#মনের অন্তরালে
#পর্ব_৪
#লেখিকা সাদিয়া জান্নাত সর্মি
হাতে ফোন নিয়ে দেখি কোন আননোন নাম্বার থেকে ফোন এসেছে। রিসিভ করলাম,
হ্যালো, কে বলছেন আপনি?
ফোনের ওপাশ থেকে কোন উত্তর এলো না।
হ্যালো কে আপনি? কথা বলছেন না কেন?
তার পরও কোন উত্তর এলো না। কিছুক্ষণ পর ফোন টা কেটে গেল। আমি অবাক হয়ে গেলাম। এতো রাতে ফোন করল অথচ কথা না বলেই কেটে দিল?থাক কথা না বলে নাই আমি তো আর ফোনের ওপাশের মানুষ টাকে চিনি না। কাল ভাববো কে ফোন করেছিল,আপাতত আমি ঘুমাই। আমি ঘুমিয়ে পড়লাম।
সকাল বেলা ৬টায় ঘুম ভাঙল আমার। ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে রান্না ঘরে দৌড়ালাম আমি। রাতে কিছু না খাওয়ার জন্য খিদে পেয়েছে খুব। এতো সকালে আমাকে রান্না ঘরে দেখে মা বললেন,আজ কি সূর্য পশ্চিম দিকে উঠেছে নাকি? তুই এতো সকালে রান্না ঘরে যে?
মা আমার খিদে পেয়েছে আর তুমি কি না আমার সাথে মজা করছো?
তোকে রাতে খেতে কে বারণ করেছিল?
রাতে খাইনি দেখে কি সকালে ও খেতে পারবো না নাকি?
আমি সেটা কখন বললাম? তুই গিয়ে টেবিলে বস আমি খাবার নিয়ে আসছি।
মা কিছুক্ষণ পর খাবার নিয়ে এলো।প্লেট থেকে খাবার নিয়ে মুখে দিয়েছি কি দেইনি এমন সময় আয়াশ ভাইয়ের গলার আওয়াজ শুনতে পেলাম আমি। খাবার রেখে উঠে এসে দেখি আয়াশ ভাই বসার রুমে বসে আছে।
আয়াশ ভাই আপনি এতো সকালে আমাদের বাসায়? আমাকে খুব মিস করছিলেন নাকি?
আমার এতো টাও খারাপ দিন আসে নি যে তোর মতো মেয়ে কে আমি মিস করবো? আমি কি আমার মামার বাসায় আসতে পারিনা নাকি?
আমি মন খারাপ করে বললাম,
সে আপনি আসতেই পারেন। আপনার মামার বাড়ি আবার শশুর বাড়ি বলে কথা। কিন্তু কি দরকারে এসেছেন?
তোর সাথে কোন দরকার নেই আমার,মামী কোথায়? মামীকে ডাক, ওনার সাথে আমার দরকার আছে।
আমি গিয়ে মাকে ডেকে নিয়ে এলাম। মা এসে বললেন,
কি ব্যাপার আয়াশ? কি হয়েছে?
মামী তুমি এখুনি আমাদের বাসায় চলো। দরকার খুব।
কেন? কি দরকার?
মামী তোমার বড় মেয়ের জামাই মানে রোশান ভাই আমাদের বাসায় এসেছে। এতো দিন পরে যখন রোশান ভাই রাগ ভেঙে ফিরে এসেছে তাহলে তোমরা আর দেরি করবে কেন? তাড়াতাড়ি চলো।
আয়াশ ভাইয়ের কথা শুনে মা তাড়াতাড়ি করে রেডি হয়ে ওনার সাথে চলে গেলেন। আমার মন টা খারাপ হয়ে গেল খুব। মায়ের বড় মেয়ের জামাইয়ের খোজ দিয়ে মাকে নিয়ে চলে গেল আয়াশ ভাই অথচ তিনি যে তার ছোট মেয়ের জামাই সেটা কি ভুলে গেলেন? একটা বার জিজ্ঞেস ও করলেন না যে আমি কেমন আছি?আর জিজ্ঞেসই বা কেন করবেন তিনি? তিনি তো তার প্রেমিকার খোঁজ খবরই রাখবেন। আমার খোজ রেখে কি করবেন উনি?
আমি ওখানে আর না দাঁড়িয়ে থেকে আপুর রুমে গেলাম। গিয়ে দেখি আপু সাজগোজ করছে। আপু কে সাজতে দেখে আমি জিজ্ঞেস করলাম,
আপু তুমি এতো সকালে সাজগোজ করছো কেন?
আজ আমার ভালবাসার মানুষ টি আসবে আমার কাছে তাই একটু সাজছি আর কি?
একটু পরে আপু সাজা শেষ করে আমার দিকে ঘুরে দাঁড়ালো। তার পর বললো,
দেখতো মেহুল আজ আমাকে কেমন লাগছে?
আপু,, তোমাকে তো আজ খুব সুন্দর লাগছে গো। নীল শাড়ি তে তোমাকে পুরো পরীর মত লাগছে। দুলাভাই তো আজ তোমাকে দেখে ফিদা হয়ে যাবে।
আপু একটু লজ্জা পেয়ে বলল,যাহ্ কি বলিস?
আমি আপুর গাল টেনে দিয়ে বললাম, সত্যি বলছি আপু।
তখন আপুর ফোন এলো। আপু ফোন হাতে নিয়ে দেখে মা ফোন করেছে,
হ্যালো মা বলো,,
মেহের তুই মেহুল কে নিয়ে তোর ফুপির বাসায় চলে আয় এক্ষুনি।
(আমার বড় আপুর নাম মেহের)
ওকে মা। আমরা আসছি।
কিছুক্ষণ পর আপু আর আমি ফুপির বাসায় চলে আসলাম। এসে দেখি আয়াশ ভাই আর রোশান ভাই জমিয়ে গল্প করছে। আপু রোশান ভাই কে দেখে একটু লজ্জা পেয়ে বাইরে ফুপি আর মায়ের কাছে চলে গেল। রোশান ভাই আমাকে দেখে বলল,
শালিকা এদিকে এসো। আমাকে না জানিয়ে বিয়ে টা করে ফেললে।
আমি দুলাভাইয়ের পাশে গিয়ে বসে বললাম,
দুলাভাই যদি তার শালীর খোজ না নেয় তাহলে আমার আর কি করার আছে? তাই না জানিয়ে বিয়ে টা করে ফেলেছি।
তখন আয়াশ ভাই বললো,
রোশান ভাই তোমরা গল্প করো আমি আসছি। এমার্জেন্সি আছে আমার, বলে আয়াশ ভাই উঠে চলে গেল।
রোশান ভাই আমার দিকে তাকিয়ে বলল,
কি ব্যাপার আয়াশ এভাবে চলে গেল কেন?
আমি বললাম,
উনি আমাকে মন থেকে বিয়ে করেন নি তাই চলে গেছেন।এখন গিয়ে উনি ওনার গার্লফ্রেন্ডের সাথে কথা বলবেন হয়তো। আমার এমন কথা শুনে দুলাভাই হাসতে লাগল। হাসছে তো হাসছেই। থামছেই না। আমি অবাক হয়ে ওনার হাসি দেখছি। কি এমন বললাম যে দুলাভাই হাসতে শুরু করলো? কিছুক্ষণ পর দুলাভাই হাসি থামিয়ে বললো,
এটা কে বলেছে যে আয়াশ তোমাকে মন থেকে বিয়ে করেনি?
আমি বললাম, উনি নিজেই বলেছেন আমাকে।
আর গার্লফ্রেন্ডের কথা? সেটা কে বলেছে?
অর্থি আপু বলেছে।
দুলাভাই বললো,ওরা তোমার সাথে মজা করেছে বলেই আবার হাসতে লাগল। আমি অবাক হয়ে বললাম,
মজা করেছে মানে?
(চলবে কী……)