিহিত হবে! কেন দু’জনার মধ্যে যোজন যোজন এর দূরত্ব! তারে বোঝে না কেন সে-ই অবুঝ একরোখা মানুষটি!

” রাহি ভাইয়া! আমায় এতখানি অবজ্ঞা করো না কো। তোমার এত অবজ্ঞা, ঘৃ ণা সহ্য করবার মতো বিন্দু তুল্য শক্তি যে নেই। বড় দুর্বল আমি। দুর্বল তোমাতে। এ কিশোরী হৃদয়ে চুপিসারে কবে প্রবেশ করলে তুমি? করে নিলে সীমাহীন জায়গা। টেরও পেলাম না। যখন উপলব্ধি করলাম তখন সবটা নাগালের বাইরে। ইনুর হৃদয়ে ধ্বনিত হয় শুধু একটি নাম। তোমার নাম। ”

অসীম আকাশের পানে চেয়ে মনের গহীনে লুকানো অনুভূতি ব্যক্ত করছে এক কিশোরী কন্যা। অব’জ্ঞাকারী সে মানব কভু জানবে কি এই অনুভূতির বহর? নাকি আড়ালে আবডালে রয়ে যাবে সব? অন্তরে মৃ ত্যু হবে এক আকাশসম আবেগের!

সান্ধ্যকালীন প্রহর। লিভিংরুমে পাশাপাশি বসে তিনজন। সোফায় মধ্যমণি হয়ে বসে মালিহা। ওনার ডানে হৃদি। বামে ইনায়া। টেবিলের ওপর পাকোড়া রাখা ট্রে। মালিহা পাকোড়া মুখে পুরে অতি মনোযোগ সহকারে টিভি দেখছেন। সম্পূর্ণ ধ্যান জ্ঞান টিভির পর্দায়। আশেপাশে কে আছে, কি হতে কি হচ্ছে ওনার তাতে একটুও চেতনা নেই। জাগতিক হুঁশ হারিয়ে উনি মগ্ন টেলিভিশনের পর্দায়। হৃদি পাকোড়া খেতে খেতে মায়ের মনোযোগী অবতার দেখছে। হাসছে মিটিমিটি। ব্যতিক্রম ইনায়া। সে বিরক্ত হয়ে মা’কে ডেকে উঠলো,

” আম্মু। ও আম্মু। তোমার এখনো হয়নি? রিমোটটা দাও না। ”

বিরক্ত হলেন মালিহা। মেয়ের দিকে তাকিয়ে আপত্তি জানিয়ে বলে উঠলেন,

” আহ্! বিরক্ত করিস না তো। দেখছিস না সিরিয়াল দেখছি?”

ভাবীর মিটিমিটি হাসি অগ্রাহ্য করে মা’কে বললো মেয়েটি,

” আর কত দেখবে? এবার তো দাও। সে-ই একঘন্টা ধরে দেখছো। ”

” উফ্ একটু থামবি? ডায়লগ শুনতে পারছি না। ”

মালিহা অসন্তুষ্ট হয়ে টিভিতে মনোনিবেশ করলেন। ইনায়া দুঃখী বদনে ভাবীর দিকে তাকালো। ননদের করুণ অভিব্যক্তি দেখে বেশ মজা পাচ্ছে হৃদি। ভাবীর এই হাসি, ঝলমলে চেহারা এই মুহূর্তে সহ্য করা কষ্টসাধ্য হয়ে উঠলো। দৃষ্টি সরিয়ে ট্রে হতে পাকোড়া হাতে নিলো ইনায়া। বেজার মুখে পাকোড়া চিবোতে লাগলো। সিরিয়ালের মেঘ ভাঙা, ধুমতানা কিসব শব্দে মস্তিষ্ক ফেটে যাবার উপক্রম। এত ধৈর্য ধরে বছরের পর বছর কেউ কি করে একই জিনিস দেখতে পারে! জানা নেই ইনায়ার। বড় করে শ্বাস ছাড়লো মেয়েটি। অতিবাহিত হলো আরো কিছু মুহূর্ত। হৃদির পাকোড়া খাওয়া শেষ। পেপার ন্যাপকিনে হাত মুছে নিলো সে। সোফাতে রাখা মোবাইল হাতে নিলো। ননদের দিকে একপলক তাকিয়ে দুষ্টু হেসে মোবাইল স্ক্রল করতে লাগলো। ইনায়া জোরপূর্বক পাকোড়া খাচ্ছে যেন। নেহাত নিজের রুমে টিভিতে প্রবলেম করছে তাই এখানে আসা। ভাবীর সঙ্গে একসাথে কোনো মুভি এনজয় করবে ভেবেছিল। ভেবেছিল কি আর সেখানে হচ্ছে টা কি! আম্মু সে-ই কখন থেকে একটার পর একটা টিভি সিরিয়াল দেখেই চলেছে। কখনো স্টার জলসা তো কখনো জি বাংলা। হায় রে! শেষ নেই এর। অবশেষে স্টার জলসার সিরিয়ালটা সমাপ্ত হলো। খুশিমনে রিমোটের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়লো ইনায়া। তবে কাজ হলো না। আঁতকে উঠে রিমোট রক্ষা করলেন মালিহা। মেয়েকে ধমক দিয়ে বললেন,

” করছিস টা কি? সর। ”

ইনায়া আবেগী কণ্ঠে বললো,

” রিমোটটা দাও না সোনা মা। ”

” না। এখন ‘তুঁতে’ হবে। ওটা দেখে নিই। তারপর.. ”

” ইয়া খোদা! ”

আঁতকে উঠলো ইনায়া! আরো আধা ঘন্টা! হইছে। আজ আর টিভি দেখা হবে না। ওর অভিব্যক্তি দেখে শব্দ করে হেসে উঠলো হৃদি। মোবাইলের পাওয়ার বাটন চেপে ননদের পাশে গিয়ে বসলো। সান্ত্বনার স্বরে বললো,

” কাঁদে না মেয়ে। আর মাত্র আধ ঘন্টা। এরপর পাবে। ঠিক আছে? ”

” ভাবী তুমিও মজা নিচ্ছো? কিচ্ছু বলছো না। ধ্যাৎ! ”

বিরক্তিসূচক শব্দ করে সোফা ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো ইনায়া। মালিহা তা লক্ষ্য করে বললেন,

” যা। গিয়ে পড়তে বস। ক’দিন পর না পরীক্ষা? ”

ধুপধাপ শব্দ করে সিঁড়ি বেয়ে দোতলায় উঠে গেল ইনায়া। হৃদি শব্দহীন হাসলো। এবার চক্ষু পড়লো মায়ের দিকে। মা সিরিয়াল দেখছে আর কাকে যেন খুব বকছে। বাঙালী রমণী যেমন হয় আর কি। ভারতীয় সিরিয়াল যেন তাদের আবেগ। বকবে, হাসবে, কাঁদবে তবুও দেখবে।

নিকষকৃষ্ণ রজনী। বিছানায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে বইখাতা। একপাশে হাঁটু মুড়ে বসে হৃদি। মনোযোগ নিবদ্ধ বইয়ের পাতায়। সে মুহূর্তে কক্ষে প্রবেশ করলো সাহেব। ক্লান্ত দেহ। উষ্ণ ছাঁচে জ্ব’লছে বুঝি সারা কায়া। ঘর্মাক্ত অবস্থা। শুভ্র পাঞ্জাবি স্বেদজলে সিক্ত হয়ে লেপ্টে দেহে। শ্লথ গতিতে হাঁটছে মানুষটি। এসে বসলো ডিভানে। বিছানা সংলগ্ন ডিভানটি। বইয়ে মনোযোগী হৃদি টের পায়নি স্বামীর আগমন। একমনে লিখে যাচ্ছে মেয়েটা। ইরহাম ডিভানে দেহ এলিয়ে দিলো। বাঁ হাতে একে একে খুলে ফেললো পাঞ্জাবির বোতামগুলো। এলোমেলো স্বল্প ঘামে সিক্ত চুলে হাত বুলালো একবার। ক্লান্তিতে নিমীলিত হয়ে এলো আঁখি যুগল। কিছুটা সময় অতিবাহিত হলো। বইয়ের পাতা উল্টাতে গিয়ে হৃদির অচঞ্চল দৃষ্টি পড়লো ডিভানে। হতভম্ব হলো মেয়েটি! ইরহাম! উনি কখন এলেন! ব্যস্ত হাতে বই খাতা বন্ধ করলো হৃদি। এলোকেশ আলগা খোঁপায় বন্দী করতে করতে নেমে এলো বিছানা ছেড়ে। গিয়ে দাঁড়ালো স্বামীর পাশে। হাত বাড়িয়ে দ্বিধায় ভুগছে মেয়েটা। উনি কিছু মনে করবেন কি? যদি বিরূপ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন! পরক্ষণে ভাবলো স্বামী হন। এতটুকু করা যেতেই পারে। দ্বিধা কাটিয়ে স্বামীর চুলে আঙুল গলিয়ে দিলো হৃদি। আচানক স্পর্শে ঈষৎ চমকালো ইরহাম! আঁখি মেলে তাকালো। একঝলক স্ত্রীর পানে তাকিয়ে পুনরায় আঁখি বুজে ফেললো। ওর মাথার তেলোয় নরম চিকন পাঁচটি আঙ্গুল বুলাতে বুলাতে হৃদি কোমল কণ্ঠে শুধালো,

” খুব ক্লান্ত? ”

” হুঁ। ” অস্ফুট স্বরে জবাব দিলো মানুষটি।

হৃদি স্বামীর চুলের ভাঁজে আঙ্গুল চালনা করতে লাগলো। এতক্ষণ বাদে আকাঙ্ক্ষিত আরাম মিললো। আবেশিত মানুষটির তনুমন। চক্ষু বুজে স্ত্রীর স্নেহশীল স্পর্শ অনুভব করে চলেছে ইরহাম। মাথার তেলোয় ঘুরে বেড়াচ্ছে অর্ধাঙ্গীর অঙ্গুলি সমূহ। নরম পাঁচটি আঙ্গুল যেন ওর ভেতরকার সবটুকু ক্লান্তি শুষে নিতে বদ্ধপরিকর। হৃদি আঙ্গুলের কারিশমা বহাল রেখে মোলায়েম স্বরে বললো,

” ফ্রেশ হয়ে নিন। আমি খাবার বেড়ে দিচ্ছি। খেয়েদেয়ে একটু লম্বা ঘুম দিন। সারাদিন, রাত ছোটাছুটি করে চলেছেন। শরীর আর কত সহ্য করবে? রোবোট নন। শেষে অসুস্থ হয়ে পড়বেন তো। ”

স্ত্রীর কথা শুনে চক্ষু মেলে তাকালো ইরহাম। ক্লান্ত স্বরে আপত্তি জানিয়ে বললো,

” ঠিক আছি আমি। ”

চুলের ভাঁজ হতে আঙ্গুল সরিয়ে নিলো হৃদি। আরামে ব্যাঘাত ঘটায় কিছুটা মনোক্ষুণ্ন হলো মানুষটির। প্রকাশ পেল চেহারায়। সেসব অগোচরে রয়ে গেল হৃদির। সে কাবার্ডের ধারে অগ্রসর হতে হতে পাকা গিন্নি ভঙ্গিমায় বললো,

” সে তো দেখতেই পাচ্ছি। এবার চটাপট উঠে পড়ুন তো। খেয়ে ঘুম দেবেন। খবরদার ওই ইংরেজদের উদ্ধার করতে বসবেন না যেন। ”

অর্ধাঙ্গীর শাসক অবতার দেখে মুচকি হাসলো ইরহাম। ফ্রেশ হওয়া দরকার। গা চিটচিট করছে। কিন্তু শরীর মানতে নারাজ। হাত-পা অবশ প্রায়। দিনরাত অবিরাম ছোটাছুটি চলছে। আর কত সইবে শরীর! মানবদেহ এটি। কোনো যন্ত্র কিংবা রোবোট নয়। দীর্ঘশ্বাস ফেলে ডিভানে দেহ এলিয়ে রইলো মানুষটি। হুঁশ ফিরলো হৃদির আগমনে। ওর ঘরের পোশাক নিয়ে পাশে দাঁড়িয়ে মেয়েটা।

” এই যে ড্রেস। ”

স্বামীর কোলের ওপর পোশাক রাখলো হৃদি। হাত বাড়িয়ে নভোনীল চক্ষু হতে চশমা খুলে ফেললো। কব্জি হতে হাতঘড়িও খুলে নিলো। ওগুলো নিয়ে পা বাড়ালো ড্রেসিং টেবিলের দিকে। অবসাদকে দূরছাই করে ইরহাম গা ঝাড়া দিয়ে উঠে দাঁড়ালো। এবার ফ্রেশ হওয়া সত্যিই আবশ্যক।

নিশুতি রাত। বেডরুমে বড় সোফায় আয়েশি ভঙ্গিতে দেহ এলিয়ে বসে আজগর সাহেব। পড়নে ওনার কৃষ্ণবর্ণ নাইট ড্রেস। হাতে কাঁচের স্বচ্ছ ড্রিংকিং গ্লাস। মন্থর গতিতে গ্লাসে ওষ্ঠাধর ঠেকিয়ে ম!দ্যপান করছেন উনি। আভিজাত্য বিরাজমান এ ঘরের আনাচে কানাচে। বিদেশি আসবাব, দেয়ালে শোভা পাওয়া পেইন্টিং এমনকি ছোট-বড় শোপিস যে কারোর নজর কাড়তে সক্ষম। ওনার বিপরীত দিকে দাঁড়িয়ে এক যুবক। ওনার দলের কর্মী হয়। তিন বছর ধরে ওনার সাহচর্যে রয়েছে। বিশ্বস্ত বলা চলে। আজগর সাহেব গ্লাসে চুমুক দিয়ে অন্তর হতে ম-দের স্বাদ গ্রহণ করলেন। বড় করে তৃপ্তিময় শ্বাস ছেড়ে তাকালেন দলীয় কর্মীর দিকে। চেহারায় রূঢ় ভাব ফিরে এলো। শীতল কণ্ঠে বলে উঠলেন,

” চৌধুরী বড় ডানা মেলে উড়তে শিখছে। আকাশে আকাশে রাজার হালে উড়ে বেড়াচ্ছে। আর কত? এবার তো ডানা ছেঁটে ফেলার সময় এসে গেছে। ”

যুবকটি বাধ্যগত শিষ্যের ন্যায় বললো,

” আমাদের কি করণীয়? আপনি শুধু আদেশ করেন নেতাজী। এক্কেবারে ওর কাম তামা করে দেবো। ”

আজগর সাহেব তর্জনী নাড়িয়ে আপত্তি জানালেন,

” আহা। তুই না। আমার প্রিয় বাচ্চাটাকে খবর দে। কতদিন ওরে দেখি না। যত্ন করি না। খবর দে। বল নেতাজী স্মরণ করছে। ”

মাথা নাড়ল যুবকটি, ” ঠিক আছে নেতাজী। সকালের মধ্যেই সে আপনার চরণে থাকবে। ”

জবাবে সন্তুষ্ট উনি। প্রসন্ন চিত্তে ম-দ্যপান করতে লাগলেন। গ্লাসে ঠেকে থাকা তর্জনীর ইশারা পাওয়া মাত্রই আনুগত্য স্বীকার করে কক্ষ হতে বেরিয়ে গেল যুবক। জটিলতা ভরপুর হিং স্র পরিকল্পনার ছক কষে চলেছেন এই প্রবীণ তুখোড় রাজনীতিবিদ। কি হতে চলেছে শীঘ্র? এ কোন প্র’লয় সৃষ্টিকারী ঝড়ের আভাস মিলছে!

দিনমণির কিরণে উজ্জ্বল ধরিত্রী। মমতাময়ীর কোলে মাথা এলিয়ে মেঝেতে বসে রাহিদ। সোফায় বসে থাকা পল্লবী ছেলের মাথায় আদুরে হাত বুলিয়ে চলেছেন। অশ্রু ছলছল করছে নেত্রে। কতদিন পর নাড়ি ছেঁড়া ধন এর সাক্ষাৎ মিললো! প্রায় একমাস বাদে। ভেজা কণ্ঠে পল্লবী ছেলেকে প্রশ্ন করলেন,

” মায়ের কথা একটুও মনে পড়ে না। তাই না? ”

” পড়ে তো। ”

মায়ের কোলে মাথা এলিয়ে রেখেই জবাব দিলো রাহিদ। পল্লবী এহেন মন্তব্যে অভিমানী স্বরে আপত্তি জানালেন,

” মিথ্যে কথা। মনে পড়লে এভাবে চোখের আড়ালে আড়ালে থাকতিস না। কাছেই থাকতি। ”

লুকায়িত অভিমান উপলব্ধি করে মাথা তুলে মায়ের পানে তাকালো রাহিদ। আবেগময় কণ্ঠে বললো,

” দূরে কোথায় মা? তোমার ছেলে তোমার হৃদয়েই তো আছে। ডিপ ইন দ্যা হার্ট। ”

অশ্রুসজল নয়নে তাকিয়ে পল্লবী। দু হাতে ভরে নিলেন একমাত্র পুত্রের মুখের আদল। ললাটে স্নেহের চুম্বন এঁকে সহসা কেঁদে উঠলেন।

” আমার সোনা বাবা। মা তোকে খুব মিস্ করে। ”

দু হাতে মা’কে গভীর আলিঙ্গন করলো রাহিদ। ভেতরকার যন্ত্রণা গোপন করে শুকনা ঢোক গিললো। অস্ফুট স্বরে বললো,

” রাহিও তোমায় মিস্ করে মা। ”

পল্লবী অনবরত ছেলের চুলে হাত বুলিয়ে চলেছেন। চুমু এঁকে দিচ্ছেন মাথায়, গালে, কপালে। চক্ষু বুজে মায়ের মমতাময়ী স্পর্শ অনুভব করতে লাগলো ছেলেটা। কতদিন মায়ের সান্নিধ্য মেলেনি। অনুভব করেনি এই স্নিগ্ধ মা মা ঘ্রাণ। মা ও ছেলে একে অপরের সান্নিধ্যে জাগতিক হুঁশ হারিয়েছে। তারা এখন এক মধুরতম পবিত্র জগতে অবস্থান করছে। সেথায় নেই কোনো যন্ত্রণা, অ*ত্যাচার, ক্রো’ধ কিংবা ঈ’র্ষা! আছে শুধু একবুক ভালোবাসা! আকস্মিক মা ছেলের মধুর লগন ভঙ্গ হলো। কারণ..

চলবে.

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে